আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️পর্ব-৯

0
1100

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা-মালিহা_খান❤️
#পর্ব-১০

মায়া যেন হঠাৎ করেই নিশ্চুপ হয়ে গেল।অশ্রুসিক্ত নয়নে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলো সে রাশেদ চৌধুরির দিকে।রাশেদ চৌধুরি চোখ মেলাতে পারলোনা মেয়ের সাথে।নিষ্প্রভ দৃষ্টিতে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে রইলো। আরিয়ান মায়াকে আলতো হাতে জড়িয়ে নিয়ে বললো,

—“জানিস রাশেদ,সেদিন মায়ার উপর হামলা কে করেছিলো?…এই আজিজ।মায়াকে কিডন্যাপও করিয়েছিলো এই আজিজ।তোর মেয়ের উপর খারাপ নজর আছে ওর ঠি ক যেমন আমার মায়ের উপর তোর খারাপ নজর ছিলো।তোর কল রেকর্ডিং আমাদের কাছে দিয়েছে আজিজ।বিশ বছর আগে আমার বাবার সাথে একইভাবে তুই বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলি আর আজকে তোরসাথেও বিশ্বাসঘাতকতা করলো আজিজ।

আরিয়ানের কথা শুনেও মায়া কোন অভিব্যক্তি প্রকাশ করলো না।সে তখন ব্যস্ত তিক্ত সত্য কথাগুলো কোনরকম হজম করে নিতে।
রাশেদ চৌধুরি চোখ বড়বড় করে আজিজের দিকে তাকালো।আজিজ কাঁচুমাচু হয়ে দাড়িয়ে আছে সে বুঝতে পারছেনা এসব আরিয়ান কিভাবে জানলো?সে তো শুধু কল রেকর্ডিং দিয়েছিলো।বাকি কথা আরিয়ান কি করে জানে?কপাল বেয়ে ঘাম পরতে লাগলো তার।কিছু না ভেবে সে দৌড়ে পালাতে যেতেই আরিয়ান শুট করে দিলো।পরপর গুলি করায় সেখানেই লুটিয়ে পরলো আজিজ।রক্তে ভেসে গেলো রাস্তা।মায়া চোখমুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেললো।

—“তোকে তো আমার বাবা শাস্তি দিতে পারেনি।কিন্তু তোর হয়ে আমিই আজিজকে শাস্তি দিয়ে দিলাম।”

এই প্রথম যেন নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা হচ্ছে রাশেদ চৌধুরির।আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে সে দুই হাতজোর করল।ধরা গলায় বললো,

—“আমার মেয়েটাতো কিছু করেনি।ওকে কিছু করোনা তুমি।”

আরিয়ান একটু হাসলো।তারপর শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
—“আমার মা ও কিন্তু নির্দোষ ছিলো কিন্তু তুই কি করেছিলি?”

রাশেদ চৌধুরি মাথা নিচু করে ফেললো।আরিয়ান তার নত চেহারার দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যর হাসি হাসলো।মায়াকে নিজের আরো একটু কাছে টেনে নিয়ে বললো,

—“তোর মতো আমি কখনোই করবোনা রাশেদ।কুকুড় কামড়ালে তো কুকুড়কে আর কামড়ানো যায় না।”

মায়া একদৃষ্টিতে একবার তার বাবার দিকে তাকালো।আরিয়ান হাত উঠিয়ে বন্দুক তাক করে ট্রি গারে আঙ্গুল রাখলো।
রাশেদ চৌধুরি অনুরোধ করে বললো,

—“মায়া মা তুমি দেখোনা।চোখ বন্ধ করে রাখো।”

মায়া কথা শুনলোনা।চোখ বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পরছে অনবরত।আরিয়ান তাকে ঘুরিয়ে একহাতে তার মাথাটা নিজের বুকে চেপে ধরলো।চোখের ইশারায় রাশেদ চৌধুরিকে কিছু একটা আশ্বস্ত করে শুট করে দিলো।
মায়া”বাবা”বলে আর্তনাদ করে উঠলো।আরিয়ান তাকে মাথা উঠাতে দিলো না।শক্ত করে ধরে রাখলো।
রাশেদ চৌধুরির মৃতদেহ পরে রইলো।আরিয়ান সেদিকে তাকিয়ে মনে মনে তৃপ্তির হাসি হাসলো।
ততক্ষনে তার বুকেই জ্ঞান হারিয়েছে মায়া।

——————
নিজের রুমেই মায়াকে যত্ন করে শুইয়ে দিলো আরিয়ান।শত চেষ্টা করেও মেয়েটার সাথে খারাপ কিছু করার কথা চিন্তাও করতে পারনি সে।কিছু একটা যেন আটকে দিয়েছে বারবার।কান্নার করার ফলে চোখমুখ লাল হয়ে আছে মায়ার।ফর্সা চেহারার আরক্তিম আভা যেন তার সৌন্দর্য বহুগুন বাড়িয়ে দিয়েছে।
আরিয়ান ঝুকে তার কপালে ঠোঁট ছুইয়ে দিলো।সে জানে মায়ার এই অবস্থার জন্য সেই দায়ি।তবুও তার কিছুই করার নেই।বাবা-মার মৃত্যুর প্রতিশোধ তো তাকে নিতে হতোই।

রুম থেকে বের হতেই ইতির সাথে দেখা হলো।তন্ময়কে তার পাশেই দাড়িয়ে থাকতে দেখে বললো,

—“পাশের রুমে মায়ার জিনিসপত্র রেখে দে।আর কর্নারের রুমে ইতির থাকার ব্যবস্থা করে দে”

তন্ময় মাথা নাড়ায়।আরিয়ান গটগট করে নিচে নেমে যায়।ইতির হাত থেকে লাগেজ নিয়ে তন্ময়ও এগিয়ে যায়।তার পিছু পিছু যায় ইতি।
———–—–—
জ্ঞান ফিরেছে মায়ার।উদ্ভ্রানতের মতো কাঁদছে আর চিৎকার চেঁচামেচি করছে সে।
—“ম্যাম একটু শান্ত হন।এভাবে চিৎকার করলেতো..

—“উনি কোথায়?কোথায় উনি?উনাকে আসতে বলো আমার কাছে।কিভাবে পারলেন উনি আমার সামনেই বাবাকে…।”বলতে বলতেই উচ্চস্বরে কেঁদে দিলো মায়া।

দরজা খুলে প্রবেশ করলো আরিয়ান।একটা কাজে বেরিয়েছিলো।আসতেই শুনলো মায়া এমন করছে।সে অবশ্য জানতো,মায়া কখনোই স্বাভাবিক আচরণ করবেনা তার সাথে।সেই হিসেবে প্রস্তুতি নিয়েই এসেছে সে।মায়ার চিৎকার উপেক্ষা করে ইতিকে উদ্দেশ্য করে বললো,

—“তুমি যাও ইতি।ওকে আমি দেখছি…।

নি:শব্দে বেরিয়ে গেলো ইতি।আরিয়ান ভেতর থেকে দরজা আটকে দিলো।মায়ার দিকে এগিয়ে আসতেই মায়া চিৎকার করে বললো,
—“কাছে আসবেন না।একদম কাছে আসবেননা বলছি।”

আরিয়ান জানে মায়া এখন নিজের মধ্য নেই।তার রাগ হলোনা।ধীরপায়ে মায়ার সামনে গিয়ে বসলো সে।
ধরতে গেলেই মায়া ছিঁটকে তার হাত সরিয়ে দিয়ে বললো,

—“ধরবেননা আমাকে।আপনি একজন খুনি।বাবাকে খুন করেছেন।”

—“মায়া রাগ উঠিয়োনা আমার।কিছুই জানোনা তুমি।”

—“কি জানবো?আপনিতো আমার সামনেই..।আবার কান্না করে দিলো সে।

আরিয়ান শক্ত করে তার দু হাত নিজের একহাতের মুঠোয় শক্ত করে ধরে রাখলো।আরেকহাতে চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বললো,
—“আর একফোঁটা পানি যদি বের হয় মায়া।আমার থেকে খারাপ কেউ হবেনা।”

মায়ার চোখ আবারও ভিজে এলো।আরিয়ান দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আবারো তার পানি মুছিয়ে দিলো।মায়া হঠাৎ ই শান্ত হয়ে গেলো।কেন হলো সে নিজেও জানেনা।
নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে মৃদু কন্ঠে বললো,

—“হাত ছাড়ুন।ব্যাথা পাচ্ছি।”

আরিয়ান তার হাত ছেড়ে দিলো।মায়ার একগালে হাত রেখে বললো,
—“আমার কথাগুলো শোনো।তারপরও যদি তোমার মনে হয় আমি ভুল কিছু করেছি তখন ঠি কাছে আমি মেনে নিবো।কিন্তু কিছু না জেনে তো তুমি এমন কিছু বলতে পারোনা।”

মায়ার দৃষ্টি নিচের দিকে।হাতের উল্টোপিঠে দিয়ে সে চোখ মুছে বললো,
—“বলুন”।

আরিয়ান নরম কন্ঠে বললো,
—“তার আগে একটা প্রশ্নের উওর দাও।তোমার মা কিভাবে মারা গিয়েছিলো তুমি জানো?”

মায়া একটু অবাক হলেও বললো,

—“বাবা বলেছিলো,আমাকে জন্ম দিতে গিয়ে।”

—“তোমার মা তোমাকে জন্ম দিতে গিয়ে মারা যায়নি।তোমার বাবা নিজ হাতে তোমার মাকে খুন করেছে।”

~চলবে~

[আগামী পর্বে সব রহস্যর সমাধান হবে]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here