#বিস্তৃতির_মাঝে_তুমি_আমি
#পর্ব_৮ ( অতীত- ৩)
#লেখিকা_অনামিকা_তাহসিন_রোজা
আহমেদ এবং রোজা চলে যাওয়ার পর নাহিদ, অহনা, রিয়াদ,নুরা, তারা চারজনই রাজিয়া রহমানকে ঘিরে বসেছে। বারান্দায় মাদুর বিছিয়ে দিয়ে রাজিয়া রহমান মাঝখানে বসে আছে এবং তাকে গোল করে ঘিরে ধরে রেখেছে তারা। অহনা এবার উৎসুক হয়ে বলল,
” আচ্ছা আন্টি,তারপর স্যার এবং ম্যামের প্রেমটা কিভাবে হয়েছিল?’
রাজিয়া রহমান একটু অপ্রস্তুত হলেন।যতই হোক তাদের দুজনকে তিনি ছেলে মেয়ের মত দেখেন। তাদের প্রেমের কথা তিনি বলতে একটু অস্বস্তি বোধ করছেন। রিয়াদ বলে উঠলো,
“আন্টি বলুন প্লিজ। আপনি বুঝতে পারছেন না! আমাদের জানাটা দরকার। ”
নুরা বলল,
” সবার আগে এটা বলুন, স্যার আগে ম্যামের প্রেমে পড়েছে নাকি ম্যাম আগে স্যারের প্রেমে পড়েছে?”
রাজিয়া রহমান এবার মুচকি এসে বললেন,
“তারা যে আগে কে কার প্রেমে পড়েছিল! সেটা আমি জানি না। কারণ তারা যে একে অপরকে ভালোবেসে ফেলেছিল সেটা তারা নিজেই জানতো না।”
রাজিয়া রহমান আবারো ডুব দিলেন অতীতে……….
( অতীত) –
পনেরো হাজার টাকা রোজাকে দেওয়ার পর আহমেদ আর রোজার সাথে দেখা করেনি। কিন্তু ভার্সিটিতে রোজা অনেক খোঁজ নিয়েছে আহমেদের বিষয়ে। তার মনে কৃতজ্ঞতাবোধ রয়েই গেছে। যতই হোক এইভাবে এমন দিনে তাকে টাকা দিয়ে সাহায্য করেছে লোকটা! একটা ধন্যবাদ তো তার পাওনা থাকে! কিন্তু রোজা আহমেদের দেখাই পেল না। ফিস জমা দেওয়ার কয়েকদিন পর রোজা ক্যান্টিনে আহমেদের দেখা পেল। আহমেদ হাতে গিটার নিয়ে টুংটাং আওয়াজ করছে এবং তার আশেপাশে তার বন্ধুরা সব গল্প করছে। রোজার ইচ্ছে হলো সেখানে গিয়ে আহমেদের সাথে কথা বলতে। কিন্তু এতগুলো ছেলের মাঝে যেতে সে অসস্তি বোধ করল। ক্যান্টিনে খাওয়া-দাওয়া শেষ হলে রোজা ক্যান্টিন থেকে প্রস্থানের সিদ্ধান্ত নিল। কিন্তু আবারও তার মন চলে গেল আহমেদের দিকে।রোজা আহমেদের সাথে খুব করে কথা বলতে চাইছে। একটা ধন্যবাদ দিতে চাইছে। কিন্তু সুযোগ পাচ্ছে না!
রোজাকে স্তম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হুমায়রা বলে উঠলো,
” কী হলো? দাঁড়িয়ে আছিস কেন? চল. ”
রোজা বলল,
“উনাকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত রে। অনেকদিন ধরেই চাচ্ছি কিন্তু সুযোগ পাচ্ছিনা।”
হুমায়রা বলল,
” তাহলে চল ধন্যবাদ দিয়ে আসি।”
রোজা চোখ বড় করে বলো,
” এতগুলো ছেলেদের মাঝে! ”
হুমায়রা হেসে ফেলল আর বলল,
“তুই এত ছেলেদের ভয় পাস কেন বলতো? ক্যান্টিনে কতজন আছে! চল কিছু হবে না। ”
হুমায়রা রোজা কে টানতে টানতে আহমেদদের কাছে নিয়ে এলো। দুজন মেয়েকে এদিকে আসতে দেখে আহমেদের একজন বন্ধু, সিয়াম চোখের ইশারা করে আহমেদকে পেছনে দেখতে বলল।আহমেদ পেছনের ঘুরে রোজাকে এখানে দেখে অবাক হলো না। কারণ রোজা যখন ক্যান্টিনে ঢুকেছে তখনই সে আহমেদের চোখে পড়েছিল। গিটারটা সাইডে রেখে সে রোজাদের সামনে এসে দাঁড়ালো এবং বলল,,
“কিছু লাগবে?”
রোজা আমতা আমতা করা শুরু করলো। তার কেন জানি খুব অস্বস্তি হচ্ছে! এই লোকটার সামনে আসলে কেন যে এখন রোজার জবান বন্ধ হয়ে যায়, সে নিজেও জানে না! কিন্তু নিজেকে তখন খুব দুর্বল প্রাণী মনে হয়! যেন মনে হয় বাঘের সামনে হরিণী দাঁড়িয়ে রয়েছে!
হুমায়রা বলে উঠলো,
” আসলে ভাইয়া ও আপনাকে কিছু বলতে চাচ্ছে.।”
ব্যাস! রোজার হাত-পা কাপাকাপি শুরু হয়ে গেল! এভাবে বলার কি দরকার ছিল!
আহমেদ এবার হুমায়রার থেকে চোখ সরিয়ে রোজার দিকে তাকালো আর বলল,
“কি বলবে? ”
রোজা এক পলক আহমেদের দিকে তাকিয়ে বলল,
” আসলে, সেই দিনের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আমি আপনার এই ঋণ কখনো শোধ করতে পারবোনা! আর আমার এখন অত টাকা কাছে নেই! তবে আপনি চিন্তা করবেন না! খুব তাড়াতাড়ি আমি টাকাটা আপনাকে ফিরিয়ে দেব! ”
আহমেদের যেন পছন্দ হলো না রোজার এই কথা। ভ্রু কুঁচকে বুকে হাত গুঁজে সে বলে উঠলো,
” তুমি একথা বলতে এখানে এসেছ? ”
রোজা উপর নিচ মাথা নাড়ালো। সে তো এই কথা বলতেই এসেছিল! আহমেদ বলল,
“টাকাটা এখনই দিতে লাগবেনা।যখন খুশি দিও। কিন্তু ঋণ শোধ করার ব্যাপারটা তুমি এখনই কমপ্লিট করতে পারো।”
আহমেদের এরকম কথা শুনে তার বন্ধুরা ফিসফিস শুরু করল। সিয়াম তো বলে উঠলো,
“ব্যাপার কি দোস্ত? এই ছেলেটা তো কোন মেয়ের সাথে এভাবে কথা বলে না! আজ এই মেয়েটার সাথে এমন অদ্ভুত ভাবে কথা বলছে কেন? ভুতে ধরেছে নাকি? ”
বাকি রাও একই চিন্তায় মগ্ন। তাদেরও উত্তর জানা নেই। আসলে আহমেদ বরাবরই মেয়েদেরকে এড়িয়ে চলে!
আহমেদের কথা শুনে রোজা না বুঝে তাকিয়ে রইল আহমেদের দিকে। তারপর বলল,
“কীভাবে? ”
আহমেদ মুচকি হেসে বলল,
“আমার সাথে এক কাপ কফি খেতে হবে এবং তোমার ফোন নাম্বারটা দিতে হবে!”
এইবারে আহমেদের সমস্ত বন্ধুর মুখ একদম হা হয়ে গেল! এটা কিভাবে সম্ভব! আহমেদ কবে থেকে এরকম হ্যাংলা হলো! সিয়াম তো এবার বলে ফেলল,
” এই ব্যাটা এটা কী বলছে? আমি এতক্ষণ কনফিউশনে ছিলাম! কিন্তু আমি এবার সিওর একে জিন ভুতে ধরেছে ভাই! ”
বাকিরা তো অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে!
আহমেদের কথা শুনে এবার রোজা বললো,
” কার নাম্বার? আমার? ”
আহমেদ বিরক্ত হয়ে বলল,
” না! তোমার না! তোমার পাশের বাসার আন্টির মেয়ের নাম্বার!”
আহমেদের এমন কৌতুকে এবার তার বন্ধুরা অবাক হওয়া ভুলে গিয়ে হুহা করে হেসে উঠলো! হুমায়রাও হাসি আটকে রাখতে পারল না! সেও ফিক করে হেসে ফেলল! রোজা কিছুটা লজ্জা পেল! আর আস্তে করে বলতে শুরু করল,
” নাম্বারটা নিন, ০১৭,,,,,,,,,,,,, ”
আহমেদ ফোন বের করে রোজার নাম্বারটা নিয়ে নিল। এরপরে রোজার নাম্বারে মিসকল দিল। রোজার ফোন হাতেই ছিল। আহমেদ বলল,
“সেভ করে রাখো! ”
রোজা বলল,
” ইয়ে মানে একটা কথা,,,,,,,”
আহমেদ ভ্রু কুঁচকে তাকালো। রোজা বললো,
” কফিটা কি এখনই?”
আহমেদ মুচকি হাসলো আর বলল,
“না এখন না, ভার্সিটি শেষে।আমার জন্য বাইরে অপেক্ষা করবে। যদি আমার জন্য অপেক্ষা না করে চলে গিয়েছো তাহলে আমি ভেবে নিব তোমার মত অকৃতজ্ঞ এই গোটা দুনিয়াতে নেই ”
রোজা এবার অসহায় চোখে তাকালো। সে কখনোই অকৃতজ্ঞ না! অবশ্যই ভার্সিটির বাইরে অপেক্ষা করবে আহমরদের জন্য। রোজা আবারো হাত কচলাতে কচলাতে বলল,
“আরেকটা কথা,,,,,,”
আহমেদ স্বাভাবিক ভাবে বলল,
” কী?”
রোজা বলল,
” নাম্বার নেওয়া এবং কফি খাওয়ার সাথে ঋন পরিশোধের কী সম্পর্ক? কফির টাকাটা না হয় আমি দিলাম। কিন্তু নাম্বার নেয়ার সাথে ঋন পরিশোধ,,, মিলছে না তো! ”
আহমেদ রহস্যময়ী হেসে বলল,
” সেটা তোমার না জানলেও চলবে! এখন যাও।”
রোজা মাথা নাড়িয়ে হুমাইরা কে নিয়ে চলে গেল। তাদের চলে যাওয়ার পর সিয়াম বলে উঠল,
” কিরে বন্ধু? ব্যাপারটা কি? কখনো কোনো মেয়ের সাথে কথা বলিস নি! আর হঠাৎ এমন বোকা টাইপের একটা মেয়ের সাথে কথা বললি! আবার নাম্বারটাও নিয়ে নিলি! বিষয়টা তো ঠিক ঠেকছে না আমাদের কাছে!”
আহমেদের বেস্ট ফ্রেন্ড তৌসিফ বলে উঠলো,
” ব্যাপার কি? তোর তো হাবভাব আমি ঠিক দেখছি না! সত্যি করে বলতো!”
আহমেদ একবার তাকালো রোজার প্রস্থানের দিকে। রোজা চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আহমেদ মাথা চুলকে বলল,
” মেয়েটা একটু ভিন্ন! ”
সবাই হো~~~ করে উঠলো। তৌসিফ বলে উঠলো,
“ওও আচ্ছা! কি এমন দেখলি যে ভিন্ন মনে হলো?”
আহমেদ জবাব দিলো না। যেদিন আহমেদ রোজাকে আ’ত্মহ’ত্যা করতে গিয়ে বাঁচিয়েছিল, সেই রাতে আহমেদের ঘুমই হয়নি। চোখ বন্ধ করলেই চোখের সামনে ভেসে উঠছিল রোজার মুখশ্রী! বারবার রোজার কথা মনে পড়ছিল! বারবার মনে পড়ছিল সেই সুদীর্ঘ পল্লব বিশিষ্ট আঁখি জোড়া! চোখের পানিতে ভিজে থাকা সেই নেত্রপল্লব মনে করেই আহমেদের সেদিন রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছিল! এর কারণ কি আহমেদ নিজেও জানে না! কিন্তু রোজাকে নিয়ে এই কয়েকদিনে তার অনেক হ্যালোসিলেশন হয়েছিল! যেদিকে তাকাচ্ছিল সেদিকেই রোজাকে দেখতে পাচ্ছিল! এই অদৃশ্য পিছুটান থেকে বাঁচতে সে এই কয়েকদিন ভার্সিটিতেই আসেনি! কিন্তু তবুও ভাগ্যের লিখন কি খন্ডানো যায়!
ঠিক এভাবেই শুরু হয়েছিল তাদের নতুন গল্প। এভাবেই চলে যায় আরো কয়েকটা মাস। এই কয়েকটা মাসে আহমেদ এবং রোজা দুজনেই অনেক ক্লোজ হয়ে যায়। কিন্তু সেইরকম ক্লোস না! শুধু একটু পরিবর্তন হয়েছে যে রোজা এখন আগের মত আহমেদের সাথে কথা বলতে এত ভয় পায় না।তারা আসলে দুজন দুজনকে খুবই ভালোবাসে। তারা সেটা নিজেরাও জানতো। কিন্তু কখনো প্রকাশ করতে পারত না। রোজা নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারত না ভয় এবং লজ্জায়। আর আহমেদ ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারত না কারণ সে নিজেই কনফিউজ ছিল। আহমেদ প্রায় ভাবতো এটা কি ভালোবাসা, নাকি অন্য কিছু! নিজেই উত্তর পেত না! এ কারণে সেও নিশ্চিত ছিল না! না হলে সে কবেই রোজা কে প্রপোজ করে দিত। এদিকে আহমেদ নিশ্চিত না হলেও আহমেদের হাবভাব কান্ডকলাপ দেখে আহমেদের বেস্ট ফ্রেন্ড তৌসিফ ঠিকই বুঝে ফেলল যে আহমেদ রোজা কে ভালোবেসে ফেলেছে! কিন্তু এই ছেলে তো সেটা মানতে খুব নারাজ!
এর মধ্যেই আহমেদ এবং রোজার মধ্যে কাঁটা হিসেবে আগমন ঘটেছিল সারিয়া নামে একটি মেয়ের। মেয়েটি আহমেদের ক্লাসমেট। সে সব সময় শুধুমাত্র আহমেদের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করে। তাকে ধমক দিলেও সে নির্লজ্জের মতো আহমেদের সাথেই থাকার চেষ্টা করে। বিষয়টা আসলে রোজা জানত না। কারণ ও মনে করতো সারিয়া আহমেদের বন্ধু।
একদিন আহমেদ একটি গল্পের বই রোজাকে পড়তে দিয়েছিল। রোজা সেটি ফেরত দিতে আহমেদের ক্লাসে গিয়েছিল। কিন্তু আহমেদের কাছে যাওয়ার আগেই তাকে আটকে দিয়েছিল সারিয়া এবং বলেছিল,
” কোথায় যাওয়া হচ্ছে? ”
যেহেতু সারিয়া রোজার সিনিয়র তাই সে ভদ্রতার সহিত বলল,
” আপু ওনার বইটা ফেরত দিতে চাচ্ছিলাম। ”
সারিয়া যেন বিরক্ত বোধ করল। তারপর মুখ কুঁচকে বলল,
“আমাকে দাও। তোমাকে চিন্তা করতে হবে না। আমি দিয়ে দিচ্ছি। ও এখন ব্যস্ত! ”
রোজা সহজ সরল মনে কথা না বাড়িয়ে বইটি এগিয়ে দিয়েছিল সারিয়ার দিকে। এরকম আরো অনেক ঘটনা রয়েছে যেখানে রোজা এবং আহমেদের মাঝে সারিয়া মাঝে মাঝে ঢুকে যায়। কিন্তু রোজা সেটাকে নেগেটিভ ভাবে দেখেনি। আর আহমেদও জানতো না যে সারিয়া মাঝে মাঝে রোজাকে হুমকি দিত, আহমেদের কাছাকাছি না যাওয়ার জন্য। আহমেদের না জানাটাই যেন কাল হয়ে দাঁড়ালো!!!
এরকমই একদিন বিকেলবেলা আহমেদ রোজা কে কল করে। রোজা তখন তার কাপড় ধুয়ে দিচ্ছিল।রিংটোন শুনে সে দ্রুত গতিতে হাত ধুয়ে এসে ফোন তুলে। কারন সে খুব ভালো করেই জানে এই সময় আহমেদ কল করবে। কেন জানি আহমেদ কল করলেই তার বুকটা ধুকপুক করে! কলটা ধরার সাথে সাথে আহমেদ বলল
” কী করছো?”
ব্যাস! রোজার বুকে শীতল হাওয়া বয়ে গেল! আহমেদ সব সময় কল করে প্রথমে এই কথাটাই তাকে বলে! আর এই ছোট কথাতেই রোজা কেন জানি খুব শান্তি অনুভব করে!
রোজা নিজের নখ খুটতে খুটতে বলল,
“আমার কাপড় ধুচ্ছিলাম।”
আহমেদ বলল,
“আজ রাতে একটু আসতে পারবে? ”
রোজার চিন্তিত স্বরে বলল,
” কোথায় আর কেনো?”
আহমেদ বলল,
“আসলে আমাদের বন্ধুরা মিলে আমরা সবাই একটা ছোট্ট পার্টির এরেঞ্জ করেছি। একটা রেস্টুরেন্টে! আমরা সবাই খেতে যাব সেখানে.দু একজন জুনিয়রও থাকবে। যেমন সিয়ামের গার্লফ্রেন্ড মানে তোমার ক্লাসমেট দিয়্ থাকবে। তারপর তৌসিফের গার্লফ্রেন্ড মানে তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড হুমায়রা থাকবে! তাহলে তো তুমিও যেতে পারো তাই না?”
রোজা একটু লজ্জা পেল। সে খুব ভালো করে বুঝতে পারছে সবাই জোড়া জোড়া হয়ে যাবে দেখে আহমেদ তাকে যেতে বলছে। বিষয়টা বুঝতে পেরে রোজা লাজুক হাসলো আর বলল,
” ঠিক আছে আমি যাব। কটার সময় যেতে লাগবে আর কোথায়? ”
আহমেদ বলল,
“তুমি সন্ধ্যে সাতটার সময় তৈরি হয়ে থেকো। আমি তোমাকে বাড়ি থেকে ড্রপ করে নেব।”
রোজা ঠিক আছে বলে কলটা কেটে দিল। এরমধ্যে রোজার বাবা রমজান ইসলাম বলে উঠলো,
” কি ব্যাপার মা? কে ফোন দিয়েছিল?”
রোজা বললো,
” ওই যে আমার ওই ভার্সিটির সিনিয়র! বলেছিলাম যে তোমাকে! আমার পরীক্ষার ফিস দিয়েছিল!”
রমজান আলী মনে করার ভঙ্গিতে বললেন,
” হ্যাঁ হ্যাঁ! ওই যে কি জানি নাম ছিল! আহমেদ! সাদ আহমেদ মনে হয়! তাই না? ”
রোজা মাথা নাড়ালো আর বলল,
” হ্যাঁ। উনি ফোন দিয়েছিলেন। আজ নাকি রেস্টুরেন্টে ছোট পার্টি এরেঞ্জ হবে। সেখানে জুনিয়াররা থাকবে। উনি আমাকে ইনভাইট করলেন। ”
রমজান ইসলাম বলল,
“বাহ বেশ তো। সাবধানে যাস আর সাবধানে ফিরে আসিস।”
রোজা মাথা নাড়ালো। আসলে আহমেদকে রমজান ইসলাম খুব ভালো করেই চেনেন। রোজা বরাবরই তার বাবাকে সমস্ত কিছু খুলে বলে। যেদিন আহমেদ তার পরীক্ষার ফি জমা দিয়েছিল। সেদিনই রোজা তার বাবাকে সব খুলে বলেছিল। কিন্তু আ’ত্মহ’ত্যা করার বিষয়টা লুকিয়ে রেখেছিল। এর পরে একদিন আহমেদ তাদের বাসায় আসে এবং রমজান ইসলাম আহমেদের সাথে খোশ গল্প করে! ছেলেটাকে রমজানের বেশ পছন্দ হয়! এজন্য এই রাত্রেবেলা রোজা কে যেতে অনুমতি দিচ্ছে। কারণ তার বিশ্বাস,আহমেদ তো আছে!
কিছুক্ষণ পর রমজান ইসলাম বলে উঠলো,
” তোকে মনে হয় আমি অনেক কষ্ট দেই তাই না রে মা? এই বুড়ো অচল বাবাটার সমস্ত খরচ চালাতে আবার তোর পড়াশোনার খরচ চালাতে খুব কষ্ট হয় তোর!”
রোজা কোমড়ে দুই হাত রেখে বলল,
” তুমি আবার শুরু করলে বাবা?”
মেয়েরা বাচ্চামো দেখে রমজান ইসলাম হেসে ফেললেন। তিনি হুইল চেয়ারটা ঘুরিয়ে বিছানার কাছে যেতে যেতে বললেন,
“আমাকে একটু বিছানায় শুয়ে দে। আমি ঘুমিয়ে পড়ি। তুই আসলে উঠবো। ”
রোজা তার বাবাকে ধরে হুইল চেয়ার থেকে উঠিয়ে বিছানায় শুয়ে দিলো।রমজান ইসলাম বলল,
” তুই আমার জন্য অনেক করছিস রে মা! তোকে যে আমি কি দিব! আমি কিছু জানি না! আমি আল্লাহর কাছে দু হাত তুলে অজস্র দোয়া করি যেন আল্লাহ তোকে অনেক সুখের জীবন দেয়! যেন আমার আর তোর মায়ের মত এরকম জ’ঘ’ন্য ভবিষ্যৎ তোর না হয়! তোর জন্য অনেক সুন্দর রঙিন একটা ভবিষ্যৎ হোক এটাই আমার একমাত্র চাওয়া জানিস! ”
রোজা কিছু না বলে নীরব থেকে তার বাবার বুকে মাথা রাখলো। একটু পরে বলল,
“তুমি রাতের খাবারটা এখনই খেয়ে নাও বাবা। আমার আসতে যদি দেরি হয়!”
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,