“বিয়ের আগে আমি তোমার সাথে বাসর করতে চাই, যাতে জানতে পারি তোমার বেড পারফারম্যান্স কেমন! তোমার কি এতে কোন আপত্তি আছে?”
নিজের হবু স্বামীর মুখে এমন কথা শুনে চমকে উঠলো ধৃতি। ঘৃণায় ভ্রু-যুগল আপনা-আপনি কুঁচকে এলো। মুখ দিয়ে বের হতে চাইলো অশ্রাব্য গালি। তবুও সে নিজেকে সামলে নিয়ে ভদ্রতার সাথে বলল,
“আমার মনে হয়, আপনি আমার সাথে মশকরা করছেন তাই না? কিন্তু এটা অনেক বাজে মশকরা ছিল।”
ধৃতির কথা শুনে দাঁত কেলিয়ে হাসল আরহাম শান্ত। টেবিলে রাখা চাবি ঘুরাতে ঘুরাতে বলল,
“আমাকে দেখে কি তোমার মনে হয় আমি মজার মুডে আছি? আ’ম সিরিয়াস।”
এপর্যায়ে ধৃতি আর নিজের রাগ দমিয়ে রাখতে পারল না। নিজের সামনে রাখা পানিভর্তি বোতলে থাকা সমস্ত পানি ছুড়ে মারল আরহাম শান্তর দিকে। বিনিময়ে আশ্চর্যজনকভাবে শান্ত কোন রাগী প্রতিক্রিয়া না দিয়ে সুন্দর করে হাসল। আবারো বলল,
“আমার প্রস্তাবটা নিয়ে আরেকবার ভেবে দেখতে পারো।”
ধৃতির ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় সে চিৎকার করে বলে উঠল,
“ব্যস, অনেক হয়েছে। শুধুমাত্র আমার ভাইয়া আমার জন্য আপনাকে পাত্র হিসেবে ঠিক করেছে জন্য এতক্ষণ আমি চুপচাপ আপনার এসব বাজে কথা সহ্য করছিলাম। কিন্তু আর না। আমার ধৈর্যের সব সীমা আপনি অতিক্রম করেছেন। আমি তো এটা ভেবেই অবাক হচ্ছি যে, আমার ভাইয়া যে সবসময় আমার জন্য বেস্ট জিনিসটা এনে দিয়েছে তার চয়েজ এতটা বাজে হলো কিভাবে। আপনার মতো নোংরা মানসিকতার একটা মানুষকে সে কি করে আমার স্বামী হিসেবে চুজ করল? উফ, আমি আর ভাবতে পারছি না। আই নিড স্পেস।”
বলেই ধৃতি ক্যাফে থেকে বেরিয়ে গেল। শান্ত ধৃতিকে আটকালো না। তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে একটা রহস্যজনক হাসি দিয়ে বলল,
“তুমি যতোই হম্বিতম্বি করো মেয়ে, দিনশেষে তোমাকে আমার কাছেই ধরা দিতে হবে। এই আরহাম শান্তের নজর একবার যার দিকে পড়ে সে তাকে একদম নিজের করে নেয়। যতক্ষণ তার উপর আকর্ষণ থাকে ততক্ষণ নিজের কাছে রেখে দেয়। আর তারপর যখন তার উপর থেকে আকর্ষণ উঠে যায় তারপর…”
বলেই টিস্যু দিয়ে নিজের ভেজা শার্টটা মুছে নিয়ে অতঃপর টিস্যুটা ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে বলে,
“এভাবেই তাকে ছুড়ে ফেলে দেই। হা হা হা।”
শান্ত বেশ স্টাইল নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে একটা নাম্বারে ফোন দিল। অতঃপর একটা দুষ্টুমিসূচক হাসি দিয়ে বলল,
“তোমার পালানোর সব পথ আমি বন্ধ করে দিয়েছি ধৃতি৷ এবার হয় তোমাকে আমার কাছে ধরা দিতে হবে আর নয় তো নিজের সবকিছু হারাতে হবে।”
বলেই শান্ত আবারো এক রহস্যজনক হাসি দিল। সেই হাসির মধ্যে এক নিগূঢ় রহস্য লুকিয়ে যা কেবল জানে এবং আন্দাজ করতে পারে শান্ত। অন্য কেউ তার ভয়াবহতা সম্পর্কে ঘূনাক্ষরেও আন্দাজ করতে পারবে না।
★★
ধৃতি নিজের বাড়িতে প্রবেশ করে দেখতে পায় বাড়ি অন্ধকারে নিমজ্জিত। এতে সে খানিকটা ভয় পেয়ে যায়। মনে মনে বলে,
“কি ব্যাপার? হঠাৎ কি হলো এখানে?”
এমন সময় হঠাৎ করে তার বাড়ির সমস্ত লাইট জ্বলে উঠল। সামনে কিছু একটা নজরে আসতেই ধৃতি অবাক চোখে তাকিয়ে রইল। তার আট বছর বয়সী ভাইপো টুটুল দৌড়ে দৌড়ে তার কাছে এসে বলে,
“ফুফুমনি..তুমি এসেছ..জানো ঐ লোকগুলো খুব খারাপ..ওরা আমায় অনেকক্ষণ ধরে একটা অন্ধকার ঘরে বন্ধ করে রেখেছে। আম্মু-আব্বুর সাথেও আমাকে দেখা করতে দেয়নি।”
ধৃতি তার সম্মুখে দাঁড়ানো আগন্তুক ব্যক্তিদের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“কে আপনারা? আর কি চাই আপনাদের? কেন এসেছেন এখানে?”
কালো মুখোশ পুরোহিতা লোকগুলো একে অপরের দিকে কিছু সময় চাওয়াচাওয়ি করে। অতঃপর কোন প্রতিক্রিয়া দেখায় না৷ এর মধ্যেই একটা গম্ভীর পুরুষালি স্বর ভেসে আসে,
“ওরা কিছুই চায় না, যা চাওয়ার আমি চাই এবং সেটা আমাকে দিতে পারলে কেবল এবং কেবল তুমিই..”
ধৃতি গলার স্বর অবলম্বন করে পিছনের দিকে তাকাতেই হতবাক হয়ে গেল। অস্ফুটস্বরে বলল,
“আপনি?”
আরহাম শান্ত এগিয়ে আসে ধৃতির দিকে। ধৃতি আরহাম শান্তর কাছে গিয়ে তার শার্টের কলার চেপে ধরে বলে,
“কি চান আপনি আমার থেকে?”
“তোমার শরীর চাই..”
ধৃতির পুরো শরীর জ্বলে ওঠে। সে আর নিজেকে সামলাতে পারে না। ঠাস করে থা°প্পড় বসিয়ে দেয় শান্তর গালে। শান্ত তখনো বরাবরের ন্যায় নির্জীব, যেন এসব কিছুর কোন প্রভাবই পড়ছে না তার উপর। বরং সে ধৃতিকে নিজের সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিয়ে বলে,
“আমি চাইলেই তোমাকে জোর করে বেডে নিয়ে যেতে পারতাম..বাট ইউ নো হোয়াট..আমি এসব জোরজবরদস্তির মধ্যে কোন মজা খুঁজে পাই না। এটলিস্ট, আ’ম নট আ রেপিস্ট। আমার তো অন্যকিছু চাই..একটা মেয়ে স্বেচ্ছায় তার ইজ্জত আমায় দিয়ে দেবে।”
ধৃতি চিৎকার করে বলে,
“আমায় ছেড়ে দে শয়তান..তুই যদি ভেবে থাকিস এসব করার মাধ্যমে আমায় পাবি তো ভুল ভাবছিস। আমি অন্য মেয়েদের মতো না।”
“জানি তো, ইউ আর আ ইউনিক গার্ল। তাই তো তোমার প্রতি এত নেশা বোধ করছি। কিন্তু কি করবো বলো..আমার নজর যার দিকে যায় তার যে এই পরিণতিই কাম্য।”
বলেই শান্ত তার লোকদের কিছু একটা ইশারা করে। কিছুক্ষণ পরেই তারা প্রজেক্টর স্ক্রিনে এমন একটা ছবি দেখায় যা দেখে রীতিমতো আতকে ওঠে ধৃতি। কারণ সেখানে দেখা যাচ্ছিল ধৃতির ভাইকে কেউ বেধড়ক মারছে আর তার ভাবি সমানে কেঁদে চলেছে। ধৃতি এই দৃশ্য দেখে সহ্য করতে পারে না। চিৎকার করে বলে,
“ওদের থামতে বলুন..আমি আমার ভাইয়ার এই কষ্ট দেখতে পারছি না।”
আরহাম শান্ত একটা বিশ্রী হাসি দিয়ে বলল,
“তাহলে তো তোমাকে নিজের সবকিছু আমায় দেখাতে হবে।”
ধৃতি বুঝতে পারে শান্ত কোনদিকে ইশারা করছে। তার গলা ধরে আসে। সব কিছু ভুলে সে শান্তর কাছে আকুতি করে বলে,
‘দয়া করে আমার ভাইয়াকে ছেড়ে দিন। এর বিনিময়ে আপনি আমার কাছে যা চাইবেন আমি আপনাকে তাই দিবো।’
শান্ত বিজয়ীর হাসি দেয়। এতক্ষণ ধরে সে যেন এটাই চাইছিল। তাই তো বলে,
“আই নিড ইউর ভা°র্জি°নি°টি..ইউ হ্যাভ টু গো বেড উইথ মি।”
ধৃতি যেন চোখের সামনে আঁধার দেখছিল৷ তার সামনে দাঁড়ানো অতীব সুদর্শন, এই সুঠাম দেহী পুরুষের মাঝে যেন এক রাক্ষসকে দেখতে পাচ্ছিল সে। কিন্তু ধৃতিরও যে হাত পা বাঁধা। ছোটবেলায় এক দূর্ঘটনায় মা-বাবাকে হারানোর পর এই ভাইয়াই তো তাকে বুকে আগলে বড় করেছে। তার ভাইয়ার এই করুণ পরিণতি যে সে সইতে পারবে না। তাই তো নিজের সম্মান, ইজ্জত সব কিছু ভুলে যেন গেল সে। শান্তর সামনে নামিয়ে দিলো নিজের ওড়না। অতঃপর বুকফাটা আর্তনাদ করে বলল,
“আপনি যা চান তাই করুন আমার সাথে কিন্তু আমার ভাইয়াকে এভাবে মারবেন না..ও যে মরে যাবে এভাবে মার খেতে খেতে। ”
“এই তো বুদ্ধিমান মেয়ের মতো কথা।”
বলেই শান্ত ধৃতিকে টেনে নিয়ে গিয়ে একটা রুমের বেডে ছুড়ে ফেলল৷ অতঃপর ঝাপিয়ে পড়লো ধৃতির উপর। ধৃতির গালে, ঘাড়ে পাগলের মতো কামড়াতে লাগল। নিজের আধিপত্য বিস্তার করতে লাগল ধৃতির উপর। ধৃতি কোন বাঁধা দিল না। চুপচাপ নিজের সতীত্ব বিসর্জন দিতে লাগল। তারা সকল আর্তনাদ, শীৎকার হারিয়ে গেল দেয়ালের ফাঁকে।
একসময় যখন শান্ত নিজের চাহিদা মিটিয়ে উঠে গেল তার উপর থেকে। তখন একদম নিস্তেজ হয়ে বিছানায় পড়ে রইল সে। আর চোখ দিয়ে নীরবে অশ্রু বিসর্জন করতে লাগল। আরহাম শান্ত একবারও ফিরে তাকালো না তার দিকে আর। যেন ব্যবহৃত এক টিস্যু হিসেবেই গণ্য করলো। যেতে যেতে শুধু বলল,
“তোমার ভাইয়াকে সহি সালামত এখানে পৌঁছে দেয়া হবে।”
ধৃতি আশায় রইল তার ভাইয়ের ফেরার। এই আশাতেই তো আজ নিজের সবথেকে দামী জিনিসটা বিসর্জন দিল সে!
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨
#প্রেমের_ধাঁরায়
#পর্বঃ১
#লেখিকাঃদিশা_মনি