#অশ্রুজলে_বোনা_বিয়ে
#Part_7(ধামাকা)
#ইয়াসমিন_খন্দকার
নিঝুম অবাক চোখে তার মা শান্তি বেগমের দিকে তাকিয়ে ছিল। মায়ের এই রণচণ্ডী রূপ সে আগে কখনো দেখে নি। উপস্থিত অনেকেই নানারকম কথা বলতে থাকেন। নাজমুল খান চূড়ান্ত অপমানিত বোধ করেন। তাই তিনি ভাবেন এখানে আর বেশিক্ষণ না দাঁড়ানোই ভালো। তাই তিনি ফেরার জন্য পা বাড়ান। তবে যেতে যেতে নিঝুম ও শান্তি বেগমকে সতর্কবাণী দিতে ভোলেন না। তিনি বলেন,”বেশি বাড় বেড়েছে না তোদের মা-মেয়ের? তোদের আমি দেখে নেব।”
তবে তার এই হুমকিকে শান্তি বেগম বা নিঝুম কেউই গায়ে মাখে না। ছবি বেগম দেখেন যে, উপস্থিত আত্মীয়-স্বজনরা নানারকম কথাবার্তায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এই ব্যাপারটা খেয়াল করে তিনি অনেক বিব্রতবোধ করেন। পরিস্থিতির গভীরতা তিনি বুঝতে পারছিলেন। তাই তো মৃদু হেসে বললেন,”যা কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে গেল তার জন্য আমি দুঃখিত। নিঝুম তুমি মনে সাহস রাখো।”
সন্ধ্যাবেলা,
আত্মীয় স্বজন অনেকেই বিদায় নিয়েছে। যে কয়েকজনও বা আছে তারাও যাওয়ার পথে। তবে যেতে যেতে তারা নানান ধরণের মন্তব্য করে যেতে ভুলছেন না। ছবি বেগমের আপন বড় বোনও যাওয়ার সময় বেশ শব্দ করে বলে ওঠেন,”এসব কি হচ্ছে ছবি? তোর বাড়িতে এসে এসব নাটক দেখব ভাবিনি। তোর সৎ বড় ছেলেটা এত খারাপ? বিয়ে করে নিজের বউকে এভাবে ফেলে রেখে চলে গেছে! একবারও ভাবল না মেয়েটার কি হবে?! আর মেয়ের বাবারই বা এটা কেমন আচরণ করে গেল?”
ছবি বেগম উত্তরে কি বলবেন বুঝতে পারেন না। একটু ভেবে চিন্তে তিনি কিছু বলতে যাবেন তার আগেই হঠাৎ করে সেখানে উপস্থিত হয় আবরাজ। সে এসেই বলে,”বউকে ফেলে রেখে কোথাও যাইনি। একটা মিথ্যা দিয়ে শুরু সম্পর্ককে মান্যতা দিতে চাইনি শুধু!”
আবরাজের গলার স্বর শুনে সবাই চকিতে সামনের দিকে তাকায়। সকলেরই অবাক দৃষ্টি আবরাজের দিকে। নিঝুম আবরাজকে দেখেই চোখ নামিয়ে নেয়। বিড়বিড় করে বলে,”উনি কি সত্যিই এসেছেন?!”
আবরাজ ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে বলে,”এবার এই মিথ্যা সম্পর্কের ইতি টানার জন্যই আমার আসা।”
ছবি বেগম আবরাজকে দেখে যতটা না খুশি হয়েছিলেন তার সব ছবি বিষাদে রূপ নেয় আবরাজ এর শেষ কথায়। তিনি স্পষ্ট বুঝতে পারছিলেন আবরাজ হয়তো বিবেচনা না করে একটা মস্ত বড় ভুল সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। তাই তো তিনি আবরাজের উদ্দ্যেশ্যে বললেন,”তুমি এতদিন পর এই বাড়িতে পা রাখায় ভীষণ খুশি হলাম। আমার এটা ভেবে খুশি লাগছে যে তুমি তোমার বাবার করা অনুরোধটা রেখেছ। আমার তোমাকে কিছু বলার আছে।”
আবরাজ গম্ভীর স্বরে বলে,”জ্বি, বলুন।”
ছবি বেগম আবরাজের সামনে এসে মাথা নিচু করে বলেন,”আমি জানি, অতীতে আমি তোমার সাথে যেই ভয়াবহ অন্যায়টা করেছি তার কোন ক্ষমা হয় না। আমার নির্দয়তার জন্য তোমার সুন্দর শৈশব ব্যহত হয়েছে। তুমি বাবার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এজন্য আমি ভীষণই লজ্জিত। তুমি আমাকে ক্ষমা করতে পাবে কিনা জানিনা..কিন্তু আমি নিজে অন্তত কখনো নিজেকে ক্ষমা করতে পারব না। জানো, আমার করা পাপের ফল আমার ছেলে…আবির ভোগ করছে। পারলে আমার ছেলেটার জন্য দোয়া করিও..আমি প্রয়োজনে তোমার পা ধরে….”
বলে যেই না তিনি আবরাজ এর পায়ে হাত দিতে যাবেন এমন সময় আবরাজ তাকে ধরে ফেলে বলে,”এটা কি করছেন আপনি? আপনার প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই। যেখানে আমার নিজের বাবাই…যাইহোক আপনাকে আমি অনেক আগেই ক্ষমা করে দিয়েছি। আবিরের জন্যেও আমি দোয়া করব যেন ও সুস্থ হয়ে যায়।”
আবরাজের মুখে এই কথা শুনে ছবি বেগম ভীষণ খুশি হন৷ আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন,”জানো, আজ আমার বুক থেকে অনেক বড় একটা বোঝা নেমে গেল। আমি এতদিন এটা নিয়েই দুশ্চিন্তায় ছিলাম যে তুমি কখনো আমায় ক্ষমা করবে কিনা..অবশেষে যেন আমার মনে শান্তি ফিরে এলো।”
আবরাজ বলে,”এখন তাহলে আমি যেই বিশেষ কাজে এসেছি সেটার ব্যবস্থা করা হোক।”
“কি কাজ?”
“আমার আর নিঝুমের ডিভোর্সের ব্যাপারে।”
ছবি বেগম মুখ ভাড় করে বলেন,”সম্পর্কটা ভাঙা কি খুব প্রয়োজন?”
আবরাজ এবার বেশ শক্ত কন্ঠে বলে,”এই বিয়েটা আমার সাথে শুধুই একটা প্রতারণা ছিল। তাই এই প্রতারণার সম্পর্কটা আমি টিকিয়ে রাখতে চাই না।”
নিঝুম এবার সামনে এগিয়ে এসে বলে,”আমিও আপনার সাথে একমত। এই সম্পর্কটা আর সামনে এগিয়ে না নেওয়াই ভালো। আপনি একটা কাজ করুন ভালো একজন উকিলের সাথে কথা বলুন যাতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই মিথ্যা সম্পর্কের সমাপ্তি ঘটে।”
আবরাজ বলে,”এমনটাই করব আমি।”
ছবি বেগম পড়ে যান ধন্দে৷ যেখানে এরা দুজনেই চাইছে না এই সম্পর্কটা টিকে থাকুক সেখানে কি আদৌ সম্পর্কটা টিকে থাকবে? ছবি বেগম একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলেন। হঠাৎ তার মাথায় কিছু একটা আসতেই তিনি বলে ওঠেন,”তোমাদের তো বিয়ের কেবল ২ দিন আগে হলো। এত তাড়াতাড়ি তো ডিভোর্স সম্ভব নয়৷ তোমাদের কমপক্ষে ৬ মাস ওয়েট করতে হবে।”
ছবি বেগমের কথায় আবরাজ এবং নিঝুম দুজনেই অবাক হয়ে যায়। আবরাজ বলে ওঠে,”তাহলে কি এই ৬ মাস আমাকে এই প্রতারণাপূর্ণ সম্পর্কটা বয়ে নিয়ে বেড়াতে হবে?”
ছবি বেগম বলেন,”দেখো যা হয়েছে সব নিঝুমের বাবার দোষ। নিঝুমের কোন দোষ নেই। আর সবকিছুর তো একটা আইন বলে কিছু আছে।”
আবরাজ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। ছবি বেগম আরো বলেন,”সামনের মাসেই তো নিঝুমের এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হবে। আগামী মাস নাগাদ শেষ হবে। তারপর আরো ৫ মাসের মতো সময় থাকবে তোমাদের জন্য এই সম্পর্কটাকে নিয়ে ভাবার। আমি তোমাদের একটা পরামর্শ দেব?”
আবরাজ জানতে চায়,”কি পরামর্শ?”
“তোমরা এই সম্পর্কটা এভাবে ভেঙে না দিয়ে এই সম্পর্কটাকে একটা সুযোগ দাও। নিঝুমের এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হবার পর তুমি নাহয় ওকে তোমার সাথে লন্ডনে নিয়ে যেও। তারপর সেখানে ৫ মাস একসাথে থাকিও।”
আবরাজ বলে ওঠে,”অসম্ভব! আমি এটা পারব না।”
“আমারও ওনার সাথে লন্ডনে যাওয়ার কোন ইচ্ছা নেই। প্রয়োজনে উনি নাহয় ৬ মাস পর এসেই ডিভোর্স দিয়ে যাবেন।”
কথাটা বলে ওঠে নিঝুম।
ছবি বেগম পরিস্থিতি বেগতিক বুঝতে পেরে বলেন,”এরকমটা তো হয় না। তোমরা আগে একটু একে অপরের সাথে মিশেই দেখ না। এমনও তো হতে পারে যে তোমাদের মধ্যে অনেক ভালো বনিবনা হয়ে গেল।”
আবরাজ বলল,”না,এই প্রতারক মেয়ের সাথে আমার বনিবনা সম্ভব নয়।”
নিঝুমও কম যায় না। সে বলে ওঠে,”ওনার মতো রাগী, অহংকারী লোক যার মধ্যে নূন্যতম দায়িত্ব বোধ নেই, একা একটা মেয়েকে রাতে মাঝরাস্তায় ফেলে যায় এমন কারো সাথে আমারও বনিবনা হবে না।”
আবরাজ রেগে নিঝুমের দিকে ধেয়ে এসে বলে,”ইউ..”
ছবি বেগম আবরাজকে থামিয়ে দিয়ে বলে,”এমন করো না তোমরা। মনে করো আমি তোমাদের দুজনকে চ্যালেঞ্জ দিলাম এই ৫ মাস একসাথে সংসার করার। আর ৫ মাস পর তোমরা এই সম্পর্ক থেকে চাইলে বেরিয়ে আসতে পারবে। আমার চ্যালেঞ্জ হলো এই পাঁচ মাসে তোমরা একে অপরকে চিনলে,জানলে হয়তো একে অপরকে বুঝতে পারবে। তখন আর এই সম্পর্কটা ভাঙতে চাইবে না। আর যদি ভাঙতে চাও তাহলেও অসুবিধা নেই। তখন তোমাদের এই সিদ্ধান্তকে আমি স্বাগতম জানাবো। এখন বলো,তোমরা কি আমার চ্যালেঞ্জে রাজি আছ? এমনিতেও আরো ৬ মাস কিন্তু তোমাদের অপেক্ষা করতেই হবে। যদি সাহসী হয়ে থাকো তো চ্যালেঞ্জটা নাও।”
আবরাজ কিছুটা ভেবে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,”ঠিক আছে, নিলাম। করে দেখি ৫ মাস সংসার।”
নিঝুম বলে ওঠে,”কিন্তু আমি রাজি নই!”
#গল্পঃঅশ্রুজলে
to be continue…..