#অবরুদ্ধ_নিশীথ
#তেজস্মিতা_মুর্তজা
৪৯.
হামজা ভেতরে এসে অন্তূর সামনে দাঁড়িয়ে নরম গলায় বলল, “চাবিটা দাও।ʼʼ
-“ওদেরকে ছেড়ে দিন। ওদের সাথে কোনো শত্রুতা নেই আপনাদের। ওরা কষ্ট পাচ্ছে শুধু শুধু। ওদের খামোখা আঘাত করে নিজেদেরকে জানোয়ার প্রমাণ করার মাঝে বাহাদুরি নেই, মেয়র সাহেব।ʼʼ
-“ওরকম আঘাত আমরাও সঁয়েছি। বহুত সঁয়েছি। আরাম করে গড়িয়ে এতদূর আসিনি। জয়ের পিঠের দাগগুলো দেখেছ হয়ত। আমারগুলো দেখবে?ʼʼ
-“তার জিম্মেদার ওই ছোট ছোট শিশুরা ছিল না। শিক্ষিত এবং বুদ্ধিমান মানুষ আপনি। যুক্তিহীন কথা আপনার মুখে খুব কটু শোনায়।ʼʼ
-“চাবি দাও।ʼʼ
-“ছেড়ে দিন ওদের। বাড়ি ফিরতে দিন। যে যার মায়ের কোলে ফিরে যাক।ʼʼ
-“চাবি কোথায় রেখেছ?ʼʼ ঘরটা দুলে উঠল বোধহয়। গমগম করে প্রতিধ্বনিত হলো হামজার গর্জনের মতো ভারী ধমকটা। চোখ বিস্ফোরিত হয়ে এসেছে। এতটা উত্তেজিত দেখা যায়নি তাকে আগে।
জয় পোশাক পরছিল তখন আয়নার সামনে। গুনগুন করে গান গাইছে,
আমি কখনও যোদ্ধা, কখনও বিদ্রোহী,
কখনও কবিতার কলি..
গোটা ঘর শান্ত অথচ ক্ষুব্ধ হাতে উলোট-পালোট করে সেই চাবি পেল না হামজা। আর চাইলও না। ছেলেদের দিয়ে নতুন তিনটে বিশাল তালা আনালো। নিজের চাবি দিয়েও নয় বরং শাবলের আঘাতে পুরোনো তালা টুকরো টুকরো করে ভেঙে নতুন দুটো তালা পরপর মারল সিঁড়ির দরজায়। বেড়িয়ে গেল দুই ভাই।
এরপর রাতটা কাটল অস্থির। আর খাবারও পেল না বাচ্চারা। রিমি খাবার নিয়ে যায় রাতে একবেলা। আজ নতুন তালার চাবি কারও কাছে নেই, হামজা সাথে নিয়ে গেছে। অন্তূ কয়েকবার চেষ্টা করেছিল তালা ভাঙার, পারেনি।
নামাজে সে-রাতে খুব কান্নাকাটি করেছিল। শেষরাতে অল্প একটু পানি খেয়ে রোজা রাখার নিয়ত করল। উপবাস মানুষকে পরিশ্রুত করে, ভেতরের গ্লানি মুছে দেয়। এছাড়া অন্তূ টের পেতে চায়, ওই ছোট ছোট বাচ্চারা কী করে না খেয়ে বেলার পর বেলা ওই অন্ধ-কুটিরে কাটাচ্ছে।
এরপর থেকে অন্তূ বহুকাল যাবৎ একাধারে রোজা রাখতো দিনের বেলাটা। রাতে নামাজে কাটাতো। এরপর আর কখনও তেমন একটা জয় সঙ্গ পায়নি তার।
—
রিমি জানালা দিয়ে ভাঙা চাঁদটা দেখতে দেখতে টের পায় তার গাল বেয়ে বৃষ্টি নেমেছে। এই দোটানায় জীবন কাটবে, কাটতে কাটতে যাবে কতদূর?
হামজা ধূর্ত। কেবল বাড়ির নিঃশব্দ পরিবেশের কাছ থেকেও সে পুরো ঘটনার বিবৃতি পেয়ে যেতে পারে। তার দক্ষতা অথবা অভিজ্ঞতা! আজ যখন দুপুরের পর পৌরসভার অধিবেশন-বৈঠক শেষে হামজা বাড়ি ফিরল, তখন অন্তূ বড়ঘরে। একথা বুঝতে তার সমস্যা হলো না।জয় ঘুমাচ্ছিল। রিমি অন্তত হামজার সম্মুখে মুখের অভিব্যক্তি লুকোতে খুব কাঁচা। সে সামনে দাঁড়িয়ে চোরের মতো এদিক-ওদিক তাকাচ্ছিল। হামজা রুমে এলো, পাঞ্জাবীটা খুলল। একটা ফতোয়া পরে জয়ের রুমে গেল। তখন জয় ঘুমোচ্ছে।
জয়কে ডেকে বলল, “আরমিণ রুমে নেই।ʼʼ
ব্যাস সংক্ষিপ্ত একটি তথ্য দিয়ে সে নিজের ঘরে চলে গেছে। জয়ের মাথায় স্ফূটন শুরু হয়ে যায়। অথচ অন্তূর সামনে গেলে আজকাল আর আগের মতো ক্ষ্যাপাটে হতে পারেনা। যে মেয়ের চোখে ভয় নেই, তাকে ভয় দেখানোটাও সময়ের অপচয় ছাড়া কিছু না।
হামজা রুমে এলো। রিমি অস্থির হয়ে বিছানায় বসছে, উঠছে, একাজ-ওকাজ করতে চাইছে, অথচ হাতে কাজ উঠছিল না। হামজা এসে বসল বিছানায়। রিমি তাকাতে পারেনা ওই শান্ত চোখে। আয়নায় দেখে ভারী মুখটা। চাপদাড়িতে শ্যামলা চেহারাটা দারুণ মানায়। রিমির দাদি বলতো, “পাঠার মতো শরীর, হেই দানবের লগে আমার কুট্টি রিমারে বিয়া দিসনা রে…ʼʼ
অথচ সেই বিশালাকৃতির লোকটা কখনও কিছু চাপিয়ে দেয়নি রিমির ওপর। বরং ওর ছোট্ট বয়সের জেদগুলোকে একজন অসীম ধৈর্য্যশীল অভিভাবকের মতো মেনে চলেছে। একবার রিমির কলেজে দুটো ছেলে রিমিকে কটুক্তি করেছিল। ‘হামজা পাটোয়ারীর বউʼ কথাটা উল্লেখ করে নোংরা কথা বলেছিল। হামজা সেই ছেলেদুটোর কী করেছে, তা অজানা। একদিন রাতে রিমিকে নিজের কোলে বসিয়ে নরম করে বলেছিল, “পড়ালেখার কি খুব ইচ্ছে আপনার, ম্যাডাম?ʼʼ
রিমি বলল, “না। আমার পড়তে একটুও ভালো লাগেনা। এক্সট্রা ঝামেলা।ʼʼ
হামজা হেসেছিল, “তো কী করতে ভাল্লাগে?ʼʼ
রিমি লজ্জায় লাল হয়ে হয়ে মাথা নত করে। মুখে বলতে পারেনি, আপনার সংসার করতে ভাল্লাগে। আমার বয়সটাই তো এমন। সংসারের কাজকাম করা, বউ-বউ সেজে থাকার শিহরণ, আপনার সেবা-যত্ন, স্পর্শ! এসব ছাড়া কিচ্ছু ভাল্লাগেনা।
হামজা বলেছিল, “তাহলে পড়ালেখা ছাড়িয়ে দিই? ইন্টার পরীক্ষাটা দিয়ে, আর পড়তে হবেনা। মন থেকে বলবে, তুমি রাজী?ʼʼ
-“বিয়ের কবুল পড়াচ্ছেন?ʼʼ খিলখিল করে হেসে উঠেছিল রিমি।
এরপর পড়ালেখা করা হয়নি আর। যখন ক্ষমতার অগ্রগতি হচ্ছিল হামজার, রিমির আনন্দ লাগেনি আবার! খুব লেগেছে। হামজার স্বপ্ন শুনতে শুনতে সেও চাইতো, হামজা সংসদ-নির্বাচনে অংশগ্রহন করুক। সে হবে মাননীয় সংসদ সদস্য, যাকে বলে ওই এমপির বউ।
কিন্তু মাজহারকে মারার পর তাদের মাঝে যে ভাঙনের সুর হবেজেছিল, তাও ঠিক মিটে যেত। কিন্তু তারপরই একদিন এলো রিমির ওপর এক জঘন্য প্রস্তাব। রিমিকে নিয়ে হামজা গেল একদিন বড়ঘরে। ও-ঘরে প্রথমবার গিয়ে রিমির দম আঁটকে এসেছিল। মনে হচ্ছিল হামজার সাথে সে কোনো কবরে নামছে। জাপটে ধরে ছিল হামজাকে। হামজা আশ্বাস দিয়েছে, ‘কিচ্ছু হবেনা। তুমি ওদের খাবার দেবে একবেলা।ʼ
আরমিণ বিয়ে হয়ে আসার কিছুদিন আগে এক পালা বাচ্চাদের আনা হলো। তাদের কিছুদিন রাখা হয়েছিল, একরাতে তাদের নিয়ে যাওয়া হলো মালটানা ভ্যানগাড়িতে করে। কোথাও নিয়ে গিয়ে হত্যা করে ফেলা হয়েছিল। শুধু বাচ্চাদেরই নয়, যুবকদেরও আনা হতো। টর্চার করা হতো ওদের। কিছু জিজ্ঞেস করা হতো, কিছু স্টেটমেন্ট চাওয়া হতো, না দিলে মৃত্যু অথবা কারাগার। আপত্তিকর স্টেটমেন্ট।
এসবের পর আজ অবধিও রিমি-হামজার মাঝে সেই পুরোনো সম্পর্ক ফিরে আসেনি। দোটানা, টানপোড়েনে কেটে গেছে বহুদিন। রিমি ঘেন্নায়, লজ্জায় দুটো বাচ্চা নষ্ট করেছে ভ্রুণ অথবা তারও আগের অবস্থায়, ওষুধ খেয়ে। তা হামজা জানেনা।
রিমি চায়না, তার বাচ্চা পৃথিবীতে এসে এমন বাপ-চাচার সংস্পর্শ পাক। এমন একটা বাড়িতে সে পালিত হোক, যে বাড়িটা কলুষিত, অমানুষদের বাস। যেখানের প্রতিটা সদস্যের মাঝে নোংরামির বীজ আছে। হামজাকে দেয়া তার সবচেয়ে বড় এবং নীরব শাস্তি বাবা হওয়া থেকে বঞ্চিত করা। কারণ যে লোক অন্যের সন্তানকে এভাবে অমানুষিক অত্যাচার করতে পারে, তার বাপ হওয়ার অধিকার নেই, কস্মিনকালেও নেই। অথচ হামজা মনে মনে একটা বাচ্চার জন্য মরিয়া। তবু কোনোদিন মুখ ফুটে রিমিকে কিছু বলেনা, হয়ত মেয়েটা নিজের অক্ষমতা নিয়ে কষ্ট পাবে। অথচ হামজা জানেনা রিমি সুস্থ। প্রথম দিকে তার বয়স কম থাকায় বাচ্চার কথা চিন্তা করা হয়নি, পরে হামজার ধারণা রিমি অসুস্থ হয়ত। অথবা নিতে চায়না।
এসব ভাবলে রিমির বুক পুড়ে যায়। খানখান হয়ে আসে ভেতরটা। সে মা ছিল সেই সকল অনাগত সন্তানদের। পাপ করেছে। পাপীদের আশপাশে থেকে সেও কঠোর পাপী হয়ে গেছে। তার বাবার বাড়িটাও রাজনীতির ছায়ায় ছিল, কিন্তু অন্দরে কখনও সেসবের দাগ লাগেনি। বাইরে বাপ-চাচারা কী করেছে, তা নিয়ে ভেতরবাড়ির কোনো সম্বন্ধ ছিলনা।
হামজা বিছানায় বসে থাকে অনেকক্ষণ মাথা নিচু করে। রিমি আয়নাতে দেখছিল ওকে। মাথার ঘন চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে। দুই ভাইয়েরই দাড়িটা অযত্নে বড় বেড়েছে। দেখতে অন্যরকম, সুন্দরই লাগে।
একসময় হামজা রিমিকে ডেকে পাশে বসায়। অল্প চুপ থেকে জিজ্ঞেস করে, “এত নারাজ তুমি আমার ওপর?ʼʼ
রিমি কথা আঁটকে আসে। তবু বলে, “তা কেন বলছেন?ʼʼ
-“আমার বিশ্বাসকে তুমি…ʼʼ
-“আপনি কি আমাকে বিশ্বাসঘাতক বলতে চাইছেন?ʼʼ
হামজা তাকায় চোখ তুলে। রিমি জমে গেল যেন। চোখ নামায় সঙ্গে সঙ্গে। হামজা জিজ্ঞেস করে, “আমার চাবি এখনও তোমার ড্রয়ারে, তোমার কাছে। আরমিণ চাবি কোথায় পেল, রিমি?ʼʼ
রিমি কথা বলেনা। হামজা পা টান করে দিয়ে রিমির কোলে মাথা রাখে। থরথর করে কেঁপে উঠল রিমি। একদৃষ্টে চেয়ে থাকে হামজা কিছুক্ষণ ওর মুখের দিকে। ফের উঠে বসে। রিমিকে ঘুরিয়ে নিজের মুখোমুখি বসায়। মুখ হাতের আজলায় ধরে চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করে, “কী চাও, বলো? আরমিণের মতো ওদের ছেড়ে দেবার আরজি ছাড়া যেকোনো কিছু কবুল আজ। বলো, কী চাও?ʼʼ
রিমির চোখ ভরে উঠেছিল চট করে। এই লোকের সামনে টিকে থাকা বড় মুশকিল তার জন্য। যার প্রসস্থ বুকে মুখ না লুকোলে একসময় একটুও চলতো না, সেই লোকটা থেকে সে এত দূরে দূরে কেন আজ? পরিস্থিতির কাঠিন্য নিতে দম ফুরিয়ে যাবার জোগাড় যে! পানিটুকু চোখ বেঁয়ে গড়িয়ে পড়ার আগে রিমি বলে, “আপনি যা নিষেধ করছেন, আমি যদি সেটাই চাই?ʼʼ
হামজা শান্তভাবে মাথা দোলায়, “শর্তের খেলাপি হয়ে যাচ্ছে। অন্য যেকোনো কিছু চাও।ʼʼ
-“তাহলে আমার প্রশ্নের উত্তর দিন তাহলে। অনেক প্রশ্ন।ʼʼ
রিমি হামজার হাতদুটো নিজের চোয়াল থেকে সরিয়ে দেয়। জিজ্ঞেস করে, “জয় ভাইয়ার মতোন আপনারও নারীদোষ আছে? আরমিণ বড়ঘরের পাশে অনেক খারাপ মেয়েকে দেখেছে।ʼʼ
হামজা হাসল, “অনেককিছুই দেখে ফেলেছে সে!ʼʼ
-“উত্তর দিন। নারীদোষ আছে?ʼʼ
-“ছিল।ʼʼ
বিস্ফোরিত, আহত চোখে তাকায় রিমি। হামজা ছটফটিয়ে ওঠে। বোধহয় প্রথমবার তার চোখে কাতরতা লক্ষ করা যাচ্ছিল। সাফাই গাওয়ার মতো করে বলে, “বহুবছর আগে ছিল। যখন আমি একদম যুবক। এরপর ধীরে ধীরে সোসাইটিতে যখন নামগাম বাড়ছিল, দায়িত্ব ও ব্যস্ততা বাড়ছিল, তখন সেসব কমে এলো। আবার তখনই একদিন ঝন্টু কাকার বাড়িতে তোমাকে দেখলাম। বিশ্বাস করো, আর কোনোদিন কোনো মেয়েলোককে ছুঁইনি।ʼʼ
চট করে রিমি মুখে হাত ছোঁয়ায়, “তোমাচে ছুঁয়ে বলছি, আর কাউকে ছুঁইনি আজ পর্যন্ত। এরপর আর বেশিদিন অপেক্ষাও করিনি এইজন্য, তাড়াতাড়ি বিয়ে করে তুলে আনলাম। বিয়ের আগে ছেলেমানুষের দোষ ধরতে আছে? তখন তো তুমি ছিলে না! বিভিন্ন ক্লাবে-ম্লাবে যেতে হতো, তখন নিজেকে সামলাতো যায়নি। কিন্তু তোমাকে দেখার পর আর না। নয়ত তুমি তখন একেবারে ছোট। অত ছোট বয়সে বিয়ে করতাম না। একটু বড় হতে দিতাম। কিন্তু আমি জানতাম, এই দিন একদিন আসবে। সেদিন জবাব দিতে গেলে লজ্জিত হতে হবে। কথা বলার সময় গাইগুই করা পছন্দ না আমার। যেকোনো পাপকে স্বীকার করব, সেটাও বুক ফুলিয়ে। নয়ত নিজেকে পাপীর চেয়ে বেশি ছোটলোক মনেহয়। এই স্বভাবটা জয় খুব পেয়েছে। এই দিনটাকে ফেস করতে চাইনি।ʼʼ
রিমি বুঝতে পারছিল না, কী করবে, কী বলবে। অথচ বুকে একপ্রকার ব্যথা জড়িয়ে ধরছিল।
-“ওদের কেন ধরে রেখেছেন?ʼʼ
-“কাজ আছে।ʼʼ
-“কী কাজ?ʼʼ
-“সব কী বলা যায়? বললেই বুঝবে?ʼʼ
-“তবু শুনি।ʼʼ
-“না। শুনতে হবেনা।ʼʼ কিছু কঠিন শোনায় হামজার স্বর।
দুজনেই চুপচাপ মুখ ফিরিয়ে বসেছিল অনেকক্ষণ। কারও কোনো কথা নেই। দুজনের ভেতরে জমাটবদ্ধ অপরাধবোধ নাকি তীব্র অনুযোগ—পালা দিয়ে উঠানামা করছিল। এক দুর্বোধ্য তিক্ত-আবেগানুভূতি নিঃশব্দ ঘরটাতে ঘুরপাক খাচ্ছিল বাতাসের দোলনে।
তখনই জয়ের ঘর থেকে চাপা বাক-বিতণ্ডা কানে এলো। হামজা উঠে গেলে পিছে পিছে যেতে হলো রিমিকে।
এরপর লোকটা তালা মেরে শেষ একবার ঘরে এসেছিল, তবু কোনো কথা হয়নি। আজ আর রিমির কাছে ঘড়িটা পরিয়ে চাইলো না, রিমিও এগিয়ে গেল না। বেরিয়ে গেল দুই ভাই।
রিমি চুপচাপ বসে থাকে জানালার ধারে। এত ভাবনা আর দ্বিধাদ্বন্দ ভেতরে উথাল-পাতাল হচ্ছে, মাথাটা যেন ছিঁড়ে পড়বে। একাধারে অনেকক্ষণ কান্না করার ফলে মাথাটা স্বাভাবিকের তুলনায় শতগুণ ভারী মনে হচ্ছে। বুক পোড়ার ধোয়া যেন আকাশে মেঘ হয়ে উড়ছিল, তা নির্বাক চোখে দেখে গেল সে পুরো রাত।
—
রাত দুটোর দিকে মুস্তাকিন দিনাজপুরে পা রাখল। ঢাকায় একটা কাণ্ড ঘটেছে। তা হয়ত এসে পৌঁছেছে দিনাজপুর, অথবা পৌঁছায়নি। বাস টার্মিনাল ফাঁকা। রাস্তাঘাট শ্মশান হয়ে আছে। তারা কয়েকজন যারা বাস থেকে নামলো, তারাই কেবল মানুষ। গাড়ি তেমন নেই। হেঁটে যেতে হবে। ফ্ল্যাটটা এখনও ছাড়া হয়নি। তবু সেখানে যেতে ইচ্ছে করল না। অন্য কোথাও যাওয়া দরকার।
কতমাস পরে সে দিনাজপুরে এলো আবার! মনে নেই তার। হাঁটতে হাঁটতে একসময় যখন অন্তূদের বাড়ির বেশ কাছ দিয়ে অতিক্রম করছিল, তখন সেই অদ্ভুত দুঃসাহসী আর অল্প-সল্প বোকা নারীটির ভীষণ সুশ্রী মুখ ভেসে উঠল চেহারায়। ভীষণ স্নিগ্ধ। মাথার ওড়না ছাড়া সে একবার দেখার সুযোগ পেয়েছিল। সেই রাতটার কথা মনে করে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। সে ছিল তখন পুলিশ অফিসার। পরিচয়টার মায়ায় পড়েছিল সে। তবু মেয়েটিকে অপমানের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেনি। আজ সেই পরিচয় নেই, পরিচয় রাখার দরকার নেই। নারীটির ওপর তার দূর্বলতা আজও মিথ্যা নয়। মনে পড়লেই বুকটা তিরতির করে জ্বলে ওঠে। তাতে কী! যে মেয়ের কপালে সুখ থাকেনা, কোথাও থাকেনা। তার কাছেও কি আরমিণ সুখী হতো! হাসল মনে মনে। সে এমনভাবে এসব ভাবছে যেন, সব ঠিকঠাক হয়ে গেছিল! কখনও তো সেই মনের দৌর্বল্য প্রকাশই করা হয়নি! তার সুদর্শন চেহারার মায়ায় পড়ার মতো মেয়েও নয় হয়ত সেই নারী!
দিনাজপুর ফেরা তার কিছু উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য। তা ফুরোলে আবার সে ফিরে যাবে এ জেলা ছেড়ে। সেই ক’টাদিন সেই অস্থায়ী পরিচয়ের পুরো ফ্ল্যাটেই থাকবে বলে ভেবে নিলো। কিছুদিনের সেই অবাস্তব পরিচয়টায় একটা মায়া পড়ে গেছিল কেমন!
হাঁটতে হাঁটতে অনেকদূর এসে গেছে। টেরই পায়নি। সামনে রাস্তার মোড় পেরোলেই বিশাল হোটেল। এখান থেকে ভবনটির মাথা দেখা যায়। জ্বলজ্বলে ইংরেজি অক্ষরে নিজের নাম জানান দিচ্ছে। উদাস পায়ে হেঁটে এগিয়ে গেল সে সেদিকে।
—
ক’দিন আগে হঠাৎ-ই তরুর কাছে কল এলো সেই লোকটার, যে শুধু তার জন্মদাতা হিসেবে বাপ, আর কিছু না। তরু বিশ্বাসই করতে পারেনি। যে মূর্খ লোকটা মেয়ে বলে পরিচয় দেয়নি কখনও, সে কেন কল করে মিষ্টি করে ডাকছে! তার অপরাধ, তার মায়ের গর্ভে একের পর এক শুধু মেয়ে জন্মেছে। আর মেয়েরা তো কামাই করে খাওয়ায় না, ওদেরকেই আরও বসিয়ে খাওয়াতে হয়। উপরন্তু বিয়ে শাদী দিতে গেলে কত ঝামেলা, খরচা!
কথায় কথায় সেই লোক বলল, “একখান ইঞ্জিয়ার পাত্র পাইছি রে মা। সুখে থাকবি তুই। তোর মাও রাজী। শুক্কুরবারে বাড়িত্ আয়। ওরা দেখবার চায় তোরে। তুই কইলে আমি যামুনে। আমার সাথে আসিস।ʼʼ
তরুর আত্মা কেঁপে ওঠে। একবার তরুর বয়স যখন চৌদ্দ বছর, সেবার একবার এই লোক এসে ভুলিয়ে-ভালিয়ে বাড়ি নিয়ে গিয়ে অর্ধেক বিয়ে দিয়েই ফেলেছিল। জুয়া খেলে হটে যাবার পর অনেক টাকা ঋণ হয়ে গেছিল। এরপর এক বয়স্ক লোকের কাছে তরুকে বিয়ে দেবার বদলে সেই টাকা শোধ করতে তার সেই আয়োজন। বুড়ো পাত্র অনেক টাকা দিয়ে চৌদ্দ বছরের তরুকে বউ হিসেবে কিনতে চায়। তরু হাতে-পায়ে ধরে কেঁদেছিল বাবার, মাতাল বাপ শোনেনি। ওর মাকে ওর সামনে মেরে নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের করে দিলো। সেদিন জয় গিয়ে একটা হাঙ্গামা করে তরুকে নিয়ে এসেছিল। আর কোনোদিন তরুকে নিয়ে যাবার সাহস পায়নি ওই লোক। আজ আবার কল করেছে। তরু বড় হয়েছে এখন, তবু সেই আতঙ্ক মস্তিষ্কে সংরক্ষিত হয়ে আছে এখনও।
ছটফটিয়ে উঠে দাঁড়ায় সে, এদিক-ওদিক পায়চারী করে। এ বাড়িতে তার ভরসার স্থল, যাকে নাকি সে আজকাল ঘৃণা করে বসেছে, সত্যি কি-না বোঝা যায়নি কখনও। হামজাকে বললে জেলে দেবে বা অন্য পদক্ষেপ। তবু তার কোনো দাবি কখনও হামজার কাছে করার অভ্যাস নেই। ঘৃণ্য লোকটার কাছেই ছুটে যেতে হলো। আর কেউ নেই তরুর, কেউ না। ওই পুরুষটা আছে। তরুর দেবতা সে, তরুর অদ্ভুত রক্ষক।
জয় তখন খাচ্ছে। টেবিলের ওপর প্লেট রেখে পাশে দাঁড়িয়েই গপাগপ গিলছে। কোথাও বেরোবে। জয়ের সামনে আজকাল সে যায়না। বুকের ব্যথা সহ্য হয়না। লোকটাকে দেখলেই চিৎকার করে কান্না ছুটে আসে। যাকে তরু বিসর্জন দেবার নাম করে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে, তরু ছাড়া কেউ জানেনা তাকে সে মনের মন্দিরের কেন্দ্রে দেব হিসেবে অধিষ্ঠিত করে ফেলেছিল সেই কিশোরী বয়সেই। তাকে সরানো যায়না, বড়জোর সান্ত্বণা দেয়া যায় মিথ্যা ঘৃণার আড়ালে।
তরুর চোখ টলমলে হয়ে উঠেছিল কেন, জানা নেই। দৌড়ে গিয়ে কাঁপতে কাঁপতে জয়ের হাতে ফোন ধরিয়ে দেয়। অস্থিল হয়ে চেয়ে থাকে।
জয়কে কিচ্ছু বলতে হলো না। সে যেন সব জানে। ফোন কানে নিয়েই বকে উঠল, “খালি রাত জেগে জন্মালেই বাপ হওয়া যায়না, চাচা। ওরকম তো কার্তিক মাসে কুত্তাও বাচ্চা জন্মায়। তাই বলে বাপের ঠিকানা থাকে ওদের? এতগুলা দিন যখন খাওয়া-পড়াসহ যাবতীয় ভরনপোষন দিয়ে মানুষ যখন করতে পেরেছি আমরা, ওর বিয়ের বালডাও দিয়েই দেব। আর আপনিও জানেন আমি বিয়ে দিলে কোনো ছোটখাটো রাজার ঘরেই যাবে, তরু। নিজের বিজনেস হিসেবে ব্যবহার করতে চান মেয়েকে, তা ভালো। তবে তা মনেই চেপে রাখুন। বারবার সে কথা কানে এলে কবে মাথার পোকাটা নড়েচড়ে ওঠে, দেখা যাবে বংশ-নির্বংশ করে রেখে আসব।ʼʼ
বাপ লোকটা কল কেটেছিল দিয়েছিল ভয়ে। ভীষণ জয় পায় জয়কে।
কিন্তু আজ সকালে তার মা কল দিয়ে কান্নাকাটি করেছে। তরু জানে, মা এটা নিজ থেকে করছে না। ওই লোক মারধর করেছে খুব। বাধ্য করেছে মাকে দিয়ে এসব বলাতে। জয় নেই। তরু কার কাছে যাবে? সে তো কারও কাছে দুঃখ প্রকাশ করতে শেখেনি। যার কাছে তার দুঃখ সঁপে এসেছে, তাকে তো মুখ ফুটে বলতেই হয়নি কখনও। মুখ-চোখ দেখলেই অন্তর্যামীর মতো সব বুঝে যেত।
অনেকক্ষণ বসে রইল জয়ের কবুতরগুলোর সাথে। জয়কে বিসর্জন দেবার পর থেকে যখনই বুকে যন্ত্রণা উঠেছে, সে এসে জয়ের কবুতরগুলোর কাছে কষ্ট বলেছে। অবলা প্রাণীরা বোঝে কিনা কে জানে। তবু বলে তরু।
তরুর ইচ্ছে করল, দৌড়ে জয়ের কাছে যাবে। কষে চেপে ধরবে জয়কে। জড়িয়ে ধরে চেঁচিয়ে কাঁদবে, অনেকক্ষণ। তারপর বলবে, ‘আমি আপনাকে পেলাম না, সে ঠিক আছে। কিন্তু অন্য কাউকে গ্রহণ করতে পারব না। আমি কিন্তু মরে যাব জয় ভাইয়া। সত্যি বলছি। আপনারা আমাকে আপনি ছাড়া অন্য কারও হতে বাধ্য করলেই আমি মরে যাব, বলে দিলাম। ছোটবেলা থেকে যার সমস্ত কাজকাম করতে করতে নিজে, দেহ-মন সবখানে শুধু একজনকে জায়গা দিয়ে দিয়ে এত বড় হয়েছি, হোক সে না হলো আমার, তবু সে ছাড়া আর কারও হবার নয়। বুঝেছেন, আপনি? বুঝেছেন?ʼ
কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই কখন যেন হু হু করে কেঁদে ফেলেছে, নিজেও টের পায়নি। সামলালো না, ঝরতে দিলো পানি। কল্পনা করল, জয় সামনে বসে বিরক্ত হয়ে চেয়ে আছে। কখন জানি একটা ধমক মারবে। তারপর বলবে, “কিছু খাবি? আচ্ছা, পাঠাই দিচ্ছি। আইসক্রিম পাঠাবো নাকি পেঁয়াজু? মুড়ি মাখাবি? আচ্ছা, আমি আনি। মুড়ি মাখা, খেয়েই বের হবো।ʼʼ
তরুর চোখ বাঁধ মানেনা। শব্দ করে কেঁদে ফেলল আবারও।
—
পলাশের হুকুম অথবা পারিবারিক রেওয়াজ, বাড়ির বউয়েরা শাড়ি পরে থাকবে। রুপকথা একটা নীলচে-সবুজ শাড়ি পরে রান্না করছিল। খুব ভালো রান্না জানে সে। পলাশ মদ-গাঁজা বাইরে খেলেও খাবারটা রূপকথার হাতের খায়, তিনবেলাই।
সকাল তখন নয়টার মতো। গতরাতে কোনও কারণে স্বাভাবিকভাবেই ঘুমিয়েছিল পলাশ। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে চেঁচালো, “রূপ! ও রূপ?ʼʼ
-“বেঁচে আছ, মরিনি। এত জোরে জোরে চেঁচানোর কী আছে? আশ্চর্য!ʼʼ
রূপকথা শাড়ির আঁচলটা পিঠ ঘুরিয়ে এনে কোমড়ে গুঁজে রেখেছে। পলাশ এগিয়ে গিয়ে অনাবৃত ফর্সা কোমড়টা চেপে ধরল। রূপকথা অবাক হয়, এরকম ভালোবাসা সে স্বামীর কাছে পাবার ভাগ্য নিয়ে জন্মায়নি। স্বাভাবিক ভালোবাসা সে পলাশের কাছে পেল আর কই! পেয়েছে শুধু শরীরের দাগগুলো।
-“তোমার সাথে প্রেম মানায় না, পলাশ ভাইয়া। তুমি জানোয়ার রূপেই সুন্দর আমার কাছে।ʼʼ
হো হো করে হাসল পলাশ, “তুই বউ হবার পরেও তোর মুখে ‘পলাশ ভাইয়াʼ ডাকটা শুনতে এত ভাল্লাগে। মনেহয় সেই ছোট্ট রূপ আমার পিছু পিছু ঘুরছে একটা পাখির খাঁচা কিনে এনে দেবার জন্য।ʼʼ
রূপকথা কথা বলেনা। সে কি জানতো, তার সুদর্শন পলাশ ভাইয়া সুস্থ, স্বাভাবিক মানুষ নয়! সে একজন সাইকো সাথে কুখ্যাত সন্ত্রাসী ও কালোব্যবসায়ী। বাবাই যে শিখিয়েছে পলাশকে এসব। সেটাও তো জানতো না রূপকথা!
‘“কী রান্না করছিস?ʼʼ
-“চিৎড়ি মাছ।ʼʼ
-“নাশতা না বানিয়ে সকাল সকাল চিংড়ি?ʼʼ
পলাশ রূপকথাকে সরিয়ে দিয়ে নিজে দাঁড়ায় চুলোর সামনে। এইসব সময় রূপকথা আচমকাই আশা করে বসে, পলাশ যদি আসলেই সুস্থ হতো, ভালো হতো। সে একটা সুন্দর সংসার পেত। তার স্বামী সুন্দর, বেশ সুন্দর! রূপকথা চেয়ে থাকে। তার আর পলাশের চেহারায় সূক্ষ্ণ মিল আছে, আর তারা দুজনেই সুন্দর। পলাশকে দেখে অল্প সন্দেহ করার অবকাশও নেই যে সে এমন হিঃস্র টেরোরিস্ট। জিজ্ঞেস করে, “আজ হাবভাব এমন লাগছে কেন? কী হয়েছে তোমার?ʼʼ
-“আজ মুড ভালো। ভাবছি তোকে নিয়ে কয়দিন কাকার কাছ থেকে ঘুরে আসব। বহুদিন ঢাকা যাওয়া হয়না। ওদিকের সব কী হাল, আল্লাই জানে।ʼʼ
-“সেসব ছেঁড়েছুঁড়ে দিলে হয়না?ʼʼ কঠিন করে বলল রূপকথা।
-“তোরা মেয়েলোকেরা এই কথা ছাড়া আর কথা জানিস না? কী ছেড়ে দেব? আমি একজন ব্যবসায়ী। ব্যবসা ছেড়ে দেব? খাবি কী? আমি আর কাকা ব্যবসায়ী। খারাপ কী?ʼʼ
-“ওগুলো ব্যবসা? তুমি আর বাবা মিলে সন্ত্রাসদল পরিচালনা করো, তা জানিনা আমি?ʼʼ
-“জানলে কী? তুই জানবি না তো কে জানবে? কাকা সেইদিন বলল, একটা বাচ্চা কাচ্চা নিতে। এত বছরে একটা উত্তরাধিকারী আসলো না। এসব তো তোরই, আর তোর সন্তানদের।ʼʼ
রূপকথার কথা বলার রুচি থাকল না। আগে এসব কিছু মনে হতো না। সেও ভাবতো, এসব তো ব্যবসাই। আসলেই তো, তার বাবা একজন বড় ব্যবসায়ী আর পলাশ ভাইয়া দেখাশোনা করে সব। পরে বুঝলেও কিছু মনে হতো না। এটা স্বাভাবিক। পরিবারের লোক যারা এসব ভোগ করে, তাদের কাছে কোনোকালেই এসব ভুল লাগেনা। কিন্তু যখন পলাশের অত্যাচারের শিকার হতে শুরু করল সে, তারপর থেকেই কালোবাজারী ব্যবসা, নোংরামি, চাঁদাবাজি, খুন, স্মাগলিং—এসবে ঘেন্না ছিটকে পড়তে শুরু করল।
পলাশের ফোন বাজছে। বকতে বকতে ফোন আনতে গেল। এত সকালে কল আসা তার অপছন্দ।
ঢাকা থেকে কল এসেছে। রূপকথা শুধু এটুকু শুনতে পেল, পলাশ চেঁচিয়ে বলছে, “কাকার লাশ? কোথায়? কাকার এপার্টমেন্টে?ʼʼ
রূপকথা থমকে যায়। বাবার লাশ? রাজধানীতে তার নিজের এপার্টমেন্টে?
চলবে..
[ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। কারও কাছে যদি মনেহয় গল্প বেশি টেনে লম্বা করা হচ্ছে, তবে পর্বগুলো স্কিপ করুন। পেক্ষাপট ঠিকমতো খাঁড়া না করে তো আর রহস্য উন্মোচন করা যায়না! আমি উড়তে উড়তে ক্লাইম্যাক্সে গিয়ে পুরো উপাখ্যানটিকে হরবর করে ফেলতে পারিনা। এতদিন যে ধারায় টেনেছি সেভাবেই চলছে বোধকরি। এখানে অনেক চরিত্র। আমি বহুবার বলেছিলাম, হেয়ার অল দ্য সিঙ্গেল ক্যারেক্টার হ্যাজ দেয়ার ওউন ডিস্টিনিক্ট স্টোরি। সবার চরিত্র বিশ্লেষণ থাকবে অল্প-সল্প হলেও। সেক্ষেত্রে এটা বেশ বড় গল্পই হত চলেছে বোধহয়। কমবেশি ষাঁট-পয়ষঁট্টি পর্ব হবে।]