#গল্পঃঅশ্রুজলে
#Part_2
#ইয়াসমিন_খন্দকার
নিঝুমের সাথে বিয়ে সম্পন্ন হবার পরপরই আবরাজ তার হাত ধরে হিড়হিড় করে টানতে টানতে তাকে গাড়িতে ওঠায়। নিঝুমকে সে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই জোরে গাড়ি চালাতে শুরু করে। সকাল থেকে নানান ঘটনায় বিরক্ত নিঝুম এত ঝাক্কি আর সামলাতে পারছিল না। কাতর স্বরে বলে ওঠে,”দয়া করে গাড়িটা আস্তে চালান ভাইয়া।”
আবরাজ নিঝুমের দিকে রক্তিম চোখে তাকিয়ে বলল,”একদম চুপ থাকো। আমার জীবনটা নষ্ট করে এখন আবার আমার মুখের উপর কথা বলছ!”
“আপনি ভুল ভাবছেন..”
নিঝুম নিজের পুরো কথা শেষ করতে পারল না। তার আগেই আবরাজ মাঝ রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে নিঝুমকে টানতে টানতে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে বলল,”কি ভেবেছ তুমি? আমাকে বিয়ে করে সাম্রাজ্ঞীর মতো জীবনযাপন করবা? তোমার সেই ইচ্ছা পূরব হচ্ছে না। তোমার মতো মেয়ের কোন যোগ্যতা নেই আমার বউ হওয়ার। এই বিয়েটা তো আমি করতামই না কেবল তোমার বাবার করা ঋণ পরিশোধের জন্য আমায় এই বিয়েটা করতে হয়েছে। তবে আমি আর এক মুহুর্ত তোমায় বরদাস্ত করব না। আর তুমি যদি ভেবে থাকো, আমার সাথে লন্ডনে গিয়ে আয়েশে জীবনযাপন করবে তাহলে ভুল ভাবছ। আমি আজ এখনই লন্ডনে ফিরে যাব তবে তোমার যায়গা হবে না আমার জীবনে। আমি আজ এই মুহুর্তে তোমায় ত্যাগ করলাম এবং এখান থেকেই আমাদের জীবন আলাদা।”
বলে আবরাজ খান আর এক মুহুর্ত অপেক্ষা করল না। তাড়াহুড়ো করে গাড়িতে উঠে পড়ল। একবারো পিছন ফিরে তাকালো না নিঝুমের দিকে। সে নিজের মতো গাড়ি চালাতে শুরু করে দিলো। পেছনে ফেলে রেখে গেল অশ্রুসিক্ত নিঝুমকে। আর নিঝুম অশ্রুসিক্ত নয়নে মাঝরাস্তায় দাঁড়িয়ে নিজের জীবনের হিসাব মিলাতে ব্যস্ত হয়ে গেল। আজ কোন অপরাধে তাকে এই দিন দেখতে হলো? সে ভেবে পেলো না। এরইমধ্যে আকাশ বেয়ে নামলো অতি বৃষ্টি। বৃষ্টির গতি বাড়লো ধীরগতিতে। বৃষ্টির জল যেন আড়াল করল নিঝুমের চোখের জলকে। কিন্তু তার মনে আজ যে ক্ষত সৃষ্টি হলো তা কি কখনো সেরে উঠবে? এই প্রশ্নের উত্তর জানে না নিঝুম। তার মনে এক উতালপাতাল ঝড় বয়ে যেতে লাগল। জীবন তাকে আজ যেন অনিশ্চয়তার এক মহাসমুদ্রে এনে দাঁড় করিয়েছে। যেখান থেকে নিস্তারণের পথ তার জন্য বের করা কঠিন!
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
নিজের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে নিঝুম। নাজমুল খান রাগান্বিত দৃষ্টিতে নিঝুমের দিকে তাকিয়ে। আসমানী বেগম অসহায় দৃষ্টিতে একবার নিজের মেয়ে তো একবার নিজের স্বামীকে পরখ করে চলেছেন। নাজমুল খান ক্রোধিত স্বরে বলে উঠলেন,”আবরাজ তোকে একা ফেলে রেখে চলে গেল আর তুইও সুড়সুড় করে বাড়িতে ফিরে এলি! কেন মাথায় কি কোন ঘিলু নেই? আবরাজের সাথে বিয়ে হয়েছে তোর। তুই লিগ্যালি ওর বউ। সেই অধিকারের জোরে তুই ওর সাথে যেতে পারলি না?”
নিঝুম শান্ত কিন্তু দৃঢ় স্বরে বলে,”উনি আজ স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে এই বিয়েটার কোন মূল্য নেই ওনার কাছে। উনি আমার সাথে সংসার করতে চান না। আর সেজন্যই তো আমায় ফেলে এভাবে লন্ডনে চলে গেলেন। তাহলে আমি আর কোন অধিকারে ওনার জীবনে জড়াতে চাইব? আমার কি এখানে জোর করা সাজে আব্বু?”
নাজমুল খান নিঝুমের গলা চেপে ধরে বলেন,”খুব বড় বড় কথা ফুটেছে মুখে তাই না? দাড়া তোর বড় বড় কথা আমি বের করছি। কত বড় স্বপ্ন দেখেছিলাম আমি যে, আবরাজের সাথে তোর বিয়ে দিয়ে তারপর তোকে লন্ডনে পাঠিয়ে একসময় নিজেও লন্ডনে গিয়ে সেটেল হতে পারব। কিন্তু তুই আমার সব স্বপ্ন নিমেষেই শেষ করে দিলি। তোকে এত দিন পুষে আমার কি লাভ হলো? আবরাজের কাছে তুই ঠাঁই পাস নি তাই না? তাহলে আমার কাছেও তোকে ঠাঁই পেতে হবে না। রাস্তায় রাস্তায় পচে মর তুই।”
বলেই নাজমুল খান নিঝুমকে ধাক্কা মে-রে বাড়ি থেকে বের করে দেন এবং তার মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দেয়। আসমানী বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন,”এটা তুমি কি করলে? আমার মেয়েটা আমার নিঝুমকে এভাবে বাড়ি থেকে বের করে দিলে ও এখন কোথায় যাবে.. ”
নাজমুল খান ক্রোধের বসে এবার আসমানী বেগমের চুলের মুঠি ধরে বলেন,”খুব মায়া হচ্ছে না তোর মেয়ের জন্য তাহলে তুইও বের হ এই বাড়ি থেকে। মা-মেয়ে ভাগাড়ে গিয়ে মর তবুও আর এই মুখো হোস না।”
বলেই তিনি আসমানী বেগমকেও বাড়ি থেকে বের করে দেন। অতঃপর কিছুটা ঠান্ডা হওয়ার পর কাউকে একটা ফোন করে বলেন,”সব পথের কাঁটাকে দূর করা শেষ। এবার আমি তোমার সাথে নতুন জীবন শুরু করতে পারব।”
~~~~~~~~~~~~~~
আবরাজ লন্ডনে ফিরে আসার পর নিজের রাগী মস্তিষ্ককে ঠান্ডা করার জন্য একটি বারে চলে আসে। সেখানে উপস্থিত ছিল তার প্রিয় বন্ধু ম্যাক্স, যে একজন ব্রিটিশ নাগরিক। ম্যাক্স আবরাজকে এতটা রেগে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করে,”তোমাকে এত রাগান্বিত লাগছে কেন বন্ধু? তুমি তো নিজের দেশে গিয়েছিলে বিয়ে করতে..আমায় তো তোমার হবু বউয়ের ছবিও দেখিয়েছিলে। সকল ফ্রেন্ডদের বলেছিলে নতুন বউ নিয়ে লন্ডনে আসার পর বড় করে রিশেপসন করবে তাহলে তুমি এভাবে একা ফিরলে কেন? তোমার বউ কোথায়?”
আবরাজ রাগী সুরে বলে,’বউ মাই ফুট। আমার সাথে চরম লেভেলের প্রতারণা হয়েছে।’
ম্যাক্স অবাক স্বরে জানতে চায়,”মানে?”
আবরাক ম্যাক্সকে সমস্ত ঘটনা খুলে বলে৷ সব শুনে ম্যাক্স হতবাক হয়ে যায়। বলে,”তোমার আঙ্কেল কিভাবে এমনটা করতে পারল। এভাবে দুটো জীবন নষ্ট করে দিল!”
“দুটো না, বল একটা। আমার জীবন উনি পুরোপুরি নষ্ট করে দিয়েছে।”
“আমার সেটা মনে হয় না বন্ধু। যদিও আমি একজন ব্রিটিশ নাগরিক তবে আমি তোমাদের দেশের কালচার সম্পর্কে কিছুটা জানি। আমাদের এখানে মেয়েরা যেমন স্বাধীন ও মর্যাদা পায় তোমাদের দেশে তো তেমন নয়। তুমি যেভাবে বিয়ের পর একটা মেয়েকে ত্যাগ করে চলে এসেছ আমার মনে হয় তোমার দেশের সামাজিক বাস্তবতায় মেয়েটির জীবনে অনেক বড় অভিশাপ নেমে আসবে।”
“তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না। ঐ মেয়েও একটা প্রতারক।”
“তুমি এটা এত নিশ্চয়তার সাথে কিভাবে বলছ? এমনও তো হতে পারে যে ঐ মেয়ে পরিস্থিতির স্বীকার!”
“আমি এখন এসব কিছু ভাবতে চাই না। সি ইজ নট ইম্পোট্যান্ট ফর মি। সি গো টু হেল। আই ডোন্ট কেয়ার।”
ম্যাক্স একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। এদিকে আবরাজ একের পর এক বিয়ারের বোতলে চুমুক দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
~~~~~~~~~
নিঝুম ও আসমানী বেগম সেদিন সারাটা রাত রাস্তায় পার করল৷ পরদিন সকাল হতেই তাদের প্রতিবেশী কিছু লোক তাদের এই অবস্থায় রাস্তায় বসে থাকতে দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে এবং তাদের কাছে জানতে চায় ঘটনা কি৷ নিঝুম তাদের সব ঘটনা খুলে বললে সবাই মিলে নিঝুমদের বাড়ির সামনে উপস্থিত হয়। তারা সবাই মিলে বলে,”এসব অন্যায় তো মেনে নেয়া যায় না। নাজমুল খান কিভাবে এভাবে নিজের বউ আর মেয়ের সাথে এমন অমানবিকতা করতে পারে? এর একটা বিহিত চাই।”
বলেই তারা দরজা ধাক্কাতে থাকেন। কিছুক্ষণ পর বেশ সুন্দরী দেখতে একজন মধ্যবয়সী মহিলা এসে দরজা খুলে দিতেই সবাই হতবাক হয়ে যায়। একজন বলে ওঠেন,”কে আপনি?”
এমন সময় নাজমুল খান বেরিয়ে এসে বলেন,”ও হলো শান্তি, আমার বিয়ে করা বউ। কাল রাতেই আমরা বিয়ে করেছি।”
নাজমুল খান এর কথা শুনে সবাই হতবাক হয়ে যায়। আসমানী বেগম এত বড় ধাক্কাটা মেনে নিতে পারেন না। সাথে সাথেই জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যান।
to be continue…..
#অশ্রুজলে_বোনা_বিয়ে