সুখ নীড় পর্ব-২৫

0
279

#সুখ_নীড়
#পর্ব_২৫

জয়ীতার রিপোর্ট হাতে হসপিটালের এ মাথা ও মাথা দৌড়াচ্ছে তুহিন। জয়ীতার এখনো জ্ঞান ফেরেনি। ডাক্তার বলেছে খুব তাড়াতাড়ি তার সিজার করতে হবে। না হলে বড়ো কোনো বিপদ ঘটে যেতে পারে। জয়ীতার বেশ ব্লিডিংও হয়েছে। তাই ব্লাড ডোনারও রেডি করতে হবে।

আজ ভোরবেলা জয়ীতার চিৎকারে কাকলির ঘুম ভেঙে যায়। সে তার ছোট মাথায় যতটুকু বুদ্ধি কুলোয় ততটুকু দিয়ে জয়ীতাকে নানাভাবে সুস্থ করার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। ওই অস্পষ্ট আলোতেই দৌড়ে যায় বাড়িওয়ালার বাসায়। সামনে কয়েকটা ফাঁকা প্লট রেখেই বাড়িওয়ালার বিল্ডিং। সেখানে দোতলায় থাকেন বাড়িওয়ালা। তিনি মাঝবয়েসী এক ভদ্রলোক। পল্লব তাকে খুব সম্মান করে। জয়ীতার এমন বিপদের কথা শুনে সে ছুটে চলে আসে। দ্রুত সে জয়ীতাকে এই হাসপাতালে নিয়ে আসে।

বেলা দশটার দিকে তুহিন অফিসের জরুরী একটা ব্যাপারে কথা বলার জন্য বারবার পল্লবের নাম্বারে কল করে না পেয়ে বাধ্য হয়ে জয়ীকে কল দেয়। জয়ীর ফোন রিসিভ করে কাকলি। এতক্ষণ সে ফোনের লক খুলতে না পারায় জয়ীতার মায়ের কাছেও কল দিতে পারেনি। জয়ীর ফোনে কল আসতেই সে তুহিনকে জয়ীতার কোনো আত্মীয় মনে করে কাঁদোকাঁদো হয়ে সবকিছু বলতে থাকে।

তুহিন কাকলির সাথে কথা বলে কোনোকিছু ঠিকঠাক বুঝতে না পেরে কাছে বড়ো কেউ থাকলে তাকে ফোন দিতে বলে। কাকলি বাড়িওয়ালার কাছে ফোন ধরিয়ে দিলে সে সবকিছু খুলে বলে জয়ীতার ব্যাপারে। তুহিন সবকিছু জেনে খুব ঘাবড়ে যায়। দ্রুত ছুটে যায় সাভারে। সেখানে পৌঁছাতে তার ঘণ্টা দুই লেগে যায়। বাড়িওয়ালা ভদ্রলোকের কাছে তুহিন পল্লবের খোঁজখবর জিজ্ঞেস করে। কিন্তু উনি নিজেই জানে না সেখানে সে তুহিনকে কী করে জানাবে পল্লবের খোঁজ। উল্টো এতক্ষণের জয়ীতার কোনো আত্মীয় দেখে সে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।

জয়ীতার যে অবস্থা তাতে সে নিজেই ভীষণভাবে ভয় পেয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় কী সিদ্ধান্ত নেবেন উনি নিজেও বুঝতে পারছিলেন না। তাছাড়া পল্লবকে ফোন দিয়ে পাওয়া যাচ্ছে না। আর জয়ীর আর কোনো আত্মীয় স্বজনের নাম্বারও তার কাছে বা কাকলির কাছে, কারো কাছেই নেই। তুহিনকে পেয়ে সব দায়িত্ব তুহিনের কাছে বুঝিয়ে দিয়ে হাজার সেখান থেকে চলে আসেন।

তুহিনইবা এই মুহূর্তে কী করবে? সে চোখে মুখে অন্ধকার দেখছে। এমন একটা বিপদের মুহূর্তে পল্লবের নিখোঁজ হওয়ার কোনো অর্থই সে উদ্ধার করতে পারছে না। কতটা কেয়ারলেস হলে এই অবস্থায় স্ত্রীকে রেখে নিজে গায়েব হয়। এই মুহূর্তে সে কার কাছে সাহায্য চাইবে কিছুই বুঝতে পারছে না। এক ফাঁকে কাকলিকে নিয়ে বাসায় যেয়ে জয়ীর মেডিকেল চেকআপের সব কাগজপত্র নিয়ে এলো।

জয়ীর ব্লাড গ্রুপ জানতে পেরে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। তার আর জয়ীতার ব্লাড গ্রুপ একই। ডাক্তার যখন এসে বলল জয়ীতাকে এমার্জেন্সি সিজার রুমে নিতে হবে তখন তুহিন কী সিদ্ধান্ত নেবে কিছুই বুঝতে পারছে না। একদিকে প্রিম্যাচিউর বেবি তার উপর জয়ীতার অবস্থাও ভাল না। বারবার পল্লবকে ফোন দিয়ে না পেয়ে শেষে সিদ্ধান্ত নিলো পল্লবের মা মানে তার খালা সাজেদা চৌধুরীকে ফোন দিবে। আবার পরক্ষনেই নিজের মত বদলাল। সে জানে সাজেদা চৌধুরী কতটা নির্দয় স্বভাবের মানুষ। কে জানে শেষে হিতে-বিপরীত না হয়ে যায়। জয়ী এবং জয়ীর বাচ্চার সাথে যদি খারাপ কিছু করে বসে তখন সে কী জবাব দেবে পল্লবের কাছে?
তারপর ভাবল তার ভাই শাহীনকে ফোন দিবে কিন্তু সেটাও সে করল না কারণ কিছুদিন ধরে শাহীন ভীষণ ক্ষ্যাপা পল্লবের উপরে। গার্মেন্টসের কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে পল্লবের সাথে আর তার সাথে বেশ ঝামেলা হচ্ছিল এটা তুহিন নিজেও জানে। শেষে দেখা যাবে তার ভাই সাহায্য করার পরিবর্তে তাকেই বকাবকি শুরু করবে এসব ঝামেলা ঘাড়ে নেওয়ার জন্য।

পরে সিদ্ধান্ত নিলো যা করার তাকে নিজেকেই করতে হবে। কাউকে জানাতে যাবে না। যা আছে ভাগ্যে। দেখা যাক! ভাগ্যই তাকে এখানে ঠেলে নিয়ে এসেছে। না হলে সকালে সে জয়ীতাকে ফোন করতেই বা যাবে কেন আর এখানে আসবেই বা কেন?

ডাক্তার এসে বলল, প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। রোগীর অবস্থা ভীষণ ক্রিটিকাল। মা এবং বাচ্চা দু’জনের জীবন সংকটাপন্ন! তাই যা করার দ্রুত করতে হবে। তুহিন চারদিকে অন্ধকার দেখছে। কী করবে সে কিছুই বুঝতে পারছে না। কাকে খবর দিবে আর কাকে দিবে না! এই মুহূর্তে জয়ীতার আপনজন দরকার। কারণ বন্ড পেপারে সাইন করতে হবে। তাছাড়া কাউন্টারেও টাকা জমা দিয়ে আসতে হবে।

তুহিন আগে পিছে কিছু আর চিন্তা না করে ডাক্তারকে বলল, যা করার তাই করতে। সে টাকা জমা দিয়ে আসছে এখনই।

হঠাৎ একজন নার্স এসে বলল, আপনিই তো পেশেন্টের হাজব্যান্ড? এখানে একটা সাইন করতে হবে। আপনার জন্যই এত অপেক্ষা। এত কেয়ারলেস কী করে হন বুঝি না। পেশেন্টের সিচুয়েশন খুব বেশি ভালো না। দ্রুত সিগনেচার করেন। সময় নেই আমাদের হাতে।

তুহিন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। কোনো সমস্যা হবে ভেবে নার্সের কাছে আর সত্যমিথ্যা কিছু বলতে না যেয়ে মাথা ঝুলিয়ে হ্যা সম্মতি দিলো।

নার্স ফাইল এগিয়ে দিতে দিতে বলল, যে লোকটা এই পেশেন্টকে নিয়ে এসেছেন উনি সেই সময়ে অনুমতি যদি দিতেন তাহলে রোগীর অবস্থা এত ক্রিটিকাল হতো না। প্রচুর ব্লিডিং হচ্ছে। আপনি আসতে দেরি করার কারণেই পেশেন্টের এই অবস্থা। দ্রুত এখানে সিগ্নেচার করুন। আর ব্লাড দেয়ার জন্য দোতলায় ২০৫ নাম্বার রুমে চলে যান। কুইক।

নার্স চলে যাচ্ছিল তখন তুহিন বলল, সিস্টার! জয়ীতা আর বাচ্চা বাঁচবে তো?

– কিছুই বলতে পারছি না। আল্লাহকে ডাকুন। ঘাবড়াবেন না। আল্লাহ ভরসা।

সাজেদা চৌধুরী আজ নিজে চৈতীকে নিয়ে ডাক্তার নুরুন্নাহারের ক্লিনিকে এসেছেন। ডাক্তার নুরুন্নাহার শহরের একজন সেরা গাইনি ডাক্তার। চৈতী ইনার রেগুলার পেশেন্ট।
বছরের পর বছর পেরিয়ে যাচ্ছে অথচ চৈতী দ্বিতীয়বার মা হতে পারছে না। কয়েকবার ইণ্ডিয়ায় যাবার প্লান করলেও কল্লোলের ব্যস্ততার কারণে যাওয়া হয় নি।

সাজেদা চৌধুরীর একজন নাতী চাই। একটা ছেলে চাই যে তার বংশকে সামনে নিয়ে যাবে, তার সম্পত্তির ওয়ারিশ হবে। কল্লোলের মেয়েটাই এখন তার একমাত্র ভরসা। কিন্তু সে তো ক’দিন বাদে অন্যের ঘরে চলে যাবে। তাই তার একটা ছেলে যে করেই হোক চাই।

আজ নিজে চৈতীকে নিয়ে এসেছে। চৈতীর ভীষণ ভয় হচ্ছে। তার শাশুড়িকে তার একফোঁটাও বিশ্বাস নেই। সে আবার মা হতে না পারলে যদি নাতী পাওয়ার জন্য তার ছেলেকে আবার বিয়ে করায়! কথায় কথায় এমন সে প্রায়ই বলে। আসার পথেও গাড়িতে বসে বলেছে যে করে হোক তার বংশরক্ষার জন্য একটা ছেলে চাই। চৈতীর পক্ষে সম্ভব না হলে সে কল্লোলকে আবার বিয়ে করাবে। চৈতী মনে মনে হাজারটা গালি দিয়ে শাপ শাপান্ত করলেও মুখে কিছু বলার ক্ষমতা নেই। এমনিতেই তার শাশুড়ি এখন আহত বাঘের মতো। পল্লব চলে যাবার পর থেকে উনি কেমন যেন অস্বাভাবিক আচরণ করে সবার সাথে। আসলে জয়ীর কাছে হেরে যাওয়াটা সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।

ডাক্তার নুরুন্নাহার অনেক অভিজ্ঞ ডাক্তার। হাত যশ খুব ভালো। পল্লব আর কল্লোলের জন্মও উনার হাতেই। বয়সে সাজেদা চৌধুরীর থেকে কিছু বেশিই হবেন ।

চৈতীর রেগুলার চেকআপ শেষে ওষুধ পত্র বুঝিয়ে দিলে সাজেদা চৌধুরী তাকে ইশারায় বাইরে অপেক্ষা করতে বলেন। ভয়ে ভয়ে চৈতী বাইরে চলে যায়।

ডাক্তারকে সে বলল, এবার বলুন, আসলে কাহিনী কী? আমার ছেলের বৌ কি তার মা হবার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে? যদি এমন হয় আল্লাহর কসম! আমি কল্লোলকে আবার বিয়ে করাব। আমার বংশ তো রক্ষা করতে হবে! আমার একটা নাতী চাই যেকোনো মূল্যে।

– দেখুন, সবকিছু চাইলেই এ জগতে মেলে না। আপনি শান্ত হউন। আমি আপনাকে সবকিছু খুলে বলি। তারপর সিদ্ধান্ত নিবেন কী করবেন। আমি এতদিন ধরে ব্যাপারটা চাপিয়ে এসেছি আপনার বউয়ের কাছে।

সাজেদা চৌধুরীর চোখ লাল হয়ে ওঠে এ কথা শুনে। মনে মনে ভাবলেন তার ধারণাই সত্যি। তার বউ মা হবার যোগ্যতা হারিয়েছে।

– কী হয়েছে? কী লুকিয়েছেন আপনি? আমার কাছে সবকিছু ক্লিয়ার করুন।

– আসলে সমস্যা চৈতীর চাইতে আপনার ছেলে কল্লোলেরই বেশী। সে তো মেডিসিনও নিতে চায় না। এখানে আসেও না রেগুলার চেকআপের জন্য। সেদিনও কিছু টেস্ট দিয়ে বললাম নেক্সট ভিজিটে রিপোর্টসহ আসতে। অথচ দেখেন কোনো খোঁজখবর নেই। তার একটাই কথা তার কোনো সমস্যা নেই। আমি চৈতীকে এসব ব্যাপারে কিছুই জানাইনি যাতে সে এটা নিয়ে কল্লোলকে কোনোভাবে খোঁচা দিতে না পারে। কয়দিন আগেই এমন একটা কেইসে আমার এক পেশেন্টের হাসবেন্ড সুইসাইড করেছে। আসলে পুরুষত্ব নিয়ে কথা বললে সেই পুরুষ নিজেকে কতটা ইনসিকিউরড ফিল কতে সেটা অবশ্যই আপনি বুঝবেন। উনি বউয়ের কাছে প্রতিনিয়ত খোঁচা খেতে খেতে এবং আশেপাশের আপনজনের কথাগুলোতে খুব কষ্ট পেয়ে সহ্য করতে না পেরে সুইসাইডের রাস্তা বাছে নিয়েছে।
জানেন, চোখের সামনে আজও ছেলেটার চেহারা ভাসে। কিছুদিন ধরে রাতে ঘুমাতে পারতাম না। চোখ বন্ধ করলেই ওকে দেখতাম যেন। নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয় সেই থেকে। তাই কল্লোলের ব্যাপারটা আমি চৈতীকে জানানোর ব্যাপারটাও আমি ভালো মনে করিনি। আপনি এসে ভালোই হলো। আপনার কাছে সত্যিটা আমি বলতে পেরে নিজেকে হালকা বোধ করছি কিছুটা ।

ডাক্তার নুরুন্নাহারের কাছ থেকে এমন উত্তর আশা করেননি সাজেদা চৌধুরী। সাজেদা চৌধুরীর কাছে এসব অবাস্তব গল্প মনে হচ্ছে।
ভীষণ ক্ষেপে গিয়ে ডাক্তারকে বলল,

এসব মনগড়া কাহিনী বানাতে লজ্জা লাগে না । চৈতীকে বাঁচানোর জন্য এসব কথা বলছেন, না?

ডাক্তার নুরুন্নাহারও এবার ক্ষেপে গেলেন।

– আপনি কি আমাকে খুব সস্তা ভাবছেন? আমি কেন কোনো মনগড়া কাহিনী আপনাকে বলতে যাব? আমার কী ঠেকা পড়েছে? আপনার সাথে আমার অনেক দিনের পরিচয় তাই আমি ব্যাপারটা আপনাকে ভালো করে বলেছি! আপনার মন চাইলে বিশ্বাস করবেন না চাইলে নাই। অন্য ডাক্তার দেখিয়ে কনফার্ম করতে পারেন।আমার কাছে আর আসবেন না, প্লিজ। আমার পেশেন্ট বসে আছে। এবার আসতে পারেন। বলে বাইরের দিকের দরজার দিকে হাত দিয়ে ইশারা করলেন উনি।

ডাক্তার নুরুন্নাহারের এমন একগুঁয়েমি দেখে সাজেদা চৌধুরী বুঝলেন যে এটা হয়ত আসলেই সত্যি। তাছাড়া ডাক্তার নুরুন্নাহার বিক্রি হয়ে যাবার মতো কোনো মহিলাও নয়।

– স্যরি। আচ্ছা, বুঝলাম আমার ছেলের সমস্যা আছে তাহলে এর আগে ওর মেয়ে হলো কি করে? এটা বলুন।

– এটাই একটা ভ্রান্ত ধারণা। একটা ছেলে বা একটা মেয়ে হলেই আমার মনে করি তার নেক্সট টাইম বাচ্চা হতে আর কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আসলে সেটা না। সমস্যা আছে, প্রথম সন্তান হওয়ার পরেও অনেক সময় দ্বিতীয় সন্তান হওয়া নিয়ে অনেক ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়। যেটা হচ্ছে কল্লোল এবং চৈতীর ক্ষেত্রেও। দু’জনেরই ফার্টেলিটি পাওয়ার খুবই কম। আমি অনেকভাবে পরীক্ষা করেছি, ট্রিটমেন্ট দিচ্ছি। কিন্তু কল্লোলের ফার্টেইলিটি কমছেই দিন দিন। চৈতী মোটামুটি ওকে। কল্লোলেরই বেইসকলি মেজর প্রবলেম। তাকে মানসিকভাবে, শারিরীকভাবে রিলাক্সে থাকতে হবে। প্রেসার একদমই নেওয়া যাবে না। ড্রিংকসের নেশা থাকলে সেটাকে ছাড়তে হবে। আমার জানামতে কল্লোল ড্রিংকস করে প্রচুর। তাছাড়া প্রপার টাইমে মেডিসিনটা পর্যন্ত খায় না। যাই হোক এসব বলে আর কী লাভ! আপনি যদি বংশরক্ষা করতে চান সেক্ষেত্রে চৈতীর না কল্লোলকেই ট্রিটমেন্ট করান।

সাজেদা চৌধুরীর মাথা কিছু সময়ের জন্য কাজ করা যেন বন্ধ করে দিয়েছে। সে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে ডাক্তারের দিকে।

– আমাদের সমাজে এক ভ্রান্ত ধারণা রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গিয়েছে যে বাচ্চা না হলেই সমস্যা মায়ের। বাবারও যে কোনো ভূমিকা রয়েছে এখানে সেটা কারো মাথায়ই আসে না। মনে-মনে ধরেই নেয় মায়েরই যত সমস্যা। তাহলে বংশ রক্ষার জন্য কি করা যায়? সহজ উপায়, ছেলেকে আবার বিয়ে করাও আর এরপর বিয়ের পর বিয়ে করতেই থাকে। কিন্তু নাতী নাতনীর মুখও আর দেখা হয় না। যত্রতত্র এমন হাজারো উদাহরণ রয়েছে আমাদের সমাজের চারপাশে। কিন্তু আপনার কাছে আমি এটা আশা করিনি। আপনি একজন এডুকেটেড পারসন , আপনি কিছু না জেনে না বুঝে চৈতীর উপরে রাগ দেখাচ্ছেন।

যাই হোক আমার আর কিছু বলার নেই। আমি আমার মতো সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। যেহেতু আমার এখানে রেজাল্ট ভালো হয়নি আপনি বাংলাদেশে আরও অনেক ডাক্তার আছেন তাদেরকে দেখাতে পারেন। অথচ সবচাইতে বেস্ট হয় যে চাইলে দেশের বাইরে ট্রিটমেন্ট করাতে পারেন। হয়ত খুব দ্রুতই ভালো কোনো রেজাল্ট পেয়ে যাবেন।

ক্লিনিক থেকে বের হবার পরে সাজেদা চৌধুরীর মুখ যেন থুবরে পড়েছে। চৈতী ব্যাপারটা কিছু বুঝতে পারছে না। কিছু জিজ্ঞেস করবে সেই সাহসও নেই।
সারা রাস্তা গাড়িতে শাশুড়ি-বউয়ের একটা কথাও হলো না।

জয়ীতার একটা ফুটফুটে ছেলে হয়েছে। সে নিজেও কিছুটা বিপদমুক্ত। এখনো পুরোপুরিভাবে সেন্স ফেরেনি।
তবে তার বাচ্চা প্রিম্যাচিউর হবার কারণে বেশ সমস্যা হচ্ছে। বাচ্চার ওজন আড়াই কেজির চেয়ে কম ।
ছোট্ট ফুসফুস দু’টো বায়ুমণ্ডলের অক্সিজেন গ্রহণ করার মতো শক্তিশালী হয়ে ওঠেনি। দেহে নিজস্ব তাপ উৎপাদন প্রক্রিয়াও তৈরি হচ্ছে না। তাই তাকে ইনকিউবেটরে রাখা হয়েছে।

তুহিন একা একা হাসপাতালের করিডোর ধরে পায়চারি করছে। এতবড় একটা ধকল গেল অথচ এখনো এই পল্লবের ফেরার নামগন্ধ নেই। এই লোকটা এত কেয়ারলেস হবার কথা না। সে খানিকটা অবাক হলো। যার স্ত্রী এ রকম অবস্থায় তার তো এভাবে গায়েব হয়ে যাবার কথা না। তাছাড়া আজকে সে অফিসেও যায়নি। গতকাল রাত বারোটার দিকে অফিস থেকে বেরিয়ে গেছে এখন পর্যন্ত কোনো খোঁজ খবর নেই। কোনো বিপদ হলো না তো!

এদিকে তার ভাই শাহীন কয়েকবার কল দিয়েছে অফিসের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে আলোচনার জন্য।
তুহিন তার এক বন্ধু গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি এটা বলে কোনো রকম করে আজ কাটিয়ে দিয়েছে। কিন্তু পল্লবের ব্যাপারটা নিয়ে বেশ চিন্তায় পড়ে গেল।

এখান থেকে যাবে সেই উপায় পর্যন্ত নেই। জয়ীতা এবং তার বাচ্চাকে কার দায়িত্বে রেখে যাবে সেটাই মাথায় আসছে না।

ওয়েটিং রুমে যেয়ে কর্ণারের দিকে একটা খালি চেয়ার পেয়ে সেখানে বসল। বসে বসে ভাবছে পল্লবকে তার মা ধরে নিয়ে যায় নি তো! বা পল্লব নিজে থেকে মায়ের কাছে গেছে এমন কিছু হতে পারে।

এসব ভাবনায় মগ্ন অবস্থায় চোখ পড়ল নিউজ চ্যানেলে।

ব্রেকিং শিরোনামঃ তুরাগ নদীতে গাড়িসহ একটি অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার।
এটা পড়ে হঠাৎ বুকের মধ্যে ধক করে উঠে তুহিনের। পল্লবের আবার কিছু হয়নি তো!

সে দ্রুত বিস্তারিত খবর জানতে ফোন হাতে নিলো।

চলবে….

পর্ব-২৪

https://www.facebook.com/111576077291737/posts/492462262536448/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here