#অনুভূতির_শীর্ষবিন্দু 🍁🍁
#written_by_Nurzahan_Akter_Allo
#Part_26
নক্ষত্রের আম্মু কারো সাথে কথা বলে না। নিজের মতো করে থাকে। বাসাটা প্রাণহীন হয়ে উঠেছে। মিঃ আবরারও নেতিয়ে গেছে। মামনি নবিনের চলে যাওয়াতে খুব কষ্ট পেয়েছে। উনিও কাঁদছে।
এভাবেই প্রায় তিনটা দিন কেটে গেল। তবুও দু’বাসাতেই থমথমের পরিবেশ বিরাজ করছে। এই তিনদিনে কিছু তো ঠিক হলোই না, বরং দিন দিন আরো জটিল হয়ে যাচ্ছে। সাফওয়ানরা এসব জানার পর ওদের মাথা হ্যাং হয়ে গেছে। নক্ষত্র তিতিক্ষার সম্পর্ক আর ওই দিকে অদ্রি। সাফওয়ানরা অদ্রিকে বোনের মত ভালবাসতো। অদ্রি এমন বোকামি কিভাবে করলো, এটা ওরা বুঝতে পারছে না। এত কিছু মধ্যে, নক্ষত্র আর তিতিক্ষার এখন কি হবে? ওরাই জানে, নক্ষত্রের মনে তিতিক্ষা ঠিক কতটুকু জায়গা জুড়ে আছে। তিতিক্ষাকে পাওয়ার জন্য নক্ষত্র ঠিক কি কি করেছে, এটা শুধু ওরাই জানে। আজকে নিজের বোনের করা একটা ভুলের জন্য এই পরিণতি।
নক্ষত্রের সাথে তিতিক্ষার দুই দিনে তিনবার কথা হয়েছে। তিতিক্ষার বাবা তিতিক্ষার জন্য ছেলে দেখা শুরু করেছে। আজকে সকালে চারটা ছেলের ছবি এনেছিলো তিতিক্ষাকে দেখানোর জন্য। এছাড়া তিতিক্ষার ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষক তিতিক্ষাকে পছন্দ করে। উনি নাকি একসপ্তাহ আগে বিয়ের প্রস্তাব এনেছিলো। এটা এতদিন তিতিক্ষার কাছে অজানা ছিলো। আজকে জানলো মামনির থেকে। তিতিক্ষার কিছু বলার নেই। যে যা বলছে শুনে যাচ্ছে। এক বুক কষ্ট নিয়ে কিছু বলার ইচ্ছে বা শক্তি, ওর কোনটাই নেই। তিতিক্ষা রুমে এসে নক্ষত্রকে ফোন দিলো। দুইবার দেওয়ার পর নক্ষত্র রিসিভ করলো। তিতিক্ষা নক্ষত্রকে বললো,
–“আমি আপনার সাথে দেখা করতে চাই। প্লিজ! একটা বার আসুন। প্লিজ।”
নক্ষত্র ধীর কন্ঠে তিতিক্ষাকে বললো,
–“আজকে দেখা করাটা কি জরুরী?”
–“হুম! জরুরী না হলে আপনাকে বলতাম না। আসবেন?”
–“আসছি।”
নক্ষত্রের খুব জ্বর এসেছে। শরীরটাও খুব ব্যাথা করছে। কালকে রাত থেকে ওর জ্বর। কাউকে বলেও নি। ইচ্ছে করেই সে মেডিসিনও নেয়নি। এই জ্বর ওর কাছে কিছুই না। বুকের ভেতরে তোলপাড়, সাথে মস্তিষ্কের হাজারো টেনশনের পাহাড় নিয়ে ওর প্রতিটা সেকেন্ড কাটছে। সব কষ্টগুলোকে সে দীর্ঘশ্বাসের মধ্যে সমাধি দেওয়ার চেষ্টায় আছে। নক্ষত্র বেড থেকে উঠলো। তিতিক্ষার আবদারটা উপেক্ষা করার ক্ষমতা নক্ষত্রের নেই। ও বেড থেকে উঠে, ফ্রেশ হয়ে গাড়ির চাবি নিয়ে বেরিয়ে গেলো। নক্ষত্রের আম্মু বেলকণি থেকে দেখেও কিছু বললো না। কেন বলবে? ছেলে-মেয়ে বড় হয়ে গেলে বাবা-মায়ের কথায় গুরুত্ব দেওয়ার সময় কই তাদের? তারা যা বলবে তাই ঠিক। তাহলে তারা ভালো থাকুক তাদের ভালো নিয়ে।
তিতিক্ষার আম্মুরা ড্রয়িংরুমে বসে আছে।
তিতিক্ষাকে বের হতে দেখে মামনি ভ্রু কুঁচকে তাকালো। সবাইকে এভাবে তাকাতে দেখে তিতিক্ষা দাঁড়িয়ে গেলো। তিতিক্ষার আম্মু কিছু বলার আগেই তিতিক্ষার বললো,
–“পালাচ্ছি না। তোমরা আমাকে নিয়ে অযথা ভয় পেও না। আমাকে একটু বের হতে দাও। কথা দিচ্ছি, আবার ফিরে আসবো।”
তিতিক্ষা বের হয়ে গেল। কেউ আর কিছু বললো না। ওকে একটু সময় দেওয়া উচিত। মন বলে তো কিছু আছে। ওইদিকে কালকে থেকে অদ্রির শরীরটা খুব খারাপ। নবিন অদ্রিকে ডক্টরের কাছে নিয়ে গিয়েছিলো। ডক্টর মেডিসিন দিলো আর বেড রেস্টে থাকাতে বললো। অদ্রি শরীরের কনডিশন ভালো না। এমন ভাবে চলতে মিসক্যারেজ হয়ে যেতে পারে। নবিন ডক্টরের থেকে প্রয়োজনীয় কথাগুলো বলে নিলো। এরপর ওখান থেকে বের হয়ে, মেডিসিন আর ফল নিয়ে বাসায় ফিরলো। নবিন অদ্রির দিকে তাকিয়ে বললো,
–“নিজের যত্ন নাও। আল্লাহ না করুক, বেবির কিছু হলে আমি কিন্তু ছেড়ে কথা বলবো না। বেবিটার জন্যই আমাদের এত লড়াই।”
অদ্রি নবিনের দিকে তাকিয়ে আছে। নবিন ফল কেটে অদ্রিকে খেতে দিলো। অদ্রিকে চুপ করে বসে থাকতে দেখে নবিন বকা দিলো। অদ্রি ছলছল চোখে নবিনের দিকে তাকিয়ে এক টুকরো আপেল মুখে নিলো। নবিন অদ্রিকে খেতে বলে রান্না ঘরে চলে গেলো। নবিন মুখে কিছু না বলুক ওর মধ্যে তোলপাড় হচ্ছে। এটা অদ্রি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে। নবিন বাইরে থেকে আসার সময় ইচ্ছে করে বাইরের খাবার আনেনি। অদ্রির এখন বাইরের খাবার খাওয়া ঠিক হবে না। এজন্য নিজেই রান্না করতে গেলো। অদ্রি উঠে নবিনের পাশে এসে দাঁড়ালো। নবিন অদ্রির দিকে তাকালো। অদ্রি আমতা আমতা করে বললো,
–“এখানে একটু থাকি। একা রুমে থাকতে ভালো লাগছে না।”
নবিন কিছু বললো না। একটা চেয়ার এনে অদ্রিকে বসতে দিলো। অদ্রি চেয়ারে বসে নবিনের কাজকর্ম দেখছে। নবিনের চোখ দুটো ফুলে লাল হয়ে আছে। মুখটা শুকিয়ে গেছে। নবিনের দিকে তাকালে অদ্রির বুকটা ফেটে যাচ্ছে। ওর জন্যই এমন জঘন্য একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ওর জন্যই নক্ষত্র আর তিতিক্ষার সম্পর্ক ভাঙ্গতে বসেছে। এসব ভাবলে অদ্রির আর বাঁচতে ইচ্ছে করছে না। ওর জন্য নবিন বাসা ছাড়া হলো। সব দোষ অদ্রির। ওর কারণেই সম্পর্কের ভীত গুলো ভেঙে গেল। দুই পরিবারের মাঝে ফাটল ধরলো। কেউ ভালো নেই। কারো মুখে হাসির রেশ টুকু নেই। তবুও সবাই নিজেদের স্বাভাবিক রাখার যুদ্ধে নেমেছে। কিন্তু কেউ না পারছে গিলতে, আর না পারছে উগলাতে।
তিতিক্ষা বটগাছে নিচে এসে চুপটি করে বসে আছে। একটু পর অপর সাইডে নক্ষত্রের গাড়ি এসে থামলো। গাড়ি লক করে রাস্তা পার হয়ে নক্ষত্র তিতিক্ষার দিকে আসছে। তিতিক্ষা নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর মুখটা শুকিয়ে গেছে। পরিপাটি থাকা ছেলেটাকে আজকে অগোছালো লাগছে। তবুও তিতিক্ষার কাছে মন্দ লাগছে না। নক্ষত্র তিতিক্ষার কাছে এসে দাঁড়ালো। নক্ষত্র তিতিক্ষার দিকে তাকিয়ে, শুকনো একটা হাসি দিলো। প্রাণহীন হাসি যাকে বলে। এই হাসিটা নক্ষত্রের ঠোঁটে বড্ড বেমানান লাগছে তিতিক্ষার কাছে। আগের সেই প্রানবন্ত মুচকি হাসিটা ছিলো তিতিক্ষার মন ভালো করার মতো। তিতিক্ষা ছলছল চোখে নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে আছে। তিতিক্ষার চোখ ফুলে আছে। কিছুক্ষণ আগেও কাঁদছিলো। এর জন্য চোখ, নাক লাল হয়ে আছে। দাঁড়িয়ে না থেকে তিতিক্ষা নক্ষত্রকে নিয়ে, ক্যাম্পাসের অপর সাইডে গেলো। পুকুর পাড়ে ঘাসের উপর বসলো ওরা। দু’জনের দৃষ্টি টলটলে ওই পুকুরের পানির দিকে। নক্ষত্র ওর দৃষ্টি সামনের দিকে রেখে বললো,
–“এভাবে কেঁদো না। আমি তো এখনো মারা যায়নি, এখনই হাল ছেড়ে দিচ্ছো কেন?”
তিতিক্ষা মাথা নিচু করে কাঁদছে। নক্ষত্র তিতিক্ষার চোখের পানি মুছে দিলো। তিতিক্ষা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে বাসার ঘটনাটা নক্ষত্রকে বললো। তিতিক্ষার বাসায় ওর বিয়ের দেওয়ার তোড়জোড় চলছে। কালকে ছেলে পক্ষ ওকে দেখতে আসবে। পছন্দ হলে আকদ্ করে যাবে। এসব শুনে নক্ষত্রের মনে হলো, ওর বুকের মধ্যে কেউ আগুনের জ্বলন্ত লাভা ঢেলে দিলো। নক্ষত্র তিতিক্ষার চোখের আড়ালে ওর চোখের কোণে জমে থাকা অশ্রুবিন্দু মুছে নিলো। জীবনে এই প্রথম নক্ষত্রের নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হচ্ছে। এত জট কিভাবে খুলবে? কিভাবেই বা সব সমাধান করবে? নক্ষত্র শান্ত কন্ঠে তিতিক্ষাকে বললো,
–“আমি তোমাকে মুক্ত করে দিলে তুমি ইচ্ছেমত তোমার জীবনটা সাজাতে পারবে? ”
তিতিক্ষা বিষ্ফোরিত দৃষ্টিতে নক্ষত্রের দিকে তাকালো। এই প্রথম নক্ষত্রের কথাটা শুনে তিতিক্ষার মনটা বিষন্নতায় ভরে গেল। ওর মন চাচ্ছে নিজেকে শেষ করে দিতে। তিতিক্ষা মুখ ঘুরিয়ে নিলো। নক্ষত্র তিতিক্ষার দিকে তাকালো। এটাও বুঝলো, তার মনোপ্যাথি কথাটা শুনে খুব কষ্ট পেয়েছে। এজন্য একরাশ অভিমান নিয়ে মুখ ফিরিয়ে রেখেছে। নক্ষত্র তিতিক্ষার দিকে দৃষ্টি রেখে বললো,
–“অভিমানে মুখ ফিরালে, পরিস্থিতিটা বুঝলে না। নিজের কথাটাই ভাবছো, আমার কষ্টটা বুঝলে না।”
তিতিক্ষা নক্ষত্রের শার্টের কলার আকড়ে ধরেছে। নক্ষত্র তিতিক্ষার দিকে তাকালো। তিতিক্ষাকে বাহুডোরে আবদ্ধ করে ওর প্রাণ খুলে কাঁদতে মন চাচ্ছে। তিতিক্ষা নক্ষত্রের বুকে মাথা ঠেকিয়ে কাঁদছে। নক্ষত্র চোখ বন্ধ করে আছে। সে তিতিক্ষার চোখে পানি না পারছে সহ্য করতে, আর না পারছে কষ্ট গুলোকে কমিয়ে দিতে। তিতিক্ষা কাঁদতে কাঁদতে বললো,
–“প্লিজ নাহিয়ান! আমাকে ছেড়ে যেও না। তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে, তোমাকে হারানোর ভয়টা নিয়ে আমি বাঁচতে পারছি না। তোমার মাঝে আমি আমার অনুভূতি গুলোর স্বার্থকতা খুঁজে পেয়েছি। তুমি তোমার অনুভুতি থেকে আমাকে ছিন্ন করো না। আমি এক্কেবারে নিঃস্ব হয়ে যাবো। তুমি আমাকে দূরে সরিয়ে দিও না। আমি শুধু তোমাকে চাই, আমি তোমার অনুভূতির শীর্ষবিন্দু হয়ে থাকতে চাই।”
তিতিক্ষা আজকে নক্ষত্রকে তুমি করে বললো। অন্য সময় হলে নক্ষত্র কত খুশি হতো, তিতিক্ষাকে লজ্জা দিতো। কিন্তু আজকে পরিস্থিতি আর এই মুহূর্তেটাতে দুটোই বেমানান। নক্ষত্র তিতিক্ষার চোখের পানি মুছে দিলো। মাথা নাড়িয়ে তিতিক্ষাকে কাঁদতে নিষেধ করছে। নক্ষত্রের মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। সব কষ্ট এসে গলাতে দলা পাকিয়ে কান্না হয়ে বের হতে চাচ্ছে। নক্ষত্র আলতো করে তিতিক্ষার কপালে একটা আদর দিয়ে, ধরা গলায় বললো,
–“কঠিন পরিস্থিতিতে অসীম ধৈর্য্য নিয়ে আমাদের সবটা সামলাতে হয়। এভাবে ভেঙে পড়লে চলবে না। আমি আছি তো।”
তিতিক্ষার হঠাৎ করে খেয়াল হলো, নক্ষত্রের শরীর খুব গরম। সে এতক্ষণ অন্য তালে ছিলো। এজন্য খেয়াল করেনি। নক্ষত্রের জ্বর এসেছে। তিতিক্ষা তারাতাড়ি করে ওর চোখ মুছে নিলো। নক্ষত্রের শরীরে প্রচন্ড জ্বর। তবুও সে চুপ করে বসে আছে।
তিতিক্ষা নক্ষত্রকে হাত ধরে টেনে উঠালো। গাড়ির কাছে গিয়ে, গাড়িতে উঠে তিতিক্ষা নক্ষত্রকে সামনে যেতে বললো। তিতিক্ষার কথামতো নক্ষত্র তাই করলো। নক্ষত্র তিতিক্ষাকে জিজ্ঞেস করলো, ওর কিছু লাগবে কিনা। কিন্তু তিতিক্ষা কিছু বললো না। হঠাৎ ও গাড়ি থামাতে বলে গাড়ি থেকে নেমে পড়লো। এরপর নক্ষত্রকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে, ওকে গাড়িতে রেখেই গাড়ি লক করে চলে গেল। নক্ষত্র পেছন থেকে ডাকলো, তবুও তিতিক্ষা ওর কথা শুনলো না।
নক্ষত্র গাড়ির স্টেয়ারিং-এ মাথা ঠেকালো। চোখটা প্রচন্ড জ্বলছে। নক্ষত্র যতটুকু জানে, নক্ষত্রের আম্মু ওদের আর মেনে নিবে না। উনার সাথে কথা বলে যতটুকু বুঝলো, উনি এই সম্পর্কটাকে আর এগোতে দিবে না। উনার মনে এত এত অভিযোগ এসে জমা হয়েছে৷ নক্ষত্র এসব আর ভাবতে পারছে না, মাথা ঘুরছে, এজন্য চোখ বন্ধ করে নিলো। বুকের বা পাশের শার্টটুকু ভিজে আছে তিতিক্ষার অশ্রুজলে। নক্ষত্র সেখানে একবার হাত বুলিয়ে নিলো। ওর চোখ দিয়েও বেশ কয়েক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। নক্ষত্র সে অশ্রুটুকু দ্রুত মুছে নিলো। শরীরটা খুব খারাপ লাগছে। তিতিক্ষা এসে গাড়ির দরজা খুলে বসলো। নক্ষত্রকে গাড়িটা নিরিবিলি স্থানে নিয়ে যেতে বললো। নক্ষত্র একটা নির্জন স্থানে গাড়িটা সাইড করে রাখলো। তিতিক্ষা নক্ষত্রের মুখের সামনে চিকেন স্যান্ডুইচ ধরলো। নক্ষত্র তিতিক্ষার দিকে তাকালো। তিতিক্ষা চোখের ইশারায় খেতে বললো। নক্ষত্র সিটে মাথা ঠেকিয়ে তিতিক্ষার হাতে খাচ্ছে, নক্ষত্র খেতে খেতে তিতিক্ষার হাতে স্যান্ডুইচ টা ওর দিকে ধরলো। তিতিক্ষা মুখে নেওয়ার সাথে সাথে ওর চোখ থেকে একফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো। তিতিক্ষা ঘাড় ঘুরিয়ে চোখ মুছে নিলো। নক্ষত্র আর খেতে না চাইলে, তিতিক্ষা জোর করে খাইয়ে মেডিসিন খাইয়ে দিলো। গাড়ির সামনের সিট থেকে নেমে দু’জনেই পেছনের সিটে আসলো। নক্ষত্র আজকে কোনো কথা বলছে না, শুধু তিতিক্ষার কাজ গুলো দেখছে। তিতিক্ষা নক্ষত্রকে ওর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়তে বললো। নক্ষত্র শুয়ে পড়লো। তিতিক্ষা মেডিসিনের সাথে একটা মুভও এনে ছিলো। সে মুভটাই নক্ষত্রের কপালে লাগিয়ে দিয়ে, আলতো ভাবে টিপে দিচ্ছে। নক্ষত্র কান্নামাখা গলায় বললো,
–“আমাকে দূর্বল করে দিও না। আমার নিরবতার আত্ননার্দ আমার মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকতে দাও। তুমি এমন করলে আমার লড়াইটা আরো কষ্টসাধ্য হয়ে উঠবে।”
তিতিক্ষা নক্ষত্র চুল টেনে দিতে দিতে বললো,
–“আমি তোমাকে দূর্বল করছি না। তোমার কষ্টের ভাগ নিতে চাচ্ছি। যার মাঝে আমার ভালো থাকা লুকিয়ে আছে, তাকে সামলে রাখছি। যাতে সে পরবর্তী পদক্ষেপটা সুষ্ঠুভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।”
নক্ষত্রের খুব ঘুম পাচ্ছে। ঠিকমত খাওয়া দাওয়া নেই। ঘুমায়নি ঠিকমত, শরীরে জ্বর। নক্ষত্রের দু’চোখে নিদ্রা এসে ভীড় জমিয়েছে। তিতিক্ষা গাড়ির জানালা লক করে দিলো। গায়ের ওড়না খুলে নক্ষত্রের শরীরের উপর বিছিয়ে দিলো। নক্ষত্রের শীত লাগছে, ওর শরীরের পশম গুলো কাটা কাটা হয়ে উঠছে। নক্ষত্র ওর সমস্যার কথা একটাও না বললেও, তিতিক্ষা সবটা নিজে থেকে বুঝে নিচ্ছে। এটাও হয়তো নক্ষত্রের প্রতি ওর সুক্ষ ভালবাসার জন্য সম্ভব হচ্ছে। নক্ষত্র কি সুন্দর ভাবে ঘুমাচ্ছে। তিতিক্ষা আলতো ভাবে নক্ষত্র চুল টেনে দিচ্ছে।
মামনি আর তিতিক্ষার আব্বু-আম্মু, বসে আছে। উনারা চাই তিতিক্ষার বিয়ে দিয়ে দিতে। নক্ষত্র তিতিক্ষার আব্বু-আম্মু, মামনিকে অসংখ্যবার ফোন দিয়েছিলো। উনারা কেউ রিসিভ করেনি। নক্ষত্রের সাথে উনারা কিছুতেই কথা বলবে না। তিতিক্ষা চারটা ছেলের মধ্যে একটা ছেলের ছবিও দেখেনি। তাই উনারা বসে ঠিক করছে, কোন ছেলেটা নক্ষত্রের থেকে বেস্ট হবে। তিতিক্ষার মনে উপর দিযে কি ঝড় যাচ্ছে, উনারা বুঝতে পারছে। তবুও জেদের বশে বাবা-মায়েরা সর্বনাশা পথটাকেই বেছে নিচ্ছে। কারণ তাঁরা নক্ষত্রের আম্মুকে দেখিয়ে দিবে। এনারা উনার কাছে কিছুতেও ছোট হবে না। আর এই জেদটাই সবার মাঝে চেপে বসেছে। তবে তাদের জেদের ফলাফল হবে, নক্ষত্র আর তিতিক্ষার অনুভূতিগুলোর দাফন করার মাধ্যমে।
মেডিসিন নেওয়ার পর নক্ষত্রের কপাল ঘামছে। তিতিক্ষা ওর ওড়নাটা সরিয়ে নিলো। সর্তকতার সাথে নক্ষত্রের শার্টের চারটা বোতাম খুলে দিলো। আস্তে করে ওর ওড়না দিয়ে ঘাম মুছে দিলো। নাহলে এই ঘাম বসে গেলে ঠান্ডা লেগে যাবে। এ্যাশ কালার শার্টের নিচে, সাদা স্যান্ডো গেঞ্জি পরিহিত। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে কপাল ঢেকে যাচ্ছে। পারিপাটি থাকা ছেলেটা, আজকে নিজেকে সজ্জিত করেছে অগোছালো রুপে। যে তিতিক্ষা নক্ষত্রের আশে-পাশে সহজে যেতে চাইতো না৷ নক্ষত্রের উপস্থিতিতে ওর হৃদস্পন্দন বেড়ে যেতো। আজকে সেই তিতিক্ষা নক্ষত্রের শার্ট খুলে ঘাম মুছে দিচ্ছে। যদিও বা পরিস্থিতি ওকে বাধ্য করেছে। নক্ষত্র এখনো নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে। তিতিক্ষা ছলছল চোখে নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো,
–“আমাদের দু’জনেরই দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এখন কি করবো আমরা? কিভাবে এত এত সমস্যার জট খুলবো? বড়দের এই জেদটাই আমাদের সম্পর্কটার বিচ্ছেদ আনবে না তো?
To be continue……!!
(তোমরা টিস্যু বক্স নিয়ে রেডি হও। এখনো কান্নার কিছু হয়নি। তবে এবার হবে।)