প্রেমের_ধাঁরায় #পর্বঃ১৫ #লেখিকাঃদিশা_মনি

0
37

#প্রেমের_ধাঁরায়
#পর্বঃ১৫
#লেখিকাঃদিশা_মনি

আনিকা হতবাক চোখে তাকিয়ে ছিল ছদ্মবেশী লোকটার দিকে। এই লোকটাকে সে আরহাম ভেবে ভুল করেছিল। যার ফলে তার সত্যটা আজ সবার সামনে এসে গেল। মালিনী পাটোয়ারী বলে উঠলেন,
“দেখলেন তো সবাই। আমি বা ধৃতি কেউ ভুল বলছিলাম না। এই আনিকা আসলেই একটা প্রতারক৷ ও আমার ছেলে আরশাদের ক্ষতি করতে চাইছিল। মিস্টার আশিকুর চৌধুরী দেখুন আপনার গুণধর মেয়ের কাহিনি। খুব তো বলেছিলেন আমরা আপনার মেয়েকে শুধু শুধু ফাসাচ্ছি। এবার কি বলবেন? আর আম্মা আপনিও তো এই মেয়েটাকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করছিলেন৷ এবার বলুন কিছু।”

গুলশেনারা বেগম ক্ষেপে উঠে বলেন,
“এসবের মানে কি আনিকা? আমি তোমাকে কতটা বিশ্বাস করেছিলাম। তুমি তো বলেছিলে তুমি আমার দাদুভাই কে ভালোবাসো। তাহলে কি সেসব কিছু শুধু মিথ্যা নাটক ছিল। তুমি কিভাবে পারলে এভাবে আমাদের ঠকাতে?”

আনিকা এবার বেশ রেগে গেল। সেও রাগান্বিত স্বরে বলল,
“হ্যাঁ, ঠকিয়েছি আপনাদের। যা করেছি একদম ঠিক করেছি। কি করবেন আপনারা? যা করার করুন আমার কিছু যায় আসে না। আমি এমনিতেও আপনার নাতিকে বিয়ে করতাম না। ওকে বিয়ে করার কোন ইচ্ছাও আমার নেই। আমি তো শুধুমাত্র আরহাম শান্তর কথায় এই বিয়েটা করতে রাজি হয়েছিলাম।”

গুলশেনারা বেগম এগিয়ে গিয়ে আনিকাকে চড় থাপ্পড় মা*রতে মা*রতে বলেন,
“ডাইনি মেয়ে কোথাকার! আমার দাদুভাই এর জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা! তোকে আমি ছাড়ব না।”

বলেই এবার তিনি নিজেও লাঠিটাও দিকে আনিকাকে আঘাত করতে থাকেন। আনিকাও কম যায়না। সেও গুলশেনারা বেগমের মাথায় চুল টেনে ধরে বলে,
“এই বুড়ি ছাড়ো আমায়! নাহলে তোমার সব পাকা চুল ছিড়ে ফেলব!”

গুলশেনারা বেগম এবার নিজের পায়ের চটি খুলে আনিকাকে মা/রতে মা/রতে বলেন,
“বজ্জাত মেয়ে! আমাকে বুড়ি বলা! তোকে দেখাচ্ছি মজা দাঁড়া।”

বলেই তিনি আনিকাকে জোরে জোরে প্রহার করতে থাকেন। এভাবেই দুজনের মধ্যে চুলোচুলি চলতে থাকে৷ যা দেখে উপস্থিত বাকি সবাই কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে আশিকুর চৌধুরী ছুটে গিয়েছিল গুলশেনারা বেগম এর হাত থেকে নিজের মেয়েকে ছুটিয়ে নিয়ে বলেন,
“ছাড়ুন আমার মেয়েকে! ছোটবেলা থেকে আমি ওকে অনেক আদরে মানুষ করেছি। কখনো ওর গায়ে একটা ফুলের টোকাও লাগতে দেই নি। আর আপনার এত বড় সাহস আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমার মেয়েকে এভাবে আঘাত করছেন?”

গুলশেনারা বেগম বলেন,
“আপনার মেয়ের এসব কাণ্ডকীর্তি জানার পরেও আপনি কোন মুখে এসব বলছেন?”

“আমার মেয়ে যা করেছে ঠিক করেছে। এমনিতেও আমার এই বিয়েটাতে কোন মত ছিল না। শুধু মাত্র নিজের মেয়ের কথায় এই বিয়েতে রাজি হয়েছিলাম। নাহলে তো..আমার মেয়ে যখন বলেছে সে আরশাদ কে নয় আরহামকে বিয়ে করবে তখন নাহয় আমি আরহামের সাথেই ওর বিয়ে দেব। এমনিতেও আপনাদের ফ্যামিলির যা স্টেটাস তাতে আরহাম আর আরশাদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই তাই নাহয় আমি আরশাদের সাথে ওর বিয়ে না দিয়ে আরহামের সাথেই দিলাম।”

মালিনী পাটোয়ারী এবার এগিয়ে এসে বলেন,
“সে আপনি আপনার মেয়ের বিয়ে যেখানে খুশি দিন না কেন আমার তাতে কিছু যায় আসে না। এখন ভালোয় ভালোয় আপনার গুণধর মেয়েকে নিয়ে আমাদের বাড়ি থেকে বিদায় হন।”

এমন সময় আরশাদ এগিয়ে এসে বলে,
“এভাবে বিদায় নিলে তো হবে না। আনিকা যেভাবে আমার আর আমার পুরো ফ্যামিলির সাথে প্রতারণা করেছে তার ফলও তো পেতে হবে। আমি ওর বিরুদ্ধে জালিয়াতির মামলা করব।”

আশিকুর চৌধুরী তেতে উঠে বলেন,
“তোমার এত বড় সাহস তুমি আমার মেয়েকে পুলিশে দেয়ার ভয় দেখাও! ওরকম দশ বারো টা পুলিশকে আমি পকেটে নিয়ে ঘুরি। ওসব পুলিশ আমার মেয়ের একটা চুলও বাকা করতে পারবে না।”

আরশাদ একটা রহস্য মূলক হাসি হেসে বলে,
“চুল বাকা করবে না চুল ছিড়বে সেটা তো পড়ে দেখা যাবে।”

আশিকুর চৌধুরী চূড়ান্ত অপমান বোধ করে আনিকাকে সাথে নিয়ে চলে যান। আনিকা যেতে যেতেও ফুঁসতে ফুঁসতে বলে,
“তোমাদের কাউকে আমি ছাড়ব না। সবার শেষ দেখে ছাড়ব আমি। আনিকা চৌধুরীর পাওয়ার সম্পর্কে তোমাদের কোন আইডিয়া নেই। তোমাদের সবার জীবন হেল করে রেখে দেব।”

তবে তার এসব হুমকিকে কেউ বিন্দু মাত্র দাম দেয় না। আনিকা চলে যাবার পর গুলশেনারা বেগম একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলেন,
“যাক বাবা! আপদ বিদায় হলো। ভাগ্যিস এই ধুরন্ধর মেয়ের সাথে আমার দাদুভাই এর বিয়েটা হয় নি। নাহলে কি অঘটন টাই না ঘটে যেত।”

মালিনী পাটোয়ারী টিটকারি করে বলেন,
“আপনি তো খুব আনিকা দিদিভাই আনিকা দিদিভাই করে মুখে ফেনা তুলে ফেলেছিলেন এখন দেখলেন তো আপনার আনিকা দিদিভাই এর কাণ্ডকীর্তি। আশা করি,এরপর থেকে লোক চিনতে ভুল করবেন না। মিছি মিছি আমাকে আর ধৃতিকে তো কম কথা শোনালেন না।”

গুলশেনারা বেগম আমতা আমতা করে বলেন,
“ওসব একটু আধটু ভুল মানুষের হয়েই যায়৷ তাছাড়া তোমাদের হাতে তো কোন শক্তপোক্ত প্রমাণ ছিল না যার জন্য সেসব বিশ্বাস করব।”

“তবুও আনিকাকে এভাবে অন্ধবিশ্বাস করা আপনার ঠিক হয়নি৷ নিজের এই ভুলটা অন্তত স্বীকার করুন।”

গুলশেনারা বেগম তবুও দমার পাত্রী নন। নিজের ভুল কিছু তেই স্বীকার করবেন না। তাই তো তিনি বলেন,
“হয়েছে হয়েছে আর এতো বলতে হবে না। তো আনিকাকে বিশ্বাস না করার একটা কারণ দেখাও। না ছিল ওর বিরুদ্ধে তোমাদের কাছে কোন শক্তপোক্ত প্রমাণ আর না তো এমন কিছু যাতে ওকে সন্দেহ করবে। উলটে ওর নিজের পক্ষে প্রমাণ ছিল।”

মালিনী পাটোয়ারী বুঝে যান তার শ্বাশুড়ি কিছুতেই তার ভুল স্বীকার করবে না৷ তাই তো কথা ঘুরিয়ে আরশাদকে জিজ্ঞেস করেন,
“আরশাদ, এসব কিছু যা ঘটল তার পেছনে কি তোর হাত আছে? আমার স্পষ্ট মনে আছে আমার যে কল করেছিল তার গলাটা অনেকটা তোরই মতো। তাহলে কি..”

আরশাদ গাম্ভীর্যের সাথে বলে,
“তুমি ঠিকই ধরেছ আম্মু। আমিই প্ল্যান করে এসব করেছি।”

“কিন্তু কিভাবে? তোর তো আনিকার উপর কোন সন্দেহ ছিল না।”

“আগে হয়তো ছিল না। কিন্তু গতকাল যেভাবে ধৃতি আমাদের বিয়ের আসরে এসে এতটা আত্মবিশ্বাসের সাথে বলল আনিকার ব্যাপারে তখন ওর আত্মবিশ্বাস দেখে আমার মনে হয়েছিল ঐ সঠিক। যদিও আমি ওকে নিজেকে প্রমাণ করার ২৪ ঘন্টা সময় দিয়েছিলাম তবে যেহেতু এখানে মূল সমস্যাটা আমারই..কারণ ধৃতির কথা সত্য হলে বিপদ আমারই তাই আমি নিজেও আনিকার ব্যাপারে খোঁজ লাগাই। এতে ওর বিরুদ্ধে কিছু সন্দেহের জিনিস পাই। তাই তো আমি ওকে যাচাই করার জন্য আমার কোম্পানির এক এমপ্লয়ি কুদ্দুস মিয়াকে ভাড়া করি৷ ও বেশ ভালো ছদ্মবেশ নিতে পারে। তাছাড়াও ওর আরেকটা গুণ হলো সবার গলা নকল করতে পারে। আর সেই গুণকে কাজে লাগিয়েই তো ও আরহাম শান্তর গলা নকল করে আনিকাকে ফাঁদে ফেলেছে। আমি ওকে একটা রেকর্ডারে শান্তর গলা শুনিয়েছিলাম। ও এরপর সেটা নকল করেছে।”

মালিনী পাটোয়ারী বলে,
“বাহ! তুই তো খুব সুন্দর প্ল্যান করেছিস। কুদ্দুম মিয়াও তো দেখি লাজবাব।”

কুদ্দুস লাজুক হেসে বলে,
“কি যে বলেন নাহ!”

এসবের মধ্যে হঠাৎ করে ধৃতি বলে ওঠে,
“সব সত্যি যখন সামনে চলে এসেছে তখন আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন আমি ঠিক ছিলাম। আমার উদ্দ্যেশ্য অসৎ ছিল না। আমি শুধু আরশাদ সাহেব আমার যে উপকার করেছিলেন তার প্রতিদান দিতে চেয়েছিলাম। যাইহোক, এখন যখন সব সত্য সামনে এসেই গেছে তখন আমি এখান থেকে চলে যাচ্ছিম”

মালিনী পাটোয়ারী উদ্বিগ্ন হয়ে বলেন,
“কোথায় যাবে তুমি ফুল?”

“নিজের রাস্তা আমি নিজেই খুঁজে নেব।”

বলে যেই না ধৃতি চলে যেতে নেবে এমন সময় আরশাদ তার হাত আটকে বলে,
“দাঁড়াও, কোথাও যাওয়া হবে না তোমার, শর্তের কথা নিশ্চয়ই মনে আছে?”

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here