অবরুদ্ধ_নিশীথ #তেজস্মিতা_মুর্তজা ৫৯.

0
1

#অবরুদ্ধ_নিশীথ
#তেজস্মিতা_মুর্তজা

৫৯.

বিছানায় শুয়ে অল্প একটু চোখ লেগে গেছিল হামজার। আচমকা জেগে উঠল। রিমি বিছানার এককোণে জানালার ধারে বসে আছে। হু হু করে এসির ঠান্ডা বাতাস আসছে, তবু জানালার কাঁচ খুলে রেখেছে। আন্দাজ করা যায়, রাত প্রায় শেষ। আজকাল রাতটা বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হয়েছে। তবে কোনো ভাগেই ঘুমের সুযোগ নেই।

হামজা এদিক-ওদিক তাকাল। গলাটা ঘেমে ভিজে গেছে। ফতোয়াটা চিটচিট করছে। এসির হাওয়া বেরিয়ে যাচ্ছে বাইরে। আনমনে বসে থাকা রিমিকে আঁধারে অদ্ভুত লাগছিল। হামজার কপালে চিরবির করে উঠল। ঘুমের প্রচণ্ড ঘাটতি পড়ে গেছে কিছুদিন। উঠে বসতেই প্রথমত জয়ের চিন্তা মাথায় এলো। পাগলটা কী করছে, কে জানে!

রিমি জানালা থেকে মুখ না ফিরিয়েই বলল, “উঠলেন কেন? কিছু চাই?ʼʼ

-“তুমি ঘুমাবে না?ʼʼ

-“ঘুম আসছে না।ʼʼ

-“এভাবে শরীর খারাপ করতে চাও?

রিমি কিছুটা সময় নিয়ে বলল, “গতকাল আব্বু কল করেছিল।ʼʼ

-“তোমার চাচার লাশ তো এখনও মর্গে, বাড়িতে আনলে নিয়ে যাব, দেখে আসবে।ʼʼ

-“যেতে চাইনি তো।ʼʼ

-“তাতে কী? কাকা তো! দেখতে যাবেনা শেষবার?ʼʼ

রিমি স্লান হাসল, তা কেমন যেন দেখালো। উদাস স্বরে বলল, “আপনার মস্তিষ্ক এত ধারালো আর জটিল, হামজা!ʼʼ
-“হঠাৎ একথা!ʼʼ

-“এখনকার কথাই চিন্তা করুন না! আমি শুধু বললাম, আব্বু কল করেছিল। ব্যাস, গোটা কাহিনিটা মুখস্ত পড়ার মতো বুঝে তার উপস্থিত জবাব দিয়ে দিলেন। ঠিক যেন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স।ʼʼ

হামজা হাসে, “বোকা বেগম! আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সটাও স্বয়ং মানুষের বুদ্ধিমত্তার সামান্য অংশ মাত্র।ʼʼ

রিমি চমকালো। কিছুক্ষণ চুপ থেকে আনমনে বলল, “আপনাকে আমার আজকাল ভীষণ ভয় করে।ʼʼ

-“বুঝি। তবে তার যুক্তি নেই।ʼʼ

ফিরে তাকায় রিমি, “নেই?ʼʼ

-“আমি তোমার জন্য ভয়ংকর না।….নারীদেরকে আমার ভয়ও নেই, ভরসাও নেই। আমি বিশ্বাস করি, নারী মমতময়ীর জাত। ওদেরকে আদর ও মমতায় ভিজিয়ে থামাতে হয়, অথবা কৌশলে। যতক্ষণ না তারা নিজের গণ্ডি পেরিয়ে পুরুষের কাজে বাগড়া দিতে আসে। তবু যথাসম্ভব খোলাখুলি জখম করতে নেই।ʼʼ

-“করলে কী?ʼʼ

-“ওরা কুচক্রী হয়ে ওঠে। আর একজন কুচক্রী নারী যদি কোনো ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি করে, সারা দুনিয়া একাকার হয়েও তার সমাধান দিতে পারে না।ʼʼ

রিমির মনে হলো, তার নিখুঁত উদাহরণ যেন আরমিণ। এই লোক পারিপাশ্বিকতা সব বোঝে, তবু অনড়। অন্ধকারেই হামজার ভরাট, বলিষ্ঠ, বুদ্ধিদীপ্ত মুখটার দিকে চেয়ে রইল। এরপর জিজ্ঞেস করল, “আমি বুঝিনা কেন আপনাকে একটুও? আপনি আসলে কোনদিকে এগোচ্ছেন?ʼʼ

-“আমি দিক ঠিক করি চলতি পথে। যখন চলতে শুরু করেছিলাম তখন কোনো গন্তব্য বা পথ ঠিক করে রাখিনি। শুধু একটা পণ করেছিলাম, এ পথচলা মৃত্যুর রোধ ছাড়া থামাবো না। মাঝপথে যা পেয়েছি, সব কুড়িয়ে নিয়েছি। এখনও ঠিক সেইভাবেই চলছি। সামনে যা পাবো, তা হাতভরে কুড়িয়ে নেব। থামবো কোথায়, তা অজানা।ʼʼ

-“সামনে রাস্তা বন্ধও তো থাকতে পারে!ʼʼ

তার বউ বুদ্ধিমতী হয়ে উঠছে। হামজা আওয়াজহীন হাসে, “কেউ একজন বলেছিলেন— যতদূর রাস্তা দেখা যায়, ততদূর অন্তত এগিয়ে যাও, পরের পথ সামনে পৌঁছাতে পৌঁছাতে পেয়ে যাবে। মানুষ অভিযোজনসম্পন্ন প্রাণী। পরিবেশ যা-ই হোক, তারা মানিয়ে নিয়ে বাঁচতে জানে।ʼʼ

রিমোট তুলে এসিটা অফ করে দিলো। জানালা দিয়ে ঠান্ডা হাওয়া আসছে। শেষরাতে ঘর ঠান্ডা হয় এমনিই।

রিমি জানালার দিকে পিঠ করে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে। কেমন ভঙ্গুর স্বরে বলে, “হামজা, আপনি কি জানেন, আমি আপনার এক অপূরণীয় রকমের ক্ষতি করেছি? এবং সেটা ছিল আপনার শাস্তি!ʼʼ

হামজা ভ্রু জড়ায়, “শাস্তি?ʼʼ

-“বিশাল শাস্তি।ʼʼ

হামজা দাড়িতে হাত বুলায়। রিমি অদ্ভুতভাবে হাসে, “আপনার দুটো নিষ্পাপ সন্তান খেয়েছি আমি। যদিও আমি জানিনা, পাপী বাপের সন্তানেরা নিষ্পাপ হয় কিনা!ʼʼ শেষের দিকে নারীকণ্ঠটা কেঁপে ওঠে রিমির।

হামজা নিথর হয়ে বসে রইল অনেকক্ষণ। তাকে থমকাতে, চমকাতে দেয়া যায়না। আজ যেন বিমূঢ় হয়ে গেছে।

বেশ খানিক পর হামজা গা ঝারা মেরে রিমির কাছে এসে দুই বাহু চেপে ধরল, গলার স্বর বর্বর হয়ে উঠল, “কী করেছ, তুমি?ʼʼ

রিমি ফুঁসে ওঠে, “আমি আপনাকে পুরুষত্বহীন করে দিয়েছি। একবার নয় দু’বার। শুনেছি, পুরুষ পরিপূর্ণ হয় তার শৌর্য-সন্তান দ্বারা! আমি আপনাকে তা থেকে বঞ্চিত করেছি। কারণ যে অন্যের সন্তানের প্রতি সামান্য মানুষিকতাবোধ রাখেনা, তার নিজের বাপ হবার অধিকার নেই। আমার তো এইটুকু ভরসাও নেই আজ আপনার ওপর, যে আপনি ক্ষমতার লড়াইয়ে আপনার নিজের সন্তানকেও কোথাও বাজি রেখে ঘরে ফেরেন….ʼʼ কথা শেষ করতে পারেনা রিমি, হিঁচকি উঠে গেল গলার কাঁপুনিতে।

হামজার নিঃশ্বাসের আওয়াজ হিংস্র হয়ে উঠছিল। হতবাক হয়ে গেল সে। এ কাকে দেখছে সে? এটা তার রিমি নয়। কার আছড় লেগেছে তার নমনীয়, বোকা রিমির গায়ে! ক্ষিপ্র শ্বাসগুলো বিক্ষিপ্ত স্রোতের মতো আঁছড়ে পড়ছিল রিমির ওপর। বুকের ওঠানামা বেড়ে গিয়েছিল নিঠুর-মানবটার।

রিমি ভেজা চোখেও তা দেখে এক প্রকার জিতে যাওয়ার সুখ ভেসে উঠেছিল। সে পেরেছে, সে একটু হলেও পেরেছে তার ঘরের দুর্যোধনের অশান্তির কারণ হতে। অথচ সে একসময় লোকটাকে পাগলের মতো ভালোবেসেছিল, আজকের কথা বলতে পারেনা। আজ তার অনুভূতিরা হামজার ওপর আজব রঙে রঙচটা।

হামজা ঝাঁকি মারল রিমিকে ধরে, “দুটো সন্তান এসেছিল তোমার পেটে? আমার সন্তান….দুটো সন্তান!ʼʼ হামজা দু হাতে মুখ ঢেকে অস্থির হয়ে বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে।

রিমি চাপা ক্ষোপে ফুঁসে উঠল, “হ্যাঁ, হ্যাঁ। আর তাদের আমি খুন করেছি।ʼʼ এরপর ঝরঝর করে কেঁদে উঠল তার মাতৃচিত্ত, “এই দুই হাতে ধ্বংস করে দিয়েছি তাদের। তারা জানুক, আপনার মতো একটা নিষ্ঠুর বাপই নয় শুধু, একটা নিষ্ঠুর মা-ও আছে তাদের।ʼʼ

হামজার সৌম্য-শ্যাম শরীরটা ভিজে উঠেছে। একটানে ফতোয়াটা খুলে ফেলল। সুস্থির পুরুষটির মাঝে অস্থিরতা বড্ড বেমানান। যে লোকটা নিকটাত্মীয়দের মৃত্যুতে অনড়, পাথুরে, সেই লোকটা যখন ছোট্ট রিমির এক বিমূর্ত নিষ্ঠুরতায় এমন পাগলপারা হয়ে ভঙ্গুর হলো, রিমির কাছে ভীষণ আজব লাগছিল। সে মুখে দু হাত চেপে হু হু করে কেঁদে উঠল। প্রতিটা ক্ষণে তার নারীহৃদয়ে ক্ষরণ চলে, প্রতি মুহুর্তে সে জলন্ত চিতায় দগ্ধ হয়! এত উৎপীড়ন, হুট করেই যেন নাজিল হয়েছে তার জীবনে, আর পথ দেখানোর জন্য আরমিণ। ভুল-সঠিক জানেনা, শুধু রিমি জানে, আরমিণ বিশেষ-অ-বিশেষ এক চরিত্র, যাকে এড়ানো যায়না।

আরমিণের প্রতি অদম্য ঝোঁক অনুভূত হচ্ছিল। ওই মেয়েটার প্রতিটা কথা অব্যর্থ তীর। আরমিণ বলেছিল, ‘রিমি! আপনি দেখবেন, এই সমাজের ক্ষমতাসীনেরা একই ঘটনার পেক্ষিতে নিজের ও সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে রাত ও দিনের মতো দুই রকম ধর্মের খেলা দেখাবে। রাজার ছেলে লাউ চুরি করলে হাত কাটার বিধান নেই, রিমি।ʼʼ

এই হামজা ও জয় প্রতিক্ষণে তা-ই তো দেখায়। রিমি অবাক হয়। সে রাজনৈতিক পরিবারে জন্মেও কখনও মানুষ ও সমাজের গঠনগত দিক নিয়ে এমন ভাবনায় অবতীর্ণ হতে পারেনি, যেসব আরমিণ ভাবে ও করে। সতরাং ক্ষেত্র মানুষের জীবনধারা ঠিক করেনা, মানুষের নিজস্বতা বরং একেকটা ক্ষেত্রকে বেছে নেয়।


জয় পরাগকে বলেছিল, “উনাকে নিয়ে বাইর হয়ে যান, আপনি।ʼʼ

রূপকথা দৃঢ় স্বরে বলে উঠল, “আমি কোথাও যাব না, জয়। তুমি আমাকে ঠিক কতটা দূর্বল ভাবো?ʼʼ

জয় জবাব দেবার প্রয়োজন মনে করল না। মহিলা মানুষকে লাই দেবারও নয় আবার তাদের সামনে বাহাদুরী দেখানোরও নয়। এমনিতেই ওরা পুরুষের অধীনস্থ, দূর্বল, অবলা। তাদের ওপর বাহাদুরী দেখানো অথবা মূল্যায়ন করা, দুটোই ছোটলোকি ব্যাপার-স্যাপার জয়ের কাছে।

অন্তূ অন্তত মুস্তাকিনের পরাগ হয়ে যাবার বিষয়টা নিয়ে প্রশ্ন করেনি, তাতে জয় অবাক হলো। রূপকথা জেদ ধরে বসে থাকে, “আমি কোথাও যাব না। কী করবে, তুমি?ʼʼ

-“আসলে আপনি থাকলে আমি আমার কাজে সামান্য অপ্রস্তুতবোধ করতে পারি। মেয়েলোক, তার উপর..ʼʼ

-“কী? বলো! মেয়েলোক…?ʼʼ তাচ্ছিল্য হাসে রূপকথা, “নারী বিদ্বেষ বা অবমাননা যায়নি এখনও। অন্তূ, তুমি কী করলে এতগুলো দিনে? ওর ভেতরে এখনও পৌরুষ অহংকার ভরপুর দেখছি।ʼʼ

-“কথা না বাড়াই, কথা আপা। পরাগের সাথে চলে যান।ʼʼ

-“যাব না আমি। বলেছি তো। আর কোথায় যেতে বলছো?ʼʼ

জয়ের চোখেমুখে নিদারুণ গাম্ভীর্য। সোফাতে বসে টাখনুর কাছের প্যান্ট ঠিক করছে অকারণে।

ঢোকার পর মুচকি হেসে পরাগ একবার অন্তূকে জিজ্ঞেস করেছিল, “ভালো আছেন, ম্যাডাম?ʼʼ

অন্তূ বিনিময়ে কেবল অতি-সামান্য হেসেছিল। সে বুঝছে, জয়ের মতো ধূর্ত শেয়াল অকারণে এমন একটা জায়গায় আসার লোক নয়।

জয় খানিক বাদে আচমকাই হাসল, কেমন অপার্থিব ভয়ানক সেই হাসি রূপকথাকে বলল, “যান। দেখা করে আসুন একবার।ʼʼ

কাঠের এই বিদেশী গড়নের বাড়িটা রাজন আজগর পলাশকে উপহার দিয়েছিলেন। বাগান বাড়ি অবসর কাটানোর জন্য ভালো। চমকপ্রদ সুন্দর বাড়ির ভেতর-বাহিরের পরিবেশ।

বেসমেন্টের দরজা ঠেলে রূপকথা ভেতরে ঢোকে। ঘুটঘুটে অন্ধকার। কারও রুদ্ধশ্বাসের ভোঁতা আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। আলো জ্বালায় রূপকথা।

মেঝেতে পড়ে আছে পলাশ। ডান পায়ে শিকল আঁটকানো। সেটা না থাকলেও ছোটার ক্ষমতা নেই। শরীরে ড্রাগের মাত্রা অত্যাধিক। দুটো দিন মেলাটোনিন পুশ করা হয়নি। অর্থাৎ পলাশ ঘুমায়ওনি দু’দিন। প্রায় মরণ সমান তা। তার একাধিক মানসিক রোগের মাঝে তীব্র ঘুমহীনতা একটা।
ওকে দেখে মনে হচ্ছিল, মৃত্যুর পর একবার নরকবাস করে আবার পৃথিবীতে ফিরেছে।
ফর্সা দেহটা ফ্যাকাশে হয়ে গেছে, যেন দেহের র/ক্ত সবটুকু বের করে নেয়া হয়েছে কোনো চোষক দিয়ে। চোখের মণিতে রক্ত জমাট বেঁধেছে দানা হয়ে। শুধু হালকা আলোতে চোখের মণিটা জ্বলজ্বল করছিল। হাতের বিভিন্ন স্থানে ফুটো, এবরোথেবরো ইঞ্জেকশন পুশড হয়েছে। তবু যেন কৈ মাছের জান। এ অবধি যে সাঁজাটুকু পলাশ পেয়েছে, যে কারও সাধ্যি নেই তা সহ্য করে বেঁচে থাকার।


দু’দিন আগে পলাশকে ধরে আনা হয়েছে এখানে। ক্রস ফায়ারের অর্ডার ছিল। পলাশসহ ওর দলের আঠারো জন অথবা বেশি এখনও দেশেই এবং তাদের মাঝে কমপক্ষে পনেরোজন সশস্ত্র দিনাজপুরে অবস্থান করছিল। সরাসরি র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন টিম রাজধানী থেকে নাজিল হয়েছিল পলাশের খাতির করতে।

বছরের পর বছর ধরে রাজন আজগর দেশের টেরোরিজমে বহুত অবদান রেখেছেন। তার রাখা অবদানে মানি-লন্ডারিং তার মাঝে অন্যতম।

কঠিন এক অপরাধ। যদিও এটা গোটা বাংলার সর্বত্র ও সর্বোচ্চ প্রচলিত অপরাধ। তাই এটাকে অপরাধ না বলা ভালো। কারণ মানি-লন্ডারিং কার্যক্রমটা আম জনতার দ্বারা সাধারণত ঘটে না। এটা ঘটে দেশের উচ্চাসনে বসে থাকা তথাকথিত জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা অথবা তাদের সাপোর্টে থাকা ক্রিমিনালদের মদদে। যাদেরকে রাজনীতিবিদ বলা হয়, জনসেবক ও উন্নয়নের কর্ণধারও বলা হয়। তারা কিছু করলে নিশ্চয়ই জনগণের ভালোর জন্যই করেন! দেশের অর্থ-সম্পদ চুষে নিয়ে গিয়ে বিদেশি ব্যাংকের লকার ভর্তি করাটা নিশ্চয়ই এক প্রকার দেশসেবাই! হোক সেটা নিজের দেশের পেছন মেরে অন্যদেশের অর্থব্যবস্থাকে সাপোর্ট করা।

এই অর্থ চোরাচালানের কাজে রাজনীতিবিদ ও সন্ত্রাসগোষ্ঠী একে অপরের তালা-চাবি। একটা ছাড়া আরেকটা অচল। সন্ত্রাসরা সাধারণত পুঁজিবাদের নামে বিশাল ব্যবসার মতো দেখতে একটা ক্ষেত্রে তৈরি করে, তার মাধ্যমে দেশের বাইরে একদম নিরাপদ উপায়ে অর্থ চালান করার সুগম সুযোগ করে দেন দেশের সম্মানিত উচ্চশ্রেণীর জনপ্রতিনিধিগণ। অথচ এই অর্থ আসছে কোত্থেকে এবং মূলখাত কোথায়, তা জানার উপায় থাকেনা হাত বদল হতে হতে। সর্বশেষে যে হাত থেকে অর্থ হস্তান্তর হয়, তা দেখে লাগে অর্থ পুরোটাই বৈধ, এক লিগ্যাল বিজনেস-ইন্টারেস্ট টাইপ কিছু। অপরাধ কোথায় এই অর্থে?

মূলত পলাশের মাধ্যমে চালান করা অর্থগুলোর অধিকাংশ ছিল দেশের জনপ্রতিনিধিদের দেশ শোষিত মাল। ভদ্র ভাষায়–রাজনৈতিক দুর্নীতির মুনাফা। সেটার একটা দৃশ্যমান খাত ছিল রাজন আজগরের বিশাল কারবার— মাদক, পতিতাবৃত্তি, চাঁদাবাজি, সম্পত্তি নিলাম, পাচার,
খু/ন, জুয়া ইত্যাদি।

পলাশ দিনাজপুরে একজন টাটকা চাঁদাবাজ, সুদখোর। তাদের মূল কারবার রাজধানীতে। বিভিন্ন স্থানে আবাসিক হোটেল, ক্যাসিনো, জাল টাকা, নারীব্যবসা প্রভৃতির ধান্দা সব রাজধানীতে চলে।

প্রথমত ২০০২-এ দেশ থেকে প্রায় সন্ত্রাসবাদ নিপাত হয়েই গেছিল ‘অপারেশন ক্লিনহার্টেʼর বদৌলতে। এর কিছুকাল পর রাজধানীতে ঢাকার সর্দার ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক জুলফিকার সর্দারের নাতির হাতে পলাশের বাবা খুন হলো। পলাশের কিছু করার থাকল না। মূলত তখনই পলাশ ভার্সিটির পড়া ছেড়ে পুরোদমে অন্ধকার রাজনীতি ও কাকার কারবারে মনোনিবেশ করে। কিন্তু সর্দারের নাতির কাছে ঘেঁষার মতো শক্তি হয়ে উঠল না তার। তারপর সবকিছু দমে গেছিল। এবং কী থেক কী হলো, সর্দারের নাতি— অ্যাসট্ররয়েডটা কোথাও গুম হয়ে গেল যেন। তার সন্ত্রাসীর ধারা ছিল কেমন যেন। নিজে এক মাফিয়া ও পুঁজিবাদী ব্যবসায়ী। অথচ তার হাতে অসংখ্যা পলাশেরা ঝলসে মাটি হয়ে গেছে। সেই এক মহাপ্রলয়ের নাম ছিল–রুদ্র ইয়াজিদ।

এরপর যখন ২০০৮-এর নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মহাজোট দেশের ক্ষমতায় এলো, রাজন আজগর ও পলাশ নতুন উদ্যোগ ও উদ্যমে জেগে বসল। হামজা তখন উঠতি রাজনীতিবিদ। ভার্সিটি, যুবসমাজ ও ছাত্র সংগঠন তার অধীনস্থ প্রায়। তখন তার উঠাবসা শুরু হলত উচ্চশ্রেণীর রাজনীতিবিদদের সঙ্গে। পলাশ ও রাজন হামজাকে হাতে করল, হামজাও পলাশকে সঙ্গ দিলো নিজের স্বার্থে। জয় আমির তখন একুশ বছরের তরতরে যুবক, অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র; তার কলেজ-জীবন শেষ হয়ে ত্রাসের পথের যাত্রা শুরু হয়েছে।

এরপর রাজন আজগর যেমন রাঝধানীতে নতুন নতুন রাজনীতিবিদদের সহচর্য পেতে শুরু করলেন, কারবারেও লক্ষ্মীর ভাণ্ডার খুলে পড়ল। পলাশকেও আর নিজের নামের ভীতি গড়তে বেগ পেতে হয়নি। গরীব কৃষক থেকে শুরু করে সর্বসাধারণ, মুদি ব্যবসায়ী থেকে বড় ব্যবসায়ী অথবা কেউ একটা একাধিকতলা বাড়ির পিলার গাড়লেও চাঁদার দায়ে জিম্মি হয়েছে, তার বদলে বউ থেকে শুরু করে ঘর-বাড়িসহ তাদের শেষ সম্বলটুকুও পলাশের হয়েছে।

বাংলাদেশে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন সংস্থা গঠিত হলো–২০১২-তে। সৈয়দ মুস্তাকিন মহান তখন সেই সংস্থার নতুন পিবিআই অফিসার। তার পোস্টিং ছিল ঢাকাতে। ঢাকাতে রাজন আজগরের ব্যবসায় অপরাধের তদন্ত করতে গিয়ে খুঁড়তে খুঁড়তে সেই জাঁদরেল আইন-কর্মকর্তা এলো দিনাজপুর। পলাশের এখানকার কারবারে সেটাই আইনত প্রথম বাঁধা, এবং তা ছিল মুস্তাকিনের দ্বারা। কিন্তু মুস্তাকিন মহানের এই দুঃসাহসিক কর্ম-কেই তার কাল হতে হলো। কারণ এটাই বাংলার নীতি, মূলত রাজনীতি।

মুস্তাকিন মহান কেঁচো ইতোমধ্যেই খুঁজে পেয়ে গেছিল, বহু প্রমাণ আর তথ্য একত্র করে ফেলেছিল। তাকে আর কিছুদিন খুঁড়তে দিলে সরাসরি সাপের পুরো বংশধর টেনে বের করে আনতো। সেই সুযোগ তো দেয়া যায়না। এর মাঝে সে একবার গেল কারাগারে জামায়াত শিবিরের এক বন্দি কর্মীর সঙ্গে দেখা করতে। ব্যাস, জনসেবকদের কাজ সহজ হয়ে গেল।

পিবিআই অফিসার সৈয়দ মুস্তাকিন মহান একজন সরকারী কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও সে দেশোদ্রহী মনোভাব পোষন করে। এবং দেশবিরোধী ও জঙ্গিগোষ্ঠীর সাথে লেওয়াজ রয়েছে তার। সুতরাং তাকে বরখাস্ত করা হলো। বন্দিরা হলো যুদ্ধাপরাধী সব। তাদের সাথে দেখা করা অপরাধ, এবং সেই অপরাধে বরখাস্ত কর্মকর্তা সৈয়দ মুস্তাকিন মহান কাজ থামিয়ে দিলে বোধহয় বেঁচে থাকতো কিনা বলা যায়না। কিন্তু তার কার্যক্রম চলছিলই। এতে করে গোপনে তাকে সরিয়ে দেবার অর্ডার এলো। যেটা কোনও পার্টির লোক অথবা পলাশ শখের সাথে করে দিতো। অথচ তাদের শিকারকে ছিনিয়ে নিলো একদিন জয় আমির। সালটা ২০১৩-এর মাঝামাঝি। জয় আমির মুস্তাকিন মহানকে খু/ন করে ফেলল।

যখন মুমতাহিণার কেইসটাকে মিছেমিছি হ্যান্ডেল করছিল মুস্তাকিন নামধারী পরাগ আজগর, তখন তার কাছে একটা হুমকিসরূপ চিরকুট এসেছিল। ধারণা করা হয়, ওটা পাঠিয়েছিল মুরসালীন মহান অথবা ওদেরই কেউ।


দু’দিন আগে রাত দুটোর দিকে পলাশ ছিল তার দিনাজপুরের তিন নম্বর আবাসে। ওটা চেহেল গাজীর মাজারের অদূরে ঢাকা-দিনাজপুর মহাসড়কের পাশে। তিনতলা বাড়ি। ওর বাড়ির সীমানা থেকে চার ফুট দূরে পাশের দোতলা বিল্ডিংটা একটা এনজিওর অফিস। এই বাড়িতে কিছু অস্ত্র, চেইকবই, ক্যাশ টাকা নেবার উদ্দেশ্যে ওখানে যাওয়া তার। সেই রাতেই তার দক্ষিণ দিনাজপুর হয়ে হাকিমপুর দিয়ে হিলি বন্দরের ওপারে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত পেরিয়ে চলে যাবার কথা ছিল। হিলি বন্দরে পলাশের ভারতীয় মাল আসে মাঝেমধ্যেই। বহু চেনাজানা লোক আছে।

কিন্তু ব্যাটেলিয়ন ফোর্স যে রেডি, এবং পলাশকে তাকে তাকে রেখেছে, তা পলাশ জানতো না তখনও। মাজহার মরার আগে জয়কে পলাশের সম্ভাব্য অবস্থান বলেছিল। কিন্তু হামজার কাছে খবর এলো, সে দেশ ছাড়ছে। বড় অঙ্কের একটা ক্যাশপাতি থাকে ওই বাড়িতে। দেশ ছাড়ার আগে ওই বাড়িতে যাওয়ার সম্ভাবনা নব্বই শতাংশ।

এটা কথায় কথায় পরাগ জেনে গেছিল। তথ্যটা সে-ই আইন-সংস্থার কাছে পৌঁছে দিয়ে সেরেছে লোক মারফতে। জয়ের মুখের বাংলা গালিও শুনতে হয়েছে এর বদলে, “অকাম ঠাপানো সারা? একটা কাম করে রেখে দিলা? তোমার তর সয়না? এতকাল বাল চেটে খাইছো, এখন আর সইতেছিল না? তোমার শ্বশুরআব্বাদের যদি বলতেই হয়, তো কি আমি বলতে পারতাম না? এবার যদি কোনোভাবে পলাশ হাতছাড়া হয়ে যায়, পুলিশ যদি ওকে ধরে ফেলে, ওর বদলে তোমার কোরবানী হবে, বিনা চাঁদে। সম্বন্ধির চেংরা আমার।ʼʼ

পরাগ খিঁচে উঠল, “কথাবার্তা সাবধানে বলবে। পলাশকে তোমার অথবা পুলিশের হাতে দেওয়ার সাথে আমার সাধ নেই, আমি শুধু চাই, ও শেষ হয়ে যাক। তুমি তোমার মতো ভাবছো, আমি আমার মতো ভেবেছি। একটু খেটে ধরো। ও এখনও ওই বাড়িতেই আছে। পারলে পুলিশের হাত থেকে বাঁচিয়ে নাও। মনে রেখো, ও কিন্তু একা না। ওর কাকার রেখে যাওয়া চেলা এসে দিনাজপুর জুটেছে ওকে সঙ্গ দিতে। বেস্ট অফ লাক।ʼʼ

পলাশ তখন মাতাল। সবকিছু গুছিয়ে রেখে সোফায় বসল। শরীরটা আওলে গেছে। কয়দিনের হয়রানীতে যাচ্ছেতাই হাল। পরাগকে না মেরে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল না পলাশের। তার কানে সবই এসেছে, পরাগ কী কী করেছে। খাওয়া-পরা দিয়ে পালন করে তার সহায়তায় ধ্বংসের মুখ দেখা, আবার তাকে জীবিত রেখে ফেরারি হওয়া পলাশের সঁইছিল না। তবু এই অবস্থায় দেশের মাটি তার কাল। তাই কিছুদিন দেশের বাইরে আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে পরে আবার ফেরাটাই বুদ্ধিমানের লক্ষণ। সব পরিকল্পনা পাক্কা তার। কিন্তু রূপকথা! সে বাগানবাড়িতে তখনও। দশ-বারোবার কল করেছে, রূপকথা রিসিভ করেনি। পলাশের মাথায় আগুন জ্বলছিল। ইচ্ছে করছিল, পরাগকে পরে মারলেও উচিত আগে বউটাকে অন্তত মেরে রেখে যাওয়া। ঘরের বউয়ের বিপদের সময়ে এমন জোচ্চুরি সওয়া যায় না।

তখন রাত বারোটা পার। ভাবাও যায়না, আইনের বিচ্ছুগুলো এই অসময়ে হানা দিতে পারে। ওর যাত্রা শেষরাতের দিকে। আজ বন্দর, আগামী রাতে বর্ডারের ওপার।

কিন্তু তার আগেই বাড়ি ঘিরে পুলিশের সাইরেন বেজে উঠল। পলাশের বিশ্বাস হচ্ছিল না। সে ভাবল, বেশি মাল খাওয়ার কারণে এমনটা হচ্ছে।

ততক্ষণে লোহার গেইটে তাণ্ডব শুরু হয়েছে। প্রাচীরের ওপরে কাঁচের টুকরো থাকায় প্রাচীর টপকানো যাচ্ছিল না। দাড়োয়ান ছুটে এলো, “পলাশ ভাই, পুলিশ আইছে, ভাই।। সামনে-পিছনে চারদিক খালি পুলিশ।ʼʼ

বাড়ির পেছনে ছোট্ট ডোবা। তার ওপারে একটা আমবাগান। সেই আমবাগানে পলাশ জুয়ার আসর বসাতো মাঝেমধ্যেই। ওখানেই রুদ্র ইয়াজিদ পলাশের বাপকে মেরে দাফন করে রেখে গিয়েছিল। হাতটা কবরের ওপর ফুলের তোড়ার মতো বিছিয়ে রেখে গিয়েছিল। সেটা দেখে টের পেয়েছিল, কবরে ওর বাপের দেহ শোয়ানো।

পলাশের বাড়ির মূল-ফটক ভেঙে কালো পোশাকের ফোর্স ঢুকলো ভেতরে। রাইফেল, পিস্তল রেডি। পলাশ অনেকটা বেহেড তখন। টলমলে পায়ে পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে দরজাটা বাইরে থেকে আঁটকে দিলো। প্রাচীরের সাথে বাড়ির ব্যাকসাইডে আসার যে রাস্তাটা সেটাও আঁটকানো। পিছনের দরজাটা না ভাঙা অবধি অন্তত সময় পাবে পলাশ।

ছোট্ট পুলটা পেরিয়ে যাবার সময় ওপরতলা থেকে আলো পড়ল ওর ওপর। দ্রুত লুকিয়ে পড়ল ঝোপের আড়ালে। পেছনের দরজা অবধি আসতে একটু ঘুরতে হবে ওদের। বাড়ির নকশা জটিল।

কিন্তু ততক্ষণে বাহিনীর কয়েকজন সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠে গেছে। সেখান থেকে গোটা বাড়ির বাইরে আশপাশ ও প্রাচীরের ভেতরটা চোখের আয়ত্তে। পলাশ আঁটকা পড়ে গেল প্রায়। কম-বেশি দশ-পনেরোজন বাড়ির ভেতরেই ঢুকে পড়েছে, বাইরে আরও আছে। পলাশ ঝোপ থেকে বেরোতেই তাকে উদ্দেশ্য করে ফায়ার করা হবে, এতে সন্দেহ নেই। ক্রস-ফায়ার জায়েজ হয়ে আছে ওর জন্য। ওর দলের গুলি করা লাগবেনা, শুধু পুলিশের একপাক্ষিক গুলি করে পলাশকে ঝাঝরা করেও ক্রস ফায়ারের নামে চালিয়ে দেবে। অথচ পলাশের বাহিনী কাছেকোলে ঘেঁষার সুযোগ পাচ্ছেনা আপাতত। পলাশের নিষেধ আছে।

পরিকল্পনা নম্বর-দুই ওটা। পলাশ জানতো না ঠিক কবে বা কখন, তবে এটা ঠিকই জানতো, দেশ ছাড়ার আগে একবার জীবন-মরণ ঝুঁকি পাড়ি দিতে হবে; যেহেতু তার প্রতিদ্বন্দিতা জয়-হামজার সাথে। সুতরাং পরিকল্পনা নং-২-তে আছে—যদি কোনোভাবে পলাশ গ্রেফতার হয়েও যায়; কারণ চট করে রাজন আজগরের ভাতিজা পলাশকে ক্রসে দেবে না আইনরক্ষাবাহিনী। তারা এতটা ন্যায়পরায়ন হলে তো পলাশরা জন্মাতেই পারতো না। তাই পলাশ যদি পাকে পড়ে যায়, সে কোনোভাবেই বাঁচতে চাইবেনা, বরং গ্রেফতার হতে চাইবে। জয়-হামজা যতদিন বাইরে আছে, তার জন্য কারাগারের চেয়ে নিরাপদ জায়গা নেই।

আর বাংলাদেশের কারাগার হলো সবচেয়ে বড় কারবারের জায়গা। বিচারের পর পলাশের যদি ফাঁসির আদেশও আসে, তবু সে কারাগারে নিরাপদে সময় পাবে। সুতরাং তখন বাইরে থাকা দলের লোক সরকার প্রধান অথবা বাহিনীর মূল হোতাদের মাঝে কারও সঙ্গে র‌্যাকেটিয়ারিং টাইপ কিছু মিছেমিছি তামাশা খাঁড়া করে, বিনিময়ে গোপনে পলাশের মুক্তি দাবী করবে। এতে পলাশ বরং আরও সরকারী কর্মকর্তাদের হেফাজতে কারামুক্তি ও আত্মগোপনের সুযোগ পাবে।

এই পরিকল্পনাকে মাথায় রেখে পলাশ বসে রইল ঝোপের মাঝে। দোতলার জানালা দিয়ে দুজন কর্মকর্তা মেশিগান তাক করে আছে। তবে গুলি চালাচ্ছেনা। চালায় অঁআ সাধারণত। এরকম একটা সাংঘাতিক অপরাধী মবস্টার যদি হাতের মুঠোয় থাকে, তাকে গুলি করার মানেই হয়না।জিজ্ঞাসাবাদ ও বিচার এবং আইনত শাস্তি এদের জন্য অবধারিত।

প্রায় মিনিট পাঁচেক পরে পলাশ যখন দু’হাত উঁচু করে আত্মসমর্পণ করে ঝোপ থেকে বেরিয়ে এসে বাগানের খোলা পুলের পাশে দাঁড়াল, তখনই একদম গটগটিয়ে নেমে এলো অনেকজোড়া পা। দ্রুত দৌঁড়ে এলো পলাশকে ধরতে। পলাশ হাসছে। নির্লজ্জের মতো সেই তার চিরায়ত প্যাচপ্যাচে হাসিতে জ্বলজ্বলে চোখদুটো আরও ভয়ানকভাবে জ্বলছে। ওকে এসে চারজন ঘিরে ধরলে পলাশ কেবল দু’হাত বাড়িয়ে দেয় হাতকড়া পরতে। তখনই বিকট আওয়াজে কানে তালা লেগে গেল।

পলাশকে ঘিরে ধরা দুজন পুলিশ ধপ করে পড়ে গেল নিচে। সময় থেমে গেছে যেন। ভোঁতা হয়ে গেছে কান সকলের। তীক্ষ্ণ স্নাইপারের ফায়ারিং-সাউন্ডে। সাধারণত স্নাইপার ব্যবহার করা হয় চোরা খুনে। এমন পরিস্থিতিতে ক্রস ফায়ারিং প্রচলিত বেশি।

তিনতলার ছাদের ওপর যারা দাঁড়িয়ে ছিল, তাদের মাঝে একজন শেষ। বাকি দুজন তার দিকে ছুটে যায়। গোটা বাহিনী লণ্ড-ভণ্ড হয়ে গেল তিন অফিসারের এমন আকস্মিক মৃত্যুতে।

তাদের বসের নজরে ঠিকই পড়ল ফায়ারিং পাশের সেই এনজিওর বিল্ডিং থেকে হয়েছে। কিন্তু কোন জানালা বা ছাদ, কিছুই বোঝা গেল না। বাকি দু-তিনজন তখন পলাশকে সামলাতে এগিয়ে আসে, তখনই একাধারে পাঁ-ছয়টা আগুন লাগা ককটেলের বোতল এক যোগে ছুটে এলো প্রাচীরের ওপাশ থেকে। এমন আকস্মিক আততায়ী হামলায় গোলমাল বেঁধে গেল একটা। এরকম সশস্ত্র গোলাগুলি, সেটাও অদেখা কোনো আততায়ী দল অথবা কেউ।

পলাশের হাসি অল্প দ্বিধান্বিত হয়ে উঠল। তার দল এমন করবে না বোধহয়। তাহলে?

চলবে….

[বিশাল পর্ব। ভালোভাবে রিচেইক করব বলে সন্ধ্যার পর দিলাম না, অথচ সেই ব্যস্ততা আর রাইটিং ব্লক আমাকে ঠিক দেরি করায়। আমার অসীম ধৈর্যশীল ও ভালোবাসার পাঠক, এই অলস, চিরকাল রাইটিং ব্লকে ভোগা অধমটার জন্য একটু দোয়া দেবেন, আর সাথে গালাগালিও। যাতে একটুআক্কেল হয় তার। ভুলত্রুটির ভাণ্ডার হয়ে গেছে হয়ত। ক্ষমা করবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here