#হৃদ_মাঝারে_তুমি,পর্বঃ- ২২
#লেখকঃ- Tamim Ahmed
,,
,,
-“তুমিই তাহলে তানিশাকে পালাতে সাহায্য করেছ তাইনা?”
আরশির কথায় ফারহান কিছুটা চমকে উঠলো। কিন্তু সেটা আরশিকে বুঝতে দিল না। তবে ফারহান মনে মনে ভাবতে লাগলো, “আরশি হঠাৎ আমায় এই কথা বললো কেন? সে কি তাহলে সবকিছু জেনে গেছে? কিন্তু সে তো আজ সকালেই আমাদের বাসায় আসলো। সে কীভাবে এসব জানবে?” মনের মধ্যে কৌতূহল জমিয়ে না রেখে ফারহান আরশির প্রতিউত্তরে বলে উঠলো,
-“আমি কেন তানিশাকে পালাতে সাহায্য করবো? আর সে কার সাথে পালিয়েছে সেটাই তো আমি জানি না।”
-“আমার সাথে মিথ্যা অভিনয় করে লাভ নেই। আমি জানি তুমিই তানিশাকে পালাতে সাহায্য করেছ। এখন বল সে কার সাথে পালিয়েছে? তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে নাকি সে একাই?”
-“আরে আজব তো আমি কীভাবে জানবো সে কার সাথে পালিয়েছে? আর তার যদি কোনো বয়ফ্রেন্ড থেকেই থাকে তাহলে সে এই শহরে আসবে কীভাবে? তানিশা তো আর এই শহরের মেয়ে না।”
ফারহানের কথাগুলোতে কিছুটা যুক্তি খুঁজে পেল আরশি আর মনে মনে ভাবতে লাগলো, “আসলেই তো, তানিশা তো এই শহরের মেয়ে না তাহলে তার কোনো বয়ফ্রেন্ড থেকে থাকলে সে কীভাবে এই শহরে আসবে? তাহলে তানিশা কার সাথে পালিয়ে গেল?” আরশি এইসব কথা ভাবতে গিয়ে আরেকটা কথা তার মাথায় আসলো। সাথে সাথে সে ফারহানের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
-“তানিশা পালিয়েছে এটা জেনেও তুমি এইভাবে রিল্যাক্স মোডে বসে আছ কেন তাহলে?”
-“কারণ তানিশাকে বাসায় পাওয়া যাচ্ছে না মানে তানিশা বাসায় নেই তাহলে শুধু শুধু অন্যদের মতো তাকে খুঁজে লাভ নেই। আবার আমি জানি না তানিশা বাহিরে কোথায় আছে তাহলে তাকে কোথায় গিয়ে খুঁজবো?”
আরশি এবারও ফারহানের কথাতে যুক্তি খুঁজে পেল সাথে সে এটাও বুঝলো ফারহান কেন রিল্যাক্স মোডে বসে আছে। তবুও আরশির মনে হচ্ছে ফারহান তানিশাকে কোনোভাবে পালাতে সাহায্য করেছে। আর ফারহান এটাও জানে যে তানিশা এখন কোথায় আছে। কিন্তু ফারহানের কথাগুলো শুনে আরশি এখন কনফিউজড হয়ে আছে। আরশি আর এইসব নিয়ে না ভেবে অন্যরুমে চলে গেল।
.
দু’দিন হয়ে গেল তানিশার কোনো খোঁজ নেই। তানিশার চিন্তায় তার আম্মু কেঁদেকেটে প্রায় পাগল হয়ে গেছেন। তানিশার আব্বুও তানিশাকে খুঁজে না পেয়ে অনেকটা ভেঙে পরেছেন। বাসার সবাই তানিশার আম্মু-আব্বুকে শুধু শান্তনা দিয়ে যাচ্ছেন এই বলে যে ‘তানিশাকে তারা ঠিকই খুঁজে পাবে’ কিন্তু কারও কথায় তারা নিজেকে শান্ত করতে পারছেন না। এদিকে রফিক আহমেদ তানিশার বিষয়টা নিয়ে পুলিশের কাছেও ডিজি করেছেন। কিন্তু এখন অবধি তানিশার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
সন্ধ্যা ৭ টার দিকে হঠাৎ ফারহানদের বাসার কলিং বেল বেজে উঠলো। ফারহানের আম্মু তাড়াহুড়ো করে দরজাটা খুলে দেখেন দরজার সামনে তানিশা দাঁড়িয়ে আছে। তানিশাকে দেখেই তিনি খানিকটা চমকে উঠলেন, সাথে সাথে উনার চেহারাটা খুশিতে জ্বলজ্বল করে উঠলো। উনি আর নিজেকে সামলে রাখতে না পেরে তানিশাকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরলেন আর বলতে লাগলেন, “তানিশা আম্মু কোথায় ছিলে তুমি এই দু’দিন? আমাদের কাউকে না জানিয়ে তুমি কোথায় চলে গিয়েছিলে? এই কে কোথায় আছ দেখে যাও আমাদের তানিশা ফিরে এসেছে।” বলেই রোকসানা বেগম চিৎকার করে সবাইকে ডাকতে শুরু করলেন।
রোকসানা বেগমের চিৎকার শুনে বাসার সবাই সদর দরজার সামনে এসে উপস্থিত হলো। দরজার সামনে নিজের মেয়ে তানিশাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তানিশার আম্মু দৌড়ে এসে তানিশাকে জড়িয়ে ধরলেন আর কেঁদে কেঁদে বলতে লাগলেন, “তানিশা মা কোথায় ছিলি তুই এতদিন? জানিস তোর জন্য আমরা সবাই কত চিন্তা করছিলাম। তুই ঠিক আছিস তো মা?”
-“আম্মু আমি একদম ঠিক আছি। আর তোমরা কেন শুধু শুধু আমার জন্য চিন্তা করবে? যেখানে তোমরা আমার কোনো কথার গুরুত্ব দাওনা সেখানে তোমরা আমায় নিয়ে অযথা চিন্তা করবে এটা তো মানা যায়না।”
-“তুই এইভাবে বলছিস কেন মা? আমি তোর মা আমি তোর জন্য চিন্তা করবো না তো কে করবে?”
-“সেই চিন্তাটা তোমরা আমার ভবিষ্যত নিয়ে করনি কেন তাহলে?”
-“মানে?”
-“মানে আমি যখন বলেছিলাম আমি ফারহান ভাইয়াকে বিয়ে করবো না তখন তোমরা কেন আমার কথা শুনলে না?”
-“আমরা তো তোর ভালোর জন্যই ফারহানের সাথে তোকে বিয়ে দিতে চাচ্ছিলাম।”
-“কিন্তু যাকে বিয়ে করার আমার কোনো ইচ্ছাই নেই তার সাথে তোমরা আমাকে কেন জোর করে বিয়ে দিতে চাচ্ছিলে? তোমরা আমার মা-বাবা হয়েছ বলে কি আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে যে কারো সাথেই আমার বিয়ে দিয়ে দিবে?”
-“তুই আমাদের একমাত্র সন্তান তাই তোকে আমরা নিজেদের থেকে দূরে রাখতে চাইনা বলে ফারহানের সাথে তোর বিয়ে দিতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু এর জন্য যে তুই রাগ করে বাসা থেকে পালিয়ে যাবি সেটা তো আমরা বুঝতে পারিনি। এখন যেহেতু তুই বাসায় এসে পরেছিস তাহলে আমরা তোকে আর দ্বিতীয়বার বিয়ের জন্য জোর করবো না।”
এতক্ষণ যাবত তানিশার আম্মু তানিশার সাথে কথা বলছেন কিন্তু তার সাথে যে একটা ছেলেও দাঁড়িয়ে আছে সেটা তিনি লক্ষ্য করেননি। কিন্তু তানিশার আব্বু ঠিকই ছেলেটাকে লক্ষ্য করেছেন। তারা মা মেয়ের কথা শেষ হলেই তানিশার আব্বু বলে উঠলেন, “তোর সাথে এই ছেলেটা কে তানিশা?”
-“ওর নাম সানি, তোমাদের মেয়ে জামাই মানে আমার স্বামী।”
-“কিহহ!”
তানিশার কথাটা শুনে উপস্থিত সবাই চোখ বড় বড় করে একবার তার দিকে আরেকবার ছেলেটার দিকে তাকালো। সবার কাছে মনে হচ্ছে তানিশা তাদের সাথে দুষ্টুমি করার জন্য কথাটা বলেছে। এমন সময় রোকসানা বেগম বলে উঠলেন, “এটা তুমি কি বলছ আম্মু? ছেলেটা তোমার স্বামী হতে যাবে কেন? তোমরা বিয়ে করলে কবে?”
-“যেদিন আমি বাসা থেকে পালিয়ে ছিলাম সেদিনই আমি আর সানি একটা কাজি অফিসে গিয়ে বিয়ে করে নেই। সানির সাথে আমার দুই বছরের সম্পর্ক ওকে ছাড়া আমি অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবো না তাই বাধ্য হয়ে ওইদিন আমি বাসা থেকে পালিয়ে যাই আর সানিকে বিয়ে করে ফেলি।”
তানিশার কথাগুলো শুনে মূহুর্তের মধ্যেই রোকসানা বেগমের চেহারা কালো হয়ে গেল। যেই মেয়েকে উনি নিজের ছেলের বউ বানাতে চেয়েছিলেন সে কি-না অন্য একটা ছেলেকে বিয়ে করে ফেলেছে! রাগে-দুঃখে রোকসানা বেগম কোনো কথা না বলে সেখান থেকে ড্রয়িংরুমে এসে মাথায় হাত দিয়ে বসে পরলেন। এদিকে তানিশার কথাটা শুনে সবাই বেশ অবাক হয়েছে। তখন তানিশার আব্বু খানিকটা রাগ দেখিয়ে বলে উঠলেন, “তুই কীভাবে আমাদেরকে না জানিয়ে এই ছেলেটাকে বিয়ে করলি? ছেলেটার সাথে যে তোর দুই বছরের সম্পর্ক সেই কথাটা তুই আমাদেরকে একবারের জন্যও তো বললি না। যদি বলতি তাহলে তো আমরা ছেলেটাকে যাচাই-বাছাই করে দেখতাম ছেলেটা তোর জন্য ঠিক আছে কি না। কিন্তু তুই এমনটা না করে বাসা থেকে পালিয়ে ছেলেটাকে বিয়ে করে ফেললি! এই কাজটা তুই একদমই ঠিক করিসনি তানিশা।”
-“আমি তো সেদিন তোমাদেরকে ড্রয়িংরুমে থেকে অন্যরুমে নিয়েই গেছিলাম সানির বিষয়ে কথা বলার জন্য। কিন্তু ওইদিন আম্মু তো আমার কথা না শুনেই বলে দিলেন আমরা যেটা বলেছি সেটাই হবে। তখনই আমি বুঝে গিয়েছিলাম তোমাদেরকে সানির বিষয়ে বললেও তোমরা আমাকে ফারহান ভাইয়ার সাথেই বিয়ে দিবা। তাই আমাকে বাধ্য হয়েই শেষমেশ এই কাজটা করতে হলো। সরি আম্মু, সরি আব্বু প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও। দেখ সানি অনেক ভালো ছেলে, ওর সাথে আমি অনেক সুখে থাকবো।”
-“মানছি আমরা যা করেছি তা ভুল করেছি। কিন্তু তুইও আমাদেরকে না জানিয়ে বিয়ে করে অনেক বড় ভুল করেছিস। এখন তোর বিচার হবে ভিতরে আয়।”
-“বিচার! কীসের বিচার?”
-“সেটা বিচারের সময়ই জানতে পারবি। এখন ছেলেটাকে নিয়ে ভিতরে আয়, ছেলেটা যে কতটা ভালো সেটাও আমরা দেখবো।”
তারপর তানিশার আম্মু তানিশাকে নিয়ে ড্রয়িংরুমে চলে আসলেন। তাদের পিছু পিছু সানি ছেলেটাও ড্রয়িংরুমে চলে আসলো। এরপর সবাই ড্রয়িংরুমের সোফায় নিজের মতো করে আসন পেতে বসে পরলো। তানিশাকে আর সানিকে একধারেই বসানো হয়েছে। একটু পরই বিচারকার্য শুরু হবে। তানিশা আর সানি এ নিয়ে কিছুটা ভয়ে আছে আর মনে মনে ভাবছে না জানি এখন তাদের কি বিচার হবে।
.
.
Loading…….