#প্রেমের_ধাঁরায়
#পর্বঃ২৪
#লেখিকাঃদিশা_মনি
আরহাম রক্তিম চোখে তাকিয়ে ছিল তার সেক্রেটারির দিকে। ধৃতি তার নামে কেস ফাইল করেছে এই কথাটা যেন তার কানে বাজছে বারংবার। সে বিশ্বাসই করতে পারছে না ঐ মেয়েটা এত বড় দুঃসাহস দেখাবে। তাই তো আরহাম বলে ওঠে,
“নিশ্চয়ই ওকে কেউ পেছন থেকে ইন্ধন দিয়েছে। নাহলে ওর এতটা ক্ষমতা নেই যে আমার বিরুদ্ধে লড়াই করবে।”
“আমি যতদূর শুনেছি আকাশ পাটোয়ারী নামের একজন উকিল ওনাকে সাহায্য করেছেন।”
হঠাৎ করেই আশরাফ পাটোয়ারী বলে ওঠেন,
“কি নাম বললে আকাশ পাটোয়ারী? ওকে তো চিনি আমি। মালিনীর ভাইয়ের ছেলে হয়।”
আরহাম বলে,
“যদি ধৃতি ভেবে থাকে এভাবে আমাকে ফাসাবে তাহলে ও ভুল ভাবছে।”
বলেই সে নিজের সেক্রেটারি গোলাম মোস্তফার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“তুমি তো জানো, তোমায় কি করতে হবে।”
গোলাম মোস্তফা মাথা দুলিয়ে জানায়,
“জ্বি, স্যার।”
এরইমধ্যে হঠাৎ করে আরহামের বাড়ির দরজায় কেউ নক করে ওঠে। গোলাম মোস্তফা গিয়ে দরজা খুলতেই এক এক করে পুলিশ সদস্যরা বাড়ির ভেতর ঢুকে পড়ে। গোলাম মোস্তফা বলে ওঠেন,
“আপনারা?”
“মিস্টার আরহাম শান্তর নামে এরেস্ট ওয়ারেন্ট আছে। আমরা ওনাকে এরেস্ট করতে এসেছি।”
গোলাম মোস্তফা ক্রোধিত স্বরে বলে,
“হাউ ডেয়ার ইউ! আমার বসকে গ্রেফতার করতে এসেছেন আপনারা! তার পাওয়ার সম্পর্কে আপনাদের কোন ধারণাই নেই।”
আরহাম শান্ত এগিয়ে এসে বলে,
“কাম ডাউন, মোস্তফা। ওনাদেরকে ওনাদের কাজটা করতে দাও। আর তুমি এদিকে নিজের কাজটা করো।”
আরহামের কথায় কিছু তো একটা ছিল। যা গোলাম মোস্তফাকে কিছু একটার ইঙ্গিত দেয়। পুলিশ আরহাম শান্তর হাতে হাতকড়া পড়িয়ে তাকে থানায় নিয়ে যায়।
★★
আরহামের গ্রেফতারির খবর শুনতেই ধৃতির জীবনে সুখের জোয়ার আসে যেন। আলমগীর পাটোয়ারী, মতিয়া বিবিও সেই আনন্দের শরিক হন। আলমগীর পাটোয়ারী তো আশেপাশের প্রতিবেশীদের মধ্যে মিষ্টি পর্যন্ত বিতরণ করেন। তিনি ধৃতিকে উদ্দ্যেশ্য করে বলেন,
“অবশেষে সত্যেরই জয় হলো। তোমার প্রতি হওয়া অবিচারের জবাব এবার ঐ আরহাম পাবে।”
মতিয়া বিবি বলেন,
“আমার যে আজ কি পরিমাণ স্বস্তি অনুভব হচ্ছে সেটা বলে বোঝাতে পারব না। ঐ আরহাম শান্ত কি অন্যায়টাই না করেছিল ধৃতির সাথে। এবার ও সেইসব অন্যায়ের জন্য যথাপুযুক্ত শাস্তি পাবে।”
এমন সময় আকাশ সেখানে উপস্থিত হয়ে বলে,
“আরহামকে শাস্তি পাইয়ে দিতে হলে এখনো আমাদের অনেক পথ পারি দিতে হবে দাদি। আগামী কাল কোর্টে কেইস উঠবে। সেখানেই সবকিছুর ফয়সালা হবে।”
আলমগীর পাটোয়ারী বলেন,
“আমি আশা রাখি, এবার জয় ন্যায়েরই হবে। অন্যায়কে সবসময় পরাজিত হতে হয় সে যতোই শক্তিশালী হোক না কেন। আমি আশাবাদী এবারও তার কোন ব্যত্যয় ঘটবে না ইনশাআল্লাহ।”
এদিকে,মালিনী পাটোয়ারী আরহামের গ্রেফতারের খবর শুনে খুব খুশি হন। খবরটা পেয়েই তিনি সাথে সাথে আরশাদের মুখোমুখি হয়ে বলেন,
“তুমি শুধুশুধুই ধৃতিকে ভুল বুঝলে আরশাদ।”
“মানে?”
“আরহাম শান্তর কথায় বিশ্বাস করে তুমি যে কত বড় ভুল করেছ সেটা এখন তুমি বুঝবে। ধৃতির সাথে আরহাম শান্তর কোন সম্পর্ক ছিল না বরং ঐ আরহাম শান্ত ধৃতিকে রে*ইপ করেছিল। এবার সমস্ত সত্যটা সামনে আসবে। সত্যটা জানার জন্য কাল কোর্টে চলো। তারপর নিজের চোখেই সবটা দেখতে পারবে।”
বলেই মালিনী পাটোয়ারী চলে আসেন। আরশাদ তার মায়ের বলা কথাগুলোই ভাবতে থাকে। তাহলে কি তার বলা কথাগুলোই সত্য!সে কি তাহলে সত্যিই ধৃতিকে ভুল বুঝেছিল।
পরের দিন,
আজ আরহাম শান্তকে কোর্টে তোলা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য আজ কোর্ট এ এসে উপস্থিত হয়েছে ধৃতিও। ধৃতির সাথে আকাশ, আলমগীর পাটোয়ারী এবং মতিয়া বিবিও এসেছিলেন। একটু পর মালিনী পাটোয়ারী এবং আরশাদও এসে উপস্থিত হন। এতদিন পর নিজের বাবা মার সাথে সাক্ষাৎ হওয়ায় মালিনী পাটোয়ারী আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তার চোখে জল চলে আসে। আবেগপ্রবণ হয়ে তিনি য়ার মা-বাবা কে জড়িয়ে ধরেন। আলমগীর পাটোয়ারী নিজের মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। এত গুলো বছর পর তারা এক পারিবারিক পুনঃমিলনের সাক্ষী হন। এদিকে আরশাদ ধৃতির দিকে তাকালেও ধৃতি তার দিকে তাকাচ্ছিল না। আরশাদও চোখ সরিয়ে নেয়। ততক্ষণে আরহামকেও কোর্ট এ নিয়ে আসা হয় এবং কোর্টে হেয়ারিং শুরু হয়। কোর্টের কাজ শুরু হতেই আরহামের উকিল বলে ওঠে,
‘আমার ক্লায়েন্ট মিস্টার শান্তকে এখানে পুরোপুরি একটা মিথ্যা কেইসে ফাসানো হচ্ছে। উনি মোটেই মিসেস ধৃতিকে রেইপ করেন নি। বরং মিসেস ধৃতি ওনার বিয়ে করা বউ!’
এত বড় একটা মিথ্যা কথা শুনে ধৃতি চমকে ওঠে। ধৃতির হয়ে কেস লড়া আকাশ পাটোয়ারীও বলে ওঠে,
“অবজেকশন মাই লর্ড, এখানে আমার বিপরীত পক্ষের আইনজীবী কোন প্রমাণ ছাড়াই এত বড় একটা মিথ্যাচার করছেন। আমার ক্লায়েন্ট মিস ধৃতি একজন অবিবাহিত নারী, যাকে এই আরহাম শান্ত রে**প করেছিল। আর তার সবকিছুর প্রমাণও আছে আমার কাছে। আমার ক্লায়েন্ট নিজেই সেই বিষয়ে সাক্ষী দিয়েছেন।”
আরহামের উকিল বলে,
“বেশ মিসেস ধৃতিকে কোর্টে ডাকা হোক। ওনার নিজের মুখেই আমরা সব শুনি।”
বিচারক সায় জানায়। ধৃতিকে কোর্টে ডাকা হয়। সে উঠে দাঁড়িয়ে কোর্টে যেতে যাবে এমন সময় হঠাৎ করেই একজন বয়স্ক ব্যক্তির সাথে তার ধাক্কা লাগে। ধৃতি সেই লোকটাকে বলে,
“আপনি ঠিক আছেন তো?”
বয়স্ক লোকটা ধৃতিকে একটা ছবি দেখায় যেখানে তার ভাই এবং ভাবিকে এবং সাথে তার ভাইয়ের ছেলেকে বন্দি করে রাখা হয়েছে এবং তাদের মাথায় বন্দুক তাক করা। বয়স্ক লোকটা ভীষণ ধীরে ধৃতির কানে ফিসফিস করে বলে,
“যদি নিজের পরিবারের ভালো চাও তো ওখানে গিয়ে স্বীকার করে নেবে যে তোমার সাথে আরহামের বিয়ে হয়েছে।”
ধৃতি হতবাক হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত তাকে কিনা আবারো এত জঘন্য ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হলো। তাহলে কি আবারো অন্যায়ের কাছে পরাজিত হতে হবে! ধৃতি ধীর পায়ে এগিয়ে যায়। এরমধ্যেই আরহামের পক্ষের আইনজীবী বিচারকের সামনে আরহাম শান্ত ও ধৃতির বিয়ের দেনমোহরের কাগজপত্র এবং আরো কিছু মিথ্যা ডকুমেন্টস পেশ করেন, সাথে কিছু এডিট করা ছবিও দেখিয়ে বলেন,
“দেখুন ইউর ওনার৷ এখান থেকেই প্রমাণিত হয় যে আমার ক্লায়েন্ট মিস্টার আরহাম শান্তর সাথে মিসেস ধৃতির বিয়ে হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ ভিত্তিহীন।”
আকাশ পাটোয়ারী বলে ওঠেন,
“এসব কিছু মিথ্যা। মিস ধৃতি, আপনি সত্যিটা বলুন।”
ধৃতি একবার সেই বৃদ্ধ লোক(ছদ্মবেশী গোলাম মোস্তফা) এবং আরেকবার আরহাম শান্তর দিকে তাকায়। দুজনের চোখেই রাঙানি ভাব এবং সতর্কবার্তা। যা জানান দিচ্ছে আজ যদি ধৃতি মিথ্যাটা না বলে তাহলে তার পুরো পরিবার শেষ হয়ে যাবে। ধৃতি একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। তার গলা ধরে আসে। জীবনের সবথেকে বড় মিথ্যাটা বলতে প্রস্তুত সে। সে ধরে আসা গলায় বলে,
“না,এসব কিছুই সত্য। আমি আরহাম শান্তর বিবাহিত স্ত্রী। আমাদের বিয়ে হয়েছিল। আমি যেই অভিযোগ এনেছিলাম তা ভিত্তিহীন এবং তা মনোমালিন্য থেকে করেছিলাম!”
আকাশ পাটোয়ারী হতভম্ব হয়ে বলে,
“এসব কি বলছেন আপনি মিস ধৃতি!”
“আমি সত্যি বলছি। আরহাম শান্ত আমার স্বামী। আমি ওনার দ্বারা রেইপ হইনি। শুধুমাত্র কিছু ব্যক্তিগত কারণে ওনার প্রতি ক্রোধ থেকে মিথ্যা মামলা করেছি।”
আরহাম শান্তর ঠোঁটে বিজয়ীর হাসি। মালিনী পাটোয়ারী বলে ওঠেন,
“ধৃতি এসব কি বলছে!”
আরশাদ ক্রোধিত স্বরে বলে,
“দেখলে তো ধৃতির আসল রূপ! আমিই ঠিক ছিলাম। তুমি না খুব ওর হয়ে কথা বলেছিলে এবার দেখো আসল সত্যটা৷ সি ইজ আ চিটার, যে তোমাকে, আমাকে সবাইকে বোকা বানিয়েছে।”
মালিনী পাটোয়ারীর যেন তখনো বিশ্বাস হচ্ছিল না। এদিকে ধৃতি বলে ওঠে,
“আরহাম শান্ত নিরপরাধ। ওনাকে মুক্তি দিন জজসাহেব!”
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨