#প্রেমের_ধাঁরায়
#পর্বঃ১৯
#লেখিকাঃদিশা_মনি
ধৃতির জ্ঞান ফিরতেই সে নিজের সামনে চিন্তাগ্রস্ত আরশাদকে দেখতে পায়। আরশাদ ধৃতির জ্ঞান ফিরতে দেখেই স্বস্তি পেয়ে বলে ওঠে,
‘তুমি ঠিক আছ তো? জ্ঞান হারালে কিভাবে?’
“হঠাৎ করে মাথাটা কেমন ঘুরে উঠল আর তারপর..”
মালিনী পাটোয়ারী আরশাদের উদ্দ্যেশ্যে বলেন,
“আমার মনে হয়, ধৃতিকে এখন বিশ্রাম নিতে দেওয়া উচিৎ। আমাদের এখন ওকে একা থাকতে দেয়া উচিৎ।”
“তুমি ঠিক বলেছ আম্মু৷ ধৃতি তুমি বিশ্রাম নাও। আমরা যাচ্ছি।”
বলেই আরশাদ রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আরশাদ চলে যেতেই মালিনী পাটোয়ারী ধৃতিকে বলেন,
“তোমার হঠাৎ করে কি হলো ধৃতি? ডাক্তার দেখিয়েছ?”
‘না,দেখানো হয়নি। কিন্তু হঠাৎ এই কথা বলছেন কেন?’
“আমার কেন জানি মনে হচ্ছে,,,”
“কি মনে হচ্ছে আপনার?”
“আচ্ছা, তোমার কি শুধু মাথাব্যাথাই করছে নাকি আরো অন্য কোন সমস্যা?”
“হুম, একটু বমি বমি ভাবও আছে। মনে হয় বদহজম হয়েছে।”
ধৃতির কথায় মালিনী পাটোয়ারী চমকে ওঠেন। দ্রুত রুমের দরজা লাগিয়ে এসে বলেন,
“এটা কি বলছ তুমি? এটা তুমি আমায় আগে বলবে না।”
ধৃতি এবার বুঝতে পারে মালিনী পাটোয়ারী কি বোঝাতে চাইছে। তার মনেও এই দ্বন্দ কাজ করছিল৷ ধৃতি নিজের এই অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভেবে কেঁদে দেয়। নিজের পেটে হাত রেখে বলে,
“এটা হতে পারে না।”
মালিনী পাটোয়ারী বলেন,
“আমাদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তার দেখাতে যেতে হবে। তবে তুমি কোন চিন্তা করো না। যদি এমন কোন অঘটন ঘটেও যায় তবে সেটা ঠিক করার উপায়ও আছে। এমন একটা অভিশাপকে তুমি কেন বয়ে নিয়ে বেড়াবে? যদি প্রয়োজন হয় তো এই পাপকে মুছে দেবে।”
ধৃতির চোখের জল বাঁধা মানছিল না। সেই ভয়াবহ আধার রাতের স্মৃতি প্রকট হচ্ছিল তার মনে৷ ধৃতি শুধু মনে মনে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছিল যেন এমন কিছু নাহয়। তাকে যেন নতুন করে কোন অভিশাপের মুখোমুখি হতে না হয়৷ যাতে করে সে যেই সুখী জীবনযাপন করার কথা ভাবছে তা ব্যাহত হয়।
★★
আরহাম শান্ত এবং আশরাফ পাটোয়ারী মুখোমুখি বসে ছিল। তবে তারা আজ এখানে একাই নেই, তাদের মাঝে এক নতুন ব্যক্তিও এসেছে। যে নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য তাদের দুজনের সাথে হাত মিলিয়ে ছেন৷ তিনি আর কেউ নন, গুলশেনারা বেগম। লাঠি হাতে নিয়ে বসে আছেন তাদের দুজনের সাথে। আশরাফ পাটোয়ারী তাচ্ছিল্য হেসে নিজের মায়ের উদ্দ্যেশ্যে বললেন,
“অবশেষে আপনি বুঝতেই পারলেন আম্মা, নিজের ছেলের থেকে নাতি কখনো আপন হয়না। আমাকে তো সেদিন নিজের নাতির কথায় বাড়ি থেকে বের করে দিলেন। তো আজ আপনার সেই আদরের নাতি কি করল? আপনার কথায় কোন তোয়াক্কা না করে একটা রাস্তার মেয়েকে বিয়ে করতে চলেছে।”
গুলশেনারা বেগম বলেন,
“আমি এত কিছু বুঝি না। আমার কথা একটাই, আমি কিছুতেই নিজের বংশমর্যাদা নষ্ট হতে দেব না। ঐ রাস্তার মেয়েকে নিজের বাড়ির বউ হতে দেব না। তার জন্য যা করা লাগবে আমি করব। তাই আজ আমি তোমাদের সাথে হাত মেলাতে এসেছি।”
আরহাম শান্ত কিছুটা গাম্ভীর্য নিয়ে অহমের বশে বলে,
“কিন্তু আপনার সাথে হাত মিলিয়ে আমাদের কি লাভ?”
গুলশেনারা বেগম বলেন,
“আমি জানি, তোমাদের উদ্দ্যেশ্য কি। পাটোয়ারী ব্যবসার অংশীদারত্ব চাও তো তোমরা? আমি কথা দিচ্ছি, যদি তোমরা আমার সাথে হাত মেলাও তাহলে তোমাদের দুজনকেও আমি পাটোয়ারী এন্টারপ্রাইজ এর অংশীদার বানিয়ে দেব। কিন্তু তোমরা যে করেই হোক এই বিয়েটা আটকাও।”
আরহাম শান্ত বলে,
“ডিলটা বেশ সাধারণ হয়ে গেল। আপনার মুখের কথায় আমরা কিভাবে বিশ্বাস করতে পারি?”
গুলশেনারা বেগম দাম্ভিক স্বরে বলেন,
“আমি, গুলশেনারা বেগম। আমার মুখের কথার কোন খেলাপ হয়না। বিশ্বাস না হলে, তোমার বাবাকে জিজ্ঞেস করে দেখ।”
আশরাফ পাটোয়ারী বলে ওঠেন,
“তুমি নিশ্চিন্তে থাকতে পারো আরহাম, আম্মা কখনো ওনার দেয়া কথার বরখেলাপ করেন না। উনি যখন বলেছেন, উনি আমাদের পাটোয়ারী এন্টারপ্রাইজ এর অংশীদার বানাবেন তখন উনি ওনার কথা নিশ্চয়ই রাখবেন।”
আরহাম বলে,”তা বেশ। তবে আমার আরো একটা শর্ত আছে?”
গুলশেনারা বেগম অধৈর্য হয়ে বলেন,
“কি শর্ত?”
“আমাকে আপনার পাটোয়ারী বাড়িতে ঠাঁই দিতে হবে এবং সমাজের সবার সামনে আমাকে আরশাদের মতোই নিজের বড় নাতির সম্মান দিতে হবে।”
গুলশেনারা বেগম রেগে বলেন,
“এটা একটু বেশিই হয়ে যাচ্ছে না?”
“আপনি ভেবে দেখুন, আমার পরিচয় কিন্তু এমনি তেই সবাই জেনে গেছে। তাই আমাকে মেনে নিলে বা বাড়িতে ঠাই দিলেও আপনার নতুন করে কোন সমস্যা হবার কথা না। কিন্তু যদি আপনাকে ঐ ধৃতি না কি যেন নাম,,হোয়াট এভার,ওকে বাড়ির বউয়ের সম্মান দিতে হয়, তাহলে কিন্তু আপনার সম্মান, প্রতিপত্তি আবার বিপদে পড়বে।”
গুলশেনারা বেগম ভাবনায় পড়ে যান। আশরাফ পাটোয়ারী বলেন,
“আরহাম কিন্তু ঠিকই বলছে আম্মা। আপনি একটু ভেবে দেখুন ওর প্রস্তাবে কিন্তু আপনার কোন ক্ষতি নেই ”
গুলশেনারা বেগম বলেন,
“বেশ, আমি তোমাদের সব শর্তে রাজি।”
আশরাফ পাটোয়ারী বলেন,
“আমাকেও কিন্তু বাড়িতে ফেরাতে হবে।”
“বেশ সব হবে। তোমরা শুধু এই বিয়েটা আটকাও।”
আরহাম শান্ত হেসে বলে,
“বেশ আপনার কাজ হয়ে যাবে। নিশ্চিন্তে থাকুন। আগে আপনি শুধু আমাকে কিছুটা তথ্য দিয়ে সাহায্য করুন। পাটোয়ারী বাড়িতে বর্তমানে কি চলছে?”
গুলশেনারা বেগম হা-হুতাশ করে বলেন,
“ন্যাকামি চলছে! কাল আরশাদ আর ধৃতির বিয়ে। আজ আসার আগে শুনলাম ধৃতি নাকি অসুস্থ, মাথা ঘুরে পড়ে গেছে। সেই নিয়ে নতুন নাটক।”
আরহামের মাথায় কিছু একটা আসতেই সে বলে,
“কি বললেন ধৃতি অসুস্থ?”
“হুম।”
“ভালোই, এবার ভেবে নিন কাজটা আরো সহজ হলেও হতে পারে। আপনি নিশ্চিন্তে বাসায় ফিরে যান।”
গুলশেনারা বেগম বিদায় নেন। আশরাফ পাটোয়ারী তাকে এগিয়ে দিতে যান। তারা যেতেই আরহাম শান্ত কাউকে একটা ফোন করে বলে,
“আমায় খোঁজ নিয়ে জানাও ঐ ধৃতিকে কোন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কিনা। বাকিটা আমি সামলে নিচ্ছি।”
★★
গাইনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নয়না চৌধুরীর সামনে বসে আছে ধৃতি ও মালিনী পাটোয়ারী। ধৃতি ভীষণ ভীত। তার ভয় করছে আবার না কোন চরম সত্যের মুখোমুখি হতে হয়। তবে মালিনী পাটোয়ারী তাকে সাহস দিয়ে বলছেন,
“তুমি চিন্তা করো না তো। যদি এমন কোন দূর্ঘটনা ঘটেও যায় তাহলে সেটা ঠিক করা উপায় তো আছেই। এখনো তো বেশি দেরি হয়ে যায়নি৷ প্রয়োজনে বাচ্চাটা নষ্ট করে দেব।”
ধৃতি কান্নামিশ্রিত স্বরে বলে,
“কিন্তু আরশাদ সাহেব কি এসব কিছু জানলে আমায় মেনে নেবেন?”
“অবশ্যই। আমার ছেলে এমন নয়৷ ও অবশ্যই মেনে নেবে। যা কিছুই হয়েছে তাতে তোমার কোন দোষ তো নেই।”
এমন সময় ডাক্তার নয়না চৌধুরী বলে ওঠেন,
“এই তো রিপোর্ট চলে এসেছে।”
তিনি রিপোর্ট চেক করতে থাকেন। ধৃতি ভীষণ ভয় পেয়ে যায়। মালিনী পাটোয়ারী তাকে স্বান্তনা দিতে থাকেন। নয়না চৌধুরী সব রিপোর্ট দেখে বলেন,
“সবকিছু তো ঠিকই আছে। প্রেগ্ন্যাসির রিপোর্ট নেগেটিভ বলছে।”
মালিনী পাটোয়ারী ও ধৃতি খুশি হয়ে যায়। ধৃতির বুক থেকে যেন পাথর সরে যায়। সে আবেগপ্রবণ হয়ে মালিনী পাটোয়ারীকে জড়িয়ে ধরে। মালিনী পাটোয়ারী বলেন,
“দেখলে তো ফুল। কিছুই হয়নি। তুমি শুধু শুধু চিন্তা করছিলে। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ডাক্তার। আপনি আমাদের নিশ্চিন্ত করলেন।”
বললেই তারা উঠে চলে যায়।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨