#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা-মালিহা_খান❤️
#পর্ব-২০
আরিয়ান কোনরকম সিঁড়ি ভেঙে নিচে নামল।পা যেন চলছে না তার।মায়া উপুর হয়ে পরে আছে।
দ্রুত হাটুগেড়ে বসে মায়াকে সোজা করে মাথাটা কোলের উপর নেয়।কপাল ফেটে রক্ত বের হচ্ছে।
চোখের উপর দিয়ে বেয়ে বেয়ে পরছে রক্ত।
আরিয়ান গালে টোঁকা দিয়ে ক্ষীণ স্বরে ডাকে,
—“মায়া?চোখ খুলো।মায়াবতী?তার কন্ঠে স্পষ্ট ভয় প্রকাশ পাচ্ছে।
মায়া উঠেনা।আরিয়ান তাকে বুকে টেনে নেয়।মায়ার রক্ত তার জামায় লেগে যায়।আচ্ছা,তার কম্পিত হৃদস্পন্দন কি মায়ার কান অবধি পৌঁছাচ্ছে?মায়া কি বুঝতে পারছে তার অস্থিরতা,তার তীব্র অনুভূতির ভীত বহি:প্রকাশ?
তন্ময় সামনে এসে দাড়ায়।আরিয়ান তাকে কিছু বলার আগেই তন্ময় দ্রুত বলে,
—“গাড়ি বের করেছি ভাই।ম্যাম কে নিয়ে আসুন।”
মায়াকে যত্ন করে কোলে তুলে নেয় আরিয়ান।তন্ময় ছোট একটা শ্বাস ফেলে এগিয়ে যায়।ইতিকে ইশারা করে তার সাথে যেতে।ইতি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।তার সামনেই মায়ার এমন একটা বিপদ হয়ে গেল।যদিও তার
কিছুই করার ছিলোনা।সে যখন দেখলো ততক্ষনে অর্ধেক সিঁড়ি গড়িয়ে পরে গেছে মায়া।
————–
গাড়ি ড্রাইভ করছে তন্ময়।পিছের সিটে মায়াকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বসেছে আরিয়ান।মায়ার পাশে জানালার ধারে ইতি বসে আছে।
মায়ার কপালে শক্ত করে রুমাল চেপে ধরে রেখেছে আরিয়ান।তবুও রক্ত থামছেনা।বাসার সিঁড়ি বেশ উঁচু।সেখান থেকে পরে গেছে তাই হয়তো ক্ষতটা বেশি।
আরিয়ান একবার মায়ার মুখের দিকে তাকায়।ফর্সা মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে আছে।
মূহর্তেই দৃষ্টি সরিয়ে নেয় সে।মেয়েটাকে এত আগলে আগলে রাখার পরও কেন তার সাথেই এসব হয়?কেন ওর উপর দিয়েই সব বিপদ যেতে হয়?হাহ্!
—“তন্ময়,ড্রাইভ ফাস্ট।আর কতক্ষন লাগবে?”
—“এইতো ভাই,পৌছে গেছি।”
গাড়ি থামে হসপিটালের সামনে।রাস্তা ভর্তি মানুষ।আরিয়ান সেসব না ভেবেই গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে।ঝুকে গিয়ে মায়াকে কোলে নেয়।আশেপাশের সবাই হা করে দাড়িয়ে থাকে।ভীড় জমায়।পাবলিক প্লেসে এভাবে গার্ড ছাড়া সচরাচর আরিয়ানকে দেখা যায় না।আর আজকে তো একটা মেয়েকে কোলে নিয়ে আছে।
উৎসুক জনতার কেউ কেউ মোবাইল বের করে ভিডিও করে।
আরিয়ান সেসব তোয়াক্কা না করে হসপিটালের ভেতরে ঢুকে যায়।তন্ময় গাড়ি থেকে বের হয়ে ইতিকে নিয়ে কোনরকমে সবাইকে এড়িয়ে চলে আসে।তার মাথায় বিভিন্ন চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে।কিছু একটা যে ঘটবে তার আভাস বেশ শক্তভাবেই পাচ্ছে সে।তবে আরিয়ানকে এখন এসব বলা যাবেনা।রাগের মাথায় কখন কি করে ফেলবে ঠি ক নাই।
——————
কেবিন থেকে ডক্টর বেরিয়ে আসে।আরিয়ান দ্রুতপায়ে এগিয়ে যায়।বাইরে থেকে শোরগোলের শব্দ আসছে।রাগে শরীর শিরশির করছে তার।যেখানে যাবে সেখানেই এই মিডিয়া।মানুষের পার্সনাল লাইফ নিয়ে কেন যে এত কৌতুহল তাদের!
সামনে নতজানু হয়ে দাড়িয়ে আছে একজন অল্পবয়সী ফিমেল ডক্টর।নাম মিতালী রহমান।সে ভীত দৃষ্টিতে নিচের দিকে তাকিয়ে বলে,
—“আপনার স্ত্রীর কপালে ব্যান্ডেজ করে দেয়া হয়েছে।ক্ষতটা বেশ গভীর।রক্তও বেরিয়েছে অনেক।ভয়ের কিছু নেই কিন্তু খুব দূর্বল উনি।আর বেসামালভাবে পরার কারণে ডানহাত মচকে গেছে।প্লা স্টার করে দেয়া হয়েছে।তবে সম্পূর্ণ ঠি ক হতে সময় লাগবে।জ্ঞান ফিরবে কিছুক্ষন পর।
মায়াকে স্ত্রী বলার পরেও আরিয়ান কিছু বলেনা।ইতিও চুপচাপ দাড়িয়ে থাকে।এতক্ষনে মায়ার প্রতি আরিয়ানের অনুভূতি সম্পর্কে ভালোভাবেই অবগত হয়েছে সে।
—“ওকে কি হসপিটালেই রাখতে হবে?বাসায় নিয়ে যেতে পারবোনা?”
—“জি জি পারবেন।স্যালাইন চলছে তো।সেটা শেষ হোক তারপর সন্ধ্যার সময় বাড়িতে নিয়ে যেয়েন”।
—————
চোখ খুলতেই মাথায় ব্যাথা অনুভূত হয় মায়ার।গালের উপর কারো হাত রাখা।বেশ বুঝতে পারছে এটা আরিয়ানের হাত।হাল্কা করে হাতের আঙ্গুল নাড়াতেই ইতির কন্ঠ শুনতে পায় সে,
—“ম্যামের জ্ঞান ফিরেছে স্যার।”
আরিয়ান এতক্ষন অন্যমনস্ক হয়ে ছিল।ইতির কথায় হুঁশ ফিরে তার।মায়া আধো আধো ভাবে তার দিকে চেয়ে আছে।আরিয়ান যেন প্রাণ ফিরে পায়।স্বস্তির নি:শ্বাস ছাড়ে আলতো করে মায়ার মাথায় হাত রাখে সে।ধীর গলায় বলে,
—“কেমন লাগছে এখন?ব্যাথা হচ্ছে বেশি?”
মায়া মৃদুভাবে দু’পাশে মাথা নাড়ায়।ব্যাথা হচ্ছে কিন্তু এতটাও বেশি নয়।আরিয়ানকে দেখেই বুঝতে পারছে সে খুব চিন্তায় ছিলো।তার টেনশন আর বাড়াতে চায়না সে।
হাতে দিকে তাকাতেই আৎকে উঠে মায়া।জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আরিয়ানের দিকে তাকাতেই সে বলে,
—“ডোন্ট ওয়ারি।একটু ফ্যাকচার হয়েছে।ঠিক হয়ে যাবে।”
মায়া উঠতে চায়।তবে হাতে ভর দিতে পারছে না।স্যালাইন চলছে।আরিয়ান তাকে ধরে উঠায়।বুকের সাথে হেলান দিয়ে বসায়।ইতির সামনে মায়া লজ্জা পেলেও মুখে কিছু বলেনা।
ইতির দিকে তাকাতেই সে মুচকি হাসে।প্রতিউওরে মায়াও হাসে।আরিয়ান একহাতে ফোনে কিছু একটা করছে আর আরেকহাত মায়ার কোলের উপর রাখা।
কিছুক্ষন পর মিস.মিতালী কেবিনে প্রবেশ করে।মায়াকে আরিয়ানের বুকে দেখে একটু হাসে সে।
আরিয়ান খান কে না চেনে!রাগী,মেজাজী মানুষ সে।ভয়ে প্রেস মিডিয়ায়ও তার সম্পর্কে কোন বাজে ভুয়া নিউজ ছড়ানো হয়না।অথচ নিজের স্ত্রীর প্রতি কতোটা যত্নশীল সে।যদিও সে জানতো আরিয়ান অবিবাহিত।
কিন্তু এই মেয়েটাকে দেখে তার আরিয়ানের স্ত্রী ছাড়া কিছু মনে হয়নি।আর যদি মেয়েটা তার স্ত্রী নাই হতো তাহলে নিশ্চয় তাকে স্ত্রী বলার পর আরিয়ান কোন রিয়েক্ট করতো।
ওতশত না ভেবে সে এগিয়ে যায়।স্যালাইনটা নামিয়ে দিয়ে বলে,
—“আপনার ক্যানেলাটা খুলে দেই।স্যালাইন শেষ হয়ে গেছে।”
মায়া ভীত কন্ঠে বলে,
—“কিন্তু এটা খুললেতো ব্যাথা পাবো।”
আরিয়ান হুট করে মায়ার চোখে উপর হাত রেখে ইশারা করে খুলে ফেলতে।মিস.মিতালী হেসে খুলে ফেলেন সেটা।”উহ্”করে উঠে মায়া।আরিয়ান মুচকি হেসে চোখের উপর থেকে হাত সরিয়ে নেয়।মেয়েটা এতো ভয় পায়!!
___________
সব ফর্মালিটিস শেষ করে কেবিনে আসে আরিয়ান।ইতি আর মায়াকে নিয়ে বেরিয়ে যায়।
তন্ময় বারবার ফোন দিচ্ছে আরিয়ানকে।বাইরে নাকি সাংবাদিক দের ভীড়।আরিয়ানের মেজাজ প্রচন্ড গরম।
সমস্যাটা কি এদের?
বের হতেই এতো মানুষ দেখে চমকে উঠে মায়া।আরিয়ান তার পিঠের পিছ দিয়ে বাহু জড়িয়ে ধরে।আশ্বস্তভরা কন্ঠে বলে,
—“আমি আছিতো,ভয় পায়না”।
সাংবাদিকরা একটার পর একটা ছবি তুলছে।ক্যামেরার ফ্লাসে প্রচন্ড অসস্তি লাগছে মায়ার।মাথা নিচু করে আরিয়ানের পিঠের শার্ট খামছে ধরে আছে সে।
তন্ময় দ্রুত সামনে আসে।অস্থিরভাবে বলে,
—“ভাই আপনি ম্যামকে নিয়ে গাড়িতে বসুন।এদের কথায় কান দিয়েন না।রাগের মাথায় রাস্তায় সিন ক্রিয়েট হয়ে যাবে”
ভীড় ঠেলে সামনে যেতে পারেনা আরিয়ান।তার আগেই সাংবাদিকরা ঘিরে ধরে।একের পর এক প্রশ্ন ছুঁড়ে,
“ইনি কে স্যার?”,আপনার গার্ল-ফ্রেন্ড?”,আপনারা কি গোপনে প্রেম করছেন?”,অবৈধ সম্পর্ক?”,
“এ কি আপনার রক্ষীতা?”
এ পর্যায়ে এসে রাগের সীমা ছাড়িয়ে যায় আরিয়ানের।তুমুলভাবে গর্জে উঠে সে বলে,
—“জাস্ট শাট আপ।সি ইজ্ মাই ওয়াইফ।আমার স্ত্রী “।
~চলবে~