#প্রেমের_ধাঁরায়
#পর্বঃ১৩
#লেখিকাঃদিশা_মনি
ধৃতিকে বধূবেশে দেখে উপস্থিত সবাই হতবাক হয়ে যায়। কারো মুখ কোন শব্দ নেই। গুলশেনারা বেগম বলে ওঠেন,
“এই মেয়ে এখানে কি করছে? আমার আনিকা দিদিভাই কোথায়?”
ধৃতি হতবাক চোখে তাকিয়ে আছে। আরশাদ ক্রোধিত স্বরে বলে ওঠে,
“এসব হচ্ছে টা কি? এত বড় প্রতারণা হতে যাচ্ছিল আমার সাথে! আম্মু, তুমি না বললে আনিকা নাকি মাথায় ঘোমটা দিয়ে এসেছে তাহলে এখানে ধৃতি কেন?”
মালিনী পাটোয়ারী কি বলবেন কিছু বুঝতে পারেন না। ধৃতিও অসহায় চোখে তাকিয়ে। আশিকুর চৌধুরী বলে ওঠেন,
“এসব হচ্ছে টা কি এখানে? আমার মেয়ে কোথায়?”
ধৃতিকে সবাই মিলে এমন ভাবে ঘিরে ধরে যে সে বুঝতে পারে না তার কি করা উচিৎ। মালিনী পাটোয়ারী বলেন,
“আমি বলছি সবটা…”
গুলশেনারা বেগম বলে ওঠেন,
“তোমাকে কিছু বলতে হবে না। আমার যা বোঝার তা আমি বুঝতে পেরে ফেলেছি। তোমার কোন কথা আর আমি শুনতে চাই না। তুমি যে এমন কিছু করতে পারো তা আমার আগেই বোঝা উচিত ছিল যখন তুমি শুধু শুধু আনিকা দিদিভাই কে দোষ দিচ্ছিলে। কিন্তু তুমি যে এত নিচে নামবে এটা আমি ভাবিনি। শেষ পর্যন্ত নিজের আপন ছেলের জীবন নিয়ে এমন ছিনিমিনি খেললে! ছি বৌমা ছি! তবে আমি বুঝতে পারছি এসবের পেছনে মূল হোতা এই মেয়েটা! এই তোমার ব্রেনওয়াশ করেছে। এই মেয়ে তোর লজ্জা নেই? সেদিন তোকে বের করে দিয়েছিলাম তাও আজ ছুটে এসেছিস আমার দাদুভাই এর পিছনে হাত ধুয়ে পড়ে আছিস। তোকে আবার বের করছি দ্বারা…”
বলেই তিনি এগিয়ে আসতে থাকেন। এমন সময় ধৃতি বলে ওঠে,
“খবরদার আর এক পাও আগাবেন না। আগের বার আমি কিছু বলতে পারি নি তবে এবার আমি সহ্য করবো না। আমি আজ নিজের প্রতি কোন অপমান মানব না। কারণ আমি কোন অন্যায় করিনি। আমি এসেছি আরশাদ সাহেবকে বিপদ থেকে রক্ষা করতে। ওনার করা ঋণ শোধ করতে। ঐ আনিকা মেয়েটা ভালো না! উনি আরশাদ সাহেবের ক্ষতি করতে চান।”
আশিকুর চৌধুরী রেগে বলেন,
“তোমার তো সাহস মন্দ নয়..তুমি আমার মেয়ের নামে এসব বলছ! তুমি তো ওর নখের যোগ্য নও।”
“আমি যা বলছি ঠিকই বলছি। আর এটা আমি প্রমাণও করে দিতে পারবো। আর এটা আমার চ্যালেঞ্জ।”
ধৃতির এহেন আত্মবিশ্বাস দেখে সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে। গুলশেনারা বেগম বলেন,
“এই মেয়ের সাহস দেখে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি। এর বড় বড় কথা আমি বের করছি।”
বলে যেই না তিনি এগোতে যাবেন এমন সময় তার পথ আটকে ধরে আরশাদ। গুলশেনারা বেগম অবাক স্বরে বলেন,
“তুমি আমায় আটকাচ্ছ কেন দাদুভাই? আমায় সামনে যেতে দাও। এই মেয়ের আজ আমি শেষ দেখে ছাড়ব। এ কোন প্রমাণ ছাড়াই আমার আনিকা দিদিভাই এর নামে যা খুশি তাই বলছে।”
আরশাদ গম্ভীর স্বরে বলে,
“তুমি থামো দাদি। আমি এখন কিছু বলবো সবার উদ্দ্যেশ্যে সেটা সবাই মন দিয়ে শোনো।”
বলেই আরশাদ এগিয়ে আসে ধৃতির দিকে। আরশাদ ধৃতির সামনাসামনি দাঁড়িয়ে বলে,
“খুব আত্মবিশ্বাস না তোমার? সবার সামনে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলে? বেশ আমি তোমার চ্যালেঞ্জ এক্সসেপ্ট করলাম। আর তোমায় আগামী ২৪ ঘন্টা সময় দিলাম। এই ২৪ ঘন্টার মধ্যে যদি তুমি আনিকার বিরুদ্ধে যেই অভিযোগ গুলো এনেছ তার প্রমাণ দিতে পারো তাহলে আমি তোমার কথা বিশ্বাস করব। আর যদি না পারো তো…”
ধৃতি আত্মবিশ্বাসের সাথে বলে,
“পারব।”
“আমার পুরো কথা শেষ করতে দাও। তুমি আজ এইখানে বধু বেশে এসে ছিলে তাই না? যদি তুমি নিজেকে প্রমাণ করতে পারো তাহলে আমি তোমার এই সাজকে পূর্ণতা দেব। আমি এখানে উপস্থিত সবার সামনে কথা দিচ্ছি যদি তুমি সত্যিই এটা প্রমাণ করতে পারো তো আমি তোমাকেই বিয়ে করব।”
গুলশেনারা বেগম গর্জে উঠে বলেন,
“এটা তুমি কি বলছ দাদুভাই! এই মেয়ে তোমার নখের যোগ্য নয়। আর তুমি ওকে বিয়ে করতে চাইছ!”
“দাদি, তুমি বোধ হয় আমার পুরো কথাটা শোনো নি, আমি ওকে বিয়ে তখনই করবো যখন ও নিজেকে সত্য প্রমাণ করতে সফল হবে। আর যদি ও সেটা না পারে তাহলে আমি ওকে পুলিশে দেব।”
গুলশেনারা বেগম বলে ওঠেন,
“তাহলে ওকে এখনই পুলিশে দাও দাদুভাই, এত সময় নষ্ট করার দরকার নেই!”
“না,ও একটা সুযোগ চেয়েছে তাই আমি ওকে সেই সুযোগ টাই দেব। তবে একটাই সুযোগ দেব আর সেটাই প্রথম ও শেষ সুযোগ।”
ধৃতি বলে,
“আমি অবশ্যই নিজেকে সত্য প্রমাণ করব। তবে আপনাকে বিয়ে করার কোন ইচ্ছা নেই। আমি আজ এখানে বধূবেশে এসেছিলাম শুধুই আপনার মায়ের অনুরোধে। কিন্তু এই বিয়ে টা করার আমার কোন ইচ্ছা ছিল না আর সেই জন্যই আপনাকে সংকেত দিয়ে বুঝিয়ে ছিলাম যে আমি আনিকা নই ধৃতি।”
আরশাদের তখন মনে পড়ে যায় কিভাবে কবুল বলার আগে ধৃতি তার ঘোমটার কিছু অংশ তুলে আরশাদকে দেখিয়ে ছিল যাতে করে আরশাদ বুঝতে পারে যে সে আনিকা নয় সে ধৃতি। আরশাদ একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,
“এসব কথা পড়ে বলা যাবে। আগে তুমি নিজেকে সত্য প্রমাণিত করো।”
এদিকে আশিকুর চৌধুরী বলেন,
“তার আগে বলো, আমার মেয়ে কোথায় আছে আর কেমন আছে। আমার মেয়ের কিছু হলে কিন্তু আমি তোমায় ছাড়ব না।”
মালিনী পাটোয়ারী বলেন,
“আপনার মেয়ে একদম ঠিক আছে। আপনি আমার সাথে আসুন,আমি আপনাকে আপনার মেয়ের কাছে নিয়ে যাচ্ছি।”
আশিকুর চৌধুরী মালিনী পাটোয়ারীর সাথে যায়। এদিকে আরশাদ গম্ভীর স্বরে ধৃতিকে বলে,
“তুমিও কাজে লেগে পড়ো। তোমার কাউন্ট ডাউন এখান থেকেই শুরু হলো।”
★★
ধৃতি আর মালিনী পাটোয়ারী একসাথে বসে ছিলেন। মালিনী পাটোয়ারী ধৃতিকে বলেন,
“এটা তুমি কি করলে ফুল? সবার সামনে চ্যালেঞ্জ তো দিলে যে নিজেকে সত্য প্রমাণিত করবে কিন্তু সেটা কিভাবে করবে? তোমার হাতে তো আর বেশি সময় নেই!”
“আমি জানি না, কিন্তু সেই মুহুর্তে এছাড়া আমার কাছে আর কোন উপায় ছিল না। এটা করে অন্তত হাতে কিছু টা সময় পাওয়া গেছে। নাহলে তো কিছুই করা যেত না।”
“তুমি আরশাদকে সংকেত কেন দিতে গেলে?”
“কারণ আমি কাউকে ঠকাতে চাই নি। আর তার থেকে বড় কথা এই বিয়েটা করার আমার ইচ্ছা ছিল না।”
“কেন? আমার ছেলেটা কি এতই খারাপ?”
“তেমনটা নয়..আসলে আমি ওনার যোগ্য নই..”
মালিনী পাটোয়ারী ধৃতির মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,
“কি সব বলছ? তোমার মতো এমন ফুলের মতো মেয়ে নাকি আমার ছেলের যোগ্য নও! তোমাদের তো পাশাপাশি রাজযোটক লাগবে!”
“আমি সেই ফুল, যেই ফুলে কলংক লেপ্টে আছে। যেই কলংক মোছার কোন উপায় নেই!”
“মানে?”
ধৃতি নিজের তিক্ত অতীত মনে করে বলে,
“আমি পবিত্র ফুল নই আন্টি! এক অপবিত্র স্পর্শে যে আমি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছি।”
বলেই সে কাঁদতে শুরু করে। মালিনী পাটোয়ারী কিছু বুঝে উঠতে পারেন না। তবে ধৃতির মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দেন।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨