প্রেমের_ধাঁরায় #পর্বঃ১৬ #লেখিকাঃদিশা_মনি

0
35

#প্রেমের_ধাঁরায়
#পর্বঃ১৬
#লেখিকাঃদিশা_মনি

আরশাদ যখন ধৃতিকে তার শর্তের কথা মনে করিয়ে দেয় তখন ধৃতি বলে,
“জ্বি, আমার মনে আছে যে আপনি বলেছিলেন আনিকার সত্যটা প্রমাণিত হলে আপনি আমায় বিয়ে করবেন। হয়তোবা আপনি এই বিষয়টা নিয়েই কথা বলছেন। তবে আমায় মাফ করবেন,আমার পক্ষে এই বিয়েটা করা সম্ভব নয়।”

ধৃতির মুখ থেকে এহেন কথা শোনার আশা যেন কেউই করেনি। গুলশেনারা বেগম তো সাথে সাথেই তেতে উঠে বললেন,
“এই মেয়ে! তোমার সাহস তো কম না! আমার দাদুভাই তোমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে এটা তোমার চৌদ্দ গুষ্টির ভাগ্য। তোমার তো কোন যোগ্যতাই নেই আমার দাদুভাই এর বউ হওয়ার। তাই এমনিতেও আমি এই বিয়েটা হতে দিতাম না কিন্তু তুমি কোন সাহসে আমার দাদুভাইকে মুখের উপর না করে দিলে?”

ধৃতি আলতো হেসে বলে,
“আমি জানি, আমি কোন দিক দিয়েই আপনার নাতির যোগ্য নই। আর সেজন্যই আমি এই বিয়েটা করতে চাইছি না। আপনার নাতির পাশে মানাবে এমন যোগ্য মেয়ে খুঁজেই আপনি আপনার নাতির বিয়ে দিয়েন। এটাই আমার প্রত্যাশা। আমি আপনাদের কারো জীবনে আর বোঝা হয়ে থাকতে ইচ্ছুক নই। এখন আমি আমার নিজের পথ নিজেই খুঁজে নিতে চাই।”

ধৃতির মুখে এহেন কথা শুনে সবাই চমকে ওঠে৷ হয়তোবা ধৃতিকে একটু বেশিই অসহায় ভেবে নিয়ে তার সম্পর্কে তাদের মনে ধারণা তৈরি হয়েছিল যে ধৃতির কাছে এই বিয়ের প্রস্তাবটা বড্ড বেশি লোভনীয় হবে। তবে বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রমাণিত হলো। ধৃতি আরশাদের প্রস্তাব মুখের উপর না করে দিয়ে মালিনী পাটোয়ারীর সামনে এসে বলল,
“আপনি ভালো থাকবেন আন্টি। আপনাকে আমার ভীষণ ভালো লেগেছেন। আপনার স্নেহ পেয়ে মাতৃস্নেহের অভাব অনেকটাই দূর হয়েছিল। আপনার কথা আমার সব সময় মনে থাকবে। নিজের খেয়াল রাখবেন।”

মালিনী পাটোয়ারী জল টলমল চোখে বলে,
“এভাবে কেন চলে যাচ্ছ ফুল? আরশাদের প্রস্তাবটা মেনে নাও না।”

“আমার সব সত্যটা জানার পরও আপনি এই কথা বলছেন?”

“ফুল! আমি কি বলেছি তুমি সবসময় পবিত্র। এই কথা মাথায় রাখবে।”

গুলশেনারা বেগম তাদের কথা শুনে বলেন,
“দুজনের মধ্যে কিসের এতো গুজুরগুজুর ফুসুরফুসুর হচ্ছে শুনি? আর এই মেয়ে তোমার কোন সত্যের কথা বলছ? কি লুকাতে চাইছ আমাদের থেকে?”

ধৃতি কিছু বলতে যাবে তার আগেই মালিনী পাটোয়ারী বলেন,
“তেমন কিছু না, আম্মা। আসলে ধৃতি সহায়সম্বলহীন এক অনাথ মেয়ে জন্য নিজেকে এই বাড়ির যোগ্য মনে করছে না। আপনার ধারণাও তো অনেকটা তেমনই। এজন্যই তো অতীতে নিজের ছেলের পছন্দের মেয়ে নয়নাকে এই বাড়ির বউ হিসেবে মেনে নিতে পারেন নি।”

গুলশেনারা বেগম এবার গর্জে উঠে বলেন,
“খবরদার বৌমা! আমাকে এসব টিপ্পনী কেটে কথা বলবে না।”

আরশাদ এপর্যায়ে ভীষণ রেগে বলে ওঠে,
“তোমাদের এসব ফ্যামিলি ড্রামা বন্ধ করো তো। ধৃতি তুমি হয়তো জানো না, আমি এক কথার মানুষ। আমি যখন বলেছি আমি তোমাকে বিয়েটা করব তার মানে করবোই।”

“যদি আমার মত না থাকে তাহলেও করবেন?!”

“অমত জানানোর কারণ যদি এটা হয় যে তুমি আমার যোগ্য নও তাহলে এটাকে আমি অমত হিসেবে ধরব না। যদি আমার প্রতি তোমার কোন অভিযোগ থাকে তাহলে ট্রাস্ট মি, আমি আর এই বিয়েটা করতে চাইব না। কিন্তু কারণ যদি হয় তোমার হীনমন্যতা বোধ করা তাহলে এই বিয়েটা হবেই।”

ধৃতি এহেন পরিস্থিতিতে কি বলবে বুঝতে পারে না। আরশাদ বলে,
“আমি তোমাকে ভাবার জন্য সময় দিচ্ছি৷ ভেবে নিজের প্রপার সিদ্ধান্ত জানাও। যদি আমাকে বিয়ে না করার অন্য কোন কারণ থাকে তো জানাও। কারণ তুমি যেই কারণটা ভাবছ সেটা অন্তত আমার কাছে কোন ম্যাটার করে না। সেই কারণে এটা আমার উপর প্রভাব ফেলবে না।”

এমন সময় গুলশেনারা বেগম বলে ওঠেন,
“এই মেয়েটা যদি রাজিও হয় তবুও আমি এই বিয়েটা কিছুতেই হতে দেব না। এমনিতেই আমাদের বংশের নাম যথেষ্ট খারাপ হয়েছে তোমার বাবার জন্য। এখন কি তুমি আবার নতুন কেচ্ছা তৈরি করবে?”

আরশাদ তার দাদিকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়,
“এ বিষয়ে তোমার থেকে আমি অন্তত আর কিছু শুনতে চাই না দাদি। তুমি বাবাকে যেভাবে লোভের পথে পরিচালনা করেছিলে সেটা অন্তত আমার সাথে পারবে না। আর আমি ওয়ার্ন করছি সেটা করার চেষ্টাও করো না। নাহলে ফল ভালো হবে না। আর ধৃতি তুমি সময় নেও ভাবার জন্য।”

বলেই আরশাদ গম্ভীর মুখশ্রী করে বিদায় নেয়। আরশাদ চলে যেতেই ধৃতি ভাবনার গভীরে ডুবে যায়। এহেন জটিল পরিস্থিতিতে কি সিদ্ধান্ত নেবে সে? নানান ভেবেও কোন উপায় পায় না।

★★
আরহাম শান্ত বসে আছে নিজের বাড়ির আলিশান কক্ষে। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে থাকলেও আরহামের মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে। কত কয়েকদিন ধরে তার একের পর এক পরিকল্পনা সব ব্যর্থ হচ্ছে। আরশাদকে কুপোকাত করার জন্য সে যেই সব পরিকল্পনা করেছিল তার কোনটাই সফল হয়নি। চূড়ান্ত রূপে ব্যর্থ হয়েছে। আনিকা ধরা পড়ে গেছে আর ধরা পড়ার পর থেকে আরহামকে বিয়ে করার ভূত মাথায় চেপেছে তার। আজ তো আবার নিজের বাবাকে নিয়েও হাজির হয়েছিল যেই জিনিসটা আরহামকে চূড়ান্ত মাত্রায় বিরক্ত করেছে। কেননা, সে তো আনিকাকে শুধু একটা টোপ হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিল আরশাদের ক্ষতি করার জন্য। কিন্তু তার সেই সব পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে। আরহাম তাই প্রচণ্ড রেগে আজ আনিকা ও তার বাবাকে অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছে। তবে আনিকা এতটাই বেহায়া যে এতকিছুর পরেও বলেছে সে যেকোনমূল্যে আরহামকে নিজের করেই ছাড়বে। আরহাম আনিকার এই বোকামির কথা ভেবে কিঞ্চিৎ হেসে বলে,
“আমার জীবনে নারীরা আসে সাময়িক সুখ হয়ে। যারা আমার কাছে টিস্যুর সমতূল্য। প্রয়োজন শেষ তো খোদা হাফেজ৷ তেমনি তোমাকেও জীবন থেকে দূর করে দেব। কিন্তু এখন আমায় ঐ আরশাদের ক্ষতি করার জন্য নতুন টোপ খুঁজতে হবে। ও জীবনে সেই সব কিছু পেয়েছে যা থেকে আমি বঞ্চিত হয়েছি। তাই ওকে আমি কিছুতেই সুখী হতে দেব না। পুরোপুরি ধ্বংস করে দেব ওর জীবন।”

আরহামের এই ভাবনার মাঝেই হঠাৎ করে তার সেক্রেটারি এলেক্স হঠাৎ এসে বলে,
“বস আপনার সাথে একজন দেখা করতে এসেছে।”

“কে?”

এলেক্স কিছু বলার আগেই সেখানে উপস্থিত হয় আশরাফ পাটোয়ারী। তিনি এসেই বলেন,
“আমি!”

আরহাম তো আশরাফ পাটোয়ারীকে দেখে ভীষণ রেগে গিয়ে বলে,
“আপনি এখানে! কেন এসেছেন?”

ভীষণ ক্রোধ নিয়ে বলে। আশরাফ পাটোয়ারী নতমস্তকে বলেন,
“আমি জানি, আমি যা করেছি তাতে আমার উপর তোমার রেগে থাকাই স্বাভাবিক কিন্তু আমি তো তোমার বাবা৷ তোমার ভালো বই মন্দ চাইব না।”

“তো এখন আপনি কি চান সেটাই বলুন।”

“আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই।”

“আশ্রয়?”

“হুম, তুমি তো জানোই তোমাকে ছেলে বলে স্বীকার করে নেবার পর আমার আম্মা আর আরশাদ মিলে আমায় বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। এই ক’দিন আমি নিজের এক বন্ধুর বাড়িতে ছিলাম কিন্তু এভাবে আর কত দিন? তাই তো আজ চলে এলাম তোমার কাছে।”

“কিন্তু আপনাকে আশ্রয় দিয়ে আমার লাভ কি?”

“আমি তোমার উদ্দ্যেশ্য সম্পর্কে অবগত। তোমার আর আমার দুজনের জীবনের লক্ষ্যও এক। তুমি নিশ্চয়ই এটা স্বীকার করবে যে, আমি যেমনই হই না কেন সব সময় তোমার ভালোই চেয়েছি। এটা ঠিক যে, তুমি আর আরশাদ দুজনেই আমার ঔরসজাত সন্তান। কিন্তু আমার তো ঐ আরশাদের প্রতি কোন টান নেই। ছোটবেলা থেকে আমি তোমায় নিজের চোখের সামনে নিজের হাতে বড় করে তুলেছি। তাই আমি তোমারই সফলতা চাই। আমি চাই পাটোয়ারী এন্টারপ্রাইজ তোমার হাতে আসুক। আর চাই ঐ আরশাদের পতন। এজন্য যা করার দরকার আমি তাই করবো।”

“তাই? তা আপনার কি ক্ষমতা আছে শুনি?”

“আমাকে একবার সুযোগ দিয়েই দেখ তারপর আমার ক্ষমতা কি তা দেখিয়ে দেব।”

আরহামের ঠোঁটে এক অদ্ভুত হাসি দেখা দেয়। সে বলে,
“বেশ দিলাম সুযোগ। এবার নিজেকে প্রমাণ করে দেখান।”

” ধন্যবাদ। দেখিও তুমি এর জন্য পস্তাবে না।”

আরহাম শান্ত মনে মনে বলে,
“খেলা তাহলে আবার নতুন ভাবে শুরু হয়ে গেল!””
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here