#অবরুদ্ধ_নিশীথ
#তেজস্মিতা_মুর্তজা
৭৪. (দ্বিতীয়াংশ)
মিনিট পনেরো চলার পর গাড়ি এসে থামল এক পুরোনো একতলা বাড়ির সম্মুখে। গাড়ির ভোঁতা আওয়াজে পেট গুলিয়ে আসছিল। বসার ঘরে ঢুকে আদব-কায়দাকে ছুটি দিয়ে সে দ্রুত বসে পড়ল সোফার ওপরে।
ঘরে মোট চারজন পুরুষ। অন্তূ এক সোফায় আলাদা বসা হেলান দিয়ে। একজন নারী পর্দার আড়াল থেকে একটি ছোট্ট মেয়েকে দিয়ে চা-নাশতা পাঠাল।
আনসারী মোল্লা সাহেব অন্তূকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি অসুস্থ, মা?ʼʼ
-“না, চাচা। আল্লাহর রহমতে ঠিক আছি। আপনি ভালো তো?ʼʼ
-“আল্লাহ রেখেছেন। চোখ দেখে মনে হচ্ছে তুমি অসুস্থ। মুরসালীনের খবর কী? কিছু বলেছে তোমাকে?ʼʼ
-“সে আর মুক্তির আশা করে না। শুধু আপনারা বাচ্চাদের মুক্ত করুন, এই চাওয়া তার। আমি যেটুকু বুঝেছি।ʼʼ
-“একটা কথা জিজ্ঞেস করব, যদি কিছু মনে না করো?ʼʼ
-“বলুন, চাচা।ʼʼ
-“তোমারে আগে যেইবার দেখছি, বোরকা পরো নাই। আজ কি নিরাপত্তার জন্য? আমাদের সাহায্য করতে গিয়ে তোমার কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তো?ʼʼ
অন্তূর ভেতরে এক তিক্ত অনুভূতি জন্মালো। সে তা গিলে প্রসঙ্গ বদলে ফেলল, “বাচ্চাদেরকে ওই জাহান্নাম থেকে মুক্ত করতে আর একজন সাহায্য করবেন বলেছেন। ঠিক সাহায্য নয়, বরং তিনি আমার উদ্দেশ্য ধরে ফেলেছিলেন। কিন্তু তিনিও চান বাচ্চিগুলো মায়ের কোলে ফিরুক।ʼʼ
“কে সে?ʼʼ
-“একজন উকিল। ওদেরই লোক। কিন্তু..ʼʼ
আৎকে উঠল সবাই। অন্তূ আশ্বাস দিলো, চিন্তা করবেন না। আপনাদের ব্যাপারে উনাকে কিছুই বলিনি। বলবও না। উনি শুধু জানেন আমি বাচ্চাদের মুক্তি চাই। কিন্তু কী করছি, সে সম্বন্ধে তেমন জানানো হয়নি। উনি চান মুরসালীন নিজেও ওদের কাছে হার স্বীকার করে মুক্ত হোক। মুরসালীন মহানের সঙ্গে কেমন অন্যরকম বোঝাপড়া রয়েছে উনার।ʼʼ
-“মুরসালীন কী বলে এ ব্যাপারে।ʼʼ
-“আপনারা আমার চেয়ে মুরসালীন মহানকে ভালো চেনেন।ʼʼ
-“এতদিনে বেঁচে আছে আল্লাহ, শুকরিয়া। কী হালে রাখছে ওরে কে জানে? হতে পারে আঘাত তাকে কাবু করেছে।ʼʼ
-“পারেনি। তাছাড়া হামজা কখনোই, কোনো শর্তেই মুরসালীনকে জীবিত ছাড়বে না। হামজা ঝুঁকি জিইয়ে রাখে না। মুরসালীন মহান আবার মুক্ত হয়ে তার পেছনে লাগবে, তার সাধের তৈরি জাহান্নাম ভেঙে ফেলতে চাইবে, এরকম সুযোগ হামজা কাউকে দেবে না।ʼʼ
কিছুক্ষণ নীরবতার পর আনসারী সাহেব বললেন, “তোমার উকিল ওদের লোক, তবু তোমাকে সাহায্য করছে কেন? এর পেছনে কোনো অন্য ব্যাপার নেই তো!ʼʼ
-“থাকলই বা। ততদিনে আমি সবকিছু অন্যরকম করে ফেলতে চাই।ʼʼ
-“তা কেমনে করবা? কত বলি, কত কুরবানী হয়ে যাচ্ছে। তোমার মতোন মেয়ে আমাদের সাহায্য করতে এসে বিপদে পড়লে আমি খুব অপরাধী হয়ে যাব রে মা মালিকের কাছে। সাবধানে থাইকো।ʼʼ
অন্তূ মনে মনে বলল, ‘উল্টো আপনি আমাকে ক্ষমা করবেন, চাচা। আমি বরং আপনাদেরকে ব্যবহার করছি। এই খেলার শেষ দেখা আমার একার পক্ষে সম্ভব না। আমি আপনার মতো এমন ওদের যেকোনো বিরোধীকে যানবাহন হিসেবে ব্যবহার করতে পারি ওদের ধ্বংসের পথে।ʼ
অন্তূ স্থির বসে থাকা জোয়ান লোকটির দিকে ফিরল, “আমার আন্দাজ সঠিক হলে আপনিই পুলিশ অফিসার!ʼʼ
লোকটা মাথা নাড়ল, “আপনার আন্দাজ সঠিক। এবং আমি ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) থেকে, রউফ কায়সার।ʼʼ
-“আপনি কেন সাহায্য করতে চান আমাকে? আপনারাও জয় আমির ও হামজাদেরই সহযোদ্ধা, আমার জানামতে।ʼʼ সূক্ষ্ণ একটা খোঁচা মারল অন্তূ।
-“বর্তমান সরকার যতদিন পুরো এই আমলের প্রশাসনকে কিনে ফেলতে সময় নেবে, সেই পর্যন্ত আমার মতো কিছু বিরোধী থাকবে।ʼʼ
অন্তূ বুঝল, বিরোধী দলীয় সমর্থক। তাতে অন্তূর যায় আসে না। রাজনৈতিক দলাদলীর সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা নেই। কেবল তার একটি উদ্দেশ্য আছে। একটি ধ্বংসযজ্ঞের আয়োজন সে করবে। এবং এই ধ্বংযজ্ঞে সে যে কাউকে উপাদান বানাতে পারে, যেকোনোভাবে। তার কোনো ভয় নেই। পিছুটান আছে বেশ কয়েকটা যেগুলোকে দায়ভার বললে ভালো শোনাবে, এছাড়া আর কিছু নেই।
অন্তূ এক গ্লাস পানি খেলো বেশ কিছুটা সময় নিয়ে। এরপর বলল, “আমি আপনাকে আজ জয় ও হামজার অপরাধ জীবনের বিশেষ একাংশের ফিরিস্তি দেব। কিন্তু তার আগে আমার একটা শর্ত রয়েছে।ʼʼ
-“কী শর্ত?ʼʼ
-“উহু! এভাবে নয়। এই শর্ত পূরণে আপনার বেঁকে বসার চান্স রয়েছে সিংহভাগ। কিন্তু তা হলে আমার চলবে না। বরং আপনি আমার শর্ত মেনে নেবেন, এই শর্তে আমি আপনাকে সেই ফিরিস্তি শোনাবো।ʼʼ
বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে রইল রউফ। উচু-লম্বা কালো চেহারা। গায়ের রঙ কালো হলেও চেহারার গড়ন ভালো। চোখদুটো গভীর, মুখের ভঙ্গিমা একটু কূটিল। সে অন্তূকে দেখল পর্যবেক্ষণের সাথে। অন্তূ এতে আশ্বস্ত হলো। এই খেলায় একটু চতুর লোক তার চাই। সরলদের কোনো কাজ নেই এখানে।
-“বলুন আপনার শর্ত। শোনা যাক!ʼʼ
অন্তূ বলল, “জয় আমিরের যেকোনো একটা পাপের শাস্তিও মৃত্যুদন্ড হতে পারে। কিন্তু আপনি তার পাপাচারের গোটা অধ্যায় জেনেও তাকে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করতে পারবেন না।ʼʼ
তাচ্ছিল্য করে হেসে ফেলল রউফ, “কী আশ্চর্য, ম্যাডাম! আমি আইনের কাছে দায়বদ্ধ। অথচ আপনি তো আমাকে কথায় কথায় আমাকে কাস্টমাইজ করে ফেলছেন। আপনি আমাকে যে তথ্য দেবেন তার জন্য অবশ্যই ধন্যবাদ কিন্তু আইনকে কাস্টমাইজ করার বিষয়টা হাস্যকর। তার আগে আমি কারণ জানতে চাইব।ʼʼ
অন্তূ চোখদুটো মুদে হেলান দিলো আরেকটু, “কোনো প্রেমিককে তার প্রেমিকার সঙ্গে মিলিয়ে দেবার পিয়ন হিসেবে আমি-আপনি এই চুক্তি করতে বসিনি এখানে। এবং আমি অপ্রয়োজনে, অযৌক্তিক কথা বলার জন্যও এতদূর বয়ে আসিনি, অফিসার!ʼʼ
রউফ কপাল জড়িয়ে বলল, “কে প্রেমিক?ʼʼ
-“জয় আমির। এবং তার পুরোনো প্রেমিকা হলো মৃত্যু। সে নির্দিষ্ট একটা সময় অবধি বাঁচতে চায়। কেননা তার কিছু কাজ পুরো করার আছে। তা ফুরোলে সে সেই পথে এগিয়ে যাবে, যেখানে তার মৃত্যু অবধারিত।ʼʼ
-“তা কেমন?ʼʼ
-“হতে পারে সে তার কোনো শিকারের সামনে বুক পেতে দেবে। কিংবা আইন সামনে পড়ে গেলে আইনের সামনে।ʼʼ
-“তার কারণ?ʼʼ
-“বেশ কয়েকটা কারণ রয়েছে।ʼʼ
-“কী কারণ?ʼʼ
-“প্রথমত সে জীবনকে ভয় পায়। মৃত্যু তার জীবনের একমাত্র মুগ্ধতা। দ্বিতীয়ত সে তার কোনো শিকারের হাতে প্রাণ দিতে চায় যেন সে এটা প্রমাণ করার মাধ্যেমে হাসতে হাসতে মরতে পারে যে যেকোনো শিকারই তার মতো একেকটা প্রতিশোধপরায়ন, হিংস্র, পাপী জয় আমির হয়ে ওঠে, যেমনটা সে হয়েছিল। তৃতীয়ত সে বন্দিত্বকে ঘেন্না করে। আইনের হাতে আত্মসমর্পণ করে বন্দি হবার বদলে সে অবশ্যই শখের সঙ্গে বুলেটের সামনে বুক মেলে ধরবে। যেটা কোনো মূল্যেই হতে দেয়া যাবে না।ʼʼ
-“ওয়েট ওয়েট! সেকেন্ড টাইম হোয়াট ইউ সেইড, আই ওয়াননা বি গট দ্যাট এগেইন, হোয়াট ডু ইউ মিন?ʼʼ
অন্তূ গভীর করে শ্বাস টানল, “সে নিজেকে তুলে ধরতে চায়। সে প্রমাণ করতে চায়—যেকোনো শিকার একবার সুযোগ ও প্রাণ ফিরে পেলে শিকারী হয়ে ওঠে। ঠিক তার মতো। আর এটা পাপ নয়, এটা হলো প্রতিক্রিয়া।ʼʼ
রউফ চায়ের কাপটা হাতে ধরে অনেকটা সময় চুপ করে বসে রইল। অন্তূর চোখের সামনে সিনেমার পর্দার মতোন ভেসে উঠল—অন্তূকে অপদস্ত করার পর যেদিন জয় তাদের বাড়িতে এসেছিল রাবেয়া ঘেন্নায় মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। জয় তখন হেসে বলেছিল, ‘সবাই স্বার্থপর, দেখেছেন? আগেরবার এসেছিলাম, আমি এতিম বলে আপনি নিজেকে আম্মা ডাকতে বলেছিলেন। এবার যেই একটু ক্ষতি করেছি, আর কথাই বলছেন না। অথচ এখনও কিন্তু আমি জয় আমির সেই এতিমই আছি। নাকি এখন বাপ-মা বেঁচে উঠেছে আমার?ʼ
অন্তূ সেদিনই বুঝে গেছিল জয়ের চিন্তাধারাকে। এরপর সে শুধু তার আন্দাজ প্রমাণ করেছে। এবং জয়কে জানতে জয়কে জমিনের মতোন খুঁড়ে গেছে।
-“আপনার কাছে ওদের অপরাধের কেমন তথ্য রয়েছে? শুধু তথ্য নাকি প্রমাণও?ʼʼ
-“প্রমাণে পরে আসছি। সাক্ষ্য দিয়ে শুরু করি। মাস কয়েক আগে মেয়র হামজা পাটোয়ারী তার বোনের স্বামী সীমান্তকে খুন করেছে। আমার সামনে।ʼʼ
রউফ নড়েচড়ে বসল, “আপনার সামনে?ʼʼ
-“আপনি যে সোফায় বসে আছেন, ধরুন সেখানে আপনি কাউকে কুপিয়ে মারছেন, আমি ওই যে ওই দরজার কাছে দাঁড়ানো।ʼʼ
-“এরপর?ʼʼ
-“পলাশ আজগর। তাকে মারা হয়েছে কাঠের মেশিনে টুকরো করে। সেই মেশিন ও কাঠের মিলের মালিকের হদিশ আমি আপনাকে দেব। তাকে ধরে নিয়ে আসবেন। এবং সে সাক্ষী দিতে অবশ্য রাজী হবে না। তার জন্য তাকে টর্চার সেলেও রাখা লাগতে পারে দু-একদন। তাছাড়া তার একটা ছোট্ট মেয়েও আছে। যদি একটু অন্যায় উপায় অবলম্বন করতে চান তো তাকে জিম্মি করেও স্বীকারক্তি নিতে পারেন। এবং তার এক পা পঙ্গু। সেটা করেছে জয় আমির। বিষয়টা প্রমাণ করতে এখন পুলিশ হেফাজতে থাকা কবির আপনার ভালো ইনফর্মার হতে পারে। সে উপস্থিত ছিল সেসময়।ʼʼ
রউফ কায়সার পর্যবেক্ষকের মতো চেয়ে থেকে মনোযোগ দিয়ে শুনছিল কথাগুলো।
অন্তূ বলল, “সাবেক মেয়র, ঝন্টু সাহেবের ছেলে মাজহার, তাকে জয় আমির জবাই করে মেরেছে।ʼʼ
-“আপনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন?ʼʼ
-“না। আমার হাত থেকে চাপ্পর নিয়ে গেছিল। এবং আমি খুব ভুল না হলে তার মাথাটা কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। এবং সেই কবরটাও শনাক্ত করে দিতে পারি। এবং সেখানে আপনি পলাশের মাথার খুলিটাও পাবেন।ʼʼ
-“আচ্ছা।ʼʼ রউফ কিছু লিখল।
অন্তূ বলল, “এবং ঝন্টু সাহেবকে দুই ভাই মিলে মেরেছে বলেই আমার ধারণা। যদি একজনও মারে, সেদিন বেরিয়েছিল দুজন। এবং এটার প্রমাণ..ʼʼ
-“আছে আমার কাছে। রউফ হাসল, “তদন্তের সময়ই একটি সিসিটিভি ফুটেজ আমরা উদ্ধার করেছিলাম। এবং সেখানে হামজা পাটোয়ারীকে ঝন্টু সাহেবের বাড়ির রাস্তায় দেখা গেছে। কিন্তু উনাকে তেমন একটা জিজ্ঞাসাবাদের সুযোগ তখন পাইনি কেননা উনি ক্ষমতাসীন দলের কর্মী। যেহেতু ওটা উনার শ্বশুরবাড়িও, সেক্ষেত্রে ব্যাপারটা কিছুটা চাপা পড়ে গেছিল। এবার আর এই দ্বিধাটা রইল না।ʼʼ
অন্তূ যাবতীয় অপরাধের বিবরণ দেবার পর আনসারী সাহেবকে বলল, মেয়র এখন ঢাকাতে। সে ফিরলে সব শেষ ধরুন! সুতরাং সে ফেরার আগে যা করতে পারবেন। এবং স্বাভাবিকভাবে সে আজকাল ফিরে আসবে। এখন আপনাদের কাজ হলো সে যাতে এত দ্রুত ফিরতেই না পারে, এমন কিছু করা।
-“কী করতে বলছো?ʼ
-“গাড়ি এক্সিডেন্ট করিয়ে দিন।ʼʼ
-“অ্যাহ?ʼʼ
-“দু চারদিন হাসপাতাল ঘুরে আসুক। বাড়ি আর ঢাকা করতে করতে পেরেশান হয়ে গেছে ভীষণ।ʼʼ
সবাই কিছুক্ষণ চুপচাপ অন্তূকে দেখল। অন্তূ উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “আপনারা পাটোয়ারী বাড়িতে ঢোকার জন্য কালকের দিনটা পাবেন। কাল জয় আমিরকে নিয়ে বের হবো আমি। সেইটুকু সময় আপনারা পাবেন।ʼʼ
—
হামজা বড়মহলের সঙ্গে একটি মিটিং শেষ করে হোটেলে ফিরল বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে। হোটেলটা যে মন্ত্রীর, তার সঙ্গেই মিটিং শেষ করে ফিরল সে। পাঞ্জাবীখানা খুলে খালি গায়ে শুয়ে পড়ল বিছানার ওপর। ঘুমের অভাবে শরীরে অসহ্য অস্থিরতা টের পাচ্ছিল। জয়কে গত দু’দিনে বহুবার কল করেছে সে, কোনো সারা পাওয়া যায়নি।
হামজা ওভাবেই উঠে গিয়ে বেলকনির গ্রিল ধরে দাঁড়াল। রাজধানীর এক অভিজাত হোটেলের বেলকনি থেকে ব্যস্ত এই মহানগরী বড় রহস্যময় লাগল হামজার কাছে। এই ব্যস্ত নগরী কাউকে কিচ্ছু দেয় না। হাসিল করতে হয়, সেই হাসিলের সিংহভাগই অনৈতিক হাতে আদায়কৃত। হামজাকেও কিছু দেয়নি। দেয়নি বলাটা অকৃতজ্ঞতা হবে। ব্যথা দিয়েছে। কখনও শরীরের, কখনও খিদের, কখনও বা পরিচয়হীনতার, কখনও অনূভূতিহীনতার, কখনও বা এত লড়াই করে জেতা এইটুকু ক্ষমতা হারিয়ে ফেলার ভয়ের ব্যথ।
ক্ষমতার লড়াই যারা লড়ে তারা জানে তারা কতটা অসহায়! তারা চাইলেও একজন ভালো মানুষ হতে পারে না। নেশার চেয়ে বড় প্রবৃত্তি নেই। ক্ষমতার নেশার চেয়ে বড় নেশা নেই।
রিমির মুখটা ভেসে উঠল চোখের সামনে। যারা রোজ ব্যথা পায়, তাদের সয়ে যায়। যার একদমই অভ্যাস ও অভিজ্ঞতা নেই, তারা কীভাবে সইবে? হামজার জানা নেই। হামজা কখনও কিছু ধরে রাখতে চায়নি ক্ষমতা ও জয়কে ছাড়া। কিন্তু এরপর মনে হলো সে আরেকটা জিনিস ধরে রাখতে চেয়েছে–রিমিকে। সরল রিমিকে। সেই রিমি এখনও সরল কিন্তু তিক্ততার বশে বশীভূত। হামজা আন্দাজ করে, রিমি যখন-তখন মুখে চেয়ে বসবে, আমাকে তালাক দিন।
হামজা শক্ত করে চেপে ধরল গ্রিলটা। তার বলবান হাতের মুঠোর ওপর মোটা মোটা রগগুলো খাড়া হয়ে উঠল। বুকের ভেতরে এক চাপা সূঁচালো ব্যথা টের পাওয়া যাচ্ছে। রিমির মুখে উচ্চারিত এই কথায় হামজার যে হেরে যাওয়া, হারিয়ে ফেলা ও ব্যর্থতা আছে, তা হামজা সামাল দেবে কী করে?
এরপরের ভয়টা হামজাকে বিষের মতো গ্রাস করে। সে সব সহ্য করতে পারবে, সে পারে। কিন্তু…জয়ের চোখে তার জন্য অভিযোগ…. ঘৃণা!
মস্তিষ্কের মধ্যভাগটা দপদপ করে উঠল। মাথা ঝারা মারল হামজা। দ্রুত রুমে এসে প্রেশারের ওষুধ ও দুটো ঘুমের ওষুধ খেলো। তার ইচ্ছে করছে রুমটাকে ভেঙে আছড়ে গুড়ো গুড়ো করে ফেলতে। হামজা অস্থিরতা ও ভয়কে ঘেন্না করে। ক্ষমতা ও জয় তার। সে একটা আফসোসে আজ বহুদিন যাবৎ ঘুমায় না।
অন্তূ মেয়েটাকে ক্লাবঘরে তুলে নিয়ে যাবার কথা ছিল। এরকম বাড়ন্ত কাউকে পথে রাখতে নেই। অন্তূকে সে সুযোগ দিলে সে মুস্তাকিন মহানের মতোন কেঁচোর বদলে খুঁড়তে খুঁড়তে অজগর সাপ বের করে আনতো। এ কথা পলাশ জানতে পেরে বলেছিল, ‘হামজা তুমি আমার হক নষ্ট কোরো না এভাবে। তুমি কি জানো, কাকতালীয় ওই ছোটপাখির ভাই আমার কাছে ঋণী! ক্লাবঘর ছাড়ো, তুমি আমার ঘরে আনো। আমার ওপরে তোমার ভরসা নাই?ʼʼ
হামজা সম্মতি দিলো। অন্তূর প্রধান দূর্বলতা তার আব্বু। দ্বিতীয়টা সম্মান। দুটো লুট করতেই পলাশ সিদ্ধহস্ত, তার হাত পাকা। কিন্তু বাজির চাল পাল্টে দিয়েছে সেই সন্ধ্যার শেষক্ষণে জয় আমির। অন্তূ বেঁচে গেল সেদিন, আমজাদ সাহেবও।
এরপর অন্তূকে ঢাকায় তুলে নেবার কথা ছিল। কিন্তু তার মাঝে অন্তূ জয়কে থুতু নিক্ষেপ করে যে আরও একবার চাল পাল্টে দেবে হামজা তা ভাবতেও পারেনি। বিষয়টা সে জেনে বরং খুশিই হয়েছিল। সেদিন জয় পলাশের রুফটপ থেকে অন্তূকে বাঁচালেও, এই থুতুর বদলা নিতে হলেও জয় এবার অন্তূকে ছিঁড়ে খেয়ে ফেলবে।
কিন্তু জয় তার আগেই হামজাকে না জানিয়ে এক অঘটন ঘটিয়ে বসল। থুতুর বদলে থুতুর আয়োজন করল। হামজা সেদিন অত অল্প সময়ে আর কিছু ভাবতে পারেনি। নির্বাচনের ক’দিন পর, রেপুটেশন রক্ষার চেয়ে বড় কর্ম নেই একজন রাজনৈতিকের জন্য। নতুন অবস্থায় মানুষের মন ভাঙা চলবে না, মহান হতে হবে। সেই মুহুর্তে অন্তূকে হাতের মুঠোয় রাখার একমাত্র উপায় তার মাথায় জয়ের সাথে বিয়ে দেয়াই এসেছিল।
হামজা বেড-সাইড টেবিলের ওপরের ল্যাম্পটা তুলে এক আঁছাড় মারল। চুরমার হয়ে গেল তা বিকট শব্দ তুলে। এতবড় ভুল হামজা কী করে করেছিল সেদিন? আরও কয়েকটা ভুল হামজা করেছে এই কয়টা মাসে। সে মেয়েটাকে দূর্বল করতে অন্তিককে ট্রাকের চাকার নিচে পিষে ফেলেছে। পরিবারকে উচ্ছেদ করে ছেড়েছে। কিন্তু জেদি মেয়েটাকে জবাই করার সঠিক কাজটা সে করেনি। এবং সবচেয়ে বড় ভুল সে করেছে সে জয়কে মেয়েটার কাছে ছেড়ে রেখেছে।
এর পেছনেও অন্তূর একটা চাল বোধহয় খেটেছিল। অন্তূর সাথে জয়ের সম্পর্ক এতই বিশ্রী ও বিরোধী ছিল যে হামজার কখনও খেয়ালই আসেনি ওই মেয়েটার ওপর জয় নিজেকে হারাতেই পারে কোনো একদিন! রোজ মারধর, চেঁচামেচি, বৈপাক্ষিক বাক-বিতন্ডা, বোকা বোকা উত্তেজনা! হামজা যেন বিভ্রান্ত হয়ে উঠেছিল!
হামজা বিছানার চাদর চেপে ধরে মেঝেতে হাঁটু গেঁড়ে বসল। ইচ্ছে করছে হাতুরি দিয়ে মাথার ওপর এক বাড়ি মেরে সবটা থামিয়ে দিতে।
দরজায় নক পড়ল। একজন সার্ভিসবয় এসেছে। সাথে একটি মেয়ে। মুখে সাজগোজ, শাড়ি পড়ার ধরণ ও ব্লাউজ দেখে বুঝে ফেলল হামজা মেয়েটা কী!
সার্ভিসবয় খুব বিনয়ের সাথে বলল, “স্যার, আপনার ড্রিংক। ভেতরে রাখব?ʼʼ
হামজা হেঁটে এসে বিছানায় বসে একটা সিগারেট ধরিয়ে বলল, “রাখো।ʼʼ
সার্ভিস বয় মদের বোতল রেখেও দাঁড়িয়ে আছে দেখে বলল, “কিছু বলবে?ʼʼ
স্যার! একটু লাজুক হাসল ছেলেটা, “ম্যানেজার, মানে ম্যানেজার স্যার ওকে পাঠাইছে আপনার সেবার জন্য! একা আছেন। একটু সঙ্গ দরকার হতে পারে। আমাদেরকে আপনার স্পেশাল সেবার জন্য বলে দেয়া হইছে উপর থেকে।ʼʼ
হামজা অবহেলার দৃষ্টি মেলে একবার দেখল মেয়েটার দিকে। আসল চেহারা বোঝার উপায় নেই, এত গাঢ় সাজ সেজেছে। হামজা মনে মনে বকে উঠল, ‘খানকি সাজছে কত? হোগা ভরা সাজের মাইরে চুদি! শালি স্লাট!ʼ
এই কাজে সেজে আসার কোনো কারণ খুঁজে পেল না সে। বিয়ের পর আর কখনও অন্য নারীকে ছোঁয়া হয়নি। আজ বিরহ, মনের অস্থির যন্ত্রণা অথবা অনেকদিন রিমির সঙ্গছাড়া থাকার ফলে পৌরুষ উত্তেজনায়ই হোক হামজার ভেতরে এক প্রকার আবেশ জাগল। মদ ও নারীসঙ্গ এই মুহুর্তে খুবই দরকার। ছেলেটাকে চলে যেতে ইশারা করে মেয়েটাকে কাছে ডাকল। মেয়েটা দরজা আঁটকে এসে নিজেকে লুটিয়ে হামজার পায়ের কাছে বসল।
হামজা হাঁটুর ওপর কব্জি রেখে ঝুকে বসে। এক আঙুলে থুতনিটা তুলে ধরে চেহারাটা দেখে। খারাপ না তবে মেকাপের ওপর দিয়েও দু চারটে ব্রণ দেখা যাচ্ছে। মেয়েটা একদৃষ্টে হামজার ফুলে থাকা বুক, শক্ত পেট ও বাহুর পেশী দেখছিল। শেষ অবধি আচমকা শ্যামলা বলিষ্ঠ বুকে কালো কুচকুচে পশমের ওপর হাত রাখল।
হামজা তাচ্ছিল্য হাসে। তার ভেতর থেকে আগ্রহ কমে আসছে। সে বেহায়া মেয়েলোক পছন্দ করে না। মেয়ে মানুষ হবে লাজুক, পুরুষের সংস্পর্শে কুঁচকে উঠবে, এমন নারীকে ছুঁতে পুরুষদেহ ব্যকুল হয়।
নড়াচড়ার মাঝে ইচ্ছাকৃত বুকের কাপড় ফেলে দিলো মেয়েটা। হামজা দেখল। কয়েকবার মুখে আঙুল নাড়ল। রাগ মাথাচাড়া উঠছে। যতবারে মেয়েটার দিকে চাইছে, তার ভেতরটা আবেদন করছে যেন চোখদুটো রিমির লজ্জায় লাল নত মুখখানা পায়!
তা না পেয়ে ভেতরের রাগ ও যন্ত্রণা বেড়ে অসহ্য পর্যায়ে চলে গেল। তার এই চৌত্রিশ বছরের জীবনে এই শৃন্যতার বোঝা সে বয়নি আগে। তার বাপ হবার ছিল, তার একজন স্বামী হবার ছিল। সে নিজের একটা পরিবার চেয়েছে, যা তার কোনোদিন নেই। হামজার মনে পড়ল, সে পরিচয়হীন হয়েই মরতে চলেছে। তারও জয়ের মতোন আগেপিছে কেউ নেই। রিমি থাকতে দেয়নি।
বুকটা কেমন মুচড়ে এলো। হৃৎপেশীতে টান অনুভব হলো। সে কি সব হারাতে চলেছে? জয়, রিমি, সন্তান, ক্ষমতা! চোখ বুজে নিজের বুক থেকে মেয়েটার হাত সরিয়ে শান্ত-হিংস্র গলায় বলল, “আউট!ʼʼ
মেয়েটা বুঝতে পারল না যেন। হামজা চোখ খুলল, মেয়েটা আৎকে উঠল। লাল টকটক করছে হামজার দুই চোখের শিরা। গম্ভীর দাড়ি-গোফওয়ালা মুখ, রক্তলাল চোখে চেয়ে হাত সরিয়ে নিলো মেয়েটা।
হামজা বলল, “যাবার সময় দরজার নব লক করে যাবে।ʼʼ
মেয়েটার চোখে হতাশা। সে যেন শুধু পয়সার জন্যই নয়, হামজার মতো পুরুষের সঙ্গ পেতেই চেয়েছে আজ হামজাকে দেখার পর।
ভয় পেয়ে মেয়েটার চলে যাবার পর হামজা মদের বোতল খুলে বসল। সে বহুদিন এত মদ একবারে বসে পান করেনি। তার মাথায় একটা চিন্তা এলো, সে যেমন নিজের সন্তান ও স্ত্রীর বিরহে এমন জঘন্যভাবে কাতর হয়ে পড়েছে! সে হামজা, তার মতো পাথরের ভেতরে প্রাণ টের পাওয়া যায় আজকাল। সেখানে জয় কী করে সামলাবে নিজেকে। ছটফট করে উঠল হামজা। অসম্ভব! এদিকের কাজ অতি শীঘ্রই সেরে তাকে দিনাজপুর ফিরতে হবে। জয়ের জীবনে কোনো পিছুটান থাকতে পারে না। হামজা রাখবে না। জয়কে সে ধ্বংস হতে দেবে না। তার কলিজার এক টুকরো জয়। চোখের সামনে জয়কে হেরে যেতে দেখা হামজার কাছে মৃত্যুসম।
কল বেজে উঠল। এমপি মন্ডল সাহেবের কল। তিনি জানালেন কামরুল তার বড়ঘরে খুন হয়েছে। বাপ্পী আর রবিউল গুরুত্বর আহত বুলেটের আঘাতে।
হামজার মস্তিষ্ক এমন সময় এমন সংবাদ গ্রহণ করতে পারছিল না যেন। অনেকক্ষণ মদের বোতলটা হাতে চেপে নির্বিকার বসে রইল হামজা। বড়ঘরে কী হয়েছে তার উ
অনুপস্থিতিতে? তার একটা সম্ভাব্য দৃশ্য ফুটে উঠল হামজার চোখের সামনে। একটা গভীর করে শ্বাস টেনে চোখ বুজে বসে রইল মিনিট খানেক, দম ছেড়ে তাকাল।
এরপর জয়কে কল করল। তিনবারেও কল রিসিভ করল না জয়।
—
জয় অন্তূকে ভার্সিটিতে নামিয়ে দিয়ে আর কারাগারে গেল না। ক্লাবে গিয়ে কয়েকজনকে বলল, “ভার্সিটির আশেপাশেই থাকবি। তোদের ভাবী বের হলে রিক্সা ধরে দিয়ে পেছন পেছন এসে বাড়িতে ঢুকিয়ে দিবি।ʼʼ
এরপর ছয় সাতজনকে সাথে নিয়ে কুষ্টিয়াগামী বাসে উঠল। দিনাজপুর থেকে কুষ্টিয়া কমবেশি আট ঘন্টার পথ। রাত আটটা বাজবে সেখানে পৌঁছাতে। গাড়ি যখন গ্রাম্য সড়ক দিয়ে চলছিল, রাস্তার দু ধারে ফসলি জমি, বাসের জানালা দিয়ে আসা শনশনে বাতাস।
জয় সেই চলমান প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে গেয়ে উঠল,
কাগজের ফুলে কভু ভ্রমর আসে না
মরা গাছে কখনও ফুল ফোটে না..
কলমের কালি যদি যায় শুকিয়ে,
জীবনের খাতা শূন্য থেকে যায়, আমি লিখব কোথায়…
তার ফোন বাজছে। তিনবার বেজে গেল। হামজার কল। তার ধরতে ইচ্ছে করল না। এটা এক ধরণের ব্যথা। এই ব্যথার নাম জানে না জয়। এই যে সব রকমের ব্যথাকে ছাড়িয়ে ওঠা এই ব্যথাটা, এটার উৎপত্তি মুরসালীনের একটা বাক্য! সে তার একমাত্র অবলম্বণের প্রতি সন্দেহিন। এই দ্বিধা তার ও হামজার মাঝে আসার ছিল না। ব্যথাটা রিংয়ের আওয়াজের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছিল।
চতুর্থবার রিসিভ করে চুপ রইল। হামজা বলল, “কামরুলকে কে মেরেছে জয়?ʼʼ
-“কে মারবে আমি ছাড়া?ʼʼ
-“তুই মেরেছিস?ʼʼ
-“আর কে মারার আছে?ʼʼ
-“কেন?ʼʼ
-“বাড়াবাড়ি করছিল। মারার উদ্দেশ্যে গুলি করিনি। কিন্তু জায়গামতোন লাগছে, টপকে গেছে। আমার দোষ নাই কোনো।ʼʼ
-“বাপ্পী আর রবিউল….ʼʼ
কথাটা পুরো হবার আগেই জয় কল কেটে ফোন বন্ধ করে দিলো। এখন জিজ্ঞেস করবে, কোথায় তুই। জয়ের কাছে জবাব নেই। সে হামজার সাথে এভাবে কথা বলতে চায় না।
রাত সাড়ে আটটার দিকে মার্জিয়ার বাপের বাড়িতে সাতজন অজ্ঞাত যুবক ঢুকল। বাড়ির লোকজনদের হাতে কেজি পাঁচেক মিষ্টি ধরিয়ে দিলো।
জয় চারদিকটা দেখল একবার। দুটো ঘর দালান, ওপরে চিনের চাল। দুটো ছাপড়া টিনের বেড়াওয়ালা ঘর। তার মধ্যে একটা রান্নাঘর বোধহয়। মার্জিয়া বারান্দায় হাঁটছিল উচু পেটটা নিয়ে। জয়কে দেখে তার ভেতরটা কেঁপে উঠল, ঘেন্নায় ভরে এলো বুকটা। জয়কে সবাই প্রশ্ন করল, “কে তুমি?ʼʼ
জয় বেহায়ার মতোন হেসে মার্জিয়ার দিকে ইশারা করে তুড়ি বাজালো, “এই তো, ভাবী! কী যেন নাম! ধ্যাৎ শালার! বয়স হচ্ছে তো, স্মৃতিশক্তি দূর্বল হয়ে যাচ্ছে। উমম! মার্জিয়া ভাবীইই! উনার ননদের একমাত্র স্বামী আমি–জয় আমির। শাশুড়ি আর ভাবীর সাথে দেখা করতে আসলাম। আপনারা খুশি হননি তো? খবরদার হবেন না। আমি একটু কুফা মানে অশুভ আছি। হিহি, ভালো আছেন ভাবী?ʼʼ
মার্জিয়া আতঙ্কিত চোখে চেয়ে রইল। এমন ধরণেরই এক তান্ডব বছর পাঁচেক আগে একবার হয়েছিল বাড়িতে, তারপর তার জীবন বদলে গেছে।
-“ভাবী! আরমিণের আম্মা কই? কোন ঘরে থাকেন উনি?ʼʼ
রাবেয়া হলদে লাইটের আলোয় চশমা চোখে দিয়ে নিচু জলচৌকির ওপর বসে কাঁথা সেলাই করছিলেন। জয় জুতো পায়ে ঘরে উঠে গিয়ে উনার সামনে বিছিয়ে রাখা কাঁথার ওপর বসল। রাবেয়া চমকে উঠলেন জয়কে দেখে। ওর এই বাড়ি চিনে আসার কথা তো না! জয়ের মুখে সেই চঞ্চল হাসি।
চলবে…