অশ্রুজলে_বোনা_বিয়ে #Part_13 #ইয়াসমিন_খন্দকার

0
2

#অশ্রুজলে_বোনা_বিয়ে
#Part_13
#ইয়াসমিন_খন্দকার

নিঝুমের থেকে এহেন হুমকি পেয়ে আবরাজের মাথা আরো বেশি গরম হয়ে যায়৷ তবে সে নিজেকে সামলে নেয়। নিঝুমের থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে নিজের রুমে গিয়ে বসে থাকে। আর রাগে ফুঁসতে থাকে। নিঝুমও নিজের মতো করে নিজের রুমে চলে এসে শুয়ে পড়ে।

এদিকে আবরাজ রাগ করে খাবার ফেলে দিলেও ভারী বিপদে ফেলে। কারণ তার ক্ষুধা পাচ্ছিল। তবুও সে নিজের ইগোকেই প্রাধান্য দিল। না খেয়েই শুয়ে শুয়ে কম্পিউটারে নিজের কাজ করতে লাগল। এভাবেই সময় এগিয়ে যেতে লাগল৷ দুপুর গড়িয়ে বিকেল এবং বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে এলো। সকাল থেকে আবরাজ কিছু খায়নি৷ যার দরুন এখন ক্ষুধা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। আবরাজ আর কাজেও মন বসাতে পারছিল না৷ তাই এবার সে ভাবলো নিজেই রান্না করে খাবে। কিন্তু সেখানেও যে বিপত্তি! আবরাজ তো একদমই রান্না করতে পারে না৷

এরইমধ্যে নিঝুম হঠাৎ করে আবরাজের রুমের বাইরে এসে তার দরজায় নক করে। আবরাজ কোন কথা বলে না। নিঝুম নিজ থেকেই বলে,”আপনি তো মনে হয় সকাল থেকে কিছু খান নি। খাবেন কিছু? খেলে গরম করে দেই।”

আবরাজ জেদ দেখিয়ে বলে,”তোমার হাতের পানিও আমি স্পর্শ করবো না।”

আবরাজের এহেন কথায় নিঝুমের ভীষণ রাগ হলেও সে নিজের রাগটা নিয়ন্ত্রণ করে বলে,”দেখুন,মাথা গরম না করে খেতে আসুন। আমার উপর রাগ আছে ভালো কথা, আমি নিজেও আপনার উপর রেগে আছি। কিন্তু খাবারের উপর রাগ দেখিয়ে তো লাভ নেই, তাই না? এতে করে তো উল্টো আপনিই আরো কষ্ট পাচ্ছেন।”

“আমার কষ্ট নিয়ে তোমায় কিছু ভাবতে হবে না৷ আমার ব্যাপারটা আমি সামলে নিতে পারব। ইউ জাস্ট গেইট লস্ট ফ্রম হিয়ার।”

নিঝুমের আর সহ্য হলো না। তাই সে প্রস্থান করল। এদিকে আবরাজের ক্ষুধার জ্বালা বাড়তে লাগল। তাই সে আর উপায় না পেয়ে রান্নাঘরে গেল যাতে কিছু রান্না করে খাওয়া যায়। কিন্তু সেখানে গিয়ে সে বুঝলই না কিভাবে কি করবে। ইউটিউব দেখেও রান্না করার চেষ্টা করল কিন্তু পারল না। শেষ পর্যন্ত আবরাজ বিরক্ত হয়ে বলল,”ধুর, খাবোই না এখানে। প্রয়োজনে বাইরে রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাবো।”

বলেই আবরাজ বাইরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়৷ কিন্তু আবহাওয়া তখনো বেশ খারাপ। তুষারপাত কিছুটা কমলেও রাস্তায় বরফ জমে আছে। রাস্তাঘাট একেবারে জনশূন্য। এমতাবস্থায় কোন রেস্টুরেন্ট খোলা থাকার সম্ভাবনা কম। যদি খোলা থাকেও সেটাও অনেক দূরবর্তী স্থানে অবস্থিত হবে। কিন্তু আবরাজের কাছে এছাড়া আর কোন উপায় নেই। তাই সে বাইরে যাওয়ার জন্য গ্যারেজের দিকে গেল নিজের গাড়ি বের করার উদ্দ্যেশ্যে। এমন সময় সে নিঝুমের মুখোমুখি হলো। নিঝুম একদম আবরাজের সামনে দাঁড়ানো। আবরাজ রেগে বললো,”সামনে থেকে সরো।”

“আপনি কি কোথাও যাচ্ছেন?”

“হ্যাঁ, জাহান্নামে যাচ্ছি। যাবে তুমি?”

নিঝুম বলে,”ঠিকভাবে কথা বলুন। আর এখন আপনি কোথায় যাচ্ছেন? বাইরের আবহাওয়া তো এখনো ঠিক হয়নি। এই অবস্থায় বাইরে যাওয়া ঠিক হবে না।”

“তোমার পরামর্শ কেউ শুনতে চায়নি।”

“আমি আপনার ভালোর জন্যই..”

আবরাজ নিঝুমকে পাত্তা না দিয়েই নিজের মতো গ্যারেজে গিয়ে গাড়ি বের করে। নিঝুম বাইরে এসে আবরাজকে গাড়ি বের করতে দেখে বলে,”দেখুন, আপনি কিন্তু এটা ঠিক করছেন না। আমার উপর রাগ করে শুধু শুধু নিজের বিপদ ডেকে আনছেন। দেখছেন না, এখনো তুষারপাত হচ্ছে। এ অবস্থায় আপনি কিভাবে গাড়ি চালাবেন?”

নিঝুমের এসব কোন কথায় কর্ণপাত করে না আবরাজ। সে নিজের মতো গাড়ি চালাতে শুরু করে। নিঝুম একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,”এই লোকটাও না, আমার কথাকে গুরুত্বই দিল না। এখন যদি কোন বিপদ হয়? তাহলে কি হবে?”

নিঝুম চিন্তিত হয়ে পড়ে। সে বুঝতে পারছিল না এই পরিস্থিতিতে তার কি করা উচিৎ। মন ক্রমশ কু ডাকছে।

এদিকে আবরাজ কোন রকমে ড্রাইভ করতে থাকে। এই তুষারময় রাস্তায় গাড়িও ভালো ভাবে চালানো যাচ্ছে না৷ ক্রমশ স্লিপ করছে। তবুও আবরাজ অনেক কষ্টে ড্রাইভ করতে থাকে। এভাবে ঘন্টাখানেক ড্রাইভ করার পরও আবরাজ যখন কোন রেস্টুরেন্ট খোলা খুঁজে না পায় তখন সে বুঝতে পারে এভাবে খুঁজে আর কোন লাভ নেই। কারণ এরকম আবহাওয়ার কারণে কোন দোকানই খোলা নেই। ম্যাক্স এবং এলাও কিছু জরুরি কাজে কিছুদিনের জন্য লন্ডনের বাইরে গেছে৷ তাই তাদের কাছেও সাহায্য পাবার উপায় নেই আবরাজের। তাই আর কোন উপায় না পেয়ে আবরাজ গাড়ি ঘুরিয়ে নেয়। পুনরায় ফিরতি পথে আসতে আসতে বলে,”সব দোষ ঐ মেয়েটার। পাকনামি করে মিস জেরিনকে ছুটিতে পাঠিয়েছে। আর নিজে প্রতিদিন কিসব কুখাদ্য রান্না করে..”

পরবর্তীতে আবরাজ প্রথম দিনের সুস্বাদু খাবারের কথা মনে করে বলে,”যদিওবা ও রান্নাটা খারাপ করে না কিন্তু..না যাইহোক না কেন..ওকে এটা বুঝতে দিলে চলবে না। ওকে আমায় দমিয়ে রাখতেই হবে। খুব দেমাগ হয়েছে না ওর। এই দেমাগ বাড়তে দিলে চলবে না। ওর দেমাগ কিভাবে কমাতে হয় সেটা আমার জানা আছে। আজ শুধু এক বার আমায় ফিরতে দাও। তারপর ওকে দেখাচ্ছি মজা।”

বলেই আবরাজ রেগে আরো জোরে ড্রাইভ করতে থাকে। কিন্তু হঠাৎ করে সে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। কারণ হঠাৎ করে তুষারপাতের বৃদ্ধির জন্য গাড়ির সামনের গ্লাস একদম ঢাকা পড়ে যায়। তাই আবরাজ সামনের কিছুই দেখতে পারছিল না। উপরন্তু জোরে ড্রাইভ করার জন্য আবরাজ সহজে গাড়িটাকে কন্ট্রোলেও আনতে পারে না৷ যার দরুণ সে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এবং গাড়িটা সজোরে গিয়ে বড় একটা গাছের সাথে ধাক্কা খায়। আবরাজের মাথায় ভীষণ আঘাত লাগে এই দূর্ঘটনার ফলে এবং সে সেখানেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।

~~~~~~~~~
নিঝুম উদ্বিগ্ন হয়ে বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছিল। সময় তখন রাত ৮ টা ছুঁইছুঁই। আবরাজ প্রায় সন্ধ্যা ৬ টার দিকে বেরিয়েছে। এতক্ষণে তো তার ফিরে আসার কথা। কিন্তু এখনো ফিরছে না। নিঝুমের মনে যেসব নেতিবাচক ধারণা ঘুরছিল সেসব যেন আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। নিঝুমের মনে ভয় জেঁকে বসল আবরাজের আবার কোন বিপদ হলো নাকি এই নিয়ে। নিঝুম আর এভাবে বেশিক্ষণ স্থির হয়ে বসে থাকতে পারছিল না। তাই সে আবরাজের এপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে দেখে আবরাজ ফিরছে কিনা। কিন্তু যখন দেখে যে আবরাজ ফেরে নি তখন তার বুক চিরে বেরিয়ে আসে দীর্ঘ শ্বাস। নিঝুমের ভীষণ খারাপ লাগতে থাকে। ভিতর ভিতর অপরাধবোধে ভুগতে থাকে সে। নিঝুম বলে,”সকালে আমার ওনার সাথে এমন করাটা বোধহয় বাড়াবাড়ি ছিল। আর আমার উচিৎ ছিল ওনাকে যেভাবেই হোক এই পরিস্থিতিতে বাইরে যাওয়া থেকে আটকানো। না জানি এই রাত-বিরেতে বেরিয়ে উনি কোন বিপদে পড়লেন। আমি তো এখানে কাউকে চিনিও না যে কারো কাছে সাহায্য চাইব। এখন আমার কি করা উচিত? ”

নিঝুম ক্রমশ পাথর বনে যাচ্ছিল ভয়ে। এভাবে চিন্তায় চিন্তায় সারা রাত পেরিয়ে যায়। সারা রাতটা নিঝুমের নির্ঘুম কাটে। ভোরের দিকে আবহাওয়া অনেকটা ভালো হয়ে গেছিল। তুষারপাত বন্ধ হয়ে গেছে এবং রাস্তায় তুষার অপসারণের কাজ চলছে। এই রকম পরিস্থিতিতে নিঝুম ভোরে উঠে ফজরের নামাজ আদায় করে নেয়। আল্লাহর কাছে আবরাজের জন্য দোয়া করে যেন তার কোন বিপদ না হয়। ঠিক ভোর ৬ টার দিকে আবরাজের বাড়ির ল্যান্ডলাইনে কারো একটা কল আসে। নিঝুম কাপা কাপা হাতে ফোনটা রিসিভ করে। রিসিভ করে বলে ওঠে,”কে?”

“আপনি কি মিস্টার আবরাজ খানের পরিবারের কেউ?”

“জ্বি, আমি ওনার ওয়াইফ। গতকাল রাত থেকে ওনার কোন খোঁজ পাচ্ছি না। আমি এখানে একেবারেই নতুন, তার উপর খারাপ আবহাওয়ার জন্য খোঁজও নিতে পারি নি। উনি কোথায় আছেন এখন?”

“সরি, একটা খারাপ সংবাদ আছে…আপনার হাজবেন্ড ভীষণ ইনজুরড..গতকাল রাতে একটি দূর্ঘটনায় উনি মারাত্মক আহত হয়ে লন্ডন সিটি হসপিটালে এডমিট আছেন। আপনি ইমিডিয়েটলি এখানে আসার চেষ্টা করুন।”

to be continue…..

নবীন লেখকরা লেখালেখি করতে চাইলে জয়েন করুন:
https://facebook.com/groups/pandulipirnirodsonkolon/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here