অন্তর্নিহিত কালকূট লেখনীতে: অনিমা কোতয়াল ১০২.

0
55

অন্তর্নিহিত কালকূট
লেখনীতে: অনিমা কোতয়াল

১০২.

শাওয়ার থেকে ঠান্ডা শীতল জল নেমে আসছে প্রিয়তার ন*গ্ন শরীরে। শুকনো র*ক্তগুলো পানিতে গলে নেমে যাচ্ছে বাথরুমের ফ্লোরে। প্রিয়তার চোখজোড়া বন্ধ। ঠান্ডায় কেঁপে কেঁপে উঠছে। নিজের মাকে খু*ন করার পর ঠিক এভাবেই শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে শরীরের র*ক্ত ধুয়েছিল ও। তবে সেদিনের র*ক্তগুলো শুকনো ছিলনা। ছিল টাটকা, পরিমাণে আরও বেশি। ধীরে ধীরে চোখ খুলতেই যেন এক লম্বা সময়ের ঘোর কাটল প্রিয়তার। রুদ্রর হঠাৎ আগমন স্তব্ধ করে দিয়েছিল ওকে। মস্তিষ্ক অকেজো হয়ে গিয়েছিল, শরীর থমকে গিয়েছিল। কিন্তু ঠান্ডা পানি মাথায় পড়তেই সচল হয়ে ওঠল মস্তিষ্ক। ঠিক আগের মতো।
ধরা পড়ে গেছে ও। আড়াই বছর! ঠিক আড়াইটা বছরের সাজানো পরিকল্পনায় পানি পড়ে গেছে, তাও এই শেষ মুহুর্তে! যখন ও নিজের লক্ষ্যের খুব কাছে ছিল। দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট পিষে ধরল প্রিয়তা। নিজের ওপর ভয়ানক রাগ হলো। কোথায়? কোথায় ভুলটা করল ও? কীকরে করল? সজোরে একটা কিল বসালো ওয়াশরুমের দেয়ালে। ব্যথা পেল, কিন্তু পাত্তা দিলোনা। ধীরেসুস্থে নিয়ন্ত্রণ করল নিজেকে। মাথা গরম করে লাভ হবেনা। রুদ্রর হাতে বন্দি সে এখন। দাবার ছক পাল্টেছে। সম্পূর্ণ ঘুরে গেছে খেলাটা। সুতরাং ওকেও নতুন করে চাল সাজাতে হবে। শেষ মুহূর্ত এসে হেরে যাওয়া সম্ভব নয়। কোনভাবেই না।
হ্যাঙারে ঝোলানো পোশাক দেখে অবাকই হল প্রিয়তা। শার্ট আর ট্রাউজার! অর্থাৎ প্রিয়তা রূপে আর দেখতে চায়না রুদ্র ওকে। কিন্তু পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার আগে, রুদ্র কী ভাবছে সেটাতো জানতে হবে ওকে। ওকে কোথায়, কেন নিয়ে এসেছে রুদ্র; জানতে হবে। তারজন্যে রুদ্রর সামনে ওকে প্রিয়তা হয়েই থাকতে হবে ওকে। রাণী মীর্জা না। রাণী মীর্জিকে দেখলে আরও বেশি হিংস্র হয়ে উঠবে সে।

রুদ্র সিগারেট ধরিয়েছিল একটা। তোষকের ওপর দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে টানছিল অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে। ওয়াশরুমের দরজা খোলার আওয়াজে চোখ তুলে তাকাল। চোখদুটো এখনো কেমন লালচে, পাথুরে, ভাবাবেগহীন। প্রিয়তা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল রুদ্রর দিকে। কিন্তু ধারালো সেই চোখে চোখ রাখতে পারল না। মাথা নিচু করে এগিয়ে আসল খানিকটা।
সিগারেটটা অ‍্যাশট্রেতে ফেলে উঠে দাঁড়াল রুদ্র। এগোতে এগোতে তীক্ষ্ম নজরে লক্ষ্য করল নিজের স্ত্রীকে। আকাশি রঙা একটা শার্ট আর কালো ট্রাউজার পরনে। ভেজা চুলগুলো লেপ্টে আছে ঘাড়, কাঁধ, পিঠজুড়ে। হলদে জেল্লায় চকচক করছে ত্বক। জিন্সের পকেটে হাত রেখে রুদ্র বলল, ‘ওয়াশরুমে বসে এতক্ষণ পালানোর পরিকল্পনা সাজিয়ে থাকলে বলব, বাতিল করে দাও। দ্যাট ওন্ট ওয়ার্ক।’

প্রিয়তা চোখ তুলল, ‘আপনার কেন মনে হলো আমি পালাব?’

ভ্রু বাঁকিয়ে প্রিয়তার দিকে তাকাল রুদ্র। ঠোঁটে ব্যঙ্গাত্মক হাসি ফুটিয়ে বলল, ‘কারণ নেই বলছো?’

প্রিয়তা নিরুত্তর। রুদ্র কন্ঠে ব্যঙ্গ বজায় রেখেই বলল, ‘ ওহ্। ভুলেই গিয়েছিলাম। আমের ভিলার কিছু সদস্যতো এখনো বেঁচে আছে। ওদের খু*ন না করেতো তুমি পালাবে না। স্পেশালি আমাকে। ঠিক না?’

‘ রুদ্র!’

‘ ভুল বললাম?’

‘ আপনাকে খু*ন করব আমি?’

‘ বাকি রেখেছো নাকি?’

কথাটা বলার সময় খুব সামান্য কেঁপে উঠল রুদ্রর গলা। প্রিয়তার চকিতে তাকাল। কম্পনটুকু খুব সুক্ষ্ম হলেও ঠিক টের পেল প্রিয়তা। নামিয়ে নিল দীঘল, জলে টলমল করা চোখজোড়া। ভেতরে কেমন অদ্ভুত কম্পন শুরু হল ওর। হঠাৎই ওর কবজি ধরে নিজের দিকে টানল রুদ্র। কঠোর গলায় বলল, ‘ অস্ত্র হাতে থাকলে তোমাকে টেক্কা দেওয়া কঠিন। সেকথা আমি জানি। তোমার মগজের ধার নিয়ে কোনরকম ভুল ধারণা নেই আমার। দুইবছরেও তোমার মন ছুঁতে পারিনি। তাই তার কুটিলতা সম্পর্কে শতভাগ আমার জানা নেই। কিন্তু তোমার শরীর আমি ছুঁয়েছি। একবার দু’বার না, অসংখ্যবার। খুব গভীরভাবে। তাই এই শরীর এবং তার ক্ষমতা সম্পর্কে আমার চেয়ে ভালো পৃথিবীর অন্যকেউ জানেনা। বাকিসব ক্ষেত্রে যাই হোক, গায়ের জোরে তুমি আমার কাছে নিতান্তই একটা শিশু। সেকথা তুমিও অস্বীকার করতে পারোনা।’

প্রিয়তা বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইল রুদ্রর। রুদ্র পেছন থেকে বের করল নিজের এম.টি.নাইন। পি*স্ত*লটা প্রিয়তার দিকে তুলে ধরল। হাতের চাপ বৃদ্ধি করে বলল, ‘সুতরাং। আমার সামনে গায়ের জোরে কিছু করাটা তোমার সবচেয়ে বড় বোকামি হবে।’
চোখের ইশারায় তোষকের কোণাটা দেখিয়ে দিল রুদ্র, ‘চুপচাপ গিয়ে বসো।’

কথা বাড়াল না প্রিয়তা। চুপচাপ গিয়ে তোষকের কোণে গিয়ে বসল। রুদ্র বসল না। প্রিয়তাকে দ্বিতীয়বার বাঁধলোও না। দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়াল। ফোনে কিছু করছে ও। প্রিয়তা তাকিয়ে রইল রুদ্রর দিকে। রুদ্রর নীরবতা মনে খচখচ করে বিঁধছে ওর। অদ্ভুত শান্ত আজ রুদ্র। দু-বছরের সংসার জীবনে এতোটা শান্ত কখনও দেখেনি রুদ্রকে। কুহুর রে*প, রাশেদের মৃত্যু, ওদের সন্তানের মৃত্যু, এসব ঘটনায় রুদ্র থমকে ছিল, স্তব্ধ হয়েছিল। কিন্তু কখনও এতোটা শান্ত, স্থির হয়ে যায়নি। এ যেন ঝড়ের পূর্বের নিস্তব্ধতা!

প্রিয়তাও তো কেমন নীরব এক ঘোরে ছিল এতক্ষণ। বিগত কয়েকঘন্টাকে কোন ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন মনে হচ্ছিল। এমন দুঃস্বপ্ন প্রিয়তা প্রায়ই দেখতো। রুদ্র সব জেনে গেছে। চোখভর্তি ঘৃণা নিয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। ধিক্কার দিয়ে দূরে ছুড়ে দিয়ে বলছে, ছিঃ! প্রিয়তার দম বন্ধ হয়ে আসতো। গলায় সমস্ত চিৎকার আটকে যেতো। এরপর ঘুম ভেঙ্গে যেতো ওর। ঘামে ভিজে উঠতো গোটা শরীর। চারপাশে চোখ বুলিয়ে বুঝতো স্বপ্ন ছিল। দুঃস্বপ্ন। রুদ্রতো ওর পাশেই ঘুমিয়ে আছে। স্বস্তিতে হৃদয় ঠান্ডা হয়ে যেতো প্রিয়তার। রুদ্রর বুকে নিজেকে গুটিয়ে পুনরায় ডুবে যেতো শান্তির ঘুমে।
কিন্তু সেই দুঃস্বপ্ন যখন বাস্তব হয়ে ধরা দিল, প্রতিক্রিয়াহীন হয়ে পড়ল ও। কেমন একটা অদ্ভুত ঘোরে ছিল ঐ কয়েকটা ঘন্টা। অথচ রুদ্র এতো নির্বিকার কীকরে? ও রুদ্রর স্ত্রী। রুদ্রর ভালোবাসা। গত দুবছর অসম্ভব আদরে বুকে আগলে রেখেছিল রুদ্র ওকে। আর আজ যখন সে এতোবড় সত্যির মুখোমুখি হয়েছে। ওর কী কষ্ট, রাগ, ঘৃণা কোনটাই হচ্ছেনা? যেখানে এসব আজ চরম সীমায় থাকার কথা, যেখানে প্রশ্নবাণ আর আঘাতে প্রিয়তাকে ওর ঝলসে দেওয়ার কথা, সেখানে_! কবে জেনেছিল রুদ্র সব? কতটা সময় নিয়েছে নিজেকে সামলাতে? কী ঘটেছিল মাঝের এই সময়টাতে!

কেটে গেছে আরও কিছু মুহূর্ত। দেয়াল ঘেঁষেই ছোট্ট একটা টূলে বসে আছে রুদ্র। এম.টি.নাইন পিস্তলটা এখনো হাতে। অপরহাতে প্রায় ফুরিয়ে আসা সিগারেট। নিকোটিন পোড়া ধোঁয়া ছড়িয়ে জমাট বেঁধে গেছে বদ্ধ ঘরটাতে। রুদ্র দৃষ্টি শূণ্য। শান্ত, নির্বিকার। চোখজোড়া যেন স্থির হয়ে আছে অদূর কোন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায়। তোষকের ওপর হাঁটু গুটিয়ে বসে আছে প্রিয়তা। দৃষ্টি এখনো রুদ্রর দিকে স্থির।

হঠাৎই প্রিয়তার দিকে তাকাল রুদ্র। ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে রুদ্র বলল, ‘কিছু বলবে মনে হচ্ছে?’

‘ এতো স্বাভাবিক কীকরে আপনি?’ প্রিয়তার কন্ঠে স্পষ্ট বিস্ময়।

‘ কাঁদাতে চেয়েছিলে নাকি?’

‘ আঘাততো করেছি!’

‘ অনুভব করেছো সেটা?’

আরও একবার প্রিয়তাকে নিরুত্তর করে দিল রুদ্র। সব কথা অসম্ভব কষ্ট হয়ে কেমন গলায় দলা পাকিয়ে যাচ্ছে। প্রিয়তা বুঝতে পারছেনা পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে। ও যা অনুভব করছে তা প্রকাশ করতে পারছেনা। কোন এক জড়তা যেন আষ্টেপৃষ্ঠে স্থির রেখেছে ওকে। অনেকটা মানসিক যুদ্ধ করেই নিজেকে সামলালো ও। চোখে জল থাকলেও কন্ঠ শক্ত করে বলল, ‘ আমাকে এখানে আটকে রেখেছেন কেন?’

মৃদু হেসে সিগারেটের প্যাকেট বের করল রুদ্র। আরও একটা সিগারেট বের করল। প্রিয়তা অবাক হয়ে দেখল রুদ্র আজ পরপর সিগারেট ধরাচ্ছে। এই নিয়ে তিনটা। এভাবে একটানা কখনও সিগারেট খেতে দেখেনি ও রুদ্রকে। প্রিয়তার ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে রুদ্র বলল, ‘তোমার সঙ্গে ঠিক কী করা উচিৎ ছিল বলে তোমার মনে হচ্ছে?’

‘ যা করার উচিৎ সেটা এখনো করেননি। প্রশ্নটা সেকারণেই।’

ধীরেসুস্থে আবার একটা সিগারেট ধরালো রুদ্র। মুখভর্তি ধোঁয়া ছেড়ে বলল, ‘ তোমার মনে আছে বিশ্বাসঘাতকদের কীকরে শাস্তি দিতাম আমি? থাকার কথা! অনেক রিসার্চ করেছো আমাকে নিয়ে।’

কথাটা বলেই উটে দাঁড়াল রুদ্র। প্রিয়তার ঠিক সামনে এসে হাঁটু ভেঙ্গে বসল। ধারালো দৃষ্টিতে প্রিয়তার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ওরা কেবল তথ্য পাচারের কাজ করেছিল। ধোকা দিয়েছিল আমায়। তোমার কৃতকর্মের সামনে সেসব খুবই ছোট অপরাধ। পরিণামটা এক হবে ভাবলে কীকরে?’

‘ কী জানেন আপনি? কী করেছি আমি?’ প্রশ্নটা করতে গিয়ে গলা কেঁপে উঠল প্রিয়তার।

হঠাৎই রুদ্র তীক্ষ্ম চোখে যেন আগুন জ্বলে উঠল। এতক্ষণের নির্বিকারত্ব গিলে খেল ভেতরে দাবিয়ে রাখা আক্রোশ। শক্ত হাতে হাতে একপ্রকার খামচে ধরল প্রিয়তার চোয়াল। ব্যথায় চোখ বুজে ফেলল প্রিয়তা। অতঃপর হতভম্ব চোখে তাকাল রুদ্রর দিকে। ওর প্রতি রুদ্রর এইরূপ ব্যবহার এই প্রথম। রুদ্র দাঁতে দাঁত পিষে বলল, ‘ আর ইউ শিওর তুমি আমার মুখে শুনতে চাও? কিন্তু আমি বলে শেষ করতে পারব বলে আমার হয়না। বলার মাঝেই হয়তো খু*ন করে ফেলব তোমাকে। কিন্তু এতো সহজে সে দিনটা আসবেনা। মৃত্যু নামক মুক্তি এতো সহজে দেবনা আমি তোমাকে।’

শেষের বাক্যটা অতিরিক্ত শীতল গলায় বলল রুদ্র। অজান্তেই কেমন কেঁপে উঠল প্রিয়তা। চোখে তখনও তীব্র অবিশ্বাস। রুদ্রর বলা কথাগুলো কানে প্রতিধ্বনিত্ব হচ্ছে যেন। আরও জোরে চোয়ালটা খামচে ধরল রুদ্র। চোখ বেয়ে আবার পানি গড়িয়ে নাভল প্রিয়তার। আরও কিছু বলতে গিয়েও বলল না রুদ্র। ঝাড়া দিয়ে ছেড়ে দিল ওকে। লম্বা শ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়াল। শক্ত দৃষ্টিতে প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘বাইরে যাচ্ছি। পালানোর কোনরকম চেষ্টা করোনা। দরজাটা তালা মেরে যাচ্ছি। ওয়াশরুম কিংবা অন্যকোথাও কোন এক্সিট ওয়ে নেই।’

প্রিয়তাও বসে থাকল না আর। উঠে রুদ্রর পথ আটকে দাঁড়াল। দাঁড়িয়ে গেল রুদ্র। নির্বিকার দৃষ্টিতে তাকাল প্রিয়তার মুখের দিকে। প্রিয়তার গাল চোখের জলে ভিজে একাএকার হয়ে গেছে। কমলাটে ঠোঁটজোড়া কেঁপে কেঁপে উঠছে। প্রিয়তা অস্থির গলায় বলল, ‘আমার প্রশ্নের উত্তর দিন রুদ্র? কী জানেন আপনি? কার কাছ থেকে শুনেছেন? কতটা শুনেছেন?’

রুদ্র পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিল। যেতে দিলোনা প্রিয়তা। শক্ত হাতে শার্ট খামচে ধরল ওর। অনুরোধের সুরে বলল, ‘ প্লিজ রুদ্র। কে বলেছে আপনাকে আমার সম্পর্কে? কবে বলেছে? মাঝখানে কী হয়েছিল? আমার জানা দরকার। বলুন আমাকে। প্লিজ!’

রুদ্র জবাব দিলোনা। কেবল ছাড়িয়ে নিতে চাইল নিজের শার্ট। কিন্তু প্রিয়তা চমকে দিল রুদ্রকে। হঠাৎই জাপটে ধরল ওকে। খানিকটা টাল হারাল রুদ্র। প্রিয়তা কেঁদে দিয়ে বলল, ‘আপনি আমার ওপর খুব রেগে আছেন তাইনা? তাহলে রাগ করুন না? দেখান রাগ আমার ওপর। আপনার মনে আছে, আপনি একদিন বলেছিলেন আমায় কোনদিন ঘৃণা করতে পারবেন না। প্রয়োজনে তাই করুন। ঘৃণা করুন। সব রাগ ঢেলে দিন। দরকারে মারুন আমাকে। তবুও এভাবে চুপ করে থাকবেন না। এমন নির্বিকার হয়ে যাবেন না। আমি সহ্য করতে পারছিনা রুদ্র। আমি পারছিনা মেনে নিতে।’

বলতে বলতে সশব্দে কেঁদে ফেলল প্রিয়তা। হাত মুঠো করে দাঁড়িয়ে থাকল রুদ্র। নড়ল অবধি না। রুদ্রর বুক থেকে মাথা তুলে ওর চোখের দিকে তাকাল প্রিয়তার। ঘনপল্লব ভিজে চোখদুটোর সৌন্দর্য যেন বেড়ে গেছে কয়েকগুন। রুদ্র তাকিয়ে দেখল সেই সৌন্দর্য। সেই আকর্ষণ। এক হাত উঁচু করে আলতো করে স্পর্শ করল প্রিয়তার চোখের জল। প্রিয়তা চোখভর্তি আশা নিয়ে তাকাল রুদ্রর দিকে। শীতল বাতাস এসে যেন পরিপূর্ণ করে দিল অন্তরাত্মাকে। রুদ্র হাত নিজের চোখের সামনে রেখে বলল, ‘একটা কথা ভাবছি।’

কান্নার মাঝেও সপ্রশ্ন চোখে তাকাল প্রিয়তা। কিছুক্ষণ সময় নিয়ে বলল, ‘কী?’

‘কারো চোখের পানি এতোবেশি সস্তা হয় কীকরে?’

কথাটা বলে আর দাঁড়ালনা রুদ্র। পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে গেল ঘর ছেড়ে। সশব্দে বন্ধ করে দিয়ে গেল দরজাটা। প্রিয়তা ওখানেই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল কিছুক্ষণ। কিছুক্ষণ আগে পাওয়া শীতল বুকটা মরুভূমির মতো খাঁ খাঁ করে উঠল। চোখ মুছে স্বাভাবিক করল নিজেকে। ধীর পায়ে গিয়ে আবার সেই তোষকের ওপর দ ভঙ্গিতে বসে দেয়ালে হেলান দিল। ধীর গতিতে বন্ধ করে ফেলল চোখজোড়া। এতোগুলো বছরে কখনও এমন গোলকধাঁধায় পড়েনি ও। ওর সামনে সবটাই সবসময় পরিষ্কার ছিল। কিন্তু আজব এক ধোঁয়াশায় তলিয়ে গেছে ও। ঠিক যেমন ধোঁয়াশায় এই দুবছর ডুবিয়ে রেখেছিল রুদ্রকে। ভুল ওর হয়েছে সেটা ও বুঝতে পারছে। কিন্তু মাঝের ঐ সময়টাতে কল্পনাতীত কিছু ঘটে গেছে যা প্রিয়তার জন্যে কল্পনাতিত। বদ্ধ ঘরটার চারপাশে চোখ বুলাল প্রিয়তা। বের হওয়ার উপায় নেই। কোথায় গেল রুদ্র? কী করতে চলেছে? এখানে আর কে আছে? প্রথমবার! আজ প্রথমবার রুদ্রকে বুঝে উঠতে পারছেনা প্রিয়তা। এর চেয়ে ভয়ংকর কিছু নেই!

*

প্রায় তিনঘন্টার মতো রুমটাতে একা পরে আছে প্রিয়তা। প্রায় হাজারটা চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে মাথায়। যেকোন পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রেখে ভাবতে পারাটা রাণী মীর্জার সবচেয়ে বড় গুণ। কিন্তু শরীর সঙ্গ দিচ্ছেনা আজ। কাল রাত থেকে এখনো অবধি কিছু খায়নি ও। রুদ্রর দেওয়া ক্লোরোফমের এফেক্টটা এখনো আছে। দুর্বল লাগছে, তারসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মাথাব্যথা।
দরজা খোলার শব্দে ধ্যান ভাঙল প্রিয়তার। মনে করল রুদ্র এসেছে। ক্লান্ত ভঙ্গিতে দরজার দিকে তাকাতেই বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে গেল প্রিয়তা। ক্লান্তি, মাথাব্যথা ভুলে হতভম্ব চোখে তাকিয়ে রইল আগুন্তুকের দিকে। হাতে খাবারের প্যাকেট নিয়ে এগিয়ে এলো সে। একটা পা সামান্য খুড়িয়ে হাঁটছে। এমন অবাক শেষ কবে হয়েছে মনে নেই প্রিয়তার। বিস্ময়ঢালা কন্ঠে কোনমতে উচ্চারণ করল, ‘রঞ্জু!’

রঞ্জু তখনও তাকায়নি প্রিয়তার দিকে। হাতের প্যাকেটটা টুলের ওপর রাখল ও। ঘরে কোণ থেকে নিয়ে এলো পানির বোতল। সেখান থেকে পানি ঢালল গ্লাসে। প্রিয়তা ততক্ষণে আরও ভালোভাবে দেখল। শুকিয়ে গেছে রঞ্জু। চোখেমুখে অসুস্থতার ছাপ। শরীরে খোলা জায়গাগুলোতে অসংখ্য গভীর ক্ষতের দাগ তখনও দৃশ্যমান। সব গুলিয়ে গেল প্রিয়তার। সত্যি চাল বদলে ফেলেছে রুদ্র! হতভম্ব গলাতে বলল, ‘তুমি বেঁচে আছো?’

এতক্ষণে চোখ তুলে প্রিয়তার দিকে তাকাল রঞ্জু। শ্যামলা, রোগাপাতলা চেহারায় মৃদু হাসি ফুটিয়ে বলল, ‘আশা করেন নাই। তাই না ভাবি?’

উত্তর দিতে পারল না প্রিয়তা। বিস্ময় কাটেনি এখনো এখনো ওর। প্যাকেট আর পানিনা নিয়ে এগিয়ে এলো রঞ্জু। প্রিয়তার থেকে তিন-চার পিট দুরত্ব বজায় রেখে ফ্লোরে বসল ও। বলল, ‘আশা করোনের কতাও না। লোক দিয়া অমনে কো*পানের পর কারো বাঁইচ্চা থাকার কতা না। তয় খালি কো*পাইতে না কইয়া মাতায় একখান গু*লি করতে কইতে পারতেন। বাঁচতাম না।’

নিজের হয়ে কোন সাফাই গাইলোনা প্রিয়তা। অবাক কন্ঠে প্রশ্ন করল, ‘এতোদিন তাহলে সামনে আসোনি কেন?’

‘রুদ্র ভাই না করছিল। তাছাড়া অনেকদিন হাসপাতালে ভর্তি আছিলাম। ডাক্তারাতো কইয়াই দিছিল বাঁচার আশা নাই। কিন্তু কতায় আছেনা হরি রাখলে মারে কেডা?’

প্রিয়তা জানে রঞ্জুর ধর্ম কী। তাই শেষ কথাটায় অবাক হলোনা। বিস্ময়টা কাটিয়ে উঠছে শক্তিশালী নার্ভের জোরে। খানিকটা উত্তেজিত গলায় বলল, ‘রুদ্র কবে থেকে জানতো তুমি বেঁচে আছো?’

‘ যেইদিন আপনের লোকরা আমারে মাইরা ফালাইয়া রাইখা গেল। ঐদিন থিকাই।’

প্রিয়তা কিছু বলল না। দুহাতে চেপে ধরল নিজের মাথাটা। অসুস্থ বোধ করছে ও। রঞ্জু প্যাকেটের গিট খুলতে খুলতে বলল, ‘আমারে জীবিত দেইখা আপনে খুশি হন নাই। তাইনা ভাবি?’

প্রিয়তা রঞ্জুর দিকে তাকাল। শীতল গলায় বলল, ‘রুদ্রকে তুমি বলেছো সবটা?’

মাথা নাড়ল রঞ্জু, ‘ আমি নিজেই জানতাম না। জানছিতো চাইরদিন আগে।’

‘ রুদ্র বলেছে? কীভাবে জেনেছে ও? কতটা জেনেছে? আমার সম্পর্কে তুমি কী কী জানো রঞ্জু?’

জবাব দিলোনা রঞ্জু। কথা ঘুরিয়ে বলল, ‘ পরথমে বিশ্বাসই করতে পারিনাই। আমাগো অমন শান্ত-লক্ষ্মী ভাবি এমুন কিল্লিগা করব?’
প্যাকেট থেকে ওয়ান টাইম একটা প্লেট বের করল রঞ্জু। প্লেটে খাবার ঢালতে ঢালতে বলল, ‘জানেন ভাবি, আপনেরে যখন পরথমবার বউয়ের সাজে ভাইয়ের পাশে দেখছিলাম, মনে হইতাছিল জানি নিজ চোক্ষে লক্ষ্মী দেখলাম। কিন্তু ভুইলা গেছিলাম, লক্ষ্মীর ছায়াতেই অলক্ষ্মী থাকে।’

প্রিয়তা এমন কটুবাক্য শুনেও প্রতিক্রিয়া দিলোনা। শক্ত কন্ঠে বলল, ‘কোথায় আছি আমি?’

‘ ঐটা এখন আপনেরে কইতে পারুম না। ভাই না করছে।’

দাঁতে দাঁত পিষল। কটমটে চোখে একবার তাকাল রঞ্জুর দিকে। কিন্তু ওর ওপর রেগে লাভ নেই। তাই শান্ত থাকল। রঞ্জু প্লেটটা এগিয়ে দিয়ে বলল, ‘ভাই খাইয়া নিতে কইছে আপনেরে।’

প্রিয়তা ভ্রু কুঁচকে একবার দেখল প্লেটটা। খাওয়ার মানসিকতা নেই, কিন্তু প্রয়োজন আছে। শরীর দুর্বল হয়ে পড়ছে। এ মুহূর্তে সেটা অভিশাপের চেয়ে কম না। খাওয়ার মাঝে হঠাৎ রঞ্জু বলে উঠল, ‘ জানেন ভাবি। আপনে লোক দিয়া আমারে কো*পাইয়া মারতে চাইছেন। তাতে আমার কোন দুঃখ নাই। রাগও নাই। কিন্তু ভাইয়েরে আপনে যেমনে ফালাফালা করছেন, তারলাইগ্গা আপনেরে মাফ করমুনা আমি। পাহাড়ের মতো শক্ত হইয়া খাড়াইয়া থাকে মানুষটা। ভেতরে ভেতরে যে কয়খন্ড হইয়া গেছে তাতো আমি জানি।’

প্রিয়তা থেমে গেল। খাবার যেন আটকে রইল গলাতে। কোনমতে গিলে নিল সেটা । ঝাঁঝালো গলায় বলল, ‘একদম চুপ! নইলে এক্ষুনি খু*ন করে ফেলব। তোমাকে মারতে চা*পাতি লাগবেনা আমার। হাতই যথেষ্ট।’

রঞ্জু আর কথা বাড়াল না। বাকি খাবারটা গলা দিয়ে নামতে চাইল না। কিন্তু বিনাবাক্যে খাবার পুরোটাই খেয়ে শেষ করল প্রিয়তা। পানি খেয়ে গ্লাসটা রাখতেই সবকিছু গুছিয়ে উঠে দাঁড়াল রঞ্জু। প্রিয়তা বলল, ‘কোথায় যাচ্ছো?’

‘ ভাইয়ের কাছে।’

‘ খেয়েছেন উনি?’

মলিন হাসল রঞ্। বলল, ‘শরীর টিকাইতে হইলেতো খাইতে হইবই।’

এরমধ্যেই ঘরে প্রবেশ করল রুদ্র। রঞ্জুও বের হচ্ছিলো। মুখোমুখি হল দুজন। রুদ্র জিজ্ঞেস করল, ‘খেয়েছিস?’

‘ না ভাই। এহন খামু।’

‘ হ্যাঁ, দুজন একসঙ্গে খেয়ে নে গিয়ে। তোর ঔষধ আছে। মিস দিবিনা।’

‘ জি ভাই।’

রঞ্জু প্রস্থান করতেই উঠে দাঁড়াল প্রিয়তা। রুদ্রর সামনে দাঁড়িয়ে বলল, ‘রঞ্জু জীবিত ছিল আপনি বলেননি কেন আমায়?’

রুদ্র বাঁকা হেসে বলল, ‘মরে গেছে সেটাও কখনও বলেছি বলে মনে পড়ছেনা।’

আফসোসে চোখ বন্ধ করে ফেলল প্রিয়তা। প্রথম ভুলটা ঠিক কোথায় হয়েছিল ধূর্ত মস্তিষ্কে ধরা পড়ে গেল মুহূর্তের মধ্যেই। হঠাৎ কিছু মনে পড়তেই রুদ্রর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘দুজন কে? আর কে আছে রঞ্জুর সাথে?’

জবাব দিলোনা রুদ্র। শক্ত করে ধরল প্রিয়তার হাত। টেনে নিয়ে গেল ফ্লোরে বেছানো তোষকের কাছে। নির্দয় ভাবে ছুড়ে মারল তোষকের ওপর। নিজেও গিয়ে বসল হাঁটুতে ভর দিয়ে। হাত বাড়িয়ে তুলে নিল দড়িগুলো। প্রিয়তা রুদ্রর দিকে তাকিয়ে বিস্মিত কন্ঠে বলল, ‘ কী করছেন আপনি?’

‘ তোমাকে খুলে রেখে যাওয়ার ভুল করব না আমি। এসে হয়তো দেখব রঞ্জুকেও খু*ন করে পালিয়ে গেছো।’

‘রুদ্র! আমার কিছু বলার আছে আপনাকে।’

পাত্তা দিলোনা রুদ্র। প্রিয়তা পা ধরে টেনে আনল নিজের দিকে। দুপা একত্রিত করে শক্ত করে বেঁধে ফেলল। প্রিয়তা অস্থির গলায় বলল, ‘রুদ্র, আপনি আমার সঙ্গে যা ইচ্ছা হয় করুন। আই ওন্ট স্টপ ইউ। বাট এট লিস্ট লিসেন টু মি?’

হ্যাঁচকা টানে প্রিয়তাকে তুলে ধরল রুদ্র। হাতদুটো পেছনমোড়া করে ধরল বাঁধার উদ্দেশ্যে। বাঁধার সময় প্রিয়তা বলে উঠল, ‘ভালোবাসেন না আর আমাকে? আমাদের ভালোবাসার কথা মনে পড়েনা আপনার?’

থেমে গেল রুদ্র। স্থির চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল প্রিয়তার মোহময় চোখদুটোর দিকে। হঠাৎই বাঁধনের শেষ গিটটা দিল রুদ্র। মৃদু ঝাঁকি খেল প্রিয়তা শরীর। রুদ্র বলল, ‘ মানুষ সবচেয়ে বেশি ভুলে থাকার চেষ্টা করে কাকে জানো? নিজের জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলকে। আমার ক্ষেত্রেও তাই।’

প্রায় ধাক্কা দিয়েই প্রিয়তাকে ছেড়ে দিল রুদ্র। উঠে দাঁড়িয়ে তোষকের ওপর থেকে তুলে নিল নিজের জ্যাকেটটা। প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে থেকেই পড়ে নিল সেটা। কোন কথা না বলে চুপচাপ প্রস্থান করল বদ্ধ সেই ঘরটা। প্রিয়তা ওখানেই বসে রইল। একা, বন্দি, অনিশ্চিত অবস্থায়!

*

বর্তমান ~

রুদ্র থামতেই চমকে উঠল তুহিন। অনুভব করল কতটা ডুবে গিয়েছিল রুদ্র কথায়। তমালের দিকে তাকিয়ে দেখল, কেমন অদ্ভুত ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে রুদ্রর দিকে। রুদ্র তখনও নির্বিকার। খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছে হ্যান্ডকাফটা। এই নির্বিকারত্বই হয়তো লোকটার সবচেয়ে বড় শক্তি। নয়তো নিজের প্রাণপিয় স্ত্রীকে ঐ অবস্থায় দেখে সাধারণ কেউ স্থির থাকতে পারেনা। তুহিন গলা ঝেড়ে রুদ্রর মনোযোগ চাইল। কিন্তু লাভ হলোনা। তাই নিজেই বলল, ‘ প্রিয়তাকে সরাসরি ধরার পরিকল্পনা তুমি আগেই সাজিয়েছিলে সেটা পরিষ্কার। কিন্তু আসল সত্যিটা কবে সামনে এসেছিল তোমার? কীভাবে এসেছিল?’

রুদ্র জবাব দিলোনা। অর্থাৎ এই প্রশ্নের উত্তর দিতে চায়না। ঘাটালোনা তুহিন। একবার বেঁকে বসলে থার্ড ডিগ্রিও রুদ্রর মুখ থেকে কিছু বের করতে পারবেনা। তাই অন্য প্রশ্নে গেল, ‘রঞ্জুযে বেঁচে ছিল সেটা তুমি ছাড়া আর কে জানতো?’

রুদ্র হ্যান্ডকাফ দেখতে দেখতেই জবাব দিল, ‘ডাক্তার রতন। আর ওর চিকিৎসা যারা করছিল তারা।’

‘ এখন কথায় আছে ও?’

‘ জানিনা।’

‘ নাকি বলবে না?’

উত্তর দিলোনা রুদ্র। তমাল কৌতুহলবশত প্রশ্ন করল, ‘তুমি সত্যিটা জেনে গেছো, সেটা জেনেও প্রিয়তা তোমার সঙ্গে আগের মতো ব্যবহার করছিল?’

‘ করেছিল।’

‘ মারার চেষ্টা করেনি তোমাকে?’

‘ না।’

তুহিন বলল, ‘ মিস প্রিয়তা কখনই তোমাকে মারতে চায়নি। এবং তোমার প্রতি যথেষ্ট দুর্বল ছিল।’

রুদ্র এবার তাকাল তুহিনের দিকে, ‘ সেটা কেন মনে হল আপনার?’

সপক্ষে যুক্তি দিল তুহিন, ‘ সেরকম হলে দুইবছরে অনেক সুযোগ ছিল ওনার কাছে। তোমাকে মারার চেয়ে সহজ টাস্ক ওনার জন্যে অন্যকিছু ছিলোনা। তুমি সত্যিটা জানার আগ অবধি। আর তোমাকে না মারার বিশেষ কোন কারণ থাকতে পারেনা ওনার কাছে, ব্যক্তিগত দুর্বলতা ছাড়া। কোন লাভ ছিলোনা ওনার।’

মৃদু হাসল রুদ্র। তুহিন হতাশ শ্বাস ফেলে বলল, ‘এটা নিশ্চয়ই জানো যে মিস প্রিয়তা এখন কোথায়?’

রুদ্র অদ্ভুত হেসে বলল, ‘যদি বলি খু*ন করেছি ওকে আমি? নিজের হাতে? ফাঁসির সংখ্যা কী দুই একটা বাড়বে?’

মুখ হাফ ইঞ্চি হা হয়ে গেল তমালের। তুহিন নিজেও বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে রুদ্রর দিকে। রুদ্র প্রিয়তাকে খু*ন করেছে!

#চলবে…

[ রি-চেইক করিনি। দেশের অবস্থাজনিত কারণে একমাস লেখা বন্ধ ছিল। আবার ফ্লো নিয়ে আসতে কষ্ট হচ্ছিলো বেশ। অবশেষে লিখতে পারলাম আবার। অনেকদিন পর দেওয়ায় রিচ কম থাকতে পারে। সকলেই রেসপন্স করবেন যেন সকলের নিউজফিডে পৌঁছয়। এবং গঠনমূলক মন্তব্য করবেন। হ্যাপি রিডিং। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here