প্রেমের_ধাঁরায় #পর্বঃ১৪(ধামাকা) #লেখিকাঃদিশা_মনি

0
39

#প্রেমের_ধাঁরায়
#পর্বঃ১৪(ধামাকা)
#লেখিকাঃদিশা_মনি

ধৃতির চোখে জল দেখে মালিনী পাটোয়ারী আতকে ওঠেন। ধৃতির কথা শুনেই তিনি বুঝতে পারেন ধৃতির অতীতে কোন তিক্ত অতীত আছে৷ এছাড়া ধৃতির জীবনের সম্পর্কে খুব বেশি কিছু সে বলে নি। এই জন্য তার অতীত নিয়েও জানার অনেক আগ্রহ মালিনী পাটোয়ারীর। তাই আজ তিনি ধৃতিকে তার অতীত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেই বসলেন। তিনি প্রশ্ন করলেন,
“জানি, তুমি নিজের সম্পর্কে কিছু বলতে খুব একটা আগ্রহী নও। তবুও কেন জানি আমার তোমার সম্পর্কে জানার ভীষণ ইচ্ছা হয়। আমাকে একটু বলবে, তোমার অতীতে কি ঘটেছিল। তোমাকে দেখে তো বেশ ভালো ঘরের মেয়েই মনে হয়৷ তাহলে তোমার আজ এই দশা কেন?”

ধৃতি নিজের চোখের জল মুছে বলে,”ভাগ্য খারাপ হলে যা হয় আরকি! আমার জীবন ছোটবেলা থেকেই যথেষ্ট ভালো ছিল। আমার বাবা-মায়ের আদরের মেয়ে ছিলাম। তারা যথেষ্ট স্বচ্ছলতার সাথে আমায় বড় করে তুলেছে৷ তবে জীবনে প্রথম ধাক্কাটা তখন খাই যখন আমার বাবা-মা এক সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যায়। তারপর থেকে আমার ভাই আমার দায়িত্ব নেয়। ভাইয়ের কাছেও যথেষ্ট স্বচ্ছলতার মধ্যে বড় হয়েছি। ভাইয়া কখনো বাবার অভাব বোধ করতে দেয়নি৷ এরপর ভাবি এলো। সে যেন আমার মায়ের অভাব পূরণ করল। এরপর তো আমার পিচ্চু সোনা এলো জীবন একেবারে সুন্দর হয়ে গেল। কিন্তু তারপর একদিন আমার জীবনে নেমে এলো চরম অভিশাপ। এক রাতেই পালটে গেল সবটা…”

বলেই ডুকরে উঠল ধৃতি। মালিনী পাটোয়ারী ধৃতির মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন
,”কি এমন হয়েছিল যার কারণে তোমার জীবন এভাবে বদলে গেল?”

ধৃতি চোখ বন্ধ করে অতীতের তিক্ত স্মৃতিগুলো মনে করে বলে,
“আরহাম শান্ত..ঐ শয়তান লোকটা আমার জীবন নষ্ট করে দিয়েছিল…”

ধৃতি এরপর তার সাথে ঘটে যাওয়া সকল ঘটনা বর্ণনা করে মালিনী পাটোয়ারীর সামনে৷ সব শুনে মালিনী পাটোয়ারী হতবাক হয়ে যান। তার গায়ের লোম পুরোপুরি শিউরে ওঠে আরহামের এসব নিষ্ঠুরতার কথা শুনে। আরহাম যে এত নিচে নামতে পারে সেটা তার ধারণার বাইরে ছিল। ছেলেটা সেদিন যখন তার অতীতের দুঃখের কথা বলেছিল তখন তার জন্য যতটা খারাপ লাগা কাজ করছিল আজ যেন নিমেষেই সব উধাও হয়ে গেল। ধৃতির কথা শুনে মালিনী পাটোয়ারী একরাশ ঘৃণা নিয়ে বললেন,
“আরহাম যে এত জঘন্য একটা কাজ করতে পারে এটা আমি ভাবতেও পারিনি। শেষপর্যন্ত কিনা তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে..তুমি ওর নামে কেইস করো নি কেন?”

ধৃতি বলে,
“আমরা মধ্যবিত্ত আমাদের কাছে সম্মানটাই সব। আমি চাইনি এসব কথা জানাজানি হয়ে আমার ভাই-ভাবির জীবনে এর কালো ছায়া পড়ুক। আমার জীবন তো নষ্টই হয়ে গেছে তাই আমি নতুন করে নিজের ভাই-ভাবির জীবন নষ্ট করতে চাই নি। তাই তো রাতের আধারে নিজের অতীতের শেকড় ছেড়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছি। কিন্তু তাতেও ফল পেলাম কই? সেই তো আরহাম শান্তর সাথে আবারো আমার দেখা হয়ে গেল ভাগ্যের ফেরে। এখন আমার নিয়তি হয়ে দাড়িয়েছে ঐ জঘন্য লোকটা।”

মালিনী পাটোয়ারী কিছু একটা মনে করে বলেন,
“আরহাম কি তোমাকে ঐ ঘটনার পর আরো কোন ভাবে বিরক্ত করার চেষ্টা করেছে?”

ধৃতি বলে,
“না, করেন নি। উনি আমাকে দেখে অচেনা মানুষের মতোই বিহেভ করেছেন। আসলে উনি তো প্রতিদিনই নিত্য-নতুন মেয়ের সাথে..তাই হয়তো আর আলাদা করে আমার কথা মনে রাখেন নি।”

মালিনী পাটোয়ারী ধৃতিকে সাহস দিয়ে বলেন,
“তুমি শক্ত হও, ফুল। তুমি পবিত্র ফুল, ঐ পাপীষ্ঠ আরহাম শান্তর ছোয়া তোমার পবিত্রতা নষ্ট করতে পারবে না বলেই আমার বিশ্বাস।”

ধৃতির খুব ভালো লাগে মালিনী পাটোয়ারীর মুখ থেকে এই কথা শুনে৷ সে তো ভেবেছিল এসব শুনে মালিনী পাটোয়ারী ধৃতির প্রতি ভীষণ খারাপ ব্যবহার করবে তাকে নিচ ভাববে কিন্তু মালিনী পাটোয়ারী যেভাবে তার পাশে দাঁড়ালো তাতে তার মনে আনন্দের ঢেউ খেলে গেল। মনে হচ্ছে বুকের উপর থেকে বড় একটা পাথর সরে গেল।

এরইমধ্যে হঠাৎ করে মালিনী পাটোয়ারী খেয়াল করেন তার ফোনে শব্দ করে উঠল। মালিনী পাটোয়ারী ফোনটা হাতে নিতেই অবাক হয়ে যান। তার ফোনে অচেনা একটা নাম্বার থেকে কল এসেছে। মালিনী পাটোয়ারী সেই কলটা রিসিভ করতেই কেউ একজন বলে ওঠে,
“যদি আনিকাকে হাতেনাতে ধরতে চান তো এখনই আপনাদের বাসার পেছনে যে গুদাম ঘর টা আছে সেখানে চলে আসুন। সাথে নিজের ফ্যামিলির সবাইকেও নিয়ে আসুন। এখানে আসলেই আনিকার সত্য প্রকাশিত হবে।”

মালিনী পাটোয়ারী অবাক স্বরে বলেন,
“কিন্তু আপনি কে?”

কিন্তু বিপরীত দিক থেকে কোন রেসপন্স আসে না। মালিনী পাটোয়ারী হ্যালো হ্যালো করতে থাকেন কিন্তু ফোনটা কেটে যায়৷ ধৃতি জিজ্ঞেস করে,
“কে কল দিয়েছিল?”

“জানি না,কিন্তু যেই দিয়েছে সে বলল সবাইকে নিয়ে গুদাম ঘরে যেতে ওখানে গেলে নাকি আনিকাকে হাতেনাতে ধরতে পারব। কিন্তু এটা কি কোন স্প্যাম কল হতে পারে?”

ধৃতি বলে,
“এসব পরে ভাবা যাবে। আগে সবাইকে নিয়ে গুদাম ঘরে চলুন। এমনও তো হতে পারে যে ব্যাপারটা সত্য

“ঠিক বলেছ তুমি, চলো আমরা সবাই মিলে গুদাম ঘরে যাই।”

বলেই মালিনী পাটোয়ারী ধৃতিকে নিয়ে নিচে নামেন। নিচে তখন গুলশেনারা বেগম আর আশিকুর চৌধুরী একে অপরের সাথে কথা বলছিলেন। মালিনী পাটোয়ারী এসেই বলেন,
“আপনারা সবাই গুদাম ঘরে চলুন।”

গুলশেনারা বেগম বিরক্ত সুরে বলেন,
“কেন? গুদাম ঘরে যাব কেন?”

ধৃতি বলে,
“যদি আজ সত্যটা জানতে চান তো এখনই গুদাম ঘরে চলুন।”

“কোন সত্যির কথা বলছ তুমি?”

বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতে করতে বলে আরশাদ। ধৃতি বলে,
“সেটা তো গুদাম ঘরে গেলেই বুঝতে পারবেন। কিন্তু আপনি কোথা থেকে এলেন? আপনার পায়ে কাঁদা কেন?”

“সেই কৈফিয়ত কি তোমায় দেব?”

গর্জে উঠে বলে আরশাদ। ধৃতি কোন প্রতিক্রিয়া দেখায় না। এরমধ্যে মালিনী পাটোয়ারী তাড়া দিতেই সবাই গুদাম ঘরের দিকে যায়। গুদাম ঘরে পৌঁছে যেতেই সবাই হতবাক হয়ে যায়। কারণ সেখানে আনিকা একটা হুডি পরিহিত পুরুষকে জড়িয়ে ধরে বলছিল,
“আমি তোমাকে ভালোবাসি আরহাম। তাই আমার পক্ষে ঐ আরশাদকে বিয়ে করা সম্ভব নয়। তুমি প্লিজ কিছু একটা করে এই বিয়ে টা আটকে দাও। ভালো হয়েছে সেদিন বিয়ে টা হয়নি। আমার তো এমনিতেও বিয়ে টা করার কোন ইচ্ছা ছিল না। আমরা নাহয় অন্য কোন ভাবে আরশাদ এর ক্ষতি করব। তুমি প্লিজ আমাকে ঐ আরশাদকে বিয়ে করতে বাধ্য করিও না।”

গুলশেনারা বেগম এসব শুনে চরম পর্যায়ের অবাক হন। শুধু তিনি নন সেখানে উপস্থিত আশিকুর চৌধুরীও অবাক হয়। তবে বাকি সবার মুখশ্রী স্বাভাবিক। বিশেষ করে ধৃতি যেটা খেয়াল করে আরশাদ এর প্রতিক্রিয়া অত্যন্ত অবিশ্বাস্য। এত বড় একটা সত্য সামনে আসার পরেও সে একদম শান্ত হয়ে আছে। এদিকে মালিনী পাটোয়ারী চিৎকার করে বলেন,
“তোমার সব সত্য ধরা পড়ে গেছে আনিকা!”

এই কথা শুনে আনিকা হুডি পরিহিত লোকটার থেকে দূরে সরে আসে। আমতা আমতা করে বলে,
“আপনারা এখানে!”

এমন সময় আরশাদ হেসে ওঠে। সাথে ঐ হুডি পড়া লোকটাও। আনিকা তার দিকে তাকিয়ে বলে,
“তুমি হাসছ কেন আরহাম?”

সাথে সাথেই লোকটা নিজের হুডি খুলে। যা দেখে আনিকা অবাক হয়ে দুই পা পিছিয়ে যায়। কারণ এই লোকটা আরহাম শান্ত নয় অন্য কেউ। লোকটা নিজের মুখ দেখিয়ে বলে,
“আমি আরহাম শান্ত নই, আমি কুদ্দুস মিয়া। আরশাদ স্যার আমাকে ভাড়া করেছিল আপনার সত্যটা সবার সামনে আনতে!”
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here