#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা-মালিহা_খান❤️
#পর্ব-১৪
টানা দু-ঘন্টা শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে এলো আরিয়ান।অসহ্য লাগছে তার।কিছুতেই নেশা হচ্ছেনা,ঘুম আসছেনা।সেন্টার টেবিলে অর্ধেক খাওয়া ড্রিংক্সের গ্লাস রাখা।ঘড়ির কাঁটা প্রায় আড়াইটা ছুঁইছুঁই।
।একবার বিছানার দিকে তাকালো সে।খালি বিছানা দেখে একটা চাপা দীর্ঘ: শ্বাস বেরিয়ে আসলো।
কিছুক্ষন এপাশ-ওপাশ পায়চারি করেও লাভ হলোনা।মায়া হয়তো এতক্ষনে ঘুমিয়ে গিয়েছে।আচ্ছা,তাকে এই রুমে নিয়ে আসলে কি খুব ক্ষতি হয়ে যাবে?খুব বেশিই অনুচিত হয়ে যাবে?ক্ষতি হলে হবে,সে তো অন্তত একটু শান্তিতে ঘুমাতে পারবে।কখনো কখনো একটু সার্থ:পর হওয়াই যায়।
।
দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে আরিয়ান।তারমানে,সে দরজা লক করে ঘুমায়না।
বিছানার একদম মাঝখানে হাত পা ছড়িয়ে ঘুমাচ্ছে মায়া।মাথাটা বালিশে নেই।বালিশ থেকে অনেকটা নিচে।
নি:শব্দে হেটে গিয়ে তাকে পাঁজাকোলা করে কোলে তুলে নিলো আরিয়ান।এতদিনে সে এতটুকু অন্তত জানে যে মায়ার ঘুম অনেক গাঢ়।সহজে ভাঙেনা।মেয়েটার পরণে হাল্কা গোলাপি রংয়ের ঢিলেঢালা লং ফ্রক।একটু বেশিই বাচ্চা বাচ্চা লাগছে ফ্রক পরায়।
নিজের বিছানায় মায়াকে শুইয়ে দিতেই একটা তৃপ্তি অনুভব করে আরিয়ান।অত:পর তাকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে সেও শুয়ে পরে।বুকের ভিতর জমা হওয়া সব চাপা কষ্ট,দীর্ঘ:শ্বাস যেন নিমিষেই উবে যায়।
মায়ার শরীর থেকে মিষ্টি একটা সুগন্ধ আসে সবসময়।আরিয়ান চেনে গন্ধটা।
মায়া এতটা কাছাকাছি থাকায় গন্ধটা যেন আরো তীব্রভাবে নাকে এসে লাগে।ঘোর ধরে যায়।
কিছু না ভেবে,মায়ার গলায় মুখ ডুবিয়ে ঘুমিয়ে পরে আরিয়ান।
উচিত অনুচিত এর হিসেবটা তার মায়াময় অনুভূতির ভিড়ে আড়াল হয়ে যায়।
——————
সকালে ঘুম ভাঙতেই নিজেকে কারো বাহুডোরে আবদ্ধ অবস্থায় পেয়ে থমকে গেল মায়া।এটা যে আরিয়ানের রুম বুঝতে অসুবিধা হলোনা।সে তো নিজের ঘরে ঘুমিয়েছিল।তবে?
একহাত দিয়ে শক্ত করে তার পেট জড়িয়ে ধরেছে আরিয়ান।সে আবার সেই হাতের উপরে ধরেও আছে।
পাশে মুখ ঘুরাতেই আরিয়ানের ঠোঁট তার গাল ছুয়ে গেল।নি:শ্বাস আটকে এলো।লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে গেল মায়া।আড়িয়ান বেঘোরে ঘুমোচ্ছে।হাতটা একটু সরানোর চেষ্টা করতেই তাকে আরো কাছে টেনে নিলে আরিয়ান।অষ্পষ্ট কন্ঠে বললো,
—“মায়াবতী,নড়োনা প্লিজ।
মায়া থেমে গেল।প্রতিউওরে প্রতিবাদ করার মতো কিছু পেলোনা।লোকটা মাঝেমধ্য এমন অধিকারের স্বরে কথা বলে,মায়া নিজেই বোকা বনে যায়।যেমন এখন,সে বলতে পারছেনা তাকে ছাড়ার কথা।তার ইচ্ছেও করছেনা আরিয়ানের ঘুম ভাঙাতে।গরম নি:শ্বাস আছড়ে পরছে মায়ার মুখে,গলায়।মায়া ঠোঁট কামড়ে ধরে সেভাবেই সুয়ে থাকলো।বেশ অনেকক্ষন কেটে গেলেও আরিয়ান ঘুম থেকে উঠলোনা।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো প্রায় এগারোটা বেজে যাচ্ছে।অনেক বেলা হয়ে গেছে।ইতি নিশ্চয় তাকে খুঁজছে।তাকে রুমে না পেয়ে না জানি কি ভাবছে।
হঠাৎই দরজায় জোরে জোরে নক করার শব্দ হলো।মায়া চমকে সেদিকে তাকালো।আরিয়ান চোখ না খুলেই বিরক্তিকর কন্ঠে বললো,
—“কে?কি সমস্যা?”
ওপাশ থেকে তন্ময়ের অস্থির কন্ঠ ভেসে আসলো,
—“ভাই,মায়া ম্যাম রুমে নেই।পুরা বাসায়ও নেই…
আরিয়ান একবার মায়ার দিকে তাকালো।মেয়েটা অন্যদিকে তাকিয়ে রয়েছে।লজ্জা পাচ্ছে হয়তো।আরিয়ান শান্ত কন্ঠে বলে,
—“ও আমার সাথে আছে।যা তুই”।
তন্ময়ের আর কোন কথা শোনা গেলনা।আরিয়ান মায়ার দিকে তাকালো।মায়া নিচের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।
আরিয়ান একটু হাসে।মায়ার গালদুটো লজ্জায় লাল হয়ে আছে।মায়ার উপর থেকে হাত সরিয়ে নেয় সে।মায়া যেন হাফ ছেড়ে বাঁচে।ঘাড় কাত করে আরিয়ানকে দিকে তাকায়।আরিয়ান তার দিকেই তাকিয়ে ছিলো ফলে চোখাচোখি হয়ে যায়।
মায়া মৃদু কন্ঠে বলো,
—“আপনি আমাকে এখানে এনেছেন কেন?”
আরিয়ান গায়ের চাদর সরিয়ে উঠে বসে।এত বেলা করে সে কখনোই ঘুমায়না।মায়া এসে তার সব নিয়ম ভঙ্গ করে দিচ্ছে।একটা ছোট হাই তুলে সে বলে,
—“তোমাকে ছাড়া ঘুম আসছিলোনা মায়াবতী।”
আরিয়ানের সোজাসাপটা উওরে আবারো বোকা বনে যায় মায়া।কিছু বলতে পারেনা।সেও উঠে বসে।তার গায়ে ওড়না নেই।কাঁচুমাচু ভঙ্গিতে আরিয়ানের দিকে তাকায় সে।আরিয়ান ততক্ষনে বিছানা ছেড়ে নেমে দাড়িয়েছে।
—“কি হয়েছে?আমি এনেছি বলে মন খারাপ?রাগ করেছো?”
মায়া দু’পাশে মাথা নাড়ায়।কেন যেন তার রাগ লাগছেনা।তবে লজ্জা লাগছে খুব করে।কথা পর্যন্ত বলতে পারছেনা।কোনরকম সে বলে,
—“আমার ওড়না…”
আরিয়ান মুচকি হেসে তার বালিশের পাশ থেকে তার ওড়না বের করে দেয়।মায়ার দিকে এগিয়ে দিতেই দ্রুত সেটা গায়ে জরায় মায়া।এলোমেলো চুলগুলো ঠি ক করে বলে,
—“এখন আমি বাইরে যাবো কিভাবে?”
আরিয়ান ভ্রু কুচকে বলে,
—“কেন?”
—“তন্ময় ভাইয়া,ইতি ওরা কি ভাববে?”
—“কি ভাববে?”
মায়া আমতা আমতা করে।তার শব্দ ভান্ডার যেন শূন্য হয়ে পরেছে।বলার জন্য কিছু খুঁজেই পাচ্ছেনা আজ।আরিয়ান তার দিকে দুষ্টু চাহনীতে চেয়ে আছে।সে কোনরকম আমতা আমতা করে বলে,
—“না,কিছুনা।”
—“তুমি রোজ এখানেই ঘুমাবে,আমার সাথে”।
মায়া চট করে তাকায়।আরিয়ানের কন্ঠে গভীর অধিকার প্রকাশ পাচ্ছে।সে জিজ্ঞাসু কন্ঠে বলে,
—“কেন?”
—“কারণ তোমাকে ছাড়া আমার ঘুম আসেনা”
——————
আরিয়ান অনেকক্ষন আগেই অফিসে চলে গেছে।দেরি হয়ে যাওয়ায় ব্রেক-ফাস্টও করেনি।বাসায় আবারো একা হয়ে গেছে মায়া আর ইতি।আরিয়ান তাকে বাসার সব জায়গায় যেতে বলেছে।যাওয়ার আগে বলে গেছে নিজের রুমে বসে থাকতে বোরিং লাগলে যেন সারা বাসায় ঘুরে বেড়ায়।তাই সে আর ইতি বাড়ির সামনের বাগানে ঘুরে বেড়াচ্ছে।হঠাৎই….
~চলবে~
[অনেক তারাহুড়ো করে লিখেছি।ভুল-ক্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]