‘সুদর্শন শঙ্খচিল’
[২৭]
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)
প্রত্যয়ের আব্বু স্বাভাবিক ভাবে হাতের গ্লাসটা রেখে বললেন,” আমার বসুন্ধরার ফ্ল্যাটে।” প্রত্যয় ওর আব্বুকে সরাসরি জিজ্ঞাসা করল,”এর কারন?” প্রত্যয়ের আব্বু হেসে বললেন,”দেশের বাইরে গেলেই যে পড়াশোনা হয় তা কিন্তু নয়। তুয়া দেশে থেকেই পড়াশোনা কমপ্লিট করুক।” উনার কথা শুনে প্রত্যয় তুয়ার দিকে তাকাল কিন্তু কিছু বলল না। তুয়া মাথা নিচু করে প্লেটে আকিঁবুকিঁ করছে। প্রত্যয়ের আম্মু বললেন,” কিন্তু ওরা একা বসুন্ধরার ফ্ল্যাটে থাকবে কেন?” প্রত্যয়ের আব্বু বললেন, “আমরা স্ব-পরিবারেই যাবো। আর ওখানকার স্কুল কলেজে ওদের ভর্তি করিয়ে দিব।” প্রত্যয়ের আম্মু সম্মতি দিলেন আর তুয়ার কলেজের ব্যাপারটা উনি তো জানতেন। তাই তুয়ার ভালোর জন্য উনিও সম্মতি জানালেন।
বাবার মুখের উপরে প্রত্যয় প্রিয়ম কোনোদিন কিছু বলেনি, আজও বলল না। কারন ওরা জানে ওদের বাবা বিচক্ষণ এবং তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পূর্ন মানুষ। উনি যে সিদ্ধান্ত নিবে অবশ্যই তাতে সবার ভালো হবে। আজকে সকালে শশুড় বউমা মিলে ঘুরতে গিয়ে অনেক যুক্তি পরামর্শ করে এসেছে। তুয়া এটাও জানিয়েছে, সে বাবার বাড়ি একটু দূরে থাকে চাই। কারন মনমালিন্য করে যাতে তাৎক্ষণিক বাবার বাসায় যেতে না পারে। এত কাছে থাকলে রেগে গেলে এটাই সে পুনরায় করবে। আর মনমালিন্য করে দু’জন দূরে দূরে থাকলে সম্পর্কে ফাটল এবং দুরত্বও বাড়বে। প্রত্যয়ের আব্বুও ভেবে দেখলেন তুয়া কথাটা মন্দ বলেনি। সেই সঙ্গে উনি তুয়ার থেকে ওর বাইরে যাওয়ার কথাটাও শুনলেন। এবং গেলে কি হতে পারে? ভালো মন্দ দু’টো দিকে সুন্দর করে বুঝিয়েছেন। উনার যুক্তি দিয়ে বলা কথা তুয়া অল্পতেই বুঝেছে। তুয়া দেশে থেকে পড়াশোনা করবে আর দেখিও দিবে, উনাকে এই কথা দিয়েছে। তুয়ার কথার ভিত্তি আর আত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক অটুট রাখতে প্রত্যয়ের আব্বু নতুন ফ্ল্যাটের যাওয়ার কথা বললেন।
তুয়ার এখনকার সিদ্ধান্তটাও প্রত্যয় বিনাবাক্যে মেনে নিল।
প্রত্যয়ের আব্বু উনার খাওয়া থামিয়ে চাঁদের দিকে তাকিয়ে বলল,”শুধু তুয়া নয়! তুমিও ভুলেও পড়াশোনা ছাড়ার কথা মাথায় অনবেনা। কারন পড়াশোনা দু’ একদিন নয় বরং সারাজীবনের জন্য সঙ্গী। দিনশেষে বিশ্বস্ত স্বামী যখন বেইমানী করে অথবা মারা যায়, তখন এই পড়াশোনাকে সঙ্গী করে দু’মুঠো ভাত যোগাড় করে যায়। বাস্তবতার কড়াঘাতে পৃষ্ঠ হতে না চাইলে পড়াশোনা করতে হবে। আর আমার ছেলেরা তোমাদের সাপোর্ট করছে। এই সাপোর্ট টাকেই তোমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়তে কাজে লাগাও। আবেগ দিয়ে নয় বিবেক দিয়ে ভেবে মস্তিষ্ককে কাজে লাগাও। আবেগী বয়সে করা এই ভুলটা যেন পরে আফসোসের কারন না হয়, সেভাবেই পরবর্তী পদক্ষেপ নাও। আর একটা কথা মনে রাখবে, আমরা আজ ভালো আছি। কাল না থাকতেও পারি। আজকে তিনবেলা খাবার জুটেছে, কাল একবেলা না জুটতেও পারি। তাই বলছি, বাঁচতে হলে নিজেকে সন্মানিত করে সন্মান নিয়ে বাচাঁর মতো বাঁচো। কেনো কাজই সহজ নয়। বাঁধা বিঘ্ন, আর কষ্টকে অতিক্রম করো দেখবে তুমিও একদিন সফল হবে।”
তুয়া আজকে বুঝল! প্রত্যয় আর প্রিয়ম কেন এতো আত্মবিশ্বাসী? তার কারন ওরা পরিবার নামক শেকড় থেকে এভাবেই সাপোর্ট পায়। তাদের মনোবেল, ইচ্ছেশক্তি, আত্মবিশ্বাসটাকে এভাবেই বাড়িয়ে দেন, তাদের বাবা নামক মানুষটা। বটবৃক্ষের ছায়ার মতো কথার মাধ্যমে মনে সূক্ষ্ম ভাবে প্রশান্তি এনে দেন। আর প্রশান্তিতে পুরো মনটাকে শুদ্ধ করে লক্ষ্য পূরনের উৎসাহটা দ্বিগুন হারে বাড়িয়ে দেয়। শশুড় এমন হয় চাদঁ তুয়ার ধারণা ছিল না। আর শশুড় নামক বাবার সাপোর্ট পেয়ে দু’জনে যেন শক্তি পেল। আর ওরা কথা দিল উনি যা বলবেন তাই হবে।
তারপর খাওয়ার পর্ব শেষ করে যে যার রুমে চলে গেল। তুয়া রুমে গিয়ে প্রত্যয়ের সামনে মাথা নিচু করে বসে বলল,”সরি।” প্রত্যয় তুয়াকে নিয়ে আধশোয়া হয়ে বসে মুচকি হেসে বলল,”তোমাকে দূরে রেখে থাকাটা আমার জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে যেতো।” তুয়া ছলছল চোখে তাকিয়ে বলল,”আর কষ্ট দিব না, প্রমিস।” প্রত্যয় হেসে তুয়ার কপালে ঠোঁটের স্পর্শ দিয়ে বলল,”হুম, এখন বাচ্চার চিন্তা বাদ দিয়ে পড়াশোনাতে মন দাও।” তুয়া প্রত্যয়ের বুকে মাথা রেখে প্রশান্তিতে চোখ বন্ধ কর নিল। আর প্রত্যয় তুয়া বাহুডোরে আবদ্ধ করে ঘুমের দেশে পাড়ি জমাল। অবশেষে মান অভিমানের পালা কাটিয়ে ওরা আবার দু’জনে এক হয়ে গেল।
বিকেলে রনিত ইচ্ছেকে ওদের বাসায় এনে পলকের চুলে তেল দিতে বসেছে। পলক চুপ করে বসে আঙ্গুর খাচ্ছে। ইচ্ছে সোফায় বসে নুডুলস খেতে খেতে হঠাৎ ভ্রু কুঁচকে বলল,”মামা তুমি তেন দিচ্ছ কেনু মামুনীর মাতায়?” রনিত হাসতে হাসতে বলল,”মা, তোমার মামুনি বাচ্চা হয়ে গেছে তাই।” পলক রনিতের পেটে গুঁতো মেরে ইচ্ছেকে বলল,” ইচ্ছে সোনা বলো তো আমাদের বাবুটা কার মতো দেখতে হবে? আমার মতো নাকি তোমার মামার মতো?” ইচ্ছে মুখ ভেংচি দিয়ে বলল, “আমাল মতো ছুন্দল হবে।” রনিত পলককে দু’জনে একসঙ্গে বলে উঠল, “আমিন।” ইচ্ছে উঠে দাঁড়িয়ে নাক ফুলিয়ে বলল,”না আমিনের মতো না। বাবুতা আমাল মতো ছুন্দল হবে।” পলক হাসতে হাসতে বলল,”কেউ ভালো দোয়া করলে আমিন বলতে হয়। যাতে আল্লাহ সেই দোয়াটা পূরণ করে দেয়। আমাদের তো তোমার মতোই বাবু দরকার এজন্য আমিন বললাম।” ইচ্ছে কথাটা শুনে ভুবন ভুলানো হাসি দিল অর্থাৎ কথাটা তার পছন্দ হয়েছে।
পরেরদিন রনিতের ছুটি শেষ। তাই পলককে ইচ্ছেদের বাসায় রেখে, সে অফিসে গেছে। পলক সারাটাদিন ইচ্ছের সঙ্গে বকবক করে সময় কাটায়। রনিত প্রতি ঘন্টায় ফোন করে পলকের খোঁজ নেয়। সে বেচারাও শান্তিতে থাকতে পারেনা। সব সময় পলককের চিন্তায় ওর মাথায় ঘুরঘুর করে। দুপুরের দিকে ইচ্ছে পুরো রুমে হেঁটে ওর বাবার সঙ্গে ফোনে কথা বলছে। ওর বাবাও আদুরে সুরে মেয়ের কথার তালে তাল মিলাচ্ছে। চাকরিসূত্রে উনি ঢাকা থেকে পোস্টিং হয়ে সিলেটে আছেন। কিন্তু উনার মনটা পড়ে থাকে তার এই তোতাপাখি মেয়েটার কাছে। ইচ্ছে ওর বাবাকে জানাল, রনিত পলকের মাথায় তেল দিয়ে দেয়, প্রিয়ম ওকে প্যারা বলে, ওর পুতুলের বিয়ে দিবে , পানি ফেলে দেওয়াতে ওর আম্মু বকা দিয়েছে, ওর খরগোশটা সারাদিন খায়, বড় স্যান্ডেল পরে হাঁটতে গিয়ে সে হাঁটুতে ব্যাথা পেয়েছে। মেয়ে হাঁটু ব্যাথা পেয়েছে শুনে উনি বললেন,”আম্মা পায়ে বেশি ব্যাথা পেয়েছ?” ইচ্ছে ঠোঁট ফুলিয়ে বলল,”ফুঁ দিয়ে দাও বাবা।” ইচ্ছের ওর হাঁটুর কাছে ফোনটা রাখল আর ওর বাবা ফুঁ দিয়ে দিল। বাবা দেওয়া ফুঁ তে ওর সব ব্যাথা চলে যাবে। কারন বাবার দেওয়া ফুঁ তে জাদু আছে।
প্রত্যয় হসপিটাল কাজ সেরে দ্রুত বাসায় ফিরে এসেছে। ওর বন্ধু সাদের বিয়ে উপলক্ষে ওদের স্ব- পরিবারে সেখানে যাওয়ার কথা। কিন্তু সবাই ব্যস্ততায় থাকায় অগত্যা প্রত্যয় তুয়াকেই যেতে হচ্ছে। তুয়া বেশ কয়েকটা ড্রেস বের করে প্রত্যয়কে দেখিয়ে বলল,
“কোনটা পড়ব?”
“যেটাতে তুমি স্বস্তিবোধ করবে। আর ব্ল্যাক ড্রেসে গরম লাগে বেশি তাই ব্ল্যাক বাদ থাক।”
-“আচ্ছা।”
তুয়ার কলাপাতা রংয়ের শাড়ি সঙ্গে মিল রেখে প্রত্যয় সেইম কালার পান্জাবী পড়ল। পান্জাবীটার বুকে, বাহুতে, সবুজ সুতার ডিজাইন করা। তুয়া ভেবেছিল প্রত্যয় ব্লেজার পড়বে কিন্তু প্রত্যয় পান্জাবী পড়ল। প্রত্যয়ের পছন্দমতো তুয়া হালকা সাজে মানানসই হালকা গয়না পরে রেডি হলো। তারপর দু’জনে আম্মুকে বলে বেরিয়ে হলো। তুয়া গাড়িতে বসে কিছু বলার আগে, প্রত্যয় ড্রাইভিং সিটে বসে তুয়ার সিটবেল্ট লাগিয়ে বলল,”তুমি শাড়ি আর আমি ব্লেজার পরলে, দেশী বিদেশী মিলে ব্যাপারটা খামছাড়া লাগত। আর যাচ্ছি তো বাঙালির বিয়েতে। তাই তুমি শাড়িতে আর পান্জাবীতে এটাই পারফেক্ট।” তুয়া মুচকি হেসে বাইরে দৃষ্টি রেখে বিরবির করে বলল,”দেখতে কিন্তু মন্দ লাগছেনা।”
সাদ, পৃথা আর প্রত্যয় তিনজনে প্যারিস থেকে ডাক্তারী ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফিরেছে। ওরা তিনজনে খুব ভালো বন্ধু আর সাদের সঙ্গে পৃথার বিয়ে হচ্ছে। যদিও সাদ আর পৃথা সম্পর্কে চাচাতো ভাই বোন। সাদ একজন সাইকোলজিস্ট,পৃথা
গাইনোকোলজিস্ট আর প্রত্যয় কার্ডিওলজিস্ট। এই তিনজনই মানুষের সেবা প্রদানের কাজে নিয়োজিত। এসব নিয়ে গল্প করতে করতে প্রত্যয় সাদের বাসায় পৌঁছাল। সাদের বাসার দারোয়ান প্রত্যয়কে দেখে খুশি বললেন,”ওয়াসিক বাবা তুমি! তা কেমন আছো, বাবা? তোমার বাবা মা আর ছোট ভাইটা ভালো আছে তো?” প্রত্যয় গাড়ি থেকে বের হয়ে উনাকে সালাম দিয়ে মুচকি হেসে বলল,”আলহামদুলিল্লাহ! সবাই ভালো আছে আংকেল, আপনি কেমন আছেন?” উনি ছলছল চোখে তাকিয়ে ধরা গলায় উত্তরটা দিতে পারলেন না, তাই হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালেন। প্রত্যয় উনার অবস্থা বুঝতে পেরে সোজা গিয়ে উনাকে জড়িয়ে ধরলেন। একজন ডক্টর, দামী পোশাক, দামী সুগন্ধী মাখা ছেলেটা এমন করবে, দারোয়ানের পোশাকে পরিহিত মানুষটা এতটাও আশা করেননি। উনি শক্ত করে প্রত্যয়কে জড়িয়ে ধরে কম্পিত কণ্ঠে বললে,”ভালো আছি বাবা, খুব ভালো আছি।”
উনি না ছাড়া অবধি প্রত্যয় নিজেকে ছাড়ল না৷ একটুপরে, উনি প্রত্যয়কে ছেড়ে তুয়ার দিকে তাকালেন। প্রত্যয় তুয়ার সঙ্গে উনার পরিচয় করিয়ে দিল, তুয়া উনাকে সালাম দিল। উনি সালামের উত্তর নিয়ে বললেন, “ম্যাম আপনি ভালো আছেন?” তুয়া মুচকি হেসে বলল,”ওয়াসিক আপনার বাবা হলে আমি ম্যাম হলাম কিভাবে? বাবা সঙ্গে মা ডাকটাই মানায়, তাই না?” উনি খুশি হয়ে মাথা নাড়িয়ে তুয়ার মাথায় হাত রেখে দোয়া করলেন। তারপর প্রত্যয় তুয়াকে নিয়ে সামনের এগোলো আর দারোয়ান আংকেল ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বললেন,”আল্লাহ, ওদের ভালো রেখ আর সুখ সমৃদ্ধিতে ভরিয়ে দিও।”
দারোয়ান আংকেলের ছেলে বেঁচে আছে আল্লাহর রহমত আর প্রত্যয়ের সঠিক চিকিৎসার ফলে। এজন্য উনার যতবার প্রত্যয়ের সঙে দেখা হয়, উনি ততবার আবেগপ্রবণ হয়ে যায়।
প্রত্যয় তুয়াকে বাসায় নিয়ে প্রবেশ করে দ্রুত ওর পাশে থেকে তুয়াকে সরিয়ে দিল। আর একদল ছেলে মৌমাছির দলের মতো প্রত্যয়ের উপরে হামলে পড়ল। কমপক্ষে বিশ পঁচিশটা ছেলে তো হবেই। তুয়া হতভম্ব হয়ে দুই হাত দিয়ে ঠোঁটে চেপে ধরে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। তুয়া ভাবছে এত জনের নিচে প্রত্যয় নিশ্চয়ই চ্যাপ্টা হয়ে গেছে।
উপস্থিত সবার চোখ তখন ওদের দিকে। হঠাৎ প্রত্যয় তুয়ার পাশে দাঁড়িয়ে মুচকি হেসে বলল,”তোরা উঠবি নাকি মেঝেতেই শুয়ে থাকবি?” প্রত্যয়ের কথা শুনে ছেলে গুলো হুড়মুড় করে উঠে অবাক হয়ে ওর দিকে তাকাল। তখন তুয়াকে সরিয়ে প্রত্যয় নিজেও সরে গেছে। আর ওর জায়গায় পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সাদকে এগিয়ে দিয়েছে। আর সবাই নিচে চাপা পরেছে বেচারা সাদ। সবাই উঠে পরলেও সাদ তখনও টানটান হয়ে মেঝেতে শুয়ে ছিল। এত জনের ভরে ওর বেহাল দশা। সাদ নড়ে চড়ে বলে উঠল,”ইয়াম্মা, আমার আর বাসর করা হবে না। আমি হাড়-গুর সব চুরচুর করে দিয়েছে।”
বেচারা বরের বেহাল দশা দেখেও উপস্থিত সবাই অট্টহাসিতে ফেঁটে পড়ল। প্রত্যয় সব বন্ধু একে একে ওদের সঙ্গে কথা বলল। প্রত্যয় যে এদের খুব কাছের, ওদের ব্যবহার দেখে তুয়া বুঝতে পারছে। এরা সবাই প্রত্যয়কে ওয়াসিক নামে ডাকছে আর অবাক করা ব্যাপার সবাই পান্জাবী পরিহিত। সবাই তাদের পেশা এবং সাহেবী চাল বাদ দিয়ে সাধারণ পোশাকে এসেছে। যাতে বন্ধুর বিয়ে প্রাণ খুলে মজা করতে পারে। প্রত্যয়ের তখনকার উপস্থিত বুদ্ধি দেখে, তুয়া এখনও শক কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এদিকে সব বন্ধুরা মিলে হৈচৈ করে আড্ডা দিতে লাগল। পৃথাও তুয়ার সঙ্গে অল্পতে মিশে গেল। সবাই কথা বলছে আর তুয়া চুপ করে শুনছে। এত কাপলদের ভিড়ে প্রত্যয় তুয়ার জুটিটা যেন সবার নজর কাড়ছে।
বিয়ে পড়ানো সম্পূর্ণ করে খাওয়া দাওয়াত পর্বও সমাপ্ত করা হলো। বর বউ, এবং বন্ধুরা মিলে একদফা ফটোশুটও চলল। হঠাৎ প্রত্যয়ের বন্ধুরা এসে প্রত্যয়ের দুই হাত বেঁধে বলল,”ভাই তোরে সহজে বাগে আনতে পারিনা, আজকে তোরে ছাড়ছিনা। কি ভাবি এতে আপনার আপত্তি আছে?”
প্রত্যয় নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলল,”ভাই ছাড় তাহলে মনমতো ট্রিট পাবি। আরেকজন বলে উঠল, “মিষ্টি কথায় কাজ হবেনা ব্রো। ভাবি আপনি আমাদের দল তো?”
কথাটা শুনে তুয়া বোকার উপর মাথা নাড়াল। আর সবাই হামলে পড়ল প্রত্যয়ের উপর। হাত বাঁধা থাকায় প্রত্যয় কিছু করতে পারল না, চুপ করে বন্ধুদের অত্যাচার সহ্য করল।
পার্টি স্প্রে, বার্থডে কেক, বিভিন্ন রংয়ের জরি দিয়ে প্রত্যয়কে ভূত বানানো হলো। প্রত্যয় মাথা নাড়ালেই ওরা স্প্রে করছে। তুয়া এক কোণে দাঁড়িয়ে সব বন্ধুদের উল্লাস দেখছে। অনেকদিন পর প্রত্যয়কে পেয়ে সব বন্ধুরা খুব খুশি। শুধু প্রত্যয় নয় ওদের সবার একই দশা, এখানে বর বউও ছাড় পায়নি। তুয়া বাদ ছিল কিন্তু পৃথা সেই কাজটাও সম্পূর্ণ করল। তুয়া প্রত্যয়ের কাছে গিয়ে টিস্যু দিয়ে প্রত্যয়ের চোখ মুছে দিল। প্রত্যয় তাকাতে পারছিল না হয়তো ওর চোখ জ্বলছিল। এটা দেখে সবাই, “ওহো! কত্ত প্রেম ” বলে চিৎকার করে উঠল।
প্রত্যয় তুয়াকে ওর হাতটা খুলে দিতে বলল। প্রত্যয় টিস্যু দিয়ে পুরো মুখ মুছে সাদকে চেয়ারের সঙ্গে বাঁধল। বর বলে কথা ওকে ছাড় দেওয়ার প্রশ্নই আসেনা। সাদের অবস্থা করুন দেখে সবাই হেসে মেঝেতেগড়াগড়ি খাচ্ছে। সাদকে সবাই ইচ্ছে মতো ভূত বানাল। আর পাশাপাশি সাদ পৃথার বাড়ি তাই বিদায়েরও তাড়া নেই। ওদের এসব আনন্দে উপস্থিত সবাই দূরে দাঁড়িয়ে মজা নিচ্ছে। সবার আড়ালে প্রত্যয় তুয়াকে নিয়ে ফ্রেশ হতে গেল। হৈচৈ এর ভিড়ে কেউ ওদের খেয়াল করল না। প্রত্যয় ওয়াশরুমের বেসিনের সামনে দাঁড়িয়ে ওর চুলে শ্যাম্পু করে নিল। ক্লোথ স্টানে টাওয়াল থাকার সত্ত্বেও ওর রুমাল ভিজিয়ে মুখ আর ড্রেস মুছল। কারন কারো ব্যবহারিত টাওয়াল বা ড্রেস ব্যবহার করা ওর পছন্দ নয়।
তারপর প্রত্যয় তুয়াকেও ফ্রেশ হতে সাহায্য করল। ওই রুমটাতে হেয়ার ড্রায়ার দেখে প্রত্যয় সেই রুমের মালিকের পারমিশন নিল। তারপর ড্রায়ার দিয়ে আগে তুয়ার শাড়ি তারপর ওর চুল আর পান্জাবী শুকিয়ে নিল। তুয়া ওর হ্যান্ড ব্যাগ থেকে চিরুণী বের করে ওর আর প্রত্যয়ের চুল ঠিক করে নিল। তারপর দু’জনের বাইরে বের হলো। ওদের দেখে সাদ চিৎকার করে বলল,”আবার ফিটফাট হয়ে মিঃ পারফেক্ট হয়ে গেলি।” কথাটা শুনে প্রত্যয় বাঁকা হেসে বলল,”কারন ওয়াসিক রায়হান পারফেক্ট কাজেই অভ্যস্ত।”
একটু দূরে তুয়ার সঙ্গে সাদের আম্মু কথা বলছেন। মেহমান আর আত্মীয়ও ভিড়ে তখন ভালো ভাবে কথা বলতে পারেন নি। তুয়ার সঙ্গে প্রত্যয়ের আরো বন্ধুদের বউও আছে। প্রত্যয় এক সাইডে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলে কল কাটতে, পৃথা এসে ওর পাশে দাঁড়াল। পৃথাকে দেখে প্রত্যয় মুচকি হেসে ফোনটা ওর পকেটে রেখে বলল,”কিছু বলবি? আর তোর মুখটা এতো শুকনো লাগছে কেন?”
পৃথা ছলছল চোখে তাকিয়ে প্রত্যুত্তরে বলল,”বাচ্চা একটা মেয়েকে বিয়ে করে, আসলেই কি সুখে আছিস? সে আদৌ কি তোর চাওয়া পাওয়ার দাম দেয়?”
To be continue….!!