#অবরুদ্ধ_নিশীথ
#তেজস্মিতা_মুর্তজা
৩৬.
ব্যান্ডেজ থাকা অবস্থায় গোসলে সমস্যা হচ্ছিল জয়ের। ক’দিন ওভাবেই গোসল করেছে। গোসল না করে থাকতে পারেনা কিছুতেই। একদিন বেশি বিরক্ত হয়ে একটানে ব্যান্ডেজ খুলে ফেলে দেওয়ার সাথে সাথে র-ক্ত বের হয়ে এলো ক্ষত থেকে। ওপরের চটা উঠে গেল কাপড়ের সাথে। অভ্যাসবশত চিৎকার করে ডাকল, “তরুউউউ…!ʼʼ পরে বিরবির করল, “যাহ! শালা, ভুল বাড়ির কলিংবেল চেপে ফেলেছি। বউয়ের হাতে ঝাটার আদর খাওয়ার মোক্ষম সুযোগ। এমনিতেই আমার যে খান্নাস বউ!ʼʼ ভুল শুধরে অন্তূকে ডাকল।
অন্তূ আসবেনা, সেটা জানা কথা। জয়ের ডাক শুনে সে আরও বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ে। অবসরে বসে থাকলে, কাজ তৈরি করে নিয়ে সেই কাজে মন দেয়। সেদিন রাতে ওষুধ দেবার জন্য ডাকল জয়। অন্তূ কোয়েলের সাথে খেলছিল। কোয়েলকে রেখে শো-কেসের সকল শোপিস নামিয়ে আবার সেগুলো ঝেরে পরিষ্কার করতে শুরু করল। জয়কে ওষুধ দিয়েছে হামজা, পানি গরম করে দিয়েছে রিমি।
সকাল সকাল ভার্সিটি গিয়ে ঘুরে এসেছে একবার। কপালে মেডিটেপ লাগানো। এরপর ফিরে কোনোমতো খেয়ে আবার ক্লাবে গেছে। ক্লাবের মেরামত চলছে। হরতালে হাইওয়ে বন্ধ প্রায়। মোড়ের ওপর চায়ের দোকানে বসে দু-কাপ চা খেয়ে, একটা কড়া জর্দা মেশানো পান চিবোতে চিবোতে বাড়িতে ঢুকলো। পানের পিক ফেলতে গিয়ে তা লেগে গেছে সাদা লুঙ্গিতে। ওয়ার্কশপে কাজ চলছে। সেখানে ঢুকে আবোল-তাবোল কিছুক্ষণ ঠুকঠাক কাজ করল। লোহার দন্ড বানানো হচ্ছিল। আগুন থেকে গলিত লোহার পিন্ড উঠতেই তাতে চোখ আঁটকালো ওর। টকটকে লাল, গলিত আগুন যেন। দৌড়ে গিয়ে হাতুর তুলে পেটাতে আরম্ভ করল সেটাকে। বেশ মজার কাজ শীত শীত এখনও আছেই প্রকৃতিতে। তবুও ঘেমে গা ভিজে উঠল।
কাঁচা ফুলগুলো শুকিয়ে মড়মড়ে হয়ে গেছে। হামজা পৌরসভর উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যাবার সময় অন্তূ ডাকে, “মেয়র সাহেব!ʼʼ
হামজা থামে। পাঞ্জাবীর হাত গুটিয়ে বলল, “কিছু বলবে?ʼʼ
-“ফুলগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। আমি খুলতে পারছি না। শক্ত করে সেট করা হয়েছে ওগুলো। একটা লোক পাঠাবেন, ওগুলো খুলে দিয়ে যাবে।ʼʼ
হামজা বেরিয়ে যেতেই শাহানা বললেন, “এইভাবে কথা বলতে শিখছো?ʼʼ
-“কীভাবে?ʼʼ
-“বড়ভাই ডাকা যায় না? ‘মেয়র সাহেবʼ কী?ʼʼ
-“বড়ভাই একটা ছিল। সেটাকেই ডাকা হয়নি বহুদিন। তাছাড়াও কাউকে সম্বোধন আমি আমার মনমতো করি, মামিমা। উনি মেয়র, মেয়র ডাকলে ক্ষতির কিছু নেই। ভুল বলেছি?ʼʼ
ফুলগুলো যেভাবে আঁটকানো হয়েছে, বিছানার ওপর বো-মা পড়লেও তার ছিঁড়বেনা যেন। তোষক তুলতে হলো। ছেলেদুটো তোষক উচু করে তুলতেই খাটের ক্লেটের ফুটো দিয়ে কিছু চোখে পড়ল অন্তূর। দ্রুত থামালো ছেলে দুটোকে। আদেশ করল, ক্লেটগুলো টেনে তুলে ফেলতে।
খাটের ক্লেটের নিচে মেঝের ওপর সারি সারি টাকার বান্ডিল সাজানো একপাশে। এত টাকা যে কেউ একসাথে দেখেনি জীবনে। বাকিটা রিভলবার, পিস্তল, রাইফেল ইত্যাদি ধরণের অ-স্ত্র-তে সজ্জিত। অন্তূ শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। ক্যাটারিংয়ের ছেলেদুটো যেন জমে গেছে। জয়ের পদচারণার আওয়াজ আসে। সে গান গাইতে গাইতে ঢুকছে,
এই আছি এই নাই, হাসি গাই কষ্ট ভুলে যাই
জীবনটা সিগারেটের ছাই, ছোক দিয়ে তাকে উড়াই
কী হবে ভেবে আর, যে জীবন দম গেলে নাই…
মুখে পান থাকায় গান জড়িয়ে যাচ্ছিল কণ্ঠে। চট করে থেমে হেসে ফেলল ঘরের অবস্থা দেখে। ছেলেদুটোকে চলে যেতে আদেশ দিয়ে অন্তূর খুব কাছে পেছনে এসে ফিসফিস করে বলল, “চেনো, ওগুলো কী?ʼʼ
অন্তূ ছিটকে দূরে সরে যায়। কয়েকবার মুখ চিবিয়ে থুহ করে পানের পিক ফেলল ঘরের ভেতরেই। পরে বলল, “আমি ছুঁলে ফোঁসকা পড়ে যায়, ঘরওয়ালি?ʼʼ
-“ঝলসে যায়। আপনি ছুঁলে ক্ষয় হয়ে যায় যেকোনো কিছুই, তা তো জানেন!ʼʼ
-“একেই বলে ঘরের বউ। কয়দিন হয়েছে, এর মধ্যে একদম মুখস্ত করে ফেলেছ আমায়, হ্যাঁ?ʼʼ
-“এই টাকা কীসের?ʼʼ
মুখ ঝামটি মারল, যেন মোটেই কোনো ভালো জিনিস নয়, নাক কুঁচকে নাটক করে বলল, “জাল টাকা। নজর দিলে চোখের ক্যালরি লস। লাভ নাই। পলাশের মাল সব।ʼʼ
অন্তূ সম্মতি জানালো, “আমিও ভাবছিলাম, বাংলাদেশে লিগ্যাল পয়সায় বড়জোর ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকা যায়, সেটাও র-ক্ত ঘাম করে ঝরিয়ে। কিন্তু আপনারা ভালো কোনো পজিশন না পেতেই এত ফুলে ফেঁপে উঠেছেন, সোর্সটা কী? জাল টাকার ব্যবসা! ওয়াহ! হাততালি আপনাদের জন্য। পলাশ আপনাদের পার্টনার?ʼʼ
জয় বুকে হাত রেখে মাথা নত করল, যেন সে তার কর্মের বাহবা নিচ্ছে, প্রশংসায় বুক ভরে উঠেছে তার। এরপর বলল, “অথচ তোমার জন্য সেই পার্টনারের সাথেও তিড়িংবিড়িং করেছি। তবুও তোমার ভেতরে কোনো কৃতজ্ঞতা নেই। পেলাম তার বদলে থুতু। এটা কি ঠিক?ʼʼ
অন্তূ গর্বে বুক ফুলিয়ে বলল, “তার বদলে আমিও পেয়ছি, অনেককিছু পেয়েছি। কী পেয়েছি, জানেন?….থাক ওতসব প্রাপ্তি খেয়ালে এলে র-ক্তে জ্বালা ধরে যায়। পাপ কাজের দুর্দমনীয় ইচ্ছেরা খুব জ্বালায় আমাকে। হাতটা আরেকটু শক্ত হোক। মুখে যতই যা বলি, হাত কিন্তু এখনও নরম রয়ে গেছে আমার।ʼʼ
দাঁতকপাটি আঁটকে বলল জয়, “থুতু কেন দিয়েছিলে আমায়?ʼʼ
-“প্রথম থেকে শুরু করে পলাশ আমার সাথে যা যা করেছে আপনার সামনে, আপনি বাইস্কোপ দেখছিলেন?…ʼʼ
কথা কেড়ে নিলো জয়, “তুমি আশা করেছিলে আমার কাছে?ʼʼ
আক্রোশে মুখ লাল হয়ে ওঠে অন্তূর, “এক মুহুর্তের জন্য আমি আপনাকে মানুষ ভাবতে চেয়েছিলাম সেদিন। নিজের স্বার্থে মানুষ কত সত্যি ভুলে যায়। আমিও ভুলে গেছিলাম, আপনি জঙলি। এরপর পরিস্থিতি যখন চরমে, তখন এসে জীবন দান করছেন…! ব্যাপারটা কেমন হলো বলুন তো, বলির পাঠাকে যত্নে লালনের মতো। ঠিক বলিনি?ʼʼ
পান চিবোতে চিবোতে মুচকি হাসি ঠোঁটে রেখে মাথা নাড়ল জয়, “ঠিক বলেছ।ʼʼ
অন্তূ দৃঢ় চোখে তাকিয়ে শান্তভাবে বলল, “শুকরিয়া আদায় করুন, এই যে এতগুলো দিন নির্দিধায় রাতে মাতাল হয়ে ঘুমান, বন্ধ ঘরে। সেই সুযোগে আপনার গলাটা কেটে দুইভাগ করে ফেলিনি। ওটা খুব সস্তা কাজ হয়ে যাবে। মাঝেমধ্যেই ইচ্ছে করে, তবে আপনাকে ওভাবে মারাটা খুব নিচু কাজ হবে। আপনি জানেন, আপনি থুতু পাবার কতটা যোগ্য। ইউ নো হোয়াট! একে বলে বাটারফ্লাই ইফেক্ট। সেদিন থুতু দেবার মতো ছোট্ট একটা কোএন্সিডেন্স থেকে আমি-আপনি বহুদূর পৌঁছাবো, দেখবেন। তার মূলে থাকবে এক বন্ধ রাত, এক অবরুদ্ধ নিশীথ। তার ফলে নেমে আসবে হাজারও অবরুদ্ধ নিশীথ, যার সংমিশ্রণে থাকবে একেকটা অবরুদ্ধ নিশীথ।ʼʼ
একদৃষ্টে চেয়ে থেকে ছোট ছোট শব্দে হাসতে হাসতে হো হো করে হেসে উঠল জয়, “এতদিনে লাইফে এডভেঞ্চার এসেছে। সেই কবে বন্দি দশা ছেড়েছি, এরপর আর কেউ আঁটকাতে পারেনি আমায়। শালার…ঘরে মউত নিয়ে জীবনযাপনের চেয়ে বড় এডভেঞ্চার আর হয়-ই বা কী? হু দ্য ফা-কিং সে, লাইফ ইজ আগলি? ইজ দেয়ার ইজ সাচ এন এডভেঞ্চার ইন লাইফ, এক্সাক্টলি হেয়ার ইজ দ্য আলটিমেট ফান ইন লাইফ!ʼʼ
অন্তূ প্রলম্বিত এক শ্বাস টেনে বলল, “এগুলো?ʼʼ
খুব উৎসাহিত হলো জয়, “এগুলো? চেনো না? শ্যাহ! এত ভালো হওয়া ঠিক না। ওগুলো বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত মাল। কালাশ’নিকাভ-এর ডিজাইন করা রাইফেল, AK-47। চালিয়ে দেখবে একটা? বের করব? আমার ওপরেই চালাও একটা, যাও, হাত শক্ত হোক.. কপালে মেরো না। পায়ে-টায়ে মেরে চর্চা করো… বের করি দাঁড়াও…ʼʼ
অন্তূ চোখ বুজে গাঢ় শ্বাস ফেলল। তার কাছে এটাকে বাড়ি কম, জাহান্নাম বেশি লাগতে শুরু করেছিল এই সময়টাতে। একের পর ঘটনাগুলো খুব বিষণ্ন করে তুলছিল অন্তূকে। মানসিক ভাঙন ধরে যাচ্ছিল মাঝেমধ্যেই। জয়কে মারার আগে ওকে আবিষ্কার করার একটা অদম্য কৌতূহল ছুটে বেড়াচ্ছিল রন্ধে রন্ধে।
—
একরাতে খেতে বসে ছোট মাছের তরকারী মুখে নিতেই মুখ চেপে ধরে উঠে যায় তুলি। বেসিন অবধি পৌঁছানোর আগেই গলগলিয়ে বমি করে ফেলে। তরু দৌড়ে গিয়ে ধরে।সেদিন জানা গেল, তুলি গর্ভবতী। আড়াইমাস চলছে। কাউকে জানায়নি। তরু যেহেতু সাথে থাকে, তরু জানতো শুধু। তুলি জানাতে দেয়নি কাউকে।
অন্তূ জিজ্ঞেস করল, “কতদিন হলো এসেছেন এখানে?ʼʼ
-“দুইমাস পেরিয়ে যাচ্ছে।ʼʼ
অন্তূ বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, “কী হয়েছিল, বা সমস্যা কী, জিজ্ঞেস করলে কি অনধিকার চর্চা হয়ে যাবে?ʼʼ
তুলির বোধহয় কান্না পেল। কাঁদল না। তরু কোয়েলকে নিয়ে ছাঁদে উঠে যায় কবুতর দেখাতে। তুলি বলল, “প্রেমের বিয়ে ছিল। যতদিন মেয়ে হয়নি, হামজা ভাই মেনেই নিয়েছিল না। অথচ ওর কাছে রোজ সীমান্তর যাওয়া-আসার মাঝ দিয়েই সম্পর্ক হয়েছিল আমাদের। সীমান্ত ভাবীর কাজিন। মেয়ে হবার পর যখন এ বাড়িতে আসা যাওয়া শুরু করলাম, তারপরও ভালো ছিল। কিছুদিন পর থেকে কথায় কথায় গায়ে হাত তুলতো। কোনোদিন এ বাড়িতে বলিনি। সেই সুযোগ ছিল না। আব্বু তো বাড়ির ধার ধারেনা। সব হামজা ভাই। কিন্তু ওকে কখনও এসব বলার সাহস হয়নি। ভুল আমি করেছি, ও তো কোনোকালেই মেনে নেবেনা এসব। পরে বুঝলাম, ঝন্টু মামার নির্দেশ এসব।ʼʼ
-“ঝন্টু সাহেব মাজহারের বাবা না?ʼʼ
-“আমার মামা শ্বশুরও। রিমি, মাজহারের বড়ফুপুর ছেলে আমার স্বামী।ʼʼ
-“এরপর?ʼʼ
-“আমি ভাবতাম, আমার ওপর অত্যাচার করতো যাতে আমি হামজাকে মাজহারের বিরোধিতা করা থেকে থামাই। রাজনীতিকে ঘেন্না করার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ দুটো নেই আমার কাছে। কিন্তু র-ক্তে জড়িয়ে থাকা এই নষ্ট নীতিকে এড়িয়ে চলতে আর পারলাম কই!
নির্বাচনের সময় এগিয়ে আসার সাথে সাথে তা আরও বেশি খারাপদিকে গেল। আমি যেকোনো কিছুতে বাঁধা দিতে গেলেই অমানুষিক অত্যাচার সঁয়েছি। নেশা করা, স্মাগলিং, মানুষ মারা, চাঁদাবাজি—সহ্য করতে পারতাম না আমি। আর কত? মারও খেয়েছি গা ভরে। ভালোই লাগতো, জানো? কারণ আমার তো যাওয়ার জায়গা নেই। কোথায় যাব, যেখানে আসব, এখানে সেসবের ঘাঁটি গাড়া। তবুও মেয়েকে রেখে চলে এলাম। অথচ কিছুই জানানোর রুচি হয়নি।ʼʼ
-“শুধুই মারধর করতো?ʼʼ
-“নেশাও করে। মারাত্মক নেশা। আমি এবোর্শান করিয়ে ফেলব, আরমিণ। আমার মনেহয় আমার ছেলে হবে। বাপের ছেলেও যদি বাপের মত হয়? ওকে দুনিয়াতে আনার ইচ্ছে নেই। ওই বাপের ছেলে হয়ে ও দুনিয়াতে না আসুক। আমি বহুদূর চলে যাব এসব থেকে। আমার ভাল্লাগেনা। আই কান্ট টলারেট এনিমোর…ʼʼ উত্তেজিত হয়ে ওঠে তুলি।
অন্তূ দীর্ঘশ্বাস ফেলল। সাধারণ মানুষের কাছে এসব বেশ অজানা। অথচ উচ্চশ্রেণীর মানুষের সমস্যাগুলোও কেমন উচ্চ উচ্চ পর্যায়ের। এসবের মাঝে আছে কী? নে-শা, র-ক্ত, নোংরামি, বিশ্বাসঘাতকতা, অনাচার, অবিচার, লোভ, প্রতিহিংসা…! সেই বা এসব থেকে কম কীসের? এই সকল লোকদের বউদের অন্তূ আগে বেশি ঘেন্না করতো—তারা থামাতে পারেনা পুরুষদের? আজ সে নিজে কোথায়? সে কী করতে পারছে? নিজের ওপর ঘৃণা চেপে যায় অন্তূর।
বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে আবারও ভাবে বিষয়টা। রাজনৈতিকতায় ভালো কি কিছুই অবশিষ্ট নেই আর? এত হাহাকার কেন? এর সাথে জুড়ে থাকা মানুষগুলো এত নোংরা কেন? সবাই কি নোংরা? ভালো নেই কেউ?
তুলির শরীরের অনেক দাগ দেখেছে অন্তূ। সেসব দেখলেই অন্তূর মন চায়, বউকে আঘাত করা পুরুষদের কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে দিতে। পরে মনে পড়ল, তার সাথে কী হচ্ছে? সে জয়কে মেরে ফেলেছে? অন্তূ চিটমিট করে উঠল নিজের ওপর বিতৃষ্ণায়। আজকাল নিজেকে সহ্য হয়না অন্তূর। নাপাক, নির্লজ্জ, আত্মমর্যাদাহীন রাস্তার মেয়ে মনেহয়। ‘মূল্যহীন পতঙ্গʼ বলে মাঝেমধ্যেই ডেকে ওঠে নিজেকে।
—
জয় বাড়িতে ঢুকে রুমে আসেনা প্রথমে। ডাইনিং স্পেস পেরিয়ে ওপারের স্টোরের দিকে যায়। বহুবার হামজা এবং হুমায়ুন সাহেবকেও যেতে দেখেছে অন্তূ। নেশা করতে যায় নিশ্চয়ই তিনজনই! জায়গাটায় যাওয়ার রুচি আসেনি কখনও অন্তূর। এ বাড়িতে অনৈতিক কাজ হয় সেটা ধরে ফেলেছে অন্তূ। পেপার পড়ে অন্তূর কাছে তার বিশদ ব্যাখ্যা করা আমজাদ সাহেবের স্বভাব ছিল। অ-স্ত্রের ব্যবসা নাকি রাজনীতিবিদের লেওয়াজ ছাড়া স-ন্ত্রা-সরা করতে পারেনা, অন্তূ শুনেছে আব্বুর কাছে। কারণ প্রশাসন রাজনীতিবিদদের চেটে বাঁচে। প্রশাসনকে হাতে রেখে নিজেদের ধান্দা চালাতে রাজনীতিবিদের যদি অল্প কিছু ভাগ দিলেই চলে, তো স-ন্ত্রা-সরা সংসদের এই জিহ্বা বের করে শ্বাস নেওয়া কুকুরগুলোকে হাতছাড়া করবে কোন দুঃখে?
এই পাটোয়ারী বাড়িটি হলো একটা অস্ত্র সংরক্ষণাগার, জাল টাকার বাক্স, শয়তানের নিরাপদ বাসস্থান। অন্তূর দমফাটা হাসি আসে এসব ভাবলে। আরেহ! কী বুদ্ধি এদের! প্রশাসনের সাহস কী যে, কোনো পলিটিশিয়ানের বাড়িতে হানা দেয়? রেড মারে! তল্লাশি চালায়! সরষের মধ্যে ভূত! সেই সরষে দিয়ে দেশের ভূত ছাড়াতে গেলে ব্যাপারটা যেমন হওয়া উচিত, তেমনই হচ্ছে, সেভাবেই পরিচালিত হচ্ছে স্বাধীন বাংলা, জয় বাংলা। পুলিশফাঁড়িতে ড্রাগ, অস্ত্র, নারী, শিশু পাচারের কারখানা— এমন কাহিনি পুরোনো। সাথে এটাও পুরোনো, যে সাদা খানদানী পোশাকে আবৃত জনদরদী, নেতাগোছের মানুষগুলোর শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত বাড়িগুলোও একই কাজে ব্যবহৃত হয়। অন্তূ ভুল ঠিকানায় চলে এসেছে। অথবা হতে পারে, ভুল ঠিকানাকে সঠিক করে তুলতে জানটা হারাতে হয়!
জয় মদ গেলে সোফায় বসে। এক প্যাগ করে ঢালে, গ্লাস উচিয়ে ধরে অন্তূকে বলে, “এক সিপ নেবে?ʼʼ
অন্তূ বলে, “আপনি অভার-ডোজ খেয়ে মরে যান, প্লিজ।ʼʼ
জয় গম্ভীর হয়ে বলল, “আমি মরলে তোমার কোনো লাভ নেই।ʼʼ
অন্তূ তাচ্ছিল্য করে হাসে, “লাভ!ʼʼ গাঢ় চোখে তাকিয়ে বলল, “মানুষের মতো দেখতে আপনার মতো জঙলি পশুগুলো আরও কত মানুষের অমানুষ হয়ে ওঠার কারণ হয়! দেখেছেন, কতটা নিচে নামিয়েছেন আপনি আমায়, কারও মৃত্যু কামনায়ও কী এক অদ্ভুত সুখ পাচ্ছি! দিনদিন ঠিক আপনারই মতো র-ক্তচো-ষায় পরিণত হচ্ছি।ʼʼ
জয় হেসে ফেলল, “আমার মৃত্যু কামনা করার লোকের অভাব নেই। অত ভিড়ের মধ্যে তোমার নামটা নিমেষেই হারিয়ে যাবে। অন্যকিছু কামনা করো। এই যেমন ধরো, পঙ্গু হয়ে যাওয়া, কুষ্ঠোরোগে আক্রান্ত হওয়া, প্যারালাইজড হয়ে পড়ে থাকা—এসব।ʼʼ দুই চুমুক গিলে আবার বলল, “আর বললেই তো আর এখনই মরে যাওয়া যায়না! কয়দিন পর মরব। কিছু কাজ বাকি।ʼʼ
-“কয়দিন পর কেন?ʼʼ
-“তুমি আর কয়দিন বেঁচে থাকো।ʼʼ
-“আমাকে সাথে নিয়ে মরবেন?ʼʼ
-“হ। নয়ত পরে যদি আবার আমি মরার পর আমার সম্পত্তি নিয়ে অন্যকারও সাথে ভেগে যাও?ʼʼ
-“আপনার কোনোকিছুকেই কিছু মনেহয় না, না? অল ইজ ওয়েল, অল থিংস আর নরমাল, ফাইন!?ʼʼ
জয় মাথা দুলিয়ে গানের তালে নাচার মতো চোখ বুজে হাসল, “অভিজ্ঞতা বেশি তো! বহুতকিছু দেখেছি, বহুত কিছু ঘটেছে আমার সাথে।ʼʼ চোখ মারল অন্তূকে। এরপর হো হো করে হেসে ফেলল।
জয়ের পুরো শরীরে বিশ্রী সব দাগ আছে। গোসল করে যখন খালি গায়ে বের হয়, উন্মুক্ত দেহটা কী যে ভয়ঙ্কর লাগে দেখতে! অত ভয়ানক দাগ কীভাবে হয়েছে তা মেলাতে পারেনা অন্তূ। জিজ্ঞেস করল, “শরীরের দাগগুলো কীসের?ʼʼ
জয় বাচ্চাদের মতো অন্তূকে মুখ ভেঙচালো, “কীসের দাগ ওগুলো?ʼʼ বেশ ভাব নিয়ে বলল, ”ইশপেশাল ট্যাট্টু। এই ট্যট্টুগুলো শরীরে খোদাই হবার সময় যা লেগেছিল না! উফফ!ʼʼ রসিকতা করে উচ্চারণ করল কথাটা। ভ্রু নাচিয়ে বলল, “ভালো না?ʼʼ
অন্তূ আবারও খেয়াল করে, চটা ধরা ডান ভ্রু-র চুলের ভেতরে একটা গভীর ক্ষত আছে জয়ের। কাছে না গেলে খেয়াল করা যায়না। বিয়ের পর বিষয়টা নজরে এসেছে। সেদিকে তাকিয়ে বলল, “সকালে উঠে সারাদিন আবার বহু পাপ করতে হবে আপনার! আপনার বোধহয় মাথায় চড়ে গেছে। শুয়ে পড়ুন।ʼʼ
জয় হাসল, “দুই-চার বোতলেও চড়বেনা। এই মদ শালাও ভীষণ ধরিবাজ। মাতাল হবার জন্য খাই, এত টাকা খরচা করে কিনি, অথচ মাতাল করেনা। তোমার মতোই। বিয়ে করলাম, দেনমোহরবাবদ নাকি টাকা দিতে হবে, আবার বস বসে খাওয়াচ্ছি তিনবেলা, পোশাক, যাবতীয় খরচা দিচ্ছি। কোনো কামে তো আসোই না, আবার একটু কাছে গেলে কারেন্ট লাগা রোগীর মতো ঝিরঝির করে ওঠো। লস প্রজেক্ট।ʼʼ
অন্তূ বিছানায় জয়ের দিকে মুখ করে শুয়ে গায়ে চাদর তুলে নিয়ে বলল, “খুন করেছেন কয়টা?
-“বেশি না।ʼʼ
-“প্রথমটা কবে করেছিলেন?ʼʼ
জয় ঘাঁড় ম্যাসাজ করতে করতে বিরবির করল, “শালী ইন্টারভিউ নিতে বসে গেছে রাত্তিরবেলা।ʼʼ বোতল ধরে কয়েক ঢোক গিলে বলল, “উমমম….২০০১ এ সম্ভবত। বয়স তখন পনেরো বছর আমার যতদূরসম্ভব। ক্লাস টেনে ছিলাম, আমি।ʼʼ
অন্তূ ভ্রু কুঁচকাল। ২০০২-এ সংসদে ছিলেন বিরোধীদল। আর উপদেষ্টা ভূমিকায় ছিল জামায়াতে ইসলামী। সেই সময় জয় কাকে খুন করেছে? পনেরো বছরে মানুষ খু-ন! আর কী কী করে রেখেছে জয় আমির!
—
বেলা না পেরোলে ঘুম ভাঙেনা জয়ের। অন্তূ সকাল সকাল উঠে রান্নাঘরে গিয়ে দেখে রিমি আর কাজের মহিলা রান্না করছে। রিমি বলল, “আরমিণ, জয় ভাইয়ার বাগানে লেবুগাছ আছে। কয়েকটা লেবু ছিঁড়ে এনে দিন। সাব-মার্সিবল অন করে জগগুলোও ভরে ফেলুন। মেয়র পৌরসভায় যাবে।ʼʼ
ডাইনিং রুমে তরু বসে ছিল। মটরশুটি ভাঙছে একমনে অন্তূ গিয়ে কিছুটা তুলে নিয়ে বলল, “তোমার আমার ওপরে রাগ অথবা ঘেন্না, কোনটা বেশি প্রকট?ʼʼ
মুখ না তুলে বলল তরু, “কোনোটারই অধিকার নেই।ʼʼ
-“রাগ, ঘৃণা, পছন্দ, ভালোবাসা…এসবের জন্য অধিকার লাগেনা। অধিকার অভিমান, অনুরাগ, অনুযোগ, অভিযোগে লাগে। তোমার অনুভূতি আমার ওপর অভিমান টাইপের না। ঘৃণা টাইপেরই হবে কিছু!ʼʼ
তরু চোখ তুলল, “কারণ নেই কোনোটারই। তবুও তা কেন মনে হলো?ʼʼ
অন্তূ অদ্ভুতভাবে হাসল, “চোখ লুকাতে খুব কাঁচা, অদক্ষ তুমি।ʼʼ
তরুর চোখে এবার পানি উপচে পড়তে চায়। পানি যেন সবসময় সেখানে মজুতই থাকে। অন্তূ সামনে এলে তার বাঁধ ভাঙে। ওড়নার প্রান্তটা মাথার ওপর তুলে আঁচল হাতি ধরে বেরিয়ে যায় অন্তূ। টুপ করে একফোঁটা পানি পড়ে তরুর চোখ বেয়ে।
বাগনটা বেশি বড় না। ফুলগাছ নেই। এ বাড়িতে ফুল বোধহয় কারও পছন্দ না। তিনটা লেবু পেড়ে আরেকটু এগিয়ে যেতেই একটা লোহার গেইট। অন্তূ ভ্রু কুঁচকায়। প্রাচীরঘেরা জায়গাটায় শেষ প্রান্ত ঘেঁষে গেলেই ওয়ার্কশপের বিশাল এড়িয়ার দেয়াল। তাহলে বাড়ির পেছন দিকে এই দরজা কীসের? বাড়ির নকশাটাই অদ্ভুত। বেশ কিছুক্ষণ ঘুরেফিরে দেখেও কোনো সমাধান বা নকশা আয়ত্ত্বে এলো না। লোহার গেইটটা ধরে দু তিনটা ঝাঁকি দিয়েও লাভ হলোনা। বাইরে থেকে তালা মারা নয়। অর্থাৎ ভেতর থেকে আঁটকানো। এখানেও আবার কেউ থাকে নাকি?
আনমনে পেছন ফিরতেই থমকে দাঁড়াল অন্তূ। হামজা জিজ্ঞেস করল, “এখানে কী করছো?ʼʼ
-“এত নিঃশব্দে তো বিড়ালও পা ফেলতে পারেনা, মেয়র সাহেব! তার ওপর শুকনো পাতার ওপর হেঁটে এসেছেন!ʼʼ
-“আরও অনেককিছুই পারি আমি। আপাতত তোমার ধারণাও সে অবধি পৌঁছায়নি।ʼʼ
-“বলাবাহুল্য। অভিজ্ঞ মানুষদের কথাই আলাদা। আমার পিছু নিয়ে এসেছেন?ʼʼ
-“তুমি নিজেকে খুব দক্ষ গোয়েন্দা ভাবছো?ʼʼ সূক্ষ্ণ হাসল হামজা।
-“উহু! কৌতূহলি হয়ে পড়েছি আপনাদের বাড়িতে এসে।ʼʼ
-“কৌতূহলি বিড়ালের সামনে ফাঁদ ছাড়া অন্যকিছু থাকার সম্ভাবনা খুব কম।ʼʼ
-“বিড়ালকে ফাঁদে ফেলার এমন কী দরকার?ʼʼ
-“মাছ না খেয়ে যায়।ʼʼ
অন্তূ হেসে ফেলল, “আপনি কি ভয় পাচ্ছেন আমায়, মেয়র সাহেব?
-“তুমি হালকাভাবে নিচ্ছ আমায়।ʼʼ
-“ছিহঃ! এতবড় ভুল আমি কখনোই করব না।ʼʼ
-“এই-যে নজরদারী! এটাও তো মস্তবড় ভুল।ʼʼ
-“ভুল জীবনের চালিকাশক্তি। যে ভুল করতে ভুলে যায়, তার জীবন ওখানেই থেমে যায়। ভুলের পেছনে ছুটেই তো আমরা পরিণতিতে পৌঁছাই।ʼʼ
হামজা এবং অন্তূর একটা দূর্জ্ঞেয় দৃষ্টি বিনিময় হয়। হামজা কিছুক্ষণ চুপ থেকে হেসে ফেলল, “তোমাকে বিয়ে দিয়ে এনেছিলাম কেন, বলো তো!ʼʼ
-“আমাকে আটকাতে। আপনি জানতেন আমি বাইরে থাকলে, আমার ওপর নজর রাখা একটু টাফ হবে। তাই পাশের ঘরে এনে রাখলেন! ভুল করেছেন, বিশাল ভুল।ʼʼ
-“ভুল জীবনের চালিকাশক্তি।ʼʼ অন্তূর বলা কথাটা অন্তূকে মনে করিয়ে দিয়ে চোখ মারল হামজা।
—
রাতের বেলা হাইওয়ে ব্রিজে দাঁড়িয়ে হামজা জয়কে বলল, “বাঘিনীর চেয়ে আহত বাঘিনী বেশি ভয়ানক হয়। কমন তবে গুরুত্বপূর্ণ কথা। তোর বউকে নিয়ে বিপত্তি বাঁধবে দেখছি।ʼʼ
হাসতে হাসতে “মেরে ফেলব?ʼʼ কথাটা এমনভাবে বলল জয়, দুজনের চোখাচোখি হওয়ায় হো হো করে গা দুলিয়ে হেসে ফেলল।
-“তুই কি প্রেমে পড়ে যাচ্ছিস?ʼʼ
-“দেখতে, শুনতে ভালো। শরীরটা টানে, কিন্তু শালি খুব কড়া। প্রেম-টেম টের পাচ্ছিনা।ʼʼ
-“পড়লেও বেশি পড়িস না।ʼʼ
-“আচ্ছা।ʼʼ পিচ করে এক খাবলা থুতু ফেলল ব্রিজের নিচে।
-“মেয়েলোকের প্রেমে পড়া আমাদের শরীরের জন্য হানিকারক।ʼʼ
দুজন বেশ কিছুক্ষণ পাগলের মতো দম ছেড়ে হাসলো। থামেই না হাসি। উল্টাপাল্টা কী কথা বলে আবার হাসে। জয় প্রস্তাব দেয়, “রাস্তা ফাঁকা। চলেন, একটা দৌঁড় প্রতিযোগীতা হয়ে যাক।ʼʼ
বহুদিন পর জয় ‘আপনিʼ সম্বোধন করল হামজাকে। হামজাকে রেখে ঝরঝর করে ‘রেডি, 1, 2, গোওʼ বলে ঝেরে দৌড় লাগায়। কিছুদূর পৌঁছে চিৎকার করে বলে, “আমি জিতে গেছি। তোমার শরীর ভারী হয়ে যাচ্ছে। বউয়ের সঙ্গ কমাতে হবে।ʼʼ
হামজা তেড়ে যায় জয়কে মারতে। জয় দৌড়াচ্ছে, বহুদূর দৌড়ে যায় দুজন। সামনে বিস্তীর্ণ মাঠ। অল্প কুয়াশা। দুজন থেমে দুটো সিগারেট জ্বালায়। জয় গান ধরে,
ভেবে দেখেছ কি..তারারাও যত আলোকবর্ষ দূরে;
তারও দূরে, তুমি আর আমি ক্রমে যাই সরে সরে…
—
এক সকালে দোতলার দরজায় কলিং বেলে চাপ পড়ছিল। অন্তূ দরজা খুলল। ডাকপিয়ন দাঁড়িয়ে আছে। তুলির নামে পত্র এসেছে। রেজিস্টার করা পত্র। তুলি তখনও কোয়েলকে নিয়ে ঘুমাচ্ছিল। অন্তূ চিঠিটা গ্রহন করল তবে খুলল না। স্বভাব নেই তার এরকম।
দুপুর গড়িয়ে যাবার পর অন্তূর মনে পড়ল, তুলিকে চিঠি দেবার কথা। তুলি চিঠি খুলে ধুম ধরে বসে রয়। চোখে-মুখে প্রতিক্রিয়া নেই। অভিব্যক্তিহীন নজরে চেয়ে রইল দেয়ালে ঝুলানো ক্যালেন্ডারের দিকে। জানুয়ারীর ৩ তারিখ আজ। দেশ উত্তাল ঢেউয়ে ভাসমান। অবরোধ, হরতাল, র-ক্তার-ক্তিতে পিচের রাস্তা রঞ্জিত হয়ে উঠছে চারদিকে। সহিংসতা, বর্বরতার খবরে কান পাতা যায়না। তার মাঝ দিয়েও পারিবারিক, ব্যক্তিজীবনের টানপোড়েনে একটুও ভাঁটা পড়েনি। জীবনটা কেমন যেন! খুব পাগল, খুব এলোমেলো এই জীবনের পরিকল্পনাগুলো। ওর এসব পরিকল্পনা মোতাবেক পরিচালিত হতে হতে মানুষ কবে কবে যেন নিথর হয়ে যায় তবুও থামেনা জীবন।
অন্তূ পত্র খোলে। ডিভোর্স পেপার। জ্বলজ্বল করছে এক সিগনেচার—সীমান্ত এহমাদ। তুলির সিগনেচারের জায়গা ফাঁকা।
চলবে…