#আমি_শুধুই_তোমার🌺
#পর্বঃ০৬
#Arshi_Ayat
আয়াশ আর ইনান আয়াশের রুমে লুঙ্গি পড়তে গেলো।ইনশিরা আর আদ্রি ওদের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।রুমে এসেই ইনান বলল
“দোস্ত আমার ভয় করতাছে যদি হাটতে হাটতে খুইল্লা যায়?”
“আরে খুলবো না শক্ত করে বাধলেই হবে।”
“খুল্লে কিন্তু তোরে আমি জবাই দিমু।”
“আরে আমরা কি সেফটি ছাড়া যামু নাকি?নিচে থ্রি কোয়াটার পরে নে।”
“ও তাইলে থ্রি কোয়াটার পরলেইতো হয়।”
“হুম তাও ঠিক কিন্তু এই প্রথম কুমিল্লায় আসছিস একটু দেশী ট্রেন্ড ফলো কর।”
“শালা তোর দেশী ট্রেন্ডের চক্করে যদি মান সম্মানের ফালুদা হয় তাইলে তোরে কুত্তার দৌড়ানি খাওয়ামু।”
“আরে কিচ্ছু হইবো না।তুই আগে পরে নে।”
“আচ্ছা বাট তুই লুঙ্গি পাইলি কই?”
“নানাভাই এর লুঙ্গি এগুলা।”
“কিহ!!!”
আয়াশ বত্রিশ দাত বের করে হাসতে হাসতে বলল
“হুম।নানি দিয়ে গেছে।”
“হায়রে শেষ পর্যন্ত লুঙ্গি পড়তে হইলো।এই মুখ আমি কারে দেখামু।”
আয়াশ মুখ বাকা করে বলল
“যেমনে কইতাছোছ মনে হইতাছে তোর ইজ্জত লইয়া কেউ টানাটানি করতাছে।বেশী ভয় করলে সেফটিপিন লাগা।”
“সেফটিপিন পামু কই এখন?”
“ইনশু অথবা আদ্রির কাছে থাকতে পারে।ওদের থেকে নে।”
মোটামুটি লুঙ্গি পরা শেষ করে আয়াশ আর ইনান বাইরে এলো।ওদের দুইজনকে লুঙ্গি পরা অবস্থায় দেখে ইনশিরা আর আদ্রি দুইজন একে অপরের দিকে একবার চাওয়া চাওয়ি করে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার উপক্রম। ইনান রেগে আয়াশের দিকে তাকাতেই আয়াশের বিলাইর মতো মুখ করে তাকালো।আদ্রি হাসতে হাসতে বলল
“দোস্ত তোদের ফাটাফাটি লাগছে।এক্কেবারে ইয়ো ইয়ো হানি সিং।”
ইনশিরার খুব কষ্টে হাসি থামিয়ে বলল
“না আদ্রি এখনো হানি সিং এর মতো হয় নি।দুইটা কালা চশমা লাগায় দে চোখে এক্কেবারে ঝাক্কাস লাগবো।”
আদ্রি আয়াশ আর ইনানকে থ্রেট দিয়ে বলল
“এবার চান্দুরা আমার সাথে বেশি বকবক করবা তো লুঙ্গি ধইরা এমন টান দিমু বহনের টাইম পাইবা না।”
এতক্ষণ দুইজন চুপচাপ ওদের কথা শুনছিলো কিন্তু আদ্রির শেষের কথা শুনে আয়াশ আর ইনান দুজনেই হাসা শুরু করলো।আয়াশ হাসতে হাসতেই লুঙ্গি হাটুর উপর উঠিয়ে ভাব নিয়ে বলল
“আমরা সেফটি নিয়েই আসছি।কারণ তোদের মতো শাকচুন্নি থাকতে কোনো ভরসা নাই যেকোনো সময় অঘটন ঘটিয়ে ফেলতে পারিস।”
ইনান চুটকি বাজিয়ে বলল
“আমরা কাচা মাছ খাই না বুঝছেন সো নো টেনশন।”
আয়াশ আদ্রি আর ইনশিরাকে উদ্দেশ্য করে বলল
“তোদের কাছে সেফটিপিন আছে?”
আদ্রি অবাক হয়ে বলল
“সেফটিপিন দিয়ে কি করবি?”
“লুঙ্গিতে লাগামু যাতে খুলে না যায়।”
আয়াশের কথা শুনে আদ্রি আর ইনশিরা আরেকদফা হাসলো তারপর বলল
“আগে শুনতাম শাড়িতে সেফটিপিন লাগায়।এই প্রথম তোরা লুঙ্গিতে সেফটিপিন লাগাবি।ভাবা যায় কি বিনোদন। ”
আদ্রি ওদের সেফটিপিন এনে দিলো।বেচারারা কোনোমতে লুঙ্গি সেট করে রওনা দিলো পিছনে আদ্রি আর ইনশিরাও আছে।খালের পাড়ে এসে আয়াশ বলল
“ইনান তুই ওই দিকে থেকে বাইতে থাক আমি এই দিকে থাকি। ইনশু আর আদ্রি তোরা নৌকার মাঝে বসে পড়।”
আদ্রি ভয়ে ভয়ে বলল
“যদি পড়ে যাই?আমিতো সাতার পারি না।”
“আরে পড়বি না। ভালোমতো বস।”
ওরা নৌকায় উঠে বসলো।নৌকা চালানো আরম্ভ করলো।ওই পাড়ে পৌঁছানোর পর সবাই নৌকা থেকে নামলো।তারপর একটু হেটে আম গাছটার সামনে আসলো।মোটামুটি ১০/১৫ টার মতো আম দেখা যাচ্ছে হারিকেনের আলোতে।আম গুলো একটা বস্তায় নিয়ে ওরা আবার খালের দিকে হাটা শুরু করলো।তারপর আবার নৌকা বেয়ে মাঝামাঝি আসার পর নৌকা কাপাকাপি আরম্ভ করে দিলো।আদ্রি ভয়ে ঢোক গিলে বলল
“এবার কি হবে?”
“কিছুই হবে না। আমের বস্তাটা ভালো করে ধরে বসে থাক তোরা।”
“আয়াশ তাড়াতাড়ি চালা নৌকা ডুবলে কিন্তু শেষ।(ইনশিরা)
” তোরা সাবধানে বসে থাক আমরা চালাচ্ছি।”
মোটামুটি অনেক কষ্টে এই পাড়ে এসে থামলো নৌকা।চারজনই নেমে পড়লো।তারপর বাড়িতে চলে গেলো।আদ্রি আর ইনশিরা ছাদে গেলো।ইনান আর আয়াশ লুঙ্গি চেঞ্জ করে একজন আমের বস্তা আরেকজন বটি নিয়ে এলো।তারপর আয়াশ ইনশিরা আর আদ্রিকে বলল
“আমরা এতো কষ্ট করে আম আনছি এখন তোরা কেটে খাওয়া আমাদের। ”
আদ্রি মুখ ভেংচি দিয়ে বলল
“আমরা মনে হয় যাই নাই।”
“গেছিস কিন্তু কোনো কাজ করেছিস।সবতো আমরাই করলাম।নৌকা বেয়ে তো আমরাই নিয়ে গেলাম।” (ইনান)
“এইতো খোটা দেওয়া শুরু হয়ে গেছে। খেলাম না তোদের আম।” (ইনশিরা)
“না খেলেই ভালো।শান্তিমতো খাওয়া যাবে।” (আয়াশ)
আদ্রি রেগে বলল
“আচ্ছা দাড়া আমি কাটছি।”
এই বলেই কাটতে লাগলো।আদ্রি হঠাৎ আম্মু বলে চিল্লিয়ে উঠলো।আয়াশ দ্রুত ওর কাছে গিয়ে বলল
“কি হইছে রে?”
“হাত কেটে গেছে।”
আয়াশ আর কিছু না ভেবেই আদ্রির আঙ্গুল নিজের মুখে নিলো।তারপর আঙ্গুলটা মুখ থেকে বের করে বলল
“একটু দেখে শুনে কাটবি তো নাকি?নিচে চল এখনি এন্টিসেপটিক লাগাতে হবে।”
আদ্রি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল
“একটুইতো সমস্যা হবে না।”
“মাইর চিনোছ? তাড়াতাড়ি চল।”
আয়াশের জোরাজুরির কাছে হার মেনে অবশেষে ওরা নিচে গেলে।এতক্ষণ ধরে পুরো কাহিনীটা ইনান আর ইনশিরা মনোযোগ সহকারে দেখলো যেনো মনে হচ্ছে বাংলা সিনেমায় রোমান্টিক দৃশ্য দেখছে।ওরা নিচে নামার পর ইনশিরা ইনান কে চিমটি দিয়ে বলল
“দেখলি কি ভালোবাসা। আহা! আহা!আমার মনটাই ভরে গেলো।কিন্তু এই আদ্রির বাচ্চা আয়াশ টাকে বোঝেই না।আর আয়াশও কি কিচ্ছু বলে না আদ্রি কে।ভালোবাসি বললেই তো হয়।”
ইনশিরার কথা শুনে ইনান ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল
“হুম।”
কিন্তু মনে মনে বলল আদ্রির কথা কি আর বলবি তুই নিজেইতো আমাকে বুঝিস না।তোকে এতো ভালোবাসি কিন্তু তুই তো কিচ্ছু বুঝিস না।আদ্রি আর তুই দুইটাই মাথা মোটা।আমার আর আয়াশ দুইজনের কপালই পুড়লো। তোদের মতো দুইটা মাথামোটাকে ভালোবেসে।
এন্টিসেপটিক লাগিয়ে আদ্রি আর আয়াশ দুইজনই আবার উপরে এলো।তারপর আয়াশ,ইনশিরা আর ইনান মিলে আম কেটেছে।মোটামোটি সবার আম খাওয়া শেষ। আর কারেন্ট ও চলে এসেছে।এখন রাত তিনটা বাজে যে যার যার ঘরে চলে গেলো।এবং বিছানায় শুতে ই সবাই ঘুমিয়ে গেলো।
অনেক রাত অবধি জেগে থাকার কারণে কেউই সকাল সকাল উঠতে পারে নি।সবার উঠতেই অনেক দেরি হয়েছে।প্রথমে আয়াশ উঠে ওদের ডাক দিয়ে উঠাইছে।তারপর ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে চারজনই বের হয়েছে গ্রাম ঘুরবে বলে।বাড়ি থেকে বের হয়েই আয়াশ বলল
“এই গ্রামটার নাম হলো পাচপুকুরিয়া আর এটা লাকসামের অন্তর্ভুক্ত শুধু পাচপুকুরিয়া না আরো অনেকগুলো গ্রাম আছে।এখান থেকে একটু এগুলেই বান্দুয়াইন তারপর হাতিমুড়ি,গোয়ালিয়ারা,তাহেরপুর,আরো অনেকগুলো আছে কিন্তু আপাতত আমার মনে নাই।আমি এস এস সি কুমিল্লা থেকেই দিয়েছি তারপর ঢাকা শিফট হই।আর সব চেয়ে মজার বেপার হলো আমার নানু কিন্তু কুমিল্লার না তিনি নোয়াখালীর।”
“ও এই জন্যইতো বলি তুই এতো কিছু পারিস কেমনে।(আদ্রি)
” দোস্ত এই জায়গাটা অনেক সুন্দর। (ইনশিরা)
“আয়াশ তোর দাদু বাড়ি কই রে?”(ইনান)
“দশমিনিট হাটলেই দাদু বাড়ি।”
“কি বলিস!!এতো কাছে?”(ইনান)
“হুম কিন্তু ওইখানে কেউ থাকে না পুরা ভুতুড়ে টাইপ। দাদা,দাদি মারা যাওয়ার পর ওইখানে আর কেউ থাকে না চাচা চাচি রাও চলে গেছে।এখন বাড়িটা তালা দেওয়া।”
আয়াশের মুড ঠিক করতে আদ্রি বলল
“এমনে ক্যাবলার মতো হাটতে ভাল্লাগতাছে না।কিছু একটা করতে পারলে ভালো হইতো।”
আয়াশ এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল
“তোরা একটা এডভেঞ্চার করতে চাস?”
“কেমনে?”(ইনান)
” আগে বলল করবি কি না?”
সবাই সমস্বরে বলল
“ওকে।”
তারপর আয়াশ বলল
“তোরা সব সামনে ঘুরে তাকা আমি না বলা পর্যন্ত পিছনে তাকাবি না।”
সবাই সম্মতি দিলো।দুইমিনিট পর আয়াশ ওদের পাশে হাপাতে হাপাতে এসে বলল
“সবাই দৌড়া।”
এই বলে একমিনিট ও দাড়ালো আয়াশ দৌড়ানো শুরু করলো।কিন্তু ওরা তিনজন কিছুই বুঝতে পারছে না।তিনজনই পিছনে তাকিয়ে দেখলো দুইটা পাগল ওদের দিকে তেড়ে আসছে বাশ হাতে নিয়ে।বিপদ টের পেয়ে তিনজনই দৌড়।আয়াশ আগে আগে দৌড়াচ্ছে। ওরা তিনজন পিছনে। আজকে পাগল দুইটা ধরতে পারলে একবারে চিকেন ফ্রাই করে ফেলবে।সবাই দৌড়াচ্ছে। প্রথমে আয়াশ তারপর ইনান তারপর আদ্রি আর ইনশিরা ওদের থেকে একটু দূরে দৌড়াচ্ছে পাগল দুইটা….
চলবে….🍂
(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।কুমিল্লার ভাষাটা সঠিকভাবে লিখতে পারি নি তাই সবার কাছে আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। আমি কুমিল্লার হলেও ওইখানের ভাষাটা পারি না।তাই সরি এগেইন।)