#অবরুদ্ধ_নিশীথ
#তেজস্মিতা_মুর্তজা
৬৮.(বর্ধিতাংশ )
রাত বোধহয় তিনটা বাজছিল। বৃষ্টি থামেনি। ভিজতে ভিজতে এসে দাঁড়ালেন জলিল আমির ফটকের সামনে। ফটক ভাঙা। সঙ্গে সঙ্গে কোমড় থেকে রাইফেলটা বের করে রি-লোড করে নিয়ে শক্ত করে জাভেদের হাত চেপে ধরে ভেতরে ঢুকলেন। কেউ কাঁদছে গুনগুন করে।
সেই রাতে তিনি বৃদ্ধা মা ও ছোট ভাইয়ের শিশু ছেলে ও স্ত্রীর লাশ পেলেন। বড় বারান্দায় সন্তানের লাশ পড়ে ছিল। জামিল আমিরের লাশ আগে আগে জাভেদ দেখেছিল।
তিনি জানতে পারলেন, বাড়িতে তাদের মিছেমিছি আঁটক হবার গল্প শুনিয়ে তার সন্তান ও স্ত্রীদেরকে ফাঁসানো হয়েছে একটি পরিকল্পিত চক্রে। তাঁরা দুজন ঘন্টাখানেক আগেও ফেরার পথে দুটো মিলিটারীর আস্তানায় কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে এলেন।
জয়নালকে ওরা নিয়ে গেছে। জয়নবকে তারপর। আমির নিবাসে লুটপাট হয়েছে। জেবাও আর খালেদকে নিয়ে ফেরেনি।
জাভেদের শরীরে ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়ছে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে বৃষ্টির পানি তার বুককে ঠান্ডা না করে বরং উত্তপ্ত করছে। দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। জামিলের রক্ত বৃষ্টির পানির সাথে নালির পানির মতো ভেসে ভেসে উঠোনের স্রোতে মিশছে। সেই রক্ত হাতে তুলে জাভেদ আমির বুকের শার্টে মাখালো। কান্নাটুকু বৃষ্টির পানির সাথে ধুয়ে গেল অন্ধকারে।
মাকে কেবল একবার জিজ্ঞেস করল, “খালেদ ভাই আসে নাই, আম্মা?ʼʼ
মুর্শিদা দু’পাশে মাথা নাড়েন। হাঁটু গেঁড়ে বসে রইলেন জলিল আমিদ জামিলের লাশের সামনে।
-“আব্বা! ওঠো।ʼʼ
কী ছিল জাভেদের কণ্ঠে কে জানে! জলিল আমির রাইফেলটা কাধে করে উঠে দাঁড়ান। আশ্চর্য! তার পা টলছে। তিনি বুঝলেন, মুক্তিযোদ্ধা হবার আগে তিনি সন্তানের বাপ!
কিন্তু জাভেদের ভেতর তো সন্তানপ্রীতি নেই। ভাইকে চোখের সামনে রক্তাক্ত দেখা, বোনের অনিশ্চিত পরিণতি তার বুকের ভেতরে তুফান তুলেছে। জাভেদ একবার চাচির ঘরে উঁকি দেয়। তাকে বলতে হয়নি, সে আন্দাজ করে নিয়েছে চাচির সাথে কী ঘটেছে। তার কলিজা মুচড়ে ওঠে। জয়নবের মুখটা মনে পড়ছে।
মুর্শিদার পায়ে হাত রেখে বলে জাভেদ, “বিদায় দ্যান, আম্মা। ফিরব নয় মরব। এর বেশি কিছু না। জয় বাংলা।ʼʼ
জলিল আমির আবার একবার পেছন ফিরে তাকান। মুর্শিদার কান্নার শব্দ বাড়ছে। মায়ের মৃতদেহটার আরেকবার তাকালেন তিনি। স্ত্রীর কান্নাকে উপেক্ষা করে বড় ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন তিনি।
খালেদদের বাড়ির ছাই আগুনে ভিজে পিন্ড হয়ে গেছে। জাভেদের শরীর কাঁপছে। ঠান্ডায় অথবা উত্তেজনায়। তার দুই বোন ও ভাই কোথায়? খালেদ ভাইও কি পুড়ে মরে গেছে? সে তো বাড়িতে থাকে না। তার খোঁজে শয়তানেরা রোজ আসে বাড়ি বয়ে।
—
দিনাজপুর সেক্টর-৭ এর অন্তর্ভুক্ত। এই এপ্রিলেই সেক্টর-৭ এর কমান্ডার নিযুক্ত হয়েছেন নাজমুল হক। দিনাজপুর হিলি সীমান্তের কাছে। ভারতের সাথে যোগাযোগ রক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি অঞ্চল। এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকেই পাকিস্তানি বাহিনী উঠেপড়ে লেগেছিল দিনাজপুর দখলের জন্য। একের পর অসংখ্য মানুষ হ-ত্যা করে ফিরছিল।
১৯-এপ্রিলের পর তাদের কঠিন এক হামলায় দিনাজপুরের মুক্তিযোদ্ধারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ল। তারা সীমান্তের দিকেই আশ্রয় নিতে শুরু করল। কিন্তু সকলে বাঁচতে পারেনি। বেশ কয়েকজনকে প্রাণ দিতে হলো। বাড়িতে জানানো হয়নি সেসব শহীদদের মাঝে জাভেদের চাচাও আছে। জাভেদের চাচি ও শিশু চাচাতো ভাই মরে যাওয়ায় সেই কৈফিয়ত দিতে হয়নি। গোটা পুরো পরিবার একেবারে মরার এই এক সুবিধা।
চাচা মরেছে চাচির প্রায় সপ্তাহখানেক আগে। এর মাঝে আর জাভেদ ও জলিল আমির বাড়ি ফেরেননি। চাচি প্রতীক্ষায় ছিল স্বামীর। স্বামীর মৃত্যুর খবর পাওয়ার আগেই ধ-র্ষিতা হয়ে জীবন দিলো।
২১-শে এপ্রিলের পর পর হিলি বন্দরসহ প্রায় দিনাজপুরটাই পাক হানাদার বাহিনীর দখলে এলো। লোকজন পালিয়ে যেতে থাকল। শুধু যেতে পারেনি আমির পরিবারের লোকেরা। গতরাতে ২৬-ই এপ্রিল তারা না পালানো ও যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার ফল পেয়ে গেছে।
—
জয়নবকে ২৮-ই এপ্রিল রাতে পালাক্রমে চারজন সামরিক বাহিনীর সদস্যরা ধ-র্ষণ করল। সে তখন রক্তাক্ত। ব্লাউজের এক হাতা তখনও ছিঁড়ে ডান বাহুতে আঁটকে আছে। পেটিকোটে র-ক্ত। শাড়িটা হাতের কাছে কোথাও নেই। এসবে তার কোনো দুঃখ লাগছে না। তার শুধু দুঃখ হলো চারদিকে তাকিয়ে। কোথাও একটু কিছু নেই, যা দিয়ে সে ছটফটে প্রাণপাখিকে খাঁচা থেকে মুক্ত করতে পারে। শাড়িটা কাছে থাকলেও হতো। শাড়ি নেই।
জয়নবের চুল বিশাল। গত পরশু আম্মা বেঁধে দিয়েছিলেন বেণী করে। বেণীর আগা থেকে ফিতে খসে গেছে। অর্ধেকটা বেণী আছে এখনও। রক্তাক্ত দূর্বল হাতদুটো দিয়ে জয়নব শক্ত করে বেণী পাকাতে শুরু করল। খোলা চুলের চেয়ে বেণী পাকানো চুল গলায় বেশি শক্ত করে ফাঁস লাগাতে পারবে।
কিন্তু তার উদ্দেশ্য সফল হলো না। তার চুলগুলো কেটে দেয়া হলো। তাকে মরতে দেবে না হানাদার বাহিনী। বেঁচে থেকে গর্ভধারণ করতে হবে তাকে। পাকিস্তানীদের বীর্য থেকে জন্মানো এক খাঁটি সন্তানের মা হতে হবে তাকে।
জয়নবকে চিকিৎসাও করানো হবে।
কিন্তু পরদিন সকালের পর এক লোক এলো জয়নবের কাছে। লোকটাকে সে চেনে। আনোয়ার খন্দকার। জামিলকে মেরে পরশু রাতে জয়নবকে যখন ধরে আনা হচ্ছিল, লুটপাটকারীদের মধ্যে আনোয়ার নেতৃত্বে ছিল। সে পাশের পাড়ার মাতব্বরের চাচাতো ভাই। আমির পরিবারকে একটুও পছন্দ করে না। করা উচিতও না। একবার এক নতুন বউয়ের ঘরে ঢুকে পড়ার দায়ে জলিল আমির গাছের সাথে বেঁধে খুব পিটিয়েছিলেন আনোয়ার খন্দকারকে।
পঞ্চমবারের মতো ধ-র্ষিত জয়নব আনোয়ারের কাছে হলো।
কিন্তু এরপর আর জয়নব একটুও আত্মহত্যার চেষ্টা করল না। দরকার নেই। সে বুঝল, সে চেষ্টা করেও আর বেশিক্ষণ বাঁচবে না। খুব র-ক্তক্ষরণ হচ্ছে। ভেসে যাচ্ছে মেঝে। শরীরে খামছির দাগ কত। সেসব জায়গাও জ্বলছে। জয়নব মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করতে থাকল। তার ভীষণ আনন্দ হচ্ছে। আব্বা আর জাভেদকে দেখা হয়নি দুটো সপ্তাহ! কিন্ত এ অবস্থায় দেখা করার কোনো ইচ্ছে নেই জয়নবের। সে অপবিত্রা। এই অবস্থায় অন্তত আব্বা আর খালেদের সাথে সাক্ষাৎ করা যায় না! কী বিদঘুটে লাঞ্ছনার ব্যাপার!
খানিক পর পাশের কক্ষ থেকে বিকট চিৎকারের আওয়াজ এলো। কাউকে মারা হচ্ছে। সপাৎ সপাৎ শব্দের সাথে আর্তনাদগুলো নারকীয় লাগছিল। কিন্তু জয়নবের মনে হচ্ছে কণ্ঠস্বরটা তার চেনা। মৃদু স্বর। কণ্ঠে প্রাণ নেই।
জয়নব চমকে উঠল। খালেদের আর্তনাদ। তার ধারণা সত্যি হলো। বিকেলের দিকে তার কক্ষে আরও কিছু নারী, খালেদসহ কিছু বন্দি ও লুটের মাল এনে রাখা হলো। হারিকেন, মোমবাতি ইত্যাদি জ্বালানো হলো। বৃষ্টির কারণে অথবা অন্য কোনো কারণে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন জায়গাটির।
সেই আগুনের আলোতে জয়নব অবাক হয়ে দেখল শেষবার–এটা কেমন জায়গা! সে কোথায়? তার বিশ্বাস হতে চাইল না যে সে আসলেই এই জায়গায়!
খালেদের জ্ঞান নেই। প্রিয়তমার অবস্থা সে দেখল না। জয়নব কিন্তু দেখল শেষবার হবু স্বামীকে। সে আশায় আশায় জেবাকে খুঁজল। খালেদকে এখানে আনা হয়েছে তাহলে জেবা কোথায়? জয়নব জানতে পারল না জেবার তেরো বছর বয়সী দেহটাকে সেই বর্ষণের রাতেই ছিঁড়ে-ছুটে খেয়ে ফেলেছে তারই মাতৃভূমি বাংলাদেশের কিছু ক্ষুধার্তরা। এরপর খালেদদের বাড়িতে আগুন দিয়ে খালেদকে ভাত খাওয়া অবস্থায় ডেকে এনে ক্যাম্পে জমা দিয়ে গেছে মিলিটারীদের হাতে। খালেদের অপরাধ ছিল কঠোর। সে মিলিটারীদের এক কমান্ডারকে কুপিয়ে মেরেছে। কিন্তু তার মূল অপরাধ হলো, সে মুক্তিযোদ্ধাদের খবর আনা-নেওয়ার দূ। তার কাছে দিনাজপুরের সকল মুক্তিবাহিনীর খবরাখবর আছে। তিনটে দিন ধরে মেরেও খালেদের দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি প্রেমের ওপর কলঙ্ক লাগানো যায়নি। খালেদ বিশ্বাসঘাতকতার মতো সুবিধাজনক কাজটা করল না কোনোভাবেই। বোকা খালেদ মৃত্যুকে বেছে নিলো।
খালেদের কপাল বেয়ে তিরতির করে র-ক্ত পড়ছে। মেঝেতে পড়ে বাতাসে জমাট বেঁধে যাচ্ছে।
শেষ সময়ে জয়নবের খুব জয়নাল আর জাভেদের কথা মনে পড়ছিল। আব্বার মুখটা ভেসে উঠছিল। ইশ! আব্বা কি জানে, জয়নব কোথায়? জয়নাল তো ক্ষ্যাপা! সে যখন এসব জানবে, কী করবে? পাগল হয়ে যাবে বোধহয়!
—
চারদিন পর পয়লা মে তারিখের পর জলিল আমির জানতে পারলেন–জয়নালকে কারা বের করে নিয়ে গেছে আমির নিবাস থেকে। জয়নালকে উনারা পেলেন নদীর চরের এপারে জঙ্গলের ধারে অচেতন অবস্থায়। জয়নাল চারদিনের না খাওয়া অবস্থায় প্রায় অচেতন।
তাকে আমির নিবাস থেকে বের করে এনেছিল–কিছু দেশোদ্রোহী, সুবিধাভোগী বাঙালি। যুদ্ধটা যাদের কাছে বড়লোক হবার একটা সূবর্ণ-সুযোগ মাত্র। এরাও কিন্তু একেকজন মুক্তিযোদ্ধা। ২৫-ই মার্চের পর বাঙালির ভেতরে যে আগুন জ্বললো, তারপর এপ্রিলের শুরুতে মুক্তিবাহিনী যে মুক্তিকামনা নিয়ে স্বাধীনতাযুদ্ধে নেমেছিল, তারা কিন্তু সেজন্য নামেনি। তাদের কেউ নেমেছিল লোভ-লালসায়, কেউ প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে, কেউ বা ক্ষমতা ও যশ, খ্যাতি লাভ করতে, আর কেউ যুবক বয়সের আবেগী রক্তের ছটফটানিতে।
সে হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যোগদান করলেও ভেতরের মিরজাফরের সৈন্য-সত্ত্বাটা কিন্তু বহাল ছিল। এই যোদ্ধাদের সাথেই কাধে কাধ মিলিয়ে দুই সপ্তাহ আগে জলিল আমির মিলিটারীদের বুক তাক করে গুলি ছুঁড়েছেন। তারা তার পরিবারের জন্য যম হলো।
জয়নালের সুস্থ হতে একদিন লাগল। তার ভেতরের জেদ তাকে অসুস্থ থাকতে দিলো না। তাকে কেন মেরে ফেলতে গিয়েও মারা হয়নি তা বোঝা গেল না।
রাতে তারা আনোয়ার খন্দকারসহ গোটা বংশের বাড়িতে আগুন দিলো। আনোয়ারকে জয়নাল আমির নিজ হাতে জবাই করেছিল। এটা তার প্রথম খু-ন। বাড়ির মহিলারা খুব চেঁচাচ্ছিল। জাভেদের ভেতরে তখন কীসের যে হিংস্রতা চাপল। জয়নবের মুখটা তাকে তাড়া করছে। জয়নবকে সে শেষবার দেখেছে দুই সপ্তাহ আগে আব্বার সাথে যুদ্ধে বেরিয়ে যাবার সময়। জয়নব দৌড়ে এসে বাহুতে একটা তাবিজ বেঁধে দিয়েছিল।
জাভেদ আমির বাড়ির মহিলাদেরকে বাড়ি থেকে টেনে হিঁচড়ে বের করে দিয়ে আব্বাকে ইশারা করল বাড়িতে আগুন দিতে।
মহিলারা গোটা অঞ্চলে ছড়িয়ে দিলো–আমির পরিবারের মানুষেরা রাজাকার। ওরা মুক্তিযোদ্ধার বেশ ধরে মিলিটারীদের কাজ করছে। ওরা মূলত মিলিটারী মারার নাম করে রাতের অন্ধকারে বাঙালিদের বাড়িঘর জ্বালাচ্ছে, মানুষ হ-ত্যা করছে। তার প্রমাণ তারা নিজে।
তিন বাপ-ব্যাটাকে পালিয়ে বেড়াতে হলো। তারা আর কোনো মুক্তিবাহিনীর সাথে যোগ দিতে পারল না। গোটা অঞ্চল জানে তারা আমির বংশীয়। আর অধিকাংশ জমিদারেরা পাকিস্তানিদের সঙ্গ দিয়েছে। সুতরাং আমির পরিবারের রাজাকার হবার ব্যাপারটি খুবই বিশ্বাসযোগ্য হলো সবার কাছে।
এই হতাশা যেমন জাভেদ ও জলিল আমিরকে ব্যথিত করছিল, তেমনই উল্টো প্রভাব ফেলেছিল জয়নালের ওপর। জয়নালের ভেতরে পাগলাটে বিদ্রোহের জন্ম দিলো বরং। ছোটবেলা থেকে একরোখা, জেদি জয়নাল সহ্য করতে পারল না এত বড় অপবাদের গ্লানি। তার শুধু মনে হলো–যে মুক্তিযুদ্ধের দায়ে চাচা, ভাই, দুটো বোন, দাদি, চাচি, শিশু চাচাতো ভাইকে এত নির্মমভাবে হারালো, তার প্রতিদানে সে নেহাত কম পায়নি। তার বুক ফুলে উঠতো এত ত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া এই কঠিন পরিচয়টিতে। জয়নাল সেটাকে গ্রহণ করল সাদরে। এত ত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া এই পরিচয়টি সে আর কখনও নিজের থেকে আলাদা হতে দেয়নি–সে রাজাকার।
কোনোদিন আর জয়নাল নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা বা স্বাধীনতাকামী বলেনি। এক শব্দে সে নিজের পরিচয় দিয়েছে, ‘আমি রাজাকার।ʼ কোনোদিন নিজের সাফাই না গাওয়া পরবর্তীকালের সন্ত্রাস জয়নাল আমির স্পষ্টভাবে জানল না, তার বংশে পরবর্তীতে আরেকটা জয়নাল আমির জন্মাবে। জয়নালেরা বারবার জন্মায়। কেউ জানে না তাদের।
সে বাপ-ভাইয়ের সঙ্গ ছাড়ল। বাপ-ভাই বুকে কষ্ট চেপে লুকিয়ে মিলিটারী মারতে যায়। জয়নাল যায় না। সে আর মিলিটারী মারবে না। সে মারবে তাদের, যাদেরকে মারার ফলে সে-ও তাদের অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। ধীরে ধীরে তার হাত পাকাপোক্ত হলো। রাতের বেলা দেশোদ্রোহীদের মারে, দিনে পালিয়ে থাকে। কেউ কেউ তাকে চিনেও ফেলে। সে দেশের মানুষদের মেরে মেরে বের হচ্ছে, পালিয়ে যাচ্ছে। তাতে একটা উপকার হলো। তার নামের শেষে রাজাকার শব্দটি খুবই শক্তপোক্তভাবে গেঁথে গেল।
জাভেদ কিন্তু বছরের মাঝামাঝিতে এসে দোটানায় পড়ল। সে জয়নালের মতোন অত জেদি নয়। তার ভেতরে দেশের জন্য বড্ড ব্যথা। কিন্তু সে বিশ্লেষণধর্মী মানুষ। সবাই যখন উন্মত্তের মতোন মিলিটারী মারতে ব্যস্ত, তাদের একটাই লক্ষ দৃশ্যমান দুশমনদের পূর্ব পাকিস্তানের জমিন থেকে বিদায় করতে হবে। এটা স্বাভাবিক। তৎকালীন পরিস্থিতি শুধুই মানুষের বর্তমান দেখার ওপর কাজ করে। কিন্তু পরিণতি, ফলাফল, গভীরতা সম্বন্ধে চিন্তা করতে মস্তিষ্ক সেই উত্তাল সময়ে কাউকেই নির্দেশ দেয় না।
গোটা বাঙালির হালও তাই। জলিল আমিরের হাল আরও তাই। তিনি এক দেবতার পুঁজো করেন। দেবতার নাম মুজিব। স্বাধীনতার ডাক দেওয়া দেবতার ভাষণ তিনি নিজকানে শুনেছেন রেসকোর্সে দাঁড়িয়ে। তিনি কেবল মুক্তি চান, তিনি বাঁচতে চান। এবারের এই সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।
কিন্তু জাভেদ ভাবতে লাগল অন্যভাবে। ১৯৭০ সনের নির্বাচনে যখন আওয়ামী লীগ জয়লাভ করল, জাভেদের নিঃশ্বাস আঁটকে এসেছিল খুশিতে। কিন্তু একদল মোল্লা শ্রেণী সেটার অন্যরকম ব্যাখ্যা তৈরি করেছিল। তারা বলল, এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে জেতাতে ভারত থেকে মানুষ এসে ভোট দিয়ে গেছে। এই সহায়তার মূল উদ্দেশ্য কী? এই সহায়তার মূল উদ্দেশ্য কি পাকিস্তানকে দেশ থেকে তাড়িয়ে নিজেরা বাংলাদেশকে শাসন করা নয়? পাকিস্তান যদি ওদের শত্রু না হতো, তাহলেও কি ওরা বাঙালিকে এভাবেই তথাকথিত সহায়তা করতো? পাকিস্তানের ওপর নিজেদের একটা প্রতিশোধ নেবার সুযোগ হিসেবেই কি তারা এই সহায়তাটি পরিচালনা করছে না? এর বদলে তারা কী চায়?
মানুষ ক্ষেপে গেল মোল্লাদের ওপর। জাভেদের ইচ্ছে হয়েছিল ওদেরকে গিয়ে কুপিয়ে আসতে। দিনাজপুর, হাকিমপুরের কওমী মাদ্রাসার পরিচালক ও ধর্মীয় নেতারা এসব কথা বলতে শুরু করেছিল। তারা বলল, স্বাধীনতা আসলে কী? এক দেশ থেকে মুক্তি লাভ করে অন্য দেশের হাতে নিজেকে গোলামির উদ্দেশ্যে সঁপে দেবার নাম স্বাধীনতা? তাহলে এই স্বাধীনতা আমাদের কাম্য নয়।
জাভেদ মন ভরে তাদের ঘেন্না করে আসছে একটা বছর যাবৎ প্রায়। তার ঘেন্না হয় এটা ভাবলে যে, এরা তারই ধর্মের মোল্লা সম্প্রদায়। ধর্মও এদের ভেতরে দেশপ্রেম জাগায়নি। তারা ধর্মের নামে পাকিস্তানকে সমর্থন করে। ছিঃ! তারা স্বাধীনতা চায় না।
কিন্তু তাদের সাথে ঘটে যাওয়া এই ঘটনা জাভেদকে কেমন যেন গভীর থেকে ভাবাতে শুরু করল। আচ্ছা, দুনিয়ার চলমান পরিস্থিতি ঠিক কেমন? কোথায় এর শেষ আর কোথায় বা শুরু? এত জটিল কেন সব? তারা কী করছে? স্বাধীনতা আসলে কী? তারা কি আসলেও স্বাধীন হবে? মোল্লারা কী বলে? ঠিক বলে না ভুল বলে? আবার যারা বলছে, স্বাধীনতা আসবে না পাকিস্তানিদের বিতারিত করলেও। তারা কারা? অধিকাংশ মুসলমান। যুদ্ধের ময়দানে জাভেদ তাদেরকে র-ক্তে জড়ানো ধুলোর ওপরে লুটিয়ে পড়ে এক সৃষ্টিকর্তার নামে সেজদা করতে দেখেছে।
তাহলে এটা কী? এই মুসলমানেরাই বলছে তারা স্বাধীন হবে না পাকিস্তান গেলে। শুধু পাকিস্তানকে সরিয়ে লাভ নেই। আবার এরাই তো ঝাঁপিয়ে পড়ছে যুদ্ধে। তাহলে এরা আসলে জাতিকে বলতে চাইছেটা কী? কোনো অগ্রিম বার্তা দিতে চাইছে না তো? যা তারা এখন বুঝতে পারছে না, পরে বুঝবে কিন্তু লাভ হবে না! আসলে দেশপ্রেমিক কারা, আর দেশোদ্রোহী কারা? পার্শ্বদেশ কেন সহায়তা করছে আমাদের? বিনা-স্বার্থে? তাই আবার হয়! মোল্লারা মূলত কেন ওদের সহায়তাকে ভালো চোখে দেখে না?
এসব ভেবে শেষ করার ফুরসৎ জাভেদ আমির পেয়েছিল না। তার আগেই জয়নাল খবর দিলো জয়নব ও খালেদকে পাকিস্তানিরা যে ঘাটিতে তুলে নিয়ে গেছিল, তা হাকিমপুরের মাদ্রাসা। পাকিস্তানিরা ওখানে দিনাজপুরকে কবজা করার লক্ষ্যে বিশাল ঘাঁটি গেড়েছে।
হাকিমপুর হিলি স্থলবন্দের কাছে। সহজ হিসেব। তারা যখন হিলি বন্দর দখল করেছে, তখন মোল্লাদের মাদ্রাসা মোল্লারা ছেড়ে দিয়েছে পাকিস্তানিদের জন্য। ওই মাদ্রাসাতেই এখন বাঙালি হ-ত্যা, নারী ধ-র্ষণ, লু-টপাটের মাল ভাগাভাগির কাজ চলে।
জাভেদের পূর্বেকার সব ভাবনা চুড়মার হয়ে গেল এই লহমায়। সে আবারও সৈয়দ পরিবার-বিদ্বেষী হলো। সৈয়দ পরিবার চালায় ওই মাদ্রাসা।
সৈয়দ পরিবারের নাম-চিহ্ন মিটিয়ে দিতে জয়নাল ও সে তৈরি হয়ে গেল। জয়নাল খুব শান্ত তখন। তাকে আর মোটেও মুক্তিযোদ্ধা লাগে না। তার ভেতরে মুক্তিযোদ্ধাদের মতো সেই তেজ, রক্ত টগবগ করা আগুন, চোখে মুক্তির নেশা এসব কিচ্ছু নেই। আছে এক অদ্ভুত শীতলতা।
জাভেদ অবাক হয়ে গেল–জয়নাল এক দেশোদ্রোহী বাহিনীর সহায়তা নিয়েছে সৈয়দ পরিবারে হামলা করতে। সেই বাহিনী না এদেশের না ওদেশের। তারা কেবল বিশৃঙ্খলার, উন্মাদ রাহাজানি আর র-ক্তার-ক্তির।
যা করলে অঞ্চলজুড়ে অস্থির, অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হয়, তা করতে সদা প্রস্তুত সেই বাহিনীকে নিয়ে গিয়ে জয়নাল সৈয়দ পরিবারের অসুস্থ কর্তা বৃদ্ধ সৈয়দ আব্দুল বাশার নিয়াজী সাহেবকে গলা টিপে হ-ত্যা করল। সেই বাহিনী সৈয়দ পরিবারের কয়েকজন মহিলাকে নিয়ে আমোদেও মেতে উঠল। জয়নাল কিচ্ছু বলল না। সে এগিয়েও গেল না। জয়নবের সাথে যা হয়েছে, তা সৈয়দ পরিবারের মহিলাদের সাথেও হলো। জয়নাল এতে কোনো ভুল দেখল না।
সেই বাহিনীর চাহিদা মেটাতে সে সৈয়দ পরিবারের শেষ সম্বলটুকু অবধি ছিনতাই করে নিয়ে এসে ওদের মাঝে বিলিয়ে দিলো। একটা পয়সা অথবা গহনাও রাখল না নিজের জন্য। তার বয়স সবে তখন আঠারো হবে।
আফসোসে তার মুখ কালো তখন। সৈয়দ পরিবারের বিশাল গোষ্ঠীশুদ্ধ পুরুষ জনতা তখন বাড়িতে নেই। জয়নাল মোল্লাদের পুরো বংশকে নির্বংশ করতে গেছিল। অসুস্থ বৃদ্ধ ও বাড়ির মহিলা ছাড়া কাউকে পেল না।
নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে দিনাজপুরের যোদ্ধারা বিশাল এক আগ্রাসনের মাধ্যমে বদ্ধ পরিকর হলো–মিলিটারীকে দিনাজপুরের মাটি থেকে উৎখাত করতে। তখন আর তারা কে রাজাকার, কে প্রকৃত যোদ্ধা তা হিসেব করেনি। সেক্ষেত্রে জলিল আমির সক্রিয় ছিলেন তাদের সাথেই। মুক্তাবাহিনী সেই উত্তাল সময়ে উনাকে তেমন গ্রাহ্য না করলেও ফেলে দিলেন না।
স্বাধীনতাকামী জলিল আমির সেসব কিচ্ছুতে মনোযোগ না দিয়ে কেবল শত্রুর বিরুদ্ধে লড়ে গেলেন। দিনাজপুর হানাদারমুক্ত হলো ডিসেম্বরের মাঝামাঝি তারিখে। এর মাঝে জলিল আমির চিরতরে নিজের ডান পায়ের চলাচল ক্ষমতা হারালেন। তার চলার সঙ্গী হলো লাঠি অথবা স্ক্রাচ।
কিন্তু এই চূড়ান্ত লড়াইয়ে দেখা গেল না তার দুই ছেলেকে। তিনি তাঁর পা হারানোর সুবাদে মুক্তিযোদ্ধার নাম পেলেও জাভেদ পেল দেশোদ্রোহী পরিচিতি। আর জয়নাল বলাবাহুল্যভাবেই একজন বিখ্যাত রাজাকার দিনাজপুরের।
আমির পরিবার ও সৈয়দ পরিবারের মাঝের এই দুশমনী তৈরির শুরুটা কোথাও একটা আচমকাই অদ্ভুতভাবে হলো বটে, কিন্তু এর শেষ নেই বোধহয়!
জয়নাল প্রকৃতপক্ষেই এক ত্রাসের সম্রাট হয়ে উঠল। তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিলেন জাভেদ আমির। সে খুব খুশি খুশি বেরিয়ে গেল সুশীল সমাজ থেকে। তার খারাপ হতে একটুও কার্পণ্য নেই।
জাভেদ আমির কেমন পাগল পাগল হয়ে গেল। সে শুধু ভাবে আর ভাবে।
তখন দেশে লুটপাট চলছে। ক্ষমতার লুটপাট। কে কার ওপর দিয়ে কোন পদে বহাল হতে পারে। সবাই তখন প্রমাণ দিতে ব্যস্ত–কে কতটুকু অবদান রেখেছে স্বাধীনতায়, তাকে সেইটুকু মেপে হিসেব করে ক্ষমতা দিয়ে দেয়া হোক। কেউ তার প্রতিদান না নিয়ে ঘরে ফিরতে নারাজ।
জাভেদ ভাবনায় পড়ল, এরা কি তাহলে যুদ্ধ করেছে স্বাধীনতার জন্য নাকি প্রতিদানের আশায়? সে দেখল, ভারতও চমৎকার সহজ উপায়ে বাংলাদেশকে গ্রাস করে ফেলেছে। মুজিব তাতে সম্মতির হাসি হাসছেন। জাভেদের মস্তিষ্কে দিনদিন অস্বাভাবিক রকমের সব দর্শন খেলে যেতে লাগল। মোল্লারা কী বলতো! গুণীজনেরা কী বলে গেছেন! বছর যত যায় দেশের নেতারা তত রঙের রূপ দেখাতে থাকে। জাভেদের চোখের অনিন্দ্য সুপারহিরোরা কেমন সুপারভিলেন হয়ে উঠছিল।
জাভেদ খুব অল্প সময়ে বুঝে ফেলল, স্বাধীনতা একটি কল্পিত তত্ত্ব মাত্র। এর বাস্তবতা নেই। স্বাধীনতা কল্পনাতেই সুন্দর। বাঙালি আজও করুণ সুরে কাদে, খিদেয় পেটে পাথর বাঁধতে যায়, আজও নারীর সম্মান যায় কিন্তু বিচার হয় না, ক্ষমতার লড়াইয়ে দেশে অরাজকতা স্পষ্ট দেখা যায়। অথচ হানাদার গেছে বছর তিনেক প্রায় আগে। ক্যালেন্ডারের পাতায় এটা ১৯৭৪। তাহলে স্বাধীনতা আসলে কী?
এখন প্বার্শদেশ দেশের সম্পদে ঠিক সেভাবেই ভাগ বসায় যেমন ভাগ বাপের দুটো সন্তান বাপের সম্পত্তিতে পায়। বাংলাদেশের সম্পত্তি ও সার্বভৌমত্বে ভারতের সমান নয় বরং বেশি অধিকার। এসব কথা মোল্লারা বেশি বলে। তাই তাদের কল্লাটা বেশি যায়। তারা দেশোদ্রোহী। তারা দেশের নেতাদের বিরুদ্ধে কথা বলে। এরা আগে যেমন দেশের স্বাধীনতায় নারাজ ছিল, এখনও আছে। এই যে এখন কত সুন্দর স্বাধীনতা আমাদের! আগে পাকিস্তানীরা ক্ষমতায় ছিল, এখন দেশের সন্তান। অথচ ওরা বোঝে না, এরা খুশি না।
সব ঠিক লাগলেও জাভেদের ভেতর থেকে জয়নব ও খালেদের স্মরণ যায়নি। সে ঠিক মনে রেখেছে, মোল্লাদের মাদ্রাসায় এরা দুজন নৃশংসভাবে বলি হয়েছিল। জাভেদ দোটানায় দিশেহারা হয়ে উঠছিল দিনদিন। সে চুল-দাড়ি কামায় না, হাসে না, বসে থাকে বাগানের শেষে একটা চেয়ার পেতে। ঘন্টার পর ঘন্টা কেবল চুরুট টেনে চলে যায় তার দিন, মাস, বছর।
জলিল আমির জোর-জবরদস্তি করেও ১৯৮৫ সনের আগে জাভেদের বিয়ে দিতে পারলেন না। পাটোয়ারী বাড়ির একমাত্র মেয়ে হুমায়িরা পাটোয়ারীর সঙ্গে জাভেদ আমিরের বিয়ে হলো। জাভেদ আমিরের বয়স তখন একত্রিশ।
জয়নাল আমির রাজধানীতে ত্রাস গড়েছে। দিনাজপুরে এলেও সে আমির নিবাসে পা রাখে না। সে থাকে নিজের তৈরি বাসভবনে।
১৯৮৭ সনের ২৯-জুন জাভেদ আমিরের ছেলের জন্ম হলো। আশ্চর্যজনকভাবে প্রায় যুগখানেক পর আমির নিবাসে পা রাখলেন জয়নাল আমির। সাথে এক গাড়ি উপঢৌকন। তার ভাতিজা জন্মেছে। লোকে বলল–দেখতে জয়নাল আমিরের মতো। জাভেদ আমিরের চেহারায় সেই ধার নেই, যা তার সন্তানের চেহারায় দেখা গেল। কিন্তু তা জয়নাল আমিরের চেহারায় আছে।
জয়নাল আমির নাম রাখলেন ভাতিজার–জুনিয়র জয়নাল। কঠোর জয়নাল আমিরের ভেতরে শিশু ভাতিজার জন্য কীসের এক পাগলাটে স্নেহ যে জন্মালো। জুনিয়র জয়নালের নাম সংক্ষিপ্ত হলো। আমির পরিবারের পরবর্তী একমাত্র বংশধরের নাম হলো–জয় আমির। পুরোনো জমিদার বাড়ির শিশু উত্তরাধিকরীর আকিকাতে কতকগুলো গরু-মহিষ জবাই করলে জলিল আমির।
জয় আমিরের জীবনের শুরুটা ঠিক ততটাই অভিজাত্য ও যত্নের সাথে হলো যতটা অগোছালো ও ছন্নছাড়া তার পরিণতি পরবর্তীকালে হয়েছিল।
চলবে…
[ দু-একজন বলছেন—বর্তমান পরিস্থিতির সাথে মিলিয়ে নাকি গল্পের প্লট পরিবর্তিত হয়েছে। হাস্যকর। তাদেরকে আমি বলব, আপনারা তাহলে শুরু থেকে #অবরুদ্ধ_নিশীথ পড়েননি। আবার একবার রিভিশন করবেন।
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। আর আমরা তৃতীয়বারের মতো অবরুদ্ধ নিশীথে প্রবেশ করছি। এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশে। মন্তব্য করবেন বড় বড়😒]