-‘এলোকেশী কন্যা’-
[৪০]
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)
ইচ্ছেশক্তি মানুষের বাঁচার সম্ভবনা বাড়ায়। কিন্তু ইচ্ছেশক্তি হারিয়ে ফেললে প্রতিটা লড়াই কঠিন হয়ে যায়! তেমনি মতি বাঁচার ইচ্ছেশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। ক্ষমতা, জোর, পুরুষত্ব, অহংকার সব ওর ফিকে মনে হচ্ছে। এত সুন্দর শরীরটাও যেন অপ্রয়োজনীয় এক বোঝা! গতরাতে জঙ্গিরা ওকে অবচেতন দেখে ফেলে গিয়েছিল। ওর অর্ধমৃত শরীর টানার ইচ্ছে ওদের ছিল না। তাই যাওয়ার আগে প্রচুর মেরে রাগ তুলে ফেলে গেছে! এই সুযোগে মতি পালিয়ে বাঁচতে পারত; অথচ সেটা করে নি। জীবনের যুদ্ধ হেরে আপনজনের থেকে ঠকে নিজের প্রতিই করুণা হচ্ছে ওর। রোদের কড়া তাপে কিছুক্ষণ হলো ওর জ্ঞান ফিরেছে। সে অনেক কষ্টে উঠে পাহাড়ের কিনারে দাঁড়াল।মৃত্যু ছাড়া কোনো পথ দেখতে পাচ্ছে না সে। এত পাপ নিয়ে আদৌও বাঁচা যায়? এতদিন অনুভব করে নি বিধায় অনুশোচনা হয় নি। কিন্তু এখন যে নিজের প্রতিই ঘৃণা হচ্ছে।পুরো মস্তিষ্কে মৃত্যু নামক শব্দটা জায়গা দখল করেছে। মতি চোখ বন্ধ করে ওর পাপের কথাগুলো চিন্তা করল। তাৎক্ষণিক চোখের সামনে ভেসে উঠল, কতশত মেয়ের আতনার্দ, রক্ত, আর ওর আপন মায়ের মুখখানা! মা, ওর মা! উনার মৃত্যুর জন্য সেও দায়ী ছিল। এই পাপ কী দিয়ে মুছছে সে? আদৌ মোছা যাবে? হয়তো না! জীবন তাকে চরমভাবে ঠকিয়েছে।পাপে ডুবে সে পাপিষ্ঠের রুপ নিয়েছে। এসব ভেবে সে কয়েকবার শ্বাস নিয়ে বুক চাপড়ে আকাশের দিকে তাকাল। দম আটকে নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। মতি হঠাৎ চিৎকার করে কেঁদে উঠল। কেঁদে কেঁদে সৃষ্টিকর্তার কাছে ক্ষমা ভিক্ষা চাইল। ওর প্রতিটা কর্মের জন্য অনুতপ্ত হলো। ওর মা কে ব্যাকুল হয়ে ফিরে আসতে অনুরোধ করল।
মেয়েগুলোর সাথে করা অমানবিক অন্যায়ের জন্য নিজেকে প্রচন্ড আঘাত করল। তাদের কষ্ট সে অনুভব করতে পেরেছে। ওর অশ্রুতে আজ ছলনা নেই; তবে যা আছে শুধু অনুতাপ আর পাপবোধ! ওর কান্না, পাহাড়, আকাশ, পাথর, মাটি গাছপালা, এবং নামহীন পাখি সাক্ষী হয়ে রইল। ওর বলা কথাগুলো পাহাড়ে প্রতিধ্বণি হয়ে ফিরে আসল। সে পাগলের মতো চিৎকার করে ওর পাপকর্মের জন্য ক্ষমা চাচ্ছে। হঠাৎ মতি ওর বুকে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করে সেখানেই লুটিয়ে পড়ল। গলাটা তৃষ্ণায় শুকিয়ে গেছে।একটু পানি পেলে ভালো হতো। এত কষ্ট হচ্ছে কেন? মতি জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে অপষ্টভাবে উচ্চারণ করল,
-“মা, মা গো, মাফ কলো মা! আমি মেলা পাপ কলেছি। ওহ্ আল্লাহ তোমাল এই পাপী বান্দালে মাফ কলো। ”
এসব বলে মতি ছটফট করে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করল! সে সত্যিই না ফেরার দেশে পাড়ি দিলো।
সৃষ্টিকর্তা ওকে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ দিয়েছেন। সকল পাপের জন্য ক্ষমা চেয়ে মৃত্যু বরণ করল
সে।মায়ের অশ্রুতে নাকি আল্লাহর আঁরশ কেঁপে ওঠে। তো মৃত্যুপথচারী এক মায়ের শেষ সময়ের চাওয়াটুকু ছিল,
-”আল্লাহ, আল্লাহ গো আমাল পাগল ব্যাডাকে ছঠিকতা বুঝাল তৌফিক দান কলো মাবুদ।ওলে মলাল(মরার) আগে ক্ষমা চাওলার সুযোগটুকু দিও লহমানীর লহীম। ওল সহজ মৃত্যু দিও লে মাবুদ। আমি ওলে তোমাল ভলছাতে লেখে গেলাম মাবুদ। এই অভাগী মায়েল এ দোয়াতুকু কবুল কলো, গো আল্লাহ।”
মতির মায়ের এই চাওয়াটুকু সৃষ্টিকর্তা রেখেছেন।
আমাদের সৃষ্টিকর্তা এতটাও কঠোর নন। সমুদ্রের পানির সমান পাপ করে মাফ চাইলেও উনি মাফ করে দিবেন। তবে মাফ চাওয়ার মতোনই চাইতে হবে। ওর মায়ের কথাটা মতির অজানায় থেকে যাবে। ওর মায়ের দোয়া আর সৃষ্টিকর্তার অসীম করুণায় সে মূল্যবান সুযোগটুকু পেয়েছে। মা, ছোট্ট একটা শব্দ হলেও ব্যাপ্তিটা বিশাল। যেটা কারো সঙ্গে তুলনা করে চলে না। কী আশ্চর্য! আত্মহত্যা করতে এসে মতি স্বাভাবিক মৃত্যু বরণ করল। এটা ছিল, সৃষ্টিকর্তার প্রদত্ত মতির জন্য অনাকাঙ্ক্ষিত চমক! উনি চাইলে কত কী’ই না পারেন। মা অর্থাৎ মমতাময়ী এজন্য এতকিছুর পরেও দোয়া করে গিয়েছেন। সন্তান খারাপ যতই খারাপ হোক মা কখনো মুখ ফিরাতে পারেন না। মতির মা’ও পারেন নি।অবশেষে মায়ের দোয়া ও সৃষ্টিকর্তার রহমত ওর উপরে ছিল। ওর মৃত্যুটা স্বাভাবিক পাপকর্মের হিসাব তাকে দিতেই হবে। এটা সবার জন্য বাধ্যতামূলক। এর থেকে কারো ছাড় নেই! পাহাড়ের কিনারে থাকা মতির দেহটা হঠাৎ গড়িয়ে নিচে পড়ে গেল। উঁচু পাহাড় থেকে সেটা পড়ল, বড় এক পাথরের উপর। সাথে
সাথে ওর দেহটা ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। মাথার খুলি ভেঙে মগজ বেরিয়ে গেল৷ওর দেহটা হয়তো
এখানেই পঁচে গলতে শুরু করবে। রক্তের গন্ধে বন্য প্রাণীদের ছুঁটে এসে খাদ্য বানাবে, কতশত পাখিরা ঠুকরে খাবে ওর দেহটাকে। পাপ নাকি বাপকেও ছাড়ে না। প্রবাদ’টার জলজ্যান্ত প্রমান
মাতবর আর মতির শেষ পরিণতি। অবশেষে পাপ এবং পাপিষ্ঠের বিনাশ।
–
শুভাননা’রা একদল লোকের সাথে আলোচনায় বসেছেন। উনারা দীদামার টাকার ভাগ চাচ্ছেন।
দাদীমা নাকি উনাদের দলের লিডার ছিলেন।আর উনি অনেকদিন ধরে নেশাদ্রব্য পাচারের কাজে যুক্ত ছিলেন। পর্যটকদের ভয় দেখি বিভিন্ন জেলায় সেসব পাচার করতেন। গোপনে লোকও পাঠাতেন। উনি এতটাই হিংস্র ছিলেন, না শব্দ শুনতেন না। উনার মুখ্য কথা ছিল, ‘করো নয়তো মরো।’ কেউ রাজি না হলে সত্যি সত্যিই তাকে মেরে ফেলতেন।উনার স্বামী মারা যাওয়ার পর, আপনজনদের থেকে লাঞ্ছিত হয়ে উনার মনে জেদের সৃষ্টি হয়েছিল।মন ও মস্তিষ্কে কথাটা ডুকে গিয়েছিল, টাকায় সব। আর টাকা থাকলে সব হাতের মুঠোয়, মান-সন্মান, সমাজ, কদর, এবং আপনজনরাও। আর গার্মেন্টের কর্মী হলে দু’বেলা খাবার ছাড়া কিছু পাবেন না। উনার স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই থেকে যাবে। বর্তমান যুগে সৎ মানুষের ভাত নাই। সেখানে মেয়ে হলে খুবলে খেতে কেউ দ্বিধাও করবে না। এজন্য ঢাকায় থাকাকালীন’ই উনি এই কাজে যুক্ত হয়েছিলেন।তারপর এখানে এসে লোকচক্ষুর আড়ালে এসব করতেন। আর এই টাকা ছাড়াও উনার অনেক টাকাও ছিলো। তবে এর হদিস কেউ জানে না।
এছাড়াও এখানে আরেকটা চক্র’ও তৈরী হয়েছে, গোপনে এবং সতর্কতার সাথে! বিগত চারবছর ধরে এসব চলছে। যদিও এসব এখনো কেউ টের পায় নি। এখানে জঙ্গি আর জংলী দু’টো দল’ই মিশে আছে। আত্মগোপন করতে জঙ্গিরা জংলী রুপ নিয়েছে। পাহাড়ের গহীন জঙ্গলে এরা বাস করে। আর রাত হলে বেহায়াপনাতে মেতে ওঠে।
জংলীদের সাথে থেকে জঙ্গিরাও এমন হিংস্র হয়ে উঠেছে। প্রকৃতপক্ষে ওরা ছিল ছদ্মবেশী। কিন্তু জংলীদের সাথে থেকে জীবন যাত্রা, খাদ্যাভাসা, বেশভূষা সবকিছু বদলে ফেলেছে। তবে জংলীরা এমনিতেই খুব ভয়ানক। ওদের চিন্তা-ভাবনাও কুৎসিত। জঙ্গিদের সঙ্গ দিতে ওরা এর ফায়দাও উঠিয়েছে। প্রথম প্রথম জঙ্গিরা জংলীদের কথা শুনত না, তখন জংলী জঙ্গিদের মারতেও দ্বিধা করে নি। এজন্য অনেক জঙ্গিকে প্রাণও দিতে হয়েছে। ধীরে ধীরে সময়ের সাথে দুই দল’ই মিশে গেছে। এখন জংলী আর জঙ্গিকে আলাদা করা মুশকিল। ওরা এমনভাবে জাল বিছিয়েছে এখন অবধি কেউ টের পায় নি। আর সুযোগে অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।
জংলী ; যারা অসভ্যতার যুগের মতোন জীবন যাপন করে। তাদের পোশাক, অর্ধনগ্ন বা পশুর চামড়া/পাতা! পছন্দের খাবার পঁচা মাংস, শূকর, এবং বন্য প্রাণী।
জঙ্গি; যারা সভ্য সমাজের আড়ালে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।
(বিঃদ্রঃ- আশা করি বুঝেছেন জঙ্গি শব্দটা কেন ব্যবহার করেছি। আর কিছু জানার থাকলে কমেন্টে বলবেন।)
তবে জংলীদের সংখ্যা বেশি থাকায় ওদের দাপট বেশি ছিল। ওরা যা বলতো তাই করতে হতো।তা নাহলে মেরে ফেলত। এজন্য জঙ্গিরাও গোপনে একটা কৌশল অবলম্বন করল। ওরা জংলীদের ইয়াবা সেবনে আসক্ত করল। ফলে, জংলীদের ছেলে/মেয়ে সবার যৌনস্পৃহা বেড়ে গেল। ওদের মস্তিষ্ক, মন ও দেহে যৌনচিন্তা প্রখরভাবে গেঁথেও গেল। ওর ধীরে ধীরে এটাকে বেশি প্রাধান্য দিতে
লাগল। এছাড়াও, জঙ্গি ওদের এলএসডি নামক নেশা করিয়েছে। ইয়াবা বাড়ায় প্রচুর যৌনস্পৃহা আর এলএসডি বাড়ায় হিংস্রতা। এমনও হয়েছে অন্যকে বলি দিতে গিয়ে নিজের গলাতেই কোপ বসিয়েছে। এই কাজ অনেকজন করেছে। এভাবে জংলীদের সংখ্যাও তারা কমিয়েছে এবং এসব দেওয়াও বন্ধ করে দিয়েছে। হঠাৎ নেশাদ্রব্য বন্ধ করাতে জংলীরা কেমন পাগল হয়ে যাচ্ছিল।কী হচ্ছে? শরীরে কিছু চাচ্ছে কিন্তু কী? তারা বুঝতে পারত না। আর এই রাগ তুলত,পাহাড়ে ঘুরতে আসা মানুষগুলোকে ধরে। নিমর্মভাবে তাদের
মারত। নেশাদ্রব্য না পাওয়াতে জংলীরা অনেকে আত্মহত্যাও করেছে। এদের পেছনে অযথা টাকা নষ্ট করে লাভ নেই। তাই জঙ্গিরা ওদের মরতে দেখেও দেয় নি। বরং গোপনে খুব মজা নিয়েছে।
তবে দাদীমা এসবে জড়িত ছিলেন না, উনি শুধু জঙ্গিদের নেশাদ্রব্য পৌঁছে দিতেন। আর মোটা অঙ্কের টাকা নিতেন! এসব শুনে শুভাননাগণ একে-অপরের দিকে তাকালেন। কার মনে কী থাকে ধরাও যায় না। দাদীমা এসব করতেন এটা যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না।লোকগুলো পুনরায় টাকা দেওয়ার জন্য উনাদের তাড়া দিতে লাগলেন।
তখন শুভাননাদের মধ্যে যিনি সবচেয়ে বড় উনি বললেন,
“তাকাগুলো তো আমাদেল কাছে নেই। আমলা ওগুলো কাজে লাগিয়ে ফেলেচি। বিছাছ না হলে, এই বালিটা (বাড়িটা) খুঁজে দেকেন।”
একথা শুনে লোকগুলো দ্রুত উঠে তন্নতন্ন করে সব জায়গা খুঁজল।কিন্তু পেলো না! চেচাঁমেচিও করা যাবে না। গ্রামবাসী জেনে গেলে, ব্যাপারটা
সুখকর হবে না। লোকগুলো টাকা না পেয়ে রেগে বললেন,
“একথা যেন পাঁচকান না হয়! হলে খুব খারাপ হবে। আপনারা আপনাদের কাজ করুন, আর আমাদেরটা আমরা। কেউ কারো কাজে বাঁধা হবো না। আর এখন থেকে আমরা কেউ কাউকে চিনি না। ভালো থাকবেন আর এই কথাগুলো মনে রাখবেন।”
এদের সাথে লড়তে যাওয়া বোকামি ছাড়া কিছু নয়। কারণ এতে ক্ষতি ছাড়া কিছুই হবে না।তাই উনারা সম্মতি সূচক মাথা নাড়ালেন।অর্থাৎ তাই হবে! তারপর লোকগুলো আশেপাশে চোখ বুলিয়ে স্থান ত্যাগ করল। এই টাকা কত আসবে যাবে, ত্রিশ লাখ’ই তো। আর টাকাগুলো সত্যিই বাড়িতে নেই। ওই শিক্ষকের বাড়ির উঠানে পুঁতে রাখা হয়েছে। শুভাননাগণ আন্দাজ করেছিলেন
এমনকিছু হতে পারে। তাই আগেই ব্যবস্থা করে রেখেছেন। মাতবরের কার্যক্রম উনাদের স্বচক্ষে দেখা, তাই হয়তো সহজে সতর্ক হয়েছিলেন।তবে লোকগুলোর কথা উনারা নিজেদের মধ্যেই চেপে গেলেন।এসব গ্রামবাসীকে জানানো মানে বিপদ ডেকে আনা। আর দাদীমার টাকা উপার্জনের পথটা হয়তো অসৎ, কিন্তু টাকাগুলো? টাকা কী বুঝে, সৎ আর অসৎের পার্থক্য!তবে টাকাগুলো এবার ভালো কাজে লাগানো হবে। এতে যদি গ্রামবাসীর উপকার হয় তাতে মন্দ কী!
–
মাত্র দুইদিন পর আলোর কলেজে পরীক্ষা। ওর দিনের অর্ধভাগ পড়াশোনাতেই কেটে যায়।তবে মেঘের কোনো কাজে হেলা করে না। বরং দায়িত্ব পালনে অটল থাকে। রাকা নেই, রান্নাগুলো ওর করা লাগছে। আলো দুপুরের রান্না করছে আর সুযোগ বুঝে বইয়ের চোখ বুলিয়ে বিরবির করে পড়ছে। রোদ কয়েকবার এসেছিল, ওকে সাহায্য করতে এবং বলেছেও বাইরে থেকে নাহয় খাবার আনবে। আলো শুনে নি! সে পাহাড়ি এলাকার পরিশ্রমী মেয়ে; আদরের আহ্লাদী না।এত সহজে হাল ছাড়বে না। তাছাড়া এখানে কষ্টের কাজ’ই তো নেই। এই কাজটুকু সামলানো কষ্টকরও নয়, বরং আনন্দের। কারণ নিজের সংসারের কাজ। একটুপরে মেঘ স্কুল থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিলো। তারপর ব্যাট হাতে নিয়ে যেতে যেতে বলল,
“বউমনি, আমি একটু খেলতে গেলাম।”
“রোদের মধ্যে খেলবে না, শরীর খারাপ হবে।”
”আচ্ছা।”
মেঘ নাচতে নাচতে খেলতে চলে গেল। বড়দের সাথে আজকে খেলা হবে। বড় বলতে, ওর এক ক্লাস বড় ভাইদের সঙ্গে। রোদ সারাদিন বাসায় বসে অফিসের কাজগুলো করছে। মেঘকে ওর কাছে আসতে না দেখে রোদই নিচে গেল। মেঘ নেই! তারমানে খেলতে চলে গেছে তাকে দরকার নেই, তার বউমনি তো আছেই। রোদ রান্নাঘরে গিয়ে পকেটে হাত গুঁজে হেলান দিয়ে দাঁড়াল।
তারপর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে, আলোর ঘামার্ত নাকটা ওর বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে মুছে বলল,
”শুনেচি, মেয়েদেল নাক গামলে নাকি ছামী’লা খুব ভালুবাছে।তাইলে, তোমাল ছামী কী তুমাকে ভালুবাছে আলো?”
রোদ পাহাড়িদের মতো করে সুর টেনে কথাগুলো বলল। এই ছেলের মধ্যে ফাজিলদের সব গুন’ই বিদ্যামান। তাছাড়া মেঘের দাভাই এটা ভুললেও চলবে না। মাত্র কয়েকটাদিন সে পাহাড়ি ভাষাও আয়ত্ত করে ফেলেছে। ওকে খোঁচাতে সে আবার বলছেও। আলো ঠোঁট কামড়ে হাসি আঁটকে ওর রান্নায় মন দিলো। নয়তো হেসে ফেললে ফাজিল টা মজা নিবে। রোদ কাজু বাদাম খেতে খেতে আলোকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে বলল,
“আলে এ ছুলি এত লজ্জা কীছের ছুনি? আমিই তো লে।”
আলো এবার শব্দ করে হেসে ফেলল।এই ছেলে সত্যিই ফাজিল; না মহাফাজিল। রাগ, জেদ, বুদ্ধি, শয়তানি, সবটা যেন সঠিক সম-পরিমাণে
আয়ত্ত করেছে। ওর বলার ধরণ দেখে আলো না হেসেও পারল না। আলো হাসতে হাসতেই ওকে বলল,
”আপনি আসলেই অসভ্য?”
“অসভ্যের কী করলাম, হুম? আর বউয়ের কাছে অসভ্য না হলেই তো সমস্যা।”
” কি সমস্যা? ”
কথাটা বলে আলো গলায় হাত দিতে যাচ্ছিল। রোদ দ্রুত আটকে দিলো, মরিচ কেটে গলাতে হাত দিচ্ছে, এই মেয়ে পাগল নাকি! রোদ নিজে আলোর গলায় ঘামে লেপ্টানো চুলগুলো সরিয়ে
থুতনির নরম মাংসে ঠোঁট ছোঁয়াল; তারপর বাঁকা হেসে বলল,
“বউয়ের কাছে অসভ্য না হলে, আমার পাখিটা অন্যের ডালে গিয়ে বসবে। আর আমাকে বুড়ো আঙ্গুল বলবে শালা হারবাল খা।”
“হারবাল কি দাভাই?”
রোদের পেছনে দাঁড়িয়ে মেঘ বলে উঠল! এসময় মেঘকে ওরা কেউ’ই আশা করে নি। আর আলো তো রোদের কথায় এবং কাজে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে গেছে। এই অসভ্যটা কী করল এটা? তার এমন ভাব যেন কিচ্ছু করে নি। এদিকে মেঘকে কিছু একটা বলে বোঝাতে হবে। তাই রোদ’ই মুচকি হেসে স্বাভাবিকভাবে উত্তর দিলো,
“বড়দের শক্তি হওয়ার ওষুধ।”
“ওহ!”
বড়দের শুনে মেঘ আর আগ্রহ দেখাল না। ওর বলটা নিয়ে দৌড়ে চলে গেল। রোদ পেছনে ঘুরে দেখে আলো নেই। এই মেয়ে কই গেলো? সে তো এসেছিল; মিষ্টি বউটাকে একটু জ্বালাতে। কারণ
সারাদিন পড়লে পড়া মস্তিষ্কের থাকবে না।আর পড়ার ফাঁকে ফাঁকে একটু বিনোদনেরও দরকার।
যাতে মনটা ফ্রেশ হয়ে মস্তিষ্ক পড়াটা ধরে রাখতে পারে।এজন্য সে ইচ্ছে করে ফাজলামি করছিল। কিন্তু মেয়েটা বুঝলে তো! হ্যাঁ, বুঝে ঠিকই তবে উল্টোটা। রোদ আলোকে খুঁজে না পেয়ে ফোনে কথা বলতে বলতে চলে গেল, পরে দেখে নিবে।
আর আলো চিপায় থেকে বেরিয়ে হাফ ছেড়ে বাঁচল। নয়তো রোদ ওকে জ্বালিয়ে মারত, খুব’ই অসভ্য মানুষটা! এসব ভেবে, আলো মিটিমিটি হেসে রান্নার কাজে মন দিলো। ঘন্টা দু’য়েক পর মেঘ ঘেমে নেয়ে ক্লান্ত শরীরে বাসায় ফিরল।ওরা খেলায় হেরে গেছে! দুইদিন পর আবার খেলা হবে। সাগর তখন মাসকাবারির বাজারগুলো রান্নাঘরে তুলে রাখছিল। চালের বস্তা দু’জনকে ধরে আনতে দেখে মেঘ বলল,
“ওমা এটাই ধরে আনতে পারছো না। ইয়ে খাবে তোমরা, তাহলে শক্তি হবে।”
রবি হাসতে হাসতে মেঘের গাল টেনে বলল,
“কী মেঘবাবু?”
“হারবাল খাবা হারবাল।”
একথা শুনে সাগর আর রবি দুজনে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। এই ছেলে কী বলে? হারবালের কথা জানল কোথা থেকে? আলোকে দেখে ওরা লজ্জায় মুখ কাঁচুমাচু করতে লাগল। ইস! দুষ্টুটা
ওদের বে-জায়গায় লজ্জায় ফেলে দিলো। আর আলো সব শুনেও না শোনার ভাণ ধরে চলে গেল। বেচারাদের লজ্জা বাড়াতে চাচ্ছে না সে।
তাছাড়া কী বা করবে? সব নষ্টের গোড়াতো তো ওই, ‘রোদ মেহবুব।’
To be continue……..!!