অশ্রুজলে_বোনা_বিয়ে #Part_17 #ইয়াসমিন_খন্দকার

0
1

#অশ্রুজলে_বোনা_বিয়ে
#Part_17
#ইয়াসমিন_খন্দকার

আবরাজ সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে ডাইনিং হলে চলে আসে৷ ডাইনিং হলে এসে সে দেখে নিঝুম সকালের ব্রেকফাস্ট পরিবেশন করছে। আবরাজকে দেখেই নিঝুম মৃদু হেসে বলে,”আপনি চলে এসেছেন? আসুন, বসুন। আমি আপনাকে খাবার বেড়ে দিচ্ছি।”

আবরাজ সামান্য হেসে খাবার খেতে বসে পড়ে। আবরাজ যখন খাবার খেতে বসে ঠিক তখনই হঠাৎ করে তাদের এপার্টমেন্টের কলিং বেল বেজে ওঠে। আবরাজ বলে ওঠে,”এই সকাল সকাল আবার কে এলো?”

নিঝুম বলে,”আপনার মামা বোধহয় চলে এসেছে। দাঁড়ান, আমি দেখছি।”

বলেই নিঝুম গিয়ে দরজাটা খুলে দেয়৷ দরজা খুলতেই একজন মধ্যবয়সী লোক দেখতে পান। যার পরণে ছিল স্যুট-কোট। তিনি উদ্বিগ্ন স্বরে বলে ওঠেন,”তুমি কি নিঝুম মানে আবরাজের স্ত্রী?”

“জ্বি, আর আপনি..”

“আমি হলাম মিজানুর রহমান। আমি আবরাজের মামা।”

“আসসালামু ওয়ালাইকুম আঙ্কেল, আপনি ভেতরে আসুন।”

মিজানুর রহমান ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলেন,”আবরাজের ব্যাপারে যা শুনলাম তা কি সত্যি? ও কি স্মৃতি হারিয়ে ফেলেছে!”

নিঝুম উদাস স্বরে বলে,”জ্বি, আঙ্কেল।”

মিজানুর রহমান ডাইনিং টেবিলে বসে থাকা আবরাজের দিকে তাকায়৷ আবরাজের দিকে তাকিয়ে করুণ স্বরে বলে,”তুই কি আমাকেও চিনতে পারছিস না আবরাজ?”

আবরাজ বলে ওঠে,”না, কে আপনি?”

মিজানুর রহমান একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলেন। চোখে আগত জলটুকু মুছে ফেলে বলেন,”তোকে আমি আর তোর মামি মিলে কত আদরে বড় করেছি। আর আজ কিনা এই দিন দেখতে হলো। এত বড় দূর্ঘটনা কিভাবে ঘটে গেল।”

বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। আসলে মানুষটা একটু বেশিই আবেগী। স্ত্রীকে হারানোর পর এখন আরো বেশি একাকীত্ব বোধ করেন। সে জন্য অল্পতেই তার চোখে জল চলে আসে। নিঝুম মিজানুর রহমানকে এভাবে কাঁদতে দেখে বলেন,”আপনি এভাবে কাঁদবেন না, আঙ্কেল। দেখবেন সব ঠিক হয়ে যাবে। আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন।”

“তাই করতে হবে।”

“আচ্ছা,আপনি তো কেবল এলেন এখন একটু ফ্রেশ হয়ে আসুন। আমি আপনাকে ব্রেকফাস্ট করতে দিচ্ছি।”

স্মিত হেসে বলে নিঝুম। মিজানুর রহমান নিঝুমের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,”তোমার এত সুন্দর ব্যবহার দেখে ভীষণ ভালো লাগল মা। আবরাজ সত্যিই অনেক ভাগ্যবান যে তোমার মতো বউ পেয়েছে। আমি তো চিন্তায় ছিলাম যে ও কেমন মেয়ে পাবে জীবনে..আসলে ওর মামীর মৃত্যুর পর আমি এইসব দুনিয়াবি বিষয়ে একদম উদাসীন হয়ে পড়েছি আর তাই..এজন্য ওর জীবনের দায়িত্ব ওর উপরেই ছেড়ে দেই। যাক, এটা দেখে ভালো লাগল যে ও অন্তত একজন ভালো মেয়েকেই স্ত্রী হিসেবে বাছাই করেছে।”

নিঝুম জোরপূর্বক হাসে। তার এই হাসির নিচে লুকিয়ে ছিল বুকফাটা যন্ত্রণা।

~~~~~~
খাবারের পাট চুকিয়ে মিজানুর রহমান সোফায় বসে পড়লেন। নিঝুমের রান্নার প্রশংসা করে তিনি বললেন,”তোমার হাতের খাবার খেয়ে আমার মন একদম জুড়িয়ে গেল। বিশ্বাস করবে কি না জানি না,তবে তুমি একদম আবরাজের মামীর মতোই রান্না করো। তোমার সাথে ওর স্বভাবেরও অনেক মিল আছে। আমার হলো জহুরির চোখ বুঝলে? আমি সোনা চিনতে কখনো ভুল করি না। তোমাকে দেখেই মনে হচ্ছে,তুমি আবরাজের জন্য একদম খাটি সোনা।”

নিঝুম লাজুক হাসে৷ তবে তার মনে চলছিল গভীর দ্বন্দ। আবরাজও সেখানে উপস্থিত ছিল। তারও এসব কথা শুনে অদ্ভুত লাগছিল৷ কিন্তু যেহেতু সে স্মৃতি হারানোর অভিনয় করে চলছিল তাই কিছু বলতেও পারছিল না আবার সইতেও পারছিল না।

এরইমধ্যে হঠাৎ করে মিজানুর রহমান বলে ওঠেন,”আমি আবরাজের অবস্থা নিয়ে যথেষ্ট শঙ্কিত। আমি জানি, এখানকার চিকিৎসা ব্যবস্থা যথেষ্ট ভালো৷ তবে..আমি চাই আবরাজ আরো দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক। এজন্য আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আবরাজকে নিয়ে নিউ ইয়র্কে যাব। ওখানে আমার একজন চেনা ডাক্তার আছেন উনি অনেক ভালো একজন চিকিৎসক। আমি ইতিমধ্যেই ওনার সাথে কথা বলে রেখেছি উনি আবরাজের চিকিৎসা করা নিয়ে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। এখন এই জন্য আমি চাচ্ছি আবরাজকে নিয়ে নিউ ইয়র্কে যেতে। তা তোমার কোন আপত্তি নেই তো নিঝুম?”

নিঝুম বলে ওঠে,”না,আঙ্কেল। ছি ছি! কি বলছেন আপনি। আমার আপত্তি থাকতে যাবে কেন? আপনি ওনার অভিভাবক। আপনি যা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা নিশ্চয়ই ওনার ভালোর জন্যই।”

মিজানুর রহমান স্মিত হেসে বলেন,”আমি যতোই ওর অভিভাবক হই তুমি ওর স্ত্রী। এত গুলো দিন ধরে তুমি একা হাতে ওকে সামলাচ্ছ তাই তোমার অনুমতি নেয়া বাঞ্চনীয়। তার থেকে বড় কথা, তোমাকেও কিন্তু আমাদের সাথে যেতে হবে। যতদূর শুনেছি আবরাজ তোমাকে ছাড়া কারো সাথে সেরকম মিশতে চায় না স্মৃতি হারানোর পর। তাই ওকে সামলানোর জন্য তোমাকে যেতে হবে।”

নিঝুম বলে,”আমি! কিন্তু আমার তো পাসপোর্ট, ভিসা কিছু করা নেই। আমি কিভাবে যাব?”

“এ নিয়ে তোমায় কোন চিন্তা ভাবনা করতে হবে না। আমি সবকিছুর ব্যবস্থা করে ফেলব। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই সব হয়ে যাবে। চিকিৎসা ভিসায় আবেদন করলে জরুরি ভিত্তিতে এসব করে নেয়া যাবে। তাছাড়া আমার এক বন্ধু ভিসা অফিসে কাজ করে তাই এসব কোন ব্যাপার না। তুমি চাপ নিও না। তুমি সব গোছগাছ করে নাও।”

“আচ্ছা।”

এদিকে আবরাজ পড়ে যায় মহা ঝামেলায়। এখন যদি সে আবারো অন্য কোন ডাক্তারকে দেখায় তাহলে তো তার সব সত্যটা ধরা পড়ে যাবে। ডাক্তার তো আবরাজকে চেক করলেই বুঝতে পারবে যে সে আসলে স্মৃতি হারায় নি শুধু শুধু নাটক করছে। এমনটা ভেবেই আবরাজ চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। সে বুঝতে পারে না এখন কিভাবে এই উদ্ভুত পরিস্থিতি সামলাবে। আবরাজ যখন এমন চিন্তায় ব্যস্ত ছিল এমন সময় হঠাৎ করে তার পিঠে কেউ হাত রাখে৷ আবরাজ তার পাশে তাকিয়ে দেখতে পায় তার মামা মিজানুর রহমানকে। মিজানুর রহমান তাকে আশ্বাস দিয়ে বলেন,”তুমি কোন চিন্তা করো না। খুব শীঘ্রই তুমি আবারো সম্পূর্ণ ভাবে সুস্থ হয়ে উঠবে।”

আবরাজ জোরপূর্বক হাসে।

এক সপ্তাহ পর,
দেখতে দেখতে চোখের পলকে এক সপ্তাহ কেটে গেলো৷ এই এক সপ্তাহ মিজানুর রহমান আবরাজ ও নিঝুমের সাথেই ছিলেন। এরইমধ্যে নিঝুমের সাথে তার খুব ভালো একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। মিজানুর রহমানের সব সময়ই একটা মেয়ে সন্তানের আশা ছিল। কিন্তু দূর্ভাগ্য যে তার স্ত্রীর কখনো সন্তানেরই জন্ম দেয়ার ক্ষমতা ছিল না। এরপর আবরাজ তাদের জীবনে আসায় তাদের মা-বাবা হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয় আবরাজকে দিয়ে। যদিও বা আবরাজ তার বোনের ছেলে তবে মিজানুর রহমান আবরাজকে একদম নিজের ছেলের মতোই মানুষ করেছেন। তবে তার মনে মেয়ে নিয়ে একটা আক্ষেপ সব সময়ই থেকে গেছিল৷ তবে এখন নিঝুমকে যেন তিনি নিজের মেয়ে হিসেবেই পেয়েছেন। মিজানুর রহমান নিঝুমকে বলতে থাকেন,”তোমাকে আমার অনেক ভালো লেগে গেছে নিঝুম। আমি বুঝতে পেরেছি, আবরাজের জন্য তুমি একজন যোগ্য স্ত্রী। তুমি আবরাজকে নিয়ে আর কোন চিন্তা করো না। আমার বিশ্বাস নিউ ইয়র্কে চিকিৎসা নেয়ার পর ও একদম সুস্থ হয়ে উঠবে।”

নিঝুম মাথা নাড়ায়। এদিকে তাদের নিউইয়র্ক যাওয়ার কথা শুনে এলা ও ম্যাক্স দেখা করতে এসেছে। আবরাজ অসহায় চোখে তাদের দিকে তাকিয়ে। কিন্তু এলা ও ম্যাক্সেরও তো এখন কিছু করার নেই। অবশেষে সবাইকে বিদায় জানিয়ে তারা বিমানে করে রওনা দেয় নিউইয়র্কের উদ্দ্যেশ্যে। এখন দেখা যাক, সেখানে গিয়ে আবরাজ কিভাবে সব বিষয় সামলায়।
to be continue…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here