গল্প – বডিগার্ড থেকে বর
.
Part – 08
.
writer – #ArFin_SuMon (Mr. Romio)
.
.
ম্যাডামঃ- ওই সবাই চুপ কর।(তারপর ওই দিনের বিষয়টা সবাইকে বললো)
রুবিঃ- আমার বাবুটার এত বড় একটা বিপদ গেলো,আর তুই আমাকে একটুও জানালি না।
ম্যাডামঃ- তোরে জানিয়ে কি করবো। তুই কি ওরে সুস্থ করে দিতে পারতি নাকি।
মিরাঃ- ও না পারলেও আমি পারবো,আমি ওকে আর তোদের বডিগার্ডের কাজ করতে দিবো না।
কাননঃ- ওই চুপ,তোদের কে আগেও বলছি ও শুধুই আমার। আর কেউ যদি ডিস্টার্ব করিস তাহলে তোদের খবর আছে বলে দিলাম।
রনিঃ- কানন তুই এমন করছিস যে মনে হচ্ছে ও তোর হবু বর। আর যার জন্য এতকিছু করলো সে তো ফিরেও দেখে নাই।
কাননঃ- সেটা, ওর ব্যাপার।
.
এ মাইয়া গুলো প্রতিদিন বিরক্ত করেই চলছে।ওদের জন্য কোথাও শান্তি নাই। যেখানে যাই সেখানে ওদের জ্বালাত্বন করেই যাচ্ছে।
প্রায় ১ মাস পরে। ম্যাডাম আর কানন ক্লাসে গেলো। আমি বাইরে বসে আছি। ওদের জ্বালায় ক্লাসে থাকতে পারছি না। একদিন ক্লাসে থাকলে একদিন বাইরে থাকতে হয়।
গাড়িতে বসে ছিলাম। কেনো যেনো গাড়ি থেকে মাথা বের করে পিছনে তাকালাম তখনই দেখলাম।২ মাস আগে যে ছেলেদের মারছি ওরা আসছে।ওদের সাথে আরো অনেকে আসছে। গাড়িটা জোরে চালিয়ে সিঁড়ির সামনে নিয়ে গেলাম। দরজা খুলে রেখে তাড়াতাড়ি দৌঁড়ে এক তলায় ম্যাডাদের রুমে গেলাম। সবাই আমাকে দেখে তাকিয়ে আছে, দৌঁড়ে আসাতে হাঁপাচ্ছি তাই।
.
কাননঃ- কি হয়েছে রমিও এমন করছো কেনো?
আমিঃ- তাড়াতাড়ি চলেন,,,
কাননঃ- আরে কোথাও যাবো সেটা তো বলবে।
আমিঃ- এত সময় হাতে নেই।
.
ম্যাডাম আর কাননের হাত ধরে দৌঁড় দিলাম।ওদেরকে উপরে আসতে দেখে অন্য দিকে গিয়ে অন্য সিঁড়ি দিয়ে নেমে পড়লাম। তারপর গাড়িটা চালানো শুরু করলাম। ওরাও গাড়ি নিয়ে তাড়া করলো কিন্তু ধরতে পারে নাই। তাই এবার আর কোন বিপদ হলো না। ওনার উপর কেনো এত হামলা হচ্ছে সেটাই বুঝতে পারছি না। কি চায় ওরা। কিছুই তো বুঝলাম না।
বাড়িতে এসে দেখি আঙ্কেল এসেছে।
আমিঃ- আস্সালামু ওয়ালাইকুম আঙ্কেল।
আঙ্কেলঃ- ওয়ালাইকুম আস্সালাম,বাবা কেমন আছো?
আমিঃ- এইতো আঙ্কেল আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?
আঙ্কেলঃ- আমিও ভালো আছি,তা তোমার কাজ কেমন চলছে?
আমিঃ- জ্বি ভালো।
আঙ্কেলঃ- ভালো ভাবে করো। আর নিজের
খেয়াল রেখো।
আমিঃ- আঙ্কেল একটা কথা বলার ছিলো।
আঙ্কেলঃ- কি বলবা বলো।
আমিঃ- না,আঙ্কেল কিছু না।(কে হামলা করে ম্যাডামের উপর সেটা জানতে চাইছিলাম,এটা জানতে চেয়ে যদি পরে কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া বিষয়টা যদি সামনে চলে আসে। থাক বাবা কেঁচো খুঁজতে গিয়ে সাপ বের করার কোনে ইচ্ছা নাই।)
আঙ্কেলঃ- রমিও কি ভাবছো।
আমিঃ- কিছুনা আঙ্কেল।
আঙ্কেলঃ- তোমার দুই হাতে কাঁটার দাগ কেনো? আগে তো কোনদিন দেখি নাই।
আমিঃ- আঙ্কেল তেমন কিছু না,পড়ে গিয়ে কেঁটে গেছে।
আঙ্কেলঃ- তুমি আমাকে বোকা পাইছো,আমি দেখছি অনেকটা কেঁটেছে। এটা পড়ে গিয়ে হয়নি, কি হয়েছে বলো তো।
আমিঃ- আঙ্কেল কিছু না, ফ্রেশ হয়ে আসি আমি।
আঙ্কেলঃ- সত্যি করে বলো কি হয়েছে।
আন্টিঃ- আমি বলছি, কি হয়েছে।
আমিঃ- আন্টি প্লিজ….
আন্টিঃ- রমিও চুপ কর। আমাকে আজকে বলতে হবে।
আমিঃ- আন্টি…
আন্টিঃ- কোন কথা বলবা না রমিও। আমাকে বলতে দাও। (আন্টি পুরো বিষয়টা বলে দিলো) আর আজকেও যে হামলা করতে চেয়েছিলো রমিওর জন্য পারে নাই। ও দুজনকে নিয়ে পালিয়ে আসছে।
আমিঃ- আন্টি সবটাই যখন বলে দিলেন তাহলে এটা বলেন এসবের পিছনে কে আছে?
আঙ্কেলঃ- বাবা আমাদের চারদিকে অনেক শত্রু ওরা এসব করছে।
আমিঃ- আঙ্কেল আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।
আঙ্কেলঃ- হুম,যাও। আমি অপেক্ষা করছি।
আমিঃ- আঙ্কেল আপনারা খেয়ে নিন আমি খাবো না।
আঙ্কেলঃ- কেনো বাবা?
আমিঃ- আমার খেতে ইচ্ছে করছে না। আমি ঘুমাবো একটু। আপনারা খেয়ে নিন।
আঙ্কেলঃ- কি আর করা। তবে রাতে একসাথে খাবো।
আমিঃ- সেটা তখন দেখা যাবে।
.
রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে দিলাম সেই একটা ঘুম। ৬ টায় ঘুম থেকে উঠে। ফ্রেশ হয়ে একটু ঘুরাঘুরি করে বাসায় আসলাম।
.
আঙ্কেলঃ- রমিও এখানে এসো। একটু আড্ডা দিবো।
আমিঃ- আঙ্কেল আমি এখানে ঠিক আছি তো।
কাননঃ- আরে এসো তো।
আঙ্কেলঃ- বসো। একটা কথা বলছি শুনো। আমি জুলির বিয়ে দিয়ে দিবো।
আমিঃ- আঙ্কেল এটা কি বলেন। ম্যাডামের তো এখনো পড়ালেখা শেষ হয়নি। এখন বিয়ে দিয়ে দিলে ওনার ক্যারিয়ারের কি হবে?
আঙ্কেলঃ- ক্যারিয়ার পরে। আগে আমি আমার মেয়ের সুরক্ষা চাই। আমি আমার এক বন্ধুর ছেলের সাথে ওর বিয়ে ঠিক করছি। ও আমেরিকা থাকে। বিয়ের পরে জুলি কে নিয়ে যাবে আমেরিকায়। ওখানে আমার মেয়ে সুরক্ষিত থাকবে।
আন্টিঃ- ওরা কি জুলিকে বিয়ের পরে পড়াবে?
আঙ্কেলঃ- সেটা ওদের ব্যাপার। আমি এ মাসের মধ্যেই বিয়ে দিয়ে দিবো জুলির।
আন্টিঃ- তুমি যা ভালো বুঝবে তাই করো।
.
যাক বাবা আমাকে আর বডিগার্ডের চাকরি করতে হবে না। ম্যাডামের বিয়ে হয়ে গেলে বাড়িতে গিয়ে নাকে তেল দিয়ে ঘুমাবো।
.
কাননঃ- রমিও,আসবো?
আমিঃ- এসে তো পড়ছেন,আবার আসবো বলার দরকার কি?
কাননঃ- আমাদের তো লাইন পরিস্কার হয়ে গেলো।
আমিঃ- কিসের লাইন?
কাননঃ- জুলির পরে তো আমার সিরিয়াল, তাই বলছি আমাদের লাইন পরিস্কার হয়ে গেলো।
আমিঃ- ম্যাডামের পরে আপনার সিরিয়াল ঠিক আছে। তাতে আমাদের লাইন পরিস্কার হবে কেনো?
কাননঃ- আমাদের লাইন পরিস্কার হবে না কেনো।আমি তো তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবো না।
আমিঃ- কি?
কাননঃ- শুনো নাই,আবার বলছি আমি তোমাকে বিয়ে করবো।
আমিঃ- জীবনেও না।
কাননঃ- কেনো করবা না। আমার কোনদিক দিয়ে কমতি আছে।
আমিঃ- আমি আপনাকে কেনো বিয়ে করতে যাবো। তাছাড়া আপনার মতো প্রেত্নি কে বিয়ে করার কথা তো ভাবতেও পারি না।
কাননঃ- ওই রমিওওও। আমি প্রেত্নি?
আমিঃ- না,প্রেত্নির রানী।
কাননঃ- তোরে আমি দেখে নিবো রমিওওও।
আমিঃ- ভাগেন তো।
কাননঃ- দাঁড়া তোর খবর আছে,,
আমিঃ- কয়টার খবর? কোন চ্যানেল? সাংবাদ পড়বে কে? রিপোর্টার কে? ক্যামরা ম্যান কে?
কাননঃ- বিরক্তিকর ছেলে একটা।
.
রাগে হন হন করে চলে গেলো কানন। একটু লজ্জাও নাই মাইয়ার। এসে বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছে।আমি জীবনেও তো এ মাইয়ারে বিয়ে করবো না।আমি গরীবের সন্তান। গরীবের কোন মেয়েকে বিয়ে করবো সেটাই ভালো আমার জন্য। আমি বাবা এসব বড় লোকের মেয়ের পিছনে নেই। এমনিতে বিন্দাস আছি।
.
রাতে আঙ্কেল এসে ডেকে গেলো খেতে। ইচ্ছে না থাকার সত্তেও যেতে হলো। গিয়ে দেখি সবাই আমার জন্য বসে আছে। ম্যাডাম কেউ দেখতেছি।ওই দিন একসাথে বসে খাবার অপরাধে ঘুমাতে দিলো না সাথে ১২ টা থাপ্পড় দিলো। ভুলেও তো সবার সাথে বসে খাবো না। এমনিতে প্রতিদিন সবার সাথে খেতে হয় আঙ্কেল থাকে না আর ম্যাডাম নিচে আসবে না। তাই ম্যাডামের জন্য খাবার পাঠিয়ে দেওয়া হতো উপরে।
.
আঙ্কেলঃ- রমিও কি ভাবছো বসো?
আমিঃ- না আঙ্কেল আমি ঠিক আছি।
আঙ্কেলঃ- ঠিক আছো মানে কি? বসতে বলছি বসো।
আমিঃ- আঙ্কেল আমি বসবো না। আমার খাবারটা আমাকে দিয়ে দিন আমি সোফায় বসে খেয়ে নিই।
আঙ্কেলঃ- আমাদের সাথে বসতে কোন সমস্যা?
আমিঃ- আঙ্কেল সমস্যা কিছু না,এমনি তে ইচ্ছে করছে না।
আঙ্কেলঃ- আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি সোফায় বসো।
আমিঃ- হুম।
.
একটু পরে…
আঙ্কেলঃ- রমিও জুলির বিয়ের সব কিছুর দায়িত্ব কিন্তু তোমার।
আমিঃ- আঙ্কেল আমার মনে হয় না আমি পারবো কিছু করতে। আমাকে ছেড়ে দিন।
আন্টিঃ- রমিও তুমি পারবে। আমাদের বিশ্বাস তুমি সবটা সামলে নিতে পারবে।
আমিঃ- আমার কিন্তু তা মনে হয় না আন্টি। আমাকে মাফ করবেন।
আন্টিঃ- কোন কথা শুনতে চাই না তোমাকে সব কিছু করতে হবে।
আমিঃ- যদি কোন কিছু ভুল হয় তখন কিন্তু আমি দায়ী না।
আন্টিঃ- ঠিক আছে।
আমিঃ- তাহলে দায়িত্ব নিয়ে নিলাম,তবে একটা শর্ত আছে।
আন্টিঃ- আবার কি শর্ত?
আমিঃ- ম্যাডামের বিয়ের পর কিন্তু আমি চলে যাবো। ম্যাডামের বিয়ে হয়ে গেলে তো আমার আর কোন কাজ নেই এখানে।
আন্টিঃ- সেটা তখন দেখা যাবে।
আমিঃ- হুম,কিন্তু বিয়েটা কবে আঙ্কেল?
আঙ্কেলঃ- সোমবার।
আমিঃ- হাতে মাএ সময় দুই দিন। দুই দিনে এত কিছু করবো কি করে?
আঙ্কেলঃ- তোমার যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে করবে, যত টাকা লাগবে আমি দিবো তুমি শুধু আয়োজন করো।
আমিঃ- চেষ্টা করবো।
.
কথা বলতে বলতে খাওয়া শেষ করে ম্যাডামের দিকে তাকিয়ে দেখি চোঁখ দুটি বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। হাতের কাছে ফেলে আমাকে মনে হয় কাঁচা খেয়ে ফেলবে। কি মেয়েরে বাবা। বিয়ে কি আমি ঠিক করছি নাকি। আমি কি বলছি আঙ্কেল কে যে ম্যাডামকে বিয়ে দিয়ে দিতে। এসব তো ম্যাডামের বাবা মানে আঙ্কেল করছে ম্যাডামের জন্য তাহলে ওনি কেনো এমন সিংহীর মতো তাকিয়ে আছে। বিয়ে করার ইচ্ছে না থাকলে বলে দিতে পারছে না। ওই দিকে তাকিয়ে দেখি কানন চোখ দাঁত কেলাচ্ছে। এই মাইয়ার কোন কিছুই মাথায় ডুকে না। বড়ই আজিব এক জন্তু।
.
যতটুকু পেরেছি ততটুকু করছি। এর বাইরে কিছু করা সম্ভবনা। এত কম সময়ের মধ্যে যে এত কিছু করতে পেরেছি সেটাই বা কম কিসের।
যাক আর বডিগার্ডের কাজ করতে হবে না আজকে গায়ে হলুদ কালকে ম্যাডামের বিয়ে, আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে আর পারি না।
ম্যাডামকে হলুদ লাগাতে ব্যস্ত সবাই আর আমি আমার কাজ নিয়ে আছি। কিছুক্ষণ পর কানন সহ একদল রমনী আমার দিকে ঘাঁড়ের মতো তেড়ে আসছে। প্রথমে মনে হলো এমনি হলুদ ছুঁয়াছুঁয়ি করার জন্য দৌঁড়াচ্ছে পরক্ষনে খেয়াল করে দেখলাম রমনীদের নজর খারাপ। সবার নজর আমার উপর। তার মানে ওরা আমাকে হলুদ লাগাতে আসছে। দৌঁড়া রমিও দৌঁড়া। দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে গিয়ে খাটের নিচে লুকালাম। তবুও বাঁচতে পারলাম না। আন্টি আমাকে লুকাতে দেখে গিয়েছে। কানন জানতে চাওয়ার সাথে সাথে বলে দিছে।
.
.
চলবে……………………
।
।
(অনেকে রিকুয়েস্ট করেছিলেন বড় করে দিতে, এবার বড় করে দিলাম। কি জনগন এবার খুশি তো?)