#অশ্রুজলে_বোনা_বিয়ে
#Part_15
#ইয়াসমিন_খন্দকার
আবরাজকে আজ তার এপার্টমেন্টে নিয়ে আসা হয়েছে৷ নিঝুম এসেছে আবরাজের সাথে৷ আবরাজ গত দুই দিন হাসপাতালেই কাটিয়েছে। এই দুদিনে এক মুহুর্তের জন্যেও সে নিঝুমকে চোখের আড়াল হতে দেয়নি। অনেক বেশিই অবলম্বন হয়ে গেছে সে নিঝুমের উপর। এদিকে নিঝুমও দায়িত্বের খাতিরে মুখ ফিরিয়ে থাকতে পারে নি আবরাজ এর থেকে। ছবি বেগম বারবার ফোন করে আবরাজের খোঁজ খবর নিচ্ছেন। নিঝুমকে বলছেন আবরাজের খেয়াল রাখতে। যদিওবানিঝুম নিজস্ব দায়বদ্ধতা থেকেই সব করছে।
আবরাজকে তার এপার্টমেন্টে নিয়ে আসার পরই সে বিভিন্ন জিনিস দেখে অবাক হয়ে সেগুলোর সম্পর্কে জানতে চাইছে। এই যেমন যখন নিঝুম আবরাজকে তার রুমে নিয়ে এলো তখন আবরাজ প্রশ্ন করে বসলো,”এটা কি সত্যিই আমার রুম?”
“জ্বি।”
“আপনিও কি এই রুমে থাকেন?”
নিঝুম বুঝতে পারে না তার কি উত্তর দেয়া উচিৎ। তবুও সে মিথ্যা বলতে ইচ্ছুক নয় জন্য না বোধক মাথা নাড়িয়ে জানাল সে এখানে থাকে না। আবরাজ বলে ওঠে,”আপনি না বললেন, আপনি আমার স্ত্রী৷ তাহলে আপনি আমার সাথে আমার রুমে থাকেন না কেন?”
নিঝুম কি উত্তর দেবে ভেবে পায় না। আবরাজ জিজ্ঞাংসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে। হঠাত করেই আবরাজ বলে ওঠে,”এখন থেকে আপনি আমার সাথে এই রুমেই থাকবেন।একা থাকতে কিন্তু আমার ভীষণ একাকীত্ব বোধ হবে এবং ভয়ও লাগবে।”
নিঝুম ইতস্তত বোধ করে বলে,”আচ্ছা, ঠিক আছে। আমি নাহয় সোফায়..”
“কেন সোফায় থাকবেন কেন? আপনি তো আমার স্ত্রী। তাই আমার সাথে আমার বিছানাতেই থাকবেন।”
নিঝুমের অস্বস্তি বাড়ে। সে বলে ওঠে,”এটা হতে পারে না।”
“কেন হতে পারে না?”
নিঝুম চুপ হয়ে যায়। আবরাজকে তো সে এখন কোন ভাবেই তাদের অতীতের ব্যাপারে বলতে পারবে না। এতে করে তো তার উপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে৷ এজন্য নিঝুম ভেবে বলল,”আপনি তো এখন অসুস্থ। তাই আপনার বেশি আরামে থাকা দরকার। আমি আপনার সাথে বেড শেয়ার করলে তো আপনি আরামে থাকতে পারবেন না। তাই আপনি একাই থাকুন বিছানায় সেটাই ভালো হবে। আমি নাহয় সোফা বা কাউচে থাকব।”
আবরাজ আর আপত্তি করে না। সেও সায় দিয়ে বলে,”ঠিক আছে। আপনার ইচ্ছা যদি এমনটাই হয় তবে তাই হোক। আমি নাহয় একাই থাকব বিছানায়।”
নিঝুম এবার একটু স্বস্তি পায়। অতঃপর বলে,”আপনি একটু বিছানায় শুয়ে বিশ্রাম করুন। আমি আপনার জন্য আপনার পছন্দের খাবার বানিয়ে আনছি। বলুন, কি খেতে চান আপনি?”
আবরাজ বলে,”আমার তো মনে পড়ছে না আমার প্রিয় খাবার কি..তবে আপনি যদি আমায় একটা খাবারের লিস্ট দেন সেখান থেকেই আমি বেছে নিতে পারব।”
আবরাজের কথা শুনে নিঝুম দ্রুতই একটা কাগজে করে নানা রকম খাবারের নাম লেখে। খাবারগুলা যদিও সব বাঙালি। আবরাজকে সেগুলো দেখাতেই আবরাজ বলে,”এসব কি খাবার? আমার তো কিছুই মনে পড়ছে না এসবের ব্যাপারে।”
নিঝুম বলে,”আচ্ছা, আপনার জন্য আমি শিং মাছের তরকারি করলে খাবেন? আপনার জন্য এই মুহুর্তে এটা ভালো হবে।”
“আচ্ছা, করুন।”
আবরাজের থেকে সবুজ সংকেত পেয়ে নিঝুম খুশি হয়ে রান্নাঘরে চলে যায়। গিয়েই রান্না করা শুরু করে দেয়। নিঝুমের রান্না শেষ হতেই সে বাইরে আসে। আবরাজ তখন ঘুমিয়ে গেছিল৷ তাই নিঝুম আর আবরাজকে বিরক্ত করে না। সে অপেক্ষা করতে থাকে কখন আবরাজের ঘুম ভাঙে সেই অপেক্ষায়। অপেক্ষা করতে করতে সেও সোফায় শুয়ে পড়ে এবং একটু পরে ঘুমে নিমগ্ন হয়৷ এর প্রায় ঘন্টাখানেক পর আবরাজের ঘুম ভাঙে। তখন প্রায় রাত হয়ে এসেছে। আবরাজ ঘুম থেকে উঠেই নিঝুমের নাম ধরে ডাকতে থাকে। নিঝুমের ঘুম বড্ড কাচা। তাই আবরাজ ক’বার ডাক দিতেই তার ঘুম ভেঙে যায়। নিঝুম আড়মোড়া ভেঙে উঠে দাঁড়িয়ে আবরাজকে বলে,”কিছু বলবেন?”
“আমার খুব ক্ষিধে পেয়েছে আমার। আমাকে কিছু খেতে দাও।”
নিঝুম বলে,”ও, আমি তো আপনার জন্য রান্না করেছি। একটু অপেক্ষা করুন আমি আপনার খাবার নিয়ে আসছি।”
বলেই নিঝুম রান্নাঘরে চলে যায়। গিয়ে আবরাজের জন্য ভাত ও শিং মাছের তরকারি নিয়ে আসে। এসেই আবরাজকে বলে,”এই নিন, খেয়ে নিন।”
আবরাজ অবাক চোখে খাবারের দিকে তাকিয়ে থাকে। নিঝুম সেটা খেয়াল করে বলে,”কোন সমস্যা?”
আবরাজ বলে,”আমি তো বুঝতে পারছি না এই খাবারটা কিভাবে খেতে হয়।”
নিঝুম হালকা হেসে বলে,”আচ্ছা, কোন ব্যাপার না। আপনি বসুন, আমি আপনাকে খাইয়ে দিচ্ছি।”
আবরাজ নিঝুমের বাধ্যগত হয়ে চুপচাপ বসে পড়ে৷ নিঝুম ভাত মেখে নিজের হাতে আবরাজকে খাইয়ে দিতে থাকে। নিঝুমের দিকে আবরাজ বিমুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিল। নিঝুম অবশ্য আবরাজকে খাওয়াতে ব্যস্ত ছিল। খাবার শেষ হবার পর নিঝুম অনেক যত্ন করে আবরাজকে পানিও খাইয়ে দেয়। খাওয়া শেষ করে আবরাজ নিঝুমকে বলে,”ধন্যবাদ।”
নিঝুম বলে,”ধন্যবাদ জানানোর কিছু নেই। আপনার যেকোন প্রয়োজন হলে আমায় বলবেন।”
আবরাজ মৃদু হাসে।
~~~~~~~~~~~~~~~~~
প্রকৃতির বুকে এক নতুন দিনের আগমন ঘটল। নিঝুম সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই ব্রেকফাস্ট বানাতে লেগে পড়েছে। ব্রেকফাস্টে আজ সে স্যান্ডউইচ বানিয়েছে। স্যান্ডউইচ বানিয়ে এনে আবরাজের সামনে রাখে নিঝুম। আবরাজ স্যান্ডউইচটা খেয়ে নিতেই নিঝুম বলে,”প্রস্তুত হন, এবার আপনাকে ওষুধ খেতে হবে।”
আবরাজ চোখমুখ বিকৃত করে বলে,”ওষুধ! না, ওষুধ আমি খাবো না। আমার ওষুধ খেতে একদম ভালো লাগে না। ওষুধটা অনেক তেতো।”
নিঝুম হেসে বলে,”এসব বললে তো হবে না। ওষুধ না খেলে তো আপনি তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে পারবেন না। তাই ওষুধ তো খেতেই হবে।”
“না খেলে হয় না?”
“না। ওষুধ আপনাকে খেতেই হবে।”
“আচ্ছা, বেশ।”
এরপর নিঝুম আবরাজকে ওষুধ দিতেই আবরাজ সেই ওষুধটা খেয়ে নেয়। এরইমধ্যে হঠাৎ করে তাদের এপার্টমেন্টের কলিং বেল বাজতেই নিঝুম গিয়ে দরজা খুলে দেয়। ম্যাক্স এসেছে। ম্যাক্স ভেতরে ঢুকে নিঝুমকে জিজ্ঞেস করে,”আবরাজ এখন কেমন আছে?”
“জ্বি, মোটামুটি ভালোই আছেন।”
“নিশ্চয়ই ওর জন্য আপনাকে অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে!”
“না, না। তেমন কিছু না।”
“আমি কি ওর সাথে দেখা করতে পারব এখন?”
“হুম, উনি ভেতরেই আছেন।”
ম্যাক্স বলে,”আচ্ছা, দেখা করে আসছি৷ যদিও আমায় ও চিনবে না।”
বলেই যেতে উদ্যত হয় তারপর আবার যেন কি মনে করে পিছিয়ে এসে বলে,”ও হ্যাঁ, একটা কথা বলতে তো মনেই ছিল না। আমি আবরাজের মামাকে ওর এই দূর্ঘটনার ব্যাপারে জানিয়েছি। উনি আজকে রাতেই নিউইয়র্ক থেকে লন্ডনের ফ্লাইটে রওনা দেবেন এবং কাল সকালেই পৌঁছে যাবেন এখানে। আপনাকে এটা জানানোর ছিল।”
নিঝুম বলে,”ও আচ্ছা। আমি তাহলে কাল ওনার জন্যেও খাবার বানিয়ে রাখব।”
“আচ্ছা। আমি তাহলে আবরাজকে দেখে আসি।”
বলেই ম্যাক্স ভেতরে যায়। নিঝুম একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। আনমনেই হেসে বলে,”একসময় যেই মানুষটা আমায় এক মুহুর্তের জন্যেও সহ্য করতে পারত না আজ সেই আমাকে এক মুহুর্ত চোখের আড়াল করছে না
আমার সব কথা মেনে নিচ্ছে। আমিও একসময় যার সাথে কথায় কথায় ঝগড়া করতাম আজ তার সব আবদার মেনে নিচ্ছি।”
ভাবতে ভাবতেই কিছু একটা মনে করে নিঝুম বলে,”না, এসব ভাবা ঠিক হবে না৷ ওনার স্মৃতি নেই তাই উনি এমন ব্যবহার করছেন। কিন্তু আবার আগের সব স্মৃতি ফিরলে নিশ্চয়ই উনি আবার আগের মতো হয়ে যাবেন। তাই আমার কোন মূল্যেই ওনার উপর দূর্বল হয়ে পড়লে চলবে না।”
to be continue…..
নবীন লেখকরা লেখালেখি করতে চাইলে জয়েন করুন:
https://facebook.com/groups/pandulipirnirodsonkolon/