#প্রেমের_ধাঁরায়
#পর্বঃ২১
#লেখিকাঃদিশা_মনি
ধৃতি সহ বাকি সবাই হতবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল আগন্তুক আরহামের দিকে। এদিকে আরহাম হাতে বিভিন্ন ফাইল নিয়ে এগিয়ে আসছে। আরহাম একদম ধৃতির কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়ে বলল,
“এই যে তোমার প্রেগ্ন্যাসির রিপোর্ট। তুমি আমার সন্তানের মা হতে চলেছ।”
ধৃতি সম্পূর্ণ হতবাক। মালিনী পাটোয়ারীও চরম অবাক। এদিকে আরশাদ রাগী স্বরে বলে,
“এসব কিছুর মানে কি? এটা কোন নতুন নাটক?”
আরহাম হেসে বলে,
“নাটক নয়, এটাই সত্যি।”
ধৃতি বলে ওঠে,
“না,এটা হতে পারে না। আমার রিপোর্ট তো…”
এমন সময় হঠাৎ কথা নয়না চৌধুরী সেখানে উপস্থিত হয়ে বলে,
“এটাই আপনার সত্যিকারের রিপোর্ট। গতকাল ভুল করে একটা রিপোর্ট চলে এসেছিল। এজন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।”
ধৃতির এবার চরম হতবাক হওয়ার পালা। সে কি বলবে কিছু বুঝতে পারে না। আরশাদ ধৃতির দিকে তাকিয়ে বলে,
“এসব হচ্ছে টা কি? তুমি কিছু বলছ না কেন?”
ধৃতি যথারীতি চুপই থাকে। কারণ বিস্ময়ে তার মুখ দিয়ে তোর কথাই বের হচ্ছে না। আরহাম বলে,
“ও কি বলবে? যা বলার আমি বলছি। ধৃতির সাথে আমার একটা সম্পর্ক ছিল আর সেখান থেকেই ধৃতি এখন প্রেগন্যান্ট হয়ে গেছে। এখন তুমি ভেবে দেখো কি করবে, আমার খাওয়া মা**ল ধৃতিকে গ্রহণ করবে নাকি..”
আরশাদ রেগে বলে,
“চুপ আর একটা কথাও না।”
পরিস্থিতির সঠিক ব্যবহার করার জন্য উপস্থিত হন গুলশেনারা বেগমও। তিনি বলে ওঠেন,
“এই ছেলেটা তো আর এমনি এমনি ধৃতির নামে দূর্নাম রটাবে না। নিশ্চয়ই এই মেয়ের মাঝেই ঘাপলা আছে।”
বলেই তিনি ধৃতির কাছে গিয়ে ধৃতির হাত শক্ত করে ধরে বলেন,
“এই মেয়ে সত্যি টা বলো। আরহাম যা বলছে তা কি সত্যি?”
মালিনী পাটোয়ারী বলে ওঠেন,
“এই ছেলেটার কথায় বিশ্বাস করা কি আদৌ ঠিক হবে। আমি ফুলকে খুব ভালো করেই চিনি। ফুল অন্তত এই জঘন্য ছেলেটার সাথে সম্পর্কে থাকবে না।”
এবার আরশাদ ধৃতিকে জিজ্ঞেস করে,
“চুপ করে না থেকে সমস্ত সত্যটা বলো ধৃতি। তারপর আমি এই আরহাম শান্তকে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বের করে দেব।”
মালিনী পাটোয়ারী ইশারা করে ধৃতিকে মিথ্যা বলতে বলেনা৷ কিন্তু ধৃতি আজ আর কিছু না লুকিয়ে বলে,
“আপনি তো জানেন আমার ভয়ংকর অতীত সম্পর্ক যেই এই আরহাম শান্ত আমার সাথে কি করেছিল।”
আরশাদ হতবাক স্বরে বলে,
“কোন অতীতের কথা বলছ তুমি? তোমার অতীতের সাথে কি কোন ভাবে আরহামের যোগসূত্র আছে?”
আরশাদের এহেন কথায় ধৃতি এবার অবাক চোখে মালিনী পাটোয়ারীর দিকে তাকান। মালিনী পাটোয়ারী লজ্জায় আর অপমানবোধে দু চোখ নামিরায় নেন। ধৃতির যা বোঝার বোঝা হয়ে যায়। ভাগ্য আজ আবার তার সাথে এক নির্মম খেলা খেলল। ধৃতি চোখ বন্ধ করে অশ্রুপাত করতে করতে বলে,
“এটা সত্যি এ আমার গর্ভে যদি কোন সন্তান থাকে তাহলে সেটা আরহাম শান্তরই হবে কিন্তু…”
ধৃতি নিজের পুরো টা কথা শেষ করতে পারে না তার আগেই গুলশেনারা বেগম তাকে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। ধৃতির চুলের মুঠি ধরে বলেন,
“চরিত্রহীন, বে*- মেয়েছেলে। পেটে অন্য কারো বাচ্চা নিয়ে তুই আমার দাদুভাইকে ঠকিয়ে বিয়ে কর্যে চাইছিলি। তোকে তো আমি..”
আরশাদ তার দাদির থেকে ধৃতিকে ছাড়িয়ে নেয়। ধৃতি আরশাদের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“বিশ্বাস করুন,আমি আপনাকে ঠকিয়ে বিয়ে করতে চাই নি। গতকাল আমি প্রেগ্যান্সির টেস্ট করেছিলাম কিন্তু রিপোর্ট ছিল নেগেটিভ আর তাই…”
আরশাদ বলে ওঠে,
“আমি তোমায় বিশ্বাস করি। তুমি অনেক সত্যবাদী আর সৎ। তাই তো শুরু থেকে আমায় এত মিথ্যা বলে গেছ। নিজের অতীত লুকিয়েছ আবার আমার সাথে বিয়ের পিড়িতে বসা অবস্থায় আমি জানছি তুমি অন্য কারো সন্তানের মা হতে চলেছ। ছি! লজ্জা থাকা উচিত তোমার।”
মালিনী পাটোয়ারী এবার এগিয়ে এসে বলেন,
“ধৃতির এখানে কোন দোষ নেই। ও আমাকে নিজের অতীতের ব্যাপারে সবটাই বলেছিল আমায়। কিন্তু আমি তোমার থেকে সবটা লুকিয়েছি। আমি চাই নি ধৃতির অতীত তোমাদের পথে বাধা হয়ে দাড়াক।”
গুলশেনারা বেগম তেতে উঠে বলেন,
“বাইরের একটা মেয়ের জন্য তোমার এত দরদ যে একবার নিজের ছেলের কথাটাও ভাবলে না। এমন একটা কলংক ঝুলাতে যাচ্ছিলে আমার দাদুভাই এর গলায়!”
মালিনী পাটোয়ারী কিনা বলার মতো খুঁজে পান না। আরশাদ বলে দেয়,
“আমি আজ আমার জীবনের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ দুইজন নারীর কাছে ঠকে গেলাম। একজন আমার না আর আরেকজন…যাইহোক, এই সম্পর্কের কোন ভিত্তি নেই। আমি কিছুতেই ধৃতির মতো মেয়েকে নিজের বউ হিসেবে গ্রহণ করব না। যার না আছে কোন চরিত্র আর না আসে কোন সততা।”
ধৃতি বলে,
“আপনিও আমায় অবিশ্বাস করলেন? আমি সত্যিই আপনাকে ঠকাতে চাইনি।”
আরশাদ শক্ত স্বরে বলে,
“আমি এত সত্য মিথ্যা শুনতে চাই নি। বিশ্বাসঘাতক দের আমি প্রচণ্ড ঘৃণা করি। তাই তোমায় আদেশ দিচ্ছি, এক্ষুনি এই বাডি থেকে বের হও। নাহলে তোমায় ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বের করে দেব।”
ধৃতি ঠিক ভাবে প্রতিক্রিয়া দিতে পারে না। এ কোন আরশাদকে দেখছে সে? আরশাদের এই নিষ্ঠুরতা তার হৃদয়ে মারাত্মক দাগ কাটে। ধৃতি নিজের চোখের জল মুছে বলে,
“বেশ আপনার যদি আমাকে এতোই খারাপ মনে হয় তবে আমি চলে যাব। তবে তার আগে আপনাকে আমার কথা শুনতে হবে। কোন পরিস্থিতির কারণে আজ আমার এই অবস্থা তা জানতে হবে।”
“আমি এসব জানায় আগ্রহী নই। আমি শুধু এটাই জানি যে, তুমি একজন বড় বিশ্বাসঘাতক। সাথে আমার মাও। মাকেও এর শাস্তি পেতে হবে। ”
মালিনী পাটোয়ারী কিছু বলতে যাবেন তো আরশাদ তাকে থামিয়ে বলে,
“তুমি বেশি দয়া দেখালে তোমারো একই হাল হবে। তুমিও একজন বিশ্বাসঘাতক। কিন্তু আমার জন্মদাত্রী মা জন্য রেহাই দিচ্ছি।”
গুলশেনারা বেগম ধৃতির হাত শক্ত করে ধরে বলে,
“শুনলি না দাদুভাই কি বলল? বের হয়ে যা মুখপুড়ি।”
ধৃতি নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে যাচ্ছি। তবে সে যাওয়ার আগে আরশাদের দিকে তাকিয়ে বলে,
“একদিন আপনি নিজের ভুল ঠিকই বুঝতে পারবেন।”
একটু পর আবার আরহামের দিকে তাকিয়ে তার দুষ্টু হাসি দেখে শপথ করে বলে,”আমি এর প্রতিশোধ নেবোই।”
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨