#আমি_শুধুই_তোমার🌺
#পর্বঃ০৪
#Arshi_Ayat
ওরা সবাই ক্যান্টিন থেকে উঠে ক্লাস রুমের দিকে যায়।সিড়ি দিয়ে ওঠার সময় ওদের ডিপার্টমেন্টের একটা ছেলে ইনশিরার সামনে এসে বলে
“ইনশিরা একটু সময় হবে?তোমার সাথে একটু কথা আছে।”
“হ্যা বলো।”
“এখানে না একটা কফি শপে বলি।যদি তুমি অনুমতি দাও।”
ইনশিরা কিছু বলার আগেই ইনান বলে উঠলো
“কেনো এখানে বললে কি সমস্যা?”
ছেলেটা ইনানের দিকে তাকিয়ে বলল
“তোমাদের সামনে বলা যাবে না এটাই সমস্যা।”
ইনান রেগে কিছু বলতে যাওয়ার আগেই ইনশিরা ওকে থামিয়ে দেয় তারপর ছেলেটাকে বলে
“আচ্ছা রাফিদ কালকে দেখা করি আমরা।আজকে সময় দিতে পারবো না ক্লাসের পর আমার সময় নেই।”
“আচ্ছা কোথায় কখন দেখা করবে বলে দিও।”
“আচ্ছা।”
তারপর রাফিদ সেখান থেকে চলে যায়।আর ওরাও ক্লাসে চলে যায়।ক্লাসে গিয়ে ইনান বলে
“গাইস আমি একটু আসছি।লাইব্রেরিতে কাজ আছে।তোর থাক।”
সবাই মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়।আর ইনান চলে যায়।আদ্রি আর আয়াশ জানে ইনান কেনো লাইব্রেরিতে যাচ্ছে।কিন্তু ইনশিরা জানে না।ইনশিরা কালকে না আসায় আদ্রির থেকে নোট তুলতে ব্যাস্ত আর আয়াশ তো একটা ফাকিবাজ। জীবনেও নোট করবে না।পরীক্ষার সময় হলে আদ্রির নোট নিয়ে পড়বে।এটা নিয়ে আদ্রির সাথে সেই লেভেলের ঝগড়া হয়।ইনানেরও একই অবস্থা।যাইহোক ইনশিরা নোট তুলছে। আয়াশ আর আদ্রি বসে বসে কথা বলছে।এক পর্যায়ে আয়াশ বলল
“রাফিদের কপালে দুঃখ আছে।ইনানের সামনেই কেনো বলতে হলো এগুলো।”
“হুম বলদ হলে এমনই হয়।এখন মজা বুঝো।”
এদিকে লাইব্রেরিতে কেউ নেই শুধু ইনান আর রাফিদ।ইনান হকি স্টিক নিয়ে রাফিদের চারদিকে ঘুরছে আর বলছে
“বল ইনশিরাকে কি বলবি?”
“যাই বলি সেটা তোমাকে বলবো কেনো?”
“অবশ্যই আমাকে বলবি।তোর সাহস কি করে হয় ইনশিরাকে কফি শপে ডাকার?”
“এখানে সাহসের কি হলো?আমি ইনশিরাকে ভালোবাসি।”
ইনান রাফিদের কথায় রেগে স্টিক টা দিয়ে ইচ্ছামতো মারা আরম্ভ করে।হঠাৎ দরজায় মনে হলো কেউ নক করছে। ইনান খুলতেই আয়াশ ঢুকলো তারপর ইনানকে বলল
“পাগল হইছিস?এভাবে কেউ মারে?”
ইনান রাগে বলল
“ও নাকি ইনশু রে ভালোবাসে।ওর ভালোবাসা ছুটাচ্ছি।”
আয়াশ ওর হাত থেকে স্টিক টা নিয়ে টেবিলে রেখে রাফিদকে বলল
“ভাই অনেকতো মার খেলে। এখনো কি ইনশিরার সাথে দেখা করার শখ আছ?যদি থেকেও থাকে তাহলে ভুলে যাও।”
রাফিদ বেচারা কিছু বলতেও পারছে না মার খেয়ে।আয়াশ আর কিছু না বলে ইনানকে নিয়ে ক্লাসে চলে আসে।তারপর নিজেদের জায়গায় বসে পড়ে।আদ্রি আয়াশের কানে কানে বলল
“কি রে বেশি মারছে নাকি?”
“না বেশি মারতে পারে নাই।আমি গিয়ে ধরছি আর রাফিদকে বুঝাইছি।তারপর ইনানকে ধরে নিয়ে আসছি।”
“ভালো করছিস নাহলে ওর অবস্থা খারাপ করে ফেলতো।”
“হুম।সেদিনতো তিয়াসেরও অবস্থা খারাপ করে ফেলছিলো আমি ধরছি নাহলে খুব খারাপ হয়ে যেতো।তিয়াসরে আরো আগেই শায়েস্তা করতো কিন্তু ইনশিরা ভালোবাসে তাই আর করে নাই কিন্তু চোখে চোখে রাখতো।”
“হুম। এই ইনান টা এমন কেনো নিজেও বলবে না কাউকে বলতেও দিবে না।”
“ও ভার্সিটি ওঠার পর এই চার বছর ধরে ইনশিরাকে ভালোবাসে কিন্তু ফ্রেন্ডশিপ নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে কখনো বলে নি।কিন্তু সবসময় ওর খেয়াল রাখছে।”
আদ্রি কিছু বলার আগেই ক্লাসে মিরাজ স্যার আসলো।আজকে প্রথমে তার ক্লাস।স্যারকে ক্লাসে ঢুকতে দেখে চারজনই মুখ চাওয়া চাওয়ি করলো। মুখে একটা শয়তানি হাসি ফুটিয়ে চারজনই বসে পড়লো।ক্লাস শেষ করার পর আয়াশের ইশারায় তিনজন বের হয়ে গেলো।তারপর ভার্সিটির পিছনে এসে আয়াশ পকেট থেকে চাবি বের করলো লেকের পাড়ের দরজার তালা খোলার জন্য।আদ্রি আয়াশের হাতে চাবি দেখে বলল
“কি রে তুই চাবি পেলি কই?”
আয়াশ একটু মুড নিয়ে বলল
“আয়াশ আহমেদের কাছে এটা কিছুই না।”
ইনান আয়াশের কান মলে বলল
“ভাব না দেখাইয়া বল কই পাইছিস?”
আয়াশ বত্রিশ দাত বের করে হাসতে হাসতে বলল
“দারোয়ান মামা রে এক প্যাকেট বেনসন সিগারেট দিছি ব্যাস কাজ হয়ে গেছে।”
ইনশিরা ওর মাথা গাট্টা মেরে বলল
“ভালোই ঘুষ দিয়া চাবি আনছিস।এবার তাড়াতাড়ি খোল।গিয়ে দেখি স্পেশাল গিফট টা।”
আয়াশ গেট খুলে ঢুকে গেলো।পিছনে ওরাও আছে।ভার্সিটির এই সাইড টায় কেউ আসে না কারণ এখানে কোন একসময় নাকি কয়েকজন ছাত্র মারা গেছে তাই তখন থেকে এটাতে প্রাচীর তুলে তালা দেওয়া হয়েছে।তবে এটার ভিতরটা খুব সুন্দর। জায়গাটা অনেক বড়। সামনে একটা লেক আর চারপাশে অনেক গাছপালা আর ঘাসে ভরা সব সময়েই এখানে একটা মিষ্টি বাতাস বয়ে চলে।এখানে এলে মনটা অদ্ভুত ভাবে ভালো হয়ে যায়।আয়াশ মাঝে মাঝে এখানে আসে কিন্তু ওরা তিনজন আজকেই এলো।ইনশিরা ভিতরে ঢুকেই বলল
“এই ভার্সিটিতে যে এমন একটা জায়গা আছে এটাই জানতাম না।অনেক সুন্দর জায়গাটা।”
আদ্রি খুশীতে বলল
“আমার এখানে শুয়ে থাকতে ইচ্ছা করছে।”
আয়াশ আদ্রি খোঁচা দিয়ে বলল
“তুই শুয়ে থাক আমরা গিয়ে দেখি মিরাজ স্যার কি করছে।”
আয়াশের কথা শুনে ইনান, ইনশিরা দুজনেই হাসলো আর আদ্রি গট গট করে সামনে হাটছে গাল ফুলিয়ে।ওরাও পিছনে আসছে।আয়াশ দৌড়ে গিয়ে আদ্রির হাত ধরে গাছের আড়ালে চলে গেলো।ওদের দেখাদেখি ইনান আর ইনশিরাও পাশের একটা গাছের পিছনে লুকালো।আয়াশ ইশারায় ওদের সবাইকে সামনে তাকাতে বলল।সবাই সামনে তাকালো।মিরাজ স্যার আর শিউলী ম্যাডাম বসে আছে লেকের পাড়ে।চারজনের মুখেই শয়তানি হাসি।আয়াশ ফোনের ক্যামেরা অন করে রাখছে।তারপর সবাই আস্তে আস্তে সামনে এগুচ্ছে অনেকটা কাছে আসতেই সবাই শুনতে পেলো মিরাজ স্যার শিউলি ম্যাডামকে গান শোনাচ্ছে।সুর করে গাইছে
“তুমি যে আমার কবিতা আমারও বাশীর রাগিণী।”
স্যার এর পর আর গাইতে পারলো না ইনান পিছন থেকে বলে উঠলো
“আমারও স্বপন আধো জাগরণ।”
বাকিটা আয়াশ গাইলো
“চিরদিনই তুমি যে আমার।”
মিরাজ স্যার আর শিউলি ম্যাডাম পিছনে তাকিয়ে বিষ্ফোরিত চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে আর ওরা চারজনতো হেসে কুটি কুটি। মিরাজ স্যার বাজখাই গলায় ধমক দিয়ে বললেন
“তোমারা এখানে কেনো?”
“স্যার আপনার সুমধুর কন্ঠের গান আমার হৃদয় উথাল পাথাল করে দিচ্ছে তাই আর থাকতে পারি নি দৌড়ে চলে আসছি।”(আয়াশ)
আদ্রি হাসতে হাসতে বলল
“স্যার আরেকটু গেয়ে শোনান আয়াশের বুকে উথাল পাথাল হচ্ছে।”
ইনশিরা বলল
“আমার এখন ঢুমকা দিতে ইচ্ছা করছে।আহা! আহা!কি গান।”
আয়াশ ইনশিরাকে খোচা দিয়ে বলল
“তুই এই গানে ঢুমকা দিবি কেমনে।এটাতো রোমান্টিক গান।এইগানে তো…..থাক আর বললাম না লজ্জা লাগে।”
ইনান বলল
“আমিতো স্যারের জন্য আসি নি ম্যাডমের জন্য এসেছি।ওহ!!লজ্জা লাগছে বলতে।”
ইনানের কথায় আরেকদফা হাসির রোল পড়লো।শিউলী ম্যাডাম রেগে বলল
“তোমারা ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেন্ট না।দাড়াও তোমাদের আমার সাবজেক্টে পাস করাবো না।”
ম্যাডামের কথা শুনে আরো একদফা হাসলো চারজনে তারপর ইনশিরা বলল
“আচ্ছা ম্যাডাম পাস করানো লাগবে না।”
মিরাজ স্যার থমথমে মুখে বলল
“তোমাদের আমি দেখে নিচ্ছি।”
এটা বলেই শিউলী ম্যাডাম আর মিরাজ স্যার হাটা শুরু করলো কিন্তু বেশী দূর যেতে পারলো না বিষ্মিত চেহারায় পিছন ফিরে তাকালো।আর ওরা চারজন আবার হাসতে হাসতে শেষ কারণ আয়াশ ওই ভিডিওটা হাই ভলিউম দিয়ে চালু করেছিলো।এবার স্যার ম্যাডাম দুজনের মুখই শুকিয়ে গেছে। স্যার আয়াশকে বলল
“এই ভিডিওটা ডিলিট করে দাও তোমাদের সব পরীক্ষায় পাশ করিয়ে দিবো।”
আয়াশ শয়তানি হাসি দিয়ে বলল
“ঠিকাছে স্যার ডিলিট করে দিবো কিন্তু আমরা গ্রেজুয়েশনে কম্পলিট করার পর।ততদিন এটা আমার কাছেই থাক।আমি মাঝে মাঝে শিউলি ম্যাডামকে গানটা শুনিয়ে দেবো।”
শিউলী ম্যাডাম রেগে বলল
“ভালো হবে না কিন্তু। ভালোই ভালোই ডিলিট করে দাও।”
ইনান এবার কলার খাড়া করে চুলগুলো হাত দিয়ে একটু নেড়ে ভাব নিয়ে বলল
“ভালো না হলে নাই।গাইস ফলো মি।”
এটা বলেই ও হাটা শুরু করলো গেটের দিকে আর ওর পিছনে পিছনে ওরা ও আসছে সবগুলো হাসতে হাসতে শেষ। ওইখান থেকে বের হবার পর আয়াশ বলল
“দোস্ত কি স্পেশাল গিফট দিছে এটাই তো দেখলাম না।”
আদ্রি ওর চুল টেনে বলল
“যা আবার গিয়ে জিগ্যেস করে আয় জুতার বাড়ি একটাও নিচে পড়বে না।”
আয়াশ বলল
“থাক এতো সুন্দর গাল জুতার বাড়ি খেয়ে নষ্ট করার দরকার নাই।যাইহোক শোন এখন তোরা বাসায় যাবি সবাই এবং ব্যাগপ্যাক করবি।আমরা সবাই সন্ধ্যায় কুমিল্লা রওনা হবো।আমার কাজিনের বিয়ে।এক সপ্তাহ ওইখানে থাকবো। চারদিনে তোদের আমাদের গ্রামটা ঘুরবো তারপর বাকি তিনদিন বিয়েতে মজা করবো।আগেই বলে রাখলাম তোরা কেউ না করতে পারবি না।”
ইনান বলল
“ডান। আমি গিয়েই ব্যাগপ্যাক করবো।”
আদ্রি খুশী হয়ে বলল
“আমারও সমস্যা নাই।”
ইনশিরা চিন্তিত মুখে বলল
“কিন্তু আমি বোধহয় যেতে পারবো না।”
ইনান ভ্রু কুচকে বলল
“কেনো?”
“আম্মু ভাবছে আমি অসুস্থ তাই।”
আয়াশ বলল
“আচ্ছা আমি আম্মুকে দিয়ে তোর আম্মুর সাথে কথা বলিয়ে দেবো তাহলেই হবে।”
ইনশিরা খুশী হয়ে বলল
“তাহলেও আর চিন্তা কি!!তাড়াতাড়ি বাসায় চল।”
সবাই বাসায় চলে গেলো।
সন্ধ্যার সময় ইনান,আদ্রি,ইনশিরা সবাই ওর বাসায় চলে আসছে।এখনি রওনা হবে।আয়াশের বাবা মা একটা গাড়ি করে যাবে আর ওরা চারজন একটায়।সবাই গাড়িতে উঠে বসলো।আয়াশ গাড়ি স্টার্ট দিলো হঠাৎ ইনশিরার ফোনে আন নোন নাম্বার থেকে কল এলো।ও রিসিভ করে হ্যালো বলতেই। ওই পাশ থেকে বলে উঠলো
“ইনশিরা আমি রাফিদ।”
“ওহ!!রাফিদ বলো।”
ইনশিরার মুখে রাফিদের কথা শুনে তিনজনই ভয়ার্ত চেহারায় ইনশিরার দিকে তাকিয়ে আছে সেই সাথে রাফিদের উপর প্রচুর রাগও হচ্ছে।
কি হবে এবার?রাফিদ কি সব বলে দেবে?
চলবে…..🍂
(মিশন সাকসেসফুল😁😜।ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)