অশ্রুজলে_বোনা_বিয়ে #Part_12 #ইয়াসমিন_খন্দকার

0
4

#অশ্রুজলে_বোনা_বিয়ে
#Part_12
#ইয়াসমিন_খন্দকার

নিঝুম সকাল সকাল উঠেই আবরাজের এপার্টমেন্টের কিচেনে গিয়ে নিজের জন্য এবং আবরাজের জন্য কফি বানালো। অতঃপর সেই কফি নিয়ে ড্রয়িংরুমে এলো। আবরাজ তার অফিসের কারো সাথে ফোনে অনেক রাগারাগি করছিল। বলছিল,”শুধুমাত্র এই খারাপ ওয়েদারের কারণে আমাদের এত এত ডিল ক্যান্সেল করতে হলো। এতটা লসের মুখে পড়তে হলো। আমার মেজাজটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এদিকে এই তুষারপাতের মধ্যে আমায় ঘরে বন্দি হয়ে থাকতে হচ্ছে। ২৪/৭ এমন একজনকে সহ্য করতে হচ্ছে যাকে..”

কথা বলতো বলতেই থেমে গেল আবরাজ। নিঝুম এগিয়ে এসে মুচকি হেসে বলল,”কি হলো থামলেন যে? বলুন, আমি শুনছি।”

“তুমি কখন এলে?”

” এই তো এক্ষুনি। তা আপনার যদি আমার সাথে এক ছাদের তলায় থাকতে কষ্ট হয় তো আমার পাসপোর্ট, ভিসা সব আমার হাতে তুলে দিন। আমি চলে যাই এখান থেকে। তাহলে আমিও বাঁচি আর আপনিও বাঁচেন!”

নিঝুমের এহেন কথায় আবরাজ বলে ওঠে,”এ কথা মাথাতেও এনো না। ৫ মাসের আগে তুমি এই লন্ডন শহর থেকে যেতে পারবে না।”

আবরাজের কথায় নিঝুম কোন প্রতিক্রিয়া দেখায় না। সে চুপচাপ আবরাজের ডেস্কের সামনে কফি রেখে চলে যায়। আবরাজ নিঝুমের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে কফির মগ তুলে নেয়। অতঃপর কফির মগে চুমুক দেয়৷ কফিটা বেশ ভালোই লাগে তার। আবরাজ না চাইতেই নিঝুমের প্রশংসা করে বলে,”মেয়েটা রান্না যেমন ভালো করে কফিটাও ঠিক তেমনি ভালো বানায়। মিস জেরিনের থেকে ওর রান্না অনেক ভালোই লাগছে। তবে এটা ওকে বুঝতে দিলে চলবে না। নাহলে আবার মাথায় উঠে নাচবে।”

নিঝুম নিজের জন্য বরাদ্দ কক্ষটিতে আসে। বাইরে এখনো তুষারপাত চলছে। নিঝুম একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। এমন সময় তার মনে পড়ে যায় নিজের মায়ের কথা। ওদেশ থেকে এসেছে থেকে মায়ের সাথে একটিবারও কথা বলা হয়নি। নিঝুম এদেশে এসে এখনো এখানকার সিম কিনে উঠতে পারে নি এই আবহাওয়ার জন্য। যার কারণে সে চাইলেও ওদেশে কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারছে না। আবরাজের কাছেও সে এই বিষয়ে সাহায্য চাইছে না পাছে না আবার সে কোন খোটা দেয়। তাই মনের দুঃখে চুপচাপ আছে। নিঝুম কিছুক্ষণ এভাবে একা দাঁড়িয়ে থেকে বোরিং বোধ করে। তাই সে আবার ড্রয়িংরুমে চলে আসে টিভি দেখার জন্য। ড্রয়িংরুমে এসে দেখে আবরাজ যেন ফোনে কার সাথে কথা বলছে। নিঝুমকে দেখেই সে নিজের ফোনটা নিঝুমের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে,”এই নাও।”

“কে?”

“মিসেস ছবি বেগম তোমার সাথে কথা বলতে চাইছেন।”

নিঝুম ফোনটা হাতে নেয়। নিঝুম ফোনটা হাতে নিয়ে হ্যালো বলতেই ছবি বেগম নিঝুমকে বলেন,”কি ব্যাপার! ঐ দেশে গিয়ে তো ভুলেও গেলা। একটু জানালেও না কেমন আছ, ঠিক মতো পৌঁছে গেছ কি না। এদিকে তো তোমার মা চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছেন।”

নিঝুম লজ্জিত বোধ করে বলে,”আসলে..”

“থাক, আর কিছু বলতে হবে না৷ আমি বুঝতে পারছি তোমার অবস্থাটা। আবরাজ আমায় বলেছে সবটা। শোনো, তোমায় একটু পরামর্শ দেই এই ৫ মাস একটু ওখানে মানিয়ে চলার চেষ্টা করো, আমাদের অবর্তমানে কিন্তু ওখানে আবরাজই তোমার অভিভাবক তাই ওর কথা মেনে চলার চেষ্টা করো, বেশি রাগারাগি করো না। আর হ্যাঁ, নিজের খেয়াল রাখো।”

“জ্বি।”

“আচ্ছা, এই নাও তোমার মায়ের সাথে কথা বলো। উনি তো তোমার সাথে কথা বলার জন্য একদম উতলা হয়ে উঠেছেন।”

বলেই ফোনটা শান্তি বেগমের হাতে তুলে দেন ছবি বেগম। শান্তি বেগম ফোনটা হাতে নেন। নিঝুম বলে,”আম্মু!”

“নিঝুম! তুই ঠিক আছিস তো! কোন আক্কেল নেই তোর? গিয়ে একটিবার ফোনও করলি না। আমি এদিকে কতটা চিন্তা করছি। মায়ের চিন্তাটা তুই বুঝবি না, আগে নিজে মা হ তারপর বুঝবি।”

নিজের মায়ের মুখে এহেন কথা শুনে নিঝুম হঠাৎ করে আবরাজের দিকে তাকায়। আবরাজ ভ্রু কুচকে তার পানেই তাকিয়ে আছে। নিঝুম আলতো স্বরে তার মাকে বলে,”আসলে সুযোগ হয়ে ওঠে নি।”

“ঠিক আছে, বুঝলাম। তা তুই কেমন আছিস? ওখানে সবকিছু ঠিক আছে তো? আবরাজ তোর সাথে আবার কোন খারাপ ব্যবহার করে নি তো?”

“তুমি আমার জন্য এত চিন্তা করো না, আম্মু। আমি একদম ঠিক আছি।”

“মায়ের মন কি আর মানে রে? শোন, তোর যদি কোন অসুবিধা হয় তো আমাকে জানাবি। আমি এখান থেকে যতটা পারি তোকে সাহায্য করার চেষ্টা করবো। আর আবরাজ যদি তোর সাথে বেশি খারাপ ব্যবহার করে তাহলে তুই তোর চাচিকে জানাবি। শোন,আমি অন্য মায়েদের মতো না যে তোকে মানিয়ে নিতে বলব। নিজে তো আমি সারাটা জীবন তোর বাবার সাথে মানিয়েই চললাম। তার ফলাফল কি হলো? তাই তোকেও এসব মানিয়ে চলতে হবে না। তুই নিজের পায়ে দাঁড়ানোর কথা ভাব, যাতে করে আমার মতো তোকে আর কারো মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে না হয়। আমি যেমন আজ একজন দূর্বল নারী হিসেবে পরিচিত হয়েছি তোকে যেন তেমন হতে না হয়।”

“ঠিক আছে আম্মু।”

এভাবে তাদের কথাবার্তা চলতে থাকে। কথা বলা শেষ করে সে ফোনটা আবরাজকে দেয়। অতঃপর চলে যায় কিচেনে লাঞ্চ বানানোর জন্য।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আবরাজ অফিসের কিছু জরুরি কাজ করছিল বাসায় বসে কম্পিউটারে। মূলত খারাপ আবহাওয়ার জন্য তাকে ওয়ার্ক ফর হোম করতে হচ্ছিল। হঠাৎ করেই নিঝুম এসে তাকে বলে,”দুপুরের খাবার বানানো শেষ, আপনি খেতে আসুন।”

“তুমি খেয়ে নাও আমার একটু লেইট হবে।”

“আচ্ছা।”

নিঝুম নিজের খাবার খেয়ে নেয় এবং আবরাজের জন্য খাবার তুলে রাখে। আবরাজ নিজের কাজ শেষ করে ডাইনিং টেবিলে এসে দেখে নিঝুম আজকেও শুটকির ডিশ রান্না করেছে। সে শিরা শুটকি রান্না করেছে। আবরাজের মাথা হঠাৎ করে গরম হয়ে গেল। সে নিঝুমকে ডাকল। নিঝুম সবেমাত্র শুয়েছিল ঘুমানোর জন্য। আবরাজের ডাক শুনে সে ছুটে আসে। আবরাজ নিঝুমকে দেখে রেগে বলে,”এটা কি রান্না করেছ? আর কি কিছু পাওনি?”

নিঝুম বলে,”এখানে আসার সময় চাচি আমায় শুটকি দিয়েছিল, আপনাদের এখানে যে কিসব সবজি এগুলোর তো রান্না আমি পারি না। তাই আমি যা পারি তাই রান্না করেছি। আপনার যদি না পোষায় তাহলে নিজে রান্না করে খান।”

“প্রয়োজনে তাই খাবো কিন্তু এসব শুটকি খাবো না।”

বলেই সে ডাইনিং টেবিলে সাজিয়ে রাখা সব খাবার আছাড় দিয়ে ফেলে দিল। নিঝুম অনেক যত্ন করে বানিয়ে ছিল তাই তার ভীষণ রাগ হলো। সে বলল,”খাবার গুলো এভাবে ফেললেন কেন? আপনি সোনার চামচ নিয়ে বড় হয়েছেন তাই খাবারের মূল্য বোঝেন না। কত মানুষ খেতে পারেন না জানেন?”

“তোমার জ্ঞান শুনতে চাইনা। যদি আর একটা কথা বলো তো..”

“কি করবেন করুন।”

আবরাজের মাথা গরম হয়ে যায়। সে রেগে নিঝুমকে থাপ্পড় মারতে চায়। কিন্তু নিঝুম আবরাজের হাত ধরে গর্জে উঠে বলে,”খবরদার এই দুঃসাহস দেখাবেন না। আমাকে কোন অবলা নারী ভাববেন না। যদি দ্বিতীয় বার এই ভুল করেন তাহলে আপনার হাত আর হাতের যায়গায় থাকবে না। হাতটা ভেঙে গুড়িয়ে দেব।”

to be continue…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here