অন্তর্নিহিত কালকূট লেখনীতে: অনিমা কোতয়াল ৯৩.

0
57

অন্তর্নিহিত কালকূট
লেখনীতে: অনিমা কোতয়াল

৯৩.

এলার্মের কর্কশ শব্দে ঘুম ভাঙল তুহিনের। চোখ বন্ধ করেই বন্ধ করল সেটা। পিটপিটে চোখে তাকাল দেয়াল ঘড়ির দিকে। সাড়ে ছ’টা! বিছানাতে এক সেকেন্ডও পড়ে রইল না ও। ঝট করে উঠে বসল। ওয়াশরুমে ঢুকে প্রায় পনেরো মিনিট সময় নিয়ে ধীরেসুস্থে ফ্রেশ হলো। এরপর বের হল নিজের রুম থেকে। মাহমুদার সঙ্গে কথা বলে দশমিনিটের মাথাতেই ফিরে এলো নিজ কক্ষে। হাতে গরম কফির মগ। গায়ে ভারী একটা জ্যাকেট জড়িয়ে বারান্দায় চলে গেল তুহিন। ঘন কুয়াশার আড়ালে উত্তরার নীরব সেক্টর। আশেপাশের বিল্ডিং, রাস্তা সবটাই ধোঁয়াশা। ঠিক তুহিনের ভবিষ্যতের মতো। মাঘের এই কুয়াশা কতক্ষণ থাকবে জানা নেই তুহিনের। কিন্তু ওর জীবনের কুয়াশা থাকবে আগামী কয়েকটা ঘন্টা। সাসপেনশন নাকি সাকসেস! সবটাই রৌদ্রজ্জ্বল দিনের মতো পরিষ্কার হয়ে যাবে।

রাতের বাকিটা সময় ঘুমিয়েছে তুহিন। কারণ সে জানে পরবর্তী কয়েকঘন্টা ঘড়ির কাটার মতো বিরতিহীন ছুটতে হবে ওকে। তাই সেমুহূর্তে কোনরকম চাপ নেয়নি মাথায়। মস্তিষ্ককে একটু বিশ্রাম দেয়া প্রয়োজন। সাড়ে তিনটায় ঘুমায় তুহিন। মস্তিষ্কের বিশ্রাম ছিল মাত্র তিন ঘন্টা। ধোঁয়া ওঠা মগটাতে চুমুক দিল তুহিন। কড়া ক্যাফেইনের স্বাধ পেতেই সতেজ হয়ে উঠল মন-মস্তিষ্ক। ডুব দিল গভীর ভাবনায়। ওর একাউন্ট থেকে টাকা ট্রান্সফার কীকরে হলো? রাতে একবার একাউন্ট চেক করেছিল তুহিন। পিনতো ঠিকই ছিল, তবে? কিন্তু সে রহস্যের সমাধান করার সময় নেই তুহিনের হাতে। ডিপার্টমেন্ট চব্বিশ ঘন্টা সময় দিয়েছে ওকে। রুদ্রকে খুঁজে বের করার জন্যে। রুদ্রর মতো ধূর্ত, দুরন্ত ব্যক্তিকে চব্বিশে ঘন্টায় পাকরাও করাটাযে কতবড় চ্যালেঞ্জ তা অনেকের কল্পনারও অতীত। গভীর চিন্তায় নিজেকে ডুবিয়ে রেখেই কফিটা শেষ করল তুহিন। ফোনে সময় দেখে নিল আরও একবার। সাতটা বাজে।
তুহিন এবার তমালের নাম্বারে ডায়াল করল। রিং হওয়ার সঙ্গেসঙ্গেই কলটা রিসিভ করল তমাল। এতক্ষণ যেন এই কলের অপেক্ষাতেই বসে ছিল ও।

‘ হ্যালো স্যার!’

‘ রাতে ঘুমাও নি?’

জবাব দিলোনা তমাল। রাতে ও ঘুমিয়েছে কয়েকবার। কিন্তু আধঘন্টার বেশি একবারও সে ঘুম স্থায়ী হয়নি। যখন থেকে তুহিনের সম্ভাব্য সাসপেনশনের গুঞ্জন শুনেছে। তখন থেকেই ছটফট করছে ও। দুশ্চিন্তায় দীর্ঘক্ষণ ঘুমোতে পারেনি মস্তিষ্ক। অপরাধবোধে বারবার মিইয়ে যাচ্ছে তমাল। সাভারের ব্যর্থতার দায়ভারতো অনেকাংশে ওরই। ওর বোকামির জন্যেই আজ ওর স্যারের ক্যারিয়ারে দাগ লেগে যাচ্ছে। তমালের মৌনতাতেই যা বোঝার বুঝে ফেলল তুহিন। প্রসঙ্গ পাল্টে বলল, ‘ শোন! হুসাইন আলীর খবর নিতে বলেছিলাম। নেওয়া হয়েছে?’

‘ জি স্যার? আমাদের আন্ডারকভারেজে থাকা কিছু অফিসারস্ এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তার বর্তমান অবস্থান জানা গেছে। কিন্তু_’

‘ কিন্তু?’

‘ লোকটা ভয়ানক ধূর্ত। ইট, সিমেন্ট, রডের ব্যবসা খুলে বসে আছে। রেট করেও লাভ হবেনা। পাওয়া যাবেনা কিচ্ছু।’

‘ আমার হাতে কিছু পাওয়ার সময় নেই তমাল। আমার শুধু এখন রুদ্রকে চাই। যেকোন মূল্যে। আজ রাত তিনটার আগেই।’

রুদ্রর নামটা শুনেই মেজাজ বিগড়ে গেল তমালের। গত ঘটনার পর রুদ্র নাম আর ঐ নামধারী ব্যক্তি দুটোই বি-ষের মতো লাগে তমালের কাছে। তীব্র আক্রোশে গরম হয়ে ওঠে শরীর। নিজেকে সামলে নিয়ে বলে, ‘বুঝেছি স্যার। এখন?’

‘ অফিসে এসো। ফারিয়াকেও ডেকে পাঠাও। তোমাদের সঙ্গে একজন রেডি করো। আর হ্যাঁ, ডিপার্টমেন্টের মেকআপ আর্টিস্ট এখন কে আছে?’

‘ সজল আছে স্যার।’

‘ ডাকো ওকে। এক্ষুনি।’

‘ এক্ষুনি?’

‘ ইয়েস! রাইট নাও! সময় নেই আমার হাতে তমাল। এসে এক্সপ্লেইন করছি।’

‘ ওকে স্যার!’

কান থেকে ফোনটা নামিয়ে লম্বা শ্বাস ফেলল তুহিন। আরেকটা বার সময় দেখল। পেরিয়ে গেছে চার ঘন্টা। হাতে আর মাত্র বিশ ঘন্টা বাকি। এবার আর একপন্থা নয় বহুপন্থা অবলম্বন করতে চলেছে তুহিন। এক দিক দিয়ে নয়, এবার বহু দিক দিয়ে আটকাবে সে। কটা ট্রাপকে টপকাবে রুদ্র আমের? অনেক হয়েছে বেড়াল-ইঁদুরের খেলা। এবার খেলা শেষ করতে হবে। করতেই হবে!

অফিসে পৌঁছে তমালকে বেশ তৎপর দেখতে পেলো তুহিন। ইতিমধ্যে ফারিয়া এবং আরেকজন অফিসারসহ সজলকে উপস্থিত করে ফেলেছে সে। অফিসারের নাম নাঈম। গেস্ট রুমে অপেক্ষা করছে ওরা। তুহিন প্রথমে সেখানেই গেল। তিনজনকে আলাদা বসিয়ে রেখে তমালের সঙ্গে কথা বলল প্রায় আধঘন্টা। পুরোটা সময় খুব মনোযোগ দিয়ে তুহিনের প্রতিটা নির্দেশ মনোযোগ দিয়ে শুনলো তমাল। গেঁথে নিল নিজের মস্তিষ্কে। অতঃপর মেকাপ আর্টিস্ট সজলকে তার কাজ বুঝিয়ে দিল তুহিন। সজলের মস্তিষ্ক এ বিষয়ে পরিষ্কার। অতি সহজেই নিজের কাজ বুঝে ফেলল সে। ফারিয়া এবং নাঈমে কাজ বোঝানোর দায়িত্ব তুলে দিয়ে নিজ কেবিনের উদ্দেশ্যে পা বাড়াল তুহিন।

গম্ভীরমুখে নিজ কক্ষের কেবিনে বসে আছে ইনভেস্টিগেটর তুহিন আহমেদ। আজ অফিসে ঢোকার পর থেকেই বহু পরিচিত এই অফিসটা বড্ড বেশি অপরিচিত লেগেছে তার। প্রতিদিন যখন ইনভেস্টিগেটর তুহিন আহমেদ গোয়েন্দা বিভাগের অফিসে পা রাখতো। সকলেরই দৃষ্টি থাকতো তার দিকে। অফিসের এন্ট্রি গেইট থেকে শুরু করে কেবিনে ঢোকার আগ পর্যন্ত। সেই দৃষ্টিতে থাকতো হিংসে, সম্মান, মুগ্ধতার মতো অনুভূতি। কিন্তু আজ সেসব কিছুই ছিলোনা। আজ কারো দৃষ্টিতে ছিলো অবিশ্বাস, কারো দৃষ্টিতে বিদ্রুপ, কারো দৃষ্টিতে করুণা। ইতিমধ্যেই গোটা ডিপার্টমেন্টে ছড়িয়ে পড়েছে তুহিনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ এবং তার সম্ভাব্য সাসপেনশনের খবর।
মন-মেজাজ কেমন বিষণ্ন হয়ে উঠল তুহিনের। এতোবছরের ক্যারিয়ারে অনেক বিপদে পড়েছে। অনেক ঝামেলায় পড়েছে। প্রাণের ঝুঁকি নিয়েছে বহুবার। কিন্তু কখনও ওর নিষ্ঠা, সততা, দায়িত্ববোধ নিয়ে কথা ওঠেনি। ওর প্রফেশনালিজম নিয়ে প্রশ্ন তোলার সাহস কারোর হয়নি। এই প্রথমবার এমনটা ঘটল। সরাসরি কেউ কিছু না বলতে পারলেও বিষয়টা নিয়ে ভালোই গুঞ্জন, চর্চা হচ্ছে। “বেশি ভালো আসলেই ভালোনা। এদের মাঝেই ঝামেলা থাকার ব্যপারটা প্রবল।” “সততার ভান করে থাকা ব্যক্তিরাই বস্তুত অসৎ প্রকৃতির হয়।” এরকম বহুল প্রচলিত কথাবার্তা বলেই ঠাট্টা করে চলেছে। অথচ কাল অবধি এই তুহিন আহমেদই ছিল গোটা ডিপার্টমেন্টের আদর্শ হ্যাঁ? মনে মনে তাচ্ছিল্যের এক হাসি দিল তুহিন।

হঠাৎই প্রিয়তার কথা মনে পড়ল তুহিনের। নিজের সরলতা আর ভালোবাসার কী ভয়ংকর মায়াজালে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধেছিল সে রুদ্রকে। জ্যোতির কাছে শুনেছে আমের ভিলাকে জীবন্ত করে তুলেছিল ঐ মেয়ে। অথচ সেই কি-না রুদ্রর সবচেয়ে বড় শত্রু! শওকত মীর্জার মেয়ে! আমের ভিলার নিষ্প্রাণ হওয়া, সোলার সিস্টেম কিংবা রুদ্রর ধ্বংস। এসবে প্রিয়তার অবদান ঠিক কতটা ছিল? পুরোটাই কী? ভেবেও কেমন গা শিরশির করে উঠল তুহিনের। ওকে সবটা জানতে হবে। সবটা মানে সবটাই! রুদ্রকে প্রয়োজন ওর। শুধুমাত্র কেইসটা সলভ করার জন্যে না। নিজের জন্যে। একমাত্র রুদ্রই পারবে ওকে নির্দোষ প্রমাণ করতে। রুদ্রর কাছে এমন কিছু আছে যা বিপদে ফেলে দেবে শওকতসহ দেশের নামিদামী কিছু নেতা, মন্ত্রী এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের। যেটা ও নিজেও খুঁজছে। এবং ওর ঘাড়ে এসে পড়া এই অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদের কারণও সেটাই। অর্থাৎ সব সমস্যার সমাধানে এখন একটাই। রুদ্র আমের!

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল সকাল দশটা বাজে প্রায়। ঝট করে উঠে দাঁড়াল তুহিন। সময় নষ্ট করা যাবেনা আর। জ্যোতিকে এখনো নিজেদের কাস্টাডিতে আটকে রাখতে হয়েছে ওকে। আমের ভিলার অবশিষ্ট সদস্যদের সঙ্গে দেখা করা প্রয়োজন। কিন্তু সে সময়টাও পাচ্ছেনা কোনভাবেই। হাতে আর মাত্র সতেরো ঘন্টা। টেবিল থেকে চাবিটা নিয়ে বেরিয়ে পড়ল তুহিন। উদ্দেশ্য, শওকত মীর্জার বাড়ি! খোঁজ নিয়েছে। বাড়িতেই নাকি আছে লোকটা!

শওকত মীর্জার তীক্ষ্ম দৃষ্টি তুহিনের ওপর স্থির। নিঃশব্দে পর্যবেক্ষণ করে চলেছে সে তুহিনকে। তুহিন এসে উপস্থিত হওয়ার পর খবর পাঠানো হয় তাকে। তার ঠিক পনেরো মিনিট পরে বসার ঘরে আসে শওকত মীর্জা। আসন গ্রহন করে দৃষ্টি ফেলল তুহিনের দিকে। তুহিন একা কথা বলতে আগ্রহী। তাই ঘরে উপস্থিত বাকিদের বাইরে দাঁড় করানো হয়।মিনিট খানেক হল শওকতের দৃষ্টি সরেনি তুহিনের ওপর থেকে। একইভাবে তুহিনও খুব গভীর দৃষ্টিতে দেখছে শওকতকে। গতরাতে শানের দাফন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সদ্য ছেলে হারানোর শোক পাথুরে চোখদুটোতে স্পষ্ট। বার্ধক্যের ছাপ যেন একদিনেই কয়েকধাপ বৃদ্ধি পেয়েছে চেহারায়। শরীর ভীষণ দুর্বল। একইভাবে সেই চোখে চাপা এক ক্রোধও দেখতে পেল তুহিন। ছেলের শোকে হৃদয় ভগ্ন তার। নয়তো মনে মনে ঠিকই হাসতো আজ শওকত। ভাবতো, খুবতো ডাঁট দেখিয়ে তাকে অফিসে গিয়ে দেখা করতে বাধ্য করেছিল তুহিন। কিন্তু বিপদে পড়ে আজ নিজ থেকে আসতে হলো তুহিনকে।

নীরবতা ভাঙল শওকতই। শান্ত, শীতল গলায় বলল, ‘ব্রেকফাস্ট?’

তুহিন মেকি হেসে বলল, ‘খেয়ে এসেছি। তবে কফি হলে ভালো হয়।’

শওকত ইশারা করতেই কফি আনতে চলে গেল অনুগত এক কর্মচারী। শওকত একই কন্ঠে বলল, ‘আমার বাড়িতে হঠাৎ কী মনে করে অফিসার?’

লম্বা শ্বাস নিল তুহিন। নিজের কন্ঠে রাজ্যের বিনয় ঢেলে দিয়ে বলল, ‘ শরীর ভালো এখন আপনার?’

জবাব দিলোনা শওকত। খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে সে তুহিনকে। যেন সম্পূর্ণ তুহিনকেই মুখস্থ করে নিচ্ছে সে। জবাব না পেয়ে তুহিন আবার বলল, ‘আমি খুবই দুঃখিত মিস্টার মীর্জা। আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু শানকে বাঁচাতে পারিনি।’

চোখদুটো যেন হঠাৎই জ্বলে উঠল শওকতের। কিন্তু তেঁতে উঠল না। কন্ঠের শীতলতা বজায় রেখেই বলল, ‘আপনার দুঃখ প্রকাশে নিশ্চয়ই আমার ছেলেটা ফিরে আসবেনা।’

‘ তা আসবেনা। কিন্তু আপনাকে এইটুকু জানিয়ে রাখতে চাই। আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলাম।’

‘ জানলাম।’

শওকতের তীক্ষ্ম দৃষ্টি এখনো তুহিনের ওপর স্থির। ঐ চোখ দিয়েই যেন কয়েকবার খু-ন করে ফেলল সে তুহিনকে। মনে মনে হাসল তুহিন। মুখে বলল, ‘ আপনার মেয়ের কোথায়? ওর কথা সেদিনও আপনি আমাকে খুলে বলেন নি আপনি। আজও দেখছিনা কোথাও। নিজের একমাত্র ভাইয়ের মৃত্যুতেও কী আসেনি সে?’

‘ দ্যাটস্ নান অফ ইওর বিজনেস।’ শান্ত স্বরেই বলল শওকত।

মাথা দোলালো তুহিন, ‘ আচ্ছা! যখন রুদ্র আপনাকে ঐখানে ডাকল আপনার উচিত ছিল আমাদের ইনফর্ম করা। তাহলে এই অঘটনটা ঠেকানো সম্ভব হতো।’

এবারও শান্ত তবে খানিকটা আক্রোশমাখা কন্ঠে শওকত জানাল, ‘ হতোনা! বরং আমার ছেলের মৃত্যুর সময় খানিকটা এগিয়ে আসতো।’

“আপনারও।” মনে মনে কথাটা আওড়ালো তুহিন। কিন্তু মুখে বলল, ‘ হয়তো ঠিক বলছেন। কিন্তু পরবর্তী টার্গেট কিন্তু আপনি।’

দৃষ্টির সুক্ষ্মতা বৃদ্ধি পেল শওকতের। সে দৃষ্টি বজায় রেখেই বলল, ‘এমন কেন মনে হল আপনার।’

ঠোঁটের সঙ্গে যেন এবার চোখও হেসে উঠল তুহিনের। বলল, ‘বিষয়টা খুবই অবভিয়াস নয় কী?’

‘ এখানে আসার আসল কারণটা কিন্তু এখনো বললেন না।’ প্রসঙ্গ পাল্টে ফেলল শওকত।

ব্যপারটা বুঝে তুহিন বলল, ‘ চব্বিশ ঘন্টা সময় পেয়েছি আমি। রুদ্র আমেরকে ধরার জন্যে। তাই একটা অনুরোধ করতে এসেছি আপনার কাছে।’

ভ্রুঁকুটি করল শওকত। সন্দিহান কন্ঠে বলল, ‘অনুরোধ?’

‘ হ্যাঁ অনুরোধ। রুদ্র সম্পর্কিত কোনকিছু গোপন করবেন না আপনি। যদি ও কল করে কিংবা আপনাকে কোথাও দেখা করতে ডাকে। প্লিজ, আমাকে জানাবেন।’

‘ আমার ছেলেকে আমারই চোখের সামনে খু-ন করেছে ও অফিসার। ওকে নিজের হাতে খু-ন করার সুযোগ হাতছাড়া করতে মন সায় দিচ্ছেনা যে।’

চেপে রাখা আক্রোশ আর ক্ষোভ হঠাৎই চোখেমুখে প্রকোট হল শওকতের। মনে মনে আরও একবার হাসল তুহিন। মৃদু ঝুঁকে গেল শওকতের দিকে। নরম গলায় বলল, ‘এতো বড় রিস্ক নেবেন? সামনে নির্বাচন। বোকামি হয়ে যাবেনা?’

শওকত কিছু বলার আগেই কফি চলে এলো। বিশেষ অনুগত এক সার্ভেন্ট ট্রেটা এগিয়ে দিল তুহিনের দিকে। তুহিন হাত বাড়িয়ে মগটা নেওয়ার সময়ই ঘটল এক অঘটন। হাতের ধাক্কায় ট্রেসহ কফির মগ উল্টে পড়ল। পড়বিতো পড়, পড়ল গিয়ে শওকতের গায়ের ওপর। ঝট করে উঠে দাঁড়াল শওকত। ব্যস্ত হাতে ঝাড়তে শুরু করল নিজের পাঞ্জাবীটা। তুহিনও উঠে দাঁড়াল। বিব্রত ভঙ্গিতে বলল, ‘ আ’ম সো স্যরি মিস্টার মীর্জা। একদমই খেয়াল করিনি আমি। আরেকটু সতর্ক হয়ে ধরা উচিত ছিল আমার।’

ততক্ষণে শওকতের সাদা পাঞ্জাবীতে কফির দাগ পড়ে গেছে। টাটকা গরম কফি পড়ায় জ্বালাপোড়াও হচ্ছে বেশ। তুহিনের দিকে তাকালোও না শওকত। ব্যস্ত গলায় বলল, ‘ ইটস্ ওকে! বসুন। আমি চেঞ্জ করে আসছি।’
অতঃপর সার্ভেন্টের দিকে তাকিয়ে কন্ঠে মৃদু ক্রোধ ঢেলে বলল, ‘কুকুরে তাড়া করেছিল? আরেকটু সাবধানে সার্ভ করতে পারোনি? যাও আরেক কাপ কফি আনো ওনার জন্যে।’

রাগটা বস্তুত তুহিনের ওপরই ঝাড়ল শওকত। সে নিয়ে কোন সংশয়ের অবকাশ নেই। অতি কষ্টে হাসিটা চেপে রেখে তুহিন বলল, ‘ তার আর দরকার নেই। আপনি প্লিজ চেঞ্জ করে আসুন। আর কফি পড়া জায়গাটায় পানি দিয়ে নেবেন।’

ফোঁস করে একটা শ্বাস ফেলল শওকত। সার্ভেন্ট মেয়েটার দিকে আরও একবার অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে পা বাড়াল নিজ কক্ষের দিকে। সেদিকে তাকিয়ে থেকেই সোফায় আয়েশ করে বসল তুহিন। চোখে অদ্ভুত কৌতুক। দেখল, মহিলা সার্ভেন্ট ভয়ে কাচুমাচু হয়ে ভাঙা কফির মগটা তুলে নিল। তুহিনের দিকে অসহায় এক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চলে গেল নিজ কাজে।

কয়েক সেকেন্ড ওভাবেই বসে রইল তুহিন। যখন খেয়াল করল সত্যিই এখন আর কেউ আসবেনা। ঝট করে উঠে দাঁড়াল ও। টি-টেবিলের ওপর শওকত মীর্জার দুটো ফোন রাখা আছে। তার পার্সোনাল নাম্বার কোন ফোনে সেটা জানে তুহিন। তাই তুলে নিল ছোট অ‍্যান্ড্রোয়েট ফোনটা। দ্রুত ফোনের কভার খুলে ফেলল। ভাগ্য সহায় হল তুহিনের। চাবিটা কভারেই ছিল। তার সাহায্যে দ্রুত সিমকার্ড বের করে ফেলল। ওর পকেট থেকে দ্রুত বের করল সস্তা একটা বাটন ফোন। যার ব্যাক কভার এবং ব্যাটরি আগে থেকেই আলগা করে রাখা। সিমটা ইনসার্ট করে ব্যাটরি লাগাল দ্রুত। ফোন সুইচড অন করল। ডায়াল করে বের করল নাম্বার। নিজ ফোনে দ্রুত ছবি তুলে রাখল তার। তারপর একই গতিতে পুনরায় শওকতের অ‍্যান্ড্রোয়েডে তার সিম পুনর্স্থাপিত করে রেখে দিল জায়গামতো। অতঃপর এমনভাবে নিজ জায়গায় বসে রইল যেন কিছুই হয়নি। এতো দ্রুত শেষ কবে কাজ করেছে চেষ্টা করেও মনে করতে পারল না তুহিন। আপন মনেই হাসল ও।

কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরে এলো শওকত মীর্জা। শরীর ধুয়ে, পোশাক চেঞ্জ করে এসেছে সে। এসেই আরও একবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ফেলল তুহিনের দিকে। তুহিন মেকি হেসে উঠে দাঁড়াল। এগিয়ে গিয়ে বলল, ‘ আজ আর বসবোনা মীর্জা সাহেব। উঠতে হবে আমাকে।’

শওকত ঠান্ডা চাহনী বজায় রেখেই বলল, ‘কফিতো খাওয়া হলোনা আপনার। আরেকটু বসুন। হয়ে যাবে এক্ষুনি।’

‘ আজ আর সময় নেই মীর্জা। চব্বিশ ঘন্টা সময় পেয়েছি। ইতিমধ্যে প্রায় নয় ঘণ্টা চলে গেছে। অনেক কাজ।’

ছোট্ট শ্বাস ফেলে মাথা দোলালো শওকত, ‘ বেশ! আসুন তবে।’

আরও একবার বিনয় মাখিয়ে হাসল তুহিন। বলল, ‘আরও একবার বলছি মীর্জা সাহেব। এবার আমাদের কাছে কিছু লুকোবেন না। এতে আপনার ক্ষতি বৈ কোন লাভ হবেনা। এটা আমার অনুরোধ ভাবতে পারেন।’

‘ মনে থাকবে।’

এগিয়ে গিয়ে শওকত মীর্জাকে জড়িয়ে ধরল তুহিন। একদম কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল, ‘এতোরকমের মিথ্যে ভাওতাবাজির মধ্যে একটা সত্যি জানেন মীর্জা? আপনার ছেলের মৃত্যু নিয়ে আমার আফসোস। সত্যিই আফসোস হচ্ছে। ওর মৃত্যুটা রডের আঘা-তে নয়, ফাঁসির দঁড়িতে দেখার ইচ্ছা ছিল আমার। আপনার ক্ষেত্রে সে আফসোসটা রাখবোনা আমি।’

জ্বলে উঠল শওকত মীর্জার শেয়াল সমতূল্য চোখজোড়া। আক্রোশে অস্থির হয়ে উঠল সর্বাঙ্গ। কিন্তু অদ্ভুত বলে ধৈর্য্য ধরে নিজেকে সামলে রাখল সে। ফিসফিসিয়ে নয়; প্রচন্ড ক্রোধে হিশহিশিয়ে বলল, ‘আরও একবার আফসোস করতে হবে তোমাকে অফিসার। আগামী পনেরো ঘন্টার মধ্যে তোমার সাসপেনশান নিশ্চিত করব আমি। ডিপার্টমেন্ট থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করা হবে তোমাকে। সে অপমানটা নিয়ে বাঁচতে পারবেতো? আর যদি সেটা নাও হয়। পৃথিবী থেকে তোমাকে চিরবিদায় জানানোর ব্যবস্থা আমি করব। অনেক কিছু জেনে ফেলেছো তুমি। যা আমার জন্যে ক্ষতিকর। জীবিত থাকতে আমায় শান্তি দেবেনা তুমি। তা আমি জেনে গেছি।’

তুহিন দেঁতো হেসে ছেড়ে দিল শওকত মীর্জাকে। চোখে চোখ রেখে বলল, ‘ আসি তবে?’

শওকত মীর্জা একটা শব্দও উচ্চারণ করল না মুখ দিয়ে। বাজ পাখি ঠিক যেভাবে নিজ শিকারের দিকে তাকিয়ে থাকে। ঠিক সেভাবেই তাকিয়ে দেখে গেল তুহিনকে। ঠোঁটে বিনয়ের হাসি ঝুলিয়ে রেখেই তুহিন ত্যাগ করল শওকত মীর্জার ফ্ল্যাট।

শওকত যখন উপলব্ধি করল তুহিন চলে গেছে। হুঙ্কার দিকে ডেকে উঠল বাইরে অবস্থানরত নিজের লোকেদের। দাঁতে দাঁত পিষে বলল, ‘ এই ছোকরা শেয়ালের চেয়েও কয়েক কাঠি ওপরের ধূর্ত। কফি পড়ে যায়নি। ইচ্ছা করে ফেলেছে বেজ*টা। ভালোমতো খোঁজ। নিশ্চয়ই কিছু রেখে গেছে।’

কথামতোই কাজ করল অনুগত কর্মচারীগণ। প্রায় চোষে ফেলল ঘরটা। কিন্তু কিছুই পেলোনা। অকারণেই সবগুলোকে অকথ্য গালি ছুড়ল শওকত। সন্দিহান হয়ে নিজেও খুঁজল কিছুক্ষণ। কিন্তু কিছুই পাওয়া গেলোনা। রাগে ক্ষোভে দিশেহারা বোধ করল সে। তুহিনের আসার উদ্দেশ্যটা তবে কী?

অনেকক্ষণ হল শওকতের বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে এসছে তুহিনের গাড়িটা। গন্তব্য পুনরায় গোয়েন্দা অফিস। ঠোঁটে ঝুলে আছে রহস্যময় এক হাসি। হঠাৎই শওকতের বাড়িতে তুহিনের আবির্ভাবের কারণ নিয়ে নিশ্চয়ই মাথার চুল ছিড়ছে লোকটা। কিছুই পায়নি। পাওয়ার কথাও না। বাইরের পুরো অংশটা সিসিটিভি কভারে থাকলেও; শওকতের বেডরুম, ঐ বসার ঘরসহ আর একটা রুমে সিসি ক্যামরা নেই। সুতরাং ঐ সময়টাতে কী ঘটেছে জানা সম্ভব নয় শওকতের পক্ষে। ফোনের লক নিয়ে দারুণ নিশ্চিন্তে আছে সে। নিশ্চয়ই সারাঘরে অন্যকোন ডিভাইস খুঁজে বেড়াচ্ছে। হাসি প্রসারিত হল তুহিনের ঠোঁটে। ডিভাইসতো আছেই! ছোট্ট এক মাইক্রোফোন। তবে ঘরে নয়। শওকতের পাঞ্জাবির পকেটে! এমনি এমনিতো জড়িয়ে ধরেনি ও ঐ নরপিশাচকে। ওটা কেবলই এক টুক্কা। লেগে গেল ভালো। না লাগলেও সমস্যা নেই।
গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে দিল তুহিন। জ্যোতির কাছে যেতে হবে ওকে। কথা বলতে হবে আমের ভিলার বাকি সদস্যদের সাথে। হাতে সময় খুবই কম। এদিকে তমাল ফারিয়া নিজেদের কাজ কতটুকু এগোতে পেরেছে সেটা নিয়েও যথেষ্ট চিন্তা হচ্ছে ওর।

মুখে আস্তো একটা পান পুড়ে নিল হুসাইন আলী। চকচকে চোখে চাইল সামনের চেয়ারে বসে থাকা দুজন দম্পতির দিকে। টেবিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে চেয়ারে বসা লোকটার ছোট ভাই। সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাদের পোশাক আসাক লক্ষ্য করছিল হুসাইন আলী। মধ্যবয়স্ক এরা। দুজন ছেলের পড়নেই লুঙ্গি। গায়ে পুরোনো আমলের চেইকের শার্ট। দাঁত উঁচু বড় ভাইয়ের মাঝারি একখান গোফ থাকলেও, ছোটভাইয়ের নেই। উপস্থিত মহিলাকেও ভালোভাবে লক্ষ্য করল সে। ছাপার শাড়ি জড়িয়েছে গায়ে। কানে, গলায় পাতলা স্বর্ণালঙ্কার। হাতেও পাতলা দুখানা চুড়ি আছে। মাথায় ঘোমটা টেনে ধরে রেখেছে শাড়ির আঁচল। মুখভর্তি পান। গালে একটা বড় তিলও আছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে হঠাৎই টাকার মুখ দেখেছে ফকিন্নীর দল। সে টাকাতেই এখন ঘর তোলার সাধ হয়েছে। হুসাইন গম্ভীর কন্ঠে বলল, ‘মালগুলো কী পৌঁছে দিতে হবে আপনাদের ঠিকানায়? নাকি এসে নিয়ে যাবেন?’

ঘরটা অস্বস্তিকর আওয়াজে পরিপূর্ণ। সিমেন্টপোড়া ঘ্রাণের সঙ্গে আগুনের লোহা পোড়ার তীক্ষ্ম গন্ধ মিশে অদ্ভুত এক স্মেল আসছে। সঙ্গে বিভিন্ন মেশিন আর লোহা পেটানোর মৃদু শব্দ থেকেও নিস্তার নেই। ছদ্মবেশী তমাল তার আলগা উঁচু দাঁত বের করে হাসল। বলল, ‘ এইসে নিয়া যাওয়া ভীষণ ঝামেলায় বুঝলেন নি? পাডাইয়া দিলেই ভালো হয়। কী কও বউ?’

কপাল কোঁচকালো ছদ্মবেশী ফারিয়া। পান চিবুতে চিবুতে বলল, ‘ তোমারে ভরসা করিনা আমি। একটা কামও জীবনে হইছে তোমার তে? দেওর জি যদি নিতে আহো তাইলেই কমু নাইলে না? পারবানি দেওর জি?’

টেবিল ধরে দাঁড়িয়ে থাকা নাঈম কন্ঠে বিরক্তি ঢেলে বলল, ‘ আমি পারতাম না। এমনেই জোর জবরদস্তি কইরা লইয়া আইছো। এইহানে আমার কোন কাম আছিল? আছিল না? আপনেই কন ভাই? এগ্লা কিনতে আইতে তিনজন লাগে?’

তমাল বলল, ‘ আইচ্ছা হইছে। পাডাইয়াই দিবোনে। কী কন ভাই? পারতেন না?’

বিরক্তি নিয়ে এতক্ষণ এদের পারিবারিক গ্যাঞ্জাম শুনছিল হুসাইন আলী। এবার ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে বলল, ‘ তা পারব। তবে খরচ অনেক বাড়বে কিন্তু।’

‘ আরে ঐ নিয়া কোন চিন্তাই করবেন না। আমরা_’

‘ চুপ করো!’ ধমকে তমালকে থামিয়ে দিলো ফারিয়া। কপট রাগ দেখিয়ে বলল, ‘ এএএহ্! আইছে আমার লাকপতি! কত বেশি লাগব কন দেহি। অ‍্যার কতায় কান দিয়েন না।’

নিজের ছোট নোটখাতাটা খুলল হুসাইন আলী। যা যা লাগবে এবং পাঠানোর খরচসহ খসখস করে লিখল একটা কাগজে। ক্যালকুলেটর দিয়ে হিসেব কষল। অতঃপর তমালের দিকে তাকিয়ে জানিয়ে দিল কত খরচ হবে তার।

ঘোর আপত্তি জানিয়ে বসল ফারিয়া। মাথা দুলিয়ে বলল, ‘ না না! এতো টেহা দিবার পারতাম না। ঐ হুনো! তোমার চাচার ট্রাক আছেনা?’

বউয়ের ভয়ে ভীত পুরুষের মতোই কাচুমাচু ভাব করল তমাল। সসংশয়ে বলল, ‘ হ আছেতো!’

‘ ওনার ঐডা দিয়াই নেওন যাইব। ওনারে কইবা একদিনের লইগ্গা লাগব আমাগো। পারবানা?’

‘ আইচ্ছা কইমুনে কতা! মনে হয় পারতো!’

‘ ওতো মনে হওন টওন বুজিনা। কতগুলান টেহা দিছো গতবছর। হুদাইনি?’

আবার কৃত্রিম উঁচু দাঁত বের করে হাসল তমাল। হ্যাবলার মতো তাকাল হুসাইন আলীর দিকে। বলল, ‘এইলাইগ্গাই সবহানে বউরে লইয়া আহি বুঝলেন নি? বউ আমার অনেক চালাক। হিসাব কিতাব বোঝে। আমি আবার অতো হিসাব কিতাব বুঝিনা। অংকে কাচা।’

দাঁতে দাঁত পিষল ফারিয়া। মনে মনে গোষ্ঠী উদ্ধার করল তমালের। সুযোগ পেয়ে এতো বউ বউ করার মানেটা কী? আশ্চর্য! বাইরে বের হোক একবার। তারপর দেখছে একে। বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে আরও একবার ওদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অর্ডার টুকে নিল হুসাইন আলী। অতঃপর বলল, ‘ দশ তারিখ লাগবে আপনাদের তাইতো?’

তমাল বলল, ‘ হ। তয় জানলাগুলান পনেরো তারিখ দিলেও হইব। সুন্দর কইরা বানাইবেন কিন্তু।’

‘ আচ্ছা! আর কিছু?’

‘ না, না। তয় এহন কত দেওন লাগব কন! কনফারাম কইরা যাই।’

এডভান্স জানিয়ে দিল হুসাইন আলী। সেসব মিটিয়ে সবিনয়ে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে এলো ওরা তিনজন। ওরা বের হতেই স্বস্তির শ্বাস ফেলল হুসাইন আলী। তিনটা মানুষ এতক্ষণের বকবকে মাথা ধরিয়ে ফেলছিল তার। মাল কিনতে এসেছে না তার মাথা খেতে এসেছে বোঝা যায়। নোট খানা বন্ধ করল হুসাইন। বাঁচাল তিনটে বিদায় নেওয়ায় স্বস্তি নিয়ে গা ছেড়ে দিল নিজের ইজি চেয়ারে। জানলো না, সে যখন তমাল, ফারিয়ার বাঁচালপণায় অতিষ্ঠ; তখন খুবই দক্ষ হাতে একটা মাইক্রোফোন তার টেবিলের নিচে আটকে দিয়ে গেছে অফিসার নাঈম।

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here