#বিস্তৃতির_মাঝে_তুমি_আমি
#পর্ব_৭ ( অতীত-২)
#লেখিকা_অনামিকা_তাহসিন_রোজা
রেস্টুরেন্টের টেবিলের এক প্রান্তে কাচুমাচু করে বসে রয়েছে রোজা। অপরপ্রান্তে তার দিকে স্থির চোখে তাকিয়ে রয়েছে আহমেদ। দেখে যেন মনে হচ্ছে রোজা চুরি করতে গিয়ে আহমেদের কাছে ধরা খেয়েছে! রোজা ক্ষণে ক্ষণে আবার এক পলক করে আহমেদের দিকে তাকাচ্ছে। সে আসলে আহমেদের অভিব্যক্তি বোঝার চেষ্টা করছে।
আহমেদ দ্বিতীয়বারের মতো জিজ্ঞেস করল,
“কী হলো? বলছো না কেন? ”
রোজা মাথা নিচু করে বলল,
” ক্ ক্,,কী বলবো?”
আহমেদ স্থির কন্ঠে বলল,
” ম’রতে গিয়েছিলে কেন? বয়ফ্রেন্ডের সাথে ব্রেকআপ হয়েছে? এই জন্য ম’রার শখ হয়েছিল? নাকি ভার্সিটির নাম বদনাম করতে যাচ্ছিলে?”
রোজা তাৎক্ষণিকভাবে বলে উঠল,
” না না, তা হবে কেন?”
আহমেদ বুঝতে পারল যে মেয়েটা বেশ ভালই বোকাসোকা। অনেক সহজ সরল মেয়ে সে। এই কারণে আহমেদ তার কঠিন ব্যক্তিত্ব টাকে লুকিয়ে রেখে আরেকটু নরম হয়ে বলল,
“কী হয়েছে? ”
রোজা চোখ তুলে তাকালো।
” কী এমন হয়েছে যে আ’ত্ম’হ’ত্যা করতে গিয়েছিলে?”
রোজা এবার উপায় না পেয়ে সমস্ত ঘটনা খুলে বলল আহমেদ কে। যদিও একজন অচেনা ব্যক্তিকে এভাবে সব বলতে তার অস্বস্তি হচ্ছিল। কিন্তু না বলে উপায় নেই! আহমেদ তার সিনিয়র! ভার্সিটিতে সিনিয়র কে সম্মান করা বাধ্যতামূলক! কিছুটা ভয় নিয়েই রোজা সমস্ত ঘটনা খুলে বললো আহমেদকে। সবকিছু শুনে আহমেদ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল রোজার দিকে।
তারপর বলল,
” কত টাকা লাগবে? ”
রোজা একটু সময় নিয়ে বললো,
” পনেরো হাজার!”
আহমেদ তার পকেটে হাত ঢোকালো মানিব্যাগ বের করার জন্য। রোজা বিষয়টা বুঝতে পারল না। আহমেদ তার মানিব্যাগ থেকে পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে এগিয়ে দিলো রোজার দিকে। রোজা একবার টাকাটার দিকে তাকালো আর একবার আহমেদের দিকে তাকালো। আহমেদ ইশারা করে রোজাকে টাকাটা নিতে বলল।
রোজার তাও চুপ রইলো। আহমেদ এবার বলে উঠলো,
“আপাতত এই ৫ হাজার টাকা রাখো। বাকি টাকাটা বিকেল বেলা দিয়ে দিব তোমাকে। এখন আমার কাছে টাকা নেই। বাড়িতে আছে।”
রোজা তৎক্ষণিকভাবে হাত নাড়িয়ে বলে উঠলো,
“না না টাকা লাগবে না। আপনি আমাকে টাকা কেন দিচ্ছেন? ”
আহমেদ চোখ রাঙিয়ে বলল,
” নিতে বলেছি নেবে। এত কথা কিসের? নাও। ”
রোজা চিন্তায় পড়ে গেল। সে কোনভাবেই এইভাবে তার সিনিয়র এর কাছ থেকে টাকা নিতে পারবে না। আহমেদ এবার বলল,
” তুমি টাকাটা নিবে নাকি তোমাকে ভার্সিটি থেকে রাস্টিগেট করার ব্যবস্থা করব? ”
রোজা এবার ভয় পেল। কি আজব লোক রে বাবা!!!টাকা নিতে বলছে! আবার না নিলে ভার্সিটি থেকে বের করে দেয়ার ভয় দেখাচ্ছে! রোজা কোনো উপায় না পেয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে আহমেদের বাড়িয়ে দেয়া টাকাটা নিলো। আহমেদ মানিব্যাগ পকেটে ঢুকাতে ঢুকাতে বলল,
” বিকেল বেলা ভার্সিটির বাইরে অপেক্ষা করবে।”
বলে আর এক মুহূর্ত থাকলো না সে। রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে গেল। কিন্তু বের হওয়ার আগে আরেকবার মুখ ঘুরিয়ে বলে উঠলো,
“বিকেল বেলা যদি তোমাকে ভার্সিটির বাইরে না পাই, তাহলে মনে করো কাল থেকে আর আসতেই হবে না,ভার্সিটিতে আসা বন্ধ তোমার! ”
রোজা একটা শুকনো ঢোক গিললো। আহমেদের প্রস্থানের পর রোজা তার হাতের মুঠোয় মুচড়ে থাকা টাকাটার দিকে তাকালো।প্রথমে একটু অস্বস্তি হলেও পরে মনের মধ্যে এক ভালোলাগা কাজ করলো তার!
একটা মানুষ ঠিক কতটা ভালো হলে এভাবে কাওকে এতগুলো টাকা দিয়ে সাহায্য করতে পারে। তাও আবার একটা অচেনা মেয়ের জন্য! রোজা সযত্নে টাকাটা তার ব্যাগে ঢুকালো। এরপরে তাকিয়ে রইলো আহমেদের চলে যাওয়ার দিকে!
ঠিক এইভাবেই দেখা হয়েছিলো আহমেদ ও রোজার! এটাই ছিলো তাদের প্রথম দেখা! এভাবেই শুরু হয়েছিলো তাদের জীবনের এক নতুন সূচনা! এক নতুন প্রণয়ের গল্প!!!
“””””””””””””””””””””””””””””‘
( বর্তমান)
“কী হলো আন্টি, চুপ করে গেলেন যে? তারপর বলুন!” উৎফুল্লে বলে উঠলো নাহিদ।
রাজিয়া রহমান হুসে এলেন আর বললেন,
” আরো বলতে হবে?”
অহনা বলে উঠলো,
” অবশ্যই আন্টি! কি যে বলেন না! এখনো তো আসল কাহিনী শুরুই হলো না!”
রাজিয়া রহমান বললেন,
“এ গল্প শুরু করলে আজ রাতে শেষ হবে না। সারারাত লাগবে শেষ করতে।”
রিয়াদ একটু চিন্তিত হলো। কথা সত্যি!তারপর বলল,
” আচ্ছা আন্টি আজ যদি আমরা আপনার বাসায় থাকি। তাহলে কোনো প্রবলেম হবে?”
রাজিয়া রহমান বললেন,
“না একদম প্রবলেম হবে না। কিন্তু রোজা তোমাদেরকে থাকতে দিবে কি?”
নাহিদ বলল,
” সেটা আপনি আমাদের উপর ছেড়ে দিন আন্টি?”
এরমধ্যেই রোজা হাঁক ছুড়লো।
” কি হলো মামনি? তাড়াতাড়ি করো প্লিজ! বাড়িতে যেতে লাগবে। ”
নুরা বলল,
“চলেন আন্টি। তাড়াতাড়ি খাওয়া দাওয়া শেষ করি। এরপর স্যার এবং ম্যামকে বিদায় করি। তারপর আমরা বাকি কাহিনী শুনবো।”
রাজিয়া রহমান সবাইকে খেতে দিল। খাওয়ার এক পর্যায়ে রাজিয়া রহমান যখন মাছের মাথাটা রোজার প্লেটে তুলে দিতে চাইলো, তখন রোজা বলে উঠলো,
” না মামনি দিও না।আমি মাছের মাথা নেব না।যার পছন্দ তাকে দাও। ”
আহমেদ মুচকি হাসলো। রাজিয়া রহমানও বুঝতে পারলেন, রোজা কী বলতে চাচ্ছে। তিনি মাছের মাথাটা আহমেদের প্লেটে তুলে দিলেন। একটু পরে আহমেদ বলে উঠলো,
“কী ব্যাপার মামনি? তুমি আমাকে মুরগির কলিজাটা কেন দিয়েছ? যার পছন্দ তাকে দিতে পারতে! ”
বলতে বলতেই আহমেদ নিজের প্লেট থেকে কলিজার টুকরো টা রোজার প্লেটে দিয়ে দিলো।
রোজা ভ্রু কুচকে তাকালো আহমেদের দিকে।
আহমেদ এবং রোজার এসব কান্ড দেখে সবাই মুচকি হাসলো। এদিকে নূরার তো পেটের মধ্যে খাবার টাও যাচ্ছে না! সে তো অস্থির হয়ে আছে সেই অতীতের কাহিনী শোনার জন্য।
একটু পর অহনা বলে উঠলো,
” ম্যাম, আজ আমরা এখানেই থাকবো ভাবছি।”
রোজা খাওয়া থামিয়ে বলল,
” কোন দুঃখে?”
রিয়াদ চোখের ইশারা করতেই রাজিয়া রহমান বলে উঠলেন,
” আমি থাকতে বলেছি তাই। একদম ওদের কিছু বলবিনা রোজা। আজ আমার খুব একা একা লাগছে। তোকে থাকতে বললেও তো থাকবিনা, কাজের বাহানা দেখাবি। ওরা অন্তত আজ আমার সাথেই থাক!”
রোজা কিছু বলল না। অহনা বলে উঠলো,
” ম্যাম ভোর হলেই চলে যাবো। সত্যিই!”
রোজা এইবার ছোট করে বলল,
” ঠিক আছে। সকাল ছয়টার আগেই ফ্লাটে চলে আসবে।”
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,