অশ্রুজলে_বোনা_বিয়ে #Part_5 #ইয়াসমিন_খন্দকার

0
7

#অশ্রুজলে_বোনা_বিয়ে
#Part_5
#ইয়াসমিন_খন্দকার

নিঝুম ও শান্তি বেগমকে নিয়ে নিজের বাড়িতে এলেন ছবি বেগম। নিঝুম আজ অনেকদিন পর নিজের বড় চাচার বাসায় এলো। কারণ তাদের পরিবারের মাঝে যোগাযোগ খুব কম। সর্বশেষ বোধহয় বছর খানেক আগে একবার এসেছিল যখন তার বড় চাচা আলমগীর খান অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে শয্যাগত ছিলেন। এসব কথা ভেবেই আনমনে হাঁটছিল নিঝুম৷ এমন সময় হঠাৎ করে হোঁচট খেয়ে পড়ে যেতে নিলে ছবি বেগম নিঝুমের হাত ধরে ফেলে। নিঝুমের সম্বিত ফিরতেই সে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। ছবি বেগম আলতো হেসে বলেন,”কি এমন ভাবছ? একটু দেখে চলবে তো।”

এরইমধ্যে আলমগীর খান হঠাৎ করে সেখানে উপস্থিত হন এবং তাদের দুই মা মেয়েকে দেখে অবাক স্বরে বলে ওঠেন,”তোমরা এখানে?!”

শান্তি বেগম কিছু বলতে যাবেন কি তার আগেই ছবি বেগম বলে উঠলেন,”নিজের গুণধর ভাইয়ের কোন খবরই তো রাখো না। তাই তোমার এই ব্যাপারে না জানাই স্বাভাবিক।”

“নাজমুলের নামও নিও না আমার সামনে। ওর উপর আমি রেগে আছি। এমনিতেই ও যেভাবে আমার ছেলের সাথে প্রতারণা করল…কিন্তু এখন আবার নতুন করে কি অঘটন ঘটালো?”

“কি অঘটন ঘটানোর বাকি রেখেছে সেটা বলো। নতুন বিয়ে করে শান্তি আর নিঝুমকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। ওরা অসহায় হয়ে এর ওর বাড়িতে বাড়িতে ঘুরছিল। তাই আমি নিয়ে এলাম।”

আলমগীর খান ক্রোধিত স্বরে বলেন,”এই নাজমুল সব কিছুর সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এর দেখছি একটা বিহিত আমায় করতেই হবে। তুমি খুব ভালো একটা কাজ করেছ ওদেরকে এখানে এনে। জানি না, নাজমুল কিভাবে এত নির্দয়তা করতে পারলো। নিজের মেয়েত কথাও একবার ভাবল না!”

ছবি বেগম দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলেন,”এক সময় তো আমার ইন্ধনে তুমিও নিজের ছেলেকে ত্যাগ করেছিলে। তোমারই তো রক্ত! যদিওবা আমার নিজেরও তো দোষ বেশি ছিল। তারই শাস্তি আল্লাহ আমার ছেলেটাকে দিচ্ছেন।”

বলেই আঁচলে মুখ চেপে কাঁদতে লাগলেন ছবি বেগম। আলমগীর খান এগিয়ে এসে ছবি বেগমের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,’আর অতীতের কথা ভেবে কষ্ট পেও না। আমি আবরাজে দায়িত্ব না নিলেও ওকে ফেলে তো দেই নি। নাজমুলের কাছে রেখেছিলাম ওকে। ওর দেখাশোনার জন্য মোটা অংকের খোরপোশও দিতাম। কিন্তু নাজমুল এটা কি করল?’

ছবি বেগম বলেন,”এখন এসব কিছুর একটাই সমাধান আছে। তুমি দয়া করে আবরাজকে সিলেটে আসতে বলো। আমার বিশ্বাস ও ফিরলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। আমারও যে ওর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে নিজের অতীতের কৃতকর্মের জন্য!”

আলমগীর খান বলে ওঠেন,”কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব? আবরাজ কেন আমার কথা শুনবে? আমার প্রতি ওর যা রাগ আমি বললে ও কখনোই দেশে ফিরবে না।”

“তাহলে এখন উপায় কি? এভাবে কি এই মেয়েটার জীবন নষ্ট হয়ে যাবে?”

বলেই ছবি বেগম নিঝুমের মাথায় হাত বোলান। নিঝুমের মায়াবী মুখের দিকে করুণ চোখে তাকিয়ে বলেন,”এই মেয়েটার তো কোন দোষ নেই৷ শুধু শুধু কেন নিজের বাবার লোভের ব/লি হবে ও? তুমি আবরাজকে সবটা বুঝিয়ে বলো না৷ আমরা নাহয় ওর সাথে অন্যায় করেছিলাম কিন্তু এখন যদি ও নিঝুমের সাথে অন্যায় করে সেটা তো ঠিক না। যেভাবেই হোক ওদের তো বিয়ে হয়েছে৷ সমাজের চোখে, আইনের চোখে, ধর্মমতে ওরা এখন স্বামী-স্ত্রী। আবরাজ কে তো আসতে হবে। ওর স্ত্রীর দায়িত্ব নিতে হবে।”

আলমগীর খান চিন্তিত হয়ে পড়েন। কিছুটা ভেবে বলেন,”তুমি ওদের ভেতরে ঘরে নিয়ে যাও। আমি দেখছি কি করা যায়।”

এমন সময় নিঝুম হঠাৎ করে বলে ওঠে,”আমার একটা অনুরোধ আছে বড় আব্বু। এই অনুরোধ টা রাখবেন প্লিজ।”

“কি অনুরোধ?”

“যদি উনি এই বিয়েটাকে মন থেকে মেনে নিতে না পারেন তাহলে দয়া করে তোমরা ওনাকে এই বিষয়ে জোর করবেন না। আমি চাই না জোরপূর্বক গড়ে ওঠা এই সম্পর্ককে উনি মনের বিরুদ্ধে গিয়ে স্বীকৃতি দিন। তাই উনি যদি এই বিয়েটা মানতে নারাজ থাকেন তাহলে বলে দেবেন আইনি উপায়ে যেন বিচ্ছেদের ব্যবস্থা করেন!”

ছবি বেগম হতবাক স্বরে বলেন,”এটা কি বলছ তুমি নিঝুম? এই সম্পর্কটা তুমি ভেঙে দিতে চাও?”

“জোর করে গড়া সম্পর্ক যে তাসের ঘরের মতো। সেটা একদিন না একদিন এমনি ভেঙে যাবে। তাই এই সম্পর্ককে টেনে না নিয়ে যাওয়াই বোধহয় ভালো হবে।”

ছবি বেগম বলেন,”তোমার কথায় যুক্তি আছে৷ তবে আমার কেন জানি মন চাইছে না যে এই সম্পর্কটা ভেঙে যাক। তোমাদের এক হওয়ার কি কোন উপায় নেই?”

“আমার জীবনে এই বিয়ে শুরুই হয়েছে অশ্রুজলের মাধ্যমে। এই সম্পর্ক থেকে কি ভালো কিছু আশা করা যায়?”

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
“কোন কিছুর আশা আমি রাখি না। আমার যা সিদ্ধান্ত নেয়ার আমি নিয়ে ফেলেছি। ঐ মেয়ের সাথে আমি কোন সম্পর্কে রাখতে অনিচ্ছুক। ভাবছি উপযুক্ত সময় হলেই দেশে ফিরে এই সম্পর্কটা শেষ করে দিয়ে আসব।”

আবরাজের মুখে কথাটা শুনে ম্যাক্স দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। আজ সকাল থেকে আবরাজকে সে নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করলেও আবরাজ ঘুরে ফিরে এই একই কথা বলছে। ওদিকে বেঁধেছে আরেক বিপত্তি। আমাদের নারীবাদী এলাও বলে দিয়েছে যদি আবরাজ ঐ মেয়ের সাথে কোন অন্যায় করে তাহলে আবরাজের সাথে কোন বন্ধুত্বের সম্পর্ক রাখবে না। আর এদের দুজনের মাঝে ফেঁসে গেছে ম্যাক্স। সে যে কি বলবে সেটাই বুঝতে পারছে না। এমন সময় হঠাৎ করেই আবরাজের ফোনে একটা ফোনকল আসে। আবরাজ সেই ফোনকলটা রিসিভ করে। রিসিভ করেই জিজ্ঞেস করে,”কে বলছেন?”

“আমি তোমার বাবা বলছি।”

আবরাজ সাথে সাথেই ফোনটা রেখে দিতে চায়। কারণ অতীতের ঘটনার কারণে নিজের বাবাকে সে প্রচণ্ড ঘৃণা করে। সে ফোনটা রেখে দিতে যাবে এমন সময় আলমগীর খান বলে ওঠেন,”কলটা কেটে দিও না৷ তোমার সাথে অনেক জরুরি কথা আছে।”

“কি কথা?”

এরপর তাদের মাঝে কিছুক্ষণ কথোপকথন চলে।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
নিঝুম ও শান্তি বেগম খানবাড়ির গেস্ট রুমে বিশ্রাম নিচ্ছিল। শান্তি বেগম মন খারাপ করে শুয়ে শুয়ে নিজের জীবনের যাবতীয় দুঃখবিলাস করছিলেন। স্মরণ করছিলেন বিয়ের পর থেকে কিভাবে দীর্ঘ দিন স্বামীর অবজ্ঞা, অবহেলা সহ্য করেছেন। তবুও পরিস্থিতির চাপে তাকে সব মুখ বুঝে সহ্য কররে হয়েছিল৷ চাচা-চাচির বাড়িতে মানুষ হওয়ায় তিনি কখনো বিবাহ-পূর্ব জীবনে সুখ পান নি আর না তো পেয়েছেন বিয়ের পর। এরপর তার জীবনে নিঝুম এলো। নিজের মেয়েকে কেন্দ্র করেই তিনি সুখের জীবন গড়ে তুলতে চাইলেন। তার জীবনের সবথেকে বড় স্বপ্ন এটাই যে তার জীবনে যাই হোক না কেন তিনি তার মেয়েকে সুখী দেখতে চান। এজন্য সবরকম চেষ্টাই তিনি করে গেছেন। নিঝুমের এসএসসি পরীক্ষার পরই নাজমুল খান নিঝুমকে এক মধ্যবয়সী পুরুষের সাথে বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন টাকার লোভে। সেবার কত অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করে তিনি বিয়েটা আটকাতে সক্ষম হয়েছিলেন। সেসব কথা ভেবে তিনি দীর্ঘ শ্বাস ফেলেন। এখনও যে মেয়ের জীবন এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে। তার স্বামী কি আদৌ তাকে স্বীকৃতি দেবে? এই চিন্তাই শান্তি বেগমের মাথায় কাজ করছে। নিঝুম যেন বুঝতে পারল নিজের মায়ের এই ভাবনা। তাই তো শান্তি বেগমকে উদ্দ্যেশ্য করে বললেন,”তুমি আমাকে নিয়ে কোন চিন্তা করো না, আম্মু। আমি নিজের পথ নিজেই গড়ে নেয়ার চেষ্টা করব। তুমি তো আমাকে জীবনে একজন প্রতিষ্ঠিত ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিলে। সেই স্বপ্ন আমি পুরণ করবোই।”

“ডাক্তার হয়ে আমার চিকিৎসা করবে তো আপি?!”

হঠাৎ কারো একটা কন্ঠস্বর কানে আসতেই সামনের দিকে তাকায় নিঝুম। সামনে তাকাতেই দেখতে পায় হুইলচেয়ারে করে এগিয়ে আসছে আবরার খান। ছবি বেগম ও আলমগীর খান এর একমাত্র ছেলে। নিঝুম আবরাজকে দেখে ভীষণ খুশি হয়। এই বাড়িতে আবরাজ এর সাথেই তার সম্পর্ক সবথেকে ভালো। ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে পড়ুয়া এই ছেলেটা বড্ড মিশুক। কিন্তু ভাগ্যের দোষে এক দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে কঠিন সময় পার করছে। নিঝুম এগিয়ে এসে আবরারের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,”অবশ্যই!”
#গল্পঃঅশ্রুজলে
to be continue…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here