অন্তর্নিহিত কালকূট লেখনীতে: অনিমা কোতয়াল ৯২.

0
61

অন্তর্নিহিত কালকূট
লেখনীতে: অনিমা কোতয়াল

৯২.

বিল্ডিংটা পুরোনো, স্যাঁতস্যাঁতে। বেশিরভাগ দেয়ালের রঙ উঠে গেছে। দিনের বেলায়ও বাইরের আলো এসে পৌঁছয়না ঘরটাতে। হলদেটে বাল্বের আলোটা খুবই তীক্ষ্ণ। ঘরজুড়ে তামাটের মৃদু গন্ধ। এই অস্বস্তিকর ঘরটাতেও বেশ স্বস্তি নিয়ে বসে আছে হুসাইন আলী। নিজের আরামদায়ক চেয়ারে পায়ে পা তুলে বসে আছে সে। জ্বলন্ত সিগারেটের মাথাটা টেবিলের অপরসাইডে বসে থাকা প্রিয়তার দিকে স্থির। মেরুন রঙের একটা ফুলহাতা গেঞ্জি আর বাদামি প্যান্ট পড়ে আছে প্রিয়তা। চুলগুলো ওপরে ঝুঁটি করা। হলদে ফর্সা রঙটা জ্বলজ্বল করছে। তবে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করছে ঐ দুটো চোখ। প্রিয়তার পাশেই তনুজা। অনুগত সহকারীর মতো দুহাত পেছনে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পরনে কালো শার্ট, প্যান্ট। টেবিলটা মোটামুটি ফাঁকাই। কিছু নেশাদ্রব্য, প্রিয়তার সামনে একটা কফির মগ, আর দুটো ফাইলই রাখা আছে সেখানে। প্রিয়তাও তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছে হুসাইন আলীকে। আজও পাঞ্জাবি আর টুপি পড়েছে। পান চিবুনো রাঙা ঠোঁটে ধূর্ত হাসি। চোখে অদ্ভুত ব্যঙ্গ। সদ্য জ্বালানো সিগারেটটাতে টান দেয়নি এখনো।

নীরবতা ভেঙ্গে দিয়ে হুসাইন আলী বলল, ‘মীর্জা সাহেব যখন জানালো একজন আসবে কথা বলতে। আমিতো ভেবেছি দলের কোন শক্তপোক্ত ছেলে সদস্য কিংবা তার নিজের ছেলে আসবে। এতো দেখছি মোহিনী!’

মৃদু শব্দে হেসে উঠল হুসাইন আলীর পেছনে দাঁড়ানো ছেলেটা। প্রিয়তাকে দেখার পর থেকেই বেশ কৌতুক বোধ করছিল ও। এতো গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় না-কি এসেছে এক মেয়েছেলে! ব্যপারটা হাস্যকর বৈকি। উপস্থিত বাকিদের ঠোঁটেও মুচকি মুচকি হাসি। তনুজার গলা শুকিয়ে এলো। কাকে নিয়ে ব্যঙ্গ করছে বিন্দুমাত্র ধারণা নেই এদের। থাকলে ব্যঙ্গ করার আগে হাজারবার ভেবে দেখতো।
এদের ব্যঙ্গকে বিন্দুমাত্র গায়ে মাখল না প্রিয়তা। অদ্ভুত এক হাসি নিয়ে তাকাল হুসাইন আলীর দিকে। হালকা ঝুঁকে বলল, ‘কথা বলার জন্যে ভোকাল কর্ড লাগে হুসাইন সাহেব। পে-নিস লাগে না! ওটাতো অন্যকাজে লাগে। তাইনা? তবে মোহিনী বলতেই পারেন। সে গুন আছে আমার।’

থতমত খেয়ে গেল হুসাইন আলী। পেছনের ছেলেটার হাসিও গায়েব হয়ে গেল। অপ্রস্তুত হল বাকিরাও। একটা মেয়ের মুখে এমন লাগামছাড়া কথা আশা করেনি তারা। সোজা হয়ে বসে প্রিয়তা বলল, ‘তো কাজের কথায় আসি?’

মৃদু গলা ঝেড়ে নিজেকে সামালানোর চেষ্টা করল হুসাইন আলী। কন্ঠে নিজ গাম্ভীর্য বজায় রেখে বলল, ‘বলো, হঠাৎ কী কারণে তোমাকে পাঠালো শওকত মীর্জা।’

‘ দুবছর আগে সোলার সিস্টেমের সঙ্গে একটা চুক্তি হয়েছে আপনার। তবে মাস দুয়েক হলো চুক্তি ভঙ্গ করেছে তারা। সময়মতো মাল পৌঁছয়নি আপনার কাছে। ইভেন তার আগে দু-তিনবার ডিফেক্ট ওয়ালা মালও এসেছিল আপনার কাছে। তাইনা?’

ধারাল দৃষ্টিতে প্রিয়তাকে একবার পর্যবেক্ষণ করে নিল হুসাইন আলী। বলল, ‘এসব তুমি কীকরে জানলে?’

বক্র হাসি ফুটে উঠল প্রিয়তার ঠোঁটে, ‘সেটা বড় কথা না। কথাগুলো সত্যি। অস্বীকার করতে পারবেন না আপনি।’

‘ ধরো কথাগুলো সত্যি। তো?’ একরোখা কন্ঠে বলল হুসাইন আলী।

কফির মগটা তুলে নিল প্রিয়তা। ছোট্ট একটা চুমুক দিয়ে বলল, ‘আপনার কী মনে হয়? তাদের এমন করার কারণটা কী? ঠকাচ্ছে আপনাকে? না-কি অন্যকিছু?’

চোখমুখ শক্ত হয়ে উঠল হুসাইন আলীর। থমথমে গলায় বলল, ‘সেটা একান্তই আমাদের ব্যক্তিগত ব্যপার বলে আমি মনে করি।’

আবার হাসল প্রিয়তা। সামান্য মাথা দুলিয়ে বলল, ‘অভ্যন্তরীণ সব খবর গড়গড় করে বলে দিচ্ছি আপনাকে। আপনার এখনো মনে হয় ব্যপারটা ব্যক্তিগত পর্যায়ে আছে?’

হুসাইন আলী অনড় গলায় বললেন, ‘ এ বিষয়ে তোমাদের সাথে আলোচনার কোন প্রয়োজন বোধ করছিনা আমি।’

‘ প্রয়োজনতো আছে হুসাইন সাহেব। আমার পরিচয়টা জানার পড়ে মনে হয়না আপনি একই কথা বলবেন।’

‘ তাই? তা কী পরিচয় তোমার?’

‘ এমনিতেতো শওকত মীর্জার মেয়ে আমি। কিন্তু তারচেয়েও বড় পরিচয় আমি রুদ্র আমেরের স্ত্রী।’

চমকে উঠল হুসাইন আলী। দুচোখ ভর্তি অবিশ্বাস নিয়ে তাকিয়ে রইল প্রিয়তার দিকে। কৌতুক ঝিলিক দিয়ে উঠল প্রিয়তার দুচোখে। ওর পরিচয় শুনে যখন এরা চমকে ওঠে, ভীষণ আনন্দ পায় ও। হুসাইন আলী বললেন, ‘ রুদ্রর স্ত্রী! সে আবার শওকত মীর্জার মেয়েও! এক ছিল বাজপাখি আর নাগরাণী! একদিন তাদের দেখা হল, দ্বিতীয়দিন প্রেম হল, তৃতীয়দিন বিয়ে করল, এরপর তারা সুখে শান্তিতে সংসার করতে লাগল। ব্যপারটা অনেকটা এমন ঢপের গল্প হয়ে গেলোনা?’

হাসল প্রিয়তা। বলল, ‘শুনতে তেমনই লাগে। কিন্তু সত্যি।’

এরপর অতি সংক্ষেপেই হুসাইন আলীকে গোটা ব্যপারটা বলল প্রিয়তা। সোলার সিস্টেমের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কেও খুব ভালোভাবেই ব্যাখা করল। শেষে বলল, ‘ বিদেশী সেসব অ-স্ত্র আর ভুলক্রমেও কখনও সোলার সিস্টেমের হাতে আসবেনা। বরং ঠিক সময়ে টাকা শোধ না হলে অবশিষ্ট সোলার সিস্টেমটুকুও ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে যাবে ওরা। আপনাকে অ-স্ত্র দিতে পারারতো কোন প্রশ্নই নেই। আর আপনাকে চুক্তিভঙ্গের টাকা দেওয়াতো দূরের কথা, বিদেশী দলগুলোর পাওনা টাকা দিতে গিয়ে পুরোপুরি দেউলিয়া হয়ে যাবে সোলার সিস্টেম। তবুও সব শোধ হবেনা।’

বিস্ময়ে কিছুক্ষণ কথা বলতে পারল না হুসাইন আলী। সারাঘরেই পিনপতন নীরবতা। যখন নিজেকে সামলাতে পারল তখন বলল, ‘ আমি আন্দাজ করেছিলাম কিছু একটা গন্ডগোল হয়েছে। কিন্তু ব্যাপারটাতে এতোটা ভয়ানক তা আন্দাজ করিনি।’

‘ তো এখন আপনার কী অভিমত?’

‘ তারচেয়েও বড় কথা তুমি আমাকে এগুলো বলতে কেন এসেছো? কী উদ্দেশ্য?’

‘ কাজের প্রশ্ন! সব শুনে আমাদের উদ্দেশ্যটা নিশ্চয়ই বুঝে ফেলেছেন?’

‘ তা ফেলেছি! সোলার সিস্টেমকে পুরোপুরি নিঃশ্বেষ করতে চাইছো তাইতো? তাতো প্রায় করেই ফেলেছো। কফিনে তুলে দিয়ে ঢাকনাসহ লাগিয়ে ফেলেছো। আর কী চাই?’

‘কফিনে শেষ পেরেগটা মারতে চাই।’

‘ মানে?’

আরও একবার ধূর্ত হাসি ফুটে উঠল প্রিয়তার ঠোঁটে। দ্বিতীয়বার ঝুঁকে বলল, ‘ আজ সন্ধ্যায় দেখা করতে আসবে রুদ্র আপনার সঙ্গে। হয়তো সময় চাইবে। কিংবা সাহায্য। রুদ্রকে চাপে ফেলুন। ডেডলাইন দিন। নিজের প্রাণের ভয় করেনা রুদ্র! কিন্তু পরিবারের বাকি সদস্যদের প্রাণের ভয় ওর আছে। সে ভয় এখন বহুগুণ বেড়েছে। এটাই মোক্ষম সুযোগ!’

হুসাইন আলী গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকাল প্রিয়তার দিকে। খানিক বিরক্তি নিয়ে বলল, ‘তাতে আমার লাভ?’

প্রিয়তার হাসি প্রসারিত হলো। যেন জানতো এমন এক প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হবে ওকে। বলল, ‘ এতোদিন যে ডিলগুলো সোলার সিস্টেমের হাতে ছিল, সে ডিলগুলো কিন্তু এখন আমাদের হাতে হুসাইন সাহেব। অর্থাৎ যেসব দুর্লভ আর সেরা অ-স্ত্রগুলোর জন্যে আপনি মুখিয়ে আছেন সেগুলো এদেশে এখন আমরা বেঁচব। এখন এগুলো যদি আপনাকে ছেড়ে আমরা অন্যকারো কাছে বিক্রি করি তবে এই নাম্বার ওয়ান খেতাবটা কী আদোও আপনার থাকবে?’

মাথা দুলিয়ে হাসল হুসাইন আলী। বলল, ‘ বিজনেস মাইন্ড খুব পাকাপোক্ত তোমার। বুঝতে বাকি নেই মীর্জা সাহেব বাকিদের ছেড়ে তোমাকে কেন পাঠিয়েছে। আমি সবসময়ই বলি, লাভ যেখানে; আমি সেখানে।’

‘ তাহলে কী ধরে নেব আপনি আমার কথা রাখছেন? আর নতুনভাবে ডার্ক নাইট এবং ব্লাকহোলের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছেন?’

লালচে ঠোঁটের হাসিটুকু মিলিয়ে গেল হুসাইন আলীর। দৃষ্টি পুনরায় ধারালো হল। শক্ত গলায় বলল, ‘ যদি বলি না। রাখছি না আমি তোমাদের কথা। আর নাতো চুক্তিবদ্ধ হচ্ছি। তবে?’

তনুজা চোখ বড়বড় করে তাকাল। রাণী কী ভয়ানক প্রতিক্রিয়া দিতে পারে ভেবে পুনরায় গলা শুকিয়ে এলো ওর। টেবিলে থাকা পানিটুকু একঢোকে গিলে খাওয়ার বাসনাটা গলাটি-পে মারল বেচারী। কিন্তু বিন্দুমাত্র রাগ করল না প্রিয়তা। ঠোঁটে ফুটল সেই পরিচিত ধূর্ত হাসি। হাতটা পেছনে নিয়ে বের করে আনল নিজের বেরেটা। বেরেটা ধরা হাতটা অলস ভঙ্গিতে রাখল টেবিলের ওপর। সঙ্গেসঙ্গে ঘরের বাকিরা ব-ন্দু-ক বার করে তাক করল প্রিয়তার দিকে। তা দেখে তনুজাও বের করে ফেলল নিজের পি-স্ত-ল।
কিন্তু কোন প্রতিক্রিয়াই দেখালেন না হুসাইন আলী। প্রিয়তার দিকে তখনও তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে। কন্ঠে গাম্ভীর্যতা বজায় রেখেই বলল, ‘ তোমার সত্যিই মনে হয় ঐ একটা পি-স্ত-ল দিয়ে তুমি এদের সবাইকে সামাল দিতে পারবে?’

প্রিয়তা হেসে ফেলল। কৌতুকপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, ‘এসব মশামাছি সামলানোর মতো এতো বাড়তি সময় নেই আমার। কিন্তু, আপনার বাড়িটাতো সাভারের মধ্যেই। তাইনা হুসাইন আলী?’

চোখে মৃদু চমক ফুটে উঠল হুসাইন আলীর। তীক্ষ্মতা হ্রাস পেল। সপ্রশ্ন চোখে প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে রইল সে। প্রিয়তা বলল, ‘বাই এনি চান্স, যদি এখন আপনার ঘরে একটা ব্লা–স্ট হয় কেমন হবে? ওখানেতো আপনার বড়ভাই থাকে তাইনা? অসুস্থ। স্ট্রোক করার পর বাঁ সাইড পুরো প্যারালাইসড হয়ে গেছে। ঠিক বলছি?’

‘ অসম্ভব! তোমার লোক সে অবধি যেতেই পারবেনা।’

‘ গেইটের দারোয়ান দুজনের নাম সিরাজ আর মোজাম্মেল।’

পিলে চমকে উঠল হুসাইন আলীর। বড় ভাইকে নিয়ে কোনরকম রিস্ক নিতে পারবেনা সে। কোনভাবেই না। তাছাড়াও সে নিজ লাভের দিকেই যায়। কথাটা বলছিল শুধু ওদেরকে বাজিয়ে দেখার জন্যে। তাই হার মেনে নিয়ে বলল, ‘বেশ! মেনে নিচ্ছি তোমাদের কথা।’

বলে ব-ন্দু-ক নামানোর ইশারা করল বাকি সবাইকে। হাসল প্রিয়তা। তনুজার দিকে হাত বাড়িয়ে দিতেই তনুজা একটা ফাইল দিলো ওকে। ফাইলটা খুলে প্রিয়তা বাড়িয়ে দিল হুসাইন আলীর দিকে। প্রসন্ন গলায় বলল, ‘ আমাদের সঙ্গে আপনার যে চুক্তি হচ্ছে তার কাগজ। সই করুন।’

‘ সইতো তবে তোমাকেও করতে হবে।’

‘ নিশ্চয়ই।’

অতঃপর দুপক্ষের সই সাবুতের মাধ্যমে তারা চুক্তিবদ্ধ হলো। নিজের বেরেটা নিয়ে উঠে দাঁড়ালো প্রিয়তা। হঠাৎই হুসাইন আলীর পেছনে থাকা ছেলেটার ডান উড়ুতে শু-ট করে দিল। প্রচন্ড জোরে চিৎকার করে বসে পড়ল ছেলেটা। হুসাইন আলী কিছু বলতে গিয়েও বলল না। বাকিদেরও হাতের ইশারায় থামিয়ে দিল। প্রিয়তা এগিয়ে গেল সেদিকে। এক হাঁটু ভেঙ্গে বসল ছেলেটার সামনে। ছেলেটা উড়ু চেপে ধরে যন্ত্রণায় ছটফট করছে। গলগলিয়ে র-ক্ত বের হচ্ছে সেখান থেকে। চোখভর্তি বিস্ময় আর যন্ত্রণা নিয়ে তাকিয়ে আছে প্রিয়তার দিকে। প্রিয়তা ঠান্ডা, নির্বিকার গলায় বলল, ‘ পরেরবার কাউকে নিয়ে ব্যঙ্গ করার আগে একটু চিন্তাভাবনা করে করবি। নয়তো পরেরবার টার্গেট মিস হবেনা। গু-লিটা এমন জায়গায় গিয়ে লাগবে, পুরুষত্বকে অহংকার না যন্ত্রণা মনে হবে।’

উঠে দাঁড়িয়ে হুসাইন আলীকে বলল, ‘ ডাক্তার কল করে দিচ্ছি। এসে এর জ্বালা কমিয়ে দিয়ে যাবে।’

অতঃপর কোনদিকে না তাকিয়ে ওখান থেকে বেরিয়ে এলো প্রিয়তা। ওর পেছন পেছন তনুজা। হতবাক চোখে ওর যাওয়াটা দেখল হুসাইন আলী। মেয়ে নয় যেন সাক্ষাৎ বিনাশ!

বাইরে গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছিল জয়। চুক্তির ফাইলসহ তনুজাকে বিদায় দিয়ে গাড়িতে উঠে বসল প্রিয়তা। গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার আগে ফোনে টাইপ করল জয়, ‘ ম্যাম স্কুলে যাবেন নাকি আমের ভিলায়?’

লিখে ফোনটা এগিয়ে প্রিয়তাকে দেখাল জয়। প্রিয়তা দেখল। এরপর ঐ ফোনটাই নিয়েই নিচে টাইপ করল, ‘স্কুল ছুটির সময় হয়ে গেছে। আমের ভিলায় চলো।’

ফোনটা পুনরায় বাড়িয়ে দিল জয়কে। মাথা নেড়ে তাই করল জয়। গাড়ি ছোটালো আমের ভিলায় উদ্দেশ্যে।

নাজিফাদের বাড়ির ছাদটা অনেক ছোট। পুরোনো আর মেরামতহীন হওয়াতে দর্শনও খুব বেশি ভালো না। তবে বসার জন্যে একটা আরামদায়ক বড় কাঠের আসন আছে। নাজিফার বাবাই অনেক শখ করে বসিয়েছিলেন। বৃষ্টিতে যেন না ভেজে তাই সবসময় প্লাস্টিক দিয়ে খুব ভালোভাবে মুড়িয়ে রাখা হয়। মাঝেমাঝেই খোলা হয় বসার জন্য।
সেই আসনটাতেই পাশাপাশি বসে আছে উচ্ছ্বাস-নাজিফা। আজ দুপুরে এই বাড়িতেই খাবে উচ্ছ্বাস। নাজিফাকে আজও ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিল ও। ভোরবেলায় দিকে হঠাৎই একটু সমস্যা হয়েছিল। বেবীর মুভমেন্ট ফিল করতে পারছিলনা নাজিফা। প্রচন্ড ঘাবড়ে গিয়েছিল মেয়েটা। উচ্ছ্বাসকে ফোন করে সেকি কান্না। তাইতো সকাল সকালই হন্তদন্ত ছুটে আছে উচ্ছ্বাস। ডাক্তার সব চেকআপ করে জানালো, সব ঠিক আছে। মাঝেমাঝে এমন নয়। নাজিফারও এখন মনে হচ্ছে সব ঠিক আছে। তখনকার মতো অনুভব হচ্ছেনা ওর এখন। ওকে বাড়ি পৌঁছে দিয়েই ফিরে যেতে চাইছিল উচ্ছ্বাস। কিন্তু নাজমা বেগম তা মানেননি। তার কড়া নির্দেশ। দুপুরে না খেয়ে কিছুতেই যেতে পারবেনা উচ্ছ্বাস। অগত্যা থেকে যেতে হলো উচ্ছ্বাসকে।

নাফিজার দিকে আরেকবার ভালো করে তাকাল উচ্ছ্বাস। বর্তমানে মেয়েটাকে অদ্ভুত সুন্দর লাগে ওর। সুস্বাস্থের সঙ্গে সঙ্গে অদ্ভুত জেল্লা ওর মুখে। আচরণও অনেকটা বাচ্চা হয়ে গেছে। অল্পেই কেঁদে দেয়, অল্পেই ভয় পায়, হুটহাট বায়না করে বসে। উচ্ছ্বাস ঠোঁটে মুচকি হাসি ধরে রেখেই বলল, ‘একটা বাচ্চাকে পৃথিবীতে আনতে গিয়ে তুমিই বাচ্চা হয়ে যাচ্ছো নাজিফা।’

নাজিফা ভ্রুকুটি করে তাকাল উচ্ছ্বাসের দিকে। খানিকটা বিস্ময় নিয়ে বলল, ‘ কী?’

‘ হ্যাঁ, সত্যি বলছি।’

‘ উজবুক একটা!’

বলে মুখ মুখ ঘুরিয়ে নিল নাজিফা। ঠোঁটে ফুটে উঠল মুচকি হাসি। কিন্তু উচ্ছ্বাস খানিকটা চমকাল। কিছুক্ষণ নাজিফার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, ‘কতদিন পর আমাকে উজবুক বলে ডাকলে নাজিফা!’

চমকে উঠল নাজিফাও। একবছর! একবছর পর আবার সেই ডাক। সেই অনুভূতি! প্রচন্ডভাবে মনে কড়া নাড়ল পুরোনো সেই দিনগুলো। পার্কে নাজিফার কোলে মাথা রেখে উচ্ছ্বাসের শুয়ে থাকা। চায়ের দোকানে একসঙ্গে চা খাওয়া। নাজিফার ধমক, উচ্ছ্বাসের আগামাথা ছাড়া অদ্ভুত কথা। সবকিছুই। নাজিফা বলল, ‘ আচ্ছা উচ্ছ্বাস, তোমার মনে পড়ে? আমাদের কথা শুরু হওয়ার আগে তুমি কেমন হ্যাংলার মতো দাঁড়িয়ে থাকতে হসপিটালের সামনে? রাত নেই, দিন নেই। সময়ের ঠিকঠিকানা নেই, ক্লান্তি নেই।’

উচ্ছ্বাস মলিন হেসে বলল, ‘কোনদিন ভুলতে পারলেতো মনে পড়বে। প্রথম দেখা থেকেই ভালো লাগতো তোমাকে। দেখতে দেখতে কবেযে এতোটা পছন্দ করে ফেলেছিলাম, বুঝিইনি। এরপর তোমার নিজে থেকে আমার সঙ্গে এসে কথা বলাটা কতটা অনাকাঙ্ক্ষিত ছিল তুমি জানোনা নাজিফা। সেদিন রাতে আমি ঘুমাতে পারিনি।’

নাজিফা আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ ভেবেছিলাম এই উজবুকটা এতো কষ্ট করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রোদে পোড়ে, একটু দয়ামায়া দেখাই।’

উচ্ছ্বাস শব্দ করে হাসল। হাসল নাজিফাও। হঠাৎই যেন হুঁশ এলো ওদের। মনে পড়ল বর্তমান পরিস্থিতি। চারপাশটা কেমন থমথমে হয়ে গেল। শীতের রোদেলা দুপুরটা যেন প্রচুর তাপে দগ্ধ করল দুজনকে। অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে হঠাৎই নাজিফা বলে উঠল, ‘আমরা কী আবার সবটা শুরু করতে পারি উচ্ছ্বাস?’

চকিতে তাকাল উচ্ছ্বাস। পৃথিবী যেন থমকে গেল ওর জন্যে। চারপাশটা কেমন ঝি ঝি করে উঠল। কানে শোনা শব্দগুলোকে নেহাতই ভ্রম বলে মনে হল। উচ্ছ্বাসের সন্দেহ দূর করে নাজিফা তাকাল উচ্ছ্বাসের চোখের দিকে। আলতো করে স্পর্শ করল ওর হাত। কাতর গলায় বলল, ‘নিজেদেরকে আরেকটা সুযোগ দেওয়া যায়না উচ্ছ্বাস? তুমিইতো বলেছিলে খুব শীঘ্রই এসব ছেড়ে দেবেন রুদ্র ভাই। তখন তুমিও নিশ্চয়ই আর এসবে থাকবে না? ততদিনে আমার বাচ্চাটাও চলে আসবে পৃথিবীতে।’

উচ্ছ্বাস কম্পিত গলায় বলল, ‘ কী বলছো এসব?’

নাজিফার চোখে জল এলো। ভেজা গলায় বলল, ‘জীবনে অনেককিছু হারিয়ে ফেলেছি উচ্ছ্বাস। অনেক ধাক্কা খেয়েছি। আর পারছিনা। জীবনে একটু ভালো থাকার আর একটা সুযোগও হারাতে চাইছিনা। বিশ্বাস করো এভাবে বিধবা আর এক সন্তানের মা হয়েও তোমার কাছে ফিরতে চাইতাম না আমি। কিন্তু_’

‘ ছিহ্ নাজিফা! এসব কী কথা?’ নাজিফাকে মাঝেই থামিয়ে দিয়ে বলল উচ্ছ্বাস।

কিন্তু নাজিফা থামল না। বলে চলল, ‘কিন্তু আমি তোমার জন্যে নিজের জন্যে আজও সেই ভালোবাসা দেখি উচ্ছ্বাস। সেই তীব্র যন্ত্রণা আমিও অনুভব করতে পারি। তোমাকে এভাবে জ্বা-লিয়ে শেষ করে দেওয়ার জন্যে আমাকে ক্ষমা করতে পারবেনা উচ্ছ্বাস?’

‘ তোমার জায়গায় তুমি ঠিক ছিলে নাজিফা। ক্ষমার প্রশ্ন আসছে কেন?’

‘ ছিলাম হয়তো। কিন্তু তোমাকে ভেঙ্গেচুড়ে চুড়মার করে দিয়ে গিয়েছিলাম সেটাতো ঠিক। তোমার সামনেই অন্যকাউকে নিয়ে সাজিয়েছিলাম। কতটা যন্ত্রণা হয়েছিল তোমার তাইনা? কিন্তু বিশ্বাস করো আমিও ভালো ছিলাম না। এক সেকেন্ডের জন্যেও ভালো ছিলাম না। এই একবছর প্রতিটা রাত নরকের যন্ত্রণায় ছটফট করেছি আমি। আমার মনপ্রাণ সবটাইতো আমি তোমাকে দিয়ে দিয়েছিলাম উচ্ছ্বাস। সেখানে অন্যকারো ঘরোনী হয়ে জীবন কাটানো আমার কাছে বিষপানের চেয়ে কম যন্ত্রণার ছিলোনা।’

বলতে বলতে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল নাজিফা। নাজিফার দুহাত আকড়ে ধরল উচ্ছ্বাস। নরম গলায় বলল, ‘ এসময় এভাবে কাঁদেনা নাজিফা। বাচ্চাটার ক্ষতি হয়ে যাবে। চুপ।’

কিন্তু নাজিফার কান্নার বেগ কমল না। ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল, ‘ প্লিজ উচ্ছ্বাস। ফিরিয়ে দিওনা আমাকে। তোমাকে প্রত্যাখ্যান করে আমি লাশ হয়ে বেঁচে ছিলাম। কিন্তু তোমার প্রত্যাখ্যান আমার লাশকেও অস্তিত্বহীন করে দেবে। সহ্য করতে পারব না আমি।’

বুকটা প্রচণ্ড ভাড় হয়ে এলো উচ্ছ্বাসের। বহুদিন পর আবার কান্না পেল। ভীষণ কান্না পেল। ওতো ভেবেই রেখেছিল সবটা ছাড়ার পর একদম শুদ্ধ হয়ে পুনরায় প্রবেশ করবে নাজিফার জীবনে। দুহাত বাড়িয়ে ভিক্ষা চাইবে আরও একটা সুযোগ। কিন্তু নাজিফা তা হতে দিলো কই? নিজেই আরও একবার নত হল উচ্ছ্বাসের কাছে। ভালোবাসার কী অদ্ভুত শক্তি! আত্মমর্জাদায় পরিপূর্ণ এই রমনী কোন দ্বিধা ছাড়াই বারংবার নত হয়েছে ছন্নছাড়া উচ্ছ্বাসের সামনে।

নাজিফার দু বাহু শক্ত করে ধরল উচ্ছ্বাস। কান্নাভেজা কিন্তু স্পষ্ট গলায় বলল, ‘ আমার ঝাঁসির রাণীকে প্রত্যাখ্যান করব! এতো সাহস আমার আছে নাকি?’

সশব্দে কেঁদে ফেলল নাজিফা। হুমরি খেয়ে পড়ল উচ্ছ্বাসের প্রশস্ত বুকে। দীর্ঘদিনের বিষাদ, যন্ত্রণা, হাহাকার সব অশ্রু বানিয়ে ঢেলে দিল উচ্ছ্বাসের বুকে। বহুদিন পর উচ্ছ্বাসও দুহাতে জড়িয়ে ধরল প্রাণপ্রিয় নারীটিকে। নীরব ধারায় অবাধ্য দু ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে নামল চোখ থেকে। কে জানতো? বছরখানেক পর আবার এই দিন আসবে? আবারও প্রাণপ্রিয়াকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরার সুযোগ হবে।

বর্তমান ~

ঘরটা অন্ধকার করে রেখেছে তুহিন। নীল রঙের ড্রিমলাইটটাই জ্বলছে কেবল। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখল রাত আড়াইটা বাজে। এখনও ঘুমোতে যায়নি ও। অস্থিরভাবে পায়চারী করছে রুমজুড়ে। প্রচন্ড অস্বস্তিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে সম্পূর্ণ শরীর। রাতে কিছু খাওয়া হয়নি তুহিনের। মাহমুদাকে কঠোর নির্দেশ দিয়ে এসেছে, কোনভাবেই যেন আজ ওর রুমে না আসে। সে নির্দেশই পালন করে মাহমুদা আসেনি খাবার নিয়ে।
তুহিনের মানসপটে এইমুহূর্তে কেবল ইরার মুখটাই ভাসল। এমন অস্থির পরিস্থিতিতে ঐ মেয়েটাই পারতো ওকে স্থির করতে। ওকে শান্তি দিতে। মেয়েটা ওর জীবনে ঠিক কী ছিল এখন হাঁড়ে হাঁড়ে টের পায় তুহিন। কিন্তু এখন টের পেয়েইবা কী লাভ? ইরাবতীতো ওর নেই। কদিন পর সে অন্যকারো বাকদত্তা হবে, এরপর ঘরোনী। তুহিন নামক চ্যাপটারটা নিশ্চয়ই চিরকালের মতো ক্লোজ হয়ে যাবে ইরার জীবন থেকে। দীর্ঘশ্বাস চাপল তুহিন। বুকের ব্যথাটা যেন আজ আরও ভালোভাবে অনুভব করল।

ঘড়ির দিকে তাকাতেই অস্থির হয়ে উঠল তুহিন। এখনো কোন কল কেন আসছেনা। তবে কী আর কোন আশা বেঁচে নেই? শেষ আশাটাও শেষ? চিন্তা করেই গলাটা কেমন শুকিয়ে এলো তুহিনের। মনে পড়ল বিকেলের শাফায়াতের কেবিনে ঘটে যাওয়া সেই ঘটনা-

নিজেরই একাউন্ট থেকে টাকা ট্রান্সফার হয়েছে দেখতে পেয়ে দম বন্ধ হয়ে আসে তুহিনের। হতভম্ব হয়ে তাকায় শাফায়াত হুসাইনের দিকে। কোনমতে বলে, ‘এটা কীকরে সম্ভব স্যার? একাউন্টটাতো আমার।’

শাফায়াত গম্ভীর স্বরে বলে, ‘ একাউন্টটাযে তোমার সেটা আমি জানি। কেবল আমি না, গোটা ডিপার্টমেন্ট জানে।’

‘ কিন্তু এটা কীকরে সম্ভব স্যার?’

‘ তার উত্তরতো তুমি আমাদের দেবে তুহিন আহমেদ।’

বিস্মিত দৃষ্টিতে শাফায়াতের দিকে তাকাল তুহিন। অবাক হয়ে বলল, ‘ মানে স্যার? আপনারা কী কোনভাবে_’

শাফায়াতের চোখমুখ আরও গম্ভীর হলো। কথার ধরণ হলো আরও প্রফেশনাল। সে নিজের কন্ঠে গাম্ভীর্যতা বাড়িয়ে দিয়ে বলল, ‘ একাউন্টাযে তোমার সেটা আমিসহ তোমার সব সিনিয়ররাই দেখেছে তুহিন। এবং তাদের ধারণা কোন না কোনভাবে কোন দলের কাছ থেকে টাকা খেয়েছো তুমি। যার সঙ্গে রুদ্র আমেরও যুক্ত। তাই বারবার ইচ্ছাকৃতভাবে রুদ্রকে ছেড়ে দিচ্ছো তুমি। আর এবার নিজেই লোক লাগিয়েছো যাতে তোমাকে পৌঁছতে ওরা বাঁধা দেয়।’

তুহিন উত্তেজিত হয়ে বলল, ‘ স্যার ওদের দুজনকে খু-ন করতে হয়েছে আমায়।’

‘ সেটা হয়তো আইওয়াশ করার জন্যে।’

‘ কিন্তু স্যার আমি নিজেরই অ‍্যাকাউন্ড থেকে টাকা কেন পাঠাব? নিজেকে ফাঁসানোর জন্যে?’

মৃদু হাসলেন। বললেন, ‘ না, ফেঁসে গেলে যাতে কাউন্টার দিতে পারো সেজন্য। এটা আমার কথা না। ডিপার্টমেন্টের বাকি সবার কথা।’

মেজাজ খারাপ হলো তুহিনের। এটা কীধরণের কথা? ইয়ার্কি হচ্ছে ওর সাথে? ওর ব্যাংক একাউন্ট থেকে এতোগুলো টাকা চলে গেল কীকরে! তারওপর এদের সন্দেহ! তুহিন এবার সরাসরি তাকাল শাফায়াতের দিকে। ঠান্ডা গলায় বলল, ‘আপনার কী মনে হয় স্যার? আমি এমন কিছু করতে পারি?’

শাফায়াত খুবই স্বাভাবিক গলায় বলল, ‘ আমাদের সাইটে মনে হওয়া দিয়ে কিছু হয়না তুহিন। কাগজ কথা বলে। আর কাগজ তোমার বিরুদ্ধেই কথা বলছে। তাছাড়াও বেশ কিছু নেতামন্ত্রীদের নিয়ে তোমার এসব ঘাঁটাঘাঁটিকেও সন্দেহের চোখে দেখছে ডিপার্টমেন্ট। ধারণা করা হচ্ছে তথ্য পাচার করছো তুমি।’

লম্বা শ্বাস ফেলল তুহিন। ভালোভাবেই বুঝল, ভয়ানকভাবে ফেঁসে গেছে ও। এর থেকে বেরিয়ে আসা সহজ হবেনা। শাফায়াতের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ তো এবার?’

আরও একবার গম্ভীর হলো শাফায়াত। কঠোর গলায় বলল, ‘তোমাকে এখন, এই মুহূর্তে এই কেইস থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে তুহিন। তদন্ত শুরু হবে তোমার বিরুদ্ধে। যদি ডিপার্টমেন্টের সন্দেহ সত্যি প্রমাণিত হয় তবে_ স্যরি টু সে গোয়েন্দা বিভাগে তোমার আর জায়গা হবেনা। ইউ উইল বি সাসপেন্ডেড। তোমাকে আগেই বলেছিলাম, দেয়ার হ্যাজ আ থিন লাইন বিটউইন টেকিং রিস্ক এন্ড স্টুপিডিটি। তুমি স্টুপিডিটাই করলে।’

ক্লিষ্ট হাসল তুহিন। চুপ থাকল দীর্ঘ এক মিনিট। শাফায়াতও চুপ থাকলেন কিছুক্ষণ। হঠাৎ তুহিন বলল, ‘ একটা রিকোয়েস্ট করব স্যার?’

ভ্রু কোঁচকালেন শাফায়াত, ‘ কী রিকোয়েস্ট?’

‘ আমাকে চব্বিশ ঘন্টা সময় দিন। কথা দিচ্ছি, চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে রুদ্র আমেরকে অ‍্যারেস্ট করব আমি।’

‘ এতোদিনে যা পারোনি সেটা চব্বিশ ঘন্টায় করবে?’

‘ শেষবারের মতো ভরসা করে দেখতে পারেন স্যার। আই প্রমিস।’

‘ সবকিছু আমার হাতে নেই তুহিন। চাইলেই তোমাকে সময় দিতে পারিনা আমি। বাকিদেরও মতামত, অফিশিয়াল অ‍্যাপ্রুভালের ব্যপার-স্যপার আছে।’

তুহিন খানিকটা উত্তেজিত হয়ে বলল, ‘ স্যার প্লিজ। এতোগুলো বছরে এই ডিপার্টমেন্টে যদি আমার বিন্দুমাত্র অবদান থেকে থাকে দেন গিভ মি দ্য লাস্ট চান্স স্যার। মাত্র চব্বিশ ঘন্টা সময় চাইছি আমি।’

ভ্রু কুঁচকে তুহিনের দিকে চাইল শাফায়াত। বলল, ‘ যদি না পারো?’

‘ ডিপার্টমেন্টের যেকোন সিদ্ধান্ত মেনে নেব।’ প্রবল আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলল তুহিন।

লম্বা শ্বাস ফেলল শাফায়াত, ‘ বেশ আমি কথা বলছি। দেখা যাক তোমাকে সময় দেওয়াতে পারি কিনা। আশা করি এবার তুমি আমাকে নিরাশ করবে না। মনে রেখো, চব্বিশ ঘন্টাই।’-

ফোনের রিংটোনে ধ্যান ভাঙল তুহিনের। ফোন হাতেই ছিল ওর। শাফায়াত কল করেছে। দ্রুত কল রিসিভ করল তুহিন, ‘হ্যালো স্যার!’

অপাশ থেকে গম্ভীর গলায় শাফায়াত জানালেন, ‘চব্বিশ ঘন্টা দেওয়া হয়েছে তোমাকে। দেখ, কী করতে পারো। অল দ্য বেস্ট!’

কল কেটে গেল। ফোঁস করে শ্বাস ফেলল তুহিন। ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল যেন ওর। তাকাল দেয়াল ঘড়িটার দিকে। রাত তিনটে বাজে। চব্বিশ ঘন্টা! অর্থাৎ, আগামীকাল রাত তিনটার মধ্যে রুদ্র আমেরকে ধরতে হবে ওকে। যেকোন মূল্যে!

#চলবে…

[রি-চেইক করিনি। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here