#প্রেমের_ধাঁরায়
#পর্বঃ২০
#লেখিকাঃদিশা_মনি
ধৃতি স্বস্তির সাথে মালিনী পাটোয়ারীর সাথে পাটোয়ারী বাড়িতে ফিরে আসে। বাড়িতে প্রবেশ করার সময় হঠাৎ করে তাদের সাথে মুখোমুখি সাক্ষাৎ হয় গুলশেনারা বেগমের৷ গুলশেনারা বেগম বলে ওঠেন,
“কোথায় গিয়েছিলে তোমরা?”
মালিনী পাটোয়ারী বলেন,
“কিছু জরুরি কাজ ছিল। কালই তো আরশাদের সাথে ফুলের বিয়ে, কাজের কি আর অভাব আছে?”
গুলশেনারা বেগম বিদ্রুপ করে বলেন,
“বিয়েটা আগে হতে দাও। আবার এমন না হয় যে সব আয়োজন মাঠে মারা যায়!”
“এসব আপনি কি বলছেন আম্মা?”
“যা বলছি ঠিকই বলছি। এই বিয়েটা হবে না, এটাই আমার দৃঢ় বিশ্বাস।”
মালিনী পাটোয়ারী জোর গলায় বলেন,
“এই বিয়েটা হবেই।”
“দেখা যাবে।”
★★★
পুরো বাড়ি সেজে উঠেছে বিয়ের সাজে। যেন উৎসবের আমেজ নেমেছে চারিদিকে। আজ আরশাদের সাথে ধৃতির বিয়ে। সেই উপলক্ষ্যেই এত আয়োজন। বর্তমানে গায়ে হলুদের প্রস্তুতি পর্ব চলছে। আরশাদ একটি হলুদ শেরওয়ানি পড়ে নিজেকে প্রস্তুত করে নিচ্ছে। অন্যদিকে, ধৃতির পড়নে একটি গাঢ় হলুদ শাড়ি৷ শাড়ি পরিহিতা অবস্থায় নিজেকে আয়নায় দেখছিল ধৃতি। এমন সময় পেছন থেকে আরশাদ হঠাৎ এসে বলে,
“তোমাকে আজ দারুণ লাগছে!”
ধৃতি লাজুক চোখে পিছনে ফিরে তাকায়। আরশাদ এগিয়ে এসে ধৃতির গালে নিজের হাতে হলুদ লাগিয়ে দেয়। ধৃতি যেন এক পরম আবেশে ভেসে যায়। আরশাদ ধৃতি ও তার মধ্যকার অবশিষ্ট দূরত্ব ঘুচিয়ে নিয়ে ধৃতির কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,
“তোমার গায়ে সর্ব প্রথম হলুদ আমিই লাগিয়ে দিলাম। যদিও এটা রিচুয়ালের মধ্যে পড়ে না তবুও…”
বলেই আরশাদ একটু থেমে বলল,
“আমি আমাদের একটা সুখী সংসার জীবনের আশা করি৷ আমার তরফ থেকে আমি তোমাকে এটুকু কথা দিতে পারি যে, এই সম্পর্কের মূল্য আমার কাছে অসীম। আমার তরফ থেকে তুমি তাই তোমার প্রতি সব দায়িত্ব পুংখানু পুংখ ভাবে পূরণ হতে দেবে। তোমাকে আমি একজন স্বামী হিসেবে স্ত্রীকে আগলে রাখতে হয় ঠিক সেভাবেই আগলে রাখব। কখনো কোন অভিযোগ করতে দেব। বিনিময়ে তোমার কাছে আমার বেশি কিছু চাওয়া নেই। শুধু জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আমার পাশে থেকো। থাকবে তো?”
ধৃতি দৃঢ় কন্ঠে বলে,
“থাকব।”
“বাহ, শুনে ভালো লাগল৷ আর একটা কথা না বললেই নয়। আমি সব কিছু মেনে নিতে পারলেও মিথ্যা বা ধোকাবাজি মেনে নিতে পারি না। আমি জানি, তুমি সেই রকম মেয়ে নও তবে তারপরেও বলছি কখনো আমাকে ধোকা দেয়ার কথা ভেবো না। আমি আপনজনের প্রতি যতটা দায়বদ্ধ হতে পারি বিশ্বাসঘাতকতদের বিরুদ্ধে ঠিক ততোটাই কঠোর হতে পারি। আমি তোমাকে অনেক বিশ্বাস করি ধৃতি। তাই আমি আশা রাখব, তুমি আমার বিশ্বাসটা সবসময় বজায় রাখবে।”
ধৃতি বলে,
“আমিও চাই আপনার এই বিশ্বাসটা ধরে রাখতে। আমার অতীত সম্পর্কে কোন কিছুই আপনার অজানা নয়। অতীতে যা হয়েছে,,”
ধৃতি নিজের কথা সম্পূর্ণ করার আগেই হঠাৎ করে আরশাদের ফোন বেজে ওঠে৷ খুব জরুরি একটা ফোন কল আসায় তাকে বাইরে যেতে হয় কথা বলতে। এদিকে ধৃতি একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,
“আরশাদ সাহেব আমায় কতটা বিশ্বাস করেন, আমার কোন মূল্যেই এই বিশ্বাসটা ভাঙতে দেয়া উচিৎ হবে না।”
এই ভাবনার মাঝেই হঠাৎ করে ধৃতির গা গুলিয়ে ওঠে। সে আর নিজেকে সামলাতে না পেরে বাথরুমে চলে যায়। বেসিনের মধ্যে বমি করে দেয়। নিজের মধ্যকার হঠাৎ এই পরিবর্তনে ধৃতির মনে কেমন জানি সন্দেহ জাগে। যদিও ডাক্তারের রিপোর্ট অনুযায়ী সে ঠিক আছে। কিন্তু তবুও কেন জানি ধৃতির মন কেমন জানি কু ডাকছে। কেপে উঠছে অজানা আশংকায়।
★★★
বিয়ের আয়োজন যত এগিয়ে আসছে গুলশেনারা বেগমের উদ্বিগ্নতা ততোই বাড়ছে। তিনি তো আরহামের উপর ভরসা রেখে বসে ছিলেন যে সে যেকোন মূল্যেই এই বিয়েটা ভাঙবে। কিন্তু বাস্তবে তো এর কোন প্রতিফলনই দেখতে পারছিলেন না তিনি। আরহামকে এখনো অব্দি কোন স্টেপ নিতে দেখা যায়নি। আর এই বিষয়টাই গুলশেনারা বেগমকে বিরক্ত করছে। তিনি মনে মনে বলছেন,
“আমি এই আরহামের উপর ভরসা করে ঠিক করলাম তো? ও কি আদৌ কিছু করবে?”
মেহমানদের খাতিরদারিতে ব্যস্ত থাকা মালিনী পাটোয়ারীর নজর যায় উদ্বিগ্ন গুলশেনারা বেগমের দিকে। তাই তো তিনি মালিনী পাটোয়ারীর দিকে এগিয়ে এসে বলেন,
“কি হলো আম্মা? আপনি মুখটা এমন বাংলার পাঁচের মতো করে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? আজ আপনার আদরের দাদুভাই এর৷ বিয়ে। কোথায় আপনি নেচে গেয়ে আনন্দ করে বেড়াবেন তা না মুখ ভাড় করে আছেন।”
গুলশেনারা বেগম দাঁতে দাঁত চেপে বলেন,
“আমার সাথে মজা নিচ্ছ? কাজটা কিন্তু ভালো হচ্ছে না বৌমা।”
মালিনী পাটোয়ারী জিভ কেটে বলেন,
“কি যে বলেন না আম্মা! আপনার সাথে মজা করার সাধ্য কি আমার আছে? আপনি হলেন এই পরিবারের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। কিন্তু কি বলুন তো, আপনার প্রভাব যতোই দৃঢ় হোক না কেন আল্লাহর পরিকল্পনার কাছে তাকে ফিকে হতোই হতো। আল্লাহ চেয়েছিলেন যে, আরশাদ ও ফুল এক হোক। তাই তো সকল বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে আজ বিয়েটা হচ্ছে।”
“এখনই এতো খুশি হইওনা,বিয়েটা কিন্তু এখনো হয়নি।”
“হয়নি কিন্তু হবে তো। আপনি তো কাল থেকে বলে চলেছেন যে বিয়েটা নাকি হবে না। কিন্তু এমন কোন কারণ তো দেখছি না। ঐ হিন্দিতে একটা প্রবাদ আছে না, মিয়া বিবি রাজি তো কেয়া কারেগা কাজি। তাই তো হয়েছে। যাদের বিয়ে তাদের যখন এখানে মত আছে তখন আমাদের মত এখানে মূল্যহীন।”
বলেই মালিনী পাটোয়ারী গুলশেনারা বেগম এর চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে অন্যান্য গেস্টদের আমন্ত্রণ জানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
গুলশেনারা বেগম ক্রোধে ফুঁসতে ফুঁসতে বলেন,
“এভাবে আমার সব চেষ্টা ব্যর্থ হতে পারে না। এই বিয়েটা কিছুতেই হতে পারে না। যদি ঐ আরহাম কিছু না করে তাহলে আমিই নিজে এমন কোন ব্যবস্থা করব যাতে এই বিয়েটা ভেঙে যায়।”
এরইমধ্যে কাজি সাহেবও চলে আসেন। মালিনী পাটোয়ারী তাকে সাদরে আমন্ত্রণ জানান। কমবেশি সব অতিথিও চলে এসেছে। এখন শুধু বর বধূর আসা বাকি।
সকলের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে সাদা-কালো কাজ করা শেরওয়ানী ও পাজামা পড়ে উপস্থিত হয় আরশাদ। তার মাথায় ছিল একটাও পাগড়ীও। তাকে এই বেশে একদম পুরো রাজপুত্র লাগছিল।
আরশাদ আসার কিছু সময় পর লাল বেনারসিতে সজ্জিত করে নিয়ে আসা হয় ধৃতিকে। এই মুহুর্তে আবার তারা দুজনে একে অপরের দিকে তাকাতেই চোখাচোখি হয়ে যায়।
মালিনী পাটোয়ারী তাদের দুজনকে একসাথে পাশাপাশি বসান। অতঃপর কয়েকজন মিলে তাদের মাঝখানে একটা পর্দা টেনে ধরে। কাজি সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করেন। গুলশেনারা বেগম বিয়ে ভাঙার জন্য এগিয়ে আসতে চাইলে মালিনী পাটোয়ারী তাকে আটকে বলেন,
“আর এক পাও আগাবেন। আমি আজ আপনাকে কোন কুচক্রী কাজ করতে দেব না।”
“বৌমা!”
গুলশেনারা বেগম বিস্ময়ে থ।
এদিকে কাজি সাহেব কবুল বলার নির্দেশ দেন ধৃতিকে। ধৃতি নিজেকে ধাতস্থ করে বলে ওঠে “কবু…”
ধৃতি নিজের কথা শেষ করতেই পারে না এর আগেই হঠাৎ করে বিয়ের আসরে উপস্থিত হয় আরহাম শান্ত। সে এসেই বলে,
“থামো ধৃতি..”
ধৃতি ভীত ও শংকিত চোখে আরহামের দিকে তাকায়। আরহাম শান্ত বলে ওঠে,
“নিজের গর্ভে আমার সন্তান ধারণ করে তুমি এভাবে অন্য কারো জন্য কবুল বলতে পারো না!”
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨