অবরুদ্ধ_নিশীথ #তেজস্মিতা_মুর্তজা ৬৯. (বর্ধিতাংশ)

0
3

[সতর্কতা: পর্বটিতে সহিংসতা রয়েছে।]

#অবরুদ্ধ_নিশীথ
#তেজস্মিতা_মুর্তজা

৬৯. (বর্ধিতাংশ)

জাভেদ আমিরকে চেয়ারে বসানো হলো। উনাকে ঘিরে ধরে রইল চারজন। জলিল আমিরের রাখা লোকেদের মাঝে একজনকে মেরে ফেলেছেন জাভেদ, আরেকজন দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে, চোখদুটো তার সুযোগসন্ধানী। জাভেদ আমির ঘৃণাভরে একবার দেখলেন। উনার শক্তিশালী দেহটাকে ধরে রাখা দরকার। ছটফট করছেন বড়।

দড়ি দরকার। একটা ভালো ব্যবস্থার কথা মাথায় এলো ওদের। হুমায়িরার বুকের আঁচলটা ভালো কাজে দেবে। শরীর থেকে শাড়ির আচলটা টান মারল। শাড়ি দেহে পেঁচানো থাকে। সেই টাল সামলাতে না পেরে গর্ভবতী হুমায়িরা পড়ে গেলেন মেঝেতে, আর্তনাদ করে উঠলেন। সে অবস্থায় দুটো পুরুষালি লাত্থি মারতে কিন্তু ভুলল না ওরা। কোমড় বরাবর কষে মারল লাত্থিদুটো।

জাভেদ আমির গর্জে উঠলেন, ওদের গায়ে হাত দিলে তোর বংশ নির্বংশ করে ছাড়ব, “শুয়োরের বাচ্চা। ওদেরকে ছুঁবি না।ʼʼ

উনাকে তখন দুজন চেপে ধরে রেখেছে।

শাড়িটা ছিঁড়ে নিয়ে ওরা তা দিয়ে চেয়ারের সাথে বাঁধল জাভেদ আমিরকে।

কেউ উপহাস করল, “ছোঁবো না! ঠিক আছে বস! ছুঁইলাম না। গুলি কইরা খুলিডা উড়াই দেই?ʼʼ

জয় কাঁদতে কাঁদতে বসে পড়ল মায়ের পাশে। তার কান্না খুবই বিরক্তিকর ঠেকল। তাই তাকে একটা বড়সড় লাত্থি মারা হলো। ঠোঁটটা থেতলে গেল। জয় বুঝল কাঁদা যাবে না। তার কান্নার শব্দ ওদেরকে বিরক্ত করছে।

হুমায়িরা অসহ্য যন্ত্রণায় মেঝেতে পড়ে রইলেন। জয় হামাগুড়ি দিয়ে আস্তে আস্তে মায়ের দিকে এগোয় আবার ওদের দিকে তাকায়, আবার যদি লাত্থি মারে! গুটিসুটি মেরে মায়ের কাছে মেঝেতে আধশোয়া হয়ে ঝুঁকে মায়ের হাতটা চেপে ধরে রাখে। বাবার কাছে যাবার উপায় নেই। তার অবশ্য ইচ্ছে করছিল, আলমারি থেকে একটা শাড়ি এনে মাকে দিতে। মা বোধহয় লজ্জা পাচ্ছে পেটিকোট আর ব্লাউজ পরে। সবসময় যে শাড়ি পরে থাকে। বাইরের কেউ এলে আরও টেনেটুনে ঘোমটা দেয়। সে দেখেছে।

কিন্তু তার কিছু করার নেই। সে মনে মনে রক্ষাকর্তাকে ডাকছে, ‘আল্লাহ! রক্ষা করেন। এই শয়তানদেরকে মেরে ফেলেন। এরা খারাপ লোক।ʼ

তার মাথায় এই চিন্তাও এলো, খারাপ হওয়া তো খারাপ না। কিন্তু এই রকম খারাপকে কী বলে? এই খারাপদেরকে জয়ের ভালো লাগছে না। এখন আল্লাহ নামক রক্ষাকর্তার উচিত, এই খারাপদেরকে শাস্তি দেয়া।

ফাঁড়া খড়ি দিয়ে জাভেদকে মারতে লাগল ওরা। আর্তনাদটা আর নেয়া যাচ্ছে না। শাড়ির এক টুকরো জাভেদের মুখেও গুঁজে দেয়া হলো। একেকটা আঘাতে চামড়া ছিঁড়ে মাংস থেতলে উঠছিল জাভেদের শরীরের। কয়েকটা আঘাতে ঝিমিয়ে গেলেন জাভেদ। সাদা ফতোয়াটা রক্তের ছোপ দেখা যাচ্ছে। এবার মুখের কাপড় সরিয়ে নেয়া হলো।

এবার উনার উচিত ওদের কাছে প্রাণভিক্ষা অথবা আক্রমণের কারণ বা তারা কে এসব জানতে চাওয়া। কিন্তো জাভেদ করলেন অন্যকিছু। তিনি স্ত্রীর কাছে মিনতি করে উঠলেন, “চলে যাও হুমু। তোমার পায়ে পড়ি। জয়, চলে যা আব্বা। আমি আসব তোদের সাথে দেখা করতে। হুমায়িরা প্লিজ। দয়া করো। আমার সন্তানদেরকে নিয়ে চলে যাও তুমি। আমি আসব। খুব তাড়াতাড়ি।

এই তোরা ওদের যেতে দে। ওরা তো কিচ্ছু করেনি, তাই না? ওদেরকে বের হয়ে যেতে দে।ʼʼ

হুমায়িরা বুকের ওপর দুটো হাত আড়াআড়িভাবে ধরে ইজ্জত ঢাকার বৃথা চেষ্টাটা করছেন। দেখতে উনাকে তখন বড় বোকা বোকা লাগছে। বোকা নারী কেবল দু’পাশে মাথা নেড়ে বলেন, “এরা কারা গো জয়ের বাপ!ʼʼ শুনতে বড় অদ্ভুত লাগে তা।

রক্তাক্ত গালে হাসলেন জাভেদ, “পুরোনো দুশমনী। চলে যাও হুমু। পরে বলব।ʼʼ

কথাটা জয়ের মনে রইল। বড়বাবা বলে, তাদের পুরোনো দুশমন হলো সৈয়দ পরিবার।

হুমায়িরা ভাবেন, পরে বলবে? এই লোক মিছে সান্ত্বণা দিতে বড় তৎপর!

তাদের পারিবারিক নাটক বেশিক্ষণ সহ্য করল না ওরা। একেকটা আঘাতের সাথে সাথে জাভেদ আমিরের দেহের মাংস খড়ির সাথে ছিঁড়ে ছিঁড়ে আসছিল। পরনের ফতোয়া ছিঁড়ে ফালাফালা হয়ে উঠেছে।

জয় মুখ গুঁজে আছে মায়ের বুকের ভেতরে। সে মায়ের বুক খোঁড়ার চেষ্টা করছে বোধহয়। ঢুকে যেতে পারলে ভালো হবে।

ওদের লুটপাট শেষ হয়েছে। ভাগাভাগি পরে হবে। আলমারী খালি। আমির নিবাসের ঐতিহ্যবাহী কাসার তৈজসপত্রও ছাড়েনি। যুদ্ধের ডাকাতরা যত পেয়েছিল, এরা কিন্তু তত পেল না। এক প্রকার লোকসান হলো আগেরজনেদের তুলনায়। তবু কিছুই ছাড়া যাবে না। যা পাবে হাতে, তাই যাবে সাথে।

হুমায়িরার কানে মোটা স্বর্ণের ঝুমকা। তা খুলে নেবার মতো অত সময় বা ধৈর্য আছে তাদের? হেঁচকা টানে হুমায়িরার কানের ফুঁটো ছিঁড়ে দু’ভাগ গেল, তা যাক, ঝুমকো জোড়াও বেরিয়ে এলো। গলার হাড়, বালা সব নিলো।

মজার ব্যাপার হলো, লুটপাটে দুর্বৃত্তদের আগ্রহ নেই বিশেষ। বারো আনা আগ্রহই জলিল আমিরের রাখা লোকদুটোর মাঝে বেঁচে থাকা সেই একজনের। সে ওদের ডেকে বলল, কুড়াল দিয়ে আলমারির তালাটা ভেঙে দিতে। সে নিজে হাতে হুমায়িরার অর্ধনগ্ন দেহ থেকে অলংকার খুলল। এই বাড়িতে থাকার সময় এসব চোখে চোখে দেখে যে লোভ সংবরণ করা কত কঠিন ছিল, তা তারা দুজন ছাড়া কেউ জানে না। ভালো হয়েছে একজন মরেছে। ভাগ কমেছে।

তারা অসন্তুষ্ট। জাভেদকে আরও কষ্ট দিয়ে মারার ছিল। কিন্তু তা হচ্ছে না।

জাভেদকে মেরেই তাদের কাজ শেষ না। তাদেরকে জয়নালের আবাসে যেতে হবে। জয়নাল দিনাজপুরে এখন।

জয় দেখল, বাবা আর কথা বলছেন না। মাথা ঝুঁলে পড়েছে। উনার কোলের ওপর কয়েক সেকেন্ড পর পর আঠালো রক্ত ও থুতুর মিশ্রণ টুপটুপ করে পড়ছে। ট্যাপের পানি পড়ার কথা মনে পড়ল জয়ের। এভাবেই ট্যাপ বন্ধ করার পরেও টুপটুপ করে ফোঁটা ফোঁটা পানি পড়ে।

সে মনে মনে তখনও আল্লাহকে ডাকছে। রক্ষা পেতেই হবে আজ। সে আল্লাহকে ডেকে এ-ও বলেছে, বড়বাবাকে এখন পাঠিয়ে দিতে। হুমায়িরা বলতেন, আল্লাহ চাইলে সব পারেন। বড়বাবাকে পাঠিয়ে দিতেও পারেন নিশ্চয়ই!

এলো বড়বাবা। ওরা যখন জাভেদকে শেষবার শ্বাস নিতে বাধ্য করছে, তেমনই চরম মুহুর্তে পেছনে প্রাচীর টপকে বাগানের ভেতর দিয়ে কার্ণিশ বেয়ে উঠে এলেন জয়নাল আমির। তিনি একা। হাতে শুধু একটা রামদা, পরনে কাছা মারা লুঙ্গি। জাভেদ আমির অর্ধচেতনায় ছোট ভাইকে দেখলেন কিনা বোঝা গেল না। তাঁর সারা শরীর ফাঁড়া মেহগনির খড়ির আঘাতে কাচা-কাচা।

দুর্বৃত্তরা একচোট একে অপরের দিকে তাকিয়ে মহানন্দের হাসি হাসল। জয়নাল আমির এখানেই চলে এসেছে অবশেষে।

জয়নাল আমির কিন্তু ভাইকে বাঁচাতে গেলেন না। একদমই না। তিনি ভাবীকে ধরে উঠালেন। হুমায়িরা অসহ্য পেটের ব্যথায় কুঁকড়ে গেছেন। ছুটে যেতে চাইলেন স্বামীর কাছে। জয়নাল আমিরের কঠিন মুষ্ঠি থেকে মুক্ত হতে পারলেন না কেবল। কোমড়ের গামছাটা খুলে বড়ভাবীর শরীরে জড়িয়ে অপর হাতে জয়ের হাতটা চেপে ধরলেন। রামদা তখন দুই হাঁটু দিয়ে চেপে ধরা।

ওরা একটু ধীর-স্থির হয়েছে। জয়নাল আমির নামটাতে এক আতঙ্ক আছে, তা দিনাজপুর জানে।

জয়নাল ভাবী ও ভাতিজাকে ধরে নিয়ে কক্ষের বারান্দায় বসালেন হেলান দিয়ে। জয় বড়বাবার হাত ছাড়ছে না। আস্তে কোরে জিজ্ঞেস করে, “বাবার কী হয়েছে, বড়বাবা?ʼʼ

বড়বাবা জবাব দিলেন না। বরং ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিলেন জয়কে পেছনের দিকে মায়ের কাছে। জয়ের অভিমান হলো।

জয়নাল আমির ডাকলেন ওদের, “আয়। কার কার মায়ের বুকের দুধের জোর পরীক্ষা করবি, আগায়ে আয়। আজ দেখব তোদের মায়ের বুকে দুধের জোর বেশি নাকি আমার হাতের ধাতুর।ʼʼ

একজনের অবশ্য হাত কাটা পড়েছিল। হাতটা তিনি কাটলেন বামহাত দিয়ে। তবু নিখুঁত আঘাত। জয় তখন বড়বাবার ডান কোলে। সেদিন প্রথমবার জয় আমির রক্তের সংস্পর্শ পেলো। ছলাৎ কোরে এসে এক খাবলা গরম তরল ছোট্ট জয়ের শরীরে লেগে গেল। গা’টা ঝাঁকুনি দিয়ে উঠেছিল। ঘিনঘিনও করেছিল। বড়বাবার আধখোলা শার্টের প্রান্ত মুঠো করে ধরেছিল সে। বড়বাবার মুখ পাথরের মতো শক্ত তখন। বড়বাবার মুখেও রক্তের ছিটা।

হাত কাটার থমকাথমকির মাঝে কক্ষের দরজা দিয়ে ভাবী ও ভাতিজাকে বের করে দোতলার লম্বা বারান্দায় পৌঁছাতে পেরেছিলেন জয়নাল। কিন্তু সেখানেও দুজন, পেছনের গুলোও এগিয়ে এসেছে। একহাতে ভাবীকে ধরে জয়কে বুকের সাথে মিশিয়ে রামদাটা চেপে ধরে সিঁড়ি বেয়ে নেমে এলেন।

উনার হাতের রামদা চরকীর মতো ঘুরছে। কমপক্ষে দু’ফুটের মাঝে কেউ এসে দাঁড়ালে মাথা নেমে যাবে ঘাঁড় থেকে।

কিন্তু তার ভাবী জাভেদকে ছেড়ে যাবেন না। বারবার পিছু ফিরে চায়। জয় অস্ফূট স্বরে ‘বাবা বাবাʼ বলে ডাকছে। নারীর আবেগে ঘেন্না এলো জয়নালের। তিনি ভাইকে বাঁচাতে যাননি কেন, তা বুঝেও তো অবলা নারী চুপচাপ সাথে হাঁটতে পারে। ভাই তার বাঁচবে না। বড়জোর মিনিট কয়েক জান আসা-যাওয়া করবে আর! কিন্তু বাঁচাতে হবে জয় আমিরকে! আমির বংশের শেষ প্রদীপ। আর জয়ের লালন-পালনের জন্য জয়ের মাকে।

জয়নাল আমির নরকের দেবতার মতোন নিষ্ঠুর ভঙ্গিতে পিতার মাথাকাটা লাশও পেরিয়ে এগিয়ে গেলেন নির্বিকার চিত্তে। তখন কিন্তু জয় ডুকরে কেঁদে উঠেছিল। বাবার জন্য নাকি দাদুর জন্য, জানা নেই।

বড়বাবার বাম বাহুতে রক্তের ছড়াছড়ি। মাংস অবধি ঠেলে বেরিয়ে এসেছে, এমন গভীর ক্ষত। অথচ বড়বাবার চোখদুটো জ্বলছে, দাউদাউ করে জ্বলছে। র-ক্তের মতো লাল, ছলছলে। বড়বাবা সেদিন জয়কে এক কঠিন ধমক দিয়েছিলেন, “কাদলে তুলে আঁছাড় মারব একটা। আমির বংশের রক্ত তুই। কাঁদবি তো জীবিত গেঁড়ে রাখব। কাঁদছিস কেন? হাসবি। হাস। হাস এখন।ʼʼ

জয় আশ্চর্যজনকভাবে দেখল, লোকগুলো দোতলায় থেমে গেছে। আর ওদেরকে ধরতে এগিয়ে আসছে না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। বাবা তো পড়েই রইল শোবার ঘরে চেয়ারে। বাবা যাবে না ওদের সাথে?

জয়নালকে বাগানের মালি মন্টু খবর দিয়েছে। নিজের সাথে নিজের দাবা খেলার অভ্যাস আছে জয়নাল আমিরের। সেই দাবার গুটি ফেলে চলে এসেছেন মন্টুর ডাকে। মন্টু বলেনি কী হয়েছে, শুধু বলেছে, “ছোট ভাইজান একবার এক্ষুনি চলেন বাড়িত্।ʼʼ

শার্টের বোতাম তিনটা লাগিয়ে বেরিয়ে এসেছেন জয়নাল। দুটো এখনও খোলা।

আমির বাড়ির পেছনে ঝোপঝাড়। বিস্তর ভূমি পড়ে আছে। জঙলি এলাকা প্রায়। সেদিক দিয়ে হুমায়িরা আর জয়কে বের করে দিতে পেছনের ফটকের কাছে গেলেন জয়নাল। ওরা কিন্তু তখন সবে সদর বাড়ির সামনের প্রাঙ্গনে এসে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু তাদেরকে তাড়া করার কোনো তাগিদ নেই ওদের মাঝে।

মন্টু কোত্থেকে যেন এসে দ্রুত চাবি দিলো, “ছোট ভাইজান, এই লন ছুড়ান (চাবি)। পিছনের দরজার ছুড়ান।ʼʼ

একবার পেছনে তাকালেন জয়নাল, তারপর মন্টুর দিকে। জয়কে কোলে ধরা হাত দিয়ে ভাবীকে দাড় করিয়ে রাখার চেষ্টা করে শ্লথ হাতে জং ধরা তালাটা খুলতে খুলতে আবারও একবার পেছন মুখোশধারী ও মন্টুর দিকে একবার তাকালেন।

তালা খোলা হলো। ফটক খুলে গেল বিকট শব্দ কোরে। জয়নাল আমির অল্প হাসলেন এবার। ছয়জন মুখোশধারী একই ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে তাদের অপেক্ষা করছে। দূরত্ব চার-পাঁচ হাত। সেই দূরত্বের মাঝ দিয়ে সাপের মতো শরীর বেঁকিয়ে বেরিয়ে এসে ভাবীর হাত ছেড়ে জয়কে নামিয়ে তাড়া করলেন, “যান। চলে যান। আর পেছনে তাকাবেন না। সময় বেশি পাবেন না, ভাবী। খুব অল্প সময় পাবেন। যান যান যান।ʼʼ

জয় বড়বাবার হাত চেপে ধরে। খুতখুত কোরে কেঁদে কিছু বলতে যাবার আগে বড়বাবা এক বিশ্রী ধমক মারলেন, “এক কোপে গলা কেটে ফেলব। চুপচাপ তোর মায়ের সাথে চলে যা। দৌঁড়া!ʼʼ

জয় অবিশ্বাসে বড়বাবার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকল। বড়বাবা কেন যাবে না তাদের সাথে? অন্ধকারে দেখা যাচ্ছে না বড়বাবার কঠিন মুখখানা। বড়বাবা হুংকার ছাড়লেন, “যা, শুয়োরের বাচ্চা। যাহ! চলে যা, জয়..ʼʼ

সেই অন্ধকারের মাঝেই ওদের দিকে তাড়া করল দুজন। জাভেদের স্ত্রী-সন্তানকে ছাড়া যাবে না। কিন্তু একটা বাগড়া বাঁধল। জয়নাল আমির প্রাচীরের মতো মাঝে দাঁড়িয়ে পড়লেন। পেছন ফিরে অন্ধকারেই কঠোর স্বরে হুমকি দিলেন, “জোরে হাঁটেন ভাবী। জয়কে চেপে ধরে জোরে হেঁটে জঙ্গল পেরিয়ে যান।ʼʼ

ওদেরকে ঠেকাতে গিয়ে হাঁটুতে কোপ লাগল উনার। হাতের দুটো আঙুল ঝুলে রইল চামড়ার সঙ্গে। কে জানে ততক্ষণে মা-ছেলে কতদূর পৌঁছাল!

হুমায়িরা ওই অবস্থায় বেশিদূর যেতে পারবেন না অন্ধকারে জঙলি পথ পেরিয়ে। জয়নাল আমির ওদেরকে ঠেকাতে গিয়ে গোটা শরীরে কতকগুলো গভীর জখম পেলেন। রক্তক্ষরণ ততক্ষণে শরীরটাকে দূর্বল করে ফেলেছে উনার। কিন্তু তা বলে তিনি জয়ের জীবন ঝুঁকিতে ফেলতে পারেন না! জয় আমিরকে বাঁচতে হবে।

অবশেষে লাভ হলো না বটে। তিনি বন্দি হবার আগে কেবল একটা মহাকর্মই করতে পেরেছিলেন। ওদের পথ ছেড়ে দিয়ে আস্তে আস্তে বাড়ির দিকে এগিয়ে এলেন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। ওরা তখন ক্ষুধার্ত কুকুরের মতোন ছড়িয়ে পড়েছে জঙলি এলাকার ভেতরে মা-ছেলের খোঁজে।

জয়নাল আমিরের ঠ্যাংয়ে মাংস ছিঁড়ে গিয়ে গর্ত হয়ে গেছে। কলকল করে রক্ত ঝরছে সেখান থেকে। কিন্তু উনাকে হত্যার চেষ্টা করা হচ্ছে না কোনোভাবেই। করা হবেও না, তা তিনি জানেন। কোনোরকম এগিয়ে গেলেন। মন্টু তখনও ফটকের সাথে দাঁড়িয়ে। জয়নাল আমির কেবল একবার হাস্যজ্জ্বল মুখে ডাকলেন, “মন্টু মিয়াহ্!ʼʼ

মন্টু বড় বিনয়ের সাথে জবাব দেয়, “জি, ছোটভাইজান।ʼʼ

মন্টুর কথা ফুরোয় না। জয়নালের হাতের রামদা মন্টুর গর্দান স্পর্শ করে, এবং মুহুর্তের মাঝে তা নেমে ছিটকে পড়ে দেহ থেকে আলাদা হয়ে কোথাও।

বেইমানরা দুনিয়ায় থাকলে দুনিয়ার এত চমকপ্রদ সৌন্দর্যে দাগ দেখা দেয়। জয়নাল আমির সৌন্দর্যের ওপর দাগ পছন্দ করেন না তেমন একটা।

দুর্বৃত্তদের চূড়ান্ত এক লাভ হয়েছিল। যে লাভটা মূলত তারা নিজেদের অজান্তেই চাইছিল। তা জয়নাল আমির আরেকটু সহজ করে দিলেন।

জয়নাল আমির গ্রেফতার হয়েছিলেন। নিজের ভাই, বাপ ও মন্টু মিয়াসহ আরও কয়েকজনকে আহত ও নিহত করার অপরাধে। নিশ্চিত মৃত্যুদণ্ড।

যখন ভোরের আলো ফুটছে। সে সময় জাভেদ আমিরকে হিঁচড়ে নামিয়ে আনা হলো বাগানের প্রাঙ্গনে। শুকনো পাতারা পড়ে আছে। হাঁটলে মরমর শব্দ হয়। জয়নাল আমিরকে ধরে রেখে তার সম্মুখে জাভেদ আমিরের কণ্ঠনালি বরাবর চারবার ছুরিকাঘাত করা হলো। ছোট্ট ধারালো, বাঁকা হান্ট নাইফ। প্রথমভাগে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরিয়ে এসে তারপর ধীরে ধীরে চুইয়ে পড়তে থাকল।

জয়নাল আমির আস্তে কোরে চোখদুটো বুজে ফেললেন। শরীরটা ঝিমিয়ে আসছে। ওরা মুখের মুখোশ খুলে ফেলছে আস্তে আস্তে। ভদ্রলোক হয়ে উঠছে। পুলিশ আসবে এবার। ওরা সাক্ষী দেবে কীভাবে জয়নাল আমির সঙ্গীদের সাথে নিয়ে নিজের বাড়িতে হামলা করেছে এবং বাপ-ভাই সহ আরও কয়েকজনকে হত্যা করেছে। আর যে লোকগুলো গুলি খেয়ে মরেছে, তারা মূলত জয়নালেরই লোক। আত্মরক্ষার উদ্দেশ্যে জাভেদ আমির গুলি চালিয়েছেন তাদের ওপর।


আমির নিবাস দিনাজপুরের ঘোড়াহাট উপজেলায়। প্রসিদ্ধ এক অঞ্চল। মোঘল, নবাব, পর্যায়ক্রমে রাজা দ্বারা শাসিত করতোয়ার তীর ঘেঁষে অবস্থিত অভিজাত, পুরোনো অঞ্চল দিনাজপুরের ঘোড়াহাট। সেই অঞ্চলের অভিজাত পরিবারের বড়বধূ হুমায়িরা সে রাতে নেহাত এক অসুস্থ গর্ভবতী কাঙালিনী।

ঘোড়াহাটে আজ সেসব রাজা-সামন্ত নেই তেমন, তবু আছে। ঘোড়াহাট দুর্গ থেকে খুব বেশি দূর নয় আমির নিবাস। দিনাজপুরের প্রশাসনিক অঞ্চল। করতোয়ার কলতান যেন কলকল রবে কানে ধরা দিচ্ছিল হুমায়িরার।

তিনি ভাবলেন, কোনোভাবে বাপের বাড়ি যাওয়া যায় কি? বাঁশেরহাট ঘোড়াহাট থেকে পায়ে হাঁটা পথে কমপক্ষে এক-আধদিন। কখনও বাঁশেরহাটে একা যাননি হুমায়িরা। জলিল আমির সঙ্গে কোরে নিয়ে গিয়ে আবার সঙ্গে নিয়ে আসতেন। বাড়ির বউদের একা চলতে নেই, বাপের বাড়িতেও রাত বাসী করতে নেই।

আর চলার ক্ষমতা নেই হুমায়িরার। জয়কে বুকের সাথে চেপে ধরে ঝোপের ওপর লুটিয়ে পড়লেন। উনার মনে হচ্ছে, রক্তক্ষরণ হচ্ছে। তলপেটের চিনচিনে ব্যথা ভালো আশঙ্কা জাগাচ্ছে না। জয় বারবার জিজ্ঞেস করে, “তোমার কী হইছে?ʼʼ

হুমায়িরা জয়ের কপালে একটা চুমু খেয়ে জড়িয়ে ধরে বললেন, “কিছু হয় নাই আব্বা। আল্লাহরে ডাক।ʼʼ

জয় আল্লাহকে ডাকছে সেই তো তখন থেকেই। একবার ডেকে বড়বাবা এসেছিল। সুতরাং আল্লাহকে ডাকাটায় একটু ভরসার ব্যাপার আছে বটে। সে ডাকল। ডেকে বলল, মায়ের ব্যথা কমিয়ে দিতে। তাদের পেছনে যারা তাদের ধরতে আসছে, তাদের শাস্তি দিতে।

জঙলি এলাকাটা খুব বড় নয়। ওদের হাতে মশাল বা টর্চ ধরণের কিছু ছিল না। হতে পারে নেই।

রাতের কত বাজল জানা নেই। কিন্তু পাতার খচমচ, ঝোড়ঝোপ পেরিয়ে এগিয়ে আসার আওয়াজ এলো। তিক্ত যন্ত্রণাকে চেপে হুমায়িরা টানটান হয়ে শুয়ে পড়লেন জয়কে নিয়ে। নিঃশ্বাসের আওয়াজ খুব জোরে লাগছিল কানে। জয়ের মুখটাও চেপে ধরে ছিলেন।

সে রাতে ধরা পড়লেন না। সকালের আলো ফুটলে বেরিয়ে পড়েছিলেন জঙলি এলাকা ছেড়ে। হুমায়িরা জানেন না, তিনি কোন পথে এগোচ্ছেন। মানুষ বসবাসের এলাকা দিয়ে যাবার উপায় নেই দিনে। কেউ দেখবে গর্ভবতী হুমায়িরার খুঁড়িয়ে পথচলা, রক্তে জর্জরিত পেটিকোটের ওপর একটা লাল গামছা জড়ানো শরীর, ছিঁড়ে যাওয়া ব্লাউজ।

দুটো রাত কাটলো নির্জন ঝোপে ঝাড়ে। রাত শেষ হবার আগেই হেঁটে যদি কোনো ঝোপ পাচ্ছিলেন, সেখানেই থেমে যাচ্ছিলেন। দিনের আলো ফুটতে ফুটতে যদি লোকালয় অবধি পৌঁছান, এই ভয়।

এই দু’দিনে ছোট্ট জয়কে দুবার গন্ধ, নোংরা পুকুরের পানি খাওয়ানো হয়েছে। জয় খিদেয় কাঁদতে চায়, কিন্তু মায়ের দিকে চেয়ে আর কাঁদে না, তার জেদ ওঠে, হাঁটতে চায় না।

রাতে ঝোপ পেরিয়ে পথচলা, অনাহারী অবস্থা এবং নির্ঘুম হেঁটে চলার পরিশ্রম হুমায়িরার গর্ভাবস্থার অভিশাপকে বাড়িয়ে রক্তক্ষরণের মাত্রা বাড়াল। হামাগুড়ি দিয়ে পথচলারও উপায় আর নেই।

বড় আশ্চর্যের বিষয়, ওরকম অবস্থায় এত প্রতিকূলতার মাঝে অনাহারী গর্ভবতী হুমায়িরা কীসের জোরে যে পরের দুটো রাতও পথ চলেছেন একটু একটু কোরে! তিনি জানেন না কোনদিকে এগোচ্ছেন।

তিনদিনের রাত। হুমায়িরার মনে হলো, প্রাণরস ফুরিয়ে এসেছে অবশেষে, জীবনের দায় মেটানোর সময় এসেছে। গর্ভের সন্তানের কাছে মা হিসেবে ধিক্কার মেনে নিয়ে তখন তিনি পথ চলা বন্ধ করে দিলেন। জয় হাঁটতে চায় না, কিন্তু হুমায়িরার সাধ্যের বাইরে জয়কে কোলে তুলে নেয়া। নিষ্ঠুরের মতো হুমায়িরা জয়ের মুখের দিকে তাকান না। তাকালে উনার মা হয়ে বেঁচে থাকার স্বাদ ফুরোবে, এই ভয়।

ঘোড়াহাট পেরিয়ে হুমায়িরা তখন হাকিমপুরে, হিলি সীমান্তের অঞ্চলের এক নির্জন ঝোপে পড়ে আছেন। তিনি জানেন না, তিনি কোথায়! পাখির ডাকাডাকি জানান দিলো রাত তিনটা পেরিয়ে গেছে। সকাল হতে খুব দেরি নেই।

জয় মায়ের কাছে খাবার চাইল। জেদে কয়েকটা খামছিও মারল। মারা উচিতও। এক সময় হুমায়িরা খাবার নিয়ে সারা বাড়ি ছুটে বেড়াতেন জয়ের পেছনে। আজ সে খাবার চাইছে, কিন্তু হুমায়িরা দিচ্ছে না। জেদ হবে না কেন?

হুমায়িরা জয়কে বুকের ওপর নিয়ে গালে-মুখে হাত বুলিয়ে বললেন, “আল্লাহকে ডাক জয়। এই দুনিয়ায় এখন তোর আমার কেউ নেই। আমাদেরকে রক্ষা করার কেউ নেই তিনি ছাড়া।ʼʼ

জয় বিশ্বাস-অবিশ্বাসের মাঝেই তবু মনে মনে ডাকছিল আল্লাহকে। কিন্তু তিনদিনের না খাওয়া, প্রাণের ঝুঁকি, মায়ের অবস্থা এবং সব মিলিয়ে ভেতরের জেদে শক্ত হয়ে বসে রইল। চোখের পাতা লেগে আসছে। হাঁটুতে ব্যথা। সেই অনাহারী অবস্থায় পেট পিঠের সাথে লেগে গেছে। ক্লান্তি ও ক্ষুধায় মাটির ওপর মায়ের বাহুতে আস্তে কোরে মাথাটা রেখে শুয়ে পড়ার পর কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছিল!

বিকট হাসির আওয়াজ ও হুমায়িরার বাহু নড়েচড়ে ওঠায় ঘুম ভাঙল। চারজন লোক তাদের খুঁজে পেয়ে খুব খুশি। সকাল হয়ে গেছে! ওরা খুঁজে পেয়ে গেছে ওদেরকে, এবার?

হুমায়িরার বাহু চেপে ধরে ঝারা মেরে টেনে তোলা হলো। করুণ আর্তনাদ করে উঠলেন হুমায়িরা। জয়ের অভুক্ত ছোট্ট শরীরটা টেনে তুলে দাড় করানো দায়। কিন্তু সে গিয়ে এলোপাথারি কয়েকটা আঘাত করার চেষ্টা করল লোকটিকে। মুখভর্তি দাড়ি তার। আরেকজন এসে জয়কে ধরে ওর দুহাত পিছমোড়া করে ধরে চাপ দিলো। মনে হলো, কচি হাতের বাহুগুলো মটমট করে উঠল।

সীমান্তের পার্শ্ববর্তী কোয়ার্টার এলাকা। সেসব কোয়ার্টার আজ পরিত্যক্ত ও নির্জন লাশকাটা ঘরের মতো দেখতে। বাইরের লোহার জানালা-দরজা মাদকাসক্ত ও চোরেরা খুলে বিক্রি করে খেয়েছে। দেয়ালে শেওলা, প্লাস্টার খসে খসে পড়ছে।

চারপাশে ঘন জঙ্গল গজিয়ে গেছে। বন্দর সংলগ্ন এসব কোয়ার্টার মুক্তিযুদ্ধের সময় হানাদার বাহিনী হিলি সীমান্ত দখলের সময় পুড়িয়ে দিয়েছিল।

পোড়া বিল্ডিংগুলো এখন মদের আসর ও জুয়ার আড্ডাখানা হিসেবে খুব ভালো। এসব জায়গায় লোক দিনেও পা রাখে না। তাদের জানের ভয় আছে।

ভেতরের বিল্ডিংয়ের এক দোতলায় জয়কে বাইরে রেখে হুমায়িরাকে নগ্ন করার কাজে লেগে পড়ল ওরা। ভাঙা জানালার গ্রিল ধরে জয় চেঁচাচ্ছে। তার গলার আওয়াজ আঁটকে আসছে। সে দেখল, বড়বাবার জড়িয়ে দেয়া গামছাটা মায়ের শরীর থেকে খুলে মুখে ঢুকিয়ে দেয়া হলো। মা আর চিৎকার করতে পারছে না। চোখের পানি ভেসে ভেসে এসে গালে গোঁজা গামছায় ঠেকলে শুষে নিচ্ছে গামছা। মায়ের শরীরে একটুও জোর নেই।

জয় বন্ধ দরজায় এলোপাথারি ধাক্কাধাক্কি করে বড় ক্লান্ত হয়ে গেল। তিনদিনের না খাওয়া ছোট্ট দেহটা আর চলতে চায় না। সে আবারও জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়াল। মায়ের দিকে তাকাতে খুব ভয় হচ্ছে তার। খুব ভয়াবহ দৃশ্য। বুকের ভেতরটা এত নিষ্ঠুরভাবে ঢিপঢিপ করছে। শ্বাসরোধ হয়ে আসছে।

ওরা মাকে পুরো নগ্ন করে ফেলেছে। মায়ের পেটটা উঁচু হয়েছে একটু। পেটের ভেতরে তার বোন আছে। বোন কি কষ্ট পাবে না! ওরা খুব জোরাজুরি করছে মায়ের সাথে। একটা ব্যাপার খেয়াল করল জয়, মায়ের দুই উরুর মাঝ দিয়ে রক্ত শুকিয়ে আছে। আগে ঝরা রক্ত। পুরোনো সেই শুকনো রক্তের ওপর দিয়ে নতুন রক্তের প্রবাহ আসছে।

ওরা মায়ের শরীরের ওপর চেপে শুয়ে পড়ছে। মা হাত-পা ছটফট করলে ওরা খামছে চেপে ধরে রাখছে দুজন। ওরা যখন উলঙ্গ হলো লুঙ্গি খুলে, দৃশ্যটা খুবই খারাপ লাগল জয়ের কাছে। সে চোখের ওপর ছোট্ট দুই হাতের তালু চেপে ধরল।

জয়ের তখনই হুট করে আল্লাহর কথা মনে পড়ল। রাতেও হুমায়িরা পিঠে হাত চাপড়াতে চাপড়াতে ক্ষীণ গলায় বলেছিলেন, “তোর আর আমার সাথে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ নেই। আল্লাহকে ডাকবি যেকোনো বিপদে। ক্ষুধা পেলে, কষ্ট পেলে, আঘাত পেলে…সবসময়।ʼʼ

সে সেদিন চিৎকার করে করে আল্লাহকে ডেকেছিল, “আল্লাহ আপনে আসেন। কোথায় আপনে, আল্লাহ? আমার আম্মুকে ওরা মেরে ফেলবে আল্লাহ! ও আল্লাহ…..আপনে শুনছেন? রক্ষা করেন আমার আম্মুকে।ʼʼ
মনে হয় আস্তে ডাকা হচ্ছে। জয় আরও জোরে জোরে ডাকল আল্লাহকে। আল্লাহ যদি রক্ষা করতে দেরি করে ফেলে, তাহলে মায়ের খুব কষ্ট হয়ে যাবে। সে বারান্দার গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়েও ডাকল। আকাশ থেকে কখন আসবে আল্লাহ! ঘরের ভেতরে খুব খারাপ কিছু হচ্ছে। কিন্তু কান্নার তোড়ে জয়ের গলা আঁটকে আসছে। ডাকতে ডাকতে হেঁচকি উঠে গেল, কাশতে কাশতে গলায় জ্বলুনি শুরু হলো। বুকটা লাফাচ্ছে।

তার এত চিৎকার বোধহয় খুব বিরক্তিকর ছিল। দরজার খুলে একজন লোক লুঙ্গির গিট্টু বাঁধতে বাঁধতে এগিয়ে এলো। জয় দৌড়ে যাবার চেষ্টা করেছিল ঘরের ভেতরে।

কিন্তু লোকটা জয়কে ধরে ফেলল। মেঝেতে শুইয়ে ফেলে বুকের ওপর চড়ে বসল লোকটা। জয়ের দম বন্ধ হয়ে এলো। তাতে জয়ের আবার একবার আল্লাহর কথা মনে পড়েছিল অবশ্য। লোকটা তাকে জবাই করবে। আরেকটু সময় সে পেতে পারতো। কিন্তু এত চিৎকারের ফলে সময় এগিয়ে এলো।

সে লোকটার হাতে চাপাতির মতো দেখতে মৃত্যুকে দেখেছিল। তখন তার বয়স সাত। তার আল্লাহর কথা মনে পড়লেও সে ডাকল না। একটুও ডাকতে ইচ্ছে করল না। খুব আগ্রহী নজরে নিভু নিভু চোখে তাকিয়ে রইল চাপাতির চকচকে ধারালো প্রান্তের দিকে।

চলবে…

[এখন পর্বগুলো তাড়াতাড়ি দেবার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে। ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here