কাঠগোলাপ🍁
তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)
পর্ব দশ
🍁
রাহির বাড়ির পরিবেশ থমথমে হয়ে আছে,রাহির পাশে তার বাবা রুবেল অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছেন..আর তার সামনের সোফাতে ধ্রুভ পায়ের উপর পা তুলে নির্বিঘ্নে বসে আছে।।
সামনের ব্যক্তিটিকে দেখে আর তার কথা শুনে রুবেলের চোখগুলো আলুর মতোন হয়ে আছে আর রাহি পায়ের নখ দিয়ে মেঝে খুটাচ্ছে..সে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে,কি করবে না কি বুঝাবে একে(ধ্রুভকে) কিছুই বুঝছে না।।
“মানে কি??তুমি আমার মেয়েকে বিয়ে করতে চাও??আবার এই তিনদিনের ভেতর আবার এই তিনদিন আমার বাড়িতে থাকতে চাও??মজা করছো আমার সাথে??” রুবেল ক্রুদ্ধ হয়ে বললো।।
“আপনার বাসায় সমস্যা হলে আমার বাসায় চলেন??সেখান থেকে না হয় বিয়েটা হবে??” ধ্রুভ ভাবলেশহীন উত্তর দিলো মাথার চুলগুলো উপরে তুলে।।
“মানে কি??আমি আমার মেয়েকে তুলে দিব অজানা অচেনা ছেলের সাথে?” রুবেল বললো।।
“আমি অচেনা অজানা নই!!আমি মীরাকে আগে থেকে চিনি!!আর মীরাকে বিয়ে করতে চাই সেটা ওর সাথে থেকেই সেটা যেখানেই হোক না,আমি ওর সাথেই থাকবো!!” ধ্রুভের ক্লিয়ার উত্তর।।
“মীরা??মীরাটা কে আবার!!” রুবেল হকচকিয়ে জিজ্ঞেস করলো।।
“বাবা আমি আমি!!” রাহি আস্তে আস্তে উত্তর দিলো।।
“কি মিনমিন করছিস তুই?” রাহিকে জিজ্ঞেস করছে রুবেল।।
“কিছু না বাবা তুমি চলো গিয়ে খেয়ে নাও,এই বিষয়ে পরে কথা বলা যেতে পারে!” রাহি নিঃশ্বাস ফেলে বললো।।
“মানে কি??এখানে কি তামাশা চলছে??এই এক কোথা থেকে এসে বিয়ে করবে বলছে,সেটা আবার আমার বাড়িতে আমার সামনে!!তিনদিনের মধ্যে বিয়ে??আর এই ছেলে নাকি বিয়ে করা অব্দি এখানেই থাকবে??” রুবেল একটু জোরে কথা বললো।।
“বাবা!!” অসহায় কন্ঠে বললো রাহি।।
রুবেল কখনো রাহির সাথে জোর গলায় কথা বলে নি,আজ এইভাবে চিল্লিয়ে বলাতে সে নিজেও গিল্ট ফিল করছে..তার মেয়ে তার জান,এরকম উড়ে আসা জুড়ে বসা লোকের সাথে ত নিজের পুতুলের তিনি বিয়ে দিতে পারেন না।।
“আচ্ছা?আপনি আমার মীরার উপর চিল্লাচ্ছেন কেন?” ধ্রুভ ক্রুদ্ধ চোখে জিজ্ঞেস করলো।।
রাহি বড়বড় চোখ করে ওর দিকে তাকাচ্ছে..তার বাবা তার উপর চিল্লিয়ে কথা বলবে না ত সে বলবে??অবশ্যও সেও চিল্লিয়ে কথা বলেছে আজকে।।
“এই ছেলে এই!!আমার মেয়ের সাথে আমি চিল্লিয়ে কথা বলি আর মেরে কথস বলি তুমি বলার কে?” রুবেল রেগে বললো।।
“আমার মীরার সাথে আমি কাওকে চিল্লিয়ে কথস বলতে দিব না!!আর আমি আপনার এখন গেস্ট+হবু জামাই!!” ধ্রুভ ঘাড় কাত করে বললো।।
“ফর গড সেক বলবি মীরাটা কে এখানে??আমি তুই আর এই লম্বু ছাড়া এখানে ত কেও নেয়,ত ও কাকে মীরা ডাকে??” রুবেল মাথায় হাত দিয়ে নিজের বললো।।
“প্লিজ তোমরা দুজন চুপ করো!!বাবা?তোমার ঘরে চলো আগে!!” রাহি ওর বাবার হাত ধরে ওর রুমে নিয়ে যাচ্ছে,এদিকে রাহির হাত ধরে টান দিলো ধ্রুভ..রাহি অবাক আর ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে যে তার বাবার সামনে এই ছেলে হাত ধরছে,রুবেল ও বিস্ময়ের চোখে তাকাচ্ছে জাস্ট রাহির জন্য কিছু বলতে পারছে না।।
“এই ছেলে এই!!তুমি আমার মেয়ের হাত ধরো কোন সাহসে??ছাড়ো এখুনি ছাড়ো!” রুবেল এই বলে ধ্রুভের হাত সরাতে লাগলো,ধ্রুভের হাত তিনি সরাতে পারলেন না।।
“আমি আমার মীরার হাত ধরেছি!! কারো পারমিশনের এখানে আমার প্রয়োজন নেয় আমার??” ধ্রুভ স্থির দৃষ্টিতে জবাব দিলো রাহির দিকে।।
এদিকে বেচারী রাহি পরেছে দোটানায়..না তার বাবাকে কিছু বলতে পারছে না এই মীরার আশিককে..মনে হচ্ছে দুইজন দড়ি ধরে টানছে আর ঝুলন্ত হয়ে ঝুলে আছে রাহি।।
“আবার মীরা বলো!!” রুবেল বলে তেড়ে৷ এগিয়ে আসলে,রাহি তাকে থামায়..তাড়াহুড়ো তার বাবাকে তার রুমে নিয়ে যায়,সেখানে তার বাবাকে রুমে থাকতে বলে..সে এসে সব বুঝাবে।।
রাহি তার বাবাকে তার রুমে রেখে এসে ড্রয়িং রুমে আসছে..দেখলো ধ্রুভ কাকে কল করে তার ড্রেস,সু,বডি স্প্রে,মেডিসিন যা লাগে যাবতীয় আধাঘন্টার মাঝে নিয়ে আসতে বললো..কথা বলা শেষে পিছন ফিরে তাকালো,দেখলো সে রাহি দাড়িয়ে আছে,ধীর পায়ে রাহির দিকে এগোচ্ছে সে..তার প্রতিটা ধাপ রাহির বুকের ভেতর ভয়ের তবলা মনে হচ্ছে কেও বাজাচ্ছে।।
“মীরা?” ধ্রুভ এসে হিসহিসিয়ে রাহির চুল কানে গুজে দিয়ে বললো।।
“উম?” রাহির মনে হচ্ছে গলায় আটকে গেছে ধ্রুভের এমন কাছে আসাতে।।
“আমার থেকে তোমাকে কেও আলাদা করলে তাকে আমি জ্যান্ত রাখবো না!!” রাহির কানে ফিসফিস করে বললো ধ্রুভ,রাহির জান মনে হচ্ছে এখুনি বেরিয়ে যাবে..কথাটা যে তার বাবাকে মিন করে বুঝালো তাতে কোন সন্দেহ নেয়..বাবার কিছু হয়ে যাবে এই কথা ভাবতেই রুহ টা কেপে উঠছে তার।।
“হেই মীরা ডোন্ট স্কেয়ার্ড!!তুমি আমার থাকলে,আমি কাওকে কিছু করবো না কিন্তু কেও তোমার থেকে আমাকে সরালে তাকে আমি ঠিকও রাখবো না!!” ধ্রুভ চোখমুখ শক্ত করে বললো।।
ফ্ল্যাশব্যাক,
রাহি যখন ভাবছিলো ধ্রুভের কথার মিন কি কি হতে পারে তখন ধ্রুভ রাহিকে নিজের কোলে বসিয়ে দিলো তার দিকে ঘুরিয়ে,তারপর রাহির ডান গালের কালো কুচকুচে তিলের দিকে চেয়ে রইলো,এমন চাহনিতে রাহির প্রচন্ডভাবে অস্বস্তিকর লাগছিলো..উঠতে গেলে ধ্রুভ তার দিকে কটমট করে তাকায়,রাহির বুকের ভেতরটা দপ করে নিভে গেলো..অন্তত এখান থেকে বের হতে না পারলে সে কিছুই করতে পারবে না তার কথা শুনা ছাড়া।।
ধ্রুভ তার বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে রাহির কুচকুচে কালো তিলটার উপর একটু ছুয়ে দিলো,রাহির গায়ের পশম দাড়িয়ে গেলো এমন ছোয়াতে..ধ্রুভ টুপ করে রাহির ওই কালো কুচকুচে তিলের উপরটা ছুয়ে দিলো ঠোট দিয়ে,শুষে নিতে লাগলো রাহির তিলটা..ধ্রুভের এমন বিহেভিয়ার রাহি একদম রোবট হয়ে গেছে,চোখের জল জমে গিয়ে যখন ধ্রুভের হাতে পরলো তখন ধ্রুভ তার দিকে তাকায়।।
“ম্যারি মি ইন থ্রি ডেইজ!!” ধ্রুভ চোয়াল শক্ত করে বললো।।
রাহির অবাক হয়ে চেয়ে রয়েছে,তার মাথাতে ঢুকছে না এই লোক কি বলছে..বিয়ে করতে হবে আর সেটা আবার তিন দিনের মাঝে??।।
“এইভাবে কিভাবে??” রাহি অনেক কষ্টে বললো।।
“আই ডোন্ট নো!!তুমি রাজি হও?তুমি এখন বাসায় গেলে আমি সেখানে যাবো,সেখানেই তিনদিন থাকবো আর বিয়ে করে সেখান থেকে আসবো!!” ধ্রুভ বললো।।
রাহির সব কথা মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে,তিনদিন সে তার বাড়িতে থাকবে??বাবাকে কি বলবে??এএই কার পাল্লায় আল্লাহ তাকে ফেললো।।
“আর যদি সেটা না শুনো,ভুলে যাও বাড়ি যাওয়ার কথা?সেটা আর তোমার এই জনমে হবে না মীরা?” ধ্রুভ জানালো
ধ্রুভ কথা বলার সময় একটা বিড়াল খুব মেও মেও করছিলো,যখনি বিড়ালটা ম্যাও ম্যাও করছিলো ধ্রুভ চোখমুখ কুচকাচ্ছিলো,শেষে কথাটুকু বলে বিড়াল কোথায় ছিলো তাকে টেনে বের করে,এক লাথি দিয়ে বাহির ফেললো..রাহি ভয়ে এক প্রকার মৃদু চিৎকার দিয়েছে,বিড়ালটাও লাথি খেয়ে অনেক জোরে আর্তনাদ করেছিলো,রাহির চিৎকার শুনে ধ্রুভ তার কাছে তড়িৎ গতিতে ফিরে আসলো।।
“তোমার আমার মাঝে কাওকে আসতে দিবো না আমি!!দেখছিলে না কত ডিস্টার্ব করছিলো এওই ব্লাডি বিচ ক্যাট টা,এইজন্য মেরেছি!!তোমাকে ত ভালোবাসতে চায়,যে ডিস্টার্ব করবে তাকে আমি সরিয়ে ফেলবো!!” ধ্রুভ হিসহিসিয়ে বললো।।
রাহি ভয়ে তার দিকে তাকাতে পারছে না,ধ্রুভ তার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,
“সো হোয়াটস ইউর ডিসিশন মীরা?”
“যা বলবেন তাই হবে!!আমাকে বাড়ি দিয়ে আসুন!!” রাহি উত্তর দিলো কারন এই মুহুর্তে তাকে মানা ছাড়া আর কোন উপায় নেয়,বের হতে হবে এখান থেকে আগে।।
“দ্যাটস মাই মীরা!!” ধ্রুভ মুচকি হেসে রাহির কপালে চুমু দিয়ে তার হাত ধরে টানতে টানতে গাড়িতে বসিয়ে দিলো।।
বর্তমান,
কলিংবেলের আওয়াজে রাহির ধ্যান ভাঙলো,ধ্রুভ এখনো এখনো তার হাত ধরে আছে..রাহি ঝট করে সরে গেলো,ধ্রুভ তাকালো তার দিকে।।
“কলিংবেল বাজছে দেখি কে এসেছে” রাহি আমতা আমতা করে বললো।।
“স্টপ!!দ্যাট উইল বি মাই ম্যান!!দে ব্রিং মাই থিংস!!তোমাকে আমার সামনে ছাড়া আর কোন ছেলের সামনে যাওয়ার পারমিশন দেয় নি আমি?শুধু আমি ছাড়া আর কোন ছেলের সামনে চোখ তুলে তাকাবে না” ধ্রুভ রাহিকে থামিয়ে দিয়ে কথা গুলো বললো।।
রাহিকে পর্দার আড়াল করে, দরজা খুলে ধ্রুভ তার লোকের কাছ থেকে তার জিনিসগুলো নিলো..তিনটা বড় বড় ব্যাগ,কি আছে এতে কে জানে??
“ইশ চাহাত কো তুম মাজাক না সামঝো”
“তুমাহরে ইস্ক অর নাশে মে কিতনা ডুবে হুয়ে হাম,বাস ইতনাহি মানলো”
ধ্রুভ রাহির কাছে এসে তাকে দেয়ালে দিকে ধরে,ঠান্ডা গলায় বললো রাহির থুতনী উচু করে ধরে।।
চলবে🍁
গঠনমূলক মন্তব্য করুন,রেসপন্স করলে আমি অনেক খুশি হই..তখন লিখার আগ্রহ আরো বেড়ে যায়,আর হিন্দি শায়েরী আমার লিখা কেও এখানেও আবার কপিরাইটের মামলা দিয়েন না, ত্রুটি ক্ষমার নজরে দেখবেন।।