প্রেমের_ধাঁরায় #পর্বঃ২৫(ধামাকা) #লেখিকাঃদিশা_মনি

0
31

#প্রেমের_ধাঁরায়
#পর্বঃ২৫(ধামাকা)
#লেখিকাঃদিশা_মনি

ধৃতির কথা শুনে আরহাম শান্ত বিজয়ীর হাসি হাসছিল এমন সময় হঠাৎ করে ধৃতির অট্টহাসি শুরু হয়। সেই হাসি দেখে আরহামের ভ্রু কুচকে ওঠে। সে নিজের হাসি থামিয়ে দেখে ধৃতি কেমন উন্মাদের মতো হাসছে। হাসতে হাসতেই ধৃতি হঠাৎ করে বলে ওঠে,
“কি হলো? এটাই তো শুনতে চেয়েছিলিস তুই? তাই না আরহাম শান্ত? কি ভেবেছিলি প্রত্যেকবারের মতো এবারও তুই জয়ী হবি৷ আবারো তোর নোংরা চক্রান্তে পা দিয়ে আমি আমার সবটুকু হারাব যেমনটা আগেরবার হয়েছিল? এমনটা ভাবলে তুই ভুল করছিস। ন্যাড়া বেলতলায় একবারই যায়।”

আরহাম শান্ত হতবাক হয়ে ধৃতির কথা শোনে। আরহামের উকিল বলে ওঠে,
“এসব হচ্ছে টা কি জজ সাহেব? আপনি শুনলেন একটু আগেই মিসেস ধৃতি নিজের মুখে স্বীকার করলেন যে উনি আমার ক্লাইন্ট মিস্টার আরহাম শান্তর স্ত্রী আর এখন উনি এভাবে কথা ঘোরানোর চেষ্টা করছেন।”

আকাশ পাটোয়ারী বলে ওঠে,
“কথা মিস ধৃতি নয় আপনি ঘোরানোর চেষ্টা করছেন। বিশেষ করে আপনি টাকার বিনিময়ে যে মিথ্যার জাল সাজিয়েছেন তা দেখে আমি লজ্জিত। আপনার তো গা থেকে এই উকিলের পোশাক খুলে ছুড়ে ফেলা উচিৎ।”

“অবজেকশন ইউর ওনার।”

আকাশ পাটোয়ারী বলেন,
“ইউর, ওনার। আমি কোর্টে ডেকে নিচ্ছি স্পেশাল দুজন সাক্ষীকে। যারা এখানে উপস্থিত হলে এই পুরো কেইসের মোড় ঘুরে যাবে। এর জন্য আপনার অনুমতির প্রয়োজন।”

বিজ্ঞ জজ সাহেব বলেন,
“আমি অনুমতি দিলাম।”

আকাশ পাটোয়ারী পেছনে তাকিয়ে কারো উদ্দ্যেশ্যে বলে ওঠেন,
“কোথায় আপনারা! ভেতরে আসুন।”

আকাশের ডাক শুনেই কোর্টের ভেতরে প্রবেশ করে দুজন নর-নারী। যাদের দেখেই আরহাম শান্তর পিলে চমকে ওঠে। শান্তর সেক্রেটারি গোলাম মোস্তফাও হতবাক। কারণ যারা উপস্থিত হয়েছে তারা আর কেউ নয়, ধৃতির ভাই এবং ভাবি। তারা দুজনেই কোর্টে ওঠে। অতঃপর কোরআন ছুয়ে সত্য বলার প্রতিজ্ঞা করে। আরহাম তখনো অবাক চোখে তাকিয়ে। আকাশ পাটোয়ারী মৃদু হেসে বলেন,
“কি মিস্টার শান্ত,অবাক হচ্ছেন তো? অবাক হওয়ারই কথা। কারণ এবার আর আপনার কোন প্ল্যান কাজে লাগল না। আগেরবার যে জঘন্য পরিকল্পনা করে আপনি এক নিরীহ নারীর সম্মান হরণ করেছিলেন এবার আর তা পারলেন না। ভেরি ব্যাড লাক। তো আপনারাই এবার নিজের মুখে সমস্ত সত্যটা খুলে বলুন যে এই আরহাম শান্ত আপনাদের সাথে ঠিক কি কি অন্যায় করেছে।”

ধৃতির বড় ভাই ধীরাজ বলতে শুরু করে,
“আমার সাথে প্রথম আরহাম শান্তর দেখা হয় আমার অফিসের বসের মারফত। প্রথম দেখায় আমাকে ওনার বেশ বিনয়ী এবং ভালো মনের মানুষই মনে হয়েছিল। ধীরে ধীরে ওনার আনাগোনা বাড়ে আমাদের অফিসে। উনি অফিসে সবার সাথে বেশ ভালো ব্যবহার করেন। একসময় আমার বসই আমাকে বলেন, আরহাম শান্ত নাকি তার বিয়ের জন্য মেয়ে খুঁজছে। আমার বস জানতেন যে আমি আমার বোন ধৃতির বিয়ে দিতে চাইছি। তাই উনি আমাকে বলেন, ধৃতি ও আরহামের বিয়ের ব্যাপারে ভাবতে। আমার চোখে আরহাম ভীষণ সুন্দর ব্যক্তিত্বের সুপুরুষ ছিল, আমি নিজের বোনের জন্য এমন ছেলেই খুঁজছিলাম আর তাই একবাক্যেই রাজি হয়ে যাই। কিন্তু তখনো বুঝিনি এই আরহাম শান্তর ভালো মানুষির আড়ালে কতটা নোংরা চক্রান্ত লুকিয়ে আছে। এই শয়তান আমার বোনকে দেখতে আসার নাম করে একটা কফিশপে ডেকে নিয়ে গিয়ে মারাত্মক নোংরা প্রস্তাব দেয়। আর আমার বোন ধৃতি যখন সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয় তখন ও নিজের লোকদের দিয়ে আমাকে এবং আমার স্ত্রীকে তুলে নেয়। তারপর আমার অসহায় বোনটাকে ব্ল্যাকমেইল করে…”

আর কিছু বলতে পারে না ধীরাজ। সেখানেই কাঁদতে শুরু করে। ধৃতির চোখেও জল। ধীরাজের স্ত্রী বলে ওঠে,
“শুধু তাই নয়, আজ আবারো আমাদের এই শয়তান লোকটা কিডন্যাপ করে ধৃতিক ব্ল্যাকমেইল করে মিথ্যা বয়ান দিতে বাধ্য করতে চেয়েছিল। কিন্তু ও জানত না, ওর দিন ঘনিয়ে আসছে। সবটাই সম্ভব হয়েছে আকাশ পাটোয়ারীর জন্য। উনি আমাদের উদ্ধার করার জন্য লোক পাঠিয়েছিলেন। নাহলে বোধহয় আজ আবারো এই শয়তানটার জয় হতো এবং ধৃতিকে আবারো অপমানিত হতে হতো।”

আকাশ পাটোয়ারী বলে ওঠেন,
“আমাকে মিস ধৃতিই বলেছিলেন যে, আরহাম শান্ত হয়তো এত সহজে বসে থাকবেন না। নিশ্চয়ই আবারো কোন না কোন ভাবে ষড়যন্ত্র করবে। আমিও ব্যাপারটা গুরুত্ব দিয়ে ভাবি। তখনই আমার মনে হয়েছিল আবারো ধৃতিকে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করে পারে। আর তাই আমি ওনার বাড়ির আশেপাশে নিজের কিছু বন্ধু-বান্ধবকে নজর রাখতে বলি। আর পরর দেখা গেল আমার সন্দেহই সত্যি। গতকাল রাতের আধারে ঐ আরহাম শান্তর লোকেরা ধৃতির ভাই-ভাবি এবং তাদের ছেলেকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। তবে আমার বন্ধুরা সব দেখে ফেলে এবং তাদেরকে অনুসরণ করে। যার ফলে তারা জেনে যায় কোথায় তাদের বন্দি করা হয়েছে। আমি তাদের সেখানের আশেপাশেই থাকতে বলি। তারপর আজ যখন এখানে কেস লড়া শুরু হয় ঠিক সেই সময় আমার বন্ধুরা স্থানীয় কিছু মানুষ ও পুলিশের সাহায্য নিয়ে ওনাদের উদ্ধার করেন।”

আরহাম ফুঁসছিল। ধৃতি আরহামের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“এবার তোর সব পাপের ফল পাবি তুই। এক নারীর সম্মানে আঘাত এনে যে অপরাধ তুই করেছিস তার জন্য তো তোর জন্য মৃত্যুও কম হয়ে যাবে। তবু আমি আশা করি তোর শাস্তি একটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। যাতে করে ভবিষ্যতে আর কেউ কখনো এমনটা করার দুঃসাহস দেখানোর আগে দুবার ভাববে।”

এরইমধ্যে জজ সাহেব বলেন,
“সমস্ত সাক্ষ্য এবং প্রমাণ বিচার করে কোর্ট এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে মিস্টার আরহাম শান্ত একজন অপরাধী এবং তিনি ধ**র্ষণের মতো একটা মারাত্মক ক্রাইমের সাথে জড়িত, এজন্য মহামান্য আদালত বাংলাদেশ দণ্ডবিধি ৩৭৬ ধারা অনুযায়ী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের অনুসারে মিস্টার আরহাম শান্তকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করছে এবং তার কাজে সহযোগিতা করার জন্য তার সকল সহযোগীদের গ্রেফতার করে উপযুক্ত প্রমাণের ভিত্তিতে শাস্তি দেয়ার নির্দেশ দিচ্ছে।”

আরহাম শান্ত চেচিয়ে ওঠে। কিন্তু তার এই চিৎকারে আর কোন লাভ হয় না। কারণ তার পাপের ঘড়া আজ পূর্ণ হয়েছে। গোটা দুনিয়ার সবার সামনে তার অপরাধ এসেছে। আরহাম শান্ত চিৎকার করে বলে,
“এটা ন্যায়বিচার নয়! কোর্ট এভাবে আমায় শাস্তি দিতে পারে না। সবাই শুধু আমার দোষটাই দেখল! এর পেছনের আমিটাকে কেউ যাচাই করল না। মাত্র ৫ বছর বয়সে আমি নিজের মাকে হারিয়েছে। ছোটবেলা থেকে মা-বাবার ভালোবাসাহীন, শাসনহীন ভাবে বেড়ে উঠেছি। ছোট থেকে এমন পরিবেশে বড় হয়েছি যেখানে নারীদের কেবল পণ্য বলে গন্য করা হতো। এই পরিস্থিতিতে বড় হওয়া আমার জন্য কি খুবই কঠিন ছিল একজন নারীকে..”

ধৃতি এবার নিজের পায়ের জুতা খুলে আরহামের দিকে ছুড়ে মারে। আরহাম হতবাক। ধৃতি গর্জে উঠে বলে,
“নারীদের পণ্য মনে করিস না তুই? তাহলে শুনে রাখ নারীরা তোকে নিজের পায়ের জুতার থেকেও অধম মনে করে। সারাজীবন যা পাপ করেছিস এবার জেলে বসে তার হিসাব দে। জেলে গিয়ে তোর এসব দুঃখের গল্প শোনাস সবাইকে।”

আরহামও গর্জে বলে
,”এত সাহস দেখাস না, ভুলে যাস না তোর পেটে…”

ধৃতি বলে,
“আমার মধ্যে যে বেড়ে উঠছে সে শুধু আর শুধু আমার সন্তান। কোন শয়তানের নয়। আমি কখনো তাকে তোর মতো জানোয়ারের পিতৃ-পরিচয় দেব না।”

এরইমধ্যে পুলিশ আরহামকে টানতে টানতে নিয়ে যায়। এখানেই যেন এক পাপের বিনাশ হয় আর সূচনা ঘটে ন্যায়ের সূর্যোদয়।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here