অদৃষ্টচর #written_by_Nurzahan_Akter_Allo #Part_09

0
460

#অদৃষ্টচর
#written_by_Nurzahan_Akter_Allo
#Part_09

রুপ আদ্রিয়ানের রুমে বসে আছে। উহুম! অকারণে বসে নেই। সে মিসেস আদ্রিয়ান হয়ে আদ্রিয়ানের রুমে প্রবেশ করেছে। আদ্রিয়ান কেবল হসপিটাল থেকে বাসায় ফিরলো। রুপ মুচকি হেসে বললো,” ফ্রেশ হয়ে নিন।” আদ্রিয়ান রুপের বাসায় সামনের বিল্ডিংটা আর নেই। সে দুই মাস হলো রুপকে নিয়ে প্যারিসে এসেছে। এখানে ওদের ছোট সংসার গড়ে উঠেছে। হাজারো খুনশুটিতে মোড়ানো একটা সুখের সংসার। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে টাওয়াল হাতে নিলো। ওয়াশরুমে যাওয়ার আগে বলে গেল,

–” আমার প্রচন্ড ক্ষুধা লেগেছে। দ্রুত খাবার রেডি করো।”

রুপ মুচকি হেসে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। তাকে কোন কাজ করতে হয় না। সে বসে নিজের ইচ্ছামত সময় কাটায়। বুয়া রান্না করে গেছে। এখন শুধু খাবার গরম করলেই হবে। রুপ এতক্ষণ না খেয়ে অাদ্রিয়ানের অপেক্ষায় ছিলো। এই অপেক্ষার মাঝেও ভালবাসা নামক সুখানুভূতি আছে।
আদ্রিয়ান হঠাৎ একটু জোরেই বলে উঠলো,

–“আমি কিন্তু বউয়ের হাতে খাবো।”

কথাটা বলে ওয়াশরুমের দরজা আটকে দিলো। রুপ হাসতে হাসতে থাকলো। এটা ডাক্তারের প্রতিদিনের আবদার। তবে রুপের কাছে এটা মন্দ লাগেনা। প্রথম প্রথম লজ্জা পেতো। এখন বরং মনের মধ্যে প্রশান্তি কাজ করে। আদ্রিয়ান হসপিটালে মানুষের সেবা করে। আর সে বাসায় ফিরলে রুপকে তার সেবা করা লাগে।

এই দুই মাসে অনেক কিছু বদলে গেছে। রুপ সর্পকেশী জেনেও আদ্রিয়ান রুপকে গ্রহন করেছে। রুপকে নতুন করে বাঁচার সুযোগ দিয়েছে। ভয়ংকর এক অভিশাপ থেকে রুপকে মুক্ত করেছে। সর্প অর্থাৎ সাপ। আর কেশ মানে চুল। যার মানে সাপ রুপী চুল। রুপের সাধারণ চুল ছিলো না। ওর চুল অভিশপ্ত সর্পকেশ ছিলো। এই কথা রুপ নিজেও জানতো না। তবে ওর চুল দেখতে স্বাভাবিক ছিলো। কিন্তু সেটা অদৃশ্য ভাবে ভয়ংকরী ছিলো। কোন ছেলের রুপকে স্পর্শ করলে তার মৃত্যুও ঘটতো। সেই সর্পকেশ রুপের পাশে কোন ছেলেকে আসতে দিতো না।

রাহীদ, শ্রেয়ান, সাদিফ রুপের খুব কাছে আসলে রুপের শরীর খুব জ্বলতো। এজন্য রুপের মেজাজ খিটখিটে থাকতো। সাপের খোলস ছাড়ানোর সময় সাপ যেমন ছটফট করতে৷ তেমনি বদ্ধরুমে রুপকে ছটফট করতে হতো। ওর চিৎকার কেউ শুনতে পেতো না। পুরো শরীর মারাত্মক ব্যাথাতে জর্জরিত হয়ে যেতো। শ্রেয়ানের উপর সর্পকেশীই আক্রমন করেছিলো। কারণ শ্রেয়ান ওর আম্মুকে রুপকে বিয়ে করার কথা বলেছিলো। চার দেওয়ালে মাঝে রুপকে নিয়ে হাজারো কল্পনা করতো। এটাই ছিলো শ্রেয়ানের উপর আক্রমনের প্রধান কারণ। শ্রেয়ান অনেক চেষ্টা করেছিলো। রুপকে সবকিছু বলার। কিন্তু তাকে সুযোগই দেওয়া হয়নি। নানান সমস্যার সম্মুখীন করে তাকে বাঁধা দেওয়া হয়েছে।

চায়ের দোকানের বখাটে সেই চারটে ছেলে মারা গেছে। দুইটা মেয়েকে টিজ করার অপরাধে। সে মুহূর্তে রুপ বেলকণিতে থেকে ঘটনাটা দেখেছিলো। আর ঘৃণাতে থুথু ফেলে রুমে চলে এসেছিলো। সেই থুথু গিয়ে পড়েছিলো চারটে ছেলের মুখে। রুপ তখন স্বাভাবিক মানুষ রুপে থুথু ফেলেনি। সর্পকেশী রুপে রাগান্বিত হয়ে সে থুথু নিক্ষেপ করেছিলো। আর সেই থুথু এডিসের মত জ্বালাপড়নে চারটে ছেলের প্রাণ গেল।

নিপাও (রুপের ভাবি) ভালো নেই। সে কোন না কোন কারণে রুপকে কথা শুনাতো। একদিন রুপকে মারতেও এসেছিলো। বেশ কয়েকদিন পর এক্সিডেন্টে নিপা ওর ডান হাত হারায়। কথাতেই তো আছে ‘যেমন কর্ম তেমন ফল।’ ওর কাজের শাস্তি সে পেয়েছে। তার অহংকার এখন গুঁড়িয়ে গেছে। আসাদের মামাকে রুপই পাগল করেছিলো। কারণ রুপকে সর্পরুপে সে দেখে ফেলেছিলো। তবে তার মৃত্যুতে কোন রহস্য নেই। সে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে সুইসাইড করেছে।

সবচেয়ে জটিল রহস্যের সমাধান আজও কেউ বের করতে পারেনি। সবুজের খুনিকে কেউ খুঁজেও পায়নি। সবুজকে একজন জ্বিন মেরেছে। দিনের বেলা সবুজকে অদৃশ্য করে মেরে গেছে। সবুজ দুইটা মেয়েকে ধর্ষণ করে জঙ্গলে ফেলে এসেছে। সে জঙ্গলে একজন ভাল জ্বিন বসে তসবিহ পড়ছিলো। সে জ্বিনই সবুজের পাপের শাস্তি দিয়েছে। এটা সবার কাছে অজানাই আছে আর তাই থাকবে। সেই পোষ্য জ্বিন নর্দমার কীট ধ্বংস করেছে৷

আমরা যেমন মানুষের উপকার করি। তেমন ভাল জ্বিনরাও মানুষের উপকারে আসে। এক অগন্তুক যেমন রাহীদকে দিপার হাত থেকে বাঁচালো। উনি রাহীদের উপরে কৃতজ্ঞ হয়েই কাজটা করেছিলো। উনার ছোট্র মেয়েটা বিড়াল রুপে এক্সিডেন্ট করেছিলো। রাহীদই তখন বাচ্চাটাকে পানি খাইয়ে বাঁচিয়েছিলো। পৃথিবীটা বড্ড অদ্ভুত এক স্থান। যা দেখি তার মধ্যেই থাকে অদ্ভুত রহস্য লুকায়িত থাকে। অদৃশ্য কোন ব্যাক্তি রাহীদের উপকার করলো। কিনতু রাহীদই জানলো না। আর অদৃশ্য বলতে জ্বিনকে বোঝানো হচ্ছে।

মিমিকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। তার সাথে দুই ডাক্তারকেও ধরা হয়েছে। আর কোর্টের নিষেধ অনুযায়ী তার মৃত্যুদন্ড ধার্য করা হয়েছে। মিমির তাতেও কোন পরিবর্তন আসেনি। তার কোন মানসিক রোগও নেই। সে জেলের ভেতরের গুগগুন করে গান গায়। তবে মাঝে মাঝে নেশাগ্রস্ত মানুষ যেমন নেশার জন্য কাতর হয়ে পড়ে। তেমনি মিমি রক্তের জন্য ফটফট করে। রক্ত না পেলে চিৎকার করে। এর সাথে বিশ্রী ভাষায় গালাগাল তো আছেই। সে একা একা গলা ফাটিয়ে বলে,

–” আমি রক্ত দিয়ে গোসল করবো। আমার শরীরে নোংরা লেগে গেছে। আমাকে রক্ত এনে দাও। আমার ঠোঁট শুষ্ক হয়ে যাচ্ছে। আমাকে রক্ত দিয়ে লিপস্টিক বানাতে হবে। একটু রক্ত দাও আমাকে।”

তবে ‘সে জাতে মাতাল তালে ঠিক।’ তার নিজের রক্তও নয়, আবার কোন মেয়ের রক্তও নয়। সে টগবগে যুবকের রক্তই সে নিবে। যুবকের রক্তে নাকি প্রশান্তি আনে। শুধু এই রক্তের নেশার জন্য কত মায়ের বুক খালি হলো। কত যুবকের প্রাণ চলে গেল। শুধু রক্তের নেশার জন্য। তবুও মৃত্যু আগ পর্যন্ত তার রক্তই চাই ই চাই। রক্তই যেন তার সব।

নিয়ান দেশে ফিরেছে। ওরা সবাই ভালো আছে। শুধু সবার মাঝে রাহীদ নেই। এই দুই মাসে রাহীদকে কোথায় দেখা যায় নি। তার বাবা মা ছেলের খোঁজও পায়নি। সে বেঁচে আছে, নাকি না ফেরার দেশে চলে গেছে। এটাও কেউ জানেনা। তবে রাহীদ সর্বশেষ দেখা গেছে আদ্রিয়ানের সাথে। তারপর থেকে রাহীদের কোন চিহ্ন মেলেনি। কেউ জানে রাহীদের সাথে কি ঘটেছে? সে বা কোথায়?

To be continue…..!!
(ইডিট করার সময় পায়নি। ভুল গুলো নিজেরাই শুধরে নিবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here