#অবরুদ্ধ_নিশীথ
#তেজস্মিতা_মুর্তজা
৭৪. (বর্ধিতাংশ)
অন্তূ যখন উঠে চলে আসছিল তখন পেছন থেকে রউফ রসিক সুরে জিজ্ঞেস করে ওঠে, “জয় আমিরকে মৃত্যুদন্ড দিতে পারব না। তার বদলে কী শাস্তি দেবার অনুমতি দেবেন আপনি?ʼʼ
অন্তূ দরজা চেপে ধরে পেছন ফিরে তাকায়, “যাবজ্জীবন কারাদন্ড! কারাগারের সবচেয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন গভীর কালকুঠুরীখানা যেন তার বসবাসের জায়গা হয়। এবং সেখানে থাকবে না কোনো পরিচিতদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ! সে বন্দিত্বের অন্ধকারকে ভয় পায়, সে আইনকে বড্ড ভয় পায়।ʼʼ
“এটা জয় আমিরের হিসেব গেল। আর হামজা পাটোয়ারী সাহেবেরটা?ʼʼ
অন্তূ হেসে বলল, “এটা সময় বলবে।ʼʼ
বেরিয়ে আসতে আসতে অন্তূ মনে মনে বলল, ‘নেশাগ্রস্থ এক অন্ধ-পঙ্গু তার হাতের লাঠি হারিয়ে কতটা দিশেহারা হয়ে পড়ে আপনি জানেন না, রউফ সাহেব; আর যদি সেই লাঠি হয় তার বড় ভালোবাসার ধন! সেই দিশেহারা বুড়ো শেয়ালকে আমি আইনের হাতে তুলে দিয়ে হাতছাড়া করব না। তার সঙ্গে কত হিসেব বাকি আমার! সুযোগ পেলে তার জন্য কারাগার আমি তৈরি করব আমার হাতে।ʼ
—
জয়কে দেখে রাবেয়ার চোখে-মুখে আক্রোশের মতো একটা ব্যথা ফুটে উঠল, “এইখানে আইছো ক্যান? হুমকি দিতে, আমারে ভয় দেখাইতে?ʼʼ
“আরে শাশুড়ি, আপনি তো ভুল বুঝতেছেন! আমি কি খারাপ ছেলে নাকি?ʼʼ
-“ক্যান আসছো তাইলে আমার কাছে, জয়? আর কী আছে আমার? কী দেব তোমারে? কিচ্ছু নাই আমার। অন্তূ কিছু করছে?ʼʼ
রাবেয়ার কথাগুলো একদৃষ্টে চেয়ে থেকে শুনল জয় তারপর একটু হেসে বলল, “ওর কী করার কথা? ওরেস্সালা! আমারে যাতে গলাটলা টিপে জয় বাংলা করে দেয়, এই বুদ্ধিসুদ্ধি দিছেন নাকি গতরাতে?ʼʼ
রাবেয়া ভঙ্গুর গলায় বলেন, “তার দরকার পড়বে না। আল্লাহ বিচারক। আমার আল্লাহ আছে। উনি সব জানেন, সব দেখেন।ʼʼ
জয় জোরে জোরে মাথা নেড়ে বলল, “হু হু, থাকলে নিশ্চয়ই দেখেন। উনি দেখেন বলেই তো আপনার এই অবস্থা!ʼʼ
-“দিন সবার আসে, জয়। আইজ তুমি ভালো অবস্থায় আছো, কে বলতে পারে কালকেও এই অবস্থায় থাকবা। এইরকম ভালো একদিন স্বামী-সন্তান নিয়ে আমিও ছিলাম। আইজ নাই।ʼʼ
জয় মাথা নুইয়ে হেসে ফেলল, “আমি স্বয়ং জীবিত এক বদদোয়া। আমার ওপর আপনার বদদোয়া কাজ করবে না।ʼʼ
-“তুমি কি এইখানে আমারে ভয় দেখাইতে আসছো, যাতে অন্তূরে দূর্বল করতে পারো! এক আমিই তো আছি যারে জিম্মি করবা আর অন্তূ ভয় পাবে। মারবা আমারে? মারো জয়, মারো! কিচ্ছু নাই এই মায়ের কাছে। মেরে ফেলো আমারে। আমি সেই হতাভাগি দূর্বল মা, যে তার দুই ব্যাটা-বেটিরে তোমাদের মতোন রাক্ষসের হাত থেকে বাঁচাইতে পারে নাই। এখন আবার জিন্দা আছি অন্তূর দূর্বলতা হবার জন্যে, তুমি তারচে মেরে ফেলো আমারে। অন্তূর আর কোনো দূর্বলতা না থাক্। মারো..ʼʼ টসটসে গরম নোনাজলে গাল ভিজে উঠল রাবেয়ার।
জয়ের ডান হাতখানা নিজের দিকে টেনে নিয়ে আঘাত করতে করতে কেঁদে ফেলল রাবেয়া,“মারো! মারো না! অনেক শক্তি না তোমার? কত ক্ষমতা দিছে আল্লাহ্ তোমারে! যা খুশি করো, বিচার নাই, সাজা নাই। তোমরাই তো মানুষ। যে মহিলার ছেলে নাই, মেয়ে কাছে নাই, স্বামী নাই, ঘর নাই, তারে বাঁচাইয়া আর কত সাঁজা দিবা? আমার মতোন অভাগীর বাঁচার হক নাই আল্লাহর জমিনে।
অন্তূরে আমি বলতাম, এত তেজি হস না। মেয়ে মানুষের এমন হইতে নাই। শোনেনি আমার কথা। ওর বাপের মতোন বেপরোয়া হইলো। আইজ মনেহয় ও ঠিক ছিল। তুমি মারো আমারে। আমি অন্তূর দূর্বলতা হবো না। তুমি আমারে মাইরে ফেলো। ওর কেউ নাই। আমি থাকলে আরও মুসিবত। তুমি ওরে আমার দোহাই দিয়ে হুমকি দিলে আমার অন্তূ উকিল হতে পারবে না। ওর আব্বা ওরে উকিল বানাইতে চাইছিল। আমার সেই সাধ্যি নাই। আমি খালি ওর ঘাঁড়ের বোঝা হয়ে বেঁচে আছি। আমার মেয়ের কত স্বপ্ন জানো, জয়? আমি মা ওরে জন্ম দিছি দুনিয়ায় খালি শাস্তি-সাজা পাবার জন্যে। আমার অন্তূ কিচ্ছু পায় নাই কোনোদিন। কিছু চাইতোই না। ওর বয়সী মেয়েদের কত আবদার থাকে। আমার অন্তূ ওর বাপের মা ছিল। তারে জাহান্নামে দিছি আমি। আমার হাত বান্ধা। কিচ্ছু বলবার সাধ্যি নেই আমার তোমারে।ʼʼ
“কী বলতে চান? শুনি! আঘাত করতে চান?ʼʼ
জয় পকেট থেকে ধারালো এক ড্যাগার বের করে ধরে হাসে, “এই নেন…আপনার অন্তিককে ট্রাক চাপা দিয়ে মেরেছি আমি। ধরুন, জানের বদলে জান।ʼʼ
রাবেয়া চোখ দুটো বুজে ছিটকে উঠল, “খবরদার ওই জিনিস আমআর কাছে আনবা না। দূরে সরাও।ʼʼ
-“কেন? মারবেন না আমায়? সুযোগ পেয়েছেন, কাজে লাগান। এটা হলো একটা সচেতন নাগরিকের বৈশিষ্ট্য। আমি চলে গেলে কিন্তু আফসোস হবে ছেলের খুনিকে ছেড়ে দেবার।ʼʼ
রাবেয়া কান্নাভেজা চোখে মলেন হাসেন, তার কণ্ঠস্বরটা থরথর করে কাঁপে, “আমি কে গো আমার ছেলের খুনের বদলা নেবার? আমার আল্লাহ কি দেখে না? তুমি আমার ছেলেরে মারছো, আমিও যদি সেই একই পাপ করি, আমার-তুমার মধ্যে তফাত কী থাকলো? আমি কি বিচারক? বিচারক তো এক মালিক। ওই জিনিস তুমার হাতেই ভালো মানায়। তুমার তো দরদের লোক নাই, তাই তুমিই পারবা কারও দরদের জিনিস ছিনাইয়া নিতে। আমার হাত দূর্বল গো, জয়।ʼʼ
জয় নিজের বাম হাত দিয়ে রাবেয়ার হাতখানা ধরে থামিয়ে বলল, “আপনার মেয়ে কিন্তু আপনার মতোন ভাবে না। সি ওয়ান্ট জাসটিস! সে বিচার চায়, বিচার করতে চায়। আপনার মহান নীতি সে মানে না, এটা জেনে কি আপনার কষ্ট পাওয়া উচিত না?ʼʼ
-“তুমি ছুঁইও না তোমার হাত দিয়ে আমারে। তোমার হাতে অন্তিকের রক্ত লেগে আছে…ʼʼ
জয় একদৃষ্টে তাকিয়ে বলে, “আপনি আগে ছুঁয়েছেন আগে আমাকে।ʼʼ
-“এখন ছাড়ো। তুমি ছুঁইও না আর। ছেলের রক্তে মাখা হাত মা সহ্য করতে পারে না। তুমি ছাড়ো!ʼʼ
জয় জিজ্ঞেস করে, “সব মায়েরাই কি আপনার মতো হয়?ʼʼ
রাবেয়া আঁচল তুলে চোখের পানি মোছেন। জয় জিজ্ঞেস করে, “হু? সব মায়েদের জন্যই কি ছেলের রক্ত কষ্টদায়ক?ʼʼ
-“তুমি বুঝবা না মা’র দরদ।ʼʼ
জয় গম্ভীর হয়ে বলে, “বোঝার কথা না। আমার রক্ত দেখে কোনোদিন আমার মা কাঁদে নাই।ʼʼ
-“তোমার কি মায়ের দরকার আছে, জয়?যে মা’র দরদ বোঝে সে কোনো মা’র বুক খালি করে না।ʼʼ
জয় বাচ্চাদের মতো জিজ্ঞেস করে, “আমি যেভাবে অন্তিককে মেরেছি, আপনার অন্তূও যদি আমাকে ওভাবে মেরে ফেলে, আপনি আমার জন্য কাঁদবেন এভাবে?ʼʼ
রাবেয়া একটু থমকালেন। জয় রাবেয়ার সেই কম্পমান হাতখানা টেনে নিয়ে নিজের মাথায় রেখে জিজ্ঞেস করে, “কাঁদবেন আমার জন্য? আমার মা নেই। আমি অন্তিকের মতোন ওরম রক্তাক্ত হয়ে পথে-প্রান্তরে পরে থাকব ঠিকই, কিন্তু আপনার মতো করে কাদার কেউ নেই আমার। কাঁদবেন আপনি আমার জন্য?ʼʼ
রাবেয়া হাত সরাতে চান জয়ের মাথা থেকে, জয় সরাতে দিলো না। রাবেয়া জয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে কান্না ভেজা অথচ রুষ্ট গলায় বললেন, “সন্তানের খুনির জন্য কাঁদতে নেই।ʼʼ
জয় হাসে, “আপনি একদিন আপনাকে ‘মা’ ডাকতে বলেছিলেন আমাকে। ওসব কথার কথা ছিল তাই না? নিজের মা ছাড়া অন্যের সন্তানের জন্য কেউ কাঁদে না, হু? আমি আমার রক্ত দেখে বিলাপকারী সেই একমাত্র কাঁদুনির রক্তও ছুঁয়ে দেখেছি। আমার হাত শুধু আপনার ছেলের না, জয় আমির নামক ছেলের মায়ের রক্তেও ধোয়া, সে ছিল একমাত্র নারী, যে জয় আমিরের রক্ত দেখে হয়ত আপনার মতোই কাঁদতো। আপনি বুঝবেন না আমার হাতের কেরামতি!ʼʼ
রাবেয়া কিছুক্ষণ জয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে হু হু করে কেঁদে ফেললেন গা কাঁপিয়ে। জয় নিজের মাথার ওপর থেকে রাবেয়ার হাত ছেড়ে দিলেও রাবেয়া হাত নামিয়ে নিলেন না। জয় ডানহাত দিয়ে পকেট এক থেকে বান্ডিল টাকা বের করে আলগোছে রাবেয়ার কাঁথার তলে রাখে।
অপর হাতে রাবেয়ার মাথায় আলতো হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে, “শোনো হতভাগী, তোমার আল্লাহর কাছে দোয়া করলাম যাও, তোমার অন্তিকের একটা মেয়ে হবে, ঠিক তোমার মেয়ের মতো। কিন্তু তোমার বদদোয়া যেন না থামে আমার জন্য, খবরদার! আজ আসি। আবার দেখা নাও হতে পারে।ʼʼ
রাবেয়া চট করে চোখ তুলে তাকাতেই জয় হেসে উঠল হো হো করে, “তোমার মেয়ের হাতে যদি শহীদ হয়ে যাই!ʼʼ
চোখ মেরে গা ঝেরে উঠে দাঁড়ায় জয়। আর তাকায় না পেছনে। বেরিয়ে আসে দলবলসহ। আসার সময় মার্জিয়ার দিকে তাকিয়ে একবার হাসে, “ভাবী, আপনার মেয়ে হলে নাম রাইখেন, হুমায়িরা! একটা সতর্কবার্তা দেই আগেই। এই নামডা সুন্দর কিন্তু জীবন না। ওকে আবার বলবেন না যে ওর বাপের খুনী ওর নাম দিয়েছে। নাম বদলে ফেলবে আবার। আমার ইজ্জত যাবে।ʼʼ
জয় সকাল সাড়ে পাঁচটায় দিনাজপুর পৌঁছাল। বাড়িতে ঢুকে দরজায় দুম দুম করে দুটো লাত্থি মেরে চেঁচিয়ে ডাকল, “তরুউউ! তরুউউউউ! তর…ʼʼ
থেমে গেল জয় আমির। কেউ হেঁটে আসছে। জয়ের বুকের ভেতর আঁটকে এলো। দম বন্ধ হয়ে একটা ভয়াবহ ব্যথা শক্ত হয়ে উঠল সেখানে। যে পা হেঁটে আসছে, তা কি তরুর হতে পারে? তরু আসছে জয়ের জন্য দরজা খুলতে? জয় এই ভোর সকালে ভেতরে ঢুকে দেখবে নির্ঘুম লাল চোখ নিয়ে তরু দুই প্লেট খাবার বেড়ে নিয়ে বসেছিল রাতভর। এখন জয়কে বিরবির করে দু-চার কথা শোনাবে।
দরজা খুলেই অন্তূ জিজ্ঞেস করে, “কোথায় ছিলেন সারারাত? কোথায় গিয়েছিলেন?ʼʼ
জয়ের ঘোর ভাঙে। বুকের ব্যথাটা ছড়াচ্ছে এপাশ-ওপাশে। চোখ পরিষ্কার হচ্ছে। কণ্ঠস্বরটা তরুর মতো মিনমিনে, জড়ানো না। একটু তেজস্বী, স্পষ্ট! জয় একটা মাথা ঝারা মারে, মুহুর্তের মাঝে নিজে চিরচেনা রূপে হেসে ওঠে, “হোয়াট’স আপ, ঘরওয়ালি? আপনি কি চিন্তিত? সব ঠিকঠাক?ʼʼ
অন্তূ ঘরে হাঁটা ধরল। জয় হাইবুট জোড়া নিজের রুম পর্যন্ত আসতে আসতে খুলল। তারপর দুটো দু’দিকে ছুঁড়ে মারল। রুমে ঢোকার আগে পেছন ফিরে ডাইনিং টেবিলগুলো আবার একবার দেখে।
অন্তূ গিয়ে বারান্দায় দাঁড়ায়। শরীর ভালো লাগছে না। দূর্বলতায় হাত-পা পড়ে আসছে। গোসলে ঢুকলে জয়ের খুব গান আসে। গলা ছেড়ে গান না গাইলে গোসল শুদ্ধ হয় না। সে গলা ছেড়ে গান ধরল,
ভালোবেসে এইবার আয় কাছে তুই
সব ভুলে একবার আয় তোকে ছুঁই…
গোসল শেষে বেরিয়ে দেখল অন্তূ খাবার এনে ঢেকে রেখেছে। জয় লুঙ্গি বাঁধতে বাঁধতে আবদার করে, “খাইয়ে দাও।ʼʼ
-“আমি?ʼʼ
-“যাহ শালা! বিয়ে মোটে একটাই করছি। চাইলেও আরেক বউকে হুকুম করার ক্যাপাসিটি আপাতত নাই। তুমিই দাও!ʼʼ
অন্তূ জয়কে খাওয়াতে খাওয়াতে বলল, “লোক এসেছিল।ʼʼ
-“এমপির লোক?ʼʼ
অন্তূ লোকমা তুলে ধরল। তাদের দুজনের কথাবার্তা মুখে খুব বেশি বলার দরকার পড়েই না বলা চলে। অঙ্গভঙ্গি ও মুখভঙ্গিতেই আধো আধো কথায়ই সব জানা-বোঝা হয়ে যায়।
জয় সপ্রতিভ হয়ে উঠল, “কী বলছে? কিছু বলছে? উপরে আসছিল?ʼʼ
-“না। আমি নেমে গিয়েছিলাম?ʼʼ
জয়ের মুখ লাল হয়ে উঠল, “কী বাবদে? নিচে নামছিস ক্যান?ʼʼ
-“নইলে ওপরে উঠে আসতো। বাড়িতে আপনি বা মেয়র সাহেব কেউ নেই। চুপচাপ চলে যেতে আসেনি ওরা। পরে আমি এবং আপনার ছেলেরা কথা বলে বিদায় করেছি।ʼʼ
জয় আনমনে নাক শিউরে মেঝের দিকে চোখ কুঁচকে চেয়ে রইল। অন্তূ জিজ্ঞেস করে, “কুষ্টিয়া গেছিলেন আপনি?ʼʼ
জয় চট করে তাকায়, “অন্তূকে দেখে একটুক্ষণ। তারপর হেসে ফেলে, বাবার মুরিদ টুরিদ হইছো নাকি? দাওয়ায় বসে কাবার কুত্তা খেদাও!ʼʼ
অন্তূ হাসে, “সাধারণ জ্ঞান। আপনার মতো ধূর্ত লোকের ফোন দিয়ে, আপনারই ঘরের বারান্দায় কথা বললাম শুনলেন না আপনি?ʼʼ অন্তূ কথা বের করার জন্য বলে, “দোলন সাহেবের সাথে কথাও তো শুনেছেন! সেটা বলছেন না কেন?ʼʼ
জয় মাথা নাড়ল, “না তখন আসলেই ঘুমাইছি।ʼʼ
সেদিন খেয়ে-দেয়ে জয় দুপুর অবধি ঘুমিয়ে ঘটনাক্রমে প্রথমত জয় একবার অন্তূকে নিয়ে বড়ঘরে গেছিল। এবং মুরসালীনের কাছে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর পেয়েছিল! যা চমকপ্রদ, যা জয়ের চিন্তাধারায় বড় গভীরভাবে শেষ তৃতীয় আঘাতটা হেনেছিল।
তারপর পুরো বেলাটা সে মদ পান করল। সারারাত মরার মতো ঘুমালো। যেন সে পালাতে চাইছে, মুরসালীনের কথাগুলো থেকে, নিজের থেকে, অতীত থেকে। সেই কথাগুলোর দায় মেটাবার সাধ্যি তার নেই। তা বদলাবার পথ নেই। অতীতকে শুধু স্মৃতিতে ধরা যায়। তা বদলানোর জন্য যে সময়-যন্ত্রের তত্ত্ব মানুষ দিয়েছে তা কেবল একটি কল্পতত্ত্ব!
পরদিন সকালে রিমি বের হলো রুম থেকে। রান্নাঘরে অন্তূকে জিজ্ঞেস করে, “কী হয়েছে আপনার?ʼʼ
-“আমার? কী হয়েছে?ʼʼ
বলতে চান না যখন, “আমি আর জিজ্ঞেস করলাম না। আমার বাঁ চোখটা আজ কয়দিন খুব লাফাচ্ছে, লোকে বলে এটা অশুভ লক্ষণ। আপনি বিশ্বাস করেন?ʼʼ
অন্তূ হাসল, “করতে ইচ্ছে করছে এখন আপাতত। তবে আমার মনেহয় বেশি কাঁদার কারণে এমন হচ্ছে।ʼʼ
জয় দশটার দিকে ঘুম থেকে জাগলে অন্তূ বলল,
“আপনার আজ এমপির কাছে যাবার কথা।
-“তুমি এত ইন্টারেস্ট নিচ্ছ কেন?ʼʼ
অন্তূ কেমন উদাসীন হয়ে পড়ল, “কারণ কামরুলের মার্ডার আমার হাতেই হয়েছে।ʼʼ
কথাটা বলে নিজের হাতের তালুদুটো দেখে অন্তূ তাকিয়ে। জয় বলল, “কে বলেছে? দোলন স্যার?ʼʼ
-“আমাকে ধরিয়ে দিচ্ছেন না কেন?ʼʼ
জয় হেসে উঠল। ঘাঁড় এপাশ-ওপাশ মুচড়ে বলল, “আমার হাতে এবার একটা এমপি খুন করাতে চাও?ʼʼ
-“আপনি এর আগে কাকে খুন করেছেন?ʼʼ
জয় গামছাটা গলায় ঝুলিয়ে গোসলে ঢুকে পড়ল।
অন্তূ বসে রইল ওভাবেই। সে শুধু এটুকু বুঝল জয়য় আমিরের কাছে তার কিছু ঋণ জমে যাচ্ছে। লোকটা নিজের ইচ্ছাকৃতাভাবে নিজেকে তার কাছে পাওনাদার করছে নাকি আসলেই সে অন্তূকে বাঁচাতে চায়, ভেবে পেল না!
জয় বের হলে অন্তূ বলল, “আপনাদের আমির নিবাস কি বিশাল বড়?ʼʼ
জয় ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়, “তুমি যাবে?ʼʼ
-“আপনি তো এখন এমপির কাছে যাবেন!ʼʼ
জয় মুচকি হাসে, “জয় আমিরের মন বড়, সিস্টার! কোনোদিন একবার তা জিতে কিছু চেয়ে দেখতে…ʼʼ
অন্তূ মনে মনে বলল, ‘এটাই তো ভয়, জয় আমির! তার দিল জিতে কেউ তার রুহের ওপর অবধি কব্জা পেয়ে যায়, তারপর আপনাকে দিয়ে সব করানো যায়, সব! এত বড় কাঙাল আপনি! অথচ আমার কাছে এই শেষক্ষণে কিছুই নেই আপনাকে দেবার মতোন শুধু যন্ত্রণা ছাড়া।ʼ
চলবে..
[কথা দিয়েছিলাম। দিলাম। গুরুত্বপূর্ণ অংশটুকু বাদ দিলাম। এটুকুতে আজ মানিয়ে নিন। ]