#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধাতারা❤️
#লেখিকা-মালিহা_খান❤️
#পর্ব-২২
সকালে মেসেজের টুংটাং শব্দে ঘুম ভাঙে আরিয়ানের।শান্তিময় নিদ্রায় হঠাৎ ব্যাঘাতে মেজাজ খারাপ হয়ে আসে।চোখ খুলতেই নজরে আসে মায়ার ঘুমন্ত মায়াবী মুখশ্রী।তার দিকে মাথা খানিকটা কাত্
করে রেখেছে মায়া।ফলস্বরূপ মায়ার ঠোঁটগুলো তার ঠোঁটের সাথে একেবারেই ছুঁই ছুঁই অবস্থায় আছে।পরমূহুর্তেই মুখের বিরক্তিকর আভাস বদলে ঠোঁটের কোঁণে মৃদু হাসি ফুটে উঠলো আরিয়ানের।তার একটা হাত মায়ার গলার নিচ দিয়ে দেয়া।আরেকহাত মায়ার পেটের উপর রাখা যেটা মায়া শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছে।
হাত বাকিয়ে আলতো করে মায়ার মুখের উপর আসা এলোমেলো চুলগুলো আঙ্গুলের ছোঁয়ায় সরিয়ে দেয় সে।অত:পর খুব সন্তর্পণে গলার নিচ থেকে হাতটা বের করে নিয়ে আসে।ঘুমের ঘোরে হাল্কা একটু নড়েচড়ে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে আবার ঘুমিয়ে পরে মায়া।আরিয়ান একটা ফাঁকা ঢোক গিলে।মায়ার ঠোঁটের দিকে নেশাক্ত দৃষ্টিতে তাকায়।
হঠাৎ ফোনের রিংটন বেজে উঠে।চোখেমুখে আবারো বিরক্তি খেলা করে।ফোনটা মায়ার পাশে রাখা।আরিয়ান দ্রুত মায়ার উপর দিয়ে ঝুকে গিয়ে ফোনটা হাতে নেয়।ফোনের আওয়াজে পিটপিট করে তাকায় মায়া।আরিয়ানকে তার উপর দিয়ে ঝুকে থাকতে দেখে ঘুমঘুম কন্ঠে বলে,
—“কি করছেন?”
মায়ার কন্ঠে ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে ফোনটা সাইলেন্ট করে আরিয়ান।সে চাচ্ছিল মায়া যেন না উঠে।
সেই ঘুম ভেঙেই গেল তার।উপর থেকে সরে গিয়ে উঠে বসে সে।সেকেন্ডে ফোনের মেসেজগুলোয় একবার চোখ সে বুলিয়ে নেয়।মায়ার ধরে রাখা হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে পরপরই আবার ঝুঁকে গিয়ে মায়ার একগালে হাত রেখে অপর গালে ঠোঁটের ছোয়াঁ দিয়ে বলে,
—“ঘুমাও তুমি।ব্রেকফাস্টের সময় হলে আমি ডেকে দিবোনে”।
বলে গায়ের কম্বল সরিয়ে উঠে পরে আরিয়ান।
—“এই সকালে কোথায় যাচ্ছেন?”
—“একটু কাজ আছে।”
ফোনটা টাউজারের পকেটে ঢুকিয়ে কাবার্ড থেকে কিছু কাগজ বের করে দরজা আটকে বেরিয়ে যায় আরিয়ান।
আরিয়ানের বেরিয়ে যাওয়ার পর অলস ভঙ্গিতে মাথার ব্যান্ডেজটায় হাত বুলায় মায়া।এখন আবার ব্যাথা করছে জায়গাটা।এরপর হাতটা নিজের অজান্তেই গালে চলে যায়।যেখানটায় একটু আগে চুমু খেয়েছে আরিয়ান।মায়া মুচকি হাসে।প্রথমবার তার গালে চুমু দিয়েছে উনি।এর আগে শুধু কপালেই ঠোঁট ছোয়াঁতো।হাহ্।এত তাড়াহুড়ো করে কোথায় গেলো কে জানে?কোন ঝাঁমেলা হয়নি তো?
———–——–
নিচে নামতেই তন্ময় দ্রুত এগিয়ে এসে তার হাতে খবরের কাগজ দিয়ে বললো,
—“ভাই,দেখেন।”
আরিয়ান পেপারটা হাতে নিয়ে দেখল ফ্রন্ট পেইজেই তার আর মায়ার ছবি।একপাশে সে মায়াকে কোলে নিয়ে রেখেছে আর আরেকপাশে রাস্তায় যখন মায়াকে সে জড়িয়ে ধরে রেখেছিলো তখনের ছবি।
হেডলাইনে বড় বড় করে লেখা,”আরিয়ান খানের গোপন বিয়ে ফাঁস।”তার একটু নিচে তুলনামূলক ছোট্ট অক্ষরে লেখা-“কে এই মেয়ে?যাকে নিজের স্ত্রী বলছে আরিয়ান খান।প্রমান চাওয়ায় সাংবাদিককে প্রকাশ্য হুমকি আরিয়ান খানের”
তারপর বিশাল বিস্তৃতি নিয়ে প্রায় আধা-পেইজ জুড়ে লেখা হয়েছে।তেল-মশলা মিশিয়ে গতরাতের মূল ঘটনার সাথে আরো একটু রঙচঙ মেরে নিউজ ছাপানো হয়েছে।
আরিয়ানের সেগুলো পড়ার রুচি হয়না।তন্ময়ের দিকে পেপারটা এগিয়ে দিয়ে শীতল কন্ঠে বলে,
—“বাইরে কারা এসেছে?”
—“দু’জন জার্নালিস্ট,মনে হচ্ছে নিউজ চ্যানেলের।”
আরিয়ান তাদের কাবিননামাটা তন্ময়কে দিয়ে বলে,
—“এটার ছবি চ্যানেলগুলোতে প্রকাশ করে দে”।আর বাইরে যারা এসেছে তাদের কেও দিয়ে দিস।”
তন্ময় মাথা নাড়িয়ে বেরিয়ে যায়।আরিয়ান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উপরে উঠতে থাকে।ফোন বেজে উঠে আবারো।
না দেখেই বুঝতে পারছে কে ফোন করেছে।মনে মনে কথাগুলো সাজিয়ে ফোনটা রিসিভ করলো।ওপাশ থেকে ভারি গলায় একজনের কন্ঠ শোনা গেলো,
—“এসব কি শুনছি আরিয়ান?তুমি বিয়ে করলে?আমাদেরকে জানানোর প্রয়োজন বোধ করলে না?আমি,তোমার মামী কতটা কষ্ট পেয়েছি জানো?”
আরিয়ান ঠোঁট কামড়ে বললো,
—“মামা শান্ত হও।আমি বলছি তোমাকে”।
—“কে?ওই মেয়েটা কে?আমাদের বললে কি আমরা অমত করতাম?শত বলেও তো তোমাকে বিয়ে করাতে পারিনি।আর এখন তুমি আমাদের না জানিয়েই,,,,”
আরিয়ান হতাশভাবে বলে,
—“মামা,আমাকে বলার সুযোগটা তো দিবে।”
—“কতদিন হয়েছে বিয়ের?এতদিনেও বলার সুযোগ হয়নি তোমার।আর এখন সবাই জানার পর আমাকে বলার জন্য সুযোগ খুঁজছো তুমি।”
—“বিয়ের একদিনও হয়নি মামা।মাত্র একরাত হয়েছে।”
—“মানে?”
অত:পর সবকিছু খুলে বলে আরিয়ান।নিজের মামার কাছে কোনকিছুই গোপন করার নেই তার।একদম প্রথম থেকে সবটা শোনার পর মাথায় আকাশ ভেঙে পরে সজীব খানের।সব ছেড়ে রাশেদ চৌধুরির মেয়েকেই বিয়ে করতে হলো আরিয়ানের।গম্ভীর গলায় বলে,
—“তাই বলে তুমি রাশেদের মেয়েকে বিয়ে করলে?”
—“মায়া রাশেদ চৌধুরির মেয়ে এই পরিচয়টার থেকে সে আমার স্ত্রী এটাই কি যথেষ্ট নয়?”
—“আরিয়ান তুমি ভুলে যাচ্ছো,রাশেদ চৌধুরি তোমার মা-বাবার সাথে কি করেছিলো।
—“আমি কিছুই ভুলিনি মামা।তবে সেটার সাথে তো মায়ার কোন যোগসূত্র নেই।মায়া তো কিছু করেনি মামা।
বাবার কুকর্মের শাস্তিতো আমি মেয়েটাকে দিতে পারিনা।তাইনা?”
—“আমি কিছু জানিনা আরিয়ান।তুমি আজই মেয়েটাকে নিয়ে আমাদের বাসায় আসবে।তারপর এ বিষয়ে কথা হবে।”
আরিয়ান শক্ত কন্ঠে বলে,
—“এ বিষয়ে বলার মতো কিছু নেই মামা।আর মায়ার সামনে এ বিষয়ে কোন কথা হবেনা।ও খুবই সহজ সরল একটা মেয়ে।আমি চাইনা ও এসব নিয়ে আপসেট হোক।তোমরা যদি আমার স্ত্রী হিসেবে ওর সাথে দেখা করতে চাও,তবে অবশ্যই আমরা আসবো।”
সজীব খান একটু শিথিল হয়।গলার স্বর নরম করে বলে,
—“তুমি কি বলতে চাচ্ছো আমি বুঝতে পারছি আরিয়ান।তোমার যদি ওকে পছন্দ হয় তবে আমাদের কোন সমস্যা নেই।তোমার পছন্দ নিশ্চয় খারাপ হবেনা।তুমি যা করেছো ভেবে চিন্তেই করেছো আমি জানি।”
আরিয়ান কোন উওর দেয়না।সজীব খান আবার বলে,
—“আজকে কি আসবে এই বাসায়?”
—“মায়াতো একটু অসুস্থ মামা।কাল সিঁড়ি থেকে পরে গিয়েছিলো।তবুও আমি আসার চেষ্টা করবো।”
—“আচ্ছা ঠিকাছে।রাখছি তাহলে?
—“আল্লাহ হাফেজ।”
ফোন রেখে ঘড়ির দিকে তাকায় আরিয়ান।দশটা বেজে গেছে।
রুমে যেতেই দেখে মায়া চোখ খুলেই শুয়ে আছে।আরিয়ান এগিয়ে গিয়ে ফোনটা বিছানায় রাখলো।
মায়া একহাতে ভর দিয়ে উঠে বসলো।
—“ইতিকে একটু ডেকে দিবেন?আমি চেন্জ করবো।একা তো পারবোনা।”
—“চেন্জ করবে?ব্যান্ডেজ তো খুলতে হবে তাহলে।ব্যাথা করছে হাতে এখনো?নয়তো ব্যাগটা খুলে দেই”
—“অতো ব্যাথা নেই।সমস্যা হবেনা।”
আরিয়ান পাশে বসে খুব যত্ন করে হাতের বাঁধা ব্যাগটা খুলে রাখে।যেটা দিয়ে গলার সাথে এটাচ্ করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিলো হাতটা।একটা বালিশ এনে কোলে রেখে তার উপর মায়ার ব্যান্ডেজ করা হাতটা রাখে।
।।
ইতির সাহায্য বহুকষ্টে জামা বদলে নেয় মায়া।
ব্রেক-ফাস্ট শেষে আবারো রুমেই এসে বসেছে মায়া।আরিয়ান অফিসের জন্য রেডি হচ্ছে।মুখ লটকিয়ে বসে আছে সে।
মায়ার এমন চেহারা দেখে আরিয়ান বলে,
—“কি হয়েছে?শরীর খারাপ লাগছে?”
মায়া কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে,
—“আমাকে আপনার সাথে অফিসে নিয়ে যাবেন?”
~চলবে~