#নিভৃতে_যতনে Part_04

0
799

#নিভৃতে_যতনে Part_04

#Writer_Asfiya_Islam_Jannat

— সবই বুঝলাম বাট বাচ্চাটা কার? ভূতের নাকি জ্বীনের? নাকি কোন ভ্যাম্পায়ারের?

কথাটা শুনার পর আমি হতবুদ্ধির মত তাকিয়ে রইলাম। ঘটনাটা ক্রমে বুঝে উঠতে আমার বেশ বেগ পেতে হয়। অতঃপর বুঝতে পেরে আমি ফুঁসে উঠি। তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলি,

— হোয়াট ডু ইউ মিন? মজা নিচ্ছেন আমার সাথে?

রোয়েন সটান হয়ে দাঁড়িয়ে হাতে থাকা টাওয়ালটা গলায় ঝুলিয়ে নেয়। ট্রাউজাররের পকেটে হাত গুঁজে স্বাভাবিক কন্ঠেই বলে,

— মজা আমি নিচ্ছি না তুমি?

প্রশ্নটা শুনে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। একবার মনে হয়ে গেল,’ ধরা পড়ে গিয়েছি।’ কিন্তু তাও একটা চান্স নিব বলে ভঙ্গ ধরে রইলাম যে আমি তার কথার অর্থ বুঝিই নেই। চেহেরায় বিষ্ময়কর ভাবটা প্রদর্শিত করে বলি,

— মানে?

রোয়েন পুনরায় আমার দিকে একটু ঝুঁকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে,

— হোয়াট ডু ইউ থিং? যার সাথে আমার জীবন জুড়ে দেওয়া হবে তার কোন খোঁজখবরই আমি নিবো না? ইনফরমেশন কালেক্ট করবো না? লাইক সিরিয়াসলি! ডু আই লুক ষ্টুপিড?

কথাটা শুনে আমার চেহেরায় থমথম ভাবটা ফুটে উঠে। মনে মনে বলে উঠি, “অহ শিট! ধরা খেয়ে গেসি। ডেম ম্যান।” নিজেকে শ’খানেক বকা দিয়ে ক্ষান্ত হই আমি। অতঃপর এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে রুদ্ধ গলায় বলি,

— ষ্টুপিড এই তো। সবই যখন জানতেন বুঝতেন তাহলে বিয়েটা কেন করলেন? একটা মেয়ে যেহেতু বিয়েটা ভাঙ্গার জন্য এত বড় অপবাদ নিজের গায়ে লাগাচ্ছে তাহলে আপনার তো বুঝা উচিৎ সে বিয়েতে রাজী না। হুহ!

সে গভীর চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলে,

— সো হোয়াট ক্যান আই ডু?

তার এমন কথা শুনে আমার ঠোঁট যুগলটি নিজ শক্তিতে হা হয়ে যায়। আমি গোলগোল চোখে তার দিকে তাকিয়ে রই। আমার চোখ যেন আপনা-আপনি বলে উঠে, ‘মানে কি ভাই?’ পরক্ষণেই নিজেকে সামলে বলি,

— হোয়াট ডু ইউ মিন বায় দ্যাট?

সে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে নিজের চুল ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলে,

— প্রবলেম তোমার ছিল আমার না। সো আই কুডেন্ট হ্যাল্প উইথ ইট।

কথাটা শুনে ক্রোধে আমার মাথা ফেটে যায়। আমি রুদ্ধদ্বার কন্ঠে বলে,

— তাই বলে বিয়ে করে নিবেন? একটা মেয়ের মর্জি আপনার কাছে মেটার করে না? মেয়েদের কি কোন বস্তু পাইসেন?

সে পুনরায় ভ্রু কুটি কুঞ্চিত করে বলে,

— তোমার মনে হয় না, তুমি একটু বেশি কথা বলো? সাচ আ হেডেক।

আমি রেগে গিয়ে বলি,

— একদম কথা ঘুরাবেন না। যা জিজ্ঞেস করেছি তার সোজাসাপটা উত্তর দিন। রাইট নাও আদার ওয়াইস।

সে তৃতীয় বারের মত আমার দিকে ঝুঁকে শীতল কন্ঠে বলে,

— আদার ওয়াইস হোয়াট?

আমি একটু পিছিয়ে গিয়ে বলি,

— পিঠে সমস্যা আছে নাকি? বার বার মুখের উপর ঝুঁকে পড়েছেন কেন?

সে হঠাৎ কিঞ্চিৎ সোজা হালকা চেঁচিয়ে বলে,

— হোয়াট রাবিশ!

আমি ব্যঙ্গ করি বলি,

— হোয়াট রাবিশ! এমন এক ভাব করছেন যেন কিছু বুঝেন না। হুহ!

রোয়েন আমার দিকে কিছুক্ষণ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে আমার সামনে থেকে সরে যায়। বেলকনিতে গিয়ে নিজের টাওয়ালটা মেলে দিয়ে আয়নার সামনে এসে দাঁড়ায়। নিজের চুল ঠিক করতে করতে বলে,

— তুমি আমাকে আসল কারণটা বলো নি। যদি সত্যিটা বলতে তাহলে আমি বিনাবাক্যেই বিয়েতে ‘না’ করে দিতাম। ফ্রেংকলি স্পিকিং, মিথ্যা আমার সহ্য হয় না। আই জাস্ট হেট দিস থিং। যেহেতু মিথ্যা বলেছ সেহেতু এখন ভুগতো।

কথাটা শুনে আমার মুখ ফসকে বেরিয়ে আসে,

— এ কেমন বিচার?

সে আমার আয়নার মধ্য দিয়েই আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়৷ কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলে না। নিজের চুল ঠিক করে সে আমার দিকে ঘুরে দাঁড়ায়। ট্রাউজারের পকেটে দুই হাত গুঁজে স্বাভাবিক কন্ঠেই বলে উঠে,

— আর কিছু বলার আছে? কিছু বলার থাকলে ঘুমাবো আমি এখন।

আমি তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলি,

— আমার জীবন নষ্ট করে বলছেন আপনি ঘুমাবেন?

সে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,

— বিয়ে করে যদি মনে করো তোমার জীবন নষ্ট হয়ে গিয়েছে তাহলে সেটা তোমার প্রবলেম। এতে আমার কিছুই করার নেই বা বলার নেই ব্যতীত এই কথাটির, গুড লাক ফোর ইউর নষ্ট জীবন।

কথাটা বলে সে বিছানার দিকে এগিয়ে যায়। আর আমি রাগে ফোঁস ফোঁস করতে থাকি। অতঃপর নিজের মনকে বুঝাই, ‘এই খাটাশ ব্যাটার সাথে কথা বলে কোন লাভ নাই। এই ব্যাটা জন্মের ঘাড়ত্যাড়া। হুহ!’ কথাটা নিজেকে বলে নিজেকে স্থির করি। গমগম গলায় জিজ্ঞেস করে উঠি,

— আমি ঘুমাবো কোথায়?

সে আমার দিকে তার সেই বিখ্যাত ভ্রুকুঞ্চিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,

— আমার জানা মতে সকল মানুষই খাটে ঘুমায়। এখন তুমি যদি মানুষ না হয়ে থাকো তাহলে সেটা আলাদা হিসাব।

আমি দাঁতে দাঁত চেপে বলি,

— আ’ম সিরিয়াস!

সে বিছানার উপর বসে আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে বলে,

— যেখানে আমি ঘুমাচ্ছি সেখানেই ঘুমাবে৷ গল্প উপন্যাসের মত আমার রুমে তো আর নয়। যে রুমে সোফা থাকবে আর তুমি সেটা দখল করে বসবে। বাট ইয়েস, বারান্দা আছে। চাইলে ওইটা ট্রায় করতে পারো। আই হ্যাভ নো প্রবলেম। নাও চয়েজ ইজ ইউরস।

আমি অবাক চোখে তাকিয়ে বলি,

— লাইক সিরিয়াসলি?

সে মোবাইল বের করে কিছু একটা করতে করতে বলে,

— ইয়াহ!

বলে মোবাইল চালাতে চালাতে সে শুয়ে পরে। আর আমি হতবুদ্ধির মত দাঁড়িয়ে থাকি। বুঝে উঠার চেষ্টা করি, ‘একটা মানুষ কি পরিমাণ ঘাড়ত্যাড়া ওয়ালা হলে এমন হয়। সেই সাথে কি ভাব। দেখলেই গা জ্বলে যায়।’ কথাটা ভেবেই রাগ উঠে যায়। অতঃপর ভাবলাম, ‘ব্যাটা যেমনই হোক কিন্তু খারাপ না। খারাপ হলে এতক্ষণে নিজের আসল রুপ দেখিয়ে দিত। বাট তাই বলে এতও ভালো না। হুহ!’
আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে ভাবতে থাকি এখন কি করা যায়। বারান্দায় যাওয়া ইম্পসিবল। বারান্দায় গিয়ে ঘুমানোটা শুধু গল্প ও উপন্যাসেই সম্ভব রিয়েল লাইফে না। কিন্তু বিছানাতে ঘুমাতেও মন কেমন খচখচ করছে। বিব্রতবোধ করছি। এক বিছানায় অন্য এক পুরুষের সাথে শেয়ার করার কথাটা ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছে৷ উফফ! কি অসহ্যকর এক পরিস্থিতি। কেন যে এই বিয়ে করতে হয় মানুষদের বুঝি না। নিজেই যখন নিজের সাথে এইসব নিয়ে আনমনে আজাইরা প্যাঁচাল পারছি তখন রোয়েন বলে উঠে,

— তুমি ঘুমাও কিংবা না ঘুমাও, লাইটটা অফ করে দাও। পরে ডীম লাইটটা অন করে দিও। ঘুমাবো আমি এখন।

কথাটা বলে সে পাশ ফিরে শুয়ে পরে। আমি মনে মনে তার গোষ্ঠী উদ্ধার করে লাইট অফ করে দিয়ে, ডীম লাইট অন করে দেই৷ বিরবির করে বলি, ‘ব্যাটা খাটাশ।’ অতঃপর নিজের সাথে বেশ কিছুক্ষণ যুদ্ধ করে বিছানার দিকে এগিয়ে যাই। বেশ দূরত্ব রেখে তার পাশে গিয়ে শুয়ে পরি আর মনে মনে বকতে থাকি, ‘ব্যাটা কিপটা। রুমে একটা সোফা রাখলো কি হইতো? টাকার আকাল পড়তো নাকি?’

#চলবে

আজ লিখার একদম মুড ছিল না কিন্তু আপনারা অপেক্ষা করছেন বলে ছোট করে একটা পর্ব দিয়ে দিলাম। পারলে কালকের পর্ব একটু বড় করে দিব নে।
গল্পটা কেমন লাগছে তা জানাতে ভুলবেন না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here