অবরুদ্ধ_নিশীথ #তেজস্মিতা_মুর্তজা ৫৪.

0
2

[সতর্কতা: সহিংসতা আছে। ]

#অবরুদ্ধ_নিশীথ
#তেজস্মিতা_মুর্তজা

৫৪.

ক্লাবঘরে ফের আগুন জ্বলেছিল সেদিন। তখন দুপুর বারোটা। ওয়ার্কশপের দুজন ছেলে বাদে সবগুলো একচোটে দৌঁড়াল ক্লাবের দিকে। ওটা ওদের প্রাণের স্থল। রাতে শুধু ঘুমানো হয় বাড়িতে। সকাল থেকে রাত, ওখানেই কাত। আজ কিছুদিন পাটোয়ারী বাড়ির নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে ওদেরকে এ বাড়ির একতলা ভবনে থাকতে হচ্ছে। হন্য হয়ে লাঠি-ছুরি-দা নিয়ে ছুটল সবগুলো। কোনোদিকে খেয়াল নেই। যারা আগুন লাগিয়েছে, তাদের রক্ত দিয়ে আগুন নেভানো হবে আজ। দুর্ভাগ্যবশত কাউকেই পেয়েছিল না ওরা। শুধু আগুন জ্বলছে, বহর বাড়ছে।

ওয়ার্কশপের দুজন দেখল তার খানিক পর পলাশ ও মাজহার ঢুকছে। দুজন উঠে কপালে হাত ঠেকিয়ে সালাম দিয়েছিল তড়িঘড়ি। পলাশ এবার বেশ কিছুদিন পর আসলো, আগে প্রায় দিনই তাকে গোডাউনে আসতে দেখা যেত। কিন্তু মাজহার কেন সাথে এসেছে, তা জিজ্ঞেস করার সাহস পলাশের কাছে ওদের নেই। রাগ হলো মাজহারকে দেখে। তবু কিছু বলার নেই। পলাশ মানুষ নয়। তাছাড়া ওরা দুজন দুশ্চিন্তায়— জয় ও হামজা ফিরে এই ঘটনার জন্য কী করবে? পৌরসভার জরুরী অধিবেশনে থাকলে হামজাকে কল বা কোনো প্রকার তলব সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। দুশ্চিন্তায় সিটিয়ে ছিল দুজন। পলাশ হেলে দুলে বাড়ির মেইন ফটক পেরিয়ে ভেতরে ঢুকে গেছিল।

ক্লাবঘর এমনিতেই বিরোধী পক্ষের আগের হামলায় ভঙ্গুর হয়ে পড়েছিল। আজকের আগুন পেট্রোল ঢেলে জ্বালানো হয়েছে। দাউদাউ করে শুধু উপরে উঠছিল। অতগুলো ছেলে মিলেও হিশশিম খেয়ে যাচ্ছিল আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে। সাধারণ লোকজন এসব থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করে সবসময়ই।

পলাশ গতরাতে জয়কে কল করে একটা প্রস্তাব রাখল, “বাপ, আয় একটা ডিসকাশনে যাই। আমার কাঁচামাল বর্ডারে আঁটকে আছে। দুজন গিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে আসি। এই ফাঁকে কথা হবে।ʼʼ

-“আপনি কোথায়?ʼʼ

-“এখন জয়পুরহাট।ʼʼ

-“বর্ডারে তো আপনার মাল আসেনা। জয়পুরহাট বর্ডারের কাছাকাছিও না তেমন। আর আপনার মাল আসে বন্দরে। তো জয়পুরহাট কী করছেন?ʼʼ

-“একটা কাজে এসেছিলাম। আচ্ছা তুই আমায় বিশ্বাস করতে পারিস না ক্যান?ʼʼ

-“আপনি বিশেষ কী? জয় আমির নিজেকেও বিশ্বাস করেনা, পলাশ ভাই।ʼʼ

-“এত সতর্কতা দিয়ে কী হবে? তুই আমার যা ক্ষতি করেছিস, আমি ফুল-ড্যামেজ, জয়। চাইলেও কিছু করার নেই। অন্তত আপাতত।ʼʼ হো হো করে হাসল পলাশ, “আয়, মালগুলো ছাড়িয়ে আনি। কাকার কেইসটা নিয়ে খুব ঝামেলায় আছি। তোকে দরকার।ʼʼ

জয় চুপ ছিল। পলাশ জানে, জয় কচুর পাতা। হাজার টন পানি ঢাললেও ভিজবে না। চতুরতার ঊর্ধ্বে চলে সে। পলাশ বলল, “আমি যদি ক্ষমা করে দেই তোকে? আমি তোর ক্ষতি করেছি, তুই আমার। কাটাকাটি। আমার তোকে দরকার। তোর আমাকে..ʼʼ

জয় হাসল, “আপনাকে আমার কোনো দরকার নেই, তা জানেন আপনি। জয় আমির হ্যাজ রানস অন হিজ ওউন ডিস্টিনিক্ট স্ট্রেন্থ। আর না সে আপনার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। এত নাটক করবেন না আমার সাথে। ঘুরতে যাই না বহুদিন। এই ফাঁকে ঘুরতে আসছি। এর বেশি কিছু না।ʼʼ

জয় জানতো না, পরিস্থিতি এমন হবে। সে বাড়িতে যে কড়া পাহারা বসিয়েছে, তার ওপর হামজা ভাই তো জেলাতেই থাকছে। হামজাও বলল, “গিয়ে, ঘুরে আয় একবার। বিট্রে হলেও আছি আমি সামলাতে।ʼʼ


অন্তূ থাকলে পলাশ ও মাজহার হয়ত তার হাতে বলি হয়ে যেত আজ। পরিস্থিতি ঠিক তরুকে একলা করে ছেড়ে দিয়েছিল সেদিন দুজন রাক্ষসের হাতে। দূর্বল তরু, মানসিকভাবেও দূর্বল। পেরে ওঠেনি।

তরুর ওড়না খুলে একপ্রান্ত ছিঁড়ে সেটা তরুর মুখে গুঁজে দিয়েছিল পলাশ। গোঙানির আওয়াজটুকুও বের হয়নি গলা থেকে। মাজহারকে তরুর দিকে ঠেলে দিয়ে সে সোফায় বসল, যেমনটা নাটকের দর্শকেরা মঞ্চের সম্মুখে বসে। তরুর চোখের কাতরতায় পলাশ নিজের সবকিছু হারানোর যন্ত্রণার একটু একটু মূল্য ফেরত পেয়েছে। যা সে জয়ের বউয়ের সাথে করতে পারেনি, সেই অতৃপ্ততাটুকুও পূরণ করেছে। অন্তূকে জয় ছাড়িয়ে এনেছিল তাকে অপমান করে, সেই শোধটুকুও শোষন করে নিলো।

এরপর গেল সে তরুর শেষ সময়ে। বিশাল পাটোয়ারী বাড়ির মাঝ-মেঝেতে নরক নেমেছিল সেদিন। তরুর ছিন্নভিন্ন দেহটা বেহুশ পড়ে আছে তখন। প্যান্টের চেইন লাগিয়ে তৃপ্ত মুখে পলাশের পাশে এসে ধপ করে বসল মাজহার। পলাশ পিঠ চাপড়ে হাসল, নীরবে সাব্বাসী জানালো মাজহারের পুরুষত্বকে।

অজ্ঞান তরুকে তোলা দরকার। এমনিতেই মুখে কাপড় গোঁজা থাকায় চিৎকার শোনা যাচ্ছিল না। পলাশ খুব অসন্তুষ্ট তাতে। আবার যদি বেহুশ থাকে, হলো? পানি ছেটালো মুখে। শরীরে হাত দেয়া যাচ্ছিল না। জ্বরে চিরচির করে পুড়ছে যেন ছোট্ট, নাজুক দেহটা।

তরুর শ্বাসের গতি তখন খুব ধীর। চোখ খুলতে পারছিল না ঠিকমতো। চোখ বুজে খুব ধীরে শ্বাস টেনে নেবার চেষ্টা করেছিল। শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঁচড়-খামছিতে চামড়া খসে গেছে। চোখের কোণা দিয়ে টসটসে গরম নোনাজ্বল টুপ টুপ করে কয়েক ফোটা মেঝেতে পড়ল। তরু পলাশকে চোখের ইশারায় সাবধান করার চেষ্টা করল, ‘জয় আমির তোকে ছাড়বেনা রে। একটু চিন্তা কর। আমি তোর ভালোর জন্য বলছি। শোন, একটু সময় দে আমায়! ওই লোকটাকে কথা দিয়েছি আমি—ফিরলে সুজির হালুয়া বের করে দেব। এই শেষ কর্তব্যটুকু করতে দে। ওর আর কেউ নেই রে। আমি না দিলে কেউ দেবে না। খাবেও না আর…বড় বেপরোয়া, বেখেয়ালি লোক সে। একটু সময় দে….ʼ

শেষ মুহুর্তে তরু হেসেছিল। জয় ঝুঁকে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। গলার শিকলের মতো দেখতে চেইনটার লকেটে ঝুলন্ত লেটারটা তরুর শরীর ছুঁয়ে যাচ্ছে। তরু অনুভব করল। জয় কি কাঁদছে? তরুর যন্ত্রণায় বুঝি! ছিঃ! একটুও ভালো লাগছিল না দেখতে জয়কে। জয় আমিরকে হাস্যরত সুন্দর দেখায়। ওই কঠিন অবয়বের মুখে মলিনতা একটুও সাজে না। ঠোঁটের কোণে দুষ্টু-রসিক হাসি আর চটা ভ্রুর নিচে পড়া গভীর চোখদুটোয় জীবনের ক্লান্তির সংমিশ্রণ বড় মানায়।

তরু শেষবার দেখল তার জয়কে। জয় চেয়ে আছে। আরেকজনের কথা তরুর মনে পড়ছিল। উকিল আরমিণকে দেখা হলো না তরুর। ও থাকলে কি এমন হতো ওর সাথে? হামজা ভাইয়ের মুখটা ভেসে উঠেছিল। গম্ভীর, বিশালাকায় দাড়ি-গোফের মুখটায় একরাশ শ্যামলা মায়া।

তরু আস্তে করে চোখ বুজল। খুব শান্তি লাগছে। জীবনের অবসানে এত সুখ! হবে না? জীবন তো অতি নিষ্ঠুর। তার কাছ থেকে ছাড়া পাওয়া তো সুখেরই! তবু বুকে কলিজা ছেঁড়া যন্ত্রণা! মায়ার টান বলে না এটাকে? তাই তো! কিন্তু কীসের মায়া? দুনিয়ার? নাকি কয়েকটা পরিচিত মুখের। একটা আস্ত ছন্নছাড়া জয় আমিরের মায়া নয় এটা! এ তো এক চঞ্চল, অদ্ভুতুরে পুরুষের মায়া! যার পারফিউমের কৌটাটাও তরু এগিয়েছে! ধুর! কালোজিরে বেটে খাওয়াবে কে জয় আমিরকে? আর কাজুবাদামের পাত্রটাই বা বেড-সাইড টেবিলের ওপর নিঃশব্দে রেখে আসবে কে?


অন্তূ আর বাড়িতে গেছিল না। সোজা পাটোয়ারী বাড়ির দিকে রওনা হলো। তরুর জ্বর। এতক্ষণে জয় আমির বেরিয়ে গেছে। মেয়েটা নিশ্চয়ই একা। অসুখে মরবে তবু মুখ ফুটে বলবে না কিছু।

বাড়ির সামনে রিক্সা থামতেই ওয়ার্কশপের ছেলেদুটো দ্রুত এগিয়ে এসে সালাম দিলো, “আসসালামুআলাইকুম, ভাবী।ঠিক আছেন?ʼʼ

ভাড়া মিটিয়ে রিক্সা বিদায় করল দুজন। অন্তূ বলল, “ওয়ালাইকুমুসসালাম। কী ব্যাপার! আর সব কোথায় গেছে? এভাবে বাড়ি ফাঁকা রেখে কোথায় গেছে ওরা?ʼʼ

দুজন কাচুমাচু হয়ে গেল। অন্তূর এ পর্যবেক্ষক দৃষ্টিকে ওরা ভয় পায়, ঠিক জয়ের মতোই।

-“আসলে ভাবী…ʼʼ

-“এত হেজিটেশনের কী আছে? বাড়ি ফাঁকা রেখে এভাবে বেরিয়ে গেছে। চারদিকের অবস্থা তো জানেন! কখন কী হয়! তাছাড়া আপনাদের বড়ভাইয়েরা জানলে বিপদ আপনাদের।ʼʼ

-“আগুন লাগছে, ভাবী!ʼʼ কোনোমতো বলল একজন।

ভ্রু কুঁচকে ফেলল অন্তূ, “কোথায়?ʼʼ

-“ক্লাবঘরে। ওরা ওইখানেই…ʼʼ

অন্তূর গা শিউরে উঠল। মুহুর্ত দেরি না করে পা ঝারা মেরে মুহুর্তের মাঝে ফটক পেরিয়ে সিঁড়ির দিকে দৌঁড়াল।

দোতলার সদর দরজা খোলা দেখে সেদিন অন্তূর অন্তরাত্মা থরথরিয়ে উঠেছিল অজানা আশঙ্কাতে। অন্তূই প্রথম পেয়েছিল তরুর ছেঁড়া দেহটাকে। বিমূঢ় হয়ে বহুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল দেয়াল চেপে ধরে।

তরুর দু-পায়ের মাঝ দিয়ে র^ক্তের ধারা নেমেছে, ঠিক যেমন গর্ভপাত হলে হয়। শরীরে র^ক্তের সাথে লেপ্টে থাকা খণ্ড খণ্ড জামাটায় অসংখ্য ব্লেডের কাটা। ঠিক তেমনই শরীরটা ব্লেডের আঘাতে কাচাকাচা করা হয়েছে। অন্তূ কুড়িয়ে কুড়িয়ে সেদিন তিনটা গোটা ও দুই টুকরো ভাঙা র^ক্তমাখা ব্লেড পেয়েছিল। যেগুলো তরুকে নরকযন্ত্রণা দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।

তখনও পুরো বাড়িটা কবরের মতো অন্ধকার। প্রতিটা জানালা দরজা বন্ধ। এখানে মানুষকে হাজার টুকরো করলেও আওয়াজ বাইরে যাবার নয়। তরু শুয়ে আছে। এখন তার আর কোনো যন্ত্রণা নেই। শুকনো রক্ত ও যন্ত্রণাগুলো শুষে নিয়ে দেহটা পরম আরামে শায়িত এখন। অন্তূ নিজের দেহ থেকে ওড়নাটা খুলে আস্তে করে তরুর নগ্ন দেহটার চাপা দিলো। হাতদুটো শক লাগা রোগীর মতো থরথর করে কাঁপছিল।

অন্তূর কান্না আর আত্ম-চিৎকারগুলো আর বাইরে আসেনি। সে বহুআগেই শব্দ করে কাঁদতে না ভুললে সেদিন তার কান্নায় আকাশের ভিত বুঝি কেঁপেই উঠতো!

মুমতাহিণার কথা মনে পড়ছিল। সেই ভার্সিটির মাঠ! শীতের সেই সকালে হামজা আর জয়ের বিশাল অবহেলা নিয়ে লোক দেখানো বসে থাকা। কালপ্রিট সেই পলাশই, ভিক্টিম সেই এক ধর্ষিতার ছিন্নভিন্ন লাশই! শুধু সময় বাজি পাল্টেছে। উপরওয়ালা বুঝি ভোলেন না কিছুই! এই বাড়িতেই ছোট্ট মুমতাহিণার দেহটাকে হুমায়ুন ও পলাশ মিলে খুবলে খেয়েছিল। দিন ফেরে তো! তুলনামূলক ভয়ানক হয়েই ফেরে। শুধু সময়ের আবর্তন। কিন্তু সময়ের ফেরাটায় ইনসাফ থাকেনা। একটুও না। কার পাপ কার ওপর দিয়ে এমন ভয়ানক হয়ে বয়ে যায়! তরুর অপরাধ কি শুধুই পাপীদের আশ্রয়ে আশ্রিতা হওয়া ছিল? এই অপরাধের এত চমকপ্রদ মাশুল! এটা না-ইনসাফি নয়! অন্তূ ওপরের দিকে চেয়ে অভিযোগ করে ওঠে মালিকের কাছে।

উঠে আস্তে আস্তে হেঁটে রুমে যায়। জয় আমিরের ছবিতে রুমের দেয়ার ভর্তি। সেদিকে তাকিয়ে একটা ওড়না গায়ে জড়িয়ে বাড়ির ফোন দিয়ে প্রথমবার হামজাকে কল করল, “মেয়রসাহেব! পাপ ফিরেছে, মেয়রসাহেব! তরুর ওপর দিয়ে বয়ে গেছে। আসবেন একবার? আসুন বরং বাড়িতে একবার। পাপ দেখবেন।ʼʼ

তুলির কান্নার আওয়াজে বাড়ির ইটগুলোতে কাঁপন ধরে যাচ্ছিল সেদিন। এই ছোট্ট তরুকে সে ছোটবেলায় চুল ধরে কত মেরেছে কথা না শুনতে চাইলে, আবার ওই পুঁচকে মেয়েটাকে ছাড়া একা শুতেই পারতো না ঘরে। আজ থেকে
কী করে একা থাকবে ওই ঘরে! মেয়েকে সামলাবে কে? চিৎকার করে কাঁদছিল তুলি।

রিমি পাগলের মতো ফুপাচ্ছিল মেঝের এককোণে গুটিসুটি মেরে বসে। বারবার হেঁচকি উঠছিল। হামজা শক্ত করে ধরে রইল ওকে। হামজার বুকে মাথা লুকিয়ে চাপা কান্নায় গুঙরে উঠল মেয়েটা। পাগলের মতো গোঙাচ্ছিল। হামজা দু’হাতের বাহুবন্ধনে রিমিকে শক্ত করে নিজের বুকের মাঝে চেপে ধরে রইল। ভয় পাচ্ছে রিমি। চোখই খুলছে না ভয়ে। হামজা শান্ত চোখে চেয়ে রইল সদর দরজার দিকে। পুলিশ আসবে, এ নিয়ে তার ভাবনা নেই। ওই পাগল আসবে। তারপর কী হবে? তরুর মায়ার মানুষ ঢুকবে এখনই।

জয় এলো। খুব ধীরে হেঁটে গিয়ে তরুর লাশের পাশে দাঁড়াল। আরমিণের ওড়না দিয়ে ঢাকা তরুর দেহটা। ওড়নাটা রক্তাক্ত হয়ে উঠেছে। রক্তের রঙটা বড় প্রিয় জয়ের। আজ ভালো লাগছিল না। চোখে শূলের মতো বিঁধছিল।

অন্তূ চুপ করে তরুর গা ঘেঁষে, তরুর হাতটা হাতের মুঠোয় নিয়ে। জয় আস্তে করে হাঁটু মুড়ে মেঝেতে বসে। অনেকক্ষণ সময় ধরে চেয়ে থাকে তরুর বোজা চোখদুটোর দিকে। আলতো হাসে।

অন্তূ শিউরে ওঠে সেই হাসিতে। এত ভৌতিক সেই হাসি! জয় পারে! কঠোর এক ভৌতিক হাসির মালিক সে। সেই হাসিতে কী থাকে, তা বলা মুশকিল। তবু আনমনে কীভাবে যেন হাসতে পারে এই লোক।

চোখের শিরা-উপশিরা রক্তিম লাল। সচ্ছ পানির দানা ভাসছিল। সেই চোখ মেলে চেয়ে জয় শুধুই হেসেছিল নিঃশব্দে। তরুর মুখের ওপর অল্প ঝুঁকে পড়ে বলেছিল, “তুই জয় আমিরকে ক্ষমা করিস না, তরু। তবু…. তবে সে মরেনি এখনও।ʼʼ

নিজের বাঁ হাতটা তুলে যখন তরুর তপ্ত কপালটা ছুঁলো, হাতের ধাতব রুপালি রিস্টলেটটা তরুর বন্ধ চোখের পাতায় বিছিয়ে পড়ে। জয় আরেকটু ঝুঁকে মুচকি হেসে ফিসিফিস করে বলেছিল, “আমি এখনও বেঁচে আছি। তোর কবরের ডানে-বাঁয়ে মাজহার আর পলাশের ধড়হীন মাথা দুটো দাফন করব আমি।…..কথা দিলাম। তবু ক্ষমা করিস না আমায়। একটুও না কিন্তু, খবরদার!ʼʼ

সেদিন কেউ দেখতে পায়নি—জয় আমিরের বাম গাল বেয়ে নেমে যাওয়া একফোঁটা নোনাপানি ঠোঁটের বিভাজনে গিয়ে মিশেছে।
ওভাবেই জয় আমির মেঝের দিকে ঝুঁকে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। হেঁটে গিয়ে ফ্রিজ খুলে কনটেইনার-বক্সটা বের করে সুজির মিষ্টিদুটো একগালে ঢুকিয়ে খুব তৃপ্তিসহকারে চিবিয়ে গিলল। সে কম করে খেতে পারেনা। এই বড় বড় লোকমায় খাবার খাওয়া তরু কত্ত আবেশ নিয়ে দেখতো!

ডাইনিং টেবিলের কাছে গিয়ে জগ উপুড় করে ধরে ঢকঢক করে লিটারখানেক পানি খেল জয়। সে খুব রিল্যাক্স! আরাম করে গামছা টেনে নিয়ে মুখ মুছল। এরপর পায়ের টাখনুর ওপর প্যান্ট গোটাতে গোটাতে ঝুঁকে হেঁটে বেরিয়ে গেল বাড়ির বাইরে। কত কাজ এখন! পুলিশ আসবে। ইন্টেরোগেট করবে। লোকজনের ভিড় জমবে। খবর বেরোবে…অনেক কাজ!

চলবে…

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here