অবরুদ্ধ_নিশীথ #তেজস্মিতা_মুর্তজা ২৮.

0
1

#অবরুদ্ধ_নিশীথ
#তেজস্মিতা_মুর্তজা

২৮.

বিকাল তিনটায় আমজাদ সাহেবের শেষ দুপুরে শেষ গোসল হচ্ছিল। জয় চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল ভিটির ওপর। অনেক লোক জড়ো হয়েছে মূর্দা বাড়িতে। তারা কটূক্তি করতে ভুলছে না। গতকালের তাজা ঘটনা মরলেই চাপা পড়বে কেন? মেয়ের চরিত্রের দোষের ভাগ বাপেরও যায়।

বসার ঘরের মেঝেতে খুঁটির সাথে পিঠ ঠেকিয়ে চুপচাপ বসে আছে অন্তূ। উঠানের ওপর ত্রিপল টাঙিয়ে ভেতরে তার আব্বুর শেষ গোসল হচ্ছে। সে চুপচাপ বসে দেখছে। কান্না পাচ্ছে না তার। আব্বুর সাথে খুব যেতে ইচ্ছে করছে। অবশ্য সে যাবেই। কেউ ঠেকাতে পারবে না তাকে। জয় তাকিয়ে দেখছিল অন্তূকে।

দুটো ছেলে এগিয়ে এলো। সালাম দিলো। জয় খেয়াল করল না। দুজন কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেও জবাব না পেয়ে ডাকল, “জয় ভাইয়া?ʼʼ

জয় আনমনার মতো বলে, “হু!ʼʼ

দৃষ্টি তখনও অন্তূর দিকে। রাগ হচ্ছে তার। মনে মনে ঠাস করে অভ্যাসবশত দুটো গালি দিলো, “মানুষ বাপ মরলে কাঁদে, শালী সেটাও করছে না। মানে হাগল-পাগল বিয়ে করাই দিছে আমার সাথে! তোর বাপ মরছে, তুই কাঁদবি, চিল্লায়ে কাঁদবি। তা না করে এমনভাবে বসে থাকার কারণ কী? কখন জানি ফিট খাইয়া পইড়া থাকবি। কাঁদলে একটু হালকা লাগে।ʼʼ

জয়ের ইচ্ছে করল, এগিয়ে গিয়ে ঠাস করে একটা চড় মেরে বলতে, “কাঁদ, জোরে-জোরে কাঁদ। চুপচাপ আছিস, বেশি চাপ পড়তেছে মাথায়। মূর্ছা যাবি। সেন্স হারানোর আগে কেঁদে হালকা হ শালী।ʼʼ

ছেলেদুটো অধৈর্য্য হয়ে বলেই ফেলল, “ভাই, একটা সেলফি নিই? ফেসবুকে আপলোড করব।ʼʼ

উঠতি বয়সী ছেলেরা। রাজনৈতিক নেতাদের সাথে ছবি তুলে ফেসবুকে দিতে পারাটাও একটা বাহাদুরী তাদের কাছে। এতে তারা এক ধরণের শক্তি অনুভব করে। জয় ভ্রু কুঁচকে গম্ভীর হয়ে তাকায়, “তাতে উপকারটা কী?ʼʼ

ছেলদুটো চুপসে গেল, “না মানে… আচ্ছা সেলফি লাগবে না। আপনার ফেসবুক একাউন্টটা দেবেন ভাই? আমরা এড হতাম।ʼʼ

জয় চোখ বুজে ভারী শ্বাস ফেলল, মনে মনে বলল, “ফেসবুকের মাইরে…ʼʼ

গালিটা প্রকাশ্যে দিলো না। এরা এক প্রকার সামাজিক শক্তি। জয়ের খুব শক্ত ভক্ত, তা বোঝাই যাচ্ছে। জয় মাথা নাড়ল, “আমার কোনো ফেসবুক একাউন্ট নাই। ওসব বাল-ছাল পোষায় না আমার। ফেসবুকে কী কাম? কী করে ওই ধোন-বাল দিয়া?ʼʼ

ছেলেদুটো যারপর নাই অবাক হলো, “আপনার ফেসবুক একাউন্ট নাই?ʼʼ

-“হ, নাই। পারলে ফোনে একমাত্র কলিং সিস্টেম ছাড়া আর কিছু রাখতাম না। কিন্তু ফাংশনালভাবে বহুত কিছুই পড়ে আছে। যেসব আমার বালের কামেও লাগে না। যাহ, ভাগ।ʼʼ

একে তো ঘুম নেই তার ওপর কীসের যে এক বোঝা চেপে আছে মাথায়। অদ্ভুত এক প্রেশার-ফিল হচ্ছে। অস্থির লাগছে সবকিছু। লোকালয় থেকে দূরে যেকোনো এক নির্জন জঙ্গলে অন্ধকারে খানিকক্ষণ বসে কয়েক বোতল অ্যালকোহল গিলে আসতে পারলে ভালো লাগতো।

বিষাদ ঘিরে আছে বাড়িতে। গোসল করিয়ে এনে আমজাদ সাহেবের লাশ রাখা হলো। আজ মার্জিয়ার চোখদুটো ভেজা দেখা গেল। মেয়েটা উদ্ভ্রান্তের মতো বসে সেই শ্বশুরের জন্য অসুস্থ শরীরে চোখের পানি ফেলেছে, যাকে সে চিরদিন বিরূপ চোখে দেখে এসেছে, শুধু অভিযোগ ছাড়া কিছুই ছিল না ওই মানুষটার ওপর।

রাবেয়াকে সামলানো যাচ্ছে না, বারবার দাঁত আঁটকে যাচ্ছে উনার। হামজা বসে রইল সোফার ওপরে। তার ছেলেরা মৃতদেহ দাফন-কাফনের সমস্ত ব্যবস্থাপনা করে ফেলেছে।

অন্তূ আর অন্তিক মূর্তির মতো বসে ছিল দুই ভাই-বোন। অন্তূ দেখল সেই জায়গাটা, যেখানে সেদিন তাকে দাঁড় করিয়ে নষ্টা প্রমাণিত করা হলো, সেখানেই আব্বুর লাশের খাটিয়াটা রাখা হয়েছে। মেঝের ওপর বসে দেয়ালে হেলান দিয়ে তাকিয়ে থাকল খাটিয়ার দিকে। তার চোখে-মুখে অবিশ্বাস। লোকজন যা ভাবছে তেমন কিছুই না। কী বাজে কথা! তার আব্বু নাকি আর নেই! এ-ও কখনও হয়?

লাশ নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি যখন চলছিল। জয় এলো অন্তূর কাছে। হাঁটু গেড়ে সামনে বসে আস্তে কোরে বলল, “আরমিণ! চলো, এখন তোমার বাপরে নিয়ে যাবে ওরা। চলো!ʼʼ

অন্তূ নিস্তেজ পায়ে উঠে দাঁড়াল আস্তে করে। জয় তাকে ছোঁয়ার সাহসটা করল না এ অবস্থায়। অন্তূ হেঁটে গিয়ে বসল খাটিয়ার পাশে মাটির ওপর। বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল আব্বুর মুখের দিকে। চেহারাটা উজ্জ্বল হয়েছে। চোখে সুরমা, মেহেরাঙা দাড়ি ভেজা। ভুরভুর করে আতর, গোলাপ জল, কর্পূরের গন্ধ ঢুকছে নাকে।

অন্তূ ডাকল, “আব্বু….আব্বু…. ও আব্বু! আব্বু, আব্বু গো…ʼʼ

আমজাদ সাহেব সাড়া দিলেন না। নিষ্ঠুরভাবে চুপটি মেরে ওভাবেই শুয়ে রইলেন। একটুও বুঝতে চেষ্টা করলেন না অন্তূর ভেতরে কী হচ্ছে!

-“আব্বু তুমি কী ভয়ানক স্বার্থপর! সকালে প্রতিদিন ডেকে ডেকে তো ঠিক আমার ঘুমটা ভাঙিয়ে দিতে। আজ এই যে ডাকছি, তুমি উঠছো না, ঠিক আরামে ঘুমাচ্ছ! এটা কি ঠিক আব্বু?ʼʼ

জয়ের ভেতরে কী হচ্ছে! আশ্চর্য এক ধরণের ব্যাপার। সে অন্তূর পেছেনেই দাঁড়িয়ে ছিল। তার ভেতরে কী এক অদ্ভুত অনুভূতি চলছে। হনহন করে বেরিয়ে গেল গেইট দিয়ে। বাড়ি থেকে একটু দূরে গিয়ে একটা চুরুট ধরালো।

ছোট বাচ্চার মতো করে চোয়ালটা খাটিয়ার ওপর ঠেকিয়ে উদাস বাচ্চার মতো চেয়ে থাকে অন্তূ আব্বুর দিকে। আব্বুর ঠোঁটদুটো হাসছে যেন। লোকে দেখলে আরেকবার মেলাতে পারবে, অন্তূর সুশ্রী নাকটা আমজাদ সাহেবের কাছে পাওয়া। অন্তূর চোখের কোণা পেরিয়ে নিস্তেজ ঝরনার মতো পানিগুলো গড়িয়ে খাটিয়ার ওপর পড়ে। কিন্তু অন্তূ স্থির চোখে চেয়ে আছে আব্বুর মুখের দিকে। শেষ দেখা দেখছে সে আব্বুকে। আর কোনোদিন দেখতে পাবে না ওই অভিজাত মুখখানা, আর কোনোদিন গম্ভীর স্বরে অন্তূকে ডেকে পাশে বসাবে না, আর কখনও ধমকে বলবে, ‘রাতে খেয়ে তারপর ঘুমাবি।ʼ

অন্তূ আস্তে কোরে ঢলে পড়ে খাটিয়ার ওপর থেকে মাটিতে। পড়ে রইল ওভাবেই। তার জন্য অপেক্ষা করার নয়। লোকজন অন্তূর চেতনাহীনতার মাঝেই অন্তূর আব্বুকে অন্তূর কাছ থেকে চিরতরে সরিয়ে নিয়ে গেল।

খাটিয়ার একপাশ হামজা ধরে, অপর পাশ দুটো অন্তূর চাচাতো ভাইয়েরা। আরেকটা অন্তিকের জন্য খালি। অন্তিক বাথরুমে ঢুকেছে। বের হবার নাম নেই।

মুখ বিদ্ধস্ত, চোখ লাল, ফোলা। টুপি পরতে পরতে বেরিয়ে আসে অন্তিক বাথরুম থেকে। খাটিয়ার একপাশ হামজা ধরেছে, তাতেও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না ছেলেটা। আমজাদ সাহেব বলতেন, ছাগল জবাই হবার পর মাংসের সাথে যাই করা হোক, ছাগলের আর যায় আসে না।


লোকে বলে, আজ মরলে কাল দু’দিন। আমজাদ সাহেবকে ছাড়া মাঝে দু’দিন কেটে গেছে।

অন্তূকে স্নায়ুর দূর্বলতা কাটানোর স্যালাইন দেয়া হয়েছিল। সে দুটো দিন প্রায় অবিরাম অচেতন। এর মাঝে খাওয়া-দাওয়া নেই। পাগলামি থামাতে বাধ্য হয়ে ঘুমের ইঞ্জেকশন দেয়া হয়েছে। আশ্চর্যজনকভাবে শুধু ওষুধ এবং পানির ওপর দুটো দিন কেটে গেছে। চোখদুটো বসে গেছে, চোখের পাতা ফোলা, ঠোঁটের চামড়া শুকনো, ত্বক ফ্যাকাশে। অন্তূকে দেখে লাগছিল, বহুদিন কোনো কবরে বাস করে ফের জীবিত হয়ে উঠে এসেছে।

অন্তূ দু’দিন পর উঠল সন্ধ্যার পর। প্যারালাইজড রোগীর মতো উদ্দীপনাহীন শরীর। চোখ খুলে কিছুক্ষণ ছাদের দিকে তাকিয়ে থাকল। কিছু মনে পড়ছে না। সব মনে পড়ছে, কিন্তু সেসব কেমন যেন জটলা বাঁধা, ঝাপসা। কুণ্ডলীর মতো মস্তিষ্কে জট পাকিয়ে আছে, স্পষ্ট হতে সময় লাগল।

আচমকা শরীরটা ঝাঁকুনি দিয়ে উঠে বমি করে ফেলল অন্তূ। বমিতে শুধু পিচ্ছিল সর্দি আর কালচে তরল উঠে আসছিল। পুরো শরীরে এক রত্তি জোর নেই উঠে বসার মতো। বমি হবার পর আর কোনো জীবিত মানুষের মতো লাগছিল না অন্তূকে। ঘরের সকলে এক পর্যায়ে আতঙ্কিত হয়ে উঠেছিল অন্তূর নির্জীব অবস্থা দেখে।

অন্তিক দৌড়ে গিয়ে ডাক্তার ডেকে আনলো। পার্লস রেট নেই বলা চলে। কোনোরকম বিট করছিল। অন্তূ চোখের মণি ঘুরিয়ে দেখল ডাক্তারকে, আর নজর ফেরালো না। চেয়ে রইল ডাক্তারের দিকে। ডাক্তারসাহেব একের পর এক প্রশ্ন করছিলেন।

-“কেমন লাগছে তোমার? কোনো রকম ভ্রম দেখছো চোখে? কিছু খেয়েছ? দেখো, তুমি শিক্ষিত মেয়ে। পৃথিবীর চিরন্তন সত্যগুলোর মাঝেমৃত্যু সবচেয়ে উপরে রয়েছে, যেটা অস্বীকার করার উপায় নেই। এভাবে নিজেকে কষ্ট দিচ্ছ, যা বোকামি হচ্ছে। কিছু খেয়ে নাও। আমি বুঝতে পারছি তোমার মনের অবস্থা, কিন্তু…

ডাক্তার সাহেব থামলেন। অন্তূ প্রতিক্রিয়াহীন, কোনো রকমের উদ্দীপনা নেই তার চোখে-মুখে। বেশ কিছুক্ষণ ওভাবেই নিশ্চুপ থেকে হঠাৎ-ই বলল, “ডাক্তার কাকা!ʼʼ

-“হ্যাঁ, মা।ʼʼ

-“দুটো ঘুমের ওষুধ দেবেন আমায়?ʼʼ

ডাক্তার অন্তূর মুখের সেই কাতরতা দেখে আৎকে উঠলেন। অপার্থিব কাকুতি। যেন কোনো মৃতর ডাক!

-“না রে মা। আর না। যে পরিমাণ ঘুমের ইঞ্জেকশন আজ দুইদিন দিয়েছি, তোমার শরীরের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির জন্য যথেষ্ট। এখন তুমি উঠবে, কিছু খাবে। এরপর আমি কিছু ওষুধ দেব সেগুলো খাবে। সুস্থ হওয়া লাগবে তোমার। বুঝছো?ʼʼ

অন্তূ আচমকা কী করল! হুড়মুড়িয়ে উঠে ডাক্তারের পা জড়িয়ে ধরল, “ডাক্তার কাকা, দিন দুটো ঘুমের ওষুধ। শুনুন কাকা, আমি চুপচাপ শুয়ে আছি জন্য আপনারা বুঝতে পারছেন না। ওই যে ওই, ওই বিছানার ওখানে এসে আব্বুর বসার কথা এখন। আমি অসুস্থ, আব্বু এসে ওইখানে বসে থাকার কথা। বসছে না, দেখেছেন? ডাক্তার কাকা, দিন দুটো ঘুমের ওষুধ কাকা। কাকা আমার ওপর এইটুকু দয়া করুন।ʼʼ

অন্তূকে ছাড়ানো যাচ্ছিল না। ডাক্তার সাহেব দীর্ঘশ্বাস ফেলে অন্তূর ফুপুকে বললেন, “ওকে সামলান। ট্রমা নিতে পারছে না। ওর কেমন চিকিৎসা দিলে কোনো উন্নতি হবে, বুঝতেই পারছি না। আমজাদ ভাই যে করলেন মেয়েটার সাথে!ʼʼ

ডাক্তার বুঝলেন, অন্তূ বেশিক্ষণ এই অবস্থায় চেতনা ধরে রাখতে পারবে না। মানসিকভাবে পুরোপুরি ডিস্ট্রয়েড মেয়েটা। অন্তূ উঠে বসে পাগলের মতো এদিক-ওদিক তাকায়, আর শুয়ে পড়ে। শুয়ে ঠিক গলাকাটা মুরগীর মতো ছটফট করে। আবার উঠে বসে বুকের মাঝে আঙুল চেপে ধরে মালিশ করে বারবার। হাঁ করে শ্বাস নিয়ে আবার মাথার চুল টেনে ধরে। এদিক-ওদিক তাকায়, কাউকে খুঁজছে ওর বিকৃত মস্তিষ্ক। চোখের পানিগুলো আঁটকে আছে, পড়ছে না। দাঁত চেপে বুক চেপে ধরে। আবার নিঃশব্দে ডুকরে উঠে মাথা নিচু করে নিঃশব্দে আর্তনাদ করে।

মাথা তুলে বলে, “ডাক্তার কাকা, আমায় ঘুম পাড়িয়ে দিন। আমায় ঘুম পাড়ানোর ওষুধ দিন। আমায়….দুটো ঘুমের ওষুধ দিন। আপনার কাছে অনুরোধ করছি, কাকা।ʼʼ হাতজোর করে অন্তূ।

ডাক্তার চেয়ার থেকে নেমে অন্তূর সামনে বসে মাথায় হাত রাখেন, “আমজাদ ভাই কী করলেন, বুঝতে পারছি না। এই পাগলিকে রেখে খোদা তাকে টান দিলেন কেন? ধৈর্য্য ধরো তুমি, আম্মা।ʼʼ

অন্তূ অনেকক্ষণ ওরকম চামড়া ছিলা পশুর মতো তড়পে একসময় ক্লান্ত হয়ে পড়ে। আস্তে কোরে মেঝে ঘেষে গিয়ে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে। সামনের দেয়ালে একটা ক্যালেন্ডার ঝুলছে। আজ ২৯-ই নভেম্বর, ২০১৪। তার বিয়ে হয়েছে ২৬-ই নভেম্বর ২০১৪। অন্তূ অপার্থিব দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে রইল দিনপঞ্জিকার দিকে।

ডাক্তার সাহেব বিস্মিত চোখে দেখলেন অন্তূকে। তিনি যা বুঝলেন, তা ভয়ানক। অন্তূ নিজের একাধিক সত্ত্বার ওপর চমৎকার নিয়ন্ত্রণ পেয়ে বসেছে। এমন নয় যে সে যখন সত্ত্বা হারাচ্ছে, তখন অন্য সত্ত্বাকে ভুলে যাচ্ছে। মাইন্ড কন্ট্রোল করতে পারছে মেয়েটা। ভয়ানক এক মানসিক রোগ। সে নিজেই নিজের ভয়াবহতা বুঝতে পারছে। আবার ভয়াবহতার ওপর কাবুও রয়েছে। অর্থাৎ তার নিজ নিয়ন্ত্রিত একাধিক মানসিকতা তার ভেতরে জায়গা পেয়েছে।

অন্তূ চট করে নিজেকে শান্ত করে তুলেছে। এখন দেখে মনে হচ্ছে, কিছু ভাবছে। চুপচাপ হাঁটুতে থুতনি ঠেকিয়ে মেঝের দিকে চেয়ে আছে। হাঁটুসহ পুরো শরীর দুলছে রকিং চেয়ারের মতো।

তার ঘুম পাচ্ছে খুব। ঘোর লেগে আসছে। ক্ষুধা লাগেনি, তবে অল্প পানি পিপাসা পেয়েছিল। ডাক্তার চলে গেলেন। ঘর ফাঁকা হয়ে এলো। অন্তূ টের পেল, আব্বু এসে পাশে বসেছে। অন্তূ হেসে জিজ্ঞেস করে, “কেমন আছো, স্বার্থপর আব্বু?ʼʼ

আমজাদ সাহেব মৃদু হাসলেন, “আমি ভালো আছি। তোকেও ভালো থাকতে হবে। কিছু খাসনি কেন?ʼʼ মৃদু ধমক দিলেন আমজাদ সাহেব।

অন্তূ ফুপুকে ডেকে বলে, “আমার জন্য খাবার নিয়ে আসুন তো। আর পানি আনবেন বেশি করে, গলা শুকিয়ে আসছে খুব।ʼʼ আব্বুর উদ্দেশ্যে হাসল, “এবার খুশি?ʼʼ

আমজাদ সাহেব জবাব দেন না। চুপচাপ বসে থাকেন অন্তূর পাশে। অন্তূ গপাগপ খেলো অনেকটা খাবার। বমি হবে বোঝা যাচ্ছে। তবু খেলো। খেতে খেতে জিজ্ঞেস করল আব্বুকে, “আমি কি পাগল হয়ে গেছি, আব্বু?ʼʼ

আমজাদ সাহেব মাথা নাড়েন, “উহু। তুই কূটিল হয়ে গেছিস। আর এই কূটিলতা তোকে অনেক কিছু দেবে। বুঝলি অন্তূ, গন্তব্যে পৌঁছাতে অত স্বাভাবিক আর সরল থাকা নয়, বরং নিগূঢ় পাগল আর জটিল হতে হয়।ʼʼ

প্রথম কথাটা আব্বুর মতো লাগল না। আব্বু এরকম কথা বলতো না, অন্তূ বলে এমন কথা। তবে শেষের কথাটা আব্বুর হতে পারে।

অন্তূ খাবারের লোকমা মুখে তুলে আব্বুর দিকে তাকায়। আব্বু বসে আছে তার পাশেই দেয়াল ঘেঁষে। অন্তূ টের পায়, তার আর যন্ত্রণা হচ্ছে না বুকে। একটুও কষ্ট লাগছে না। একদম স্বাভাবিক, সুখী লাগছে নিজেকে। হ্যাঁ, অবশ্য একটু অস্বাভাবিক লাগছে সবটা। চারপাশটা মোটেই স্বাভাবিক নয়। অদ্ভুত!

চলবে..

[রিচেইক করিনি। হিউজ ভুল থাকতে পারে। ক্ষমা করবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here