#অবরুদ্ধ_নিশীথ
#তেজস্মিতা_মুর্তজা
৭০. (বর্ধিতাংশ)
হামজার শরীরের চামড়ার নিচে রক্ত জমাটবদ্ধ হয়ে গেছে। নিচের পাটির একটা দাঁত নড়ে গেছে। মাড়ি থেকে রক্ত বের হবার ফলে গাল নোনতা লাগছিল।
সকাল আটটায় বৈঠক বসল। হামজাকে বড়হুজুর জিজ্ঞেস করলেন, “যদি তুমি বলতে না পারো কেন এসেছ ওত রাতে মাদ্রাসার ভেতরে, কঠোর শাস্তি পাবে।ʼʼ
হামজা ভীতু স্বরে বলল, “আমি বলব। কিন্তু আপনারা বিশ্বাস করবেন না।ʼʼ
-“মানে? বিশ্বাস কেন করব না?ʼʼ
-“আমি সত্যি বললে বিশ্বাস হবে না আপনাদের।ʼʼ
-“কেন?ʼʼ
হামজা চুপ করে রইল। এতে উপস্থিত জনতার ভেতরের কৌতূহল মাত্রা ছড়াল। উত্তেজিত হয়ে উঠল তারা। জয় ভ্রু কুঁচকে হামজাকে বোঝার চেষ্টা করে পারল না।
-“বলো দেখি। বলো। কেন ঢুকেছ ওত রাতে ওভাবে?ʼʼ
হামজা আড়ষ্ট ভঙ্গিতে সেলিমের দিকে ইশারা করে বলল, “উনি আমারে আসতে বলছিলেন।ʼʼ
সেলিম আকাশ থেকে পড়ল। তেড়ে এসে গলা চেপে ধরল হামজার। হামজা মিছেমিছি কেশে উঠল করুণভাবে। সবাই জোরপূর্বক ছাড়িয়ে নিয়ে অবিশ্বাসী স্বরে বলল, “এই ছেলে, বুঝে বলতেছ তো কী বলতেছ? জানো ও কে?ʼʼ
অবুঝের মতো বলল হামজা, “কে?ʼʼ
-“ও মেজো সৈয়দ সাহেবের শালা। ধার্মিক মানুষ। তুমি তারে আজেবাজে কথা বললে আবার মার খাবা। বুঝে শুনে কও যা কইবা।ʼʼ
হামজা ভীতু নজরে দু’বার মাথা তুলে সেলিমকে দেখল। ভাবটা এমন যেন সে সেলিমকে ভীষণ ভয় পাচ্ছে, কথা বলতে পারছে না ভয়ে। সেলিম ছটফট করছিল। বড়হুজুর অভয় দিলেন, “যাইহোক! বলু ক্যান আসতে কইছিল তোমারে? জয়ের সাথে দেখা করবার জন্য?ʼʼ
-“হ্যাঁ।….না।ʼʼ
-“কী বলতেছ?ʼʼ
-“মানে হ্যাঁ। এইটাও একটা কারণ। কিন্তু আরেকটা কারণ আছে।ʼʼ
-“সেটা কী?ʼʼ
এবার আরও ভয় ফুটে উঠল হামজার মুখে। সে ভীতু নজর তুলে সেলিমকে দেখছিল বারবার, আর আতঙ্কিত হয়ে চোখ নত করছিল। সেলিম রাগে দিশেহারা হয়ে তেড়ে এলো আবারও, “খচ্চরের বাচ্চা! ইবলিস। কী বলতে চাইতেছিস? মিথ্যা কথা কইলে জবান টাইনা ছিইড়া আনমু, হারামীর বাচ্চা। আল্লাহর গজব পড়বো তোর উপর।ʼʼ
সবাই সেলিমের আচরণে ভ্রুকটি করল। তার আচরণ আর হামজার কথা ও অঙ্গভঙ্গি অনুযায়ী আসলেই তাকে সন্দেহজনক লাগছিল। হামজা ভয়ে আরও সিটিয়ে গেল।
সবাই এবার তেঁড়ছা নজরে একবার সেলিম ফারুকীকে দেখে হামজাকে পুরোদমে অভয় দিলো। বড় হুজুর বললেন, “তুমি বলো, ছেলে। সেলিম খবরদার আর কোনো লাফালাফি করবা না। ওরে কথা কইতে দাও। এ কী অসভ্য আচরণ। ওরে কথা বলতে দিচ্ছ না কেন?ʼʼ
সেলিম দিশেহারা হয়ে উঠল,“বিশ্বাস করেন হুজুর, এই ইবলিসের বাচ্চা মিথ্যা কথা বলতেছে। আমি ওরে আজকের আগে খুদার কসম দেহিই নাই।ʼʼ
-“সেলিম! ও এখনও কিছু বলেইনি। তুমি নিজেই বেশি বেশি করছো। তাইলে কি ধরেই নেব, ও সত্যি কথা বলতেছে? সত্য মিথ্যা যাচাই আপনা-আপনিই হবে। তার আগে তুমি শান্ত থাকো দেখি।ʼʼ
সেলিম থমকে গেল। বড়হুজুর হামজাকে বললেন, “তুমি বলো।ʼʼ
হামজা আবারও ভয়ে ভয়ে তাকাল সেলিমের দিকে। বড় হুজুর এবার একটা ধমক দিলেন, “বললাম না ও কিছু করবে না তোমার। ভয় নেই কোনো। যা সত্যি নির্ভয়ে বলো। আমি আছি না!ʼʼ
হামজা ততক্ষণে সফল পুরো উপস্থিত জনতাকে কাবু করে ফেলতে। এবার সে বলল, “মাদ্রাসায় আগুন দেবার জন্য বলছিল আমায়। বলছিল রাতে যেন আসি আমি।ʼʼ
এবার আর সেলিমকে ঠেকানো গেল না। উড়ে এসে এক ঘুষি মারল হামজার চোয়ালে। ব্যথা ঠিকই পেল হামজা, মাড়ি থেতলে গেল। কিন্তু তার কিশোর শরীরটা পড়ে যাবার কথা না। কিন্তু হামজা খুবই অসহায় ভঙ্গিতে ইচ্ছাকৃতভাবে মাটিতে পড়ে মৃদু আর্তনাদ করে উঠল।
উপস্থিত জনতা এবার পুরোদমে সেলিমের হাতছাড়া হলো। ক্ষুব্ধ চোখে বড় হুজুর সাহেব একবার সেলিমকে দেখে হামজাকে নিজে হাতে তুলে বসিয়ে দ্বিগুন উৎসাহ ও উত্তেজনার সাথে তাড়া দিলেন, বল তো আব্বা! কী বলতেছিলি? সেলিম মাদ্রাসায় আগুন দিতে চায়? কিন্তু কেন? মিথ্যা বলা মহাপাপ, গুনাহ। তুমি মিথ্যা কথা বলতেছ না তো! তোমারে কেমনে চেনে সেলিম? মানে বুঝায়ে বলো তো!
-“আমি সত্যি বললে আপনারা আমায় মারবেন না তো আবার?ʼʼ
এমন করুণ করে বলল হামজা, সবাই অনুশোচনায় ফেটে পড়ল। একটা পনেরো বছরের কিশোরকে তারা কী নিষ্ঠুরভাবে মেরেছে সব না শুনে।
বড় হুজুর বললেন, “আমি তখন ছিলাম না। এখন আছি। তোমার কোনো ভয় নেই। যা সত্যি সব বলবে। সত্য বললে মারবে মানে? সেটা যত তিতাই হোক। আর মারব না। আমি থাকলে তখনও এই জাহিলগুলো তোমার গায়ে হাত তোলার সুযোগ পাইতো না। এদের মধ্যে ধর্মীয় কোনো চেতনাই নাই। সবগুলা জানোয়ার হয়ে গেছে। বলো তুমি।ʼʼ
হামজা সুন্দর একটা গল্প বলল। প্রথম কথাটা একটু ইতস্তত করে বলল, “আমি বড়ভাইদের কাছে থাকি।ʼʼ
সবাই বুঝল, বড়ভাই কারা। হামজা সেলিমকে নির্দেশ করে বলল, “তো উনি সেইখানে যাতায়াত করে।ʼʼ
সবার চোখ বিস্ফরিত হয় সেলিমের বিশ্বাসঘাতকতায়। সেলিম এবার আর এসে হামজাকে আঘাত করাল সুযোগ পায় না। দুজন যুবক চেপে ধরল সেলিমকে।
হামজা বলল, “ওইখান থেকে আমি তার কাছে জানতে পারি জয় মানে আমার ফুপাতো ভাই এইখানে থাকে। আমি খালি উনার কাছে জয়ের সাথে দেখা করানোর কথা বলছিলাম। এরপরে উনি শর্ত দিছেন আমি যাতে উনারে হেল্প করি।ʼʼ
সবাই বুঝেও আবার জিজ্ঞেস করল, “কীসের হেল্প?ʼʼ
হামজা খুব লজ্জিত ভঙ্গিতে, ইতস্তত করে বলল, “মাদ্রাসায় আ’গুন দিতে…ʼʼ
চারপাশ নীরব হয়ে উঠল। সেলিম চেঁচিয়ে যাচ্ছে। হামজার চোখে-মুখে তীব্র ভয় ও লজ্জা। সেলিমের চেঁচানো কাউকে স্পর্শ করছে না। তাদের চোখের সামনে ভাসছে একটু আগে হামজার সাথে করা সেলিমের আচরণ। অবিশ্বাসের জায়গা রাখেনি হামজা।
সবাই যেন বুঝেও অবুঝ হলো। জিজ্ঞেস করল, “কিন্তু কেন মাদ্রাসায় আ’গুন দিতে চায়?ʼʼ
-“আমিও জিগাইছিলাম। কিন্তু বলে নাই আমারে। শুধু বলছে, দরকার।ʼʼ
সেলিম পাগল ষাঁড়ের মতো গর্জন করছিল। কিন্তু ততক্ষণে সবার সব হিসেব মিলে গেছে। সেলিমের সাথে মাদ্রাসার সবার এক প্রকার দ্বন্দ্ব অবশ্যই আছে। সে মাজার পূজারী, বাবার মুরীদ। তার সাথে প্রতিটা হুজুর ও সংগঠনের ছেলেদের তর্কা-তর্কী ও বিরোধের সম্পর্ক। সেলিম তাতে খুব উৎসাহী। যেচে পড়ে মাদ্রাসা প্রাঙ্গনে গিয়ে তসবীহ জপতে জপতে বাবার গুনগান এবং তর্কে জড়ানো তার স্বভাব। সবাই শুধু তাকে অনিচ্ছাকৃত সহ্য করে মেজো সৈয়দের শালা বলে। তার গলার তাবিজ, হাতের বালা, আংটি কারও চোখেই ভালো দেখায় না। সবাই এড়িয়ে চলতে চায়। কিন্তু সেলিমের সেসব গায়ে লাগে না। সে তিনবেলা ঘুরঘুর করে মাদ্রাসা প্রাঙ্গনে।
এবং হামজার বলা–বড়ভাইদের সাথে লেওয়াজের ব্যাপারটাও বিশ্বাসযোগ্য হলো। কারণ সেলিমের কাছে মাদ্রাসার কার্যক্রম বিরোধী কর্মকাণ্ড, এটা সবাই জানে। আজ আরও জানল হামজার বদৌলতে, সে জামায়াত বিরোধীদের দোসর।
হামজার কাছে ক্ষমা চাইলেন বড় হুজুর। সেলিমকে সংগঠনের ছেলেরা ধরে কী করতো জানা নেই, কিন্তু বড় হুজুর ঘৃণা ভরে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে আঙুলের ইশারা করে তেড়ে দিলেন সেলিমকে। এক বিন্দু সাফাই গাইবার সুযোগ সেলিম পেলো না। সে সাফাই গাইবার জন্য ওখানে থাকলে বড় হুজুরকে টপকেই যুবকেরা সেলিমের হাল বেহাল করে ছাড়তো।
তার প্রায় সপ্তাহখানেক পর দেশপ্রেমিকগোষ্ঠীর সাহায্য নিয়ে মাঝরাতে মাদ্রাসার একাংশে আগুন দিলো হামজা। তার এখানে সক্রিয় ভূমিকা ছিল না। সে জয়কে উদ্ধার করতে এসেছে। কিছু ছাত্র আহতের ঘটনাও এড়ালো না। যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি এভাবেই হওয়া উচিত বটে। হয়ও এভাবেই।
সবাই যখন ছত্রভঙ্গ আকস্মিক হামলায়, তার মাঝে হামজা জয়কে নিয়ে জঙ্গল দিয়ে সীমানা পার। কিন্তু রাতের বেশিক্ষণ নেই। পায়ে হেঁটে হাকিমপুর পার হওয়া অসম্ভব অন্ধকার থাকতে থাকতে। হামজা নিজের ওপর অ’গ্নিকাণ্ডের দায় নেবে না। তা বড়ভাইদের বাহাদুরীর খাতায় উঠে থাক। জয় সেদিন নির্দিধার প্রতিশ্রুতি করেছিল হামজার খাতিরে জীবনটা উৎসর্গ করতে।
তিন বছরের অমানুষিক কারাবন্দি অবস্থা, এতিম-অসহায়ত্ব এবং আপনজনহীনতা থেকে মুক্তির অগ্রদূত হামজা জয়ের ছোট্ট কঠোর বুকটার গোটাটা দখলে নিলো।
দু’দিন পলায়নরত অবস্থায় আড়ালে চলে চলে দুজন শেষমেষ ঘোড়াহাট আমির বাড়িতে পৌঁছাল। আমির বাড়ি ততদিনে মালিকানাহীন বেওয়ারিস সম্পত্তি। অঞ্চলের সবাই জানে গোটা আমির পরিবার মিটে গেছে। জয়নাল আমির ফেরোয়ার আসামি। তার আর ভিটেতে ফেরার প্রশ্ন ওঠে না।
জয়কে ঠেলেও আমির নিবাসের ভেতরে ঢোকাতে পেরেছিল না হামজা। হামজা বুঝেছিল, জয়ের মস্তিষ্কটা মারাত্মকভাবে আহত তিন বছর আগের এই বাড়ির সেই অবরুদ্ধ নিশীথের প্রভাবে।
ঘোড়াহাঁট থেকে বাঁশের হাঁট নেহাত কম পথ নয়। তাদের কাছে পয়সা নেই। হেঁটেই চলতে হবে। পথে খিদের জ্বালায় জয়ের হাঁটু ভেঙে আসতে চায়। হামজা এক কাজ করল। গায়ের মলিন ফতোয়াটা খুলে খালি গা হয়ে ফতোয়াটা মুখে বেঁধে লোকালয়ে গেল। বাজারের শেষে এক জীর্ণ হোটেলের দুটো পরোটা খাবলা ধরে নিয়ে ঝেরে দৌড়। বুড়ো হোটেল মালিক দুটো পরোটার জন্য রোদের ভেতর খুব বেশিদূর ছুটলো না দুই কিশোরের পেছনে। কয়েকটা গালি দিয়ে ফিরে চলে গেল
কিন্তু হুড়মুড়িয়ে দৌড়ে আসার সময় হাতের একটা পরোটা পড়ে গেল, কিন্তু তা তুলতে দাঁড়ানোর সময় নেই। বাকিটা জয়কে দিয়ে হামজা বলল, “খা।ʼʼ
-“তুমিও। জয় অর্ধেক ছিঁড়ে দেয়।ʼʼ
একটা ধমক মারল হামজা, “ভালোমানুষ সাজতে আসবি না, জয়। খা চুপচাপ। একটা পরোটাতে দু’দিনের খিদে মেটে না। আর তো অর্ধেক! পেট জ্বলবে। খা তুই।ʼʼ
জয় ঘাড় ঘুরিয়ে গভীর চোখে তাকায়,“তুমিও তো না খাওয়া, হামজা ভাই!ʼʼ
হামজা বলল, “আমি রোজা রাখছি।ʼʼ
জয়ের মনে পড়ল। মুস্তাকিন কয়দিন যাবৎ সারাদিন কিচ্ছু খাচ্ছিল না। সন্ধ্যার পর খেতো। জয় একা সকাল, দুপুরে খাবার খেতে চাইতো বলে সবাই তাকে নিয়ে হাসাহাসিও করেছে। তবু সে খেয়েছে। ক্ষুধা পেলে খেতে হবে। জোর করে হলেও। চুপ থাকলে কেউ খেতে দেয় না। ছিনিয়ে নিলে সব পাওয়া যায়। আজও হামজা তা প্রমাণ করেছে। হাতের পরোটা সেই কথাই বলছে।
কিন্তু জয় সেদিন না বুঝলেও পরে আরেকটা কথা বুঝেছিল, দু’দিন একভাবে না খেয়ে রোজা হয় না। সেহরি, ইফতার কিছুই নেই, তবু হামজা যে কেন সেদিন রোজা রেখেছিল! এই জটিল, রহস্যজনক হামজার এসব রহস্যজনক ঋণ জয় চুকাবে কী দিয়ে? আছে একটা উপায়। নিজেকে দিয়ে। হামজা যা বলে, যা করে সবটা বিনা দ্বিধায় মেনে নিয়ে।
হামজা জয়কে স্কুলে ভর্তি করল। জয় ক্লাস থ্রিতে পড়ার সময় তার জীবন ঘড়ি আবর্তনের দিক বদলেছে। হামজা জয়কে সিক্সে ভর্তি করল। জয়ের নাদুস-নুদুস অভিজাত চেহারাখানা আজ শীর্ণ, রোদে পোড়া, মার খেয়ে জখম হওয়া, অযত্নে ছাই। শাল কাঠের ডাইনিং টেবিলে বসে নবাবী খানাপিনা সারা জয় আজ দিব্যি শুকনো মরিচ মাখা ও লবণ দিয়ে স্টিলের থালায় গপাগপ এক থালা ভাত খেয়ে উঠতে পারে।
হামজার সাধ্য অল্প। চাঁদাবাজিতে ভাইদের সঙ্গ দিলে কিছু জোটে। কিন্তু রোজ যাওয়ার সৌভাগ্য মেলে না। তার মতো পুঁচকেকে বড়ভাইদের দরকার পড়ে না। হুমায়ুন জয়কে নিয়ে বড় তেতো-বিরক্ত। শাহানা পারলে জয়কে মেরে ফেলে কোনো এক রাতে। কিন্তু হামজা মাকে খুব কার্যকর একটা আগ্রহ দিলো।
জয় আমির বাড়ির সম্পত্তির একমাত্র হকদার। রক্ত মুছে যায় না। আজ না হোক, আগামীতে ওই সম্পত্তি জয়ের। সোজাভাবে না হোক, হামজা যে বাকাঁ পথে পা রেখেছে সেই পথে জমির দখলদারী পরিচিত ঘটনা। সম্পত্তি জয়ের, আর জয় ওদের। ইজ ইক্যুয়েল– সম্পত্তি তাদের। শাহানার চোখ খুলে গেল। জয় খুব বেশি না হলেও তুলনামূলক কদর পেতে থাকল।
কিন্তু অর্থাভাবে সোনার ডিম দেয়া হাসের যত্নও ঠিকমতো করার উপায় নেই। নিজেদের পেট চলে না!
জয় একবার জিজ্ঞেস করল, “তুমি অও রিস্ক নিয়ে আমারে বাচাইছিলা ক্যান?ʼʼ
-“তোর মায়ের বহুত অবদান আছে আমার উপর।ʼʼ
-“শুধু এই জন্যেই?ʼʼ
-“আর কী শুনতে চাস?ʼʼ
জয় কথা বলল না।
হামজা হাসল, “কী? শুনতে চাস যে আমি তোকে খুব ভালোবাসি, এইজন্য ওই নরক থেকে উদ্ধার করছি তোরে?ʼʼ
জয় কথা বলল না।
-“শোন জয়! তোর কেউ নেই। আমিও না। কী বললাম বল তো।ʼʼ
-“আমার কেউ নাই।ʼʼ
-“তোর কোথাও কেউ নেই।ʼʼ
-“হ, তুমিও নেই।ʼʼ
-“হ্যাঁ। নিজেকে ভুললেও এটা ভুলবি না। তোর কেউ নেই। তুই একা। কিন্তু, কিন্তু তোকে বাঁচতে হবে। কীভাবে তা তুই ঠিক করবি। কী করে কী করবি, তা তুই ঠিক করবি চলার পথে। শুধু জানিস তোকে বাঁচতেই হবে, এবং ভালোভাবে রাজার হালে বাঁচতে হবে। বাঁচার জন্য যা দরকার, তা হাসিল করতে যা লাগে তা ভিতরে সঞ্চয় করতে হবে।ʼʼ
-“সেটা কী?ʼʼ
হামজা জয়ের কানের কাছে মুখ এনে বলল, “পাগলাটে জেদ, হৃদয়হীন হাসি আর ক্ষমতা অর্জনের নেশা।ʼʼ
জয়ের মনে পড়ল, বড়বাবাও এসবই বলতো।
-“তোকে আরেকটা কারণে এনেছি।ʼʼ
জয় আগ্রহ ভরে তাকাল। হামজা বলল, “আমার সঙ্গি দরকার ছিল। আমার তোকে দরকার ছিল, জয়।ʼʼ
-“কীসের সঙ্গি? কেমন সঙ্গি, হামজা ভাই?ʼʼ
হামজা কথা বলল না। জয়ের গায়ের গেঞ্জিটা খুলে নিয়ে বলল, “চল আজ তোকে সাতার শেখাবো।ʼʼ
পুকুরে নেমে জয়কে গোসল করিয়ে দিলো হামজা। সাবান মাখিয়ে, গা পরিষ্কার করে গোসল করিয়ে ঘঁষে ঘঁষে মাথাটা মুছে দিলো। মাথা ভেজা থাকলে জ্বর আসবে।
দুপুরে বাসায় ভাত নেই। জয়কে নিয়ে এক জায়গায় গেল। পথে হাটতে হাঁটতে বলল, “খিদে পেয়েছে তোর?ʼʼ
-“খুব।ʼʼ
-“চল। আজ যা খাবি, মনে থাকবে। তো রেডি?ʼʼ
দুজন হো হো করে হেসে উঠল। হামজা আজকাল প্রায়ই এমন সব ব্যবস্থা করে। কী যেন করে হামজা, জয় বুঝেও বোঝে না।
হামজার এক বড় ভাই। হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র ছাত্র পলাশ আজগর। জয়কে অনেকক্ষণ পরখ করে দেখেছিল পলাশ। সেদিন জয় প্রথম দেখল পলাশকে। পলাশ ওদেরকে দুপুরে ভুরিভোজ করালো। দু’দিন পর হিলি বন্দর দিয়ে পলাশের মাল আসছে বিদেশ থেকে। হামজাকে পলাশের লোকদের সাথে যেতে হবে। রাজন আজগরের বিশাল ব্যবসা।
হামজা জয়কে সাথে নিলো না। তার পরীক্ষা। ধমকে পড়তে বসিয়ে রেখে নিজে গেল। এবং সেবার ফেরার পর হামজা ব্যাগ ভরে বাজার করে এনেছিল। মাছ-মাংসও এসেছিল বাড়িতে। হামজা সফল হয়ে ফিরেছে। তাদেরকে পুলিশ ধরতে পারেনি।
জয়কে বেরোতে দেয় না হামজা বাড়ি থেকে খুব বেশি। সেলিম ক্ষ্যাপা ষাঁড়। হামজা তার সাথে যা করেছে, তাতে সে জয়কে কেটে খেতে খুব ক্ষুধার্ত। হামজা নিজেকে বাঁচিয়ে নিতে পারবে, জয়ের প্রশিক্ষণ বাকি। হামজা তা দিচ্ছে ধীরে ধীরে।
একবার বাড়িতে একটা পুঁচকে এলো। তুলির চেয়ে তিন-চার বছরের ছোট। জয়ের রাগে গা জ্বলে গেল। তাদের দুটো ঘর। একাটাতে মামা-মামি থাকে। আরেকটাতে ছোট্ট চৌকি। সেটায় তিনজন শোবার জায়গা হয় না। তাছাড়া হামজা দিনদিন আরও লম্বা ও তরতাজা হচ্ছের পূর্ণ যুবক হয়ে উঠছে। জয়ের কিশোর বয়স। তুলিও বড় হয়ে গেছে। এর মাঝে আরেকটা পুঁচকে মেয়ে এসে জুটল।
জয় বাড়ির পেছনে ডেকে নিয়ে গিয়ে ঝুঁটি করা চুল ধরে মোট গুণে গুণে পনেরোটা চিমটি মারল। হুমকি দিলো, যদি না চলে যায় তাহলে তুলে এক আঁছাড় মেরে পেটের নাড়ি বের করে আনবে।
মার খেয়ে পুঁচকে মেয়েটা ভ্যা ভ্যা করে কাঁদতে লাগল। বিপত্তি বাঁধল। মেয়েটা মামির বোনের মেয়ে। এত বিশ্রী করে গাল ফেঁড়ে কে কাঁদে? আবার কাদার শব্দ ধীরে ধীরে বাড়ছে। মুশকিলে পড়ল জয়। আবার একটু মায়াও লাগছে। নরম গায়ে চিমটির আঘাতে লাল টকটকে হয়ে নখ বসে আছে। তার কাছে কিছু টাকা আছে। দৌড়ে গিয়ে দুটো হজমি টেস্টির পাতা, বড়ইয়ের আচার আর দুটো ললিপপ এনে হাতে গুজে দিলো।
-“চুপ কর এই চেংরি চুপ। চিমটি তো মারছিই। এখন কাঁদলে কি চিমটির দাগ মিলে যাবে নাকি আমি আর পরে মারব না এমন বলেছি? খা, চকলেট খা। তোর জন্যে আমার কত ট্যাকা গচ্চা গেল। এবার কাঁদলে পানিতে ডুবিয়ে মারব।ʼʼ
মেয়েটা ভয়ে কাঁদছে কিন্তু শব্দ করছে না। জয় ঠাস করে থাপ্পর মেরে চলে এলো চকলেট গুলো কেড়ে নিয়ে। উঠোনের এককোণে বসে সবগুলো খেলো চেটেপুটে।
কিন্তু হামজা একটা অপ্রিয় কাজ করল। সেই পুচকেটাকেও স্কুলে ভর্তি করে দিলো। এবং তাকে আনা নেয়ার ভার জয়ের। সে জয়ের স্কুলেই পড়ে। সুতরাং জয়ের সাথে যাবে-আসবে। তুলি ঘাড়ত্যাড়া, খিটখিটে। তার বান্ধবী এক পাল। তাদের সাথে নাচতে নাচতে সে স্কুলে আসে যায়।
কিন্তু জয় পারলে পুঁচকেকে খেয়ে ফেলে। রাস্তায় চলার সময় এত পকপক করে কান খায়! জয় ঠুকঠাক লাগিয়েও দেয়, একটু কাঁদে আবার শুরু করে। মহা মুসিবত! পুঁচকের নাম তরুনীধি। অত বড় নাম কেউ ডাকে না, সবাই ডাকে তরু।
জয় জীবনে সপ্তাহে চারদিন স্কুলে যায় না, বড়জোর তিনদিন। রোজ রোজ এক জায়গায় যাওয়াটা কোনো ভালো কথা না। মাঝে একটু গ্যাপ দিয়ে গেলে আলাদা কথা।
স্কুল থেকে ফেরার পথে বেশি লাফালাফি করে রাস্তার মাঝখানে যাওয়া জয় পিঠের ওপর দুম দুম করে দুটো কিল মারল। বকলোও কয়েকটা। পথে খৈ ওয়ালাকে পেল। তরু নাক টানছে আর বারবার তাকাচ্ছে খৈ-য়ের দিকে। জয় তা লক্ষ করে ভ্রু কুঁচকে। গম্ভীর মুখে গিয়ে খৈ কিনে এনে হাতে দিলো তরুর। তরু সব ভুলে গেছে, চোখ-টোখ হাতের পিঠে মুছে তাড়াহুড়ো করে খৈ খুলছে। তা দেখে হাসি পেল জয়ের। তরুর নাক টানতে টানতে খৈ খাওয়া আড়চোখে দেখল।
পথটা সরু। পিচ উঠে উঠে গেছে। সেই রাস্তায় গাড়ির চলাচল নেই-ই প্রায়। সেই রাস্তায় আচমকা কোত্থেকে যেন একটা পটপটে আওয়াজ তোলা ইয়ামাহা বাইক এসে তাদের ছুয়ে যায়। জয় এক লহমা তরুর হাতের কব্জি ধরে নিজের পেছনে আড়াল করে মাটির ওপর ছুঁড়ে মারল। কিন্তু বাইক জয়কে ছিটকে ফেলে দিয়ে চলে যায়। জয়ের পাতলা দেহটা গিয়ে মাটির রাস্তার ওপর পড়ে
মাথার পেছনটা শক্ত ইটের খোয়াতে লাগায় ঘাড় বেয়ে তরতর করে রক্ত বেরিয়ে এলো। বাইকটা পাশ দিয়ে একাংশ ধাক্কা মারতে সক্ষম হয়েছে জয়ের তাৎক্ষণিক সচেতনতায়। নয়ত সেদিন বাইকওয়ালার উদ্দেশ্য সফল হয়ে যেত।
জয়ের আসল জখম ডাক্তার জানালেন। বাম পায়ের হাঁটুর অস্থি-সন্ধি খুলে গেছে। আর একটু হলে জোড়া লাগানোর উপায় থাকতো না। অথচ জয়ের বর্ণনা মতে তার কিছুই হয়নি। সে অধচেতন পড়ে রইল নিভু চোখে। মৃত্যু এসেছিল। জয়কে পরম যত্নে ছুঁয়ে গেল। এই তো জয় ঝাপসা চোখে আবার মৃত্যুর স্পর্শ পেল। অথচ মৃত্যু সেদিনও জয়ের সাথে ছলনা করে ছুঁয়েই পালালো। সঙ্গে নিলো না।
ব্যন্ডেজ করার আগে জয়ের পায়ের হাড্ডি সোজা করতে যখন চাপ দেয়া হলো জয় গা শিউরে ওঠা স্বরে ‘মা গোʼ বলে একবার চিৎকার মেরে অজ্ঞান হয়ে গেল। সেদিন সেই পুঁচকে মেয়ে কী কান্নাটাই কেঁদেছিল! লুটিয়ে পড়া কান্না। তার নিজের হাঁটুর মাংস ছিলে গেছে, তার ব্যথা তরু টের পাচ্ছিল না। চিৎকারটা জয়ের নয় তার নিজের। বড় ভয় পেয়েছে মেয়েটা।
কিশোর জয়ের শরীরটা প্রায় ব্যান্ডেজে মুড়ে গেল। রাত এলে অসহনীয় যন্ত্রণায় তার কাতর আর্তনাদে সবার ঘুম হারাম। তবু সবাই ঘুমায়। কিন্তু পুঁচকেটা জয়ের সাথে রাত জাগে। জয় ধমকায়, কখনও ঠুকঠাক মারেও। তবু বসে থাকে। ব্যথায় জয়ের শরীরে জ্বর আসে। তরু বিশাল টিনের বালতি ভরে একা পানি আনতে পারে না। ভয়ে ভয়ে গিয়ে হামজাকে ডাকে। হামজা পানির বালতি ভরে এনে দেয়। তরু সারারাত জয়ের মাথায় পানি ঢালে। হামজা বসে বসে দেখে।
হামজা আন্দাজ করেছিল, এরপর জয় একগাল হেসে জানালো, “বাবরি চুল দেখছি বাইকওয়ালার। বহুত খাস লোক সে আমার, হামজা ভাই। চিনতে ভুল হয় নাই। আল্লাহর বান্দা পরহেজগার সেলিম ফারুকী!ʼʼ
হামজা হাসল, “ধরব ধরব। একদিন ধরব, সেদিন খুব ছটফটাবে পাখি।ʼʼ
-“আজ ধরবা না?ʼʼ
-“ধরি মাছ না ছুঁই পানি। বাংলা বইয়ে পাবি এই প্রবাদ।ʼʼ
জয় তাকিয়ে রইল। হামজা বলল, “একটু শক্তিশালী না হয়ে ধরলে মনের খায়েশ মিটিয়ে নিতে পারা যাবে না। আমার ফুপুটা অকারণে বলি হয়নি জয়। ওদেরকে ধরে একটু তৃপ্তি সহকারে গিলবো বলেই তো ফুপুর এতবড় বলিদান। কাউকে গিলে তৃপ্তি না পেলে মারাটা বৃথা। কারণ মারাটা বড় কথা না, মনের অপূর্ণ তৃপ্তি মেটানো হলো কথা।
তুই অপেক্ষা কর জয়। এই যে তুই আরেকটু ব্যথা শুষলি, এতে ওর ব্যথার ভাগের সুদ আরেকটু বাড়ল।ʼʼ
মন্ত্রপুতের মতো বলল জয়, “কবে? কবে খাবে?ʼʼ
-“যেদিন সাপ মারব কিন্তু লাঠি ভাঙবে না। পরিস্থিতি আরেকটু নিয়ন্ত্রণে আসুক। সৈয়দ বাড়ির সাথে আমার দুশমনীর খবর সৈয়দ বাড়ি এত তাড়াতাড়ি পাবে না। বহুত কিছু হারানোর পর আমাকে টের পাবে। তুই আরেকটু অপেক্ষা কর। আর একটু!ʼʼ
জয়নাল আমির ফেরোয়ার হয়েছেন পাঁচ বছর খানেক। এর মাঝে জয় বহুবার বড়বাবাকে খোঁজার চেষ্টা করেছে। কিন্তু পায়নি। কিন্তু কিছুদিন আগে সে জানতে পেরেছে বড়বাবার একটা সন্তান হয়েছে। ছেলে সন্তান। জয়ের খুব হিংসে হলো। এখন কি বড়বাবার ভালোবাসা ভাগ হয়ে গেছে? এত বছর পরও যদি বড়বাবার সাথে জয়ের দেখা হয়, বড়বাবা পনেরো বছরের কিশোর জয়কে চিনবে? আগের মতো বুকের সাথে জড়িয়ে চেপে ধরবে? আচ্ছা বড়বাবা নিজের ছেলেকে কি জয়ের মতো করে ভালোবাসে?
জয়ের ভেতরটা যে পুলক ও শিহরণে তিরতির করছে তা জয় বুঝল না। লোকে তাকে জারজ বলে, নির্বংশ, লেজকাটা বলে। জয় কবে বড়বাবাকে মুক্ত করে সবার সামনে দাঁড় করিয়ে বুকে হাত রেখে বলবে, আমির পরিবার নির্বংশ হয়নি, হবে না। দেখ জয়নাল আমিরকে। দেখ জয়নাল আমিরের পুত্র জিন্নাহ আমিরকে, দেখ আমি, আমাকে। আমি, আমি জাভেদ আমিরের পুত্র জয় আমির। এখনও জীবিত। আমির বংশের জ্বালতে থাকা কয়টা বাতি চাস? দেখ এখনও তিনটে জীবিত!
এসব ভেবে জয়ের ভেতরে বড়বাবার সেই ছোট্ট সন্তান, আমিরদের বংশধর বাচ্চা জিন্নাহর জন্যও তার বুকের কোথাও আলোড়ন ওঠে।
জয় পাগল হয়ে উঠল বড়বাবাকে খুঁজতে। কিন্তু খুব সাবধানভাবে। বড়বাবা ফেরোয়ার, মোস্ট ওয়ান্টেড ক্রিমিনাল। তাকে ক্রস ফায়ারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
কিন্তু জয় সুযোগ পেল। সেই সুযোগ রাজন আজগর করে দিলো। কারণ রাজন আজগরের দাদা বৃদ্ধ হবার পরেও তার নামে মামলা, যুদ্ধের লুটপাট ইত্যাদিন মামলা অসংখ্য। বাংলাদেশ গঠনের পর ত্রাস গড়তে প্রথম প্রজন্মের সন্ত্রাস সে।
২০০২ সন। অপারেশন ক্লিনহার্ট এক্টিভ পুরোদেশে। বাদ যাচ্ছে না সেনাবাহিনীর কবল থেকে একটি অপরাধীও। তাদের মারফতে জয়নাল আমির পলাশদের মদদে জয়ের সঙ্গে দেখা করবেন। জয় খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিলো। তার বড়বাবাকে সে কমবেশি আট বছর পর দেখবে।
কিন্তু ব্যাপারটা অন্যরকম ঘটল। পলাশ আজগরের দাদা বন্দি হলো। আর জয়নাল আমির ক্রস ফায়ারড। সংবাদটা এমন সাবলীলভাবেই জয়ের কানে এসেছিল। এবং আরেকটা সংবাদ খুবই চমকপ্রদ ছিল। সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডো ব্যাটেলিয়ন সৈয়দ ফরহাদ মহম্মদ বারীর নিক্ষেপিত গুলিতে প্রাণ গেছে মোস্ট ওয়ান্টেড ক্রিমিনাল জয়নাল আমিররে।
জয়ের বয়স তখন পনেরো। সন ২০০২। জয়নাল আমিরের মৃত্যর ঠিক নয়দিন পর জয় নিজে হাতে সৈয়দ ফরহাদ মহম্মদ বারী সাহেবের খু-ন করে ফেলল। বুক চিড়ে হাত ঢুকিয়ে হৃদযন্ত্র টেনে ছিঁড়ে এনেছিল। সেটাকে ছুরি দিয়ে কেটে কয়েক টুকরো করে মৃতদেহের পাশে রেখে এসেছিল।
চলবে…
একবারও রিচেইক করিনি। টাইপিং মিসটেকসহ অসংখ্য ভুলত্রুটি থাকতে পারে। ক্ষমা করবেন। ]