এল_এ_ডেইস পর্ব – ১১

0
385

#এল_এ_ডেইস
পর্ব – ১১
লেখনী – মাহীরা ফারহীন

বেলা দশটা বাজছে। শিক্ষার্থীরা যার যার পথে এগিয়ে চলেছে। করিডোর ও ক্যাফেটেরিয়া হইচই ও চিৎকার চেচামেচিতে গমগম করছে। র‌্যবিট লাফিয়ে লাফিয়ে হেঁটে চলেছে ক্যাফেটেরিয়ার দিকে। আজ ওর সঙ্গে ওর সবসময়ের সঙ্গী লেক্সি নেই। কাজেই ও একা একাই ঘুরে বেড়াচ্ছে। চুইংগাম চিবাতে চিবাতে হেলেদুলে হাঁটছিল। ক্যাফেটেরিয়ার কাছাকাছি আসতেই দেখলো লিম জু ভেতরে প্রবেশ করছে। ‌র‌্যবিট থমকে দাঁড়ালো। তারপর ভাবল, “আরেহ দুর্ঘটনাজনিত মেয়ে। তাহলে এখনই একটা দুর্ঘটনা ঘটবে বলে আশঙ্কা করা যাচ্ছে। দেখি কি অবস্থা ওর”। ভেবেই সেদিকে এগিয়ে গেল। লিমের কাছে পৌঁছে ওর সাথে সাথে হাঁটতে লাগল। লিম র‌্যবিটকে দেখা মাত্র বিরক্ততে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। র‌্যবিট বলল,”কি খবর লিম? আজকে কোনো দুর্ঘটনা ঘটেছে?”

লিম কিছুক্ষণ চুপ থাকলো। তারপর নিরুত্তাপ কন্ঠে বলল,”হ্যা ঘটেছে। মাহীনের হ্যামস্টার মারা গেছে।”

র‌্যবিট বেদনার্ত কন্ঠে বলল,”আহা এটা শুনেছি। তবে আমি তোমার কথা জিজ্ঞেস করছি।”

লিম ঝাঁঝের সঙ্গে বলল,”তোমার কি মনে হয় আমার সাথে শুধু দুর্ঘটনাই ঘটে!”

“উম আমি তো তাই দেখে এসেছি।”

“ওহ হ্যা আসলেই ঘটে এবং সেগুলোর কারণ তুমি। তোমার জন্য আমি সবসময় ঝামেলায় পরি।”

র‌্যবিট ইতস্তত করে বলল,”ওহ না মানে ওই তো সেই দিনই শুধু আমার জন্য আঘাত পেয়েছিলা। বাই দ্যা ওয়ে তোমার পায়ের ক্ষতটা ঠিক হয়েছে?”

“কিভাবে ঠিক হবে? তুমি টাকা দিয়েছিলা চিকিৎসা করার জন্য?”

বলে লিম জু কাউন্টারের সামনে গিয়ে দাঁড়াল।
ক্যাফেটেরিয়ার একটি টেবিলের ওপর দাঁড়িয়ে এক দল ছাত্রছাত্রী মিউজিকাল করছে। চিৎকার করে গান গাইতে ব্যস্ত তারা। এখানে উপস্থিত অনেকেই তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গাইছে বা তালি দিচ্ছে। র‌্যবিট ওর পাশে দাঁড়িয়ে বললো, “আহ আমার দেওয়ার কথা ছিলো নাকি। কিন্তু আমার যতদূর মনে পরে তখনই মাহীন তোমার চিকিৎসা করেছিল।”

লিম জু বিরক্ত কন্ঠে বলল,”আচ্ছা ঠিক আছে। আমার ক্ষত একদম ঠিক হয়ে গিয়েছে। এবং দয়া করে আমার জান ছাড় এখন।”

তখনই নায়েল কলিমোর সেখানে এসে দাঁড়াল। তারপর ওদের দিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে বলল,
“কি সমস্যা তোমরা কি ঝগড়া করছো?” ‌

র‌্যবিট ভাবলেশহীন মুখে বললো, “আহ না আমি কারোও সাথে ঝগড়া করি না।”

লিম বিরক্তি মাখা কন্ঠে বলল, “ওফ আমাকে জ্বালিয়ে মারল ও। দয়া করে এখন আমার পিছু পিছু এসো না।”

বলে অন্য দিকে চলে গেল। নায়েল দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,”তুমি আর শুধরালা না।” বলে নায়েল ক্যাফেটেরিয়ানের দিকে দৃষ্টি ফেরাল।

র‌্যবিট বলল,”ওহ হ্যা। একটা কথা তো জিজ্ঞেস করাই হলো না। এই মাহীন মনিটর কবে থেকে হলো?”

নায়েলের ভ্রু কুঞ্চিত হলো। জিজ্ঞেস করল,”মানে কি বলছো? ও মনিটর হতে যাবে কেন?”

“মনিটর না হলে গতকাল আমার বাসায় অভিযোগ পত্র নিয়ে এসেছিলো কেন?”

নায়েল অবাক হয়ে বলল,”একমিনিট ও তোমার বাসায় গিয়েছিল! কই একবারও তো বলেনি কার বাসায় গিয়েছিল। তাহলে তোমাকে চিনলো না কেন?”

“আমি তো বাসায় ছিলাম না। এবং সম্ভবত মাহীন এখনো জানে না আমার নাম রাবিত। র‌্যবিট বলেই আমাকে চিনে।”

নায়েল সায় জানিয়ে মাথা নাড়ল। তারপর জিজ্ঞেস করল,”আচ্ছা তুমি অকামটা কি করেছো যে ভাইস প্রিন্সিপাল অভিযোগ পত্র পাঠাতে বাধ্য হয়েছেন?”

র‌্যবিট অন্য দিকে চেয়ে ইতস্তত করে বলল,
“না..মানে..আসলে তেমন কিছুই না। আমাদের চলার পথে কতশত ঝুটঝামেলা আসে, সেগুলোর সাথেই মানিয়ে নিয়ে চলতে গিয়ে আমরাও ঝামেলায় জড়িয়ে যাই, বোঝই তো।” শেষের কথাগুলো বিজ্ঞের মত বলল ও।

নায়েল ঠোঁট উল্টে, ভ্রু উঁচু করে বলল, “ওরে হ্যা বুঝি তো চলার পথে ঝামেলা আসে নাকি তুমি বাঁধাও। সবই বুঝি।”

র‌্যবিট বিচলিত ভাবে হাসল। নায়েল একটা স্যান্ডউইচ নিয়ে কাউন্টারের কাছ থেকে সরে আসল। সাথে সাথে র‌্যবিটও চললো। র‌্যবিট বলল,

“আচ্ছা মাহীনের হ্যামস্টারকে আসলে খুন করলো টা কে? সবাই বলছে একটা নতুন মেয়ে, আজই প্রথম স্কুলে এসে এই কান্ড ঘটিয়েছে।”

নায়েল একটা গোল টেবিলের সামনে থেমে গেলো। টেবিলে জেনেট ও লিও বসে আছে। তার সামনের টেবিলে ক্যারোল বসে আছে। সেদিকে ইঙ্গিত করে বলল,

“ওই যে মেয়েটার লাল চুল। ওই মেয়েটা।”

র‌্যবিট ওর ইঙ্গিত অনুসরণ করে সেদিকে দৃষ্টি ফেরাল। তারপর অবাক হয়ে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে বলল,

“ওউ এই মেয়েটা সেই দুর্ভাগা। আহা শি ইজ হেলা বিউটিফুল! খুব অন্যায় হয়েছে ওর সাথে।”

নায়েল কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,”থাপ্পড় না খেতে চাইলে বাজে কথা বলো না।”

তখনই মাহীন ও সাইলোহ ক্যাফেটেরিয়ায় প্রবেশ করল। নায়েল লিওর পাশে নিজের চেয়ারে বসল। মাহীন ও সাইলোও এসে সামনে দাঁড়াল। র‌্যবিট জিজ্ঞেস করল,”বাই দ্যা ওয়ে ওর নাম কি?”

জেনেট জিজ্ঞেস করল, “কার?”

র‌্যবিট বলল, “আরেহ এই মেয়েটার, হ্যামস্টার খুনি।” এ কথা শোনা মাত্র মাহীন নিজের চেয়ারে বসতে বসতে বিরক্তিতে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।”

লিও বলল, “ক্যারোল। পুরো নাম জানি না।”

র‌্যবিট ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে তুলে বলল,”আরেহ! ক্যারোট।”

সাইলোহ ঠোঁট বাঁকা করে বলল, “বয়রা না কালা? ও বলসে ক্যারোল আর তুমি শুনো কিনা ক্যারোট। আসলেই মনে হয় র‌্যবিট হয়ে গেসো। সব জায়গায় ক্যারোট দেখতে পাও।”

র‌্যবিট গম্ভীর কণ্ঠে বললো, “হুহ আমি বয়রাও না। কালাও না। আমি ইচ্ছা করেই ওকে নাম দিসি ক্যারোট। আমার নাম রাবিত যদি র‌্যবিট বানাতে পারো। তাহলে ক্যারোল কেনো ক্যারোট হতে পারবে না? আর এমনিতেও আমাদের টার্টলও আছে।”

নায়েল বলল, “আরেহ আসলেই তো ক্যারোল নামের সাথে ক্যারোট নামটা যায়। এবং দেখো ক্যারোলের চুলের রঙও গাজরের মত গাঢ় কমলা।”

সাইলোহ বলল, “এনিওয়েজ এই একটা জিনিসে অমত করলাম না, যাও।”

মাহীম হঠাৎ বিস্ময়াবিষ্ট কন্ঠে বলল, “এই র‌্যবিট! এক মিনিট তুমি একটু আগে কি বললা, তোমার নাম রাবিত?”

র‌্যবিট সায় জানিয়ে মাথা নাড়ল। এবং বলল, “হ্যা হ্যা ওইটাই আমিও বলতে চাচ্ছিলাম। হয়তো জানো না কিন্তু গতকাল তুমি আমারই বাসায় গিয়ে হাজির হয়েছিলা। এবং দুঃখজনক ভাবে আমার কতগুলো স্টাফড গ্রেপ লিফসে ভাগ বসিয়েছ।”

সাইলোহ টিটকারি মেরে বলল,”ইশ তোমাকে হার কিপটা বললেও হার কিপটেরা লজ্জা পেয়ে যাবে।”

র‌্যবিটের মুখটা লজ্জায় লাল হয়ে গেল। তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,”ধ্যাৎ আমি মজা করছিলাম।”

মাহীন সেসব তোয়াক্কা না করে বলল,”তো তুমি টার্কিশ?”

“এভেত”। গর্বের সঙ্গে বলল র‌্যবিট।

লিও ভ্রু কুঁচকে বলল,” কি বললো ও এখনি?”

মাহীন বলল, “এভেত মানে ‘হ্যা’। তাই না র‌্যবিট?”

র‌্যবিট হেসে মাথা ঝাকাল। তারপর পাশের টেবিল থেকে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে সাইলোর পাশে বসে পরলো। সাইলোহ লাফ দিয়ে উঠে বলল, “এই! তুমি আমাদের সাথে বসছো কেন?”

র‌্যবিট ভাবলেশহীন মুখে বললো, “এতক্ষণ দাঁড়িয়ে কথা বললাম, কি হয়েছে তোমার? পক্স হয়েছে না হাম হয়েছে?”

মাহীন বলল, “থাক না বসুক। সমস্যা কি?”

লিও বলল, “হ্যা বসুক।”

সাইলোহ কিছুক্ষণ দোনোমোনো করছিলো। তবে কিছুক্ষণ পর আর কিছু বললো না।
.
.
.
পশ্চিম দিগন্তে সূর্য ডুবু ডুবু করছে। আকাশের ক্যানভাসে তুলি দিয়ে আকা লাল, কমলা গোলাপি ও হালকা বেগুনি রঙের গাঢ় আঁচড়। গুচ্ছ গুচ্ছ মেঘগুলো সূর্যের মরা আলোয় সোনার তরলের মাখানো বলে মনে হয়। তবে প্রকৃতির এ স্বর্গীয় দৃশ্য মাহীনকে অতটা টানছে না। মুগ্ধ হয়ে দেখছে ঠিকই কিন্তু ভেতরে ভেতরে এক তীব্র কষ্ট জমা হয়ে আছে। এ কষ্ট সবকিছুকে বিষাদ করে দিয়েছে। নিজের কামরায় জানালার উইন্ডোশীলে বসে আছে। আকাশের দিকে চেয়ে নিজের ভাবনায়ই ডুবে আছে। ভাবছে, কেন? কেন আমার সাথেই এমন হয়? আমি সবসময় সকলের ভালো চাই। অচেনা মানুষকেও চিন্তাভাবনা না করেও সাহায্য করতে চলে যাই। আমার সবচেয়ে বেশি আনন্দ হয় তখন যখন আমি মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলতে পারি। অথচ যেসব জিনিস আমার মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলে সেগুলোই আমার থেকে দূরে চলে যায়। হয়তো চুনোপুঁটি আসলেই একটা চুনোপুঁটি প্রাণীই ছিলো বটে। কিন্তু আমার কাছে ও আরোও অনেক বেশি কিছু ছিলো। পাঁচ বছর ধরে আমার সাথে আছে। পাঁচ বছর পূর্বে বাবার ক্যালিফোর্নিয়া চলে আসার পূর্বে শেষ বার আমাকে দেওয়া উপহার এই চুনোপুঁটি ছিলো। আমার বয়স তখন এগারো ছিলো। এই এতদিন কত স্কুল পাল্টেছিলাম তখন বান্ধবীকে হারিয়েছি কিন্তু চুনোপুঁটি সবসময় আমার সাথেই ছিলো।
.
.
.
.
তখনই টেইলর সুইফট এর “সেফ এন্ড সাউন্ড” গানটা বাজতে শুরু করলো। মাহীন চমকে উঠে বিছানায় পরে থাকা নিজের সেল ফোনের দিকে দৃষ্টি ফেরাল। যেতে ইচ্ছে করছে না তবুও উঠে গিয়ে সেল ফোনটা হাতে নিলো। ডিস্টার্বার কল দিচ্ছে দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। কিন্তু কল রিসিভ করলো না। ফোনটা হাতে নিয়েই এসে উইন্ডোশীলে বসল। বাজতে বাজতে ফোনটা কেটে যাওয়ার পর আবার বাজতে লাগল। এবার মাহীন ফোনটা রিসিভ করল। ওপাশ থেকে উচ্ছ্বাস ভরা কন্ঠ শোনা গেল, “হ্যালো মাহীন! কী খবর?”

মাহীন বিষন্ন কন্ঠে বলল, “ভালো না।”

“কেন? কি হয়েছে?”

“তেমন কিছু না। বাই দ্যা ওয়ে তুমি এই সময় আমাকে ফোন দিচ্ছো কেন? এখন তো ওখানে মাত্র ভোর বেলা।”

“হ্যা জানি। সূর্যদয় দেখতে দেখতে তোমার সাথে কথা বলছি। কিন্তু বলো না কি হয়েছে?”

মাহীন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,”চুনোপুঁটি মারা গেছে”।

ওপাশ থেকে অবাক স্বরে বলল, “কি! চুনোপুঁটি মানে তোমার হ্যামস্টার। ইয়া আল্লাহ কিভাবে?”

“অনেক লম্বা কাহিনী।”

“আচ্ছা ঠিক আছে বুঝেছি। বলা লাগবে না। এই জন্যেই তোমার মন মেজাজা খারাপ।” মাহীন কিছু বলল না। ওপাশ থেকে আবার বলল,

“আহ মাহীন এখন এসব নিয়ে মন খারাপ করে থেকো না। এমনিতেও চুনোপুঁটি তোমার কাছে পাঁচ বছর ধরে ছিলো। এই হ্যামস্টাররা আর কত দিনই বা বাঁচে? এমনিতেও ও তোমার কাছে সারাজীবন থাকত না। আর প্রতিটা জিনিস যেগুলো তোমার কাছ থেকে হারিয়ে যায় তার বদলে আরোও ভালো কিছু তোমার কাছে কোনো এক মাধ্যমে চলে আসে। আর প্রতিটা জিনিসেরই দুই রকম কোইন্সিকোয়েন্স দাঁড়ায়। ভালো ও খারাপ। এবং তোমাকে ভালোটাই নিতে হবে।”

মাহীন ম্লান কন্ঠে বলল, “আমার মনে হচ্ছে তুমি আমার লাইফ লেসনগুলোই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আমাকেই দিচ্ছো। এখন এসব দার্শনিকের মত কথা বলে আমার মাথা খারাপ করো না।” একটু থেমে আবার বলল, “আচ্ছা তুমি কেমন আছো?”

“আরেহ আমি ভালো ছিলামই কিন্তু এখন তুমি জিজ্ঞেস করলা দেখে আরোও ভালো হয়ে গেছি। আচ্ছা তোমার মনে হয় একটু একা একা থাকতে ইচ্ছে করছে। আমি আর বেশি ডিস্টার্ব করলাম না।”

মাহীন সায় জানিয়ে কল কেটে দিলো। তারপর ভাবল, বাহ ডিস্টার্বারেরও আবার এই বোধ আছে যে ও আমাকে ডিস্টার্ব করছে। অবশ্য সবসময় যদি এই বোধ কাজ করতো তাহলে ওর নাম ডিস্টার্বার দিয়ে সেভ করতাম না।’

তার প্রায় আধা ঘণ্টা পর মি. মোর্শেদ বাড়ি ফিরলেন। সারাদিন কাজের পর বেশ ক্লান্ত ছিলেন। তিনি যখন ফ্রেশ হতে ভেতরে গেলেন তখন নাইম মাহীনকে ডাকতে আসল। দরজা খুলে ভেতরে উঁকি দিয়ে বলল,

“হীন হীন বাবা আসছে। নিচে আয়। আর তাড়াতাড়ি বল আমার চুনোপুঁটিকে কোথায় গুম করেছিস?”

মাহীন ভাবলেশহীন ভাবে বলল, “এক প্রশ্ন বারবার করবি না। বলসি না আমি প্রথমে বাবাকে বলবো। চল নিচে।”

ওরা দুজন একসাথে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামল। মিসেস নাসরিন রাতের খাবার টেবিলের ওপর সাজিয়ে রাখছেন। মাহীনকে আসতে দেখে বললেন,

“এই যে এই মেয়েটা এই সময় কামরা থেকে বের হচ্ছে। কোনো কিছুতে আমাকে একটু সাহায্য করে না। তখন থেকে সবকিছু একাই করতে হচ্ছে আমাকে।”

মাহীন পানসে কন্ঠে বলল, “প্রতিদিনই তো করি।”

মিসেস নাসরিন বললেন, “আর আজকের কি?”

তখনই মি. মোর্শেদ ডাইনিং রুমে প্রবেশ করলেন। প্রথমেই মাহীনের উদ্দেশ্যে বললেন,

“কি ব্যাপার মা? তোর মুখটা এমন বিষন্নতায় ভরে আছে যে।”

মিসেস নাসরিন বললেন, “হ্যা ওকে জিজ্ঞেস করো কি হয়েছে। স্কুল থেকে আসার পর থেকে গুম মেরে বসে আছে।”

মি. মোর্শেদ নিজের চেয়ারটা টেনে নিয়ে বসে বললেন,
“তাই? কি হয়েছে রে তোর?

নাইম বলল, “হ্যা বল না। আমার হ্যামস্টারকে হারায় ফেলছিস নাকি?” বলেই মুখে এক লোকমা ভাত পুরলো।

মাহীন বলল,”এহ! চুনোপুঁটি আমার হ্যামস্টার ছিলো তোর না।”

মিসেস নাসরিন বললেন, “ছিলো মানে? কি হইসে চুনোপুঁটির?”

মাহীন ক্লেশপূর্ণ কন্ঠে বলল, “ও সাইকেল এক্সিডেন্টে মারা গেসে।” নাইম ও মি.মোর্শেদ খাওয়া থামিয়ে দিলেন। নাইম, মিসেস নাসরিন ও মি. মোর্শেদের মুখে বিস্ময় ছড়িয়ে গেল।নাইম উৎকন্ঠিত গলায় বলল, “তুই আমার চুনোপুঁটিকে সাইকেলে চাপা দিয়ে খুন করলি!”

মাহীন বলল, “আমি কখন বললাম আমার সাইকেলে চাপা পরেছে। ওটা আরেকটা শিক্ষার্থীর সাইকেল ছিল।”

মিসেস নাসরিন, “আহারে। এইজন্যে আমি মানা করেছিলাম চুনোপুঁটিকে নিয়ে স্কুলে যাইস না। কিন্তু কে শুনে কার কথা।”

মি.মোর্শেদ নরম কন্ঠে বললেন, “কিছু হবে না। ওটা তো আমি তোকে এনে দিয়েছিলাম। আমিই না হয় আরেকটা হ্যামস্টার এনে দিবো।”

মাহীন বলল, “না থাক। অন্য হ্যামস্টার তো আর চুনোপুঁটি হবে না। চুনোপুঁটি আমার সব কথা বুঝতো এবং আমার সাথে কথাও বলতো।”

নাইম বলল, “তুই এত বেখেয়াল কেন? কি এমন করছিলি যে চুনোপুঁটি কারোও সাইকেলের নিচে পরল?”

মাহীন বলল, “ও আমার বন্ধুর হাতে ছিলো। তখন হঠাৎ করে লাফ দিয়ে ছুটে যায় এবং ওই সময় একটা মেয়ে স্কুলের ভেতরে প্রবেশ করছিলো সাইকেল নিয়ে। তখন ওর সাইকেলের তলায় পরে।”

নাইম মুখ কুঁচকে বলল, “ইশ!”

মিসেস নাসরিন বললেন,”কি আর করা। যা হওয়ার হয়ে গেছে। মন খারাপ করিস না।”

মি. মোর্শেদ বললেন, “যদি বলিস আমরা কোথাও থেকে ঘুরে আসি? এখানে আসার পর থেকে সকলে মিলে একসাথে কোথাও যাওয়া হয়নি। কত সুন্দর সুন্দর জায়গা আছে। চল। কোথাও বেড়িয়ে এলে মনটাও ভালো হয়ে যাবে। ”

মিসেস নাসরিন বললেন, “হ্যা এখানে আসার পর থেকে একবারও বের হওয়াই হয়নি।”

মাহীন চিন্তিত গলায় বলল,” কিন্তু কোথায় যাওয়া যায়?”

নাইম ঝট করে বলল, ” ইওসেমিতে ন্যাশনাল পার্ক।”

মাহীন নিমিষেই হাস্যজ্জ্বল মুখে বলল, “হ্যা জায়গাটা অসাধারণ। এই একটা ব্যাপারে তোর সাথে একমত।”

নাইমের মুখে সন্তুষ্টির হাসি ফুটে উঠলো।

চলবে ইনশাআল্লাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here