আধারে_তুমি,৪৯,৫০ শেষ

0
413

#আধারে_তুমি,৪৯,৫০ শেষ
#লেখিকাঃ মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্বঃ ৪৯

সোহা উত্তর না দিয়ে মিটমিট করে হাসতে থাকে।
সকাল থেকে সোহা রেস্টের উপরেই থাকে। শান সোহাকে বিছানা থেকেই নামতে দিচ্ছে না। দুপুরে খাবার খাওয়ার পর সোহার সাথে সাথে শানও ঘুমিয়ে পড়ে। বিকেলে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে শান ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়। হোটেলের রুম থেকে বাইরের খুব সুন্দর একটা দৃশ্য দেখা যায় সেটাই দেখছিলো। দেখতে দেখতে অনুভব করলো সোহা এসে দাঁড়িয়েছে তার পাশে। শান রাগি চোখে তাকিয়ে বললো
” তোমাকে আমি বিছানা থেকে নামতে না করেছি না ? তুমি আবার নেমেছ ?” সোহা রেগে নাক ফুলিয়ে বললো
” অদ্ভুত তো ! সারাদিন বিছানায় বসে থাকবো নাকি আমি? একটু হাটতে পারবো না ? ডক্টর রেস্ট করতে বলেছে কিন্তু বেড রেস্ট তো আর করতে বলেনি! আপনি একা একাই এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আনন্দ করবেন আমি করবো না ?”
শান এক হাতে সোহার কোমড় পেঁচিয়ে নিজের সাথে ঘেঁষে দাড় করিয়ে রাখে। সোহা শানের অন্য হাত ধরে খোঁচাতে থাকে। শান কিছুক্ষণ লক্ষ করার পর শানের মনে হলো সোহা।কিছু বলতে চাইছে। শান ব্যালকনির রেলিঙ এ হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে দুই বলিষ্ঠ হাত জোড়া দিয়ে সোহার কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে টেনে সোহার এক কাধে হাত রেখে বললো
” আমার বউ কি বলতে চাইছে ?” সোহা ফট করে শানের চোখের দিকে তাকালো। সোহা শানের হাত ধরে পিটপিট করে তাকিয়ে জিজ্ঞেসু হয়ে বললো
” আচ্ছা আপনার পছন্দের ফুল কি কি ?”
শান ভেবে বললো
” তেমন তো স্পেশাল কোনো ফুল নেই তবে তোমার চুল থাকা বেলি ফুলের বাহারটা আমার সবচেয়ে বেশি প্রিয়। কিন্তু হঠাৎ এমন প্রশ্ন কেনো, মিসেস চৌধুরী ?” সোহা কথাটা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য ভাবার ভান করে বললো
” ‘মিসেস’ ওয়ার্ডটা থেকে ‘মিস’ ওয়ার্ডটা কিউট তাই না !” শান মুখ কুঁচকে তাকায় সোহার দিকে। রাগি গলায় বললো
” মিস ওয়ার্ড যখন এতো ভালোই লাগে তাহলে বিয়ের পিরিতে বসার কি দরকার কি ?”
সোহা ঠোঁট উল্টে বললো
” তখন তো দুটোই ভালো লাগতো এখন ‘মিস’ ই ভালো লাগে।” শান সোহাকে আলতো ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো নিজের থেকে তারপর বাইরের দিকে মুখ ফিরিয়ে গম্ভীর গলায় বললো
” তারমানে তোমার এই বিবাহ জীবন ভালো লাগছে না ? তুমি কি আমার উপর বিরক্ত ? শোনো বিরক্ত হও, রাগ হও বা ঘৃণা করো যাই করো না কেনো তুমি আমারই থাকবে। ছেড়ে যাওয়ার মতো দুঃস্বপ্ন দেখবে না আর দেখার চেষ্টাও করবে না। মাথায় থাকে যেনো।” সোহা ঠোঁট কামড়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রবোটের মতো মাথা নাড়ালো। শান সোহার দিকে একপলক তাকিয়ে হনহন করে রুমে চলে গেলো। সোহা মুখ চেপে মিটমিট করে হাসলো। শানকে রাগাতে ভালোই লেগেছে তার। রুমে গিয়ে দেখে শান ইউনিফর্ম পরে তৈরি হচ্ছে। সোহা শানের পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো
” কোথায় যাচ্ছেন আপনি ?” শান গম্ভীর গলায় বললো
” ইউনিফর্ম পরে নিশ্চই ঘুরতে যাবো না ! থানায় যাচ্ছি। মিডিয়াদের সাথে মিটিং রয়েছে রাত হতে পারে খাবার খেয়ে, ঘুমিয়ে পরবে অপেক্ষা করবে না।” সোহা মাথা নাড়ালো। শান বেড়িয়ে যেতেই সোহা বড় একটা হাসি দিয়ে তার কাজে লেগে পড়ে।
শান সব কাজ শেষে থানা থেকে বেড়িয়েছে অনেক্ষণ। শান জিপ চালিয়ে চালিয়ে এদিক ওদিক ঘুরছে। ইমন শানকে কিছু জিজ্ঞেস করেও করছে না। চুপচাপ ভুট চিবিয়ে যাচ্ছিলো এবার আর নিজের কৌতূহল কমাতে না পেরে বলে উঠলো
” তুই আজকে এখনও হোটেলে না ফিরে এদিক ওদিক ঘুরছিস কেনো ? মন খারাপ কেনো তোর ?” শান উত্তর না দিয়ে চুপচাপ ড্রাইভ করতে থাকে। ইমন শানকে হালকা ধাক্কা দিয়ে কিড়মিড় করে বললো
” কথা বলছিস না কেনো তুই ?” শান শান্ত গলায় বললো
” ভাবছিলাম তোকে তো কথা দিয়েছিলাম। এই কেসটা শেষ হলে এক সপ্তাহের ছুটি দেওয়া হবে তোকে। মনে আছে তো ?”
ইমন বাঁকা হেসে বললো
” আমার মনে না থাকলে চলবে ? আমি তো ভেবেছিলাম তোকে মনে করাতে হবে।” শান আলতো হেসে বললো
” আমি ভুলিনি। কালকে থেকেই তোর ছুটি শুরু।”
ইমন হেসে বললো
” বাহ এতো দেখি মেঘ না চাইতেই জল। কালকে থেকে ছুটি হলে তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ রয়েছে।”
শান ভ্রু কুঁচকে ইমনের দিকে একপলক তাকিয়ে বললো
” আমার জন্য কিসের সারপ্রাইজ ?” ইমন দাঁত কেলিয়ে বললো
” তোর কি মনে হয় সারপ্রাইজ এর কথা আগেই বলে দেবার মতো বোকা আমি ?” শান আড়চোখে তাকিয়ে বললো
” আমি বোকা কখন বললাম ?” ইমন মাথা নেড়ে বললো
” হ্যা, বলিসনি তবে এটা বল তুই হোটেলে কখন যাবি ?” শান ড্রাইভ করতে করতে বললো
” দেখতো কোথায় আছি আমরা।” ইমন চোখ বুলিয়ে দেখে হোটেলের কাছেই এসে পরেছে তারা।
ইমনের থেকে বিদায় নিয়ে রুমে ঢুকতেই দেখলো রুম অন্ধকার হয়ে রয়েছে। সোহা ঘুমিয়ে গেছে ভেবে শান রুমে লাইট অন না করে ফোনের ফ্ল্যাশলাইট অন করে নিজের কাপর নিয়ে ওয়াসরুমে ঢুকে গেলো।

বেশ কিছুক্ষণ পর শান টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বেড়িয়ে আসে ওয়াসরুম থেকে। রুমের দিকে তাকাতেই শান বরফের মতো স্থির হয়ে গেলো। চোখ জোড়া স্তব্ধ চাহনিতে সোহার দিকে তাকিয়ে থাকে। সোহা লাজুকলতায় আবৃত হয়ে শানের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। শান ধীরপায়ে সোহার সামনে এসে দাঁড়ায়। লাল শাড়িতে নিজেকে আবৃত করে রেখেছে। ঠোঁট জোড়া লাল রঙ্গে রাঙানো। আঁখি জোড়া কাজলরেখায় আঁকানো। খোঁপা করা চুলে বেলি ফুলের গাজরা।
শান এক ঘোরের মাঝে ডুবে যায়। আলতোহাতে সোহার গাল ছুঁয়ে দিতে থাকে। পুরো শরীর কেঁপে উঠে সোহার। সোহা আবেশে চোখ বন্ধ করে নেয়। শান তার অন্য হাত সোহার কোমড়ে রাখে। সোহার গায়ে কাটা দিয়ে উঠে। গালে রাখা শানের হাতের উপর নিজের হাত রেখে পিটপিট চাহনিতে তাকালো। হুট করে শানের ঘোর ভেঙে যায়। শান সোহাকে ছেড়ে পুরো রুমে চোখ বুলায়। পুরো রুম ক্যান্ডল দিয়ে ডেকোরেশন করা। রুমে অন্যরকম এক আবহাওয়া মনে হচ্ছে। শানল ভ্রু কুচকে সোহার দিকে তাকিয়ে বললো
” এসব কি ?” সোহা আলতো হাসলো শানের প্রশ্ন শুনে। শানের হাত জোড়া ধরে শীতল চাহনি দিয়ে বললো
” ভালোবাসি আপনাকে।” দুটো শব্দের প্রতিধ্বনি শানের কানে বাজতে থাকে। মানে টুকু বুঝে উঠতেই শান অবিশ্বাস্য চাহনিতে তাকালো সোহার দিকে। শানের চাহনি বড্ড হাস্যকর মনে হলো সোহার কাছে। সোহা ফিকফিক করে হেসে দেয়। শান ঢোক গিলে বললো
” কি বললে তুমি ?” সোহা হাসি থামিয়ে শানের একদম কাছে আসলো পা উঁচু করে ৬ ফুট লম্বা ছেলেটার গলা জড়িয়ে ধরে ধীর গলায় বললো
” বলেছি ভালোবাসি। খুব, খুব ভালোবাসি আপনাকে।” শান কাঁপা কাঁপা গলায় বললো
” ত..তুমি আমাকে ভ..ভালোবা..সো !” সোহা ফিচকে হেসে বললো
” হ্যা, ভালোবাসি। আমি জানি আপনিও আমাকে কতোটা ভালোবাসেন। তাই আজ আমি আপনার আর আমার ভালোবাসার পূর্ণতা চাই। দেবেন আমার চাওয়াকে পূরণ হতে ?” শান ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। স্বপ্ন যখন আজ সত্যি হচ্ছে তখন সব কিছু স্বপ্ন মনে হচ্ছে শানের। সোহা তাকে ভালোবাসে ? ভাবতেই শানের মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। সোহা মুখ ফুলিয়ে শানকে ছেড়ে দিয়ে কোমড়ে হাত রেখে বললো
” আপনি শুনেছেন আমি কি বলেছি ?” শান হুট করে সোহাকে নিজের বুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। সোহা আলতো হাসলো শানের কাজে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে শান জড়ানো গলায় বলে উঠে
” কতোদিন কতোদিনের স্বপ্ন ছিলো আমার তুমি জানো ! তোমার মুখে ভালোবাসি কথাটা শোনার জন্য কতো রাত ছটফট করেছি আমি। কতো রাত বিদ্ধস্ত অবস্থায় কাটিয়েছি তোমাকে একপলক দেখার জন্য। আজ আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না তুমি আমাকেও ভালোবাসো। খুব ভালোবাসি সোহা, খুব ভালোবাসি।” সোহা জড়িয়ে থাকা অবস্থাতেই বলে উঠে
” আমাকে নিজের করে নিন তাহলে ! আজ আমাদের ভালোবাসার পূর্ণতা দিতে চাই। আমাকে নিজের ভালোবাসার আড়ালে মুড়িয়ে নেবেন ?” শান সোহাকে ছেড়ে সোহার আঁখিজোড়ার দিকে তাকালো। চোখে আজ ভালোবাসা পাওয়ার আকুলতা দেখা যাচ্ছে। শান ঢোক গিললো সোহাকে দেখে।

চলবে…….

#আধারে_তুমি
#লেখিকাঃ মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্বঃ ৫০ (শেষ)

শান সোহাকে ছেড়ে সোহার আঁখিজোড়ার দিকে তাকালো। চোখে আজ ভালোবাসা পাওয়ার আকুলতা দেখা যাচ্ছে। শান ঢোক গিললো সোহাকে দেখে। শান উল্টো ঘুরে বললো
” সোহা তুমি অসুস্থ এখনও।” সোহা শানকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে শান্ত গলায় বললো
” আমি সারাজীবনই অসুস্থ থাকবো। তাই বলে কি আপনি আমাকে ভালোবাসবেন না ? আপনার জন্য আজকে এতো কিছু করলাম আমাকে ফিরিয়ে দেবেন আপনি ?” শানের উত্তর দেওয়ার আগেই হঠাৎ কারেন্ট চলে গেলো। শান চমকে বললো
” এটা কি হলো ! সোহা কারেন্ট কেনো গেলো ? এটাও তুমি করেছো ?” সোহা মাথা নেড়ে নাকচ করলো। ব্যালকনি দিয়ে অসম্ভব বাতাস প্রবেশ করতে থাকে মনে হচ্ছে বৃষ্টি পরবে। সোহা বাইরে তাকিয়ে হেসে বললো
” আমি তো তেমন কিছুই করিনি তবে এবার প্রকৃতিও চাইছে আমরা এক হই।” শান ঠোঁট বাকিয়ে হেসে সোহার কোমড় জড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে ফিসফিস করে বললো
” প্রকৃতির চাওয়া আর তোমার চাওয়া এক হলে তো সেটা পূরণ করতেই হবে।” সোহা লাজুক হাসি দিয়ে শানের বুকে মুখ লুকায়। শান সোহাকে কোলে তুলে বিছানার দিকে এগিয়ে গেলো। সোহাকে বিছানায় শুয়ে সোহার কাধ থেকে আচল সরিয়ে নিলো। সোহা জোড়ে নিশ্বাস নিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো। শানের সোহা উন্মুক্ত পেটে আলতো করে হাত রাখলো। নরম, মসৃণ পেটের গভীর নাভি ঠোঁট ছুঁয়ে দিতেই সোহার সর্বাঙ্গ শিরশিরিয়ে উঠলো। সময়ের সাথে সাথে শানের স্পর্শ গভীর হতে থাকে। সোহা নিশ্চুপ হয়ে শানের স্পর্শে মাতাল হয়ে উঠছে। তার উজ্জ্বল কায়া অনুভূতির মহালগ্নে শিহরিত। প্রকৃতির অন্ধকারে প্রিয়তমাকে গভীর আলিঙ্গনে প্রেমের শহরে অবাধ বিচরণে নির্ঘুমে রজনী পার।
.

সকালের শীতল বাতাসে সোহা ঘুমন্ত অবস্থায় নিজেকে শানের সাথে মিশিয়ে নেয়। শানের উন্মুক্ত বুকে মাথা রেখে গভীর ঘুমে ডুবে রয়েছে। গভীর ঘুমে থাকায় সোহা বুঝতে পারলো না এক চোখ জোড়া মুগ্ধতার সাথে তার ঘুমন্ত মুখ দেখতে ব্যস্ত। শান এক হাত সোহার চুলের মাঝে বিচরণে ব্যস্ত। অন্যহাত ব্ল্যাংকেটের নিচে সোহার উন্মুক্ত পেটের উপর রেখে নিজের সাথে জড়িয়ে রেখেছে। শানের মুখে প্রাপ্তির হাসি ফুটে রয়েছে।
আজ সারারাত বৃষ্টি পড়েছে এখনও ঝিরঝির বৃষ্টি হচ্ছে তাও রুমের এসি অন রয়েছে তাই শীতটা একটু বেশিই লাগছে। শান আলতো স্বরে ডাকলো সোহাকে
” সোহা, আর কতো ঘুমাবে ? অনেক সময় হয়ে গিয়েছে এবার উঠো ! সোহা !” শানের শক্তপোক্ত ডাকে সোহার ঘুম না ভাঙলেও কিছুটা নড়েচড়ে আবারও ঘুমিয়ে যায়। শান সোহাকে ছেড়ে উঠে বসলো। সোহাকে ব্ল্যাংকেটে ভালো করে মুড়িয়ে সোহার ঠোঁট জোড়ায় আলতো করে ঠোঁট জোড়া ছুঁইয়ে দেয়। উঠে ফ্রেশ হতে চলে যায় শান।
সোহা ঘুম থেকে উঠে ঘুমন্ত চোখে পাশে বুলিয়ে নেয়। শানকে না দেখে ওয়াসরুমের দিকে তাকিয়ে বড়সড় হাই তুললো সোহা। বসে বসেই ঘুমে ঢুলতে থাকে সে।
শান খট করে দরজা খুলে বেড়িয়ে আসে। সোহা শব্দ শুনে চোখ জোড়া টিপে সেদিকে তাকালো। শরীরে শুধু টাওয়াল বাধা অবস্থা দেখে সোহার ঘুম ঘুম ভাব উড়ে গেলো। চোখ বড়বড় করে শানের দিকে তাকিয়ে থাকে। শরীর বেয়ে ফোটা ফোটা পানি বেয়ে পড়ছে। সোহা ঢোক গিলে চোমহ ফিরিয়ে নিলো। বিরবির করে বলতে থাকে
” পাগল হয়ে গিয়েছে লোকটা ? আগে তো পোশাক ছাড়া বেরই হতো না আজ একদম পোশাক বিহীন বের হয়েছে ?” সোহা আড়চোখে আবারও শানের দিকে তাকাতেই শানকে তার মুখের সামনে দেখে ভয় পেয়ে চিৎকার দিয়ে উঠে। শান বাঁকা হাসলো সোহাকে ভয় পেতে দেখে। ব্যাঙ্ক করে বললো
” কেমন নারী তুমি? নিজের পুরুষকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছো ? লজ্জায় বিষয় বউ।” সোহা লজ্জা পেয়ে গেলো শানের কথায়। লজ্জায় কান গরম হয়ে গেলো তাও নিজেকে সামলে মুখ কুঁচকে নিলো, বললো
” আপনি লজ্জা, শরমের মাথা খেয়েছেন? এভাবে এসেছেন কেনো ? আপনার পোশাক কি বিলীন হয়ে গিয়েছে ?” শান মুখটা আরো এগিয়ে এনে বললো
” পোশাক বিলীন না হলেও তোমাকে কাছে পেয়ে লজ্জা, শরমের আগা, মাথা পুরোটাই বিলীন হয়ে গিয়েছে আমার বুঝ বউ !” সোহা ব্ল্যাংকেট দিয়ে নিজেকে মুড়িয়ে নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সোহার ব্যস্ততার মাঝে শান সোহার কাধে অধর ছুঁয়ে দেয়। সোহা স্থির হয়ে যায়। আবেশে চোখ বন্ধ করে নেয়। শান মুহূর্তেই সোহার অধরজোড়া নিজের আয়েত্তে নিয়ে নেয়। সোহার উপর পুরোটা ভর ছেড়ে শুইয়ে পরলো তার উপর। সোহাকে ওষ্ঠাধরের স্বাদ নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সোহা বাধা দিলো না।
দুজনের প্রেমময় মুহূর্তে বিকট শব্দে ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো। দুজন চমকে উঠে। শান ফোনের দিকে একবার তাকিয়ে সোহার নাকে আলতো করে কামড় দিয়ে উঠে গেলো। ফোন হাতে নিয়ে দেখে ইমন ফোন করেছে। ফোন রিসিভ করে কানে ধরতেই ইমন বলে উঠলো
” তোদের হানিমুন শেষ হয়েছে ভাই ?” শান গলা ঝেড়ে গম্ভীর গলায় বলে উঠলো
” শেষ হওয়ার আগেই তো ফোন করে ব্যাঘাত ঘটিয়ে বারোটা বাজিয়ে দিলি।” শানের সাফসাফ ঠোঁট কাটা কথা শুনে ইমন ভরকে গেলো। কাধ নাড়িয়ে বলল
” ব্যাঘাত যখন একবার ঘটেই গিয়েছে তখন ব্রেক নিয়ে নে আর কিছুক্ষণের মধ্যে তৈরি হয়ে হোটেলের ক্যান্টিনে আয় ভাই। আমি বিয়ে করার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে বসে রয়েছি। সাক্ষী লাগবে তো নাকি !” শানের কপালে ভাজ পড়লো ইমনের কথায়। অবুঝের মতো বললো
” মানে ? সকাল সকাল মজা করছিস ?” শানের কথায় ইমন হাসলো। হাসতে হাসতে বললো
” আসলেও দেখতে পাবি তাই সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি আয়। আমরা অপেক্ষা করছি।” ফোন কেটে দিতেই জিজ্ঞেস করলো
” কি হয়েছে ?” শান মাথায় পেছনে হাত দিয়ে চিন্তিত হয়ে বলল
” ক্লিয়ার করে বলেনি তবে বললো বিয়ে করবে। তুমি জলদি ফ্রেশ হয়ে এসো নিচে যেতে হবে।” সোহা মাথা নেড়ে ওয়াসরুমে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকে।
নিচে ক্যান্টিনে পা রাখতেই ইমনকে গালে হাত দিয়ে বসে থাকতে দেখে সামনে এক মেয়ে বসে রয়েছে ইমনের দিকে মুখ হয়ে তাই চেহারা দেখা গেলো না তবে একই ভঙ্গিতে সেটা বোঝা গেলো দূড় থেকে। শানের সাথে এগিয়ে যেতে যেতে সোহা অবাক হয়ে বললো
” ভাইয়ার এই মেয়ে কে ? ভাইয়া কি আমার ইতিকে ছেড়ে এই মেয়েকে বিয়ে করবে এখন ?”
শান ভ্রু কুঁচকে বললো
” আগে দেখি তারপর সব জানতে পারবো।” সোহা আর শান কাছে যেতেই ইমন হুরমুরিয়ে দাঁড়ায়। ইমনকে দেখ্র মেয়েটাও উঠে দাঁড়ায়। শানদের দিকে তাকাতেই ইতিকে দেখে শান আর সোহা অবাক হয়ে গেলো। সোহা ছুটে গিয়ে ইতিকে জড়িয়ে ধরে বললো
” আমার বান্ধুপ্পিরে কেমন আছিস ? তুই এখানে কিভাবে ? এখানে আসছিস আমাকে জানালিও না। কখনে এসেছিস তুই ?” ইতি মুচকি হেসে বললো
” সারপ্রাইজ দিতে চাইলাম তাই চলে এসেছি। অনয়ের সাথে এসেছি কিছুক্ষণ আগেই এসে পৌঁছলাম।” শান ইমনের কাছে গিয়ে পিঠে ঘুষি বসিয়ে বললো
” আর তুই কি বললি বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে বসে আছিস ? আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।”
ইমন জ্যাটেক টেনেটুনে কাচুমাচু করে বললো
” ভাই সত্যি কথাই বলেছি। আমরা এখন বিয়ে করবো আর তাই তো ডাকলাম তোকে। তোকে বলেছিলাম না তোরা যেদিন হানিমুন করতে যাবি সেদিন বিয়ে করে সারপ্রাইজ দেবো ! ভেবেছিলাম আমি বাড়িতে বসে বিয়ে করবো কিন্তু এখন যখন এখানেই রয়েছি আমি তখন নাহয় এখানেই বিয়ে করে ফেলি। আমি সব তৈরি করে রেখেছি রাতে অনয় ফ্রেশ হয়ে আসলেও এখন আমরা বেরিয়ে পরবো।” সোহা কপালে হাত দিয়ে বসে পড়ে। শান অগ্নিমূর্তি হয়ে ইমনের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ইমন ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও বুকের ভেতর ঢিপঢিপ করছে তার। একে তো পরিবার ছাড়া বিয়ে করছে তার উপর শান কি করবে ভেবেই ভয় লাগছে। কিছুক্ষণের মধ্যে অনয় এসে পড়লো। সোহা ইচ্ছে মতো ইতি আর অনয়কে কথা শুনিয়ে যাচ্ছে আর শান রেগে লাল হয়ে বসে থাকে। সবাই কাজি অফিসে যাওয়ার জন্য
রওনা দেয়। ইমন টেনে টেনে শানকে নিয়ে গেলো।
কাজি অফিসে এসে দেখলো এখানে শানের থানা থেকে আসা তিনজন লোকও উপস্থিত। সব শুরু হওয়ার আগে ইমন গলা শুকিয়ে শানকে বললো
” ভাই আমি একা একা বিয়ে করলে আমার ডক্টফ বাপ আমাকে পুতে রেখে দেবে আর মা কাঁদতে কাঁদতে হয়রান হয়ে যাবে। আমি তাদের একমাত্র ছেলে বলে কথা। তুই ফোন করে কথা বল না তাদের সাথে প্লিজ ! দুজনই ইতির কথা জানে তুই শুধু একটু মানিয়ে নিবি।” সোহা, অনয় মুখ টিপে হাসতে থাকে। ইতি নিজেও চিন্তায় অতিষ্ঠ। লুকিয়ে বিয়ে করছে এরচেয়ে বড় চিন্তা আর কি হতে পারে ? সোহা হাসতে হাসতে বললো
” ভাইয়া ! আগেই সব ভাবা উচিত ছিলো না ! এখন যদি বিয়েটাই না হয় ?” ইমন আর ইতি অসহায় ভাবে তাকালো সবার দিকে। শান মনে মনে হাসলো দুজনকে দেখে। শান পায়ের উপর পা তুলে বসলো চেয়ারে তার গম্ভীর গলায় বললো
” বলবো না যা। এতোসব যখন নিজেই করেছিস এটাও তুইই করবি আমি কোনো হেল্প করছি না।”
ইমন কেঁদে দেবে এমন অবস্থা। ইমন ইতির সামনে গিয়ে কাঁদোকাঁদো হয়ে বললো
” শোনো আজ আর বিয়ে করা হচ্ছে না। বিয়েটা নাহয় বাড়িতে গিয়েই করবো এখন একটু আনন্দ করে নেই।” অন্যসময় হলে ইতি ইচ্ছে মতো ইমনের সাথে রাগ, ঝগড়া করতো কিন্তু এখন নিজেও পরিস্থিতি অনুভব করতে পারছে তাই সায় জানালো। শান দুজনের অবস্থা দেখে শব্দ করে হেসে দিলো। ইমন অসহায় চাহনি দিয়ে তাকালো। শান ফোন নিয়ে বেড়িয়ে গেলো। সোহাও পিছু পিছু ছুটলো। শান বেরিয়েই ড. আসফিকুর রহমানকে ফোন লাগায়। ফোন রিসিভ হতেই দুজন সালাম আদান প্রদান করে ড. আসফিকুর রহমান বলে উঠে
” কি খবর, কেমন আছো ইয়াংম্যান ? আর আমার অপদার্থ ছেলের কি খবর বলো।” শান জিভ দিয়ে শুষ্ক ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে সোহার দিকে এক পলক তাকিয়ে বললো
” আলহামদুলিল্লাহ সব ঠিক আছে। তবে আংকেল তোমার অপদার্থ ছেলে তো বড়সড় কাণ্ড করে বসেছে। ইতিকে বিয়ে করবে বলে রাতেই সব ঠিক করে রেখেছে আমাকেও জানায়নি। আর এখন বিয়েতে বসে কাঁপছে তোমাদের কি বলবে সেই ভয়ে। বিয়েও আটকে রয়েছে। কি করবো বলো তো !” ড. আসফিকুর রহমান অবাক গলায় বললো
” বাহ আমার ছেলে বিয়ের পিড়িতে বসেআছে ? চিন্তার বিষয় বুঝলে শান ? তার মা জানলে তো কেঁদেকুটে সাগর বানাবে। আচ্ছা এক কাজ করো শুভ কাজে দেড়ি করা ঠিক না বিয়ে দিয়ে দাও। ওর মাকে নাহয় বুঝাবো আমি। পড়ে তো অনুষ্ঠান করে বিয়ে দেবোই।” শান জানতো ড. আসফিকুর রহমান এক কথায় রাজি হয়ে যাবে। শান আলতো হেসে বললো
” সে নাহয় দিয়ে দেবো তবে ইতির মা, বাবার কি হবে ? ওদের সাথে কথা বললে তো ঝামেলা হতে পারে।” ড. আসফিকুর রহমান হেসে বললো
” সবার সাথে কথা বলা যাবে। তোমরা আসলে সবাই মিলে মিটিং এ বসা যাবে। আর আমি যতদূর শুনেছি ইমনের থেকে। ইতির বাবাও ইমনকে পছন্দ করে। আমার মনে হয় তেমন ঝামেলা হবে। এবার শুভ কাজ সেরে ফেলো আর আমার অপদার্থ ছেলেকে বলে দেবে বিয়ে হচ্ছে হচ্ছে তবে হানিমুন যাতে না হয় সেটা সবাই মানার পরই হবে।” শান সায় জানিয়ে ফোন কেটে দিলো। সোহা চিন্তিত চেহারায় শানের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। শান হেসে সব জানায় সব শুনে সোহা অবাক স্বরে বললো
” আংকেলকে একদমই অন্যরকম মনে হচ্ছে।”
শান হেসে বললো
” হ্যা, আংকেল একদম ফ্রি সবার সাথে। আংকেলের কথা, ব্যবহার দেখে সবাই মনে করবে কতো দিনের চেনা পরিচয় তাদের।”
শান আর সোহা ভেতরে গেলো। সবাইকে বলে বিয়ের কার্যক্রম শুরু করে। ইমন আর ইতি জান ফিরে পায়। দুজন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতেই শান মিষ্টি কিনে আনালো। অনয় মিষ্টি খেতে খেতে আফসোস স্বরে বললো
” তোমরা সবাই ডাবল ডাবল হয়ে গেলে। এখন আমি একাই সিঙ্গেল। ভাবছি আজই চলে যাবো তোমাদের মাঝে নিজেকে অসহায় মনে হবে।”
শান ইমনের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে
” চিন্তা নেই শালাবাবু। আংকেল এর শর্ত হলো ওদের বিয়েটাই শুধু হবে এরচেয়ে বেশি কিছু যেনো না হয়। তো দুজন সিঙ্গেলদের মতোই থাকতে হবে। শুধু ঘুরবে, ফিরবে আর আমার বউ এর সাথে আমার প্রেম দেখবে।” ইমন মুখ লটকিয়ে তাকিয়ে থাকে। ইমনের চেহারা দেখে সবাই হেসে উঠে।

_______________________

হসপিটাল থেকে এসে সিমিকে নিয়ে ড্রইংরুমে বসলো সোহা। সালমা এসে দুজনকে ঠাণ্ডা পানি দিলো। সোহার পানি খাওয়ার মাঝে সালমা বললো
” ভাবি শান ভাই আসছে একটু আগে। আপনারে খুঁজছিলো।” সোহা একপলক সিরির দিকে তাকিয়ে গ্লাস ট্রেতে রেখে বললো
” কি বলেছো ?” সালমা তার দ্রুততার মুখ চালিয়ে বললো
” বলছি মেজোভাবি অসুস্থ হয়ে গেছে তাই তারে নিয়ে গেছে। ভাইয়া বলছিলো হসপিটালে যাবে কিন্তু খালাম্মা আর বড়ভাবি না করায় রুমে চলে গেছে।” সালমার কথা শেষ হতেই নিলা আর শাহানাজ বেগম চলে আসলো। সালমাকে কাজে যেতে বলে শাহানাজ বেগম সিমির পাশে বসে বললো
” এখন ঠিকাছিস মা ?” সিমি শাহানাজ বেগমের কাধে মাথা রেখে বললো
” ঠিকাছি এখন।” নিলা সোহাকে জিজ্ঞেস করলো
” তোমার ভাইয়া কিছু বলেছে ? আর সামির কোথায় ?” সোহা বাইরের দিকে ইশারা করে বললো
” সামির ভাইয়া আসছে আর ইশান ভাইয়া আর সেই ডক্টর আপুর ব্যাপারে সব ভাইয়ার সাথেই কথা বলেছে। আমি তো শুধু বসেই ছিলাম। আচ্ছা নাইসু আর টমি কোথায় ?”
নিলা বিরক্ত গলায় বললো
” তোমার নাইসু টমিকে নিয়ে খেলছে। পড়া শেষ করেই খেলা শুরু ঘুমাবে নাকি পড়ে। আচ্ছা তোমাকে ক্লান্ত লাগছে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রেস্ট হয়ে নাও।” সোহা মাথা নেড়ে উপরে যেতে যেতেই সামির, ইশান আসলো। ইশান এসেই রেগে শাহানাজ বেগমকে বললো
” সিমি তো প্রেগন্যান্ট দেখে এখন একটু অসুস্থ কিন্তু সোহার কি হয়েছে বলো তো ! নিজের শরীরের খেয়ালই রাখে না। হসপিটালে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলো তাও আবার সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় ভাগ্য ভালো ছিলো একজন নার্স পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো নাহলে আজকে কি যে হতো !” সবাই সোহার দিকে তাকালো। সোহা ঢোক গিলে মাথা নিচু করে নেয়। সামির ভ্রু কুঁচকে বললো
” এসব কখন হলো ? আমি তো জানিই না।” ইশান রেগে বললো
” সিমিকে কেবিনে নিয়ে যাওয়ার পর হাটছিলো আশেপাশে তখনই এমন হয়েছে।” সামির রেগে বললো
” সোহা নিজের খেয়াল নেবে কবে থেকে বলো তো ! খাওয়া দাওয়ার নাম নেই শুধু ছোটাছুটি। সব কিছু ঠিক রেখে চলা উচিত তাই না ! শানের সাথে কথা বলতে হবে আবার।” সবাই একে একে সোহাকে কিছুটা বকা দিয়ে রেস্ট করার জন্য রুমে যেতে বললো। সোহা মাথা নেড়ে টেনে পড়লো।
সোহা রুমে ঢুকে শানকে বিছানায় ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করতে দেখলো। সোহা কিছু না বলে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।
শান শব্দ শুনে ওয়াসরুমে একবার তাকালো। সোহা এসেছে বুঝতে পারলো। শান বালিশে মাথা রেখে ভাবতে থাকে দিনগুলো কিভাবে কেটে গেলো। ইতি, ইমনের বিয়ের তিনদিন পরই তারা চলে আসে ঢাকা। আসার পর বিয়ে নিয়ে ইতির মা, বাবার সাথে কথাবার্তা হলো ইমনের মা, বাবার সাথে। ইমনের মা, বাবা ছাড়া সবাই কিছুটা রেগে গিয়েছিলো তাদের হুট করে এমন বিয়েতে। ইতির বাবা ইমনকে পছন্দ করতো জানালেও কিছুটা অসন্তুষ্ট হয় দুজনের এক কাজে। সবাই মেনে নিলে ইতির বাবা কিছুদিন পর মেনে নেয়। এরপর তিন মাস কেটে গেলো। দু সপ্তাহ পর তাদের বিয়ের ডেট ফিক্সড করেছে। এই দুজনের বড় করে বিয়ের অনুষ্ঠান করা হবে তখন।
সিমিও এখন ছয় মাসের প্রেগন্যান্ট তাই মাঝেমধ্যেই হসপিটালে চক্কর কাটতে হয় অসুস্থ হয়ে গেলে। মুসফিক চৌধুরী আর শানের সম্পর্ক একদমই ভালো হয়ে গিয়েছে। আর তামিম এখনও সোহার পাগল। কিছু হলেই ছুটে আসবে মিষ্টিআপুর কাছে। শান, সোহার ভালোবাসাও গভীর হচ্ছে দিনকে দিন।
শানের ভাবনার মাঝে দরজা খুলে বেড়িয়ে এলো সোহা। সোহা এসে চুপচাপ করে শানের পাশে শুয়ে চোখ বুজে নিলো। শান চিন্তিত হয়ে সোহা মাথায় হাত বুলিয়ে বললো
” কি হয়েছে ? শরীর খারাপ ?” সোহা চোখ খুলে আস্তে করে বললো
” হুম একটু খারাপ লাগছে।” শান সোহার গভীরভাবে ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়াল তারপর কপালে চুমু দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। হুট করে সোহাকে কোলে তুলে নিলো। সোহা চমকালো না কারণ মাঝেমধ্যেই শানের করা এমন হুটহাট কাজে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে। শানের গলা জড়িয়ে বুকে মাথা রেখে চুপটি করে থাকে। শান সোহাকে নিয়ে ব্যালনিতে অগ্রসর হলো।
ব্যালকনিটা খুবই বড় ছিলো তাই সোহার আবদারে ব্যালকনিতে খুব সুন্দর করে ছোট একটা তোশক পেতে বিছানা সাজিয়ে নিয়েছে। লাইটিং করে সাজিয়েও নিয়েছে সোহা।
শান সোহাকে নিয়ে সেই বিছানায় বসে পড়লো। সোহার পেছনে বসতেই সোহা শানের বুকে পিঠ ঠেকিয়ে হেলান দিয়ে বসলো। নিশ্চুপে কেটে গেলো কিছুক্ষণ। নিস্তব্ধতা কাটিয়ে শান সোহার কানে ফিসফিস করে বললো
” ভালোবাসি বউ।” সোহার মাত্রই চোখ লেগেছিলো। শানের ফিসফিসানী কথা শুনে কান শিরশির করে উঠে। সোহা কেঁপে কিছুটা নড়েচড়ে বসে বললো
” জানি তো আমিও ভালোবাসি।” শান হাসলো সোহার কথায়। তারপর বললো
” যতোদিন বেঁচে থাকবো তোমাকে নিজের আধারে রাখবো। আমার বক্ষপিঞ্জরে লুকিয়ে রাখবো তোমায়। আর গভীরভাবে ভালোবেসে যাবো। #আধারে_তুমি করে আগলে রাখবো আমার কাছে।” সোহা হঠাৎ ভাবুক হয়ে বললো
” আচ্ছা আপনি বারবার #আধারে_তুমি বলেন কেনো ?” শান সোহাকে জড়িয়ে ধরে সোহার কাধে থুতনি রেখে বললো
” আমার কথার মানে হলো আমার #আধারে_তুমি থাকবে। মানে আমায় ছায়ার আধারে থাকবে তুমি যেখানে কোনো বিপদ ছুতে পারবে না। তোমাকে আঘাত করার আগে আধারকে মানে আমাকে আঘাত করবে। বুঝলে ? আমার সোহা। ভালোবাসি বউ।” সোহা শানের বুকে মাথা রেখে হাসলো। তার সব খারাপ লাগা বিলীন হয়ে গিয়েছে।

__________ সমাপ্ত___________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here