#প্রেমের_ধাঁরায়
#পর্বঃ১০
#লেখিকাঃদিশা_মনি
আরশাদ অস্থির চিত্তে নিজের কক্ষে পায়চারি করে চলেছে। তার কেন জানি বারবার মনে হচ্ছে কিচ্ছু ঠিক হচ্ছে না৷ কোথাও না কোথাও একটা বড় গণ্ডগোল হচ্ছে। এরইমধ্যে হঠাৎ তার দরজায় কেউ নক করে। আরশাদ দরজা খুলতেই নিজের দাদি গুলশেনারা বেগমকে দেখতে পেয়ে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। অতঃপর বলে,
“দাদি তুমি?”
“তোমার সাথে কিছু জরুরি কথা ছিল, দাদুভাই। কিন্তু তার আগে চলো, ব্রেকফাস্ট করে নাও। কাল রাতে তো তুমি কিছু খেলে না। এভাবে বেশিক্ষণ না খেয়ে থাকলে তো অসুস্থ হয়ে পড়বে।”
“ঠিক আছে, তুমি যাও। আমি একটু পর ফ্রেশ হয়ে আসছি।”
গুলশেনারা বেগম চলে যেতেই আরশাদ গম্ভীর চোখে তার যাওয়ার পানে তাকায়। অতঃপর দরজাটা চাপিয়ে দেয়।
★★
খাবার টেবিলে বসে আছে আরশাদ ও গুলশেনারা বেগম। এরইমধ্যে গুলশেনারা বেগম মালিনী পাটোয়ারীকে আরশাদকে বেশি করে খাবার দিতে বলছেন। আরশাদ কিছুটা বিব্রতবোধ করছে। কারণ গতকাল এত কিছু হওয়ার পর সে কিছুতেই এত সহজে স্বাভাবিক হতে পারছে না। তবে গুলশেনারা বেগম গম্ভীর স্বরে বললেন,”আসলে আজ তোমায় একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার ছিল।”
“কি কথা?”(অবাক হয়ে জানতে চায় আরশাদ।)
” আনিকা আসছে একটু পর৷ ও আসার পর যা বলার বলছি।”
মালিনী পাটোয়ারী ও আরশাদ একে অপরের দিকে তাকায়। এদিকে গুলশেনারা বেগম কথাটা বলতে না বলতেই চলে আসে আনিকা। সে এসেই বলে,
“হ্যালো, এভরিওয়ান, গুড মর্নিং। আমি চলে এসেছি।”
আনিকাকে আসতে দেখে গুলশেনারা বেগম খুশি হয়ে বলেন,
“এই তো চলে এসেছে আনিকা। এদিকে এসো দিদিভাই। আসতে কোন সমস্যা হয় নি তো?”
“না, দাদি। কোন সমস্যা হয়নি। তুমি কি আরশাদকে বলছ ব্যাপারটা তোমায় যে বলতে বলেছিলাম?”
“না, এখনো বলা হয়নি। ভেবেছিলাম তুমি আসার পর একেবারে বলব৷ এখন যখন তুমি এসে গেছ তখন বলি।”
বলেই তিনি আরশাদের দিকে তাকিয়ে বলেন,
“আমি আর আনিকা কথা বলে এটা ঠিক করেছি যে, এবার এই বিয়েটা একটু তাড়াতাড়ি করা দরকার। কারণ আনিকার বাবা আশিকুর চৌধুরী আপাতত হয়তো এই বিয়েতে মত দিয়েছেন কিন্তু পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে তিনি তার এই সিদ্ধান্তটা আবার বদলাতেও পারেন। আর আমরা এটা চাইছি না। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বিয়েটা আগেই করিয়ে দেব। যাতে আর কোন সমস্যা না হয়। তার মত যেন আর না বদলে।”
নিজের দাদির কথা শুনে আরশাদ অবাক হয়ে বলে,”এটা তুমি কি বলছ দাদি? বিয়ের সময় এগিয়ে নেবে!”
“এছাড়া আর কোন উপায় নেই। কারণ এই বিয়েটা না হলে অনেক সমস্যা হয়ে যাবে। ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড।”(আনিকা করুণ কন্ঠে বলে।)
একটু থেমে আবারো বলে,
” আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি আরশাদ, তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে আমি বিয়ে করতে পারব না। তাই দাদি যা বলছে তাতে রাজি হয়ে যাও প্লিজ। এতে করে আমাদের সবার ভালো হবে। দাদি সব ভেবেই কথাটা বলেছে৷ তুমি আর না করো না।”
মালিনী পাটোয়ারী বলেন,
“কিন্তু বিয়ের মতো এত বড় একটা অনুষ্ঠান জলদি কিভাবে করা সম্ভব? কত এরেঞ্জমেন্ট করা প্রয়োজন এর জন্য, সেসব তো আমাদের করার টাইম লাগবে। নাকি?”
মালিনী পাটোয়ারীর এই কথার জবাবে গুলশেনারা বেগম বলেন,
“যা কিছু হয়ে গেল তারপর তুমি কোন আক্কেলে ভাব যে বিয়েতে বড় করে আয়োজন করা হবে? কোন রকম নম নম করে বিয়েটা হলেই তো বাঁচি! তার জন্য এত আনুষ্ঠানিকতার কি বা প্রয়োজন!”
এহেন কথা শুনে মালিনী পাটোয়ারী চুপ হয়ে যান। আনিকা বলে,
“দাদি ঠিক বলছে। তোমরা তোমাদের ঘনিষ্ঠ আত্মিয়দের ডাকবে আমিও বাবাকে বলে দেব শুধু যাদের কে না বললেই নয় তাদের ডাকতে। এভাবে তাড়াতাড়ি বিয়েটা অনুষ্ঠিত হওয়া যাবে।”
মালিনী পাটোয়ারী বলেন,
“যদি এমন হয় তো ঠিক আছে। কিন্তু আরশাদের কি মত?”
আরশাদ বলে,
“আমার এতে কোন আপত্তি নেই। যা ভালো মনে হয় তোমরা তাই করো। আমি এই নিয়ে আর কিছু বলতে চাইছি না।”
বলেই আরশাদ উঠে দাঁড়ায় এবং চলে যেতে নেয়। এমন সময় হঠাৎ করে হাফাতে হাফাতে উপস্থিত হয় ধৃতি। ধৃতিকে এভাবে আসতে দেখে মালিনী পাটোয়ারী বলেন,
“এ কি ফুল! তুমি কোথা থেকে এলে? আজ সকালে তো আমি তোমায় খুঁজতে তোমার রুমে দেখলাম তুমি নেই। ভেবেছিলাম বাইরে কোথাও গেছ।”
ধৃতি ছুটতে ছুটতে আরশাদের সামনে এসে বলে,
“আপনার সাথে আমার খুব জরুরি কথা আছে?”
আরশাদ গম্ভীর চোখে তাকায়। মালিনী পাটোয়ারী বলেন,
“তুমি আরশাদকে কি বলবে ফুল?”
গুলশেনারা বেগম বলেন,
“এই মেয়ে তো একটা উটকো আপদ! না জানি দাদু ভাই কোথা থেকে একে নিজের ঘড়ে ঝুলিয়েছে। এই মেয়ে, তুমি দাদু ভাই এর এত কাছে কি করছ? দূরে সরে এসো বলছি। দেখছ না, দাদু ভাই এর হবু স্ত্রী সামনে দাঁড়িয়ে আছে।”
আনিকা উপহাস করে বলে,
“এসব মেয়েদের আবার কোন ম্যানারস আছে নাকি? এরা তো এই উদ্দ্যেশ্যেই থাকে কখন কোন বড়লোকের ঘাড়ে উঠে বসা যায়। এমন মেয়েদের আমার খুব ভালো করেই চেনা আছে!”
আনিকার কথা শুনে ধৃতি আজ আর চুপ থাকে না। প্রতিবাদ করে বলে,
“আপনি একদম চুপ করে থাকুন। আপনার কোন রাইটস নেই আমাকে এভাবে অপমান করার। আপনার ব্যাপারে আমি সব জেনে ফেলেছি। বুঝেছেন? আরশাদ সাহেব, আপনি জানেন না, আপনার আড়ালে কত বড় ষড়যন্ত্র হচ্ছে আর সেই ষড়যন্ত্রের আড়ালে আছে?.”
আনিকা বলে,”আমি তাইতো?”
ধৃতি সহ সবাই অবাক চোখে আনিকার দিকে তাকায়। আনিকা হেসে বলে,
“আমি জানতাম। প্রথমবার তোমায় দেখেই বুঝে ফেলেছিলাম তোমার কোন খারাপ উদ্দ্যেশ্য তো আছেই। আরশাদের সাথে কেন সবসময় ঘুরঘুর কর এটা নিয়ে আমার সন্দেহ আগেই হয়েছিল। আর তাই তো খোঁজ নিয়েছি। আর খোঁজ নিয়ে এসব জানতে পেরেছি।”
বলেই আনিকা সবার আমনে নিজের ফোনের কিছু ছবি দেখায়৷ যেখানে আরহাম শান্তর সাথে ধৃতির একসাথে কিছু ছবি আসে। ধৃতির এসব দেখে মনে পড়ে যায় যে এসব ছবি আদৌতে যখন তার আর আরহামের বিয়ের কথা চলছিল তখনকার।
এই ছবিগুলো দেখিয়ে আনিকা অভিযোগ করে,
“আসলে এই ধৃতি আরহাম শান্তর পাঠানো লোক! যে আরশাদ আর এই পরিবারের ক্ষতি করতে চায়।”
ধৃতি বলে ওঠে,
“একদম মিথ্যা বলবেন না। আরশাদ সাহেব আর এই বাড়ির ক্ষতি আমি করতে চাই না। আপনি করতে চান। কাল আমি গোপনে আপনাদের সব কথা শুনেছি। আরশাদ সাহেব, বিশ্বাস করুন আমায়।”
গুলশেনারা বেগম তেতে উঠে বলেন,
“এই মেয়ে তোমার তো সাহস মন্দ না! আমার দাদুভাইয়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আবার আনিকা দিদিভাইকে ফাসাতে চাও। এক্ষুনি তোমায় এই বাড়ি থেকে বের করে দিচ্ছি।”
বলেই গুলশেনারা বেগম টানতে টানতে ধৃতিকে নিয়ে যেতে থাকে। ধৃতি অনেক আশা নিয়ে আরশাদের দিকে তাকায়। যে আরশাদ হয়তো তাকে বুঝবে, তার উপর ভরসা করবে কিন্তু আরশাদ নীরব দর্শক হয়ে সবকিছু দেখে যায়। ধৃতির চোখে জল চলে আসে। সে বুঝতে পারে তাকে কেউ বিশ্বাস করবে না তার পাশে কেউ নেই!
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨